নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

DEATH IS BETTER THAN DISGRACE

রসায়ন

রসায়ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুধে এন্টিবায়োটিক এর উপস্থিতি এবং ভোক্তা হিসেবে আপনি কেন আতঙ্কিত হবেন | বিজ্ঞানপোস্ট সিরিয়াল ১২

১৪ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:১৬

দুধে এন্টিবায়োটিক এর উপস্থিতি এবং ভোক্তা হিসেবে আপনি কেন আতঙ্কিত হবেন ?


এন্টিবায়োটিক কোন খারাপ কিছু না। ব্রিটিশ বিজ্ঞানী আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিয়াম নামের ছত্রাক নিয়ে কাজ করার সময় এটি আবিস্কার করেন । এন্টিবায়োটিক এক প্রকারের রাসায়নিক ব্যাকটেরিয়ার কাছে আসলে ব্যাকটেরিয়ার সেল ওয়াল ভেঙ্গে এবং বিপাক ক্রিয়া শাট ডাউন করে একে মেরে ফেলে। ব্যাকটেরিয়ার ধরন বুঝে বিভিন্ন ধরনের এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়।

এন্টিবায়োটিক শব্দটির মানেই হলো জীবনের বিরুদ্ধে । এন্টি মানে বিরুদ্ধে আর বায়োটিক মানে জীবন।


এন্টিবায়োটিক দিয়ে কি হয় ??


ব্যাকটেরিয়া জনিত রোগে ব্যাকটেরিয়াকে মেরে আরোগ্য লাভের জন্য এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ এর ভয় থাকলেও এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় । যেমন অপারেশনের পরে বা শরীর কেটে গেলে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা হয় যাতে ক্ষতস্থানে ব্যাকটেরিয়া আক্রমণ করে পঁচন ধরাতে না পারে ।

তবে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা ধরে রাখার ব্যাপারে কিছু শর্ত আছে । যেমন আন্দাজে এন্টিবায়োটিক সেবন না করা ও ডোজ সম্পূর্ন করা। যেমন লো পাওয়ারের এন্টিবায়োটিক দিয়েই যদি রোগ সেরে যায় তাহলে উচ্চ পাওয়ারের এন্টিবায়োটিক সেবনে পরবর্তীকালে ঐ লো পাওয়ারের এন্টিবায়োটিক তার দেহে কাজ করবে না বা তার কর্মক্ষমতা অর্থাৎ ব্যাকটেরিয়া মারার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাবে। একইভাবে ডোজ কমপ্লিট না করলে এরকম ইচ্ছেমতো এন্টিবায়োটিক সেবনের ফলে পরবর্তী কালে এন্টিবায়োটিক দিয়েও আর ব্যাকটেরিয়া দমন সম্ভব হবে না। তৈরি হবে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া যাকে বলে সুপারবাগ । এছাড়া আমাদের অনেক রোগ আছে যেগুলো দেহের এন্টিবডিই সামাল দিতে পারে, একটু সময় লাগে হয়তো কিন্তু ওসব রোগেও ইচ্ছেমতো এন্টিবায়োটিক সেবনের কারণে দেহের ভিতরে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়াও (যেমন হজমে সাহায্যকারী ব্যাকটেরিয়া) মারা পরে।


কেন এমন ঘটে ?


বিবর্তনবাদ এর সাহায্যে সহজেই এর কারণ জানা যায় । ব্যাকটেরিয়া একটি জীবিত বস্তু তাই এটির ইভলব(বিবর্তন) ঘটে । এটিকে যখন কেউ মারার চেষ্টা করে তখন এটিও পাল্টা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে । একেবারে নতুন কোন অস্ত্র দিয়ে একে মারলে তখন এর প্রতিরোধ করার শক্তি থাকে না তবে বার বার একই অস্ত্র বা এন্টিবায়োটিক প্রয়োগ করলে সেটার বিরুদ্ধে তার দেহে রেজিস্ট্যান্ট তৈরি হতে থাকে, একসময়ে পুরোপুরি সে ওই এন্টিবায়োটিক এর প্রতি রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায় । তখন আর কোনভাবেই ওই এন্টিবায়োটিক দ্বারা একে মারা যায় না ।


এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট কতোটা ভয়াবহ ব্যাপার ??



