নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মিশু মিলন

মিশু মিলন

আমি বর্তমানে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগে লিখি। আমার সকল লেখা আমি এই দুটি ব্লগেই সংরক্ষণ করে রাখতে চাই। এই দুটি ব্লগের বাইরে অনলাইন পোর্টাল, লিটল ম্যাগাজিন এবং অন্য দু-একটি ব্লগে কিছু লেখা প্রকাশিত হলেও পরবর্তীতে কিছু কিছু লেখা আমি আবার সম্পাদনা করেছি। ফলে ইস্টিশন এবং সামহোয়্যার ইন ব্লগের লেখাই আমার চূড়ান্ত সম্পাদিত লেখা। এই দুটি ব্লগের বাইরে অন্যসব লেখা আমি প্রত্যাহার করছি। মিশু মিলন ঢাকা। ৯ এপ্রিল, ২০১৯।

মিশু মিলন › বিস্তারিত পোস্টঃ

দিক দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ুক বর্ষবরণের সৌন্ধর্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

১২ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৭

এই দেশ থেকে উপমহাদেশ, তার বাইরে ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা সর্বত্র আজ বাঙ্গালির অসাম্প্রদায়িক উৎসব হয়ে দাঁড়াচ্ছে নববর্ষ- পয়লা বৈশাখ। বাংলাদেশে পহেলা বৈশাখের মাস খানেক আগে থেকে ঢাকার ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনে বর্ষবরণের প্রস্তুতি শুরু করেন ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পহেলা বৈশাখের সকালে রমনা পার্কের বটমূলে তারা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করেন। বিপুল সংখ্যক সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষ উপস্থিত হন সেই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে।
একইভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ এবং বেশকিছু পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা’র প্রস্তুতি শুরু করেন। তারা নানা ধরনের মুখোশ ও বিভিন্ন প্রাণির ভাস্কর্য তৈরি করেন, যেগুলো নিয়ে পহেলা বৈশাখের দিন সকালবেলা মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। বর্ণিল পোশাক পরে বিভিন্ন বয়সের মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রা’য় অংশগ্রহণ করেন।

অন্যদিকে পহেলা বৈশাখের মাস খানেক আগে থেকেই বিপরীত একটি চিত্র দেখতে পাওয়া যায় রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের আনাচে-কানাচে। বেশিরভাগ মসজিদে শুক্রবারের জুম্মার বয়ানে খতিব অথবা ইমামরা পহেলা বৈশাখ এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি এবং শিরক আখ্যা দিয়ে তাতে মুসলমানদের যোগদান না করার আহ্বান জানান। একই কাজ করেন সারাদেশে ওয়াজ করে বেড়ানো মাওলানারাও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ইউটিউবে পহেলা বৈশাখ ও মঙ্গল শোভাযাত্রা’র বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করে কট্টরপন্থী মৌলবাদী মুসলমানরা। মৌলবাদীদের এই উস্কানিতে বিপুল সংখ্যক সাধারণ মুসলমান পহেলা বৈশাখ উদযাপন এবং মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে ঘৃণ্য ও অধর্মের কাজ জ্ঞান করে উৎসবে অংশগ্রহণ করে না। পাড়া-পড়শি কেউ পহেলা বৈশাখের উৎসবে অংশ নিলে অনেকে তাদেরকে কটু বাক্য শোনাতেও দ্বিধা করে না। অনেকে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পরিবার এবং প্রতিবেশীদের কটুক্তির ভয়ে পহেলা বৈশাখের সবরকম অনুষ্ঠান বর্জন করে। কট্টরপন্থী মৌলবাদীরা মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধের আহ্বানই নয় কেবল, বন্ধ করার হুমকিও দিয়ে থাকে। মঙ্গল শোভাযাত্রা বন্ধে এবছর আইনী নোটিশ পর্যন্ত পাঠিয়েছেন এক মৌলবাদী আইনজীবি। অথচ নববর্ষ একটি অসাম্প্রদায়িক উৎসব, বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব, যা জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে পালিত হয়।

আমাদের সংস্কৃতিকে ভীষণ ভয় করে দেশের স্বাধীনতা-বিরোধী এবং মৌলবাদীরা। ভয় এইজন্য যে তারা যত মানুষকে অন্ধকারে রাখতে চায়, সংস্কৃতি তত মানুষের মধ্যে আলো জ্বালায়। আর যেখানে আলো থাকে, সেখানে অন্ধকারের শক্তি টিকতে পারে না। মৌলবাদীরা জানে যে তাদের মতো অন্ধকারের শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে জিততে পারে কেবল সংস্কৃতি, সংস্কৃতি ঘুমন্ত মানুষকে জাগিয়ে তুলতে পারে। তাই যে-কোনো উপায়ে তারা বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা বন্ধ করতে চায়।

সেই পাকিস্তান আমলেই শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের বাঙালি দোসররা বুঝেছিল যে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও চেতনার শক্তি অনেক, তাই যে কোনো প্রকারেই হোক তারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও চেতনা নষ্ট করতে চেয়েছিল, বাঙালিকে শিকড়চ্যূত করতে চেয়েছিল। তারা মনে করেছিল যে বাঙালি মুসলমানকে সংস্কৃতির শিকড় থেকে বিচ্যূত করতে হলে, তাঁদেরকে ভারতের বাঙালি হিন্দুদের থেকে আলাদা করতে হবে। ভারতের বাঙালি হিন্দু এবং পূর্ব-পাকিস্তানের বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে বিভাজনের দেয়াল তুলে দিতে হবে।

এই বিভাজনের উদ্দেশ্যেই বাংলা একাডেমি বাংলা পঞ্জিকা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৬৩ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নেতৃত্বে ‘বাংলা পঞ্জিকা সংস্কার’ নামে একটি কমিটি করে বাংলা একাডেমি। এটি ‘শহীদুল্লাহ কমিটি’ নামে পরিচিতি পায়। সেই কমিটি পঞ্জিকা সংস্কারে বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। যদিও পাকিস্তান সরকারের সেই উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি।

কিন্তু অশুভ শক্তি ভেতরে ভেতরে তৎপর ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরে আশির দশকে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতা দখল করলে তারা আবার মাথা চারা দিয়ে ওঠে। পাকিস্তান আমলে যা সম্ভব হয়নি, তা সম্ভব হয় স্বাধীন বাংলাদেশে। ১৯৮৭ সালে স্বৈরশাসক এরশাদের সরকার শহীদুল্লাহ কমিটির সংস্কারকৃত (আসলে খৎনাকৃত) সেই পঞ্জিকা চালু করে বাংলাদেশে। ফলে বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখ নির্দিষ্ট হয়ে যায় ১৪ এপ্রিল তারিখে।

এর পর বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের পহেলা বৈশাখ হয়ে গেল পৃথক দিনে। এতে বিপাকে পড়লেন বাংলাদেশের হিন্দুরা। তিথি-নক্ষত্র দেখে হিন্দুরা পূজা-পার্বণ করে থাকে, কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সংস্কারকৃত পঞ্জিকার সঙ্গে তাদের পূর্জা-পার্বণের তিথি-নক্ষত্র মেলে না। এজন্য তাঁদেরকে ভারতীয় পঞ্জিকাই অনুসরণ করতে হয়। বাংলাদেশে যেদিন পহেলা বৈশাখ পালিত হয়, সেদিন হিন্দুদের চৈত্র সংক্রান্তি পালন করতে হয়। এদিন তারা চড়ক পূজা, হাজরা পূজা, শিবপূজার মাথা চালান এবং শ্মশানপূজা করে থাকে। যারা এই সব পূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকেন, তাঁরা ইচ্ছা থাকলেও পহেলা বৈশাখের উৎসবে যোগ দিতে পারেন না। বলা যায় গ্রাম-গঞ্জের হিন্দুরা বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতেই পারেন না তাঁদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির কারণে। তবে শহরের হিন্দুরা পহেলা বৈশাখের উৎসবে যোগ দেয়।

