নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি আততায়ী।

মেহরাব হাসান খান

আমি H2O,,,,Solid,Liquid & Gas.How do you deserve me?

মেহরাব হাসান খান › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনন্যোপায়

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:১৮

১...
মহিলাটির কাটা গাল বেয়ে রক্ত পরছে, চুল এলোমেলো, জামার বুকের দিকটাও ছেড়া। গেটের পাশে গুটিসুটি মেরে বসে আছে।কেউ দেখুক তা চান না।আমাকে দেখে বুকের দিকটা হাত দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করছেন।
আমি প্রায় প্রতিদিন রাতেই মুসার দোকান থেকে প্রাইমারি স্কুল পর্যন্ত হাটাহাটি করি, আজেবাজে গল্প লিখার চেষ্টা করি।
মাসে দু'একবার এই মেয়েটির সাথে দেখা হয়, একই অবস্থায়!গেটের সামনে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছে, উড়ুক্কু চুল, মুখে কালো ছোপ, ঘুষি দিলে যেমনটা হয়।মেয়েটি বসে বসে কাঁদে।আমার মায়া লাগে!

বাড়িটার নাম মায়া ভিলা, কিন্তু বাড়ির বাসিন্দা লোকটির মায়া নেই। আজকে একটু বেশিই মেরেছে। বাসার বাইরে বের করে দিয়েছে।আজকে আমায় দেখে মেয়েটির কোন জড়তা নেই, প্রথম দিন যেমনটা ছিল।
আমি হেটে চলে যাচ্ছিলাম। আমাকে ডাকলেন,"ভাইজান, ও ভাইজান।"

এই প্রথম মেয়েটিকে ভালোভাবে দেখলাম। একটা কিশোরী মেয়ে, বয়স আমার চেয়েও ৫ বছর কম হবে।
"জ্বি, কিছু বলবেন?"
"আমারে আর ঘরে যাইতে দিবো না।আমার বাপ-মায় কাজীপাড়া থাহে।আমারে একটু দিয়ে আইবেন? আমার একলা ভয় লাগে, রাস্তায় কুত্তার অভাব নাই।যাবেন ভাই?"

"চলুন, আচ্ছা আপনি কি করেন?"
"চাকরি করি, গার্মেন্টসে চাকরি করি।"

"আপনাকে প্রায়ই মারে কেন?"
"আর কইয়েন না, লজ্জার কথা!আমার ছুডু বইনরে বিয়া করতে চায়।"

"অনেক দিন ধরে মার খাচ্ছেন, আর কত?ছেড়ে দিচ্ছেন না কেন?"
মেয়েটি আর কথা বললো না।উত্তর নেই হয়তো।

২...
"রাকিব, যাহ একটা চিনি কম রংচা নিয়ে আয়, আদা দিবি না, লেবু দিস।"
"ভাই, কইতে অইব না।আপনের চা আমার মুখস্থ। অহনি আনতাছি।"

ছেলেটার গাল কাটা, গালের দিকটা অল্প আর বুকের দিকে একটু কালচে, হয়তো পুড়ে গেছে।গা খালি, পরনের প্যান্টটাও ছেড়া। অথচ কিছুদিন আগেই ওকে একটা শার্ট আর একটা হাফপ্যান্ট দিয়েছি।পরেনি কেন?
ছেলেটার গায়ে মারের দাগ থাকলেও চোখ সব সময় হাসিহাসি।

"কিরে তোর গাল কাটা কেন?শরীর পুড়িয়েছিস কিভাবে?তোকে যে প্যান্ট শার্ট দিলাম, ওগুলো কই?সেইতো ছেড়া প্যান্ট পরে আছিস?"
"মালিকে চায়ের কাপ ঢিল মারছে, গাল কাইট্টা গেছে।তয় মালিক ভালা, মাইর দিলেও ভালা।ওষুধ কিইন্না দিছে।আপনের শার্ট প্যান্ট ছুডু ভাইরে দিছি, হেয় পিইন্দা স্কুলে যায়।"

