নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অজানা দেশ, অজানা শহর। অচেনা পথে অবিরত মানুষের মুখ। এই ইমারতের ভীরে, রাজপথে নগরে, আমি এক অচেনা আগন্তুক।

ম ইসলাম

ম ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার নদী দর্শন

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:২২

ছেলেবেলা একটা দুঃখ ছিল।
আমার জয়পুরহাট জেলায় কোন নদী ছিল না বলে।
ক্লাসের বইয়ে পড়তাম, নদীমাতৃক বাংলাদেশ। ছবি দেখতাম, নদীতে পালতোলা নৌকা, জেলেদের মাছ ধরা। দুঃখটা আরও বেড়ে যেত। কবিতা পড়তাম, আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে। আফসোস হত, ইস! একটা কি নদী আমাদের জয়পুরহাটে থাকতে পারত না!
একটু বড় হয়ে বুঝলাম, জয়পুরহাটে নদী আছে। ছোট যমুনা, তুলসীগঙ্গা। কিন্তু তা ছিল আমার কল্পনার চেয়ে ছোট।
৮৮ কি ৯১ বন্যায় ছোট যমুনার পানির তোড়ে যখন শহর থেকে দুই কিলো দূরে খঞ্জনপুর নামক স্থানে স্লুইসগেটের পাশে রাস্তা ভেঙ্গে ভেসে গেলো, পাড়ের বাড়িঘর যখন ভেঙ্গে পড়তে শুরু করল তখন দল ধরে সাইকেল নিয়ে সেই আমাদের ছোট নদীর ভাঙ্গন দেখতে গেলাম। তখন মনে হল, নাহ! আর যাই হোক, আমাদের নদীও কিছু পারে! ভাঙ্গতে, গড়তে। হোক সেটা ছোট!
ছেলে বেলা সাইকেলে চড়ে বাবার সাথে আমার এক ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। নওগাঁ জেলার বাদলগাছী থানার গয়েশপুর, মথুরাপুর গ্রাম পার হয়ে পশ্চিমে একটা লাল মাটির গ্রামে। যত সম্ভব অষ্টমাত্রা নাম ছিল গ্রামটার। সেই গ্রামে যেতে একটা ছোট নদী পার হতে হত। বর্ষায় বাঁশের সাঁকো থাকত আর শুকনো সময়ে থাকত হাটু পানি। ছোট ছিলাম বলে নদী পার হওয়ার সময় বাবা আমাকে কোলে নিত আর ঘাড়ে সাইকেল। তারপর ফুফু বাড়িতে পৌছে সেই নদীতেই কারও সাথে গোসল করতে আসতাম। আমার শহরে নদীতে গোসল করতে না পারার খেদটা একটু হলেও ঘুচে যেত।
যমুনা সেতু সবে মাত্র সম্পুর্ন হয়েছে, চালু হয়নি। কলেজে পড়ি তখন। আমাদের এক বন্ধুর ফুটবলের খেপ নাকি জেলার খেলা ঠিক মনে নেই, সিরাজগঞ্জে যমুনার পাড়ে একটা থানায় খেলা ছিল। আমরাও গেলাম দল বেধে খেলা দেখতে। গিয়ে দেখলাম, যে স্কুলের মাঠে খেলা, স্কুলটা তখন অর্ধেক যমুনা খেয়ে ফেলেছে। মাঠটা তখনও বেচে আছে। সেখানে গিয়ে দুপুরে দলবেঁধে যমুনায় গোসল করলাম। মনে মনে আত্মতৃপ্তি পেলাম, বাংলাদেশের বড় একটা নদীতে গোসল করেছি বলে। তারপর ফেরার সময় অনুমতি ছাড়া ব্রীজ দেখতে গিয়ে আর এক অভিজ্ঞতা।
এই যমুনা দেখার আগে আমার বড় ভাইয়ের শশুড়বাড়ি পাবনার এক গ্রামে গিয়েছিলাম সেই ছেলেবেলা। আমার সমবয়সী বিয়াই জানাল, কাছেই পদ্মা, এই বিলটা পার হলেই দেখা যাবে। বললাম, চল যাই।
দুজনে হাটতে শুরু করলাম। নদী দেখার আগ্রহে প্রচণ্ড গরমে, ফেটে চৌচির মাঠের উপর দিয়ে খোলা আকাশের নিচে কতক্ষন, কতদুর হেটেছি মনে নেই! শুধু মনে আছে, সেই জলধারার কাছে যখন পৌছেছি তখন তৃষ্ণায় বুক শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কোন দিকে না তাকিয়ে, সেই টলটল করে বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ পানি অজলা ভরে পান করেছি। বুকটা ঠাণ্ডা করে তাকিয়ে দেখি, কিসের পদ্মা! ছোট একটা শাখা নদী। তবুও সেই ছেলেবেলা সেটাই ভেবে নিয়েছি, এটাই পদ্মা!
