নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

......পরিচয়টা অপ্রকাশ্যই থাক.......

মুহাম্মদ তারেক্ব আব্দুল্লাহ

......... ”ক্ষুদ্র করো না হে প্রভু আমার হৃদয়ের পরিসর, যেন সম ঠাঁই পায় শত্রু-মিত্র-পর .........

মুহাম্মদ তারেক্ব আব্দুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইমনের ডায়েরিটি যেন ঝরাপাতা-১

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০০

আরেকটা কথা বললে একদম থাপ্পড় দেব।
গাল পেতে দিলাম, দে।
কদিন ধরে এই শহরে তুমুল বর্ষা, যেন ত্রিকাল ধেয়ে বৃষ্টি নামছে।
বিকেল থেকে হরর ছবিতে ডুবে ছিল ইমন। ছাতা নিয়ে রুমানা এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে। ছবির মোহাচ্ছন্নতার কঠিন ইন্দ্রজাল থেকে নিজেকে বিযুক্ত করে রুমানাতে বিন্যস্ত হয় ইমন। এ সময় রুমানার আগমন ইমনকে বিরক্ত করে।
রুমানা হরর জাতীয় কোনো কিছু দুচোখে দেখতে পারে না। এরপরও ইমনের সঙ্গ পেতে রুমানা বেশ কিছুক্ষন হরর ছবি দেখেছে। কী অদ্ভুতভাবে একটি ঘাড় থেকে মস্তক খসে পড়ল। কারও-বা ঘাড়ের মধ্যে দাঁত বসিয়ে দিচ্ছে। রূপসী নারীর বীভৎস দাঁত। কবর থেকে উঠে আসছে জ্যান্ত লাশ। কিছুক্ষণ দেখে দেখে হাই তুলতে তুলতে ইমনকে ধাক্কায়। এই একজনই তো বন্ধু তার, যার কাছে আবিরের গল্প করা যায়। রুমানার অন্তরে জ্বলে উঠতে থাকা প্রদীপের উল্লম্ফন সমূলে দাবিয়ে ইমন বলে, তোদের সম্পর্কটা আমি বুঝি না, যেন দাতা আর গ্রহীতা। ভার্সিটিতে থাকতে তোকে নোট দিয়ে হেল্প করত, অবিন্যস্ত তোকে বিন্যস্ত করে নিজের মতো চলতে শেখাল আবির। ওর কাছে গিয়ে তুই মাটির ঢেলা হয়ে গেলি। তোর নিজস্বতা ওর সামনে দাঁড়ায়ই না।
ঈর্ষা করছিস ওকে? ইমনের গা জ্বালাতে ঠোঁট চেপে হাসে রুমানা, আমি আদতে কোনো ভদ্রমানুষ নাকি? ক্লাস ওয়ান থেকে তোর সঙ্গে চলে চলে তোর মতোই বুনো হয়ে গিয়েছিলাম।’
আমি তোর প্রেমে পড়লাম কবে যে ওকে ঈর্ষা করব?
আমার এই খালি ঘর পেয়ে তোরা কী সব অসভ্যতা করিস... সুযোগ তো আমিই করে দিই, না?
বৃষ্টির ছাট জানালার শার্সি কাঁপাচ্ছে।
কালই রুমানার বিয়ে। মেয়ে আজ এসে আজাইরা বকবক করছে।
আবিরের সঙ্গে কত পথ হেঁটেছে রুমানা। কী চৌকস তার দেহ ভঙ্গিমা। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কত মেয়ে প্রেমে পড়েছিল আবিরের। ছেলেটি সামনে এসে দাঁড়ালে ফলসা পাতার মতো কাঁপত রুমানা। আবির সবাইকে বাদ দিয়ে...। ভাবলেই রুমানা অদ্ভুত রোমান্সের নৌকায় ভাসতে থাকে। নিজ চিত্তের আদলে রুমানাকে বিন্দু বিন্দু করে গড়ে নিয়েছে আবির।
আবিরকে রুমানা প্রায়ই বলে, ইমনটা জংলি। মেডিকেলে ভর্তি হয়ে ভাগা দিয়েছে। দিনরাত নিজ আলস্যে কার্পেটে গড়ায়। ওর বাবা-মা ওকে বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে গেছেন।’
সেদিন ইমনের ঘরে ছিল আলো-ছায়ার সঙ্গম। আবিরের সঙ্গে শরীরের প্রায় শেষ ধাপে গিয়ে যৌনজ্বরে কাতর রুমানা যখন চাদরের মতো নিজেকে বিছিয়ে দিয়েছে, ছটফট করতে করতে নিজেকে টেনে তোলে আবির, এখন নয়। এসব বিয়ের পর হবে।’ এতে করে রুমানার হৃদয়ের কানকোর সঙ্গে এমন সুন্দরভাবে গেঁথে গেছে আবির, অবিরাম ওর গল্প করার জন্য ইমনের মতো ভালো শ্রোতা সে আর পায় না।
তুইকি ইন্টার পাসই থাকবি?
তোর প্রবলেম কী?’ রিমোট হাতে টিভির স্ক্রিন পাল্টাতে থাকা ইমন বলে। তর ঝাঁকড়া চুলে কদিন চিরুনি পড়েনি সেই হিসাব নে। মাঝেমধ্যেই পাহাড়-জঙ্গলে উধাও হয়ে যায় সে, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী অধ্যুষিত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে টাকা ফুরোলে তারপর চলে আসে আবার।
একটানা ইমন না থাকার সময়টা বড় শূন্য লাগে রুমানা। আবিরের সান্নিধ্যও তাকে পূর্ণতা দেয় না। ওর সাহচর্য সাধনের চেয়েও অনেক তীব্র এই গল্পগুলো রঙিন সুতোয় বুনে বুনে ইমনকে শোনানো।
তুই মানুষ না হয়ে অন্য কিছু হওয়ার কথা ছিল।’
রুমানার এ কথায় হা হা করে হাসে ইমন, এদ্দিনে বুঝলি?
শুধু কি আবিরের গল্প? আবির যখন তার জীবনে আসেনি, নিজের জীবনের প্রতিটি টুকরো গল্পকে রীতিমতো রূপকথা বানিয়ে রুমানা ইমনের কাছে প্রকাশ করেছে।
শৈশব থেকেই রুমানা অনুভব করে, একটা ছায়া ঘোরে তার সঙ্গে, যার কোনো অবয়ব নেই, রূপ নেই। যখন সে একা থাকে তখন ফিসফিস করে সেই ছায়ার সঙ্গে ভরা পূর্ণিমার চাঁদে যাওয়ার কথা বলে। কুয়াশা-ভোরে অনন্তে উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া থেকে মাছকুমারী হয়ে রুমানাকে সমুদ্রে সাঁতার কাটার গল্প বলে সেই ছায়া। ভয়ে হাত-পা হিম হয়ে আসে বলে কখনো একা ঘরে ঘুমায় না রুমানা।
রুমানা শৈশবে এসব কথা বললে সবাই হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। একমাত্র ইমন বিশ্বাস করে বলেছে, তোর ছায়ার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব হয়ে গেছে, সে এখন আমার সঙ্গেও ওই সব গল্প করে । [চলবে]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.