নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আততায়ী।

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অমরাবতী

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৬

"বাবা, তুমি জানো?স্বর্গের রাজধানী অমরাবতী, দেবতা ইন্দ্র আর স্বর্গের ফুলের নাম পারিজাত!লাল-নীল-সবুজ পাপড়ির জমকালো ফুল।
আচ্ছা বাবা, আমাদের বেহেশত আটটা। তাহলে রাজধানী কোনটা?আর পাহারা দিবেন কে?বাবা, তুমি আমার দিকে একটুও তাকাচ্ছো না!তোমার কি মন খারাপ?"
"নারে মা, আমার মন খারাপ না।"

"মা তোমায় বকেছে?তাতে কি, তুমিও মাকে বকেছ।মা কাল সারারাত কেঁদেছেন, একটুও ঘুমাননি।তোমার বকা, মার বকা কাটাকাটি।বাবা, তুমি এক্সপ্রেসো খাবে?আমি বানাতে পারি, কফি বিন গুড়ো করে ওর মধ্যে স্টিম চালাতে হয়, বানিয়ে আনবো?"
"না, মা আমি কিছু খাবো।মারে আজ তুমি একাই মুভি দেখ।আমার ভালো লাগছে না।"

"না, আমি একা দেখবো না।তুমি আমার কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর চেষ্টা কর।আমি সাউণ্ড কমিয়ে দিচ্ছি।"

হাসান সাহেব তার মেয়ের সাথে Wall-E মুভি দেখছিলেন। উনি ইংরেজি বুঝেন না, তবে ঘটনা বুঝতে পারেন।তার মেয়ে নিহান হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেন।
একটা গার্বেজ রোবট, একটা সাদা রোবট ইভা'র সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করছে।কিছুতেই পারছে না, সাদা রোবট ইভা তাকে পাত্তা দিচ্ছে না।রোবটের কোন ছেলে মেয়ে নেই, তবে এই সাদা রোবটটার আচরণ মেয়েলি।নিহান বলছে, এরা পৃথিবী বাচানোর মিশনে এসেছে।
এরা পৃথিবী বাচাবে কিভাবে? দুনিয়া আল্লাহ তৈরি করেছেন, তিনিই রক্ষা করবেন।তিনি সর্ব শক্তিমান।ইদানীং সব সিনেমাতে দেখা যায় সুপার হিরোরা দুনিয়া বাচায়!

অন্যদিন হলে তিনি আগ্রহ নিয়ে মুভি দেখতেন।নিহানের সাথে সময় কাটাতে তার ভালো লাগে। অফিসে তিনি মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারেন না, উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করেন কখন বাসায় ফিরবেন।নিহান তাকে প্রশ্ন করে বিব্রত করবে।ইদানীং সে হিন্দুয়ানী প্রশ্ন করে।নিশ্চয়ই তাদের ক্লাস টিচার হিন্দু।
এই দেশ মুসলিমের দেশ, ১২ আউলিয়ার দেশ,৩৬০ আউলিয়ার দেশ! আর সরকার হিন্দুদের মন জয় করতে ব্যস্ত।সেদিন পেপারে খবর ছাপা হল, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের প্রধান সচীব হিন্দু, প্রধান বিচারপতিও হিন্দু। বিচারপতি নাকি বিচারে লিখেছে 'দেশ বঙ্গবন্ধু একা স্বাধীন করেননি'।আশ্চর্য! ব্যাটা এত সাহস পেল কোথায়?

উনি মেয়েকে কাছে পান না বললেই চলে।কেবল খাবার টেবিলে আর ইংরেজি মুভি দেখার সময়।
মেয়েটা সারাদিন ব্যস্ত থাকে।সকালে গান, একটুপরই স্কুল, স্কুল থেকে ফিরে আবার টিচার, একটু পর নাচের টিচার, সারা সন্ধ্যা স্কুলের কাজ; এই হল মেয়ের সারা দিনের কার্যতালিকা।তবুও তার ক্লান্তি নেই।খাবার টেবিলে বাবুই পাখির মত কাটুরকুটুর করতেই থাকে।সেদিন যা বলেছে ভয়াবহ! কোথা থেকে জানলো কে জানে?
"বাবা, তুমি জানো বেবি কিভাবে হয়?"
"হ্যা, তোর মা আর আমি তোকে হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসেছি। তোর মার পেট কেটে বের করা হয়েছে। হাহা...."

