নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

মোঃ খুরশীদ আলম

মোঃ খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম

মোঃ খুরশীদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

► ইসলামে দেনমোহর ও পাত্র/পাত্রী নির্বাচন ◄

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১:২৬


► ইসলামে দেনমোহর ও পাত্র/পাত্রী নির্বাচন ◄

► “বিসমিল্লাহতে গলদ” বলে একটি শব্দ আমাদের সমাজে খুব প্রচারিত। কোন কাজের শুরুতে ভূল করা হলে এই শব্দটি ব্যবহার করা হয় । একটি কাজ পরিকল্পনা মাফিক শুদ্ধভাবে আরম্ভ করা সম্ভব হলে কাজটির পঞ্চাশ ভাগ কাজ হয়ে গেছে মর্মে আমাদের সমাজে মনে করা হয় । এটি যেমন সত্যি তেমনি কাজের শুরুতে যদি ভূল করা হয় বা ভূল পথে চলা হয় তাহলে চড়া মাশূল দিতে হয় । বছরের পর বছর ক্ষেত্রবিশেষে আজীবন যন্ত্রনা ভোগ করেও কষ্ট দুরীভূত হয়না। এমনই একটি সমস্যা নিয়ে আলোচনার পথে হাঁটছি।
► বিবাহ অতি প্রাচীন একটি প্রথা । পৃথিবীর সকল জাতি তাদের নিজস্ব নিয়ম-নীতি অনুসরনে বিবাহের পদ্ধতি চালু রেখেছে। বিবাহ বর্হিভূত যে কাজ সমাজে নীতিনৈতিকতা বিবর্জিত বলে বিবেচিত, বিবাহের মাধ্যমে তা বৈধতা লাভ করে এবং সেটাকে পূণ্যের কাজ বলেও ঘোষণা রয়েছে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এ অধ্যায়ে বিভিন্ন ধর্ম বিভিন্ন রকম আচার-আনুষ্ঠানিকতা প্রবর্তন করেছে এবং হাজার বছর ধরে জীবনের ধারাবাহিকতায় তা মেনে চলেছে। আমাদের দেশে সনাতন(হীন্দু), বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইসলাম প্রত্যেক ধর্মের অনুসারিরা তাদের নিজ নিজ ধর্মীয় রীতিতে এই পর্বটি আ্ঞ্জাম দিয়ে থাকে। ইসলাম ধর্মের এই আনুষ্ঠানিকতায় বাধ্যগতভাবে পালনীয় একটি বিষয় নিয়ে আলোচনার প্রয়াস পাবো যদি সময় ও সুস্থতা সহায় হয়। প্রচলিত ভূল ধারনার কারণে শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ধার্মীক- অধার্মীক অনেকেই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না। ফলে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আমরা ছেড়ে দেই এবং জীবনের এক সময আমরা এর প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করি। কিন্তু তখন আর কি বা করার থাকে তিলে তিলে কষ্ট ভোগ করা ব্যতীত।
► বিবাহের সময় পাত্রীকে বরপক্ষ কর্তৃক যে উপঢৌকন প্রদান করা হয় শরিয়তের পরিভাষায় তাকে দেনমোহর বলে। দেনমোহর বিষয়টি নিয়ে কথা বলার আগে জানতে হবে বিবাহ কি, কেন। তাহলে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে সুবিধা হবে।
► রাসুলুল্লাহ সালল্লাহু আলইহে ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন “ বিবাহ আমার সুন্নত; যে আমার সুন্নতকে প্রত্যাখ্যান করিবে সে আমার (উম্মত) নয়” কারা বিবাহ করবে আর কারা সবর এখতিয়ার করবে সে সম্পর্কে মহানবী বলেন “ তোমরা বিবাহ কর, তাহা হইলে আমার উম্মত বেশী হইবে। আমার উম্মত বেশী হইলে আমি অন্যান্য উম্মতদের মোকাবেলায় (প্রতিযোগিতায়) গৌরব করিতে পারিব। তোমাদের মধ্যে যাহারা সঙ্গতি সম্পন্ন আছে অর্থাৎ, এত পরিমাণ অর্থ সম্পদ আছে যে, তাদ্বারা তাহার স্ত্রী ও সন্তানদের ভরন-পোষণ করিতে পারে, তাহাদের বিবাহ করা উচিত এবং যাহাদের সঙ্গতি নাই তাহাদের রোযা রাখা উচিত; ঐরূপ রোযা রাখার দ্বারাও মানুষের কাম-রিপু দমন হইয়া যায়।”
