নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( এ পাঠের শেষ পর্ব )

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:২৬


সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-১ )
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-২ )
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-৩ )
সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার সঙ্কলন । ( পর্ব-৪ )
১৫। কবিতা অবৈধ
আজ মনে হয় বসন্ত আমার জীবনে এসেছিল
উত্তর মহাসাগরের কূলে
আমার স্বপ্নের ফুলে
তারা কথা কয়েছিল
অস্পষ্ট পুরনো ভাষায়
অস্ফুট স্বপ্নের ফুল
অসহ্য সূর্যের তাপে
অনিবার্য ঝরেছিল
মরেছিল নিষ্ঠুর প্রগল্‌ভ হতাশায় ।
হঠাৎ চমকে ওঠে হাওয়া
সেদিন আর নেই
নেই আর সূর্য বিকিরণ
আমার জীবনে তাই ব্যর্থ হল বাসন্তীমরণ ।
শুনি নি স্বপ্নের ডাক
থেকেছি আশ্চর্য নির্বাক ।
বিন্যস্ত করেছি প্রাণ বুভুক্ষার হাতে ।
সহসা একদিন
আমার দরজায় নেমে এল
নিঃশব্দে উড়ন্ত গৃধিনীরা ।
সেইদিন বসন্তের পাখি
উড়ে গেল
যেখানে দিগন্ত ঘনায়িত ।

আজ মনে হয়
হেমন্তের পড়ন্ত রোদ্দুরে
কী করে সম্ভব হল
আমার রক্তকে ভালবাসা
সূর্যের কুয়াশা
এখনো কাটে নি
ঘোচে নি অকাল দুর্ভাবনা ।
মুহূর্তের সোনা
এখনো সভয়ে ক্ষয় হয়
এরই মদ্যে হেমন্তের পড়ন্ত রোদ্দুর
কঠিন কাস্তেতে দেয় সুর
অন্যমনে এ কী দুর্ঘটনা
হেমন্তেই বসন্তের প্রস্তাব রটনা ।


১৬। কবিতা ১৯৪১ সাল
নীল সমুদ্রের ইশারা
অন্ধকারে ক্ষীণ আলোর ছোট ছোট দ্বীপ
আর সূর্যময় দিনের স্তব্ধতা
নিঃশব্দ দিনের সেই ভীরু অন্তঃশীল
মত্ততাময় পদক্ষেপ
এ সবের ম্লান আধিপত্য বুঝি আর
জীবনের ওপর কালের ব্যবচ্ছেদ ভ্রষ্ট নয়
তাই রক্তাক্ত পৃথিবীর ডাকঘর থেকে
ডাক এল
সভ্যতার ডাক
নিষ্ঠুর ক্ষুদার্ত পরোয়ানা
আমাকে চিহ্নিত ক'রে গেল।
আমার একক পৃথিবী
ভেসে গেল জনতার প্রবল জোয়ারে ।
মনের স্বচ্ছতার ওপর বিরক্তির শ্যাওলা
গভীরতা রচনা করে
আর শঙ্কিত মনের অস্পষ্টতা
ইতস্তত ধাবমান ।
নির্ধারিত জীবনেও মাটির মাশুল
পূর্ণতায় মূর্তি চায়
আমার নিষ্ফল প্রতিবাদ
আরো অনেকের বিরুদ্ধে বিবক্ষা
তাই পরাহত হল ।
কোথায় সেই দূর সমুদ্রের ইশারা
আর অন্ধকারের নির্বিরোধ ডাক
দিনের মুখে মৃত্যুর মুখোস ।
যে সব মুহূর্ত পরমাণু
গেঁথেছিল অস্থায়ী রচনা
সে সব মুহূর্ত আজ
প্রাণের অস্পষ্ট প্রশাখায়
অজ্ঞাত রক্তিম ফুল ফোটে ।