পহেলা বৈশাখের উৎসবে যোগ দিলেও হিন্দুরা বাংলাদেশের পহেলা বৈশাখের পরের দিনও পহেলা বৈশাখ পালন করে ভারতীয় পঞ্জিকা অনুসরণ করে, সে ওই তিথি নক্ষত্রের কারণেই। গ্রামে-গঞ্জে শিবপূজার সন্ন্যাসীরা এদিন বানেশ্বর পূজা করে, বহুরূপী সেজে গ্রামে-বাজরে মাঙন মাঙে। শহর-গ্রাম উভয় স্থানের হিন্দু ব্যবসায়ীরা করে হালখাতা।

সেই পাকিস্তান আমলে মৌলবাদী শক্তি এবং পাকিস্তান সরকার বাঙালিদের মধ্যে এই বিভাজনটাই করতে চেয়েছিল, যা তারা তখন করতে পারেনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার পাকিস্তানের সেই অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে। বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ দুই দেশে পৃথক দিনে অনুষ্ঠিত হওয়াটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। ম্বৈরশাসক এরশাদের বিদায়ের পর জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার কতবার ক্ষমতায় এলো-গেলো, কিন্তু কেউ-ই হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদির বিড়ম্বনার কথা চিন্তা করে সংস্কারকৃত পঞ্জিকা বাদ দিয়ে আগের পঞ্জিকা ফিরিয়ে আনার কথা ভাবলো না।

বাংলা পঞ্জিকা মুসলমানদের যাপিত জীবনে কোনো কাজেই আসে না। মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় সকল অনুষ্ঠান পালন করে আরবের হিজরি পঞ্জিকা অনুসরণ করে। তাহলে বাংলা পঞ্জিকার মতো মুসলমানদের কাছে অপ্রয়োজনীয় একটি বিষয় হঠাৎ কেন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠলো প্রথমে পাকিস্তান শাসকের কাছে, পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের কাছে? কেন প্রয়োজন বোধ হলো সংস্কারের? হলো এই জন্য যে যাতে করে ভারতের বাঙালি হিন্দুদের নানা উৎসব থেকে পূর্ব-পাকিন্তান এবং পরবর্তীকালের বাংলাদেশের মুসলমানদের আলাদা করা যায়, দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভাজনের একটা দেয়াল তুলে দেওয়া যায়।

পঞ্জিকা সংস্কারের কারণে পহেলা বৈশাখ পালন নিয়ে ক্ষোভটা থাকার কথা বাংলাদেশের হিন্দুদের। তাদের পক্ষে পহেলা বৈশাখ বর্জনের ডাক দেওয়াটাও অন্যায্য নয়। কিন্তু তারা তা করেনি। তারা সরকারের বিরুদ্ধেও জোরালো কোনো প্রতিবাদ করেনি। পহেলা বৈশাখ পালনের বিরুদ্ধেও নয়। অথচ পহেলা বৈশাখের উৎসব বর্জনের ডাক দিয়ে বিভাজন রেখা তৈরি করে রাখে মৌলবাদী মুসলমানরা!

বাঙালি হিন্দু এবং মুসলমানদের মধ্যে বিভাজন রেখা তৈরি করতেই বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত নিষিদ্ধ করেছিল পাকিস্তান সরকার। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময়েই পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীতের প্রচার বন্ধ করা হয়। আর ১৯৬৭ সালের ২৩ জুন পাকিস্তান সাধারণ পরিষদে তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী ঢাকার নওয়াব বংশোদ্ভূত খাজা শাহাবুদ্দিন বেতার ও টেলিভিশনে রবীন্দ্রসংগীত প্রচার নিষিদ্ধ করে ঘোষণা দেন, ‘রবীন্দ্রসংগীত আমাদের সংস্কৃতি নয়।’

আশ্চর্যের বিষয় এর সমর্থনে তখন এগিয়ে আসে চল্লিশজন বাঙালি বুদ্ধিজীবী এবং দৈনিক পাকিস্তানে তাদের বিবৃতি ছাপা হয়। এদের মধ্যে শিক্ষক, কবি, সাংবাদিক, আইনজীবী, গায়কও ছিলেন। আর এদের বিপরীতে রবীন্দ্র সংগীতের পক্ষে বিবৃতি দেন মাত্র আঠারো জন বুদ্ধিজীবী।

এত সব কাণ্ড করেও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মুসলমানদের বাঙালির সংস্কৃতিচর্চা থেকে দূরে রাখা যায়নি। রবীন্দ্রচর্চাও তাঁরা বাদ দেন নি। পূর্ব-পাকিস্তানে যে বছর রবীন্দ্র সংগীত নিধিদ্ধ হয়, সেই ১৯৬৭ সালেই ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তন পহেলা বৈশাখে রমনা পার্কের বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। শাসকের চোখ রাঙানি কখনোই পরোয়া করেনি ছায়ানট। শাসক রবীন্দ্র সংগীত নিষিদ্ধ করেছে, বিপরীতে মানুষের মাঝে রবীন্দ্র সংগীত ছড়িয়ে দেবার কাজ করেছে ছায়ানট।
তবে বাধা ছিল, ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির চর্চা বলে প্রচার করত একটা শ্রেণি, অসাম্প্রদায়িক বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের গায়ে সাম্প্রদায়িক তকমা লাগানোর চেষ্টা করত। কিন্তু সফল হতে পারেনি তারা। বরং দিন যত গেছে ছায়ানাটের বর্ষবরণ উৎসব সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে তত গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠেছে। কেবল বাংলাদেশীরাই নয়, ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশীরাও এখন বর্ষবরণ উৎসবে যোগ দেয়। সমগ্র রমনা পার্ক, সোরওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার রাস্তা জুড়ে মেলা বসে। হাজার হাজার মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে। রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আর চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ছাড়া পহেলা বৈশাখ উদযাপন এখন কল্পনাও করা যায় না।

এই মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। যশোরের বেসরকারী সংগঠন চারুপীঠ অশুভ শক্তির বিনাশ কামনায় পহেলা বৈশাখে শোভাযাত্রা বের করেছিল। তখন অবশ্য সেই শোভাযাত্রার নাম ছিল- আনন্দ শোভাযাত্রা। ১৯৮৯ সালের পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। ১৯৯৬ সালে আনন্দ শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করে মঙ্গল শোভাযাত্রা নাম দিয়ে শোভাযাত্রা বের করে চারুকলা। হাতি, বাঘ, মাছ, পেঁচা ইত্যাদি প্রাণির ভাস্কর্য এবং নর-নারী ও বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির মুখোশ নিয়ে নানা ধরনের বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে, নাচ-গান করতে করতে পহেলা বৈশাখের সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয় চারুকলা থেকে। আবহমান বাংলার সংস্কৃতি তুলে ধরা হয় এই শোভাযাত্রায়। কয়েকটি রাস্তা পরিভ্রমণ শেষে মঙ্গল শোভাযাত্রা ফিরে আসে চারুকলায়। কখনো কখনো বানানো হয় অশুভ শক্তির প্রতীকী মুখোশ।

এই অশুভ শক্তি কারা? বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, যারা ১৯৭১ সালে নিরীহ বাঙালীর ওপর গণহত্যা চালিয়েছিল, তারা অশুভ শক্তি। মৌলবাদী এবং জঙ্গিগোষ্ঠী অশুভ শক্তি। দূর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, টাকা পাচারকারী, দেশ ও দেশের মানুষের অন্বিষ্টকারীরা অশুভ শক্তি। এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষকে একত্রিত করে মানবিক বোধ সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতেই এই মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন। পহেলা বৈশাখের আয়োজনে মঙ্গল শোভাযাত্রা শিল্পসমৃদ্ধ নতুন এক মাত্রা যুক্ত করেছে।

