নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

DEATH IS BETTER THAN DISGRACE

রসায়ন

রসায়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওহ কমরেড

১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৪০



ওহ কমরেড

©রসায়ন


টিভিতে খবর এলো পার্বত্য চট্টগ্রামে নাকি পাহাড়ে ধ্বস নামিয়াছে। দেড়শ লোক মারা গেছে সাথে অনেকে নিখোঁজ !!!

এই খবর শুনিয়াই মেজাজটা বিগড়াইয়া গেলো জৈনিক কমরেড এর !!! স্বাধীনতার পর থেকে যিনি কাস্তে হাতে বিপ্লব ঘটাইবার স্বপ্ন দেখেন । তাহার সাথে জুটিয়াছে একগাদা কাঁচা পাকা দাঁড়ি আর কপালে বিশালকায় টিপ পরিহিতা ভদ্র নারীর দল । উহারা সমাজে সুশীল বলিয়াই সমধিক পরিচিত তাই আর নামোল্লেখের দরকার পড়িল না ।

শাহবাগ মোড়ে ততক্ষণে কুড়ি জনের বিশাল দল নিয়ে বিপ্লবে ফেটে পড়িয়াছেন একঝাঁক তরুণ কমরেড । তেজদীপ্ত কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে মানবাধিকার এর কথা আর পাহাড়ে সেনাবাহিনীর ব্যাপক নির্যাতনের খবর । তারা এই দাবি করিতেছেন যে বাংলাদেশকে উপজাতি শুন্য করিতে ইহা সেটেলার বাঙালি আর সেনাবাহিনী মিলিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে এই দুর্যোগ ঘটাইয়াছে । ধারণা করিতেছে যে পাহাড়ে মাইন বিস্ফোরণ ঘটাইয়া এই কাজ করা হইয়াছে । কমরেডরা নাকের পানি আর চোখের পানিতে একাকার করিয়া ফালাইয়াছেন এই ঘটনার জন্য ।


এমতাবস্থায় তাহারা ঘোষণা দিলো আর কোনভাবেই সেনাবাহিনীর উপস্থিতি মানিয়া লওয়া হইবে না পাহাড়ে । এবারে পাহাড়ে যেকোরেই হোক বিপ্লব সাধন করিতে হবে । সুশীল সমাজ হাততালি দিয়া কহিল , সাবাস বাছা ! আগাইয়া যাও , আমরাও আছি এই বিপ্লবে ।


মুহূর্তেই দেশ ব্যাপী এই সংবাদ রটিয়া গেল যে , লাল পতাকধারী আর সমাজের মাথা খ্যাত একপাল লোক বিদ্রোহ ঘোষণা করিয়াছেন । এবারে যেকোরেই হোক তাহারা পার্বত্য চট্টগ্রাম এ বিপ্লব সাধন করিবেন ।
এই খবর সেনাসদরে পৌঁছা মাত্র সেনাপ্রধান ভড়কাইয়া গেলেন । চিৎকার করে বলিয়া উঠিলেন হায়রে এখন কি হইবে আমাদের । আমরা দিন হীন অসহায় কি করে কাস্তে হাতুড়ির মত আধুনিক অস্ত্রের মোকাবেলা করিবো !
অতএব ফিরিয়া যাওয়াই উত্তম । তৎক্ষণাৎ তিনি চট্টগ্রামের চব্বিশ পদাতিক ডিভিশনের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং এর কাছে বার্তা পাঠাইলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের থেকে সকল সেনাকে প্রত্যাহার করে চব্বিশ পদাতিক ডিভিশনে ফেরৎ আনা হোক ।
এই নিউজ চট্টগ্রাম এর এরিয়া কমান্ডার অর্থাৎ ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসির কাছে পৌঁছা মাত্র তিনি কালবিলম্ব না করিয়া তৎক্ষনাৎ এই মর্মে পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল ক্যাম্প , জোন আর এরিয়া কমান্ডার এর কাছে বার্তা পাঠাইলেন যে সকলকে আজকের ভিতর স্কেল আলফা , স্কেল ব্রাভো , ক্যাম্পস্টুল , আর অস্ত্রাদি সহ ২৪ পদাতিক ডিভিশনে ফেরৎ আসার নির্দেশ দেয়া হইল ।


এই নির্দেশ পালনে যখন পার্বত্য চট্টগ্রামের সেনাইউনিট গুলো ব্যস্ত তখন মিডিয়ার বদৌলতে এই নিউজ দেশময় ছড়িয়া গেলো । ইহা দেখিয়া সুশীল সমাজ আনন্দে চিৎকার করিয়া উঠিল । বাহ এই না হলে বিপ্লব । লাল সেলাম সবাইকে !

