নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আততায়ী।

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাটামাথা ও একটি লাশের ইতিকথা

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ দুপুর ১:৪১

ঠিক তিনগজ দূরে একটা অণ্ডকোষ পরে আছে, আরেকটা খুজে পাচ্ছি না।পা, নাক অত্যন্ত যত্নে থেতলে দেয়া হয়েছে, মুখটা হা করা, বুকের ছাতি প্রায় পিঠের সাথে মিশে গিয়েছে। গায়ের রঙ এমনেই কালো, রক্ত শুকিয়ে আরও কালসিটে পরে গেছে।কোটরে চোখ নেই, কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছি।আমার লাশ পরে আছে নেত্রকোনা নিউটাউন এলাকার অনন্ত-পুকুর পাড়ে।

এতক্ষণ সকলের মনোযোগ ছিল আমার দিকে, যে যেভাবে ইচ্ছে মারছিল।এখন আমি লাশ, সবার মনোযোগ কাটা মাথাটার দিকে।তারপরেও একজন মুরুব্বি এসে আমার চোখ খেজুর কাটা দিয়ে উপড়ে ফেললেন।লোকটা দেখতে আনিসুল হকে মত, কিন্তু তার মত দয়ামায়া নেই। ডা. আবদুন নূর তুষার এত দক্ষতায় আমার চোখ উপড়ে ফেলতে পারতেন কিনা সন্দেহ!

আমি লাশ, লাশ হবার আগে আমার নাম ছিল জাবেদ। প্রতিদিনের মত আজও আমার ঘুম ভেঙেছে মায়ের কাশি আর ছোট দুই ভাই-বোনের কান্নার শব্দে। মা কাশছে, তার হাপানি; ভাই-বোন কাদছে, তাদের ক্ষিদে লেগেছে।আমি এক সপ্তাহ আগেও স্কুলে যেতাম।বাবা সিএনজি চালাতেন, সেদিন তাকে খুন করে সিএনজি ছিনতাই করা হয়েছে।

আমাকে আজ কিছু করতে হবে যাতে পরিবারটা বেচে থাকে।সেদিন শুনেছি, পদ্মা সেতু তৈরির জন্য মাথা লাগবে।তাই ভাবলাম, ১০-২০ মাথা নিয়ে গেলে নিশ্চয় তারা টাকা দিবে।যেই ভাবা সেই কাজ!প্রথম মাথা সংগ্রহ করলাম।গোপন করতে পারলাম না।

ঘটনা পছন্দ হয়নি?আচ্ছা আবার চেষ্টা করা যাক।

আমি জাবেদ, প্রায়ই এক নেতার বাসায় যাই।কাজ করে দেই, সভায় স্লোগান দেই।যা বলেন তাই করি।আমার বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছেন।আমিই সংসার চালাই।আমরা সরকারি খাস জমিতে ঘর বানিয়ে থাকি।আমি পড়ি না, কিন্ত ছোট ভাই-বোন পড়ালেখা করে।খরচ ঐ নেতাই চালায়।

আজ সকালে আমার নেতা বললেন,"জাবেদ এক কাজ কর।এই বাজারসহ মুরগীটা আমার বোনের বাড়ি দিয়ে আয়।" তার বোনের বাড়ি অনন্ত-পুকুর পাড়ের কাছেই।আমি যাচ্ছিলাম, তোমরা আমাকে পিটিয়ে মেরে ফেললে।অথচ আমি জানিই না, ব্যাগের ভেতরে একটা কাটা মাথা!

তোমরা সরল বিশ্বাসে দুর্নীতি করলে কিছু হবে না, আর আমিতো জবাই করা মুরগী নিয়ে যাচ্ছিলাম। আমাকে মেরে ফেলতে হবে?আমার কোন কথা শুনবে না!

এটা পছন্দ হয়নি?ঠিক আছে অন্যভাবে আবার চেষ্টা করি।

সকালে নেতা আমায় ডেকে বললেন,"জাবেদ, পদ্মা সেতু জন্য মাথা দরকার। নেতা হিসেবে আমি ৫০ টা মাথা দিতে চাই।তুই, দশটা মাথা যোগার কর।বিনিময়ে ঐ খাস জমিটা তোদের নামে করে দিব।তোর ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ সারাজীবন আমার। আর কি চাস?"

