নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

http://www.mezba.info

মোঃ মেজবাহুল হক

Mezba, The man you can trust

মোঃ মেজবাহুল হক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পহেলা বৈশাখের বিকাল বেলা।

২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৮:১৪



ছেলেটা প্রথম যখন তার আব্বুর হাত ধরে স্কুলে যাওয়া শুরু করে তখন সে খুবই ছোট। কোন ক্লাসে পড়ার জন্য না, শুধু যাওয়া আসার জন্যই যাওয়া স্কুলে। প্রাইমারী স্কুলে পড়া অবস্থায় স্যারের ছেলে হিসাবে একটু এক্সট্রা কদর পেত সবার কাছ থেকে। বিশেষ করে উপরের ক্লাসের মেয়েদের কাছ থেকে। মেয়েদের স্বভাবই এমন যে কিউট বাচ্চা দেখলে আদর করতে ইচ্ছা করেই তার উপর আবার স্যরের ছেলে। এদিকে ছেলে তো ছেলেই হয়। একদিন ক্লাস ফাইভে পড়া এক আপুকে বলে বসলো, আমি তোমাকে বিয়ে করবো। আপুটার নাম ছেলেটার এখনো মনে আছে, নাম ছিল “বিভা” খুব সম্ভবত পুরা নাম ছিল “বিভাবরী”, সেটাই ছিল প্রথম প্রেমে পড়া, আসলে সেই বিয়ের প্রস্তাবই ছিল নিখাদ, বয়সে বড় নাকি ছোট, হিন্দু নাকি মুসলমান, উদার নাকি স্বার্থপর এসব যাচাই করার কোন বালাই নেই। দেখতে বলা বাহুল্য অনেক সুন্দর ছিল আপুটা। ছেলেটার এখনো আবছা আবছা মনেপড়ে, টকটকে লাল ফ্রক পরা আপুটার কোলে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এজন্যই বলে প্রথম প্রেমে পড়া আসলেই ভোলা সম্ভব না।
ছেলেটা হাইস্কুলে যখন গেল। বাসা থেকে স্কুল দূর হওয়ায় হোস্টেলে থাকতে হল। স্কুল এবং হোস্টেলের পিছনেই ছিল মহিলা কলেজে যাওয়ার রাস্তা। সেই ছোট বেলা থেকেই প্রেমে পড়া স্বভাবের হওয়ায় এখানেও একই অবস্থা। লাল ড্রেসের কোন আপুকে দেখলেই প্রেমে পড়ে যায়। মনে মনে স্বপ্ন সাজায়। আবার, ছেলেটা পুরানো দিনের সিনেমার খুবই ভক্ত। উত্তম-সুচিত্রা তার স্বপ্নের মধ্যে হেঁটে বেড়ায়। লাল ড্রেস পড়া যেকোনো সুন্দর আপুর মাঝেই সে সুচিত্রা সেনের ছবি দেখতে পায়। সেই থেকেই মনের মধ্যে স্বপ্ন সাজাতে থাকে যেদিন তার সঙ্গি খুজে পাবে সে দেখা করবে পহেলা বৈশাখের বিকাল বেলা। উপহার হিসাবে আগেই পাঠিয়ে দেবে লাল পাড়ের সাদা শাড়ি। মনে মনে এটাও ভাবে যে মেয়েটাও ঠিক তার জন্য সাদার উপর লাল কাপড়ের হাতে কাজ করা একটা পাঞ্জাবী দেবে। হয়তো কোন সিনেমায় এমনটা দেখেছে এবং সেটাই মাথার মধ্যে গেথে গিয়েছে। আরও ভাবে, প্রথম দেখাটা হবে স্মরণীয়। বর্তমান সময়ে সবকিছুর কেমন জানি সস্তা মনেহয়। কোন একটা ছেলে কোন মেয়েকে প্রথম দেখা করতে যায় কোন চকচকা ঝকঝকা এয়ার কন্ডিশানওয়ালা কোন ফাস্ট ফুডের দোকানে। সবকিছুই আর্টিফিশিয়াল মনেহয়। হালের স্রোতে গা না ভাসিয়ে, ছেলেটা ভেবে রাখে শহুরে কোলাহল থেকে দূরে যাবে কোথাও। সেখানে একটা লেকের পাড়ে, কোন একটা গাছের নিছে চাঁদর বিছিয়ে বসবে তারা। মেয়েটা ততদিনে জেনে যাবে ছেলেটা ভর্তা দিয়ে নতুন চালের পিঠা খুবই পছন্দ করে। সুতরং সে নিজে হাতে কয়েক পদের পিঠা বানিয়ে নিয়ে যাবে। ছেলেটাও