"তুমিতো কিছুই জানো না।বেবি তৈরি হয় মেয়েদের ডিম্বাণুতে।কোটি কোটি শুক্রাণু একসাথে দৌড়ানো শুরু করে একটা ডিম্বাণুর দিকে........"
"মা, খাবার সময় কথা বলতে হয় না।"

"তুমি শোনই না!"
নিহানের আম্মা ওকে দিল এক চড়। নিতু ওকে অকারণে মারে।খাবার সময় আজরাইলও জান কবজ করবে না, আর নিতু বেছে ওকে খাবার সময়েই মারে।হাসান সাহেবের খারাপ লাগে!কিছু বলেন না, একদিন সব একবারে বলবেন!
তাই বলে নিহানের কথা বলা থামে না, সে বিরতি দিয়ে আবার কথা শুরু করে।

"বাবা, তোমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলি।আমার মনে হয়, শোভন দেবনাথ আমার প্রেমে পরেছে।ও এখন আর ছেলেদের সেকশনে ক্লাস করে না।আমাদের ক্লাসে আমার পাশে বসে।
আমিও সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বিয়ে করলে এই ছেলেটাকেই করবো। তুমি কিন্তু না করতে পারবে না।আমি ওর সাথে কথা বলেছি, ও মুসলিম হতে রাজি।ওর আম্মু-আব্বুর সাথে কথা বলে মুসলমানি করবে।আর না করলেই কি? আমি গুগল করে দেখেছি, হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদিরা মুসলমানি করে না।তাদেরতো সমস্যা হয় না....."
নিহান কথা শেষ করতে পারলো না, নিতু ওকে আবার মারলো।মাথার কাছে লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে রইল, আবার কথা বললেই মারবে।নিতুটা নিষ্ঠুর।

হাসান সাহেবের খুব মাথা ব্যথা করছিল।মেয়ের কোলে শুয়েই মন ভালো হয়ে গেল।এমন মায়া তার মায়ের হাতেও ছিল।
ঘুমহীন রাতে তার মা পিঠে হাত বুলিয়ে দিলেই দুচোখ বুজে আসতো, মায়ের প্রতি রাগ, পেটে খিদে; কিছুই মনে থাকতো না।
তার মায়ের শেষ জীবন অনেক কষ্টে গেছে, ছেলে ব্যবসা করে কাড়ি কাড়ি টাকা করেছেন।না, তিনি আরাম করবেন না।মুখে পাউডার মেখে পার্কের বেঞ্চে বসে থাকবেন।সারাদিন ভালো;রাত গভীর হলেই তাকে আটকে রাখা যেত না,বাইরে বের হয়ে যেতেন!
হাসান সাহেব মাকে নিয়ে ঢাকা চলে এলেন।বনানীর মত আবাসিক এলাকায় তার ৮ তলা বাসায় না ঊঠে, উঠলেন উত্তরখানের মত খারাপ এলাকায়।

এই এলাকায় না আছে গ্যাস, না আছে পানি। তবে বারান্দা থেকে তেরমুখ দেখা যায়।কি অপরুপ সৌন্দর্য, এই সৌন্দর্য কোন শিল্পী আকতে পারবে না! মাকে ঘরে আটকে রাখতেন।তার মা ছিলেন নিশিকন্যা!হাসান সাহেবের জন্মও হয়েছিল, ময়মনসিংহের নাজমা বোর্ডিংয়ে।তিনি ভুলে গিয়েছেন, মা ভুলতে পারেনি।মরার আগ পর্যন্ত তিনি রাতে সাজুগুজু করে বারান্দা থেকে চিৎকার করতেন,"এইযে আমারে নিবেন?টেকা কম নিমু, বেলুন না লাগাইলেও চলবো।নিবেন আমারে?"
শেষ কয়টা দিন খুব যন্ত্রণা করলেন রাতে বারান্দায় লেংটা হয়ে চিৎকার করে মানুষ ডাকতেন।

