নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

মোঃ খুরশীদ আলম

মোঃ খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম

মোঃ খুরশীদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিজান সাহেবের ডায়েরী (লোকটা বড় অযোগ্য ছিল)

০৬ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৫১

মিজান সাহেবের ডায়েরী
(লোকটা বড় অযোগ্য ছিল)
মোঃ খুরশীদ আলম

রমযান মাস এলেই একটা আমূল পরিবর্তন আসে সবদিকে। মুসল্লি বাড়ে, দান-খয়রান বাড়ে, নেক কাজ বাড়ে, পাল্লা দিয়ে বাড়ে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রবাদির দাম। মিজান সাহেবের মধ্যেও একটা পরিবর্তন দেখা যায়। তার দুশ্চিন্তাও বাড়ে সমান তালে। তিনি ভাবেন, রমযান মাসটা যদি না আসতো তাহলে তার এতো দুশ্চিন্তা হতো না, স্বাভাবিক নিয়মে যেন একটা দেয়াল হয়ে দাঁড়ায় এই মাসটা। বাড়ে তার সন্তানদের চাওয়া পাওয়া। গিন্নীর প্রয়োজনীয় কাপড় চোপড়, সন্তানদের ঈদের নতুন জামা, মা-বাবার জন্য কেনাকাটা, মেহমানদের জন্য অগ্রিম বাজার হাট, ভাগিনা ভাগনেদের জন্য গিফট সব মিলেয়ে শুধু খরচ বাড়ার ধুম। পক্ষান্তরে আবার তওবা করেন। কারণ রমযান মাস হলো শ্রেষ্ঠ মাস, দোয়া কবুলের মাস, আমলের মাস, জান্নাত লাভের মাস। এ মাসের এতো নেয়ামতের কাছে হাবি যাবি খরচ? সেতো তুচ্ছ !
মিজান সাহেব ইদানিং কম কথা বলেন। হৈ হুল্লোড় কমিয়ে দিয়েছেন একেবারে। এটা নাই, ওটা নাই, শুধু নাই নাই আর নাই। শব্দগুলো শুনতে শুনতে কানে তালা পড়ার অবস্থা হয়েছে। সেদিনতো গিন্নী আক্ষেপ করে বলেছিল মিজান সাহেব নাকি বোবা হয়ে গিয়েছেন। তাই হাট বাজারের কথা বললে কোন উত্তর আসে না। মিজান সাহেব আবশ্য এর চেয়ে ভাল কোন রাস্তা খুজে পাননি। কি করবে বেচারা, বউয়ের গায়ে হাত তো তুলতে পারেন না। বাচ্চাগুলোও বড় হয়েছে।
বউগুলো একেবারে কেমন যেন। মিজান সাহেব ভাবে। আচ্ছা, এমন কোন বউ কি হয়, যে স্বামীকে বলবে “ ওগো পকেটে টাকা থাকলে বাজারগুলো নিয়ে এসো, আর না থাকলে পরে এনো। “ চা না খেলে কি হয় ? কটাকা খরচ তো কমে। সেই টাকায় কয়েক কেজি আলু আর পিয়াজতো কেনা যায়। মিজান সাহেবের গিন্নি সব ছাড়তে পারবেন বাট চা ছাড়তে পারবেন না।
রমযানের এই সংযমের মাসে মানুষগুলো কেন যেন অসংযমি হয়ে ওঠে। রাস্তায় জ্যাম, বাজারে পণ্যের অতিরিক্ত দাম ইত্যাদি ভাবিয়ে তোলে মিজান সাহেবকে। সেদিন তারাবিহ’র সালাত শেষে মুদি দোকানদার শাকিলকে দোকান খোলা দেখে জিজ্ঞাসা করলেন-
“কতো টাকা বিক্রি হয়েছে শাকিল ?”
শাকিল ক্যাশ খুলে দেখাল। ক্যাশ একেবারে খালি।
“ক্যাশ যখন একেবারে খালি থাকবে তাহলে সালাত বাদ দেয়া কেন?” – শাকিলকে প্রশ্ন করলেন মিজান সাহেব।
শাকিলের মতো এরুপ হাজারো ব্যবসায়ী আছে আমাদের সমাজে, যারা রমযানকে ব্যবসার মৌসুম হিসাবে বেছে নিয়েছে। সারা বছরের ব্যবসার মুনাফাটা যেন এ মাসেই তুলে নিতে হবে। নাহলে যেন সৃষ্টিকর্তা তাদের নরকে পাঠাবেন। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলে মিজান সাহেবকে।
সেদিনের কথা বলি, বাচ্চাটা রুহ আফজা খাবে বলেছে। মিজান সাহেব দোকানে গিয়ে দাম জিজ্ঞাসা করে হতভম্ব হয়ে পড়লেন। 250 টাকা দাম, যতদূর মনে পড়ে গত বছর 150 টাকায় কিনেছেন। কি এমন আছে যে এক বছরে 100 টাকা বেড়ে গেল। এর চেয়ে লেবুর শরবত অনেক ভাল, ভাবলেন মিজান সাহেব। গোমড়া মুখে বাসায় চলে আসলেন।
আর কটা দিন পরে মুসলমানদের শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। এ উপলক্ষ্যে পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক ফ্রিজ কিনেছে, ব্লাইন্ডার মেশিন কিনেছে আরো হরেক রকম জিনিসপত্র কিনেছে। এদের আয়ের উৎস সম্পর্কে মিজান সাহেব সংকোচহীন নন। যাকগে, তাতে কি আসে যায়। যার যার হিসাব তার তার কাছে। কিন্তু আক্ষেপটা বেড়ে যায় যখন সন্তানদের মুখের দিকে তাকান। তাদের অনেক সাধ, অনেক চাহিদা, বউটারে নিয়ে মিজান সাহেবের কতো স্বপ্ন। কিন্তু মিজান সাহেবের সাধ্যযে একেবারে কম। সন্তান ও বউয়ের প্রতি তার এই দুর্বলতা তিনি বুঝতে দেন না। কেমন যেন মুড নিয়ে থাকেন সব সময়। সন্তান ও গিন্নী তাকে খুব মেজাজি আর কড়া মনে করে কিন্তু ভেতরের রুপটা কেউ দেখেনা।
শালিকা জামা কাপড় চেয়েছে এ বছর। 12 বছর হয়েছে তার বোনকে বিয়ে করেছে কিন্তু একটি বছরও কোন কিছু দেয়নি তাকে। এ কেমন কিপটে দুলাভাইরে বাবা! তাদের খুব আক্ষেপ, দুলাভাইরা শালিকাকে কতো কিছু দেয় আর আমার দুলাভাই কিছু দেবে তো দূরের কথা হাসিমুখে কথাও বলেনা।
মিজান সাহেবের বিখ্যাত কবিতার কয়েকটা লাইন মনে পড়ে –
“ কি যাতনা বিষে
বুঝিবে সে কিসে
কভু আষি বিষে
ধ্বংসেনী যারে। “
মিজান সাহেব ভাবেন, সমাজে তার অবস্থান কোথায়। তিনি কি নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত ? উচ্চবিত্ততো নয়ই।
সান্তানদের পড়াশোনা, হাটবাজার, সামাজিকতা, সংসারের যাবতীয় খুটিনাটি সামাল দিতে গিয়ে মিজান সাহেব হারিয়ে যাবেন। মিজান সাহেব ভাবেন, তার কোন অবস্থান নাই সমাজে। না তিনি ভাল স্বামী, না ভাল অভিভাবক, না আদর্শ সন্তান ! না কিছুই না । তিনি একজন লাইনচ্যুত গাড়ি। চলতে চলতে যে একদিন শেষ হয়ে যাবে। আর সবাই বলবে “ লোকটা বড় অযোগ্য ছিল । “


মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৫

হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: হ্যা, সমাজের অধিকাংশ মধ্যবিত্তের অবস্থাই মিজান সাহেবের মত।

০৭ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: মিজান সাহেবদের জন্য প্রার্থনা, আল্লাহ যেন ধৈর্য ধরার সামর্থ দেন। আমিন

২| ০৬ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২

রাজীব নুর বলেছেন: আমার মনের কথা গুলোই এই পোষ্টে লিখেছেন।

০৭ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৪

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: খুব ভাল লাগল, স্বীকৃতি পেয়ে। ধন্যবাদ রাজীব ভাই।

৩| ০৬ ই জুন, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪৯

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আসলেই এখন মিজান সাহেবদের সংখ্যা বাড়ছে...

০৭ ই জুন, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৬

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: মিজান সাহেবদের সান্তনা দেয়ার ভাষা জানা নাই। তবে, কামনা করি ওনার সুখে থাকুন, সুখী হোন। ধন্যবাদ বিচারক ভাই, ভালবাসা রইল।

৪| ০৯ ই জুন, ২০১৮ রাত ১২:২৮

অচেনা হৃদি বলেছেন: জয়তু মিজান সাহেব । আশা করি এই সমাজের সব মানুষ কিপ্টেমি থেকে একদিন মুক্তি পাবে ।

১০ ই জুন, ২০১৮ দুপুর ১:৩২

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। জানিনা, কিপ্টামীটা কোথায় পেলেন। মিজান সাহেবের মতো লোকরা না পারে নিজেকে তুলে ধরতে না পারে একেবারে চুপষে যেতে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.