অনেকের প্রশ্ন এই যে- পহেলা বৈশাখে এইসব প্রাণি বানিয়ে শোভাযাত্রা আগে তো ছিল না, তাহলে এখন হয় কেন? এর উত্তর হলো- সংস্কৃতি হচ্ছে নদীর মতো প্রবাহমান, সংস্কৃতি চিরকাল এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। কখনো কখনো সংস্কৃতিতে নতুন উপাদান যুক্ত হয়, আবার কখনো কখনো পুরাতন অনেক উপাদান বাদ পড়ে যায়। বাঙালির সংস্কৃতি পহেলা বৈশাখ ছিল, আছে এবং থাকবে। কখনো তাতে নতুন মাত্রা যুক্ত হবে, আবার কখনো পুরাতন কিছু রীতি বাদ যাবে। কিন্তু পহেলা বৈশাখ উদযাপন চলতেই থাকবে।

আজ থেকে একশো বছর আগে দূর্গাপূজা কিংবা ঈদ যেভাবে পালন করা হতো, এখনো কি সেভাবে পালন করা হয়? হয় না। এই একশো বছরে দূর্গাপূজা এবং ঈদের জৌলুস বহুগুণে বেড়েছে, দূর্গাপূজা-ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশাল বাজার তৈরি হয়েছে, উদযাপনের ধরন বদলে আরও বেশি বর্ণময় হয়েছে। এখন তো পুরান ঢাকার বাসিন্দারা ঈদের দিনে ঈদ শোভাযাত্রাও বের করে। এও তো ঈদ আনন্দে নতুন সংযোজন। এসব বাদ দিতে হবে? নিশ্চয় না।
জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। মঙ্গল শোভাযাত্রা’র আয়োজন এখন কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের মধ্যেই সীমিত নেই, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এখন মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করে। এমনকি কয়েকটি দেশের প্রবাসীরাও পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা’র আয়োজন করেন।

আমাদের সংস্কৃতির এই অগ্রযাত্রাই সহ্য করতে পারছে না মৌলবাদী শক্তি। তারা এখন উঠে-পড়ে লেগেছে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পহেলা বৈশাখের গায়ে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতির তকমা লগিয়ে তা বন্ধ করতে। মৌলবাদীদের ভাষ্য অনুযায়ী- মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং পহেলা বৈশাখ যদি হিন্দুয়ানী সংস্কৃতিও হয়, তাহলেই বা সেটা বন্ধ করতে হবে কেন? বাংলাদেশে তো দেড় কোটির অধিক হিন্দু বসবাস করে। তারা তাদের সংস্কৃতি পালন করতে পারবে না? আর মৌলবাদীরা যে সংস্কৃতিকে ‘হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি’ আখ্যা দিয়ে মুসলমানদের বর্জন করতে বলে, তা কিন্তু মুসলমানদেরও সংস্কৃতি, আজকের এই মুসলমানদের পূর্ব-পুরুষরাই একদা এই সংস্কৃতি পালন করেছেন। এই দেশের বেশিরভাগ মুসলমানের শিকড় এই মাটিরই। নিজের সংস্কৃতি বর্জন করলে মানুষ উন্মুল হয়ে যায়। মুসলমানদের মধ্যে এই বোধের বিকাশ যত দ্রুত হবে, দেশে তত দ্রুত শান্তি ফিরে আসবে। নবী মুহাম্মদ নিজেও তো পৌত্তলিক সংস্কৃতির হজ-ওমরাহ বর্জন করেননি। ইহুদি, খ্রিষ্টান ও পৌত্তলিকদের অনেক সংস্কৃতিই ইসলামে ঢুকে গেছে। আজ যেসব মুসলমান মৌলবাদীরা সংস্কৃতি বর্জনের কথা বলে, তারা কি ভাত ছেড়ে রুটি খায়? হিন্দুরা চাঁদ-সূর্যকে দেবতা জ্ঞান করে পূজা দেয় বলে মুসলমান মৌলবাদীরা কি গায়ে রোদ-জ্যোৎস্না মাখে না?

২০০১ সালের পহেলা বৈশাখে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে জঙ্গিরা বোমা হামলাও করেছিল। সেই হামলায় ১০ জন মানুষ নিহত হন। তারপরও মানুষ কিন্তু ভয়ে ঘরে বসে থাকেনি। হাজারে হাজারে মানুষ পহেলা বৈশাখের উৎসবে যোগ দিয়েছেন আর উৎসবের জৌলুস আগের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে তুলেছেন। পহেলা বৈশাখ কিংবা মঙ্গল শোভাযাত্রা’কে শিরক আখ্যা দিয়ে মৌলবাদীরা যেসব সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে, সেইসব মানুষের উচিত নিজের শিকড় ও ঐতিহ্যের দিকে ফিরে তাকানো এবং এর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক মূল্য অনুধাবন করা। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিবিহীন মানুষ এক উন্মুল ও অপূর্ণাঙ্গ মানুষ, অর্ধমানব। এই মানুষেরা ফিরে আসুক সংস্কৃতির বটবৃক্ষের তলায়, সংস্কৃতির আলোয় আলোকিত হোক। দিক দিগন্তে ছড়িয়ে পড়ুক বর্ষবরণের সৌন্ধর্য ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা।


ঢাকা
১৪৩০





মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫৬

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: আওয়ামী লীগ সরকার ১৫ ই এপ্রিল ১ পহেলা বৈশাখ করে দিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।

১২ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৮

মিশু মিলন বলেছেন: আওয়ামী লীগ তা করবে না। এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতার রাজনীতি আছে, একই কারণে আওয়ামী লীগ বাহাত্তরের সংবিধানও ফেরায়নি।

২| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০

মহাজাগতিক চিন্তা বলেছেন: ১৫ ই এপ্রিল ১ পহেলা বৈশাখ হলে সংখা গরিষ্ঠের সমস্যা কি?

১২ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০০

মিশু মিলন বলেছেন: এর উত্তর আমার লেখাতেই আছে।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭

কামাল১৮ বলেছেন: বাংগালীর অসাম্প্রদায়িক এই একটা উত্সবই আছে।সেটা পালন করতেও কতো রকমের বাধা।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪১

মিশু মিলন বলেছেন: হ্যাঁ, এটা বন্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে মৌলবাদীরা।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০৭

নাহল তরকারি বলেছেন: সবারই মরার ভয় আছে। মরার পর স্বর্গ, নরখ, বেহেস্ত, দোজখ এই স্থানে আমাদের যেতে হবে। ধর্মের বিধি মানলে বেহেস্ত বা স্বর্গে স্থান হবে। আর ধর্মের বিধি নিষেধ না মানলে নরখ বা দোজখে যেতে হবে। নরখের শাস্তি কে উপভোগ করতে চাবে বলুন।

মুসলিম ধর্মের প্রধান বিশ্বাস হচ্ছে সৃষ্টিকর্তা হিসেবে শুধু আল্লাহ কে মানতে হবে। ইসলামের রীতি, নীতি, আচার অনুষ্ঠান, এবাদত সব আল্লাহ কেন্দ্র করে। মুসলিমরা যদি অন্য কাউককে সৃষ্টিকর্তা মানেন, তাহলে তাকে দোজখ বা নরখে যেতে হবে। মুসলিমরা দোজখ বা নরখে যেতে চায় না। আর হিন্দুরা সৃষ্টিকর্তাকে মানেন ভগবান কে। পহেলা বৈশাখে হিন্দুরা নানা রকম পূজা করে পালন করে থাকে। এখন মুসলিমরা তো পহেলা বৈশাখের জন্য হিন্দুদের দেব দেবীদের পূজা করতে যাবে না। হিন্দুরা যেমন ভগবান কে বাদ দিয়ে আল্লাহর এবাদত করবে না, তেমনি মুসলিমরা আল্লাহর এবাদত ছেড়ে ভগবানের পূজা করবে না। মুসলিমদের হুজুর, মসজিদের ইমাম কেন পহেলা বৈশাখ পালন করতে না করেছেন এখন হয়তো বুঝেছেন।