যে খালি হাতে যাবে তাও না। সেও তত দিনে জেনে যাবে মেয়েটা চুলের খোঁপায় বেলি ফুলের মালা পরতে খুব পছন্দ করে। যেখান থেকে হোক ছেলেটা বেলি ফুলের মালা সঙ্গে নিয়ে যাবে। সে এটাও জানে সন্ধ্যার দিকে ২জনে ২ মগ কফি হাতে নিয়ে গল্প করার মজাই আলাদা। সুতরং নিজে কফি বানিয়ে ফ্লাস্কে করে নিয়ে যাবে। এটা করবে মেয়েটাকে ইমপ্রেস করার জন্য। তারা তাদের জমে থাকা কত শত গল্প করবে। এই স্বপ্ন ভাবতেই ছেলেটার অন্যরকম এক আবেগে আপ্লুত হয়ে যায়। ছেলেটা স্বপ্ন সাজিয়ে রাখে। দেখতে দেখতে একের পর এক বৈশাখ চলে যায়। কিন্তু তার স্বপ্নের সেই মানুষের দেখা পায় না। হাই স্কুল পার হয়ে কলেজে যায়। সেখানেও বৈশাখ পার হয়ে যায় কিন্তু স্বপ্নের মানুষের সাথে দেখা অপূর্ণ থেকে যায়। কলেজ পেরিয়ে ইউনিভার্সিটিতে যায় তাও তার স্বপ্ন সত্যি হয় না। এদিকে তাবৎ দুনিয়ায় পরিবর্তন আসে, প্রেমের সংজ্ঞা হয়ে যায় যায় অন্য রকম, ফেসবুক নামক এক প্রেমের বাজার চলে আসে, এখনকার প্রথম দেখা সকালে একজনের সাথে তো বিকালের আরেক জনের সাথে হয়, পহেলা বৈশাখে এখন মেলায় যাওয়ার থেকে বাসায় পার্টি বেশি হয়, মেয়েরা এখন পিঠা বানানো তো জানেই না, তারা বার্গার পিজ্জাতেই খুশী, পান্তা ইলিশ হয়ে গেছে ফ্যাশন। তারপরও ছেলেটার স্বপ্নের এক বিন্দু পরিমান পরিবর্তন হয় না।
ছেলেটা নিজেকে অনেক সৌভাগ্যবান মনেকরে কারন সে মানুষ, সেই সাথে মনস্তাত্ত্বিক ভাবে সুস্থ একজন মানুষ। আল্লাহর সবথেকে বড় দান মানুষের মন/ ব্রেইন। এই একটা জিনিসের কারনেই মানুষ বুঝতে পারে সুখ বা দুঃখ কি জিনিস। সেই সাথে এই ব্রেইনের বিশেষ ক্ষমতা থাকার কারনে ছেলেটা সব পরিস্থিতি মেনে নেয় আর ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন পুরন হবে এই আশায় থাকে। হয়তো পহেলা বৈশাখ আসবে আবার যাবে কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পুরন হবে না। পরিবার, পরিস্থিতি এবং বাস্তবতায় এক সময় হয়তো পরিবর্তন আসবে। তারপরও তার স্বপ্নের পরিবর্তন হবে না। আগে স্বপ্ন দেখত, এমন বৈশাখ এর বিকাল একদিন হবে, এটা ভেবে সে সুখি হত। আর তখন ভাব্বে যদি এমন বৈশাখ এর বিকাল হত তো কেমন হত, এটা ভেবেই মনে মনে সুখি হবে। তবুও স্বপ্নের মাঝে কোন চিঁর ধরতে দেবে না। এভাবেই স্বপ্ন দেখে যাবে আর সুখি হতে থাকবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৪৩

রাজীব নুর বলেছেন: ছেলেটার নাম কি মেজবা?

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:১২

মোঃ মেজবাহুল হক বলেছেন: ;) ;) হা হা হা... এইটা বলা যাবে না ;)

২| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১০:২২

বিদেশে কামলা খাটি বলেছেন: ছেলেটির নাম তো প্রশ্নপত্রের মতো ফাস হয়ে গেল। এখন উপায় কি??

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০০

মোঃ মেজবাহুল হক বলেছেন: হা হা হা..... আমিওতো বুঝতেছি না উপায় কি..... ;) ;)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.