এটা বিশ্বের অন্যতম আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা একটা গ্লোবাল প্রবলেম । আমেরিকার মতো দেশেও হাজার হাজার রোগী প্রতি বছরে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট সুপারবাগ এর আক্রমণে মারা যাচ্ছে। তার মানে উল্টোপাল্টা ও যথেচ্ছ এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহারের ফলে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলো এসব এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে। অলরেডি স্টেফালোক্কাসের কিছু টাইপ, সালমোনেল্লার কিছু টাইপ এবং ই-কোলাই এরকম হয়ে গেছে । এর ফলে এসব সুপার ব্যাকটেরিয়া বাহিত রোগ বা সংক্রমণ ঘটলে বাঁচার কোন উপায় নেই। নির্ঘাত মৃত্যু হবে। যেহেতু আমাদের অস্ত্রে(এন্টিবায়োটিক) আর সেই ব্যাকটেরিয়াকে মারতে পারছে না ফলে সে নির্বিঘ্নে দেহে রোগ ও ইনফেকশন তৈরি করে আমাদের প্রাণ নাশ করে দিতে সক্ষম হচ্ছে। বিশ্বজুড়ে ডেইরি, মিট ও পোল্ট্রি শিল্পে মুড়ির মতো এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার এবং মানুষেরও ইচ্ছেমতো এসব এন্টিবায়োটিক এর ব্যবহার এর ফলে সকল ব্যাকটেরিয়া এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যাচ্ছে অর্থাৎ তৈরি হচ্ছে সুপারবাগের। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের দিকে মানুষের মৃত্যুর অন্যতম কারণ হবে এই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ। আর ব্যাকটেরিয়া জীবিত বস্তু বলেই সমস্যাটা বেশি। কারণ এটি বিভিন্ন মাধ্যমে বাহিত হয়ে একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে যায় ফলে কারো অসাবধানতায় বা অজ্ঞতায় এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট সুপারবাগ তৈরি হলে সেটা অন্যের দেহে যেয়েও সমস্যা তৈরি ও মৃত্যু ঘটাতে সক্ষম হয়ে যেতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে আইসিইউতে ৮০% রোগীদের মৃত্যুর কারণ এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট সুপারবাগের আক্রমন । রেফারেন্স


গরুর দুধে এন্টিবায়োটিক থাকলে আমাদের কি ?

দুধের ভিতরে এন্টিবায়োটিক থাকায় এগুলো খাওয়ার পরে তা আমাদের দেহেও ঢুকছে। কিন্তু এর মাত্রা কম থাকায় এটি আমাদের দেহের ব্যাকটেরিয়াকে মারতে পারছে না, এদিকে ব্যাকটেরিয়াও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে এসব এন্টিবায়োটিক সম্পর্কে জানার। ফলে এসব দুধ বা মাংস খাওয়ার ফলে ব্যাকটেরিয়াগুলো এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধ করার জন্য বিবর্তিত হচ্ছে। ফলে সুপারবাগ জন্ম নিচ্ছে । এর কারণে কখনো ব্যাকটেরিয়াবাহিত রোগে আক্রান্ত হলে দেখা যাবে যে, এন্টিবায়োটিক সেবনে রোগ আর ভালো হচ্ছে না। তখন এই সিম্পল রোগে যেটা কিনা আগে আপনি এন্টিবায়োটিক খেয়েই ভালো হয়ে যেতেন তাতেই আপনার মৃত্যু ঘটবে। এই অবস্থা চলতে থাকলে সামনে এমন দিন আসবে যখন কমন ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগগুলোয় যেগুলো হলে আজকে আমরা এন্টিবায়োটিক সেবন করেই ভালো হয়ে যাচ্ছি ঐগুলোতেই আক্রান্ত হয়ে আমাদের মৃত্যু ঘটবে । শরীর কেটে গেলে যেমন ধরেন দাঁড়ি সেইভ করতে গিয়ে গাল কেটে গেল, এমন ক্ষুদ্র ঘটনায়ও যদি ওই ক্ষতস্থানে কোনভাবে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ঘটে তাহলে তাতে পঁচন ধরে ভয়াবহভাবে মানুষের মৃত্যু ঘটবে। এছাড়া অপারেশন বা অন্যকোন কাটাছেঁড়া বা ইনজুরির কারণেও এমন ইনফেকশন ও ভয়াবহ কায়দায় মানুষের মৃত্যু হবে।