হজ্জ ও ওমরাহ মোটেও পৌত্তলিকদের নিজস্ব ধর্মীয় রীতি না। সত্য কথা বলা, শিক্ষকদের কথা মান্য করা, পরের উপকার করা, এসব ধর্মীয় রীতি যেমন হিন্দুদের একক ধর্মীয় রীতি না, তেমনি হজ্জ ও ওমরাহ সে সময় এর পৌত্তলিকদের একক ধর্মীয় রীতি না। আল্লাহ হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) কে হজ্জ ও ওমরা পালন করতে আদেশ দিয়েছেন। তাই মুসলিমদের শেষ নবী মোহাম্মদ (সাঃ) হজ্জ ও ওমরাহ চালু রেখেছেন। যদি আল্লাহ বলতেন হজ্জ ও ওমরাহ পালন করা লাগবে না। তাহলে নবী মোহাম্ম (সাঃ) ও মুসলিমরা হজ্জ ও ওমরাহ করতেন না।

মুসলিমদের একটি ঐতিহ্য আছে। আছে উৎসব। মুসলিমদের ধর্মীয় উৎমব দুইটি। একটি হচ্ছে ঈদ উল ফিতর যা আমরা গতকাল পালন করেছি। আরেটি হচ্ছে ঈদ উল আযহা। বিশেষ করে ঈদ উল আযহার একটি ঐতিহ্য আছে। যেটা আপনি নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর ঘটনা পড়লে বুঝতে পারবেন। নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর ঘটনা নিরপেক্ষতার সহিত পরবেন। শুধু মাত্র মসলিম ধর্মের ভুল ধরার জন্য পড়মু, তাহলে সেটার দৃষ্টিভঙ্গি অন্যরকম হবে। আর নিরপেক্ষ ভাবে পড়লে সেটার দৃষ্টিভঙ্গী অন্য রকম হবে।

মুসলিমরা কি পহেলা বৈশাখ পালন করবে না? জ্বি মুসলিমরা পহেলা বৈশাখ পালন করবে, যতক্ষন না পযর্ন্ত ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক না হয়। যেমন মুসলিদের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে উপাস্য মানবে না। আপনারা পহেলা বৈশাখের নামে জোর করে হিন্দুদের ভগাবানের পূজা করাতে বাধ্য করান তাহলে মুসলিম পহেলা বৈশাখ পালন করতে যাবে কেন? আমার ঈদ উল আযহার সময় পশু ‍কুরবানী দেই। আরবদেশে উট ও দুম্বা কুরবানী করে। আমাদের দেশে উট ততটা সহজলভ্য না। আমাদের দেশে গরু খুব সহজলভ্য। তাই আমরা গরু কুরবানী দেই। হিন্দুরা ঈদের দিন আমাদের সাথে আনন্দ করতে চাইলে করুক। তাই বলে কি হিন্দুরা আমাদের সাথে গরুর গোস্ত খাওয়াবো? না তাদের গরুর গোস্ত খাওয়াবো না। কারন গরুর গোস্ত খাওয়া হিন্দুদের জন্য পাপ। ঠিক তেমনি পহেলা বৈশাখের যেসব আচার অনুষ্ঠান করলে মুসলিমদের পাপ হবে না। সে সব করুক। যেমন মেলায় যাওয়া। ভালো মন্দ রান্না করা ইত্যাদি।


আপনি শিক্ষিত লোক। আশা করি পাপ পুন্যের হিসাব, বুঝতে পেরেছেন।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:০৩

মিশু মিলন বলেছেন: হজ্জ্ব, ওমরাহ, কাবাঘরের চারপাশে সাতপাক ঘোরা, এসবই পৌত্তলিক প্রথা। ওই সময়টা নিয়ে একটু পড়াশোনা করেন, জানতে পারবেন।
আর মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কি হিন্দুদের দেবদেবীর পূজা করা হয়? প্রমাণ দেখাতে পারবেন?
ধর্মের দোহাই দিয়ে নিজের পূর্ব-পুরুষের সংস্কৃতি বর্জনের পক্ষে কথা বলছেন, কিন্তু আপনি কি ভিন্ন সংস্কৃতির কোনো কিছু গ্রহণ করছেন না, যা ইসলামে হারাম, শিরক কিংবা বিদাত?
এই যে আপনি ইন্টারনেট-ফেসবুক ব্যবহার করছেন, এটা তো বিদাত। শার্ট-প্যান্ট পরেন না? সেটাও বিদাত। নতুন কিছু গ্রহণ করাই ইসলামে বিদাত। ছবি তোলেন না? ওটা হারাম। ক্রিকেট-ফুটবল খেলা দ্যাখেন না? গান শোনেন না? সিনেমা দ্যাখেন না? ব্যাংকে টাকা রাখেন না? এসবও হারাম।
আপনার পরিবারের নারীরা রেখাপড়া করে না? চাকরি করে না? এসবও ইসলামে নিষিদ্ধ। তারা মুখে প্রসাধন মাখে? ঠোঁটে লিপস্টিক দেয়? এসব মাকরূহ।
প্রতিদিন আপনারা এরকম আরও অনেক কাজ করেন যা ইসলামে হারাম, শিরক, বিদাত। এতে আপনাদের পাপ হচ্ছে না? এসব করার সময় দোজখে যাবার ভয় লাগছে না?
পাপ কিংবা দোজখের ভয় উপেক্ষা করে এতসব করতে পারছেন, আর নিজের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি পালনের বেলাতেই আপনাদের যতারে ভয়, দোজখে যাবার শাস্তির ভয়?
ভাবুন, হৃদয় দিয়ে অনুভব করুন, নিজের ইতিতাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে শিখুন। নিজের ইতিতাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি পালন করা পাপ, লজ্জা বা অধর্মের নয়; গৌরবের। এই গৌরবে আপনারও আছে অধিকার।

৫| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:০৩

রিদওয়ান খান বলেছেন: @নাহল তরকারি আপনার সাথে সহমত পোষণ করছি।

৬| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩৬

কলাবাগান১ বলেছেন: "এই যে আপনি ইন্টারনেট-ফেসবুক ব্যবহার করছেন, এটা তো বিদাত। শার্ট-প্যান্ট পরেন না? সেটাও বিদাত। নতুন কিছু গ্রহণ করাই ইসলামে বিদাত। ছবি তোলেন না? ওটা হারাম। ক্রিকেট-ফুটবল খেলা দ্যাখেন না? গান শোনেন না? সিনেমা দ্যাখেন না? ব্যাংকে টাকা রাখেন না? এসবও হারাম।"

এরা সিলেক্টিভ ভাবে হারাম/হালাল কে ডিফাইন করেই ১৯৭১ সনে এদেশের বিরূদ্ধে দাড়িয়েছিল। রেখে গেছে উপরে কমেন্ট করা লোকদের তাদের এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করতে

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৫৭

মিশু মিলন বলেছেন: এটাই আমাদের দূর্ভাগ্য যে ১৯৭১ সালে এদের সংখ্যা কম ছিল, কিন্তু এখন এদের সংখ্যা বেশি। আমরা ক্রমশ পায়ের নিচের মাটি হারাচ্ছি।