এর চেয়ে ভালো প্রস্তাব আর কি হতে পারে?আমি কাজে লেগে গেলাম।নিজের এলাকায় একটু ঝামেলা তাই তোমাদের এলাকায় চলে এসছি।প্রথমে গরীব রিকশাওয়ালা রইস উদ্দিনের ছেলে সজীবের মাথা কাটলাম।ছেলেটার বয়স কম, আমাকে কোন কষ্টই করতে হয়নি, খালি দা দিয়ে একটা কোপ!পলিথিনে পেঁচিয়েছিলাম। পলিথিন ছেড়া কে জানতো?তোমরা কিন্তু সব খারাপ কাজ যত্ন নিয়ে করবে, নয়তো আমার মত মরতে হবে।কুৎসিত মৃত্যু,নিজের অণ্ডকোষও ঠিক থাকবে না!

এটাও ভালো লাগেনি।তবে এটা ভালো লাগবেই।এটাই শেষ!পুলিশ এখনো পৌছায়নি, পুলিশ না আসা পর্যন্ত কোন কাজ নেইতো!

আমি পাগল,মানসিকভাবে অসুস্থ-সাইকো! শিশু দেখলেই খুন করতে ইচ্ছে হয়।আমাকে বেধে রাখা হয়েছিল, ছাড়া পেয়েই আমি পালালাম। চলে এলাম নেত্রকোনা।

তালেতালে সজীব ছেলেটাও পাশের জংগলে দা দিয়ে কিছু করছিল।দেখেই খুন করার ইচ্ছে হল।খুন করার পর মাথাটা বাসায় নিয়ে যাবার জন্য রওনা হলাম।আর বাজারে তোমরা আমাকেই লাশ করে দিলে।আমার অবস্থা তৈমুর লং'এর মত, তিনি খুব হিংস্র ছিলেন।খুলি দিয়ে দূর্গ তৈরি করেছিলেন।শেষে তৈমুর না খেয়ে মারা গিয়েছিল, সারা গায়ে প্যাচপেচে ঘা তবু রুহু শরীর ত্যাগ করে না।

এই বিবেচনায় আমাকে মেরে ভালোই করেছ, তোমাদের কোর্ট মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষকে শাস্তি দেন না।এই অজুহাতে কত ভয়ানক অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়!আমি কিন্তু ছাড়া পেতাম না, কারণ আমার টাকা, ক্ষমতাশীল আত্মীয় কোনটাই নেই।

জানি, এগুলোর কোনটাই তোমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।তবে আমাকে মেরে ফেলাটা একটুও অযৌক্তিক ছিল না?

সজীব ছেলেটা বাড়ি থেকে বাবার সাথে রাগ করে বেড়িয়ে গেল।বাবা তাকে আইসক্রিম খাবার জন্য ৫ টাকাও দেয়নি।কি সুন্দর চেহারা, দেখলে মায়া লাগে।কাটা মাথাটা নিশ্চয় দেখেছ, মায়া লাগেনি?আমি তাকে খুন করবো কেন,গলাটাই কাটবো কেন?

আর যদি কাটিই তবে নিশ্চয়ই ব্যাগে ভরে বাজারে বাজারে ঘুরবো না।তোমরা শিক্ষিত, সুশীল লোক;তোমরা জানো না যে অপরাধী সব সময় তার অপরাধ লুকানোর চেষ্টা করে।আমি কি তা করেছি?
না, করিনি।আমি কাটা মাথাটা ব্যাগে ভরে ঘুরছিলাম যাতে ব্যাগ থেকে রক্ত টপটপ করে পরে।আর তোমরা আমাকে ধরে পিটিয়ে মেরে ফেল।

পদ্ম সেতু থেকে নেত্রকোনার দূরত্বটাও বিবেচনায় নিতে, আমি কেন মাথার জন্য এই স্থান বেছে নিয়েছি?কাটা মাথা এত দূর নিয়ে যাওয়া অবশ্যই বিপদজনক, আমি ধরা পরেই যেতাম। পদ্মা সেতুর ধারেকাছে কি মাথাওয়ালা লোক ছিল না?
একজন অপরাধী অবশ্যই অপরাধ করার আগে এগুলো বিবেচনায় নিবে।