"এর আগেও তোকে মেরেছে, পাছায় ছ্যাকা দিছে।তবু মালিক ভালো বলছিস!"
"হ, মালিক ভালা।আমার কপাল খারাপ।যে মালিকে কাছে যাই হেয় পিডায়।"

"কাজ ছেড়ে দিচ্ছিস না কেন?"
"কাম ছাইড়া খামু কি?আর যেহানে কামে যামু মারবোই, এ মালিকে মারলেও খাওন দেয়।বাইতে যাওয়ার টাইমে বেশি টেকা দেয়, এডাহেডা কিইন্না দেয়।রাগ বেশি অইলেও, মায়া আছে।"

"তুই স্কুলে যেতে পারিস না?স্কুলে পড়তে তো টাকা লাগে না।"
"আমি পড়ি না,তয় ছুডু দুই ভাই-বইনে পড়ে।আমি হেগরে শিক্ষিত বানামু। বাইনেরে বানামু ডাক্তার। ডাক্তার অইয়া আমার গালের কাডা দাগ মিলাইয়া দিব।পরে বানামু একটা সিনামা, আমি হমু নায়ক।সাকিব খান ফেইল মারবো।"
ছেলেটা খিলখিল করে হাসছে।

৩...
আবেদা সুলতানা আমার দেখা একমাত্র বৃক্ষ নারী। গাছের মত তিনি সব সহ্য করতে পারেন। তিনি একজন সরকারি প্রাইমারি স্কুল টিচার। উনার দুই মেয়ে সুমাইয়া আর তাসনিয়া।
এজন্যই হয়তো তার স্বামী তাকে পছন্দ করেন না।উনার স্বামী জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রয়ায়ন পড়েছেন।ছেলে বা মেয়ে হবার জন্য কে দায়ী, এটা নিশ্চয়ই তিনি জানেন!
ইনি দেখতেও দারুণ, কিছু মেয়ে থাকে যাদের বয়স বাড়ে না।আল্লাহ ইনাকে অত সৌন্দর্য না দিলেও অনেক গুনে গুণান্বিত করেছেন।

তাদের পরিবারে ৯ জন লোক, দুই ননদ, দুই ননদের দুই ছেলে, এক ছেলের বউ, এক ভাসুর আর তারা তিন জন।তার স্বামী সরকারি চাকরি করেন, শিক্ষা অফিসার। এক ননদের স্বামী মারা গেছে,অবশ্য আগে থেকেই তিনি এ বাড়িতেই থাকেন।আরেক ননদের স্বামী তাকে তালাক দিয়েছে।
এত লোক থাকার পরও ভোরে রান্নাটা তাকেই করতে হয়।আবার স্কুলে শেষে সন্ধ্যা রান্নাটাও তাকেই করতে হয়, নয়তো খাবার জোটে না।মেয়ে দুটো না খেয়ে থাকে।
একদিন শরীর খারাপ থাকলেও একই ঘটনা, দুই ননদ আর তাদের বৌ নিজেরা রান্না করে খায়।এদের খাবার দেয় না।

বড় মেয়েটা ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে, আর তাসনিয়া একেবারে ছোট। সংসারে নিজের খরচ নিয়েই চালান।স্বামী কেবল দুই ইদে দুটো জামা দেন, তাও ননদরা কিনে দেয়!
স্বামী তার সাথে ঠিকমতো কথা বলেন না, এখনতো প্রায় ২ বছর কথা বলেন না।
তবু তিনি এ বাড়িতেই থাকেন।
দুই ননদ প্রায়ই খোটা দেয়, কেন বিয়েতে তাদের ভাইকে একটা গাড়ি দেয়া হল না!