সামনে যদি এতো ভয়াবহ দিনই আসতে থাকে সুপারবাগ এর কারণে তবে প্রতিকার কি ? বিজ্ঞানের অগ্রগতি কতদূর ?

অলরেডি আমরা একটু যুগান্তকারী উপায় পেয়েছি যেটি হলো ব্যাকটেরিওফাজ(phage) ভাইরাসের দ্বারা চিকিৎসা বা ফাজ থেরাপি । তবে এটি এখনো টেস্টিং ফেজেই আছে এবং এর মাস ইউজ আসতে আরো সময়ের দরকার। এ নিয়ে আমার ব্লগ পোস্টটি পড়তে পারেন এখানে



মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


সামান্য দামে দুধ কিনে, ফ্রি এন্টিবায়োটিক পাওয়া কি লাভজনক নয়?

২| ১৪ ই জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: সব খানেই তো একই অবস্থা।এগুলো কি সংশোধন হবে?

৩| ১৪ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৮:০২

আহমেদ জী এস বলেছেন: রসায়ন,



খাদ্যদ্রব্যে এন্টিবায়োটিক বা অন্য যে কোনও রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতি অবশ্যই স্বাস্থ্য হানিকর। ক্যান্সার , কিডনীর কার্যক্ষমতা লোপ সহ মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতিতে ক্ষতিকর দিকটির কথা তো আপনিই বলেছেন। আতঙ্কিত হবার কথাই।
ভালো লিখেছেন।

প্রাসঙ্গিক বিষয় বলে এই লিংকটি দিলুম - The world is running out of antibiotics... Why? এন্টিবায়োটিকের কথা। শেষ পর্ব

৪| ১৪ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:০৬

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: ভালো পোস্ট।


সবাই যে যার মত পকেট ভরতে ব্যস্ত। দেশের সব খাবারকে নিরাপদ করা যাবে কিনা সন্দেহ কি না সন্দেহ....

৫| ১৪ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ১৪ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ৯:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ১৫ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১:২৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
যে দেশে বিনা প্রেসক্রিপশনে মুড়ি-মুড়কির মত দেদারসে এন্টিবায়োটিক বিক্রি হয় !
বাংলাদেশে মানুষের দেহই তো এন্টিবায়োটিকের ডিপো!

দুধে জীবানু বা এন্টিবায়টিক কিছু থাকে সবদেশেই, তবে নিরাপদ মাত্রা একেক দেশে একেক রকম।
কোন দেশে কত মাত্রা? বাংলাদেশে নিরাপদ মাত্রা কত? এসব কিছুই না জেনে ফলাফল সরাসরি গণমাধ্যমে দিয়ে দেয়া একটা হটকারিতা।
উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগিয় জার্নালে রিপোর্টটি ছাপাতে পারতেন। এরপর আলোচিত হত। বিশ্বের নিরাপদ মাত্রার সাথে সমন্যয় করে একটা 'নিরাপদ মাত্রা' নির্ধারিত হত। এরপর সম্মিলিত ভাবে সরকারকে অনুরোধ করতে পারতো।

তা না করে জনমনে আতঙ্ক শৃষ্টি করে দরিদ্র দেশী দুগ্ধ খামারিদের পথে বসিয়ে দেয়ার মহা আয়োজন চলছে!
বিদেশি প্রোডাক্ট, বিদেশী ক্ষতিকর জিএমও প্রডাক্টের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলছে না।

৮| ১৫ ই জুলাই, ২০১৯ রাত ১:৪৬

আমিই মুসাফির বলেছেন: বুঝাইলছি, এহন একখান গাই গরু কিনতে হইবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.