নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরেধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরে ধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

মিঠুন চাকমা

মিঠুন চাকমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জয় বাংলা’ শ্লোগান দেশের ভিন্ন জাতিসত্তার জনগণের আকাঙ্খা ধারণ করে না

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২৯







বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ জাতিগতভাবে নিজেদের ‘বাঙালী’ বলেই পরিচয় দিয়ে থাকে। কিন্তু দেশের মধ্যে অন্য জাতিসত্তার জনগনও রয়েছে। তাদের অবস্থানের ইতিহাস স্মরণাতীতকাল ধরে। ১৬ কোটি জনসমষ্টির তুলনায় হয়তো এই ভিন্ন জাতি বা ভাষা-ভাষী জনগনের সংখ্যা এক শতাংশরও কম। কিন্তু তারপরও তাদের অস্তিত্ব যে রয়েছে তা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। এবং দেশ নির্মানে এই ক্ষুদ্র জনসমষ্টির ভূমিকা বেশী বই কম নয়।



আমার আজকের এই লেখায় অবতারনা করার আগে আমাকে উক্ত কথাগুলো বলতে হলো। এবার প্রসঙ্গে আসি, শাহবাগের লড়াই বা অন্য যে কোন লড়াইয়ে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগন বা জাতির পাশাপাশি অন্য জাতিসত্তার জনগনও সবসময় একীভূত হবার চেষ্টা করেছে।



শাহবাগের লড়াইয়েও তারা সক্রিয় থাকার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এই লড়াইয়ের শ্লোগানের সবগুলোতে কন্ঠ মেলালেও যখনই ‘জয় বাংলা’ বা ‘তুমি কে, আমি কে – বাঙালী, বাঙালী’ বলা হয়েছে তখনই তারা এই শ্লোগানের সাথে একাত্ম হতে পারেনি। কারণ তাদের ভিন্ন জাতিসত্তার অস্তিত্বের চেতনাবোধের জন্য।



এই শ্লোগান দেয়ায় ভিন্ন জাতিসত্তার জনগণের আপত্তি থাকলেই যে তা বন্ধ করার আহ্বান জানানো সমীচীন হবে তা মানার মতো কথা নয় হয়তো। একটি বৃহৎ জাতি তার জাতিচেতনাকে লালন করবে সেটাই স্বাভাবিক।



কিন্তু এই শ্লোগানের আড়ালে যখন থাকে ‘ছদ্ম জাত্যাবিমান’, যখন থাকে ‘জাতি বিদ্বেষ’ তখন কিন্তু এই শ্লোগানকে নিছক সাদামাঠা শ্লোগান হিসেবে ভাবা যায়না, ভাবা সম্ভব বা সমীচীনও নয়।

আমরা দেখেছি ১৯৭১ সালের পর শেখ মুজিব যখন রাঙামাটিতে নির্বাচনী ভাষণ দিতে যান তখন তিনি পার্বত্য জুম্ম জনগণকে ‘বাঙালিী জাতিতে প্রমোশন’ দিয়ে দেবার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এই ঘোষণার কারনেই পার্বত্য জনগণ সশস্ত্র লড়াইয়ের মাধ্যমে জাতিসত্তার অধিকার আদায়ের কথা চিন্তা করতে বাধ্য হয়েছিলেন।



স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে প্রণীত দেশ পরিচালানর মূলনীতি সংবিধানে ক্ষুদ্র জাতিসমূহের কথা লেখা হয়নি। গত ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে জাতি হিসেবে বাঙালী বলা হয়েছে। সংবিধানের প্রথম ভাগের ‘প্রজাতন্ত্র’ অংশে লেখা রয়েছে,’ (২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।’। এই সংবিধানের মাধ্যমে অন্য জাতির অস্তিত্বের কথা পুরোদস্তুর অস্বীকার করা হলো, অথবা অন্য জাতির জনগণকে বানানো হলো কার্যত দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে।



আজ এই ফ্যাসিস্ট সংবিধান নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য কেউ করছেনা। উপরন্তু নতুন যে লড়াই নতুন প্রজন্ম শুরু করেছে সেখানেও আমরা দেখছি এই ‘জয় বাংলা’ বা তুমি কে, আমি কে-বাঙালী, বাঙালী’ শ্লোগান।



এই শ্লোগান যদি কোনো চরম জাতীয়তাবাদীরা দিতো তবে কোনো রা ছিলো না। কিন্তু এখন এই শ্লোগান দিচ্ছে ‘প্রগতিশীল’ ‘গণতান্ত্রিক’ নামাঙ্কিত সংগঠন বা চেতনার ব্যক্তি বা সমষ্টি।

তাদেরই একজনের একটি লেখায় আমি মন্তব্য করতে বাধ্য হয়েছি, “যখন আমরা দুনিয়ার মজদুর বলি তখন আমরা একটি ভাবাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। জয় বাংলা কোন ভাবাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করবে? ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিলের ঘোষণাকে? ১৭ এপ্রিলের ঘোষণায় দেশের অন্য জাতিসত্তার জনগনের কথা নেই।”