আমি একদিন জিজ্ঞেস করলাম,"কেন ছেড়ে দিচ্ছেন না?আপনার অসুবিধা হবার কথা না!আপনার দু'ভাই বিসিএস ক্যাডার আপনাকে নিশ্চয়ই সাপোর্ট করবে।"
"তুমি যেভাবে বলছো সেভাবে সম্ভব না।দেখি না আরও কিছুদিন চেষ্টা করে।আর এই দুটো মেয়ে নিয়ে যাবোই বা কোথায়?"

৪...
ভেতর ঘর থেকে চিৎকার করে কান্নার আওয়াজ আসছে।আমি আর শ্রাবণ দু'জনেই বেশ বিব্রত। আন্টি নাসিমাকে আবার মারছেন।নাসিমা নিজেকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করছে। কে বাঁচাবে তাকে?

আমি শ্রাবণকে পড়াতে আসি প্রায় চার বছর।এদ্দিন নাসিমা এখানেই কাজ করে।আন্টি প্রায়ই ওকে বেধড়ক পেটান,আংকেল যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করেন।এই মার খেলে, গালি শুনলে পেটের অপরিপক্ক বাচ্চাও খসে পরবে।আমার এখতিয়ার শ্রাবণকে পড়ানো পর্যন্তই, আমার কি আর ক্ষমতা আছে নাসিমাকে বাঁচানোর?তবুও ইচ্ছে হয় ছুটে ওখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করি,"মেয়েটাকে মারছেন কেন?আর কত মারবেন?ওকে মেরে ফেলবেন নাকি?"

আমি পড়াচ্ছি,মাঝেমধ্যে নাসিমা ঘর মুছতে আসে।তখন দেখা হয়, কখনো কথা হয়নি। ওর হাতে মারের কালো দাগ, উন্মুক্ত ঘাড়ে কালচে পরেছে, চুল ছেলেদের মত ছোট।মায়া লাগে, খুব মায়া লাগে!

একদিন ও ময়লা ফেলতে যাচ্ছে, লিফটে দেখা হল।জিজ্ঞেস করলাম,"নাসিমা, আপনি এবাসার কাজ ছেড়ে অন্য বাসায় চলে যাচ্ছো না কেন?"
করুণ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,"এ বাড়ির মানুষটা ভালো। গায়ে হাত দেয় না।অন্য বাড়িতে কাজ নিয়ে দেখেছি, রাতে ঘুমাতে পারিনা। খুব জ্বালায়।পুরুষ জাত খুব হারামি জাত!
আর আমার মত কম বয়সী মেয়েকে কেউ কাজেও নিতে চায় না।"

৫...
জয় ভাই আর জিতু আপার সম্পর্কটা প্রায় ৭ বছরের।আমি সব জানি, আসলে আমিই ছিলাম ওদের মিডিয়াম।চিঠি চালাচালিতো আমিই করতাম, কবে কোথায় দেখা করবে সব, খবর আমিই আদানপ্রদান করতাম।জয় ভাই দেখতে একদম বিচ্ছিরি! আর জিতু আপা পরীর মত!তার উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙ আর কালো চুল আমার কিশোর ফ্যান্টাসির শিলা আহমেদকেও ছাড়িয়ে যেত!

আপা আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসতো,এক টাকা দু'টাকা দামের চকলেট না, দামী মিমি চকলেট।ওরা গল্প করতো আর আমি পাহারা দিতাম।খুব আফসোস হত, কেন যে আমি ছোট? নয়তো জিতু আপাকে পটিয়ে বিয়ে করে ফেলতাম!মনে হত, জিতু আপার শব্দ করে হাসি আর ঝর্ণার শব্দের মাঝে কোন পার্থক্য নেই।

জয় ভাই আমার কাকার ছাত্র, সে বেশ ভালো ছাত্র। পরিক্ষায় সারা স্কুলে প্রথম হয়।আমি সিক্সে আর জয় ভাই টেনে পড়ে।তখন থেকে ওদের সম্পর্ক।

আমি টেনে উঠলাম আর জয় ভাই ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ে।আপু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, আর আমি ময়মনসিংহে রিফ্লেক্স'এ SSC কোচিং করি।
ওদের সম্পর্কটা আর ভালো যাচ্ছিল না।আগের মত চিঠি চালাচালি হয় না।