জীবিত রাখলে তোমরা আসল ঘটনাটা জানতে পারতে, যেহেতু আমি লাশ তাই উপরের যে কোন একটা ঘটনাই না হয় বিশ্বাস করে নাও।

আমি মোটে কষ্ট পাইনি বা অবাক হয়নি।মানুষ সৃষ্টির শুরু থেকেই হিংস্র ছিল, আছে থাকবেও।গ্রীক শাসকরা পড়ালেখা, আইন তৈরি করেছিলেন।কই? এই কঠিন আইন, পড়াশোনা তোমার মনে দয়া-ভয় কোনটাই তৈরি করতে পারেনি।আমিতো মরে গিয়ে বেঁচে গেলাম।তোমাদের কি হবে?

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৩:২৬

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: হয়তো, সমসাময়িক কোনো ইস্যু আড়াল করার জন্য এটি তৈরি করা একটি ইস্যু ছিলো। যেমন, রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের বউ মিন্নির পক্ষে আইনজীবী না দাঁড়ানোর কারণে অনেকেই এমপি সম্বু সাহেবের ছেলে সমন দেবনাথের দিকে আঙ্গুল তুলছিলো। শাস্তি দাবী করছিলো।কটা কল্লা ভাইরাল হওয়ার পর সমন দেবনাথ ইস্যু আলাড় হয়ে গেছে।

হতে পারে, বিরোধী কোন রাজনৈতিক দল জনমনে আতংক সৃষ্টি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে এটা করেছিলো।

পিটিয়ে হত্য করে সাধারণ মানুষ আসল কালপ্রিটকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৪:১৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: জনাব, আমি অতশত ভেবে লিখিনি। আমি কেবল বলতে চেয়েছি, কেন ছেলেটা মাথাটা কাটলো।আর হ্যা, শেষের লাইনের সাথে আমি একমত।

২| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ বিকাল ৫:১৯

রাজীব নুর বলেছেন: ভয়াবহ।

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৪৬

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমি সহজভাবে একটা অপমৃত্যু উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছি। আমি কি ফেল করলাম?

৩| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:০৯

রুপ।ই বলেছেন: মনে হোচ্ছিল বিদেশি গল্প পড়ছি দেশী টপিকে, ভাল লাগেনি লেখার স্টাইল । কিন্ত আপনি পারবেন নিজের একটা স্টাইল তৈরী করতে ।

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫২

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমি দুঃখি, আপনি আমার লেখা পড়ে বুঝতে পারেননি।

আসলে আমি লিখতে চেয়েছি, প্রতিটা অপরাধের একটা মোটিভ থাকে(মানে উদ্দেশ্য, লাভ)। এখানে এটা ছিল না।
হয়তো থাকলেও এখন জানার সুযোগ নেই। মোটিভগুলোই আমি একটা একটা করে বলেছি।
আমি লজ্জিত যে সহজভাবে লিখতে পারিনি।

তবে আমি আপনার টিচার হলে বলতাম, আবার পড়ুন।বুঝতে পারবেন।তা করা যাবে না।এটা নিছক মিথ্যে গল্প, না বুঝলে ক্ষতি নেই!

পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৪| ২৮ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১০:০৭

আপেক্ষিক মানুষ বলেছেন: ভয়াবহ, কিন্তু অসাধারণ ম্যাসেজ দিয়েছেন।

২৮ শে জুলাই, ২০১৯ রাত ১১:৫৩

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আপনি বুঝতে পেরেছেন,তাই স্বস্তি পাচ্ছি

ইদানীং কি লিখি দুই-একজন বুঝতে পারে না।লজ্জা লাগে।

৫| ০১ লা আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:০৯

অন্তরা রহমান বলেছেন: দারুণ দারুণ দারুণ। অসাধারণ লাগলো।

১৩ ই আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ১:৪৬

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: মিথ্যা সব সময় দারুণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.