৭| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

নাহল তরকারি বলেছেন: ০১। “ হজ্জ্ব, ওমরাহ, কাবাঘরের চারপাশে সাতপাক ঘোরা, এসবই পৌত্তলিক প্রথা। ওই সময়টা নিয়ে একটু পড়াশোনা করেন, জানতে পারবেন।” এটার উত্তর হচ্ছে হজ্জ, ওমরাহ ও কাবাঘরের চারপাশে সাতপাক ঘোরা এটা এসেছে ‍ধর্মপ্রচারক নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর আমল থেকে। এখন পৌত্তিলিকরা যদি এই সিস্টেম গ্রহন করে, তারাও যদি এই নিয়ম মানেন তাহলে তো সেটা অশুদ্ধ হয়ে গেলো না।

০২। ধর্মের দোহাই দিয়ে আমরা কোন সংস্কৃতি বর্জন করি না। আমি কিন্তু এটাও কমেন্টে বলেছি যে যতক্ষন পযর্ন্ত পাপ না হয় ততক্ষন পর্যন্ত সেটা পাপ হয়। যেমন আমরা কুরবানী ঈদে গরু কুরবানী দেই। হিন্দুদের গরুর গোস্ত এর পরিবর্তে খাসির গোস্ত খেতে দিবো। ঠিক তেমনি পহেলা বৈশাখ এর যেসব রীতি ইসলাম ধর্মের সাথে সাংঘর্সিক সেগুলো মানবো না।

০৩। আপনি প্যান্ট শার্ট এর কথা বলেছেন।ভেরি গুড। ইসলাম এর দৃষ্টিতে পরিধেয় পোশাকের বিধান হচ্ছে ছেলোরা নাভির উপরে পেন্ট বা পায়জামা পড়বে। মেয়েদের মত পোষাক পড়তে পারবে না। দেখতে খারাপ দেখায় এমন পোষাক পরিধান করা যাবে না।

০৪। ইসলামে ইন্টারনেট চালানো বেদাত হতে পারে। কিন্তু ইন্টারনেট ব্যাবহার করে পর্ন দেখা হারাম। গান শুনা হারাম। যার ইচ্ছে গান শুনবে না। যার ইচ্ছে সিনেমা দেখবে না। মরার পর যার যার হিসাব সে সে দিবে। যেমন রাকিব খুন করলে, জর্জ রাকিব কে বিচার করবে। রাকিব কে শান্তি দিবে। রাকিবের কৃতকর্মের জন্য আমাকে শাস্তি দিবে না।

০৫। ব্যাংকে টাকা রাখা হারাম সেটা ঢালাও ভাবে বলা যাবে না। কারন সুদ খাওয়া হারাম। ফিক্স ডিপোজিট করে সুদ খাওয়া হামার। সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে সুদ খাওয়া হারাম। কারেন্ট একাউন্ট বা সেভিং একাউন্ট এ টাকা জমা রাখায় কোন অসুবিধা দেখি না।

০৬। “প্রতিদিন আপনারা এরকম আরও অনেক কাজ করেন যা ইসলামে হারাম, শিরক, বিদাত। এতে আপনাদের পাপ হচ্ছে না? এসব করার সময় দোজখে যাবার ভয় লাগছে না?” অবচেতন মনে যেসব পাপ হয়ে যায় সেগুলোর জন্য মাফ চাওয়ার সিস্টেম আছে। ইচ্ছাকৃত পাপের জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। তবে ইচ্ছে করে, আত্নার সুখের জন্য পাপ না করাই ভালো।

০৭। “পাপ কিংবা দোজখের ভয় উপেক্ষা করে এতসব করতে পারছেন, আর নিজের ঐতিহ্য-সংস্কৃতি পালনের বেলাতেই আপনাদের যতারে ভয়, দোজখে যাবার শাস্তির ভয়?” আমার কমেন্টে ঈদ উল আযহার উদাহারন দিয়েছিলাম। সেটাই এটার জবাব। যেসব জিনিস করলে পাপ হবে না, সেজিনিস করাই যায়। যেসব জিনিস করলে পাপ হবে সেগুলো বর্জন করাই ভালো। হউক সেটা হিন্দু বা ‍মুসলিম। কারন হিন্দু ধর্ম বলেন বা মুসলিম ধর্ম বলেন। পাপ করলে করলে সৃষ্টিকর্তা দোজখে দিবেন। তবে মাফ চাইলে সৃষ্টিকর্তা মাফ করে দিবেন। তিনি দয়ালু।

০৮। “ভাবুন, হৃদয় দিয়ে অনুভব করুন, নিজের ইতিতাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে শিখুন। নিজের ইতিতাস-ঐতিহ্য-সংস্কৃতি পালন করা পাপ, লজ্জা বা অধর্মের নয়; গৌরবের। এই গৌরবে আপনারও আছে অধিকার।” আমি কি কোন সময় বলেছি পহেলা বৈশাখ পালন করা পাপ? শুধু বলেছি পূজা করা পাপ। হিন্দুরা পহেলা বৈশাখের সময় যেসব পূজা করবে, আমরা সেখানে থাকবো না। “আর মঙ্গল শোভাযাত্রা কিংবা ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে কি হিন্দুদের দেবদেবীর পূজা করা হয়? প্রমাণ দেখাতে পারবেন?” ছায়নটে পূজা হয় না। পূজা হয় মন্দিরে। আমরা যখন নাইন টেইনে ছিলাম আমরা বন্ধু বান্ধব মিলে পহেলা বৈশাখের মেলায় গিয়েছিলাম। জিলাপী ও ফোস্কা, চটপটি খেয়েছি। খুব মজা করেছি। এসবে কিন্তু ধর্মে বাধা নাই। তবে অনেকে পরের বউ কে নিয়ে মেলায় যায়। এটা পাপ। মেলায় যেতে হলে নিজের বউ কে নিয়ে যাও। পরের বউ এর সাথে কিসের এত খাতিল। তারপর ছায়ানটে গান হয়। আমরা না হয় গান না শুনলাম।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে গরিবদের মাজে কাপড় বিতরন করা যায়। সাধ্যের মধ্যে গরিব দুঃখি, বন্ধু বান্ধবদের খাওয়ালাম। যেসব আত্নীয়দের সাথে অনেকদিন যোগাযোগ হয় না, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে তাদের দাওয়াত করে খাওয়াতে পারেন। আর কত ভালোকাজ করা যায়....। দেখিয়েন আবার কমেন্ট কে আবার নেগেটিভ ভাবে দেখিয়েন না।

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮

মিশু মিলন বলেছেন: এটার উত্তর হচ্ছে হজ্জ, ওমরাহ ও কাবাঘরের চারপাশে সাতপাক ঘোরা এটা এসেছে ‍ধর্মপ্রচারক নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর আমল থেকে। এখন পৌত্তিলিকরা যদি এই সিস্টেম গ্রহন করে, তারাও যদি এই নিয়ম মানেন তাহলে তো সেটা অশুদ্ধ হয়ে গেলো না।
হা হা হা! ইব্রাহিম কে? ইব্রাহিম মুসলমান ছিলেন? নবী নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে ইব্রাহিমকে ব্যবহার করেছে, নইলে মদিনার আনসাররাও তাকে মেনে নিতো না। ইব্রাহিমকে ইহুদি-খ্রিষ্টানরাও মান্য করে। কী অবোধ আপনাদের মন! ইব্রাহিমকে ইজারা নিয়ে নিয়েছেন!
এদেশের মুসলমানরা সঞ্চয়পত্র, ফিক্সড ডিপোজিট করে না? আর সেভিংসে অ্যাকাউন্টেও সুদ পাওয়া যায়।

ইচ্ছাকৃত পাপের জন্য ক্ষমা চাইলে আল্লাহ মাফ করে দিবেন। তবে ইচ্ছে করে, আত্নার সুখের জন্য পাপ না করাই ভালো।

এইজন্যই পৃথিবীব্যাপী আপনারা এত অপকর্ম-অপরাধ করেন! হিারাম কাজ, বিদাত, শিরক করেন!

