নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

DEATH IS BETTER THAN DISGRACE

রসায়ন

রসায়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্লাস্টিক | বিজ্ঞান পোস্ট সিরিয়াল ৫

০২ রা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১০

প্লাস্টিক

আমরা জানি সকল পদার্থ অণু দিয়ে গঠিত। কোন পদার্থের গঠন ও বাহ্যিক অবস্থা একই সাথে ধর্ম সেটার অণুর উপরে নির্ভরশীল । যেমন, লোহার অণু চুম্বকে আকৃষ্ট হয় , কিন্তু তামার অণু বা অক্সিজেনের অণু হয় না । কক্ষ তাপমাত্রায়(২০ ℃ ) পানির অণু তরল থাকলেও লোহার অণু কঠিন এবং মিথেনের অণু গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে ।

অনেক গুলো অণু যখন একসাথে একটি চেইনের আকার ধারণ করে বড় হয়ে একক অণুর ন্যায় আচরণ করে তখন তাকে পলিমার বলে।
যেমন ধরুন, একটা লাইব্রেরীতে হাজার হাজার ইন্ডিভিজুয়াল বই আছে, এখন সব বই সুতো দিয়ে গেঁথে যদি একটি বই বানান যায় তবে সেটাই হলো বইয়ের পলিমার বা প্লাস্টিক। পলি(poly) নামটা শুনলেই বোঝা যায় এখানে বহু বুঝানো হয়েছে । তো এরকম জৈব বা অজৈব অণুর পলিমারকে বলা হয় প্লাস্টিক। যেমন ইথিলিন অণুর অনেক অণু শিকল তৈরি করে ইথিলিন অণুর চেইন বা পলিমার তৈরি করে যাকে পলি-ইথিলিন বা সংক্ষেপে পলিথিন বলে । এছাড়া আরো পলিমার অণু বা প্লাস্টিক আছে যেমন, পিভিসি/PVC(পলি ভিনাইল ক্লোরাইড যা পাইপ ও ফিটিংসে ব্যবহৃত হয়) , পিইটিPET(বোতলে ব্যবহৃত হয়) , পলিস্টেইরিন(কাপড় বানাতে লাগে) , নাইলন(সুতা তৈরিতে লাগে) ।


এগুলো হলো কৃত্তিম পলিমার , অর্থাৎ মানুষ এগুলো নিজের প্রয়োজনে প্রযুক্তির মাধ্যমে তৈরি করেছে। তাই এদের অণুর আকারও বড় গঠনও জটিল।

আমাদের চারপাশে প্রাকৃতিক ভাবেও কিছু পলিমার আছে যেমন, তুলা, রেশম , মাথার চুল , পশম , ডিএনএ , গাছের বাকল ইত্যাদি ।


পলিমার কিভাবে এত ছড়াল আর এর সুবিধা কি ?

পলিমার মূলত এর গঠনের কারণে শক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী , তাছাড়া এর উৎপাদন খরচ কম , এছাড়া এটি এক হিসেবে পরিবেশের উপকার করে । যেহেতু এটি বানাতে কম শক্তি লাগে এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কম কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় । যেমন একটি সমান কার্যকারিতা সম্পন্ন কাগজের মোড়ক উৎপাদনে যে এনার্জি ব্যবহৃত হয় আর যে কার্বন ডাই অক্সাইড নির্গত হয় সে তুলনায় পলিমার(প্লাস্টিক) মোড়ক উত্পাদনে শক্তি খরচ ও কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ দুটোই কম। এছাড়া আমাদের পৃথিবীতে উৎপাদিত খাদ্যের এক তৃতীয়াংশ নষ্ট হয়। এসব খাদ্য জৈব উপাদান হওয়ায় তা পঁচে মিথেন গ্যাস তৈরি হয় যা কিনা গ্রিন হাউজ গ্যাস , যেটি ওজন লেয়ারের ক্ষতি করে। এই খাদ্য সংরক্ষণ করতে পলিমারের তথা প্লাস্টিকের ভূমিকা ব্যাপক।


এবার আসা যাক এই প্লাস্টিক ব্যবহারের ভয়াবহতা সম্পর্কে।

আমাদের দেশের ড্রেন আর নদী নালার দিকে তাকালেই দেখতে পাওয়া যায় প্লাস্টিকের ভয়াবহতা । প্লাস্টিক যেহেতু পলিমার অর্থাৎ অনেকগুলো অণুর সমষ্টি যারা একটি অণুর ন্যায় আচরণ করে তাই এদের এই বন্ডিং ভেঙে তাদের আলাদা করা সোজা কাজ না। এজন্য ব্যাকটেরিয়া প্লাস্টিক হজম করতে পারে না। শাক সব্জি, মাছ মাংস এসব জিনিস ব্যাকটেরিয়া হজম করে ফেলে কিন্তু বৃহৎ পলিমার ভাঙতে পারে না। এজন্য মানুষ মারা গেলে কবর দিলে একমাস পর মাংস আর না পাওয়া গেলেও দশ বিশ বছর পর তার কাফনের কাপড় পাওয়া যাবে। প্রাকৃতিক পলিমার হিসেব মৃত ব্যক্তির চুলও পাওয়া যাবে কিন্তু ওটাও একসময় মিলিয়ে যাবে কিন্তু সিনথেটিক বা কৃত্তিম পলিমার পাঁচশ বা এক হাজার বছর ধরেও টিকে থাকতে পারে।