তার মেয়েটাকে দেখে প্রথমেই বলেছিলেন,"ও হাসান!এইডা কার মাইয়া?তুই কাইল্লা, তর মাইয়া হইছে চান্দের লাহান!কাকের বাসায় কোকিল ডিম পারছেনি?"
তবে তিনি নিহানকে অনেক পছন্দ করতেন।নিহান খুব কাঁদলে নিতু ওকে ওর দাদির কাছে দিয়ে আসতো, এক নিমিষেই কান্নাকাটি বন্ধ।
দুজন একসাথে সাজতেন।তবে বারান্দায় একাই যেতেন, নিহানকে নিতেন না।নিহান দরজায় বসে ডাকতো,"বুজি,ও বুজি!আমাকে সাথে নাও।আমি তোমার মত সবাইকে ডাকি।আমিও টাকা কম নিবো।এই যে দেখ, আমার হাত ভর্তি বেলুন!"
নিতু কিছুই করতে পারতো না।নিতু অবাক হয়ে কয়েকবার প্রশ্ন করেছে, "হাসান, আম্মা এমন করে কেন?শুনেছি, গরমে মাথা খারাপ হয়, রাতে কারো মাথা খারাপ হয় শুনিনি। রাতে সব পাগল ঘুমিয়ে পরে।মায়ের কি হয়েছে?"

নিহান দারুণ গান গায়।সারাদিন একমনে গান করে
"আমারো পরানো যাহা চায়, তুমি তাই গো...."
শুনতে ভালো লাগে।তবে গাইতে বললে লজ্জায় চুপ করে থাকে।সেদিন তিনি শুনেছেন গানের টিচার মেয়েটাকে ধমকাচ্ছেন। মেয়েকে অনুপম রয়ের "আমাকে আমার মত থাকতে দাও..." গাইতে বলছেন।মেয়ে গাইছে না।টিচারকে বলে দিতে হবে, মেয়েকে যাতে না ধমকান।
অথচ মেয়ে এখন গুনগুন করে গাইছে
"যেটা ছিল না, ছিল না, সেটা না পাওয়াই থাক সব পেলে নষ্ট জীবন...."
আমার মেয়েটা ভালো গান গায়,ইন্দ্রাণী সেন তার কাছে কিছুই না।

সেদিন মেয়েটার জন্মদিন ছিল।হাসান সাহেব বরাবরের মত ভুলে গিয়েছেন।তিনি ময়মনসিংহের মেয়রে জনাব ইকরামুল হকের সাথে মিটিং করছিলেন। তিনি নাজমা বোর্ডিং কিনতে চান।যে সব নিশিকন্যা সেখানে থাকে তারা সেখানেই থাকবে, তিনি সবার খরচ বহন করবেন।মেয়র পিছলামি করে, করবেইতো!মেয়েগুলার টাকাতো তারাও ভাগাভাগি করে খায়।তবে আশার কথা রাজনীতিবিদদের টাকার বড় লোভ।যেদিন রাজনীতি থেকে টাকা আসা বন্ধ হয়ে যাবে, সেদিন সব নেতা রাজনীতি ছেড়ে বিসিএস'র বই পড়া শুরু করবে।

তিনি রাতে করে বাসায় ফিরলেন। নিতু খুব কান্নাকাটি করলো।নিহান একদম মন খারাপ করলো না, হাসান সাহেবের হাত ধরে বসে রইল।
একটুপরেই নিহান, নিতু ওর মামার বাসায় চলে গেল।ওর মামা নিহানের জন্মদিনে জন্য লা'বাম্বায় পার্টি দিয়েছেন।
হাসান সাহেব শ্বশুরবাড়ির লোকজন পছন্দ করেন না, তারা নাকি সারাবেলা খাই খাই করেন।চোখের সামনে চিকেন বা শিক কাবাব ঝুলিয়ে এদের নাকি লেংটা করে সারা শহর ঘোরানো যাবে!
তিনি ওবাড়ি যান না।
নিহান যাওয়ার সময় কান্না জুড়ে দিল।সে বাবাকে ছাড়া যাবে না। হাউমাউ করে কান্না, হাসান সাহেবের হাত ছাড়লো না।নিতু একটা কষে চড় দিল, জোর করে নিয়ে গেল।কি হত, ও বাড়ি না গেলে?তারা নিজেদের মত কোন রেস্টুরেন্টে গিয়ে জন্মদিন উৎযাপন করতে পারতেন না?নিতু এগুলা কখনো ভাবে না।তিনি সেদিন নিহানের জন্য কাঁদলেন।
তার মায়াবতী মেয়ে!