তারপর সেই আসল পদ্মার পাড়ে তো বিয়েই করলাম! মেদিনীমণ্ডল, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ। এখন ইচ্ছে হলেই সেই পদ্মার ভাঙাগড়া দেখি।
পেশা জীবনে প্রথম দুই বছর মেঘনা, গোমতির পাড়ে কাটিয়েছি। মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায়। একপাশে গোমতী আর একপাশে মেঘনা। এখানে মাছ ধরা দেখেছি, গোসল করেছি, নৌকায় করে চলাচল করেছি।
তারপরের ছয় বছর নদী দেখার সখ বলা যায় মিটেই গিয়েছিল! কর্মস্থল ছিল কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। কিশোরগঞ্জ আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মাঝে দিয়ে বয়ে গেছে মেঘনা। কিশোরগঞ্জের একপাশে নরসুন্দা আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক পাশে তিতাস। আমার কর্ম এলাকা ছিল কিশোরগঞ্জের ১২টা থানা আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৮টা থানা। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জএর ৩টি থানা ইটনা, মিঠামইন আর অষ্টগ্রাম মেঘনা নদীর বুকে পুরো দ্বীপ। বর্ষায় নিকলি থানাও ডুবে যেত। নৌকা ছাড়া যাতায়াতের কোন ব্যবস্থা ছিল না। ট্রলারে যেতাম। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২টি থানাতেও নদী পথেই যাতায়াত করতে হত। তিতাস নদীর বুক চিরে! একবার মেঘনাতেই ট্রলারে ঝড়ে পড়েছিলাম। উফ! কি ভয়ঙ্কর ছিল সে অভিজ্ঞতা! মনে হয়েছিল, বেচে ফিরতে পারব তো!
অফিসের কাজে ময়মনসিংহ গেলে মাঝে মাঝে ব্রহ্মপুত্র দেখা হত।
২০১০এ খাগড়াছড়ি গেলাম পেশাগত কারনে। ২বছর থাকতে হয়েছিল রাঙ্গামাটি সহ। সেখানে সেই পাহাড়ি নদী! কি অসম্ভব খরস্রোতা নদী! খাগড়াছড়ি ছিল চেংগি, মাইনি নদী আর রাঙ্গামাটি ছিল কর্ণফুলী, হরিনা, কাসালং, শুভলং, চিংড়ি, রাইখিয়াং আর কাপ্তাই লেক। পাহাড়ের মাঝে এই নদী গুলোর পাড়ে যে কি অসম্ভব সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, বোঝাতে পারব না!
সেখান থেকে ফিরে এলাম নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জে। আবার মেঘনা, শীতলক্ষ্যার পাড়ে। অনেকদিন থাকতে হয়েছিল।
এখন আমি থাকি বুড়িগঙ্গার পাড়ে। আর ধলেশ্বরীর উপর দিয়ে মাঝে মাঝে পদ্মার পাড়ে বেড়াতে যাই।

কিন্তু এত নদী দেখার পরও নিজ শহর জয়পুরহাটে বড় কোন নদী না থাকার সেই ছেলেবেলার দুঃখটা এখনও ভুলতে পারি না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এত নদী দেখার পরও নিজ শহর জয়পুরহাটে বড় কোন নদী না থাকার সেই ছেলেবেলার দুঃখটা এখনও ভুলতে পারি না।

ছোট বেলার দু:খ কি আর সহজে ঘোচে!

নদী দর্শনানুভব বেশ চমৎকার!

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৭

ম ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.