যার বক্তব্যের সূত্র ধরে এই মন্তব্য করেছি তার লেখার সূত্র নিচে

‘জয় বাংলা’- বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় অর্জিত একটা রাজনৈতিক স্লোগান



লেখককে আমি চিনি একজন প্রগতিবাদী হিসেবে।আমি জানি তাদের সংগঠন বা তারা লালন করেন মার্ক্সীয় আন্তর্জাতিকতাবাদী মতাদর্শ। তাই তাদের এই ‘জয় বাংলা’ প্রীতি এবং ‘বাঙালী’ত্বের প্রতি মমতাবোধ এবং তাকে একটি রাজনৈতিক শ্লোগান হিসেবে ধারণ করাটাকে আমার কাছে মনে হয়েছে স্ববিরোধিতা।



এখানে একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষন না করলেই নয়। লেখক তার লেখায় এই ‘জয় বাংলা’ শব্দটির পক্ষে যুক্ত তুলে ধরার ক্ষেত্রে কিছু শব্দ, শব্দসমষ্টি বা বাক্যাংশ জোর দিয়ে ব্যবহার করেছেন। যেমন, ‘জয় বাংলা’- বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় অর্জিত একটা রাজনৈতিক স্লোগান,

একটা রাজনৈতিক ঘোষণা । একটা রাজনৈতিক ইতিহাসের ধারাবাহিকতা। একটা রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা । একটা রাজনৈতিক দাবি। মুক্তিসংগ্রামে বাংলাদেশের মানুষের জয়ের আশাবাদ।

কিন্তু এই শ্লোগানের স্বপক্ষে কোনো জোরালো যুক্তি হিসেবে এই বাক্যাংশ বা শব্দসমষ্টিকে অভিহিত করা যায় না। কেননা এই ‘রাজনৈতিক দাবি’ আসলে কী দাবি, বা ‘জয়ের আশাবাদ’ মানে কী জয়ের আশা? বা ‘রাজনৈতিক আকাঙ্খা’ মানে এই ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানের মা্ধ্যমে কী বোঝায় তা কিন্তু এই শব্দসমষ্টিতে স্পষ্ট হয় না।



এ বিষয়ে এখানে রাজনৈতিক-মতাদর্শিক বিতর্কের অবতাড়না করে লেখাটিকে ভারাক্রান্ত করার ইচ্ছে নেই। তবে পার্বত্য জনগণ এবং বাংলাদেশের অন্য জাতিসত্তার বা অন্য ভাষা-ভাষী জনগণ এই শ্লোগানের্ প্রতি একটু্ও একাত্মতাবোধ জানানোর পক্ষে থাকতে পারছে না বলেই এত লম্বা একটি লেখার অবতাড়না এখানে করতে হলো।



এই শ্লোগান ভিন্ন জাতিসত্তার জনগণের আকাঙ্খাকে ধারন করে না। এই শ্লোগানের অন্তর্নিহিত যে ভাবার্থ রয়েছে সেই দিকটিকেই বরং আমাদের মত ছোট জাতি সমূহকে বেশী ভাবাচ্ছে।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩৯

ফারমার বলেছেন: মিঠুন, এক শ্লোগান সবকিছু নয়; বাংলাদেশের মানুষ যাতে এক থাকতে পারে, সে রকম নতুন কিছু ভাবুন!

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৮

মিঠুন চাকমা বলেছেন: প্রিয় ফারমার,

আপনার কথার সাথে সহমত প্রকাশ করছি। আমরা মনেপ্রাণে যুক্ত হতে চা্চ্ছি বলেই আমাদের মতামত প্রকাশ করছি।

২| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০৬

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
মুক্তিসংগ্রামে ‘জয় বাংলা’- একটি প্রধান স্লোগান। বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক পরে মুক্তিযুদ্ধে সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় অর্জিত একটা সার্বজনিন স্লোগান।

‘জয় বাংলা’- একটি জনপ্রীয় স্লোগান।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৫৯

মিঠুন চাকমা বলেছেন: প্রিয় হাসান কালৈবশাখী,
ফেবুতে আমার একটি মন্তব্য হুবহু উদ্ধৃতি দিচ্ছি,

" কোনো শ্লোগানেই আমার বা আমাদের আপত্তি নেই বা থাকার কথা নয়। এমনকি ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানেও না। তবে তার অন্তর্নিহিত ভাবটা যখন তাড়া করে তখন কিন্তু আমাদেরকে ভাবায়।



আমরা স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের ‘তোমরা বাঙালী হয়ে যাও’ এই বক্তব্য দেয়া থেকে, ১৯৭২ সালে সংবিধানে অন্য জাতিসত্তার জনগণকে স্বীর্কতি না দেয়া এবং সর্বশেষ গত ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে বাংলাদেশের জনগণকে ‘জাতি হিসেবে বাঙালী’ বানানোর মাধ্যমে অন্য জাতিসত্তার স্বকীয় অস্তিত্বের স্বীকৃতিকে দ্বিতীয় শ্রেনীর কাতারে নিয়ে আসার মাধ্যমে আমরা এটাই ভাবতে বাধ্য হই যে আমরা কতটা জাতিগত বৈষম্যের মাঝে আজ রয়েছি।