১৭। কবিতা রোমঃ ১৯৪৩
ভেঙ্গেছে সাম্রাজ্যস্বপ্ন
ছত্রপতি হয়েছে উধাও
শৃঙ্খল গড়ার দুর্গ ভূমিসাৎ বহু শতাব্দীর ।
সাথী আজ দৃঢ় হাতে হাতিয়ার নাও
রোমের প্রত্যেক পথে ওঠে ডাক ক্রমশ অস্থির ।
উদ্ধত ক্ষমতালোভী দস্যুতার ব্যর্থ পরাক্রম
মুক্তির উত্তপ্ত স্পর্শে প্রকম্পিত যুগ যুগ অন্ধকার রোম ।
হাজার বছর ধরে দাসত্ব বেঁদেছে বাসা রোমের দেউলে
দিয়েছে অনেক রক্ত রোমের শ্রমিক
তাদের শক্তির হাওয়া মুক্তির দুয়ার দিল খুলে
আজকে রক্তাক্ত পথ উদ্ভাসিত দিক ।
শিল্পী আর মজুরের বহু পরিশ্রম
একদিন গড়েছিল রোম
তারা আজ একে একে ভেঙে দেয় রোমের সে সৌন্দর্যসম্ভার
ভগ্নস্তূপে ভবিষ্যৎ মুক্তির প্রচার ।
রেমের বিপ্লবী হৃৎস্পন্দনে ধ্বনিত
মুক্তির সশস্ত্র ফৌজ আসে অগণিত
দুচোখে সংহার স্বপ্ন বুকে তীব্র ঘৃণা
শত্রুকে বিধ্বস্ত করা যেতে পারে কিনা
রাইফেলের মুখে এই সংক্ষিপ্ত জিজ্ঞাসা ।
যদিও উদ্বেগ মনে, তবু দীপ্ত আশাÑ
পথে পথে জনতার রক্তাক্ত উত্থান
বিস্ফোরণে বিস্ফোরণে ডেকে ওঠে বান ।

ভেঙে পড়ে দস্যুতার পশুতার প্রথম প্রাসাদ
বিক্ষুব্ধ অগ্ন্যুৎপাতে উচ্চারিত শোষণের বিরুদ্ধে জেহাদ ।
যে উদ্ধত একদিন দেশে দেশে দিয়েছে শৃঙ্খল
আবিসিনিয়ার চোখে আজ তার সে দম্ভ নিষ্ফল ।

এদিকে ত্বরিত সূর্য রোমের আকাশে
যদিও কুয়াশাঢাকা আকাশের নীল
তবুও বিপ্লবী জানে সোভিয়েট পাশে ।


১৮। কবিতা জনরব
পাখি সব করে রব রাত্রি শেষ ঘোষণা চৌদিকে
ভোরের কাকলি শুনি অন্ধকার হয়ে আসে ফিকে
আমার ঘরেও রুদ্ধ অন্ধকার ষ্পস্ট নয় আলো
পাখিরা ভোরের বার্তা অকস্মাৎ আমাকে শোনালো ।
স্বপ্ন ভেঙে জেগে উঠি অন্ধকারে খাড়া করি কান
পাখিদের মাতামাতি শুনি মুখরিত ঐকতান
আজ এই রাত্রিশেষে বাইরে পাখির কলরবে
রুদ্ধ ঘরে ব'সে ভাবি হয়তো কিছু বা শুরু হবে
হয়তো এখনি কোনো মুক্তিদূত দুরন্ত রাখাল
মুক্তির অবাদ মাঠে নিয়ে যাবে জনতার পাল
স্বপ্নের কুসুমকলি হয়তো বা ফুটেছে কাননে
আমি কি খবর রাখি ? আমি বদ্ধ থাকি গৃহকোণে ।
নির্বাসিত মন চিরকাল অন্ধকারে বাসা
তাইতো মুক্তির স্বপ্ন আমাদের নিতান্ত দুরাশা ।
জন পাখিদের কণ্ঠে তবুও আলোর অভ্যর্থনা
দিকে দিকে প্রতিদিন অবিশ্রান্ত শুধু যায় শোনা
এরা তো নগণ্য জানি তুচ্ছ বলে ক'রে থাকি ঘৃণা
আলোর খবর এরা কি ক'রে যে পায় তা জানি না ।
এদের মিলিত সুরে কেন যেন বুক ওঠে দুলে
অকস্মাৎ পূর্বদিকে মনের জানালা দিই খুলে
হঠাৎ বন্দর ছাড়া বাঁশি বুঝি বাজায় জাহাজ
চকিতে আমার মনে বিদ্যুৎ বিদীর্ণ হয় আজ ।
অদূরে হঠাৎ বাজে কারখানার পঞ্চজন্যধ্বনি
দেখি দলে দলে লোক ঘুম ভেঙে ছুটছে তখনি
মনে হয় যদি বাজে মুক্তি কারখানার তীব্র শাঁখ
তবে কি হবে না জমা সেখানে জনতা লাখে লাখ ?
জন পাখিদের গানে মুখরিত হবে কি আকাশ ?
ভাবে নির্বাসিত মন চিরকাল অন্ধকারে বাস ।
পখিদের মাতামাতি বুঝি মুক্তি নয় অসম্ভব
যদিও ওঠে নি সূর্য তবু আজ শুনি জনরব ।


