নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক

ভালো আছি

মনযূরুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাষাও ধার্মিক হলো কবে ?

১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:২১

বাংলাভাষা আরবি রীতি মেনে তৈরি হয় নি—এটার নিজস্ব গতি-প্রকৃতি আছে, ছন্দ-তাল-লয় আছে । নিজস্ব একাডেমি আছে । ভাষা নিয়ে গবেষণা আছে । আপনি কথায় কথায় আরবিকে টেনে ভাষাকে ইসলামিকরণের হাস্যকর উদ্যোগ নিতে পারেন না । এটা চরম বোকামি ।

আরবি ভাষা ইসলামি ভাষা—এই যুক্তি দেখিয়ে যারা অন্য ভাষাকে হেয় করতে চান, তাদের জানা উচিত, পৃথিবীর ১৫০ কোটি মুসলমানের মধ্যে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের নিত্যদিনের ভাষা আরবি নয় । পৃথিবীর বহু ভাষা মুসলমানদের হাতে গড়ে উঠেছে, লালিত হয়েছে, ইসলাম-চর্চা বহু ক্ষেত্রে আরবিকেও ছাড়িয়ে গেছে ।

কোনো ভাষাতেই ভিন্ন ভাষার শব্দ থাকে না, বরং প্রবেশ করতে হলে ভাষার এটিকেট মেনে সেই ভাষার আপন হয়েই প্রবেশ করতে হয় । এটা চাইলেই কোটা দিয়ে পূরণ করা বিষয় নয় । নজরুল-ফরুরুখ-মুজতবা আলী-মঈনুস সুলতান প্রমুখের রচনায় হাজারো আরবি-ফার্সি শব্দের বাংলায়ন লক্ষ করুন—আপনার কি সেগুলো ভাষার বিকৃতি মনে হয়, নাকি মাতৃভাষার মতোই পাঠে আরাম হয় ?

ইসলামি ভাষা কী কী, কেউ কি বলতে পারবেন ?

একশ্রেণিকে দেখি, নামাজ না লিখে নামায লেখায় জোর দেন এই জন্যে যে, তাতে মূলভাষার মৌলিকতা রক্ষা পায় । কিভাবে রক্ষা পায় ? ফার্সির ওই অক্ষরটার বাংলা উচ্চারণ ‘য’-এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ, এই কথা কে বলেছে ?

কাউকে দেখি সেজদা না লিখে সিজদা লেখেন আরবির কাছাকাছি থাকার জন্যে, অথচ মূল শব্দটা হলো ‘সাজদা’ । তা-ও কোনোমতে ‘সিন’ এর উচ্চারণ ‘স’ দিয়ে মেনে নিলে । কারণ এই ‘স’-টা বাংলা শব্দে ‘শ’-এর মতো এবং বিদেশি শব্দে ‘ছ’-এর মতো উচ্চারিত হয় । যেমন ‘সন্ধ্যা’ (শোন্ধা), সিস্টেম (ছিছটেম) ।

কাউকে কখনও ‘নাবী’ লিখতে দেখলাম না, আজীবন ‘নবী’ই লিখে এসেছেন । তাদেরও দেখি এখন দীর্ঘ ঈ না থাকলে ‘ইসলাম’ চলে যাওয়ার শঙ্কায় ত্রস্ত । অবাক কাণ্ড ! তাহলে এতদিন যে ‘ন’-তে আকার দিয়ে বাংলাটা পড়েন নি, তাতে ক্ষতি হয় নি ? এভাবে অজস্র উদাহরণ দেওয়া যায় ।

বাংলায় দীর্ঘ-ঈ বা দীর্ঘ-ঊ কিন্তু স্বর নয়—এটা কেবলই একটা প্রতীক । আপনি বাংলা গানের সুর শুনলেই আশা করি বিষয়টা বুঝতে পারবেন । এটা আরবি বা উর্দু ভাষার মতো মদ রক্ষা করে না । বেশী লিখলে টান দিয়ে বলতে হবে আর বেশি লিখলে টান ছাড়া—এমন কোনো বিষয় নেই ।

যিনি আরবি মূলশব্দটা জানেন, তাকে দীর্ঘ-ঈ দিয়ে বোঝানোর তো কিছু নেই, আর যিনি জানেন না, তাকে দীর্ঘ ঈ দিয়ে কি আপনি বোঝাতে পারবেন যে, ওখানে একটা ইয়া মারুফ আছে ?