আমি বাসা নিয়ে থাকি, আম্মা মাঝে মাঝে এসে থাকে আর বাকি সময় খালা এসে রান্না করে দেন।আমার বাসা মাসে ২০ দিনই ফাকা থাকে। আপু আর জয় ভাই আমার বাসায় আসতেন।
ভাইয়া চলে গেলেও আপু অনেকক্ষণ থাকতেন।আমি নিশ্চিত, আপু ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে কাঁদতেন।

তখন আমি কলেজে পড়ি।ভাইয়ার ডাক্তারি পড়া শেষ।একদিন শুনলাম জয় ভাই আপুকে বিয়ে করবে না। আমার স্কুলের বন্ধুদের সবার কাছে আপুর একটা বাজে ভিডিও আছে, ছেলেটাকে দেখা যায় না।আর কেউ না জানুক আমিতো জানি, ছেলেটা কে?
ভিডিওটা দেখার সাহস আমার হয়নি!

আপু ভাইয়া শেষবারে মত আমার বাসায় এলেন।আমি পাশের রুমেই বসে আছি।রুম থেকে ধস্তাধস্তির আওয়াজ আসছে, আপু খুব না, না করছেন।সব ছেলেরাই ঐ সময় পশু হয়ে যায়, মেয়েরা কি আর পশুর সাথে শক্তিতে পারে?
ভাইয়া শার্ট পরতে পরতে বেড়িয়ে গেল।আপু জামা ঠিক করতে করতে বাইরে এলেন।আপুকে আগের মতই পরী লাগছিল। লেপ্টে থাকা লিপিস্টিক, এলোমেলো চুল, জামার না লাগানো বোতাম তার সৌন্দর্যে এতটুকু কলঙ্ক আঁকতে পারেনি!

আমি জিজ্ঞেস করলাম,"আপু, তুমি খারাপ কাজটা কেন করেছ?আর আরও আগেই কেন ছেড়ে দিলে না?"
আপু কিছু বললো না, ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। আপুর চোখে এক আকাশ অনুশোচনা।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৪

ইসিয়াক বলেছেন: পড়ছি .....।পড়ে.......।তারপর মন্তব্যে আসছি ।
শুভকামনা রইলো ।

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৫

ইসিয়াক বলেছেন: +++

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫৫

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: ধন্যবাদ। সাথেই থাকুন।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: বড্ড অগোছালো লাগলো। মনে হলো খুব তাড়াহুড়ো করে লিখেছেন।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫৭

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: অগোছালো হয়ে গেছে, কারণ ছোট করার চেষ্টা করেছি।
যাইহোক চেষ্টা করে যাচ্ছি।

৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৩৮

আমি তুমি আমরা বলেছেন: ২ নম্বরটা আশা আর স্বপ্নের গল্প। এই আশা নিয়েই বাঁচে মানুষ।

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫৯

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: আমি আসলে বলতে চেয়েছি যে, এদের কারও হাতে অন্য কোন উপায় বা পথ নেই।
আপনাদের সবাইকে হতাশ করেছি, নিজের কাছেই লজ্জা লাগছে।

৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:২৮

আনমোনা বলেছেন: এলো মেলো লেখা, কিন্তু ভীষন সত্যি।
১,৩,৪ অসহায়তা
২ আশা
৫ বোকামি ছাড়া আর কি বলা যায়?

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০২

মেহরাব হাসান খান বলেছেন: যে কোন ভাবে ছোট করতে চেয়েছি, তাই এলেমেলো হয়ে গেছে। আসলে আমি টেরই পাইনি।
আপনার সব সারমর্ম ঠিক, আমি বলতে চেয়েছি মানুষ কতটা নিরুপায় হয়ে টিকে থাকে।

আরও দু'একটা লিখা পড়বেন। আশা করছি, হতাশ হবেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.