১৯। কবিতা রৌদ্রের গান
এখানে সূর্য ছড়ায় অকৃপণ
দুহাতে তীব্র সোনার মতন মদ
যে সোনার মদ পান ক'রে ধন ক্ষেত
দিকে দিকে তার গড়ে তোলে জনপদ ।

ভারতী তোমার লাবণ্য দেহ ঢাকে
রৌদ্র তোমায় পরায় সোনার হার
সূর্য তোমার শুকায় সবুজ চুল
প্রেয়সী তোমার কত না অহংকার ।
সারাটা বছর সূর্য এখানে বাঁধা
রোদে ঝলসায় মৌন পাহাড় কোনো
অবাধ রোদ্রে তীব্র দহন ভরা
রৌদ্রে জ্বলুক তোমার আমার মনও ।
বিদেশকে আজ ডাকো রৌদ্রের ভোজে
মুঠো মুঠো দাও কোষাগার ভরা সোনা
প্রান্তর বন ঝলমল করে রোদে
কী মধুর আহা রৌদ্রে প্রহর গোনা
রৌদ্রে কঠিন ইস্পাত উজ্জ্বল
ঝকমক করে ইশারা যে তার বুকে
শূন্য নীরব মাঠে রৌদ্রের প্রজা
স্তব করে জানি সূর্যের সম্মুখে ।
পথিক বিরল রাজপথে সূর্যের
প্রতিনিধি হাঁকে আসন্ন কলরব
মধ্যাহ্নের কঠোর ধ্যানের শেষে
জানি আছে এক নির্ভয় উৎসব।
তাইতো এখানে সূর্য তাড়ায় রাত
প্রেয়সী তুমি কি মেঘভয়ে আজ ভীত ?
কৌতুকছলে এ মেঘ দেখায় ভয়
এ ক্ষণিক মেঘ কেটে যাবে নিশ্চিত।
সূর্য তোমায় আজকে এখানে ডাকি
দুর্বল মন দুর্বলতর কায়া
আমি যে পুরনো অচল দীঘির জল
আমার এ বুকে জাগাও প্রতিচ্ছায়া ।


২০। কবিতা দেওয়ালী ভূপেন্দ্রনাথ ভট্রাচার্য কে ।
তোর সেই ইংরেজীতে দেওয়ালীর শুভেচ্ছা কামনা
পেয়েছি তবুও আমি নিরুৎসাহে আজ অন্যমনা
আমার নেইকো সুখ দীপান্বিতা লাগে নিরুৎসব
রক্তের কুয়াশা চোখে স্বপ্নে দেখি শব আর শব ।
এখানে শুয়েই আমি কানে শুনি আর্তনাদ খালি
মুমূর্ষু কলকাতা কাঁদে কাঁদে ঢাকা কাঁদে নোয়াখালী
সভ্যতাকে পিষে ফেলে সাম্রাজ্য ছড়ায় বর্বরত
এমন দুঃসহ দিনে ব্যর্থ লাগে শুভেচ্ছার কথা
তবু তোর রঙচঙে সুমধুর চিঠির জবাবে
কিছু আজ বলা চাই নইলে যে প্রাণের অভাবে
পৃথিবী শুকিয়ে যাবে ভেসে যাবে রক্তের প্লাবনে ।
যদিও সর্বদা তোর শুভ আমি চাই মনে মনে
তবুও নতুন ক'রে আজ চাই তোর শান্তিসুখ
মনের আঁধারে তোর শত শত প্রদীপ জ্বলুক
এ দুর্যোগ কেটে যাবে রাত আর কতক্ষণ থাকে ?
আবার সবাই মিলবে প্রত্যাসন্ন বিপ্লবের ডাকে
আমার ঐশ্বর্য নেই নেই রঙ নেই রোশনাই
শুধু মাত্র ছন্দ আছে তাই দিয়ে শুভেচ্ছা পাঠাই ।


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:১০

প্রামানিক বলেছেন: ধন্যবাদ

১৩ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৪০

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: পোস্টে আসার জন্য ধন্যবাদ প্রামানিক ভাইয়া ।

২| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:২৮

আমি মিন্টু বলেছেন: সুন্দর সঙ্কলন ভালো পোস্ট ধন্যবাদ :)

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২৪

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ মিন্টু ভাই ।

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: +++++

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:২৫

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ প্রিয় গল্প লেখক মাহবুব ভাই ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.