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ভাষারীতি দেখলে আক্কেলগুড়ুম হবার যোগাড় হয় । যদিও সেটা ফাউন্ডেশনের কোনো বইতেই সার্থক প্রয়োগ হয়েছে বলে জানি না । এ-ছাড়া আরও বহু প্রতিষ্ঠান নিজেদের মতো করে ভাষারীতি তৈরি করছেন । ইসলামঘেঁষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সেসব রীতি বাংলার মূলরীতির সঙ্গে যোজন যোজন দূরত্বই তৈরি করেছে—ইসলামের কোনো উপকার তাতে হয়েছে কি না, জানা নেই ।

গত বইমেলার পরে মাকতাবাতুল আযহারের (ইসলামি ঘরানার সবচে’ বড় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান) একটা ঘরোয়া অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম । তারাও দেখলাম ‘শুদ্ধি’ নামে একটা ভিন্ন প্রকাশনী সামনে আনছেন বইমেলা জায়গা করে নেওয়ার জন্যে । তারাও সেখানে বলেছেন—বাংলা একাডেমির রীতি ফলো করবেন । অথচ এই কাজটা আরও ২০ বছর আগে করা দরকার ছিল । তখন উদ্যোগ নেওয়া হলে হয়তো এখন বইমেলায় বিরাট অংশের শুদ্ধ ইসলামরিলেটেড বইয়ের উপস্থিতি দেখা যেতে পারতো ।

বাংলা একাডেমি বাংলাভাষার একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান । এখানে ভাষারীতি নিয়ে যত দীর্ঘসময় গবেষণা হয়েছে এবং তার ফলে ভাষার প্রমিত যে-রূপ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমরা কি চাইলেই দুয়েকজন যদু-মধুর সুপারিশ মেনে একটা ভাষারীতি তৈরি করে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করাতে পারি ? ভাষাকে ইসলাম-রিলেটেড করার জন্যে যেই গুচ্ছের রীতি আমাদের বিভিন্ন প্রকাশনীর আঙিনায় ঝুলছে—সেগুলোর কি আসলেই একাডেমিক কোনো মূল্য আছে ? আছে কোনো সর্বগ্রাহ্য সমাদর ?

এমনকি আরবি ভাষায়ও আজকাল ‘ফা’-তে তিন নুকতা দিয়ে ‘ভ’ লেখা হয়—ভায়েল, ভিয়েনা প্রভৃতি শব্দ লিখতে, আবার ‘জিম’-এ তিন নুকতা দিয়ে ‘চ’ লেখা হয় । ভাষার এই পরিবর্তন তো রুদ্ধ করার উপায় নেই । এটাকে ধর্মবিরোধী ভাবাও অমূলক ।

সুতরাং বলছি—হে জনাব, ‘ঈদ’ শব্দটাকে ‘ইদ’ লেখা দেখেই আপনি একজন ইসলামপ্রেমীকে বামপন্থী আখ্যা দিয়ে বসবেন না । এসব আপনাকে অগ্রসর করবে না, কেবল বাংলাভাষী মুসলিমকে কষ্ট দেওয়াই সার হবে ।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৪৮

বাউলা সন্ন্যাসী বলেছেন: ভালো লাগলো। যৌক্তিক কথা.....

১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ৯:৫৬

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই..

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১০:৪৬

মোহাম্মদ আলী আকন্দ বলেছেন:


এক শ্রেণীর লোক আছে ধর্ম নিয়ে সবসময় বাড়াবাড়ি করে। আল্লাহ বলেছেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করবে না। ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ির কারণে অতীতে অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।
আরেক শ্রেণীর লোক আছে একে বারেই নির্লিপ্ত। কোন কিছুতেই কোন যায় আসে না।
কিন্তু সঠিক পথটা হচ্ছে দুইয়ের মাঝ খানের পথ। আল্লাহ বলেছেন, তোমরা মধ্যে পন্থা অবলম্বন কর। মুসলমানদেরকে মধ্যে পন্থী জাতি হিসাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।

আলোচ্য ক্ষেত্রে মধ্যে পন্থা কোনটা?