► যদি পুরুষের কাম-রিপু প্রবল না হয় এবং বিবাহের খরচ বহন করার সঙ্গতি থাকে তবে সেই ব্যক্তির জন্য বিবাহ করা সুন্নত, আর যদি কাম-রিপু অনেক প্রবল হয়, তবে তার জন্য বিবাহ করা ওয়াজেব; কেননা, খোদা না করুক, জেনায় লিপ্ত হলে হারামকারী করার গোনাহ হবে। আর যদি কাম-রিপু প্রল হয় কিন্তু খরচ বহনের সঙ্গতি না থাকে, তবে তারা সব সময় রোযা রাখতে হবে এবং যখন খরচ যোগাড় করতে পারে, তখন বিবাহ করবে।
► আজকাল কথায় কথায় বলে থাকি বিবাহ করা ফরজ যা প্রত্যেকের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়। এই ধারনার বশবর্তী হয়ে পিতার উপর নির্ভরশীল, বেকার বা অনেক স্কুল কলেজ পড়ুয়া কোমলমতী সন্তানের এ পথে পা বাড়িয়ে সংসারে সর্বনাশ ডেকে আনছে।
► যার আর্থীক সামর্থ্য আছে, যে সুস্থ, বালেক সেই ব্যাক্তি বিবাহ করবে, বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সুন্নত তরিকায় পালন করবে, স্ত্রীকে দেনমোহর প্রদান করবে।
►►► কেমন পাত্রী/পাত্র বিবাহ করা চাই◄◄◄
► হাদীস থেকেই জানি → “ হে আমার উম্মত ! কেহ বিবাহ করে সম্পত্তি দেখিয়া, কেহ বিবাহ করে সম্পত্তি দেখিয়া, (কেহ বিবাহ করে সম্মান ও উচ্চ বংশীয় দেখিয়া) এবং কেহ বিবাহ করে দ্বীনদারী ও পরহেযগারী দেখিয়া ! অতএব, হে আমার প্রিয় উম্মত ! আমি তোমাদিগকে অছিয়ত করি যে, তোমরা দ্বীনদারী-পরহেযগারী দেখিয়া বিবাহ করিবে; তাহা হইলেই ইনশা-আল্লাহ্ তোমাদের জীবন সার্থক ও শান্তিময় হইবে। ”
আজকাল পাত্রী সুন্দরী, উচ্চ বংশীয় হলে পাত্রের হিড়িক লেগে যায়। সুন্দরী, উচ্চ বংশীয় পাত্রীকে বিবাহ করতে নিষেধ করছি না বলছি এটা যে, পাত্রটাও যেন পাত্রীর সমানে সমানে হয় । সমানে সমানে না হওয়ার কারণে আজকাল অনেক সমস্যা দেখা দেয়। পাত্রী যদি পাত্রের তুলনায় বেশী শিক্ষিত হয় তাহলে পাত্রী কখনো মুখের উপর খোটা দিয়ে বসে, বেশী সম্পদশালী ধনী ব্যাক্তির সন্তান হলে কখনো বাবার ক্ষমাতার দাপট দেখায়। ফলে সংসারে স্থায়ী অশান্তি বাসা বাধে। বিবাহের পূর্বে পাত্র পাত্রীর পারিবারিক ষ্ট্যাটাস, শিক্ষাদিক্ষায় খুব বেশী ডিফারেন্স থাকা উচিত নয়।
►►► দেনমোহরের পরিমাণ কত হবে ◄◄◄
► প্রসঙ্গটি উঠলে আমাদের চট্টগ্রামের সহজ সরল বান্দাদের মুখে শোনা যায় “ এজকাল রিক্সাওয়ালার দেনমোহরও নূন্যতম 5 লাখ টাকা ধার্য্য করা হয় ।” তার মানে হলো, দেনমোহর যতো বেশি ধার্য্য করা যাবে ততো ভাল, মেয়ের ভবিষ্যত বলে কথা। কখনো কখনো বলা হয় “ দেনমোহর কোটি টাকা ধার্য্য করলেও অসুবিধা কি? সেটা তো কাবিনে লেখা থাকবে, দিতেতো হচ্ছেনা।” এসকল মন্তব্য হতে আঁচ করা যায় দ্বীন এবং ধর্ম হতে আমরা কতটুকু বিচ্যুত হয়ে পড়েছি। বিবাহের সময় যারা দেনমোহর পরিশোধ করেনা এবং মেয়ের ভবিষ্যত চিন্তা করে বেশী টাকা দেনমোহার ধার্য্য করেন অনেক সময় দেখা যায় পারিবারিক বিভিন্ন জটিলতার