নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরেধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরে ধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

মিঠুন চাকমা

মিঠুন চাকমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুদীর্ঘ দা তুমি বৃহৎ কাজের জন্য আরো বেশী কাজের বোঝা বাড়িয়ে দিয়ে গেলে, তোমায় লাল সালাম

১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:০৫





সুদীর্ঘ দা খুন হলেন। সুদীর্ঘ দা হলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকার আদায়ের একজন কর্মী। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির এমএন লারমা অংশের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি এবং আরো দুইজন আজ ১২ মার্চ সকালে রাঙামাটির লুঙুদু উপজেলার মধ্যপাড়া নামক গ্রামে খুন হন।

আজ দুপুরে যখন এই খবরটি জানলাম তখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল। বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হচ্ছিলো না। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর নেয়ার চেষ্টা করছিলাম। এবং এটাই শুনতে চাচ্ছিলাম যেন খবরটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু হায়, তা হলো না। এক ফেসবুক বন্ধুর লোড করা ফটো দেখে একদম নিশ্চিতই হতে হলো যে সুদীর্ঘ দা নেই। মনটা খুব খারাপ এবং খুব একা একাই লাগছিলো।



তাঁর সাথে পরিচয় ইউপিডিএফএর সাথে জেএসএসএর একটি অংশ যখন ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বাবোধকে মেনে নিয়ে কাজ করছিলো তখন থেকেই। সেই থেকেই তাঁর সাথে দেখা হতো। এক সময় তাঁর বাসায় আমরা যেতাম, নানা কথা বলতাম। আমার ছোটোভাইয়ের কাছে তিনি নিয়মিত যেতেন। ছোটোভাই হোমিও ডাক্তারী পেশায় জড়িত। সুদীর্ঘ দা এবং তাঁর পরিবার ঔষধ আনতে মাঝে মাঝে আমার ছোটো ভাইয়ের কাছে যেতেন। সেই সূত্রেও তাঁর সাথে অন্তরঙ্গ ভাব গড়ে ওঠে। আমার ছোটোভাইও তাঁকে খুব ভালোবাসতেন। বলতে গেলে তিনি আপন কোনো আত্মীয় না হলেও আমরা পারিবারিকভাবে দুই ভাই তাঁকে আপনই মনে করতাম। তিনি এবং তাঁর পরিবারও আমাদের আপনের মতই ভাবতেন বোধকরি। তা না হলে এত আপ্যায়ন তো করতেন না!



সুদীর্ঘ দা’কে কে খুন করেছে? রাজনৈতিকভাবেই বলি। তাঁকে সন্তু লারমার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাই খুন করেছে। এই খবরটি পাবার পর আমার এক ছোটো ভাইয়ের সাখে কথা হচ্ছিল। সে বললো, এই খবরটি শোনার পরে জেএসএসএর সন্তু লারমা পক্ষের কর্মীদের অনেকের মধ্যেও তাঁর মৃত্যুতে আফশোশ বা হতাশা প্রকাশ করেছেন, তারা খুবই মর্মাহত হয়েছেন। আর আমরা যারা একসাথে বিভিন্ন সময় কাজ করেছি, যারা তাঁকে চিনতাম তারা সবাই এখন শুধু আফশোশই করছেন না। বরং পাশাপাশি ক্ষোভ-রাগও প্রকাশ করছেন। এখন যারা তাঁর সহযোদ্ধা তারা কি এই হামলা ও মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে শপথ নেবেন, অর্থাৎ আমরা কি রক্তের বদলে রক্ত ঝরতে দেখবো?



