নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

মোঃ খুরশীদ আলম

মোঃ খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম

মোঃ খুরশীদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

► শিক্ষকতার সেকাল ও একাল : একটি পর্যালোচনা

০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:১৯

► শিক্ষকতার সেকাল ও একাল : একটি পর্যালোচনা
============ মোঃ খুরশীদ আলম

কিছু মানুষ মানুষের হৃদয়ে চিরদিন বেঁচে থাকে। এদের ভোলা যায়না, এরা অমর এদের কর্মের দ্বারা। এদের কৃর্তীই তাদের অমর করে রাখে। মানুষ তাদের স্মরন করে হৃদয় ভরা শ্রদ্ধা ও ভালবাসায়। এরা আদর্শ কর্মে-ধর্মে, এরা অমর সৃষ্টিতে-বিস্ময়ে, এদের মৃত্যু নেই।

ছাত্র জীবনে প্রচুর টিউশনি করেছি। পড়িয়েছি অনেক ছাত্রছাত্রীদের। বেশীর ভাগ অভিভাবক ছিলেন খুবই আন্তরিক ও শ্রদ্ধাশীল। বেকার জীবনে তখন একমাত্র টিউশনিই ছিল ভরসা। খচর ছিল খুবই কম, Students দের বাসায় টুং-টাং আওয়াজ (চা-নাস্তার আয়োজন) আজো কানে বাজে। কানে বাজে বন্ধু সোলায়মানের মরহুমা বয়বৃদ্ধা মা প্রত্যেক দুপুরে বলতেন “ খেয়ে যাও” । উনার এই স্নেনশীল আচরণ কখনোই ভুলবার নয়। আজ খুব বেশী মনে পড়ে মরহুম জাকারিয়া কমিশনার সাহেবের সেই উক্তিটি (নেতী বাচক মন্তব্য হওয়ায় সেটা উল্লেখ করা থেকে বিরত থাকটাই শ্রেয় মনে করি) । উজ্জল ভাই আমার জন্য কি মন্তব্যটাই না হজম করেছেন। আমি উজ্জল ভাইয়ের কাছে আজীবন ঋণী হয়ে রইলাম, ঋণী হয়ে রইলাম পোর্ট কলোনীর সেলিম ভাইয়ের কাছে, ঠিক সমানভাবে।

একজন অভিভাবক ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অফিসার জনাব শফিকুল ইসলাম বেবুল (মিমো-প্রিমোর বাবা)। উনার মরহুমা স্ত্রী’র (যাকে আমি মামী বলে ডাকতাম) স্নেহ ও আন্তরীকতা খুব কম মানুষের মাঝেই প্রত্যক্ষ করা যায়। গ্রীষ্মকালে প্রতি দুপুরে ও সন্ধ্যায় ফ্রিজের ঠাণ্ডা জুস, সরবত , তরমুজ ও বিভিন্ন ফল দিয়ে আপ্যায়ন করাতেন। আমার শরীর-স্বাস্থ্যের বিশেষ খবরাখবর নিতেন। প্রতি রমযানে ইফতারের পরেও ওনার বাসায় খেতে হত। সত্যি কথা বলতে কি, এমন আন্তরিক মানুষ আসলে আমি কম দেখেছি। অপর জন ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দরের আরেক কর্মকর্তা মরহুম জনাব মাহাবুবুর রহমান সাহেব। সত্যিই অনেক অমায়িক ছিলেন।

বন্দর মোহাম্মদীয়া মাদরাসার এক সময়ের শিক্ষক কামাল স্যারের মেয়ের কথা মনে পড়ে। খুব দস্যি ছিল, একটু বনি বনা না হলে একেবারে মাথায় উঠে বসতো। তাকে পড়াতে হতো পাম দিয়ে দিয়ে (আদর করে ও তোষামোদ করে)।