জন্য তালাকের সম্মুখিন হতে হয়, আর তখনই দেখা দেয় জটিলতা। দেনমোহর আদায়ের জন্য পাত্রীপক্ষকে আদালতের স্মরনাপন্ন হতে হয় এবং দেনমোহরের বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করার জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আদালতে ভোগন্তি পোহাতে হয়। এদিকে পাত্রীর বয়স বাড়তে থাকে, অনত্র বিবাহ দিতে গিয়ে হাজার রকম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। তাহলে কি দেনমোহর লাগবে না বা দেনমোহর ধর্য্য করতে হবে না ? আসুন জেনে নিই রাসুলের হাদীস হতে → “ সব চেয়ে ভাল বিবি সেই, যে বিবির মহর কম হয়।” কমপক্ষে মহরের পরিমাণ দশ দেরহাম প্রায় পৌনে তিন তোলা রুপা। এর চেয়ে কম হতে পারে না, বেশীর কোন সীমা নাই। মোট কথা, স্বামী তার সামর্থ্যানুযায়ী স্ত্রীকে মোহার প্রদান করবে এবং তা বিবাহের সময়ই পরিশোধ করবে।
► আমাদের দেশে সাধারনত বিয়ের সময় মোহার প্রদান করা হয়না (অনেকেই পরিশোধ করে) এবং বেশী মোহর লেখা বা কাবিননামায় মোহরের পরিমাণ বেশী লেখা একটা বদরেওয়াজে পরিণত হয়েছে যা শরিয়ত সম্মত নয়।
►►► কিছু ভুলের অবসান ◄◄◄
(বিবাহের সময় যদি দেনমোহর পরিশোধ না করে থাকে)
► স্ত্রীকে স্বামী তালাক দিলে স্বামী দেনমোহরের টাকা পরিধোশ করতে হবে।
► অনেক পুরুষ বলে থাকেন স্ত্রী যদি স্বামীকে তালাক দেয় তাহলে স্বামী দেনমোহর দিতে হয়না। এটা একটি মিথ্যা কথা এবং সুবিধাবাদীদের কথা। স্ত্রীও যদি স্বামীকে তালাক দেয় তবে স্বামী স্ত্রীর দেনমোহরের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
XXX প্রথমেই বলেছিলাম বিসমিল্লাতে গলদের কথা । বিবাহের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবদাতে যারা সুবিধা দেওয়ার সুবিধা নেওয়ার কুটকৌশল অবলম্বন করেন, শরিয়তের বিপরীত কাজ করেন অর্থাৎ বিসমিল্লাতে গলদ করেন তাদের জীবন সুন্দর হয়না, তাদের সাংসারিক জীবন অশান্তিতে ভরপুর থাকে। বিশেষ করে যে সকল পুরুষ মানুষ স্ত্রী লোকদের হক অর্থাৎ দেনমোহর পরিশোধের ব্যাপারে উদাসীন থাকেন তাদেরতো নয়ই। আমাদের সমাজে কি বাবারা, কি ভাইয়েরা, কি মায়েরা সকলেই প্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বোঝা মনে করেন, কোন রকম কারো ঘাড়ে চড়িয়ে দিতে পারলেই হলো। শেষে একসময় নিজের ঘাড়েই এসে পড়ে। এমনকি মেয়েরাও তাদের এই অধিকার সম্পর্কে সচেতন নয়। দেনমোহর একজন নারীর হক্ব, অধিকার, দয়া নয়। সে এটা পাবে, স্বামী তাকে এটা আদায় করে দিতে হবে। এটাই রাসূলের সুন্নত, ইসলামের মহান বিধান। আল্লাহ তায়ালা বলেন “ আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশীমনে। তারা যদি খুশী হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দে ভোগ কর। ” (সূরা আন নিসা- 4)
XXX পরিশেষে বলবো বিবাহের মতো এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ কলে পাত্র/পা্ত্রীপক্ষ আরো ভাবুন, বেশ ভাবুন, বেশ কয়েকবার। সুন্নত তরিকা অনুসরন করুন। দেনমোহরের মতো একটি সুন্দর নিয়মকে কুসংস্কার আর স্বার্থের জালে আটকে গুনাহগার হওয়ার কোন যুক্তি নেই।

