নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পুরো নাম মাহমুদুল হাসান ইমরোজ, ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের প্রভাষক, ছোটবেলা থেকে খুব অল্পতেই তুষ্ট,কারো উপর অনধিকার চর্চা থেকে নিজেকে গুটিয়ে রাখতাম এখনও তেমনই আছি, কবিতা ভালোবাসি, কবিতার উপর প্রচণ্ড আবেগ ভালোবাসা......কবিতার সাথেই থাকতে চাই

মাহমুদ আল ইমরোজ

সাধারণ মানুষ তাই ভাবনাগুলো সাধারণ

মাহমুদ আল ইমরোজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনুগল্প: উদার তোমার কোল

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৯

সময়টা ২০১২ সালের গোড়ার দিকের। মাস্টার্স ফাইনাল সেমিস্টারে মাঠকর্ম (ইন্টার্নশীপ) পুরোদমে চলছে। তত্ত্বাবধায়ক স্যার সবেমাত্র ইংল্যান্ডের নাটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে আসছেন। ডিপার্টমেন্টের অন্য স্যারদের মতো তার উদ্যোমশক্তি তখনও ফুরোয়নি বরঞ্চ বলতে গেলে মাঠকর্মের ষোলকলা আমাদের দিয়েই তিনি আদায় করেছিলেন।
স্যারের কাছে আমার গ্রুপ মেম্বাররা তাই ঋণী যা গল্প-আড্ডায় প্রায় সময়ই আমরা নির্দ্বিধায় আওড়াই। সম্ভবত তখন চৈত্রের তীব্র দাবদাহ চলছিল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের চৈতালী বাসের কোন এক আপুর কাছ থেকে চেয়ে তার সঞ্চিত পানিটুকু গোগ্রাসে পান করে ফেলি এটুকু স্পস্ট মনে আছে।

মিরপুর হাউজিং স্টপেজে নেমে সোজা হাটা ধরলাম। আমার পেটমন্ত্রীর তীব্র আর্তনাদ ঐ দিনগুলোতে নিত্যই ছিল। কাজের চাপে সাধারণত লাঞ্চ করতাম যখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যালগ্ন। মিরপুর রেঞ্জের পুলিশ উপকমিশনার মহোদয়ের কার্যালয়ের প্রায় কাছাকাছি আসতেই পিছন থেকে একটি ভয়ানক চিৎকার শুনতে পেলাম সাথে সাথে হৈ হুল্লোড় চলছে 'ধর ধর'।
এবার পিছনে তাকিয়ে কিছু বুঝার চেষ্টা করছি। তের-চোদ্দ বছরের একটি ছেলে ঊর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছে আর তার পিছনে ধাওয়াকারী দশ থেকে পনের জনের একটি ছেলের দল। তবে স্কুলের ড্রেসআপ দেখে আর বুজতে বাকি নেই যে তারা আশেপাশের কোন স্কুলের শিক্ষার্থী এবং প্রায় সমবয়সী হবে। ছেলেগুলোর প্রত্যেকের হাতেই একটি করে ক্রিকেট স্ট্যাম্প। দুএক জন পরনের বেল্টও খুলে অন্যহাতে নিয়ে নিয়েছে।

আমার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে ছেলেগুলো। আমি তখনও অপেক্ষায় কী ঘটে দেখার জন্য। ছেলেটি মনে হয় আর পারছে না মুহূর্তেই টলে পড়ে যাবে।
আমি ভাবছি, কী করা উচিৎ! তাকে আড়াল করবো না কি পথ চলতে থাকবো। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া একজন তরুন যে মুহূর্তেই বিবেকবোধ হারিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে আমার এখন ভাবতেই ঘৃণা হয় এবং নিজেকে খুব অপরাধী ভেবে কূল পাই না। রাস্তায় জনসমাগমও ছিল। আবসিক এলাকায় ভদ্রলোকদের যাতায়াতে তখন প্রতিবাদহীন সুনসান নিরবতা আমাকে আরও দ্বিধাগ্রস্ত করে ফেলে। ততোক্ষণে ছেলেটির উপর স্ট্যাম্পের অনেকগুলো আঘাত একটি নির্দয় পরিবেশের সূচনা করে। চারপাশে অসংখ্য জনের উপস্থিতিতেই এতোবড় মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে যা আমার দেখা বাংলা সিনেমার একটি বাস্তবরূপায়ন।

ছেলেটি রক্তাক্ত। নাক বেয়ে রক্ত ঝরছে। আমি এবার আরেকটু এগিয়ে গিয়ে তাদের একজনকে উদ্দেশ্য করে বলি, কী হইছে?
ছোকড়া টাইপের একটির উত্তর,
"ঐ হালায় চোর। আমার মোবাইল চুরি করছে। আইজকা হালারে মাইরাই পালামু।"

আমার কথোপকথনে মনে হয় তাদের মনোযোগ ছেলেটির উপর থেকে একটু সরে পড়ে। ছেলেটি সুযোগ হাতছাড়া করেনি, কোনোরকমে দাঁড়িয়েই আবার দৌড়।
ঈশপের গল্পে পড়েছিলাম, অনেকগুলো সিংহ একটি হরিণকে তাড়া করছে। কিছুতেই হরিণটির নাগাল পাচ্ছিল না। মহাপণ্ডিত শিয়াল না কি বলছিল,
"একটি সামান্য হরিণকে বাগে আনতে পারছো না অথচ তোমরাই বনের রাজা"।

জবাবে সিংহরাজা বলে, "আমরা তাড়া করছি শিকার ধরে খেতে আর হরিণটি দৌড়াচ্ছে জীবন বাঁচাতে, সে তো একটু এগিয়ে থাকবেই"।