জয় বাংলা অবশ্যই থাকতে পারে কিন্তু তার ব্যবহার বা তার লক্ষ্যটি যদি রাজনৈতিকভাবে ‘জাত্যাভিমান’ বা ‘জাতি বিদ্বেষ’ বা ‘অন্য জাতির অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিতে অবহেলা’ তবে তাতেই আমাদের মধ্যে আপত্তি।



যে কোনো শ্লোগান একটি সেন্টিমেন্টকে প্রকাশ করে। জয় বাংলা শ্লোগানের মাধ্যমে কোন সেন্টিমেন্ট এখানে প্রকাশিত হচ্ছে তার উপরও কিন্তু নির্ভর করছে এই শ্লোগান গ্রহণযোগ্য হবে নাকি হবে না। আমরা ইতিহাসের দিকে তাকালেই দেখতে পাই এই শ্লোগানে অন্য জাতিসত্তাসমূহের সেন্টিমেন্টকে ধারণ করেনি। বরং শেখ মুজিব এই সেন্টিমেন্টকে ব্যবহার করে অন্য জাতিসত্তার অস্তিত্বকেই পর্যন্ত স্বীকৃতি দেননি। ২০১১ সালের সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তার উত্তরসূরিরা আরো প্রকটভাবে এই সেন্টিমেন্টকে উগ্র রূপ দিয়েছেন।



ভাবনার আরো একটি কারণ হচ্ছে এই জাতীয়তাবাদী উগ্রতাকে রাষ্ট্র কর্তৃক ধারণ করার বিপরীতে 'প্রগতিবাদী' 'সেক্যুলার' 'কম্যুনিস্ট' 'বিপ্লবী' 'মানবতাবাদী' দের কাছ থেকে তেমন জোরালোর প্রতিবাদ আমরা দেখিনি। বা যা প্রতিবাদ হয়েছে তা এক কথাতেই শেষ হয়ে গিয়েছে। যা ইকো(Echo) হয়ে উঠতে পারেনি সমাজের মধ্যে।



সুতরাং জয় বাংলার পক্ষে এখন কথা বলা মানেই, ইতিহাসের নিরীখে বলতে গেলে বলতে হয়- অন্য জাতিসত্তা বা জনগণের কাছে অপ্রগতিশীল বা জাতি বৈষম্যমূলক অবস্থান গ্রহণ হিসেবেই আজ ঠাউরাতে হচ্ছে।"

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৭

মিঠুন চাকমা বলেছেন: "
এই শ্লোগান দেয়ায় ভিন্ন জাতিসত্তার জনগণের আপত্তি থাকলেই যে তা বন্ধ করার আহ্বান জানানো সমীচীন হবে তা মানার মতো কথা নয় হয়তো। একটি বৃহৎ জাতি তার জাতিচেতনাকে লালন করবে সেটাই স্বাভাবিক।"

৩| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০৬

নর্থপোল বলেছেন: লেজ দেখা যায় ছাগু

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০২

মিঠুন চাকমা বলেছেন: নর্থেপাল,
যেখানে সেখানে এই 'ছাগু' না দেখলেই খুশি হবো।
ছাগু শব্দিট যেখানে সেখানে ব্যবহার না করে তার 'মাহাত্ম্য' নষ্ট না করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০৯

অেসন বলেছেন: তুমি কে, আমি কে – বাঙালী, বাঙালী- এই শ্লোগানে আপনার আপত্তি থাকতেই পারে। যদিও আমার মনে হয়, অন্য কোন জাতি বা গোষ্ঠীকে খাটো করার জন্য এই শ্লোগানের উৎপত্তি হয় নি। আর 'জয় বাংলা' তে আপনার আপত্তি কেন বুঝলাম না।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৮

মিঠুন চাকমা বলেছেন: ডিয়ার অেসন,

কিন্তু এই শ্লোগানের আড়ালে যখন থাকে ‘ছদ্ম জাত্যাবিমান’, যখন থাকে ‘জাতি বিদ্বেষ’ তখন কিন্তু এই শ্লোগানকে নিছক সাদামাঠা শ্লোগান হিসেবে ভাবা যায়না, ভাবা সম্ভব বা সমীচীনও নয়।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:০৯

মিঠুন চাকমা বলেছেন:
স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে প্রণীত দেশ পরিচালানর মূলনীতি সংবিধানে ক্ষুদ্র জাতিসমূহের কথা লেখা হয়নি। গত ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে জাতি হিসেবে বাঙালী বলা হয়েছে। সংবিধানের প্রথম ভাগের ‘প্রজাতন্ত্র’ অংশে লেখা রয়েছে,’ (২) বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালি এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।’। এই সংবিধানের মাধ্যমে অন্য জাতির অস্তিত্বের কথা পুরোদস্তুর অস্বীকার করা হলো, অথবা অন্য জাতির জনগণকে বানানো হলো কার্যত দ্বিতীয়/তৃতীয় শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.