( লেখাটিতে “বেহেশতী জেওরের” সাহায্য নেয়া হয়েছে। কিতাবটি পড়ে বিবাহ, দেনমোহর সম্পর্কে মাসয়ালা গুলো জানুন, সচেতন হোন। আজ আপনি হয়তো কারো মেয়ে বিয়ে করে আনছেন কিন্তু কাল? আপনার বোন বিয়ে দিবেন, তখন ? )

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০৯

কি করি আজ ভেবে না পাই বলেছেন: দেনমোহরের মতো একটি সুন্দর নিয়মকে কুসংস্কার আর স্বার্থের জালে আটকে গুনাহগার হওয়ার কোন যুক্তি নেই।
ভীষন ভীষন গুরুত্বপূর্ণ।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: পর্দা না করতে, না করতে আজ এমন হয়ে পড়েছে যে পর্দা করা ফরজ এটাও আর মনে আসেনা। তেমনি দেনমোহরের বিষয়টিও এমন হয়ে পড়েছে। এটা পরিশোধ না করা গুনাহ এই ধারনাটা আজ বিলু্প্ত প্রায়। সকলের মনে সে বোধ জাগ্রত হোক, সেই প্রত্যাশা করি । ধন্যবাদ ভাই “ কি করি আজ ভেবে না পাই” কষ্ট করে পোষ্ট পড়ে মতামত ব্যক্ত করেছেন বলে।

২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৩০

মিতক্ষরা বলেছেন: দেন মোহর অল্প হওয়াটা সুন্নত। নারীদের নিজস্ব আয় উপার্জন থাকলে তারা স্বামীর প্রদত্ত অর্থের উপরে ভরসা করে না।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৯

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: আসলে আমাদের দেশের নারীরা অতীমাত্রায় সহজ, সরল আর স্বামী সেবিকা মনোভাব পোষণ করে। এটা ভাল। তার মনে করে দেনমোহর দিয়ে কি হবে, স্বামী সংসারে সুখে দিনাতিপাত করছি এটাইতো বেশ। আসলে এই মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। কেননা স্বামীকে দেনমোহর পরিশোধের ব্যপারে স্ত্রী উৎসাহ প্রদান করা উচিত। এটা সুন্নত, আর জেনে বুঝে একটা সুন্নত তরক করা কোন ভাবেই উচিত নয়। ধন্যবাদ মিতক্ষরা কষ্ট করে পোষ্ট পড়ে সুন্দর মতামত দেয়ার জন্য ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.