এই ক্ষেত্রে মধ্যে পন্থা হচ্ছে যতোটুকু সম্ভব সঠিক উচ্চারণের চেষ্টা করা, কিন্তু এই নিয়ে বাড়াবাড়ি না করা।

একসময় আমাদের দেশে "দুয়াল্লীন" উচ্চারণ হবে না, "জুয়াল্লিন" এই নিয়ে মারামারি, খুনাখুনি হতো।

এক ভাষার মানুষ আরেক ভাষা কখনই মাতৃভাষা ভাষীর মতো উচ্চারণ করতে পারবে না। আমেরিকানরা একেবারেই আরবি উচ্চারণ করতে পারে না। আবার অনেক আরবর অনর্গল ইংরেজি বলতে পারলেও উচ্চারণ সঠিক ভাবে করতে পারে না। যেমন-draft উচ্চারণ করে দ্রাফত।

যেহেতু আমাদের দেশে মুসলমানের সংখ্যা অনেক বেশি এবং আমরা ধর্মীয় কারণে আরবি ভাষা চর্চা করি, তাই বাংলা একাডেমী আরবির প্রতিবর্ণীকরণের জন্য একটা প্রমিত নিয়ম তৈরি করতে পারে।

১০ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১১:৫৮

মনযূরুল হক বলেছেন: প্রস্তাবটা মন্দ না । দিয়ে দেখা যেতে পারে..

৩| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট টি পড়লাম। এবং মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকলাম।

১১ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

মনযূরুল হক বলেছেন: পড়েছেন জেনে খুবই ভালো লাগছে, ভাই..

কিন্তু ‘মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা’ কী কারণে বুঝতে পারলাম না..

৪| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:১৫

জাহিদ অনিক বলেছেন:
ইসলামী ভাষা বলে কিছু আছে ? আরবি ভাষ হতে পারে। শব্দগুলো এরাবিক।
আর যেটা হতে পারে, সেটা ইসলামী পরিভাষা।

১১ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:৫১

মনযূরুল হক বলেছেন: আমারও তেমনই মনে হয়..

অশেষ ধন্যবাদ, ভাই..

৫| ১১ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:২৯

ক্স বলেছেন: আরবী ভাষা সম্পর্কে রাসূল (সা) বলেছেন, তোমরা তিনটি কারণে আরবী ভাষা পছন্দ করবেঃ
১ - কুরআনের লিখিত ভাষা আরবী
২ - আমার মুখের ভাষা আরবী
৩ - কিয়ামতের দিন আল্লাহ ও তাঁর বান্দার কথোপকথন হবে আরবীতে।

আরবী আল্লাহর ভাষা, রাসূল (স) এর ভাষা, কুরআনের ভাষা - আর কিছুর দরকার আছে?

তবে আল্লাহর ভাষা সবইঃ তাওরাত হিব্রু, যাবুর সুমেরিয়ান আর ইঞ্জিল সেমেটিক ভাষায় নাযিল হয়েছিল।

১২ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১২

মনযূরুল হক বলেছেন: এটা হাদিস নয়, জাল ।...

ধন্যবাদ...

৬| ১৪ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭

কল্পদ্রুম বলেছেন: জাহিদ অনিক এর মন্তব্যটা ভালো লেগেছে।আমার বক্তব্যও একই।

১৪ ই জুলাই, ২০১৮ সকাল ১১:৩৩

মনযূরুল হক বলেছেন: আমারও ভালো লেগেছে ।

ধন্যবাদ, ভাই..

৭| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ ভোর ৬:০৫

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
বাংলার তুলনায় আরবি একটি অসম্পুর্ণ দুর্বল ভাষা।
আরবিতে প নাই ভ নাই। পাকিস্তানকে বাকিস্তান বলতে হয়।
বাংলা ভাষা সে তুলনায় অনেক সমৃদ্ধ ।

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

মনযূরুল হক বলেছেন: বাংলায়ও কিন্তু বহু কিছু নাই । আরবি ‘আইন’ অক্ষর কিন্তু নাই, ‘ক্বফ’ নাই.. আরবি ভাষা পৃথিবীর প্রভাবশালী ভাষাগুলোর একটি এবং বৃহত্তম শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধ একটি ভাষা । সম্ভবত আপনার আরবি সম্পর্কে জানাশোনা কম।

বাংলা অনেক সুন্দর ভাষা । আমার মাতৃভাষা । তবে চর্চায় আমাদের দৈন্য অনেক বেশি ।

৮| ১৫ ই জুলাই, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯

প্রজ্জলিত মেশকাত বলেছেন: ভালোলেগেছে। সহমত। যৌক্তিক কথা।

২৪ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১:৩৮

মনযূরুল হক বলেছেন: ধন্যবাদ...

৯| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:১৮

অভিশপ্ত জাহাজী বলেছেন: ভালো লিখেছেন। যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত আর সময়পোযোগী পোস্ট।

১৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪০

মনযূরুল হক বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ, ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.