তিনি মেয়ের কোলে মাথা রেখে এগুলোই ভাবছেন। একটু পর মেয়ে চলে যাবে,তিনি এই মেয়ে ছাড়া কিভাবে থাকবেন!
তিনি নিতুকে ডিভোর্স দিয়েছেন।
অত্যন্ত জোরালো কারণ, এই কারণে কয়দিন আগেই আকাশ নামের এক ডাক্তার আত্মহত্যা করেছেন।তিনি ভীতু ধরনের মানুষ, তিনি আত্মহত্যা করতে পারবেন না।তাই এই সিদ্ধান্ত।
নিতু কাপড় গোছাচ্ছে, আজ সে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে।

আসলে কি হয়েছে, কয়েক দিন ধরে হাসান সাহেবের প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হচ্ছে।তিনি ডাক্তার দেখালেন। একগাদা পরিক্ষা করালেন। যা ফলাফল এল, না বলাই শ্রেয়।তিনি অনেকবার পরিক্ষা করালেন, একই ফলাফল!তাহলে নিহান কিভাবে হল?
নিতু একদম চুপসে গেল, ডিভোর্স নিয়ে উচ্চবাচ্য করলো না।কোন ঝামেলা ছাড়াই ডিভোর্স হয়ে গেল।

হাসান সাহেব নিহানের কান্নার শব্দে জেগে উঠলেন।নিতু নিহানকে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে।নিহান যাবে না, সে বাবাকে ছেড়ে আর কোনদিন কোথাও যাবে না।কাজের লোকগুলো পাশেই দাঁড়িয়ে আছে, চোখে প্রশ্ন,"এরা কোথায় যায় এত রাতে? আর নাকি ফিরবে না।কি হইছে?"

নিহান হাতপা ছুড়ছে।সে কিছুতেই যাবে না।নিতু ওকে টেনে বাসার গেটের বাইরে নিয়ে এল, বাইরে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিতুর বড় ভাই।
নিহান চিৎকার করে বলছে,"বাবা, ও বাবাগো।আমি তোমায় ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না।বাবা, এই বাড়িটা আমার অমরাবতী, তুমি ইন্দ্র।আমি অমরাবতী ছেড়ে কোথাও যাবো না, শোভন আসলেও যাবো না।বাবা,ও বাবাগো....."

হাসান সাহেব বেড়িয়ে এলেন।বললেন,"নিতু কি করছো।মেয়েটা যেতে চাইছে না, জোরাজোরি করছো কেন?আর আমি দেখেছি, তুমি আমার মেয়েটাকে অকারণে মারো!কেন? চল, ঘরে চল।"
নিতু তালাকনামাটা এগিয়ে দিল, তিনি কাগজটা কুচিকুচি করে ছিড়ে ফেললেন।

পরদিন সকালে নিহান, হাসান সাহেব তাদের বাসার গেটে চেয়ারে বসে আছে। ওখানে বড় করে শ্বেত পাথরে লিখা নেমপ্লেট লাগানো হচ্ছে "অমরাবতী"।
দূরে স্কুল ড্রেস পরা একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে,হয়তো ভয়ে কাছে আসছে না!নিহান আড়চোখে বারবার ওদিকেই দেখছে।
কি ছেলেরে বাবা!নিহান আজকে স্কুলে যায়নি, এজন্য বাসায় চলে এসেছে।
হাসান সাহেব ডাকলেন,"এই শোভন, এই!এদিকে এসো।"

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:২৮

ইসিয়াক বলেছেন: নিহান তো খুব পাকা টাইপে ..........
শুভসন্ধ্যা ।

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৮

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ইদানীং খেয়াল করে দেখেছি, বাচ্চারা বেশ বোঝে। ওদের বয়সে আমি বুঝতাম হাওয়াই মিঠাই আর নারকেলি আইসক্রিম।
আপনাকেও শুভ সন্ধ্যা।

২| ০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৬

রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদকে ফলো করছেন নাকি??

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ঘটনা মিলে গেছে?
আগে অনেক পড়তাম, প্রভাব থাকাটা স্বাভাবিক।
এখন পড়ি না, কিছু লিখতে গেলে মনে হয় আগে নিখে ফেলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.