আমরা প্রতিদিন হাজার হাজার টন বর্জ্য তৈরি করছি। এর মধ্যে জৈব পদার্থ সমূহ দ্রুত ব্যাকটেরিয়ার দ্বারা পরিবেশে মিলিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই পলিমার বা প্লাস্টিক পরিবেশে থেকেই যাচ্ছে। ফলে পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। পলিথিন ও প্লাস্টিক মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণী খাবারের সাথে গ্রহণ করছে কিন্তু হজম করতে পারছে না ফলে মৃত্যু বরণ করছে। এটি মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে আনছে। বুড়িগঙ্গা নদী এর বাস্তব উদাহরণ।


আশার কথা হলো, কয়েকমাস আগে জাপানিজ বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিক হজম করতে সক্ষম অর্থাৎ পলিমার ভেঙে দিয়ে অণু গুলোকে একক অণুতে পরিণত করতে সক্ষম ব্যাকটেরিয়া উদ্ভাবন করেছেন । আমেরিকার অরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল গেল সপ্তাহে এরকম প্লাস্টিক খেকো ব্যাকটেরিয়া উদ্ভাবন করেছেন যা কিনা প্লাস্টিক ভেঙে তার কার্বনকে শর্করা তথা খাদ্য গ্রহণে কাজে লাগায়।

আশা করা যায়, এই আবিস্কার আরো মোডিফাই ও ব্যবহার উপযোগী করে পৃথিবীকে একটি ডাস্টবিনে পরিণত হওয়া থেকে বাঁচাতে পারবে।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৭

আখেনাটেন বলেছেন: চমৎকার বিজ্ঞান পোস্ট। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ে দুনিয়ার পরিবেশবাদীরা অনেক সোচ্চার। তারপরও কিছুই করার নেই। কারণ প্লাস্টিকের বিকল্প নেই।

তবে প্লাস্টিক ডাইজেস্টকারী মাইক্রোওরগানিজম মোডিফায়েড করতে পারলে তা হবে একটি যুগান্তকারী আবিস্কার। শত শত ল্যাব এ নিয়ে কাজ করছে। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে আমরা এর ভালো ফলাফল পাবো।

ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটির জন্য ব্লগার রসায়ন।

০২ রা জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৫

রসায়ন বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই । অলরেডি বিজ্ঞানীরা প্লাস্টিক খেকো ব্যাকটেরিয়া ও প্লাস্টিক বিশ্লেষি এনজাইম তৈরিতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে

২| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:০৪

জহিরুল ইসলাম সেতু বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর একটা পোষ্ট পেলাম। ধন্যবাদ রসায়ন ভাই।
পলিমার, তথা প্লাস্টিক সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা খুব ভাল লেগেছে। জাপানিজ আর আমেরিকান বিজ্ঞানীরা যেসব ব্যাকটেরিয়া উদ্ভাবন করেছেন তা আশার বাণী শোনালেও, এর পার্শ্বপতিক্রিয়া সম্পর্কে সন্দিহান না হয়ে পারছি না। পরবর্তিতে এ নিয়ে আপনার ব্লগে বিস্তারিত জানার অপেক্ষায় রইলাম।
বিজ্ঞান জনপ্রিয় হোক, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাক।
শুভ কামনা রইল।

০২ রা জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১৮

রসায়ন বলেছেন: বিজ্ঞানীরা ব্যাকটেরিয়া বা এনজাইম গুলোকে যথাসম্ভব পরিবেশ বান্ধব ও বিপর্যয় রোধী করে কালচার করার চেষ্টা করছেন । অচিরেই সফলতা আসবে । আর আমার ব্লগে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

বিজ্ঞানকে অবশ্যই ছড়িয়ে দিতে হবে।

৩| ০২ রা জুলাই, ২০১৮ রাত ৮:৪৮

রাকু হাসান বলেছেন: ভাল পোস্ট দিয়েছেন .।জানলাম .......পর্ব -৫ চলে গেল ,এই প্রথম পড়লাম ,,,,,,,বাকিগুলো পড়ে নিব ,,নতুন কিছু জানতে পারবো আশা করি । তো বিজ্ঞানের বাইরে সাহিত্যের রস গ্রহণ করলে ভাল হয় না ? কথা ছিল কেমন হয়েছে কবিতাটি রসায়ন ভাইয়া ? :-B

০২ রা জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:১৯

রসায়ন বলেছেন: হুম কবিতা ভালো লাগে , আমিও লিখি মাঝে মাঝে । সবই স্যাটায়ার যদিও। আপনার কবিতা পড়ে জানাচ্ছি মতামত।

৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৪৯

রাজীব নুর বলেছেন: আগের পোষ্টের লিংক গুলো দিয়ে দিবেন। তাহলে পাঠকদের জন্য সুবিধা হয়।

০৪ ঠা জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৫৪

রসায়ন বলেছেন: আচ্ছা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.