আমার Students দের অনেকেরেই বিয়ে হয়েছে। তারা এখন সংসারী হয়েছে। কেউ কেউ ভাল প্রতিষ্ঠানে থেকে ভাল জব করছে। আমি খুব ভাল পড়াতাম তা নয়। তবে নিয়মিত Students দের খোঁজ খবর নিতাম। পড়া না শিখলে নতুন পড়ায় যেতাম না। প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা বাড়ীর কাজ থাকতোই হাতের লেখা সুন্দর করার জন্য। নির্দিষ্ট সময়ের পরেও কখনো কখনো দেখে আসতাম তাদের কি অবস্থা, কি করছে, কিভাবে পড়ছে। আমি খুব রাগী ছিলাম বলে কখনো কখনো Students দের বেত্রাঘাতও করতাম। এ নিয়ে অবশ্য কোন সমস্যা হয়নি কোন অভিভাবকের পক্ষ হতে। এই যে, আমার এতো গুণের কথা বললাম আসলে এইগুলো শুধু আমার নয় সেই সময়ের প্রত্যেক গৃহ শিক্ষকই ছিলেন এমন মানসিকতার, অভিভাবকরাও ছিলেন তেমন।

যাদের পড়ানোর অভিজ্ঞতা আছে তারামাত্রই জানেন যে, কোচিং সেন্টারের দৌরাত্ব শুরু হয়েছে খুব বেশিী আগে নয়। 1998-2000 এর দিকেও কেচিং সেন্টার ছিল হাতে গুণা। তখন শিক্ষকরা বেশীর ভাগ বাসায় গিয়েই পড়াতেন, আমিও ছিলাম তেমন। তখন মাসিক মাইনে 500 টাকা হলেও যেন মনে হতো অনেক, পড়ার মানও ছিল ভাল। অভিভাবকরা গৃহ শিক্ষকের প্রতি বেশী উদার ছিলেন কোচিং সেন্টারের তুলনায়। তাই তারা শিক্ষদের ভাল নজরে দেখতেন এবং অন্তত সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাবোধটুকু উপহার দিতে কুন্ঠাবোধ করতেন না।

এখন 2018 সন, অনেক পরিবর্তন হয়েছে আমাদের মানসিকতায়। শিক্ষা ব্যবস্থাকে অনেক ঢেলে সাজানো হয়েছে। পাশের হার বেড়েছে, ক্ষিক্ষিতের হার বেড়েছে। সন্তানদের প্রতি যত্ন আর দেখাশোনাও বাড়ছে, সচেতনতা বেড়েছে মা-বাবা ও অভিভাবকদের মধ্যে। কিন্তু তাবুও, কোথায় যেন আমরা আগের তুলনায় অপূর্ণ রয়ে গেছি।

এখন অভিভাবকরা গৃহ শিক্ষকের উপর নির্ভর করেন না, গৃহ শিক্ষককে চা-নাস্তা দিয়ে আপ্যায়ন করানোর মতো সময় অনেক মা-বোনদের নাই বললেই চলে। এখন অনেকেরই গবেষণা টিভি সিরিয়ালে মনোসংযোগ নিয়ে। তাছাড়া, শিক্ষার্থীরাও কোচিং সেন্টারে গিয়ে পড়তে বেশী সাচ্ছন্দ্য বোধ করে। হাতে গুণা যারা গৃহে গিয়ে পড়ান তাদের ডিমান্ট অনেক বেশী। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই কম খরচে কোচিং সেন্টারে বাচ্চাদের পড়াতে হয় কখনো কখনো। আবার কোচিং সেন্টারে বন্ধু –বান্ধবদের সাথে একত্রে পড়ায় আনন্দবোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সবকিছু মিলিয়ে এখন কোচিং সেন্টারের জয়জয়কার, গৃহ শিক্ষকের তুলনায়।