উনারা তৎক্ষণাৎ বসিয়া সিদ্ধান্ত লইলেন যে যদি আমরা ঢাকায় বসিয়া বিপ্লব সাধন করি তাহলে পাবলিক উহা খাইবে না। । এতদিন তো আর্মির ছুতো দিতাম এখন উহাদেরও খেদাইয়াছি । অতএব সুশীল সমাজ আর কমরেড বৃন্দ গাট্টি বেঁধে চলিল পার্বত্য চট্টগ্রামের পানে !!!


পার্বত্য চট্টগ্রাম এ আসিআই উহারা প্রাণ ভরিয়া নিঃশ্বাস নিতে লাগিল । এমন জায়গাটা আর্মিরা দখল করিয়া রাখিয়াছিল । "শালার জলপাই" , বলিয়াই কমরেডরা বিপ্লবের সূচনা করিল !


একদল লোক আসিয়া জুটিয়াছে ততক্ষণে । উহারা দেখিতে পাহাড়ি ভাইদের মত । সুশীল সমাজ ভাবলেন এইতো চলে আসিয়াছে লোকজন ।
জয় কাল মার্ক্স ।

তো ওই লোকগুলি আসিআই বলিল , তোমরা কারা আর এইখানে কি কাজ । সুশীল সমাজ জবাব দিলো আমরা আসিয়াছি তোমাদের সেবাযত্ন করিতে । আমরাই তো তোমাদের সেনাশাসন থেকে মুক্ত করিলাম । এই কথা শুনিয়া আগন্তুক লোকেরা বলিয়া উঠিল তোমরা যাহারাই হও আর যেই উদ্দেশেই আসোনা কেন আগে আমাদের দশ হাজার টাকা প্রদান করো । নতুবা তোমাদের অপহরণ করা হইবে । তোমরা কারা এই প্রশ্ন করিতেই গম্ভীর গলায় উত্তর এলো আমরা জেএসএস এর লোক !
কমরেডরা ভাবিলেন আহা জেএসএস এর এই লোকগুলি এমন কেন যে শত্রু মিত্র চিনে না ।
অতঃপর তাহারা কথা না বাড়াইয়া টাকা দিয়া বিদায় হইল ।

রাস্তা ধরে কিছুদূর এগোতেই দেখিতে পাইলো রাস্তা ভাঙা , মাটিতে একাকার । এখানে গাড়ি চলিবে না । "নামো সবাই , আমরা হেঁটেই যাবো" , হুঙ্কার করিলেন নেতা কমরেড ।
সবাই নামিয়া পথ চলিতে শুরু করিল । কিন্তু কাঁদা মাটিতে আর পা চলে না । উফফ..... আর্মিরা কি ভাবে এদেশ শাসন করিত , উহারা কি রোবট নাকি ! বিস্ময় প্রকাশ করলেন এক সুশীল !!!

এদিকে সন্ধ্যা নামিয়েছে অত্র । হঠাৎ খেয়াল হইল যে ফড়িংয়ের মত আকারের মশার দল উহাদের ঘিরিয়া ধরিআছে !
শালার মশাও বেইমানি করিল !! আরে থামো তো মশায় এত রাগীও না , এক সুশীল সান্ত্বনা দিলেন !

জৈনিক সুশীল নেত্রী যিনি জীবনের বারো আনা সময় ব্যয় করেছেন ঢাকায় পাহাড় নিয়ে বিপ্লব করে তিনি বলিয়া উঠিলেন তোমরা সর তো । আমি বহুকাল ঢাকায় পাহাড় নিয়ে বিপ্লব করিয়াছি । কি করে পাহাড়ে চলিতে হয় উহা আমার চাইতে কেউ ভাল জানে না ।

তেজ লইয়া তিনি সামনে গেলেন । এবার তিনিই উহাদের নেতৃত্ব দেবেন । ওমা দু কদম যাইতে না যাইতেই ধপাস করে এক আওয়াজ হলো । আরে হচ্ছে টা কি !!! নেত্রী কোথায় গেলো । সবাই মিলে আবিষ্কার করিল তিনি কাঁদায় পা পিছলে পড়িয়া গিয়াছেন । কাছে যেতেই , ওরে মারে মরে গেলুম রে , আমার মাজাটা বুঝি এবার ভেঙেই গেলো রে , এবার কি হবে রে , কি করে চেয়ারে বসিব রে আর বসতেই যদি না পারি তবে ঢাকায় বসে আন্দোলন করবো কিভাবে রে !!!

কাছাকাছি কোন হাসপাতালও জানা নেই তাহাদের । আর্মি মেডিকেল কোরের(Army Medical Corps) চিকিৎসকরাই এখানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন । এখন তবে উপায় !!!
কাল মার্ক্সের অশেষ রহমতে , খেয়ে দেয়ে শরীর বানাইয়াছি বিশাল এখন কে আমাকে কাঁধে চাপাইয়া বহন করিবে হাসপাতাল অব্দি ।
সাথের সুশীল আর কমরেডরা বলিয়া উঠিল , থাক না ম্যাডাম , আপনি নাহয় পাহাড় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ হোন , আপনার বয়স হইয়াছে আর বাঁচিবেনই বা কতকাল , দিননা জীবনটা পাহাড়ের স্বাধীনতার তরে । জয় লাল পতাকা । নিপীড়িত মানুষের জয় হোক ।
আরে আরে বলো কি তোমরা , আমারে ফালাইয়া যাইও না । কে শোনে কার কথা , "দুনিয়ার মজদুর এক হও" এই ধ্বনি তুলিয়া বাকিরা সামনে হাঁটা দিল । একজনের জন্য তো আর বিপ্লব বন্ধ করা যায় না !