আপনার এই পোস্ট নিয়ে আরও অনেক লেখা যায়। তাতে আমার সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছু হবে না। আপনি খুবই অপরিপক্ক-নাবালক, অন্ধবিশ্বাসী, আপনার সাথে তর্ক করা বৃথা।

৮| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪

ধুলো মেঘ বলেছেন: ১৪ই এপ্রিল পালন করা নববর্ষের সাথে সংঘর্ষটা ইসলামী বিধি বিধানের নয়, সংঘর্ষটা ইতিহাসের। গ্রেগোরিয়ান ক্যালেন্ডারের শুরুটা হয়েছে যীশু খ্রিস্টের জন্মদিন থেকে। হিজরী ক্যালেন্ডারের শুরু হয়েছে রাসূল (স) এর হিজরতের দিন থেকে। কিন্তু আপনি কি বলতে পারবেন, বাংলা ক্যালেন্ডারের শুরুটা হয়েছিল কবে, কোন ঘটনার উপর ভিত্তি করে? বাংলা বর্ষের কোন শুরুই নেই। হিজরী বর্ষকে সৌর বছরে রূপান্তর করেই এই ক্যালেন্ডার বানানো হয়েছে - সেটা কোন বাঙালি করেনি। করেছে টোডর মল নামে এক ভারতীয়। এই ক্যালেন্ডারের নাম কখনোই বাংলা ক্যালেন্ডার ছিলনা, ছিল ফসলী ক্যালেন্ডার, যা জমি জমার খাজনা তোলার কাজে লাগতো। তাহলে আমাকে বুঝান তো, কি যুক্তি আছে, যাতে আমি এই নববর্ষকে 'বাংলা নববর্ষ' ডাকতে পারি? এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশই বা হয় কোন যুক্তিতে?

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:০৬

মিশু মিলন বলেছেন: হাজার হাজার বছর ধরে হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা তিথি-নক্ষত্র দেখে পূজাপার্বণ করে আসছে। তাদের বারোটা মাস ছিল, ছয়টা ঋতু ছিল। কবে পূর্ণিমা আর কবে অমাবস্যা বলে দিচ্ছে। হাজার হাজার টোল ছিল, নালন্দা-বিক্রমশীলার মতো বিহার ছিল। যেখানে ভারতবর্ষ তো বটেই, বাইরে থেকেও শিক্ষার্থীরা আসত লেখাপড়া করার জন্য। আর তাদের কোনো কোনো ক্যালেন্ডার ছিল না, এই গাঁজাখুরি গল্প আমাদের বিশ্বাস করতে হবে! কোনো কিছু সংস্কার করলেই তা নতুন কারো নামে হয়ে যায় না।
বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার ঐতিহ্য আপনার নয়। কিন্তু আরবের সংস্কৃতি আপনার, এটা মানতে অসুবিধা নেই! আপনারা সকল বোঝাপড়া ঊর্ধ্বে।

৯| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২০

নাহল তরকারি বলেছেন: আপনি মনে হয় মাইন্ড করেছেন। আমি তো বলি নাই “পহেলা বৈশাখ খারাপ।”

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৪

মিশু মিলন বলেছেন: না, না, মাইন্ড করিনি। আপনার নাবালোক-অবোধ যুক্তি দেখে হাসি পাচ্ছে। তবে অনেকের মতো আপনি আমার লেখা পড়ে যে গালাগালি করেন নাই, তাতেই আমি ধন্য।

১০| ১৩ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৩৩

আমি নই বলেছেন: কমেন্টগুলো পড়লাম, ধুলো মেঘের মন্তব্যটার প্রতিউত্তরে লেখকও কোন যৌক্তিক কিছু বলতে পারলেন না। আজাইরা প‌্যান প‌্যান না করে লজিক্যালি আমাদের বাংলা ক্যালেন্ডারের ইতিহাসটা জানাতে পারতেন, জানতেতো আর দোষ নাই।

আপনি বলেছেন ১৯৮৫ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে অশুভ শক্তি বিরোদ্ধে, গুড ভাল উদ্যাগ কিন্তু শুরু হওয়ার পর থেকে অশুভ শক্তির বৃদ্ধি ছারা কি কমেছে? মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে কি অশুভ শক্তি কমানো সম্ভব হয়েছে? যদি না কমে থাকে তাইলে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার অবদান কি আমাদের সমাজে?

ইসলামে যা হারাম তা হারামই, আপনি-আমি করলেও হারাম, কাবা শরিফের ইমাম করলেও হারাম। দৈনিক অনেক পাপ করতেছি সাথে না হয় আরো একটা পাপ করলাম এই মেন্টালিটি কোনো যুক্তি হতে পারেনা। বরং দৈনিকের অন্যান্য পাপকে যতটা পারা যায় কমানোই যৌক্তিক।

মজার ব্যাপার হলো, হিন্দুদের ধর্মীয় কারনে ১৪ তারিখে পহেলা বৈশাখ পালনে সমস্যা হচ্ছে এটা বুঝতেছেন কিন্তু সেইম ধর্মীয় কারনে কোনো মুসলমান যদি মঙ্গল শোভাযাত্রায় বিভিন্ন পশুপাখির পুতুল ব্যাবহারের প্রতিবাদ করে তাহলে আপনাদের কারো কারো গায়ে আগুন ধরে যাচ্ছে। এটাকে অসাম্প্রদায়িক বলেনা।

সবশেষে আর একটা বিষয় বলি, আমরা মুসলিমরা ইব্রাহিম (আঃ) কে আমাদের নবী হিসেবে মানি, ইব্রাহিম (আঃ) কে অস্বীকার করলে সে মুসলিম হতে পারবেনা। আপনি কি মনে করেন তাতে ২০০ কোটি মুসলিমের কিছুই যায় আসেনা। আর ইব্রাহিম (আঃ) কে ইহুদি-খ্রিষ্টানরাও মান্য করে বলেই ইসলাম-ইহুদি-খ্রিষ্টান এই তিন ধর্মকে আব্রাহামিক ধর্ম বলে। ইহুদি-খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মীয় গ্রন্থের অনুসরন করে ইব্রাহিম (আঃ) কে মানে, আমরা আমাদের ধর্মীয় গ্রন্থের অনুসরন করে ইব্রাহিম (আঃ) কে মানি, এখানে ইজারা নেয়ার বিষয় কোথায় থেকে আসল?

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

মিশু মিলন বলেছেন: আমি ইতিহাস শিক্ষার স্কুল খুলে বসি নাই যে সবার সব মন্তব্যের ডিটেইল উত্তর আমাকে দিতে হবে, এতটা সময় আমার নেই। রাজা শশাঙ্কের আমলে কোনো ক্যালেন্ডার ছিল কিনা সেটা একটু ঘেটেঁ দেখবেন।

'আপনি বলেছেন ১৯৮৫ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে অশুভ শক্তি বিরোদ্ধে, গুড ভাল উদ্যাগ কিন্তু শুরু হওয়ার পর থেকে অশুভ শক্তির বৃদ্ধি ছারা কি কমেছে? মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে কি অশুভ শক্তি কমানো সম্ভব হয়েছে? যদি না কমে থাকে তাইলে এই মঙ্গল শোভাযাত্রার অবদান কি আমাদের সমাজে?'

