নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইয়ার অব দ্য এলিফেন্ট : দৈশিক ও মানবিক স্বাধীনতার আখ্যান

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১১:০৯

ভাবছিলাম তিনি লায়লা আবুইয়ালা হবেন । কিন্তু নামটা উল্টে পাল্টে দেখি, লায়লা আবুজায়েদ । মরক্কোর নারী । গল গল করে বেরিয়ে আসে যার শব্দের স্রোত । ঠিক পাথরের ছোট-বড় নুড়ির উপর দিয়ে বহমান ঝিরির মতো ।

তিনি তালাক বলেন নিরাবেগে, অথচ যখন লেখেন “আইনানুযায়ী তোমার প্রাপ্য ও কাগজপত্র পৌঁছে দেওয়া হবে”, তখন দিশেহারা লাগে । বিশ্বাসের কাছে হারতে না পেরে তিনি ছোটেন ফেজ থেকে কাসাব্লাঙ্কায়, ফরাসি উপনিবেশ থেকে মরক্কান স্বাধীনতায় । স্বামীর তালাকে তার আফসোস নেই, কিন্তু সদ্যস্বাধীন দেশের সমাজ কী করে ভাগুড়াদের স্থান দেয়, আর তার জন্যে বরাদ্দ থাকে কেবল একটা অন্ধকার কক্ষ—এটা কি দানব আর মানবের মতোই বিস্তর ব্যবধান গড়ে নি—এই তার প্রশ্ন ।

নারীও লিখতে পারে এই ধারণা প্রথম শক্ত হয় অরুন্ধতি রায়ের কলাম পড়ে—এইবার তো তিনি ‘দ্য মিনিস্ট্রি অব আটমোস্ট হ্যাপিনেস’ লিখে একেবারে ফাটিয়ে দিয়েছেন—কিন্তু এই যে লায়লার ‘ইয়ার অব দ্য এলিফেন্ট’, এটা লুকিয়ে ছিল কেন?

একজন মাজারী শেখের মুখ থেকে তিনি যেভাবে কোরানের ‘অনুতাপ’ বের করে এনেছেন, যেমন করে বলেছেন “মানুষের সম্পদের মধ্যে নীতিই সবচে’ নশ্বর” আর “বিশ্বাসী হৃদয়ই কেবল অপরিবর্তনীয় থাকে”, ভেবে বোকা হয়ে গেলাম । এই বই তো বিবিসি এমনি এমনি পাঠ করে নাই ।

স্বাধীনতা মানুষকে কী দেয়? মানুষ যখন দুর্যোগে পড়ে লড়াই করে, মানুষে মানুষে মিলে যায়, কাঁধে হাত আর হৃদয়ে হৃদয় রেখে ফ্রন্টে দাঁড়িয়ে প্রত্যাশা করে, একদিন সুদিন আসবে—জোচ্চরের সংকট কাটবে, আমাদের আক্রোশ চিরকালের মতো দাফন হবে এবং আমরা বাদশার মতো উঁচু গলায় বলবো, আজ আমাদের ওপর দুটি রহমত হয়েছে—দেশে ফিরে আসার এবং আপনাদের সঙ্গে মোলাকাতের ।

কিন্তু মানুষ তো কেবল মানসিক সুদিন চায় না, মানবীয় সুদিনও চায় । কলোনিয়াল পুলিশের ভয়ে যে একসময়ে খোঁড়া হয়ে পালাচ্ছিল আর বলছিল, আমি ধরা পড়লে তোমাদের সবার নাম বলে দেব—সে-ই স্বাধীনতার পর সবচে’ ত্যাগী-স্মৃতি উগড়ে দেয়, সরকারের উপদেষ্টার মর্যাদা পায় ।

অবশেষে হতাশাকেই পুঁজি করে তিনি পশম বোনেন, আর বিক্রির পরে দেখেন, সে-পয়সায় তার কাফনের যোগাড়ও হবে না, তখন আবার মাজারে যান এবং ফিরে আসেন এই উত্তর নিয়ে— পয়সা না হোক, বুনন কি তোমাকে হতাশা ভুলতে সাহায্য করে নি? ফলে তিনি আবারও ফরাসীদের কাছেই কর্মলাভ করেন—এই প্রশ্ন উহ্য রেখেই—এটাও কি নীতিহীনতা নয়?

লায়লা আবুজায়েদের এই বই কী করে যে পাঠ করা যায়, আমি দিশা পাই না । এতটা উলঙ্গ সত্য, এইরকম মিথ্যাকে খিস্তি দিয়ে তাড়ানো গল্প, উপরতলা থেকে নীচতলার হাড়িভাঙা ইতিহাস কখনো রচনা হয়েছে কি? একজন নারীর কাছে পৃথিবী শুধু যৌবন চায় না, নারী তো কাটাচামচের টুংটাং আর বন্ধু-আড্ডার জৌলুস নয়, নারী সৃষ্টিশীল, নতুনের জন্মদাত্রী ।

ইয়ার অব দ্য এলিফেন্ট মানে কী—হস্তীর বৎসর—এটা কী? রসুলের আবির্ভাবের বছরের আবরাহা-ইতিহাস নয়—এর অর্থ কি পঙ্কিল সমাজকে নুড়ির মতো ক্ষুদ্র কঙ্করে ধূলিসাৎ করে নৈতিকতার নতুন উদ্বোধন নয়? তাহলে সেটাই এই গল্পের মূলকথা । তুলনীয় নয়, অতুলনীয় ।

বিস্ময়, বিস্ময় !

তবে নির্দ্বিধায় বলছি, সলিমুল্লাহ খানের ভাই সাদত উল্লাহ খানের অনুবাদটাকে মন্দ বলা যেত না, যদি প্রুফরিডিংয়ে এত সমস্যা না থাকত । বাংলা একাডেমি এই বইটায় এত ভুল নিয়ে এইভাবে কোন আক্কেলে প্রকাশ করল—কে জানে ।

ইতিহাস ঘুরে ঘুরে আমরাও আবরাহার আজদাহামির পাঁকে আটকে পড়েছি যেহেতু, তাই আমুল ফীল—ইয়ার অব দ্য এলিফেন্ট—হস্তীর বৎসর—আমদেরকে “আইনানুগ প্রাপ্য ও কাগজপত্র পৌঁছে” দেওয়ায় একটা ভূমিকা রাখতেও পারে, যদি আমাদের ‘স্বামী’দের দেওয়া তালাককে আমরা নৈতিকতার বলে মোকাবেলা করতে পারি ।

লায়লা আবুজায়েদ, জিন্দাবাদ...

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ৭:০৩

মলাসইলমুইনা বলেছেন: বইটা নিয়ে আরো একটু বিস্তারিত লিখলেন না কেন ?

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪২

মনযূরুল হক বলেছেন: লিখব, ঘোরটা কাটুক... এইটা ঘোরের মধ্যে লেখা...

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১০:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর একটি পোষ্ট দিয়েছেন।
ভালো লাগলো।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ২:২১

মনযূরুল হক বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.