ছেলেটি আর ধাওয়াকারীদের মাঝে এরকম দূরত্বই ছিল কিন্তু অতি সামান্য।
দুর্বল ও রক্তাক্ত দেহে বেশীদূর যেতে পারলো না, পিছন থেকে ছুড়ে দেয়া একটি স্ট্যাম্প এসে এবার ছেলেটির মাথায় আঘাত করে।
যা হবার তা-ই হলো, ছেলেটি উপুড় হয়ে পড়ে যায়। আমার আক্ষেপের তীব্রভাব দেখা দিল কিন্তু ঘটনার ঘনঘটায় এসব ছিল পুরোই নিষ্ফল এবং ফালতু।

ছেলেটির ভয়ার্ত চিৎকার দালানকোঠার পাথুরে ইটে বারবার প্রতিধ্বনিত হয়ে মনে হল কেবল আমার দিকেই ফিরে আসছে।
চিৎকার থেমে নেই আর তাদের চোর মারাও বন্ধ হচ্ছে না।

হঠাৎ বাজপড়ার মতো কেমন যেন একটি তীব্র আওয়াজ এসে ছেলেগুলোকে বিরাম দেয়। উপরের দিকে তাকায়, ঠিক তাদের মাথার উপরে দোতলা থেকে একজন সিংহকেশা মধ্যবয়স্কা" নারীর ধমকের স্বর মুহূর্তেই যেন ছেলেগুলোর মনে আতঙ্ক জাগিয়ে তুলে। চোখের পলকেই মনে হলো তিনি দোতলা থেকে উড়ে এসে দৈত্যরূপে ছেলেটিকে আড়াল করে নিলেন। দশ বারো জনের ধাওয়াকারী দলের বিরুদ্ধে তিনি একাই দাঁড়িয়ে হুঙ্কার ছুড়লেন,

"আয় কে আসবি সামনে আয়, একটা একটা কইরা আইজকা খায়াফালামু, বদমাইশের দল কোথাকার"।

এবার ছেলেগুলোর টনক নড়ল, যে যেদিকে পারে লেজ গুটিয়ে ভোঁ দৌড়।
ছেলেটি মহিলার কোলে ঢলে পড়ল, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্বর্গে এখন সে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে। আমার মনে তখন পুরো আশ্বস্তের বাতাস বইছে। ধিক্কারের অণুরনন যেন প্রতিটি বালিকণায় মিশে আমাদের পুরুষ সমাজের পদযুগলে প্রতিবাদের ভূমিকম্প জাগাচ্ছে আর আঙ্গুল তুলে ত্রুটিগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে।

মাতৃত্ববোধ নারীকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায় যেখানে তিনি যেকোনো সন্তানের জন্যে মমতার ছায়া অকৃত্রিমভাবে বিলিয়ে দিয়ে শত বিপত্তি নিজ কাঁধে নিতে পারেন। সাদা-কালো, সম্ভ্রান্ত-অচ্ছুৎ, ধর্ম-অধর্মের সীমারখার চাইতেও নারীর মাতৃত্ববোধের শক্তি অনেক প্রবল যা তাঁকে মহীয়সী নারীতে পরিণত করে। বাস্তবে এই নারীর মনে যে প্রতিবাদের ঝড় চৈত্রের দাবদাহের আঘাতে কালবৈশাখীতে রূপায়িত করে এক বিমূর্ত শক্তিতে আবির্ভূত হয়েছিল তা চোখের পলকে একটি প্রাণকেই স্বর্গছায়ায় আচ্ছাদিত করে নি বরং লক্ষ প্রাণের মাঝে একটি প্রতীকি আস্থায় পরিণত হয়ে সংগ্রামের প্রেরণা যোগাচ্ছে। তিনি অন্যের সন্তানকে যে কোলে তুলে নিয়েছিলেন, নিঃসন্দেহে সেই কোল স্বর্গতুল্য এবং সর্বাপেক্ষা নিরাপদ। তাঁর মাতৃত্বের জায়গা আকাশের মতোই সুবিশাল।

(বিশ্ব নারী দিবসে আজ সেই সব নারীদের প্রতি রইল অকৃত্রিম ভালোবাসা এবং শ্রদ্ধা।)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: মানবিক, দারুণ একটা পোস্ট।

ঝরঝরে লেখা, অনেক---অনেক--- ভাল লাগল।

ভাল থাকুন। সবসময়।

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৮

মাহমুদ আল ইমরোজ বলেছেন: শামছুল ইসলাম ভাই, আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ। আপনার কাছ থেকে উৎসাহ পেয়ে আমি সত্যি অনুপ্রাণিত।

২| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৫

আমিই মিসির আলী বলেছেন: চমৎকার লিখেন তো।
অনেক ভালো লাগলো।
++

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২৩

মাহমুদ আল ইমরোজ বলেছেন: মিসির আলী ভাই ভালো থাকবেন। একটিখানি চেষ্টা করি মাঝে মাঝে। তবে এটা আমার মনে ধারণকৃত একটি সত্য উপলদ্ধি....সাহিত্যের ভাষা অনুপযোগী হলেও মণিকোঠায় আবদ্ধ সেই দৃশ্য আমি আজও ভুলতে পারি নি....

৩| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:১৯

বিজন রয় বলেছেন: চমতকার লিখেছেন।
সাবলিল। ++++

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৫:২৪

মাহমুদ আল ইমরোজ বলেছেন: ধন্যবাদ বিজন রায় ভাই...

৪| ০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩১

সায়ান তানভি বলেছেন: ভাল লেগেছে। নিয়মিত লিখুন

০৮ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৭

মাহমুদ আল ইমরোজ বলেছেন: ধন্যবাদ...সায়ান তানভি ভাই। ভালো থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.