মাধ্যমিক ধরণের প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এখন বিশেষ করে পঞ্চম শ্রেণীতে, অষ্টম শ্রেণীতে ও দশম শ্রেণীতে (এস.এস.সি ব্যাচ) বাধ্যতামূলক ভাবে কোচিং করানো হয়। ভাল রেজাল্ট করানোর জন্যে এই কোচিং বাধ্যতামূলক। তবে শিক্ষকদের দৃষ্টি থাকে ভাল রেজাল্টের চেয়ে ভাল মাইনের প্রতি। যে শিক্ষার্থী কোচিং করে না (হয়তো তার আর্থিক অবস্থা ভাল নয় বা অন্য কোন কারণ থাকতে পারে) তাকে সুদৃষ্টিতে দেখা হয় না। পরীক্ষায় নাম্বার কমিয়ে দেয়ার ভয় দেখানো হয়। এটা বর্তমানে একটা জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষকদের এমন আচরণের কারণে অনেক শিক্ষার্থীরা ও অভিভাবকরা আর্থিক ও মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েন।

সচেতন মহল এই সমস্যার উত্তোরণ চায়। সচেতন ও দায়িত্বশীল মহল এই দিকে দৃষ্টি দিবেন আশা করি। শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো মানুষকে মানুষ হিসাবে তৈরী করা, মানুষকে টাকা বানানোর মেশিনে পরিণত করা নয়। আমরা যত দ্রুত এটা বুঝতে সক্ষম হব তত দ্রুত আমাদের ভাগ্যের উন্নয়ন ঘটবে বলে আমি মনে করি।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


কোন কিছুই পরিস্কার হয়নি

০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: অনেক পরিস্কারের মাঝে দু’একটা অপরিস্কার পরিস্কারের মূল্য বাড়ায় স্যার।
আপনি পড়েছেন, ভেবেছেন। এটাই আমার সম্মান অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ধন্যবাদ।

২| ০৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:২০

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল লেখা

০৬ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৫

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: ভাল লাগল, আপনার ভাল লাগা। ধন্যবাদ স্যার।
ধন্যবাদ উৎসাহ দেয়ার জন্য।

৩| ০৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: চাঁদগাজী বলেছেন:


কোন কিছুই পরিস্কার হয়নি
০৬ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৫৭ ০

লেখক বলেছেন: অনেক পরিস্কারের মাঝে দু’একটা অপরিস্কার পরিস্কারের মূল্য বাড়ায় স্যার।
আপনি পড়েছেন, ভেবেছেন। এটাই আমার সম্মান অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। ধন্যবাদ।

আপনি মন্তব্যের উত্তর টা খুব সুন্দর দিয়েছেন।
অনেক ধন্যবাদ।

০৬ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।
লেখতে থাকি, লেখা শুরু হয় এক ভাবনায় কিন্তু শেষ হয় অন্য গন্তব্যে।
কিছু সত্য কথা, কিছু স্মৃতি স্মরণ করে লেখি।
অন্তত দু’একটা কথা কারো কারো সাথে মিলেতো যায়।
আমি কল্পনা করতে জানিনা, জানিনা কল্পনা করে লিখতে।
যখন যা দেখি, পরিবেশ-পরিস্থিতি হতে যা শিখি তাই উল্লেখ করি, করার চেষ্টা করি।
আর বাস্তবতা নিয়ে লেখাগুলো অনেকের ভাল লাগেনা এটাই স্বাভাবিক।
বর্তমান আর বাস্তবতায় বসবাস করে কল্পনা ও কার্টুন নিয়ে না ভেবে বরং বাস্তবতাকে তুলে ধরাই শ্রেয়।
কি বলেন ভাই রাজীব নূর ?

৪| ০৬ ই মে, ২০১৮ রাত ৯:১০

যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: কোচিং এর কারণে শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে। শিক্ষকদের মর্যাদানাশ হয়েছে।

০৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৭

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: সহমত বড়ভাই। পড়াশোনার মানও অনেক কমে গেছে।

৫| ০৭ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:০৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি যেই বিষয়টাকে তুলে ধরতে চান, সেটাকে লজিক্যালী দাঁড়া করানোর চেষ্টা করবেন।

০৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১:২৮

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: জ্বি আচ্ছা, পরামর্শে ধন্য হলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.