নামাজ পড়ে, দোয়া চেয়ে, হজ্জ্ব ওমরা করে, মুসলিম উম্মাহ'র শান্তি কামনা করে কোনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা গেছে? আল্লাহ'র কাছে দোয়া চেয়ে কিছু পাওয়া গেছে, মানুষের রোগমুক্তি হয়েছে? ইসরায়েলী হামলা বন্ধ হয়েছে? ফেরেশতা এসে গাজার মানুষকে রক্ষা করেছে? তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে সরাসরি অশুভ শক্তি কমে যাবে এমনটা আশা করেন কেন? এটা একটি প্রতিকী উদযাপন। এর উদ্দেশ্য মানুষের ভেতরে শুভবুদ্ধি জাগানো। মানুষকে শিকড়ে ফেরানো, সংস্কৃতিমুখী করা। প্রতিবছর এই চেতনায় যদি দশজন মানুষও উদ্বুদ্ধ হয়, তাতেই মঙ্গল শোভাযাত্রার সফলতা। এত নেতিবাচক প্রচারণার মাঝেও মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। কিছু মানুষ অন্তত সংস্কৃতিমুখী হচ্ছে, মানবিক হচ্ছে। এই যে লক্ষ লক্ষ মৌলবাদীদের গায়ে আগুন জ্বলছে, এখানেই মঙ্গল শোভাযাত্রার সফলতা।
মঙ্গ শোভাযাত্রায় পুতুল ব্যবহার হবে। আপনার ইচ্ছে হলে যাবেন, না হলে যাবেন না। আপনাকে কেউ ঘর থেকে জোরে করে মঙ্গল শোভাযাত্রায় দা!ড় করিয়ে দিচ্ছে না। তাহলে আপনি কেন মঙ্গল শোভাযাত্রর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন? কারণ আপনি ইসলামী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের একজন প্রতিনিধি, আপনি ভিন্নমত, ভিন্ন সংস্কৃতি দমন করতে চান।
মঙ্গল শোভাযাত্রার বিরুদ্ধে লেগে না থেকে নিজের যাপিত জীবনে শিরক, বেদাত, হারাম থেকে দূরে থাকুন। বিদাত ফেসবুক-ইন্টারনেট থেকে বিদায় নিন।

১১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:০৯

আমি নই বলেছেন: লেখক বলেছেন: তাহলে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে সরাসরি অশুভ শক্তি কমে যাবে এমনটা আশা করেন কেন?
আশা আমি করিনাই, অশুভ শক্তির বিনাশ হবে এমনটা আশা আপনিই করেন। ক্লেইম যেহেতু আপনার যুক্তিও আপনারই জানার কথা।

লেখক বলেছেন: নামাজ পড়ে, দোয়া চেয়ে, হজ্জ্ব ওমরা করে, মুসলিম উম্মাহ'র শান্তি কামনা করে কোনো শান্তি প্রতিষ্ঠা করা গেছে? আল্লাহ'র কাছে দোয়া চেয়ে কিছু পাওয়া গেছে, মানুষের রোগমুক্তি হয়েছে? ইসরায়েলী হামলা বন্ধ হয়েছে? ফেরেশতা এসে গাজার মানুষকে রক্ষা করেছে?

ইসলাম ধর্মের কোথাও বলা নাই যে দুনিয়াতেই আল্লাহ নামাজ, রোজা, হজ্জ্বের পুরস্কার দেবেন। গাজায় ফেরেশতা আসার কথাও বলা নাই বা মুসলিমরা আশাও করেনা। ধার্মিকরা আল্লাহ'র কাছে দোয়া করে, পাওয়ার আশা করে, এটার সাথে মঙ্গল শোভাযাত্রায় আশা করার কি সম্পর্ক? মঙ্গল শোভাযাত্রা কি ধর্ম? আর ধর্মের বেসিক বুঝলে বেকুবের মত কথা বলতেন না।

লেখক বলেছেন: তাহলে আপনি কেন মঙ্গল শোভাযাত্রর বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছেন? কারণ আপনি ইসলামী সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের একজন প্রতিনিধি, আপনি ভিন্নমত, ভিন্ন সংস্কৃতি দমন করতে চান।

আমি কোনো কিছুর বিরোদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছিনা, কোথায় পাইলেন? স্বপ্নে? আমার সিম্পল প্রশ্ন ধর্মীয় কারনে মুসরমানরা কিছু বললেই আপনাদের জ্বলে কেন যেখানে হিন্দুদের ব্যাপারে জ্বলেনা।

যেমন বর্তমান বাংলাদেশের নিয়মে ১৪ তারিখেই পহেলা বৈশাখ, নিয়ম মেনেই আপনারা আপনাদের শোভাযাত্রা করেন। কিন্তু হিন্দুরা যে ধর্মীয় কারনে ১৪ তারিখে পহেলা বৈশাখই মানে না এব্যাপারে আপনার জ্বলেনা কেন? তারা ১৪ তারিখে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করে, বিভিন্য পুজা করে (আপনার পোষ্টেই আছে) একবারোতো বলেন না ওরা হিন্দুত্ববাদী, ধর্মান্ধ। খালি জ্বলে যদি কোনো মওলানা কিছু বলে। বাংলাদেশের হিন্দুরাও বাংলাদেশি, তাদের পশ্চিম বংগের নিয়মে চলতে হবে কেন আর এটা নিয়ে আপনারই এত মাথা ব্যাথা কেন?
তবে হিন্দুদের ধর্মীয় কারনে পরের দিন পহেলা বৈশাখ পালনকে আমি সমর্থন করি, তারা নামধারি মুসলিমদের মত না, তারা তাদের ধর্মকেই বেশি প্রাধান্য দেয়। কিন্তু আজব কারনে আপনাদের জ্বলেনা।

আমি কোনো আগ্রাসনের প্রতিনিধি নই আপনি নিজেই সাম্প্রদায়িক, সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের একজন প্রতিনিধি। অসাম্প্রদায়িকতার মুখোস পরা একজন সাম্প্রদায়িক মানুষ। বাংলাদেশে আপনারা আর ইসলামি জংগীদের মাঝে খুব একটা তফাৎ নেই, আপনারাই মুলত দুই সম্প্রদায়ের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির মুল কারন। আর ভিন্ন সংস্কৃতিও দমন আপনারাই করতে চান, পশ্চিম বংগের সংস্কৃতিতে আপনারা যতটা উদার ঠিক ততটাই আক্রমনাত্বক আরবের সংস্কৃতিতে অথচ দুইটাই বিদেশি সংস্কৃতি (অবস্য আরবের টাকায় আপনাদের এলার্জি কম)। আর বাংলায় বা উপমহাদেশে মুসলিম সংস্কৃতির বয়সও নিতান্ত কম না, কিন্তু আপনাদের চোখে সংস্কৃতির শিকর উদ্দেস্যমুলক ভাবে শুধুই পশুপাখির পুতুলে।

যাইহোক, আপনার ভাষায় বলি একজন ইমাম ধর্মীয় বিধান থেকে কথা বলতেই পারেন। একজন মুসলিম মানলে মানবে, না মানলে নাই, ইমামতো আর মানার জন্য গলায় পাড়া দিচ্ছেনা। আর বাংলাদেশ একটা ধর্ম প্রধান দেশ এখানে ধর্মের আধিক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক এখানে ইমাম ধর্মীয় বিধান দিলে এত রিয়াক্ট করার কি আছে? যেখানে হিন্দুদের ব্যাপারে কোনো রিয়াক্শন নাই।

