নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন
মোঃ খুরশীদ আলম
মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। তবে, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখেছি। তার পবিত্র জবান হতে শুনেছি মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী যা বাংলার ইতিহাসে চীর অম্লান হয়ে রবে। শুনেছি, আর যতোই শুনেছি, ততোই মুগ্ধ হয়েছি। অপলক দৃষ্টিতে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো শ্রবণ করেছি রণাঙ্গনে তার লড়াইয়ের ইতিহাস। অসীম সাহসের সাথে সমরাস্ত্র কাঁধে সম্মুখপানে এগিয়ে চলার যে অদম্য শক্তি তা কোথা হতে আসে? জাতিকে শত্রুমুক্ত করে একটি মানচিত্র, একটি পতাকা, একটি ভূখন্ড উপহার দেয়া কি এতোই সহজ? শত্রুর বায়োনেটের খোঁচায়, বুলেটের আঘাতে রক্তস্রোতে যখন ভূমি তার তৃষ্ণা মিটায়, হাজারো মা-বোনের সম্ভ্রম যখন হায়েনার তিক্ষ্ণ নখরের আঁচড়ে দগদগে ক্ষত বয়ে বেড়ায় তখনইতো স্বাধীনতার লিপ্সায় টগবগ করে তাগড়া যোয়ানের খুন। স্বাধীনতা তখনই তার প্রাপ্য হয়ে যায় যা থেকে পৃথিবীর কোন হানাদার তাকে বঞ্চিত করতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কথা উঠলে এমনই অনভূতি প্রকাশ করলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া মজুমদার। মিষ্টভাষী, সদা হাস্যমুখ, পরোপকারী এই বীর মুক্তিযোদ্ধা সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন এবং এখনো জাতিকে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে বিভিন্ন বৈষম্য, মুক্তিযোদ্ধাদের সঠিক পরিসংখ্যান প্রকাশ না হওয়া, ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় স্থান পাওয়া, সামাজিক অসঙ্গতি, মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে যুব সমাজের উদাসীনতা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে অনাগ্রহ ইত্যাদি সমস্যাগুলো নানাভাবে তাকে পীড়া দেয়। পাকিস্তানী হানাদারদের অত্যাচার আর দেশীয় রাজাকারদের নিপিড়নের নিকট মাথা না নোয়ানো এই মুক্তিযোদ্ধা চান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের অধীনে একটি “ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা ছাটাই প্রকল্প” চালু করা হোক। এই প্রকল্পের কাজ হবে একটি নির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরন করে সারাদেশ থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের চিহ্নিত করে তাদেরকে পর্যায়ক্রমে ছাটাই করা। কিন্তু কেন? প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অন্তভুক্তির কারণে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্যই ব্যহত হয়েছে, কলুষিত হয়েছে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন যারা সনদ পাওয়ার নিয়তে মুক্তিযুদ্ধ করেননি, কেউ কেউ না খেয়ে দিন কাটায়, রিক্সা চালায়, ভাতা পায়না।
বয়সের ভারে নুয়ে পড়া এই সকল মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাক্তিগত, পারিবারিক সকল সমস্যা সমাধানে এই প্রজন্মের যুবকদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে কেননা নিজের জীবন বাজি রেখে তারাইতো একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র্ আমাদের উপহার দিলেন। তাদের জায়গায় আমরা হলে হয়তো তাদের মতো অবদান রাখা সম্ভব হতো না।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি, গোলাম কিবরিয়া মজুমদাররা সংখ্যায় খুব বেশি যেমন নয়, তাদের স্বপ্ন ও চাহিদাও খুব বেশি নয় এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করাও খুব কঠিন কাজ নয়। আমরা যুব সমাজ, সরকার ও সাধারন জনগণ যদি তাদের কদর না করি তবে হয়তো একদিন আমাদের সেই মাশুল গুনতে হবে। সরকার ও সচেতন মহল এই বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে আসবেন । সেই প্রত্যাশা করি।
©somewhere in net ltd.