আমি কার্যত জানি না এই সংঘাতের শেষ কোথায়। এই সংঘাতের তাত্ত্বিক ভিত্তিই বা কী আমার এখনো জানা নেই। আমার মতে এই সংঘাতের আদর্শিক বা তাত্ত্বিক ভিত্তি যা, তা হচ্ছে সমাজের গভীরে প্রোথিত সামন্তীয়-লুপ্ম্পেন সাংস্কৃতিক আর্থ-রাজনৈতিক ভিত ও চেতনাবোধ। এই সংঘাতের এটিই মৌল ভিত্তি এবং পাশাপাশি শাসকগোষ্ঠীর ‘জুম্ম ধ্বংসের নীল নকশা’র ফাঁদে তো আমরা পা দিয়েছিই।



আমার আজ আর রাজনৈতিক কোনো বিশ্লেষন করতে ইচ্ছে হচ্ছে না।



সুদীর্ঘ দা’র ‘চুকচুক’ নামে এক ৭/৮ বছরের ছেলে রয়েছে। পারিবারিক আন্তরিকতার সূত্রেই জানি তাঁর স্ত্রী গর্ভে রয়েছে আরেক সন্তান। আজ আমার এক ছোটোভাই খাগড়াছড়ির মাহজন পাড়ায় তাদের বাসা থেকে ফোন করলো। শুনলাম সুদীর্ঘ দা’র স্ত্রী-র আর্তনাদ। এর আগেও এই ধরনের আর্তনাদ শুনেছি। এখন দেখি মনটা এমন পাথর হয়ে যেতে বসেছে। কী আর বলবো!



সবাইকে অনুরোধ জানাবো এই মৃত্যুর মাঝে যেন থাকে শক্তি। অনুরোধ থাকলো, যেন আমরা লড়াইকে আরো আপন করতে পারি।

মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:১৪

অপ বাক বলেছেন: দুরের সমতলের মানুষের কাছে তারা কেউ ব্যক্তি না সংখ্যা, নিছক নাম কিন্তু পরিবারের কাছে, পরিচিত মানুষের কাছে তারা নামের বাইরে একটা অস্তিত্ব।

রাজনৈতিক বৈরিতায় কিংবা ব্যক্তিগত শত্রুতা যে কারণেই তাকে হত্যা করা হোক না কেনো অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসুক এটাই কামনা।

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১১:২৮

বৈকুন্ঠ বলেছেন: কিছু মানুষ নামের অমানুষ, যারা সব সমস্যার নাটেরগুরু, তাদের সেষ কৈরা দিলে অনেক সমস্যাই মিট্যা যায়। কিন্তু তা না কৈরা আমরা শুধু পাইক বরকন্দাজ মারার তালে থাকি। সন্তুরে পরপারের টিকেট ধরায়া দেন বেক্কে মিল্যা

৩| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ২:২৯

এঞ্জেল বয় বলেছেন:
সুদীর্ঘ দা’কে কে খুন করেছে? রাজনৈতিকভাবেই বলি। তাঁকে সন্তু লারমার সশস্ত্র সন্ত্রাসীরাই খুন করেছে।

তীব্র নিন্দা জানাই এ খুনের এবং অতিসত্বর এই খুনিদের গ্রেপ্তার বিচারের আওতায় আনা হউক।

৪| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৮:৫৬

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: আমি কার্যত জানি না এই সংঘাতের শেষ কোথায়। - একমত, আমরা কেউই জানি না, শুধু আশা (বা দুরাশা ) রাখি শান্তির।

অপ বাক বলেছেন: দুরের সমতলের মানুষের কাছে তারা কেউ ব্যক্তি না সংখ্যা, নিছক নাম কিন্তু পরিবারের কাছে, পরিচিত মানুষের কাছে তারা নামের বাইরে একটা অস্তিত্ব।

রাজনৈতিক বৈরিতায় কিংবা ব্যক্তিগত শত্রুতা যে কারণেই তাকে হত্যা করা হোক না কেনো অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসুক এটাই কামনা।

শত ভাগ একমত।

বৈকুন্ঠ বলেছেন: ..... সন্তুরে পরপারের টিকেট ধরায়া দেন বেক্কে মিল্যা

মনে হয় না এটা সমাধান, একজন গেলে আরেকজন তৈরী হবে !
সামগ্রিক সমাধান চাই । পাহাড়কে ভালবাসি । পাহাড়ে যাই । পাহাড়ে শান্তি চাই।

৫| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫

অদৃশ্য বলেছেন:




অপ বাক বলেছেন... দুরের সমতলের মানুষের কাছে তারা কেউ ব্যক্তি না সংখ্যা, নিছক নাম ....