ঐদিকে সুশীল নেত্রী উপায়ন্তর না দেখিয়া ভাবিতে লাগিলেন কি করা যায় !
হঠাৎই তার সামনে এক পাহাড়ি ভাই এলো । উনার গোঙানি শুনিয়া তিনি আসিয়াছেন এই প্রান্তে । এসেই জিজ্ঞাসা করিলেন আপনি কে আর এই খানে কি করেন !?
উত্তরে তিনি জন্মবৃত্তান্ত সবিস্তারে বর্ণনা করিয়া বলিলেন যে তোমাদের সেনাবাহিনীর অত্যাচার থেকে মুক্ত করিতেই আমার এখানে আসা । এই কথা শুনিয়া পাহাড়ি উপজাতি ভাইটি বিস্ময় প্রকাশ করিল । সেনাবাহিনীর অত্যাচার !!!
এ কি করে হয় । উহারাই তো আমাদের সব বিপদে আপদের সাথী হয় । এই দুইদিন আগেও পাঁচ জন জীবনটা দিয়ে দিলো আমাদের জন্য । এই রাস্তাঘাট সব আর্মিরাই বানাইয়া দিয়াছে , খাদ্য সংকটের সময় আর্মিরাই তো হেলিকপ্টার যোগে খাদ্য সাপ্লাই করিয়াছে আমাদিগকে ! আমার বাচ্চা মেয়েটা যখন অসুস্থ হইয়াছিল তখন তো এই আর্মির ডাক্তাররাই উহাকে বিনামূল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করিয়া সারাইয়া তুলিয়াছিলেন ।
ও তাই বুঝি । তাহলে আর্মিরা নাকি তোমাদের উপর জুলুম করে !?
কে বললো আপনাকে ?
তাহারা তো আমাদের সাথেই থাকে বরং অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী , চাঁদাবাজ আর বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের উপরেই উহারা কঠোর আর খড়গহস্ত হয় ।

এইসব শোনার পর সুশীল নেত্রী বলিলেন , তোমার সাথে পরে আলাপ করিল আগে আমাকে বাঁচাও এই বিপদ থেকে । ওই পাহাড়ি ভাইটি বলিলেন আপনাকে এখনই হাসপাতালে নিতে হবে । দাঁড়ান আমি সব ব্যবস্থা করিতেছি ।

উনি ফোন করিলেন উনার বাসার নিকটবর্তী সেনা ইউনিটের অধিনায়ক এর কাছে । অধিনায়ক তো চট্টগ্রাম সেনানিবাসে তখন । অধিনায়ক মেজর সাহেব এই বিপদের কথা শোনার পর পরই জানাইলেন এরিয়া কমান্ডার ২৪ পদাদিক ডিভিশন , মেজর জেনারেল স্যারের কাছে । তিনি আর্মি এভিয়েশন ইউনিট এর পাইলট , মেডিকেল কোরের চিকিৎসক আর পদাতিক ইউনিটের সমন্বয়ে একটি দলকে পাঠালেন হেলিকপ্টার যোগে ঘটনাস্থলে । উহারা আসিয়াই দেখিলেন ভূপাতিত সেই সুশীল নেত্রীকে । সুশীল নেত্রী বাঁচার আনন্দে উদ্বেলিত হইয়া উঠিলেন । গ্রূপ কমান্ডার এর কাছে কহিলেন আমি তো তোমাদের চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করি চব্বিশ ঘন্টা , তোমরা কেন আমাকে বাঁচাইতে এলে , যেখানে আমার সঙ্গীরা আমায় ফেলে চলে গেলো !!!
গ্রূপ কমান্ডার উত্তর দিলেন , ম্যাডাম আপনি এই দেশের নাগরিক সেটাই আমাদের দেখার বিষয় ।

"সমরে আমরা শান্তিতে আমরা , সর্বত্র আমরা দেশের তরে"

অতঃপর হেলিকপ্টার চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের পানে উড়াল দিলো !


[বিনাঅনুমতিতে বা ক্রেডিট ছাড়া কপিপেস্ট নিষিদ্ধ ।]


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:৫৯

আওরঙ্গজেব চৌধুরী রিফাত বলেছেন: জটিল হয়েছে। একেবারে ধুয়ে দিলেন :D

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:৫৯

রসায়ন বলেছেন: হে হে =p~

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.