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৫

মিশু মিলন বলেছেন: 'ধর্মের বেসিক বুঝলে বেকুবের মত কথা বলতেন না।।'
ইসলাম কোনো ধর্ম নয়। একটি সন্ত্রাসবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক মতবাদ। যার লক্ষ্য ভিন্নমত, ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন সংস্কৃতি ধ্বংস করে নিজের দর্শ।ন প্রতিষ্ঠা করা। কাবামন্দির তার বড় প্রমাণ। যার মূর্তি ধ্বংস করে মুহাম্মদ দরল করেছেন। ধর্মের বৈশিষ্ট্য অন্যরকম। পৃথিবীর বাকিসব ধর্মের সাথে ইসলামকে ধর্ম হিসেবে গুলো ফেলেই মুশকিল। সমস্যা হলো আপনি এই মতবাদের বিষ পান করেছেন। আপনার পক্ষে পৃথিবীর ভালো কিছু আর বোঝা সম্ভব নয় যদি না এই বিষ আপনি উগড়াতে না পারেন।
আপনারা ধর্ম পালন করেন, রোজার মাসে রীতিমতো মানুষকে নিপীড়ন করে ধর্ম পালন করেন। আমাকে এই নিপীড়নের ব্যাখ্যা কি দিতে হবে? ভাই এত সময় আমার নেই। এই নিপীড়নের সঙ্গে চলে হুজুরদের সভ্যতা-সংস্কৃতিবিরোধী ধ্বংসাত্বক বয়ান। এই হুজুররা মানুষকে উস্কে দেয়, এই হুজুরদের কারণেই সাধারণ মানুষ ভিন্ন ধর্মের মানুষের মন্দির, ঘরবাড়িতে হামলা করে। আপনারা শান্তিপুর্ণভাবে আপনাদের তথাকথিত ধর্ম পালন করলে কেউ মাথা ঘামাবে না। না, আপনি এসব বুঝবেন না, অথবা স্বীকার করবেন না

'যেমন বর্তমান বাংলাদেশের নিয়মে ১৪ তারিখেই পহেলা বৈশাখ, নিয়ম মেনেই আপনারা আপনাদের শোভাযাত্রা করেন। কিন্তু হিন্দুরা যে ধর্মীয় কারনে ১৪ তারিখে পহেলা বৈশাখই মানে না এব্যাপারে আপনার জ্বলেনা কেন? তারা ১৪ তারিখে চৈত্র সংক্রান্তি পালন করে, বিভিন্য পুজা করে (আপনার পোষ্টেই আছে) একবারোতো বলেন না ওরা হিন্দুত্ববাদী, ধর্মান্ধ। খালি জ্বলে যদি কোনো মওলানা কিছু বলে। বাংলাদেশের হিন্দুরাও বাংলাদেশি, তাদের পশ্চিম বংগের নিয়মে চলতে হবে কেন আর এটা নিয়ে আপনারই এত মাথা ব্যাথা কেন?'

হিন্দুরা ১৪ তারিখ পহেলা বৈশাখের বিরোধিতা করেনি। কিন্তু এটা করা উচিত ছিল। কারণ মৌলবাদীদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করেছে সরকার। একবার ভাবুন তো সরকার যদি হিজরি সাল পরিবর্তন করে, একদিনও সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে? সারাদেশে আগুন জ্বলবে। কিন্তু হিন্দুরা আগুন জ্বারায়নি। তাদের পূজাপার্বণ তিথি-নক্ষত্র, অমাবস্যা-পূর্ণিমা দেখে হয়। বাংলাদেশ ক্যালেন্ডার পরিবর্তন করেছে বলে, অমাবস্যা-পূর্ণিমার পরিবর্তন হবে না। তিথি-নক্ষত্র দেখেই তাদের পূজা করতে হবে। চাঁদ উঠার আগের দিন আপনি ঈদ করতে পারবেন? আপনার নূন্যতম শিক্ষা থাকলে এই প্রশ্নই তুলতেন না।

'পশ্চিম বংগের সংস্কৃতিতে আপনারা যতটা উদার ঠিক ততটাই আক্রমনাত্বক আরবের সংস্কৃতিতে অথচ দুইটাই বিদেশি সংস্কৃতি'

আমি আসলে অশিক্ষিত এবং মতলবাজ লোকের সঙ্গে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি না, বলতে চাইও না। পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি আর বাংলাদেশের সংস্কৃতি উভয়ই যে বাঙালির সংস্কৃতি, এটা আরবের সংস্কৃতির মতো বিদেশী সংস্কৃতি নয় এই জ্ঞানটাই আপনার নেই। একবার আপনার কুযুক্তির উত্তর দিয়েছিল, বারবার আপনার কুযুক্তির উত্তর দেবার মতো সময় আমার নেই। ভালো থাকুন। হ্যাঁ, আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা। সবাইকে নিয়ে ভালো থাকুন।

১২| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১২:৫৪

আমি নই বলেছেন: আপনি যে ইসলাম বিদ্বেশি আবাল সেইটা আগে এক লাইনে বললেই এত সময় নষ্ট করে মন্তব্য করতাম না। আর অশিক্ষিত এবং মতলবাজ সাথে কানা আপনি নিজেই, যে কারনে উপমহাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতিতে মুসলিম সংস্কৃতিও মিশে গেছে এটা ঘাটার সাহস আপনার নেই। যাইহোক আপনিও ভালো থাকবেন আপনার ঘৃনা-বিদ্বেশ মুলক নীতি সহ।

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৩

মিশু মিলন বলেছেন: ওহ, আপনি জানেন না যে আমি ইসলামের মতো একটি বর্বর সন্ত্রাসবাদী ও রাজনৈতিক মতবাদকে ঘৃণা করি! আমার লেখা আগে হয়ত পড়েননি। মুহাম্মদের কুর্কীর্তি ও ইসলামের বর্বর ইতিহাসের সত্য বললেই একজন মুসলমানের কাছে ইসলামফোবিয়া মনে হবে এটা খুবই স্বাভাবিক। উপমহাদেশে বহু ধর্ম ও ধর্মের মানুষ এসেছে, উপমহাদেশের হাজার বছরের সংস্কৃতিতে তারা মিশে গেছে। শুধুমাত্র ইসলাম এই উপমহাদেশের সংস্কৃতির সাথে মিশতে পারেনি আজও। তাই তারা আরবীতে নাম রাখে, তাদের বাড়িতে খই-নাড়ু-পায়েস রান্ন হয়না, আলপনা দেওয়া হয় না, গান-বাজনা পাপ মনে করে, চিত্রকলা ও ভাস্কর্যকে পাপ মনে করে। ইসলাম উপহমাদেশের সংস্কৃতিকে বিরোধিতা করতে, ঘৃণা করতে শিখিয়েছে। তারা এই ভূমির ওপর দিয়ে হেঁটে চলেছে, কিন্তু মাটি অঙ্গে মাখেনি। সংস্কৃতির বিরোধিতেই তার বড় প্রমাণ।

হ্যাঁ, অবশ্যই আমি ইসলামী মতবাদকে ঘৃণা করি, তীব্রভাবে ঘৃণা করি, যে-কোনো মানবিক মানুষই তা করবে। তবে জেনে রাখুন, আমি কোনো মুসলমানকে ঘৃণা করি না। নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাদের পূর্ব-পুরুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিল। এই ভূমির হিন্দুরা আর অধিকাংশ মুসলমান একই শিকড় থেকে এসেছে, জিনের মধ্যে অনেক মিল পাওয়া যাবে। এমনও হতে পারে, পাঁচ হাজার বছর আগে আমার আর আপনার পূর্ব-পুরুষ একই ছিল, সেটা খুবই স্বাভাবিক। সুতরাং আপনি আমাকে আবাল বললেও আমি আপনাকে ঘৃণা করব না, কটুবাক্য বলব না। শুধু বলব, কোথা থেকে এসেছেন তা নিয়ে ভাবুন, ইতিহাস নিয়ে ভাবুন, নিজের জিন নিয়ে ভাবুন। মানুষ কখনো তার পূর্ব-পুরুষকে ঘৃণা করতে পারে না। অমানুষেরা পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.