এমনটা ভাবা মোটেও ঠিক না... ব্যক্তিগতভাবে আমি এমনটা কখনোই ভাবতে পারিনাই... পাহাড় আমাকে টানে... পাহাড়ে বসবাসরত মানুষগুলো... তাদের সুখ দুঃখ.. আর কঠিন শ্রম সবকিছুই আমাকে টানে...

আমার কাছে পাহাড়ি অঞ্চল এক স্বপ্নের জায়গা... আর আপনারা স্বপ্নের ভেতরের বসবাসরত মানুষজন....

অন্তর্দন্দ...গোষ্ঠিগত দন্দ... রাজনৈতিক দন্দ... এসবের বাইরে আমরা কেউ নই... এসবকে সাথে নিয়েই শান্তির প্রার্থনা/ চেষ্টা করতে হবে... এ ছাড়াতো আর কোন উপাই দেখিনা...

পাহাড়ে শান্তি আসুক... সমতল আর পাহাড় মিলেমিশে একাকার হোক.... এমনটাই চাওয়া সবসময়...

শুভকামনা....


৬| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ দুপুর ১২:১০

সৈকত ইকবাল বলেছেন: পাহাড়ের এই ভ্রাত্বিঘাতী খুনোখুনি বন্ধ হউক- এই প্রত্যাশা করি।

৭| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০০

বিপ্লব রহমান বলেছেন: শুধু এক পক্ষকে দোষ দিয়ে লাভ কি? অপর পক্ষগুলো কি গান্ধিবাদী অহিংস আন্দোলন করছে?...অস্ত্রের রাজনীতিতে সুদীর্ঘ চাকমা, অনিল চাকমা, রূপক চাকমারা কেবলই বলি হয়...আর বিকশিত দন্তে অট্রহাস্য করে বাজিকর! [খুব খেয়াল করে] :-P

৮| ১৩ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২২

মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় বলেছেন: অপ বাক বলেছেন... দুরের সমতলের মানুষের কাছে তারা কেউ ব্যক্তি না সংখ্যা, নিছক নাম ....

৯| ১৬ ই মার্চ, ২০১৩ ভোর ৫:১৩

সুমেধ তাপস চাক্‌মা বলেছেন: অপহরণ-গুম-হত্যার মত লজ্জা কিভাবে লুকাই? এ লজ্জা ফেলতে দ্রুত ঐক্যের পথ ধরতে উভয় পক্ষকে আহ্বান জানাই; আর কোন লাশ চাই না।

১০| ১৭ ই মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:৩৯

মিঠুন চাকমা বলেছেন: যারা মন্তব্য করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

১১| ২৬ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৫

মিঠুন চাকমা বলেছেন: সুদীর্ঘ দা তোমাকে স্মরণ করে

আমি কিভাবে ভুলি।

যে একসময় দলগতভাবে শত্রু ছিলো;

কিন্তু তারপরে আরেক সময় সেই হয় আন্তরিক সহযোদ্ধা।

আজ তিনি চলে গেলেন,

যে আগুনে পুড়ে ছাড়খাড় আজ পার্বত্য চট্টলা,

সেই ভ্রাতৃবিদারী আগুনে।

তুমি কি জানো সুদীর্ঘ দা,

তোমাদের সংগঠনের এক সহযোদ্ধা

যিনি কয়েকবছর আগে মারা যান ভ্রাতৃঘাতি আগুনে,

সেই সহযোদ্ধার সাথে প্রথম আমি দেখা করি তাঁদের বাড়িতে গিয়ে।

তারপর তাঁর সাথে ক'দিন কাটাই সাংগঠনিক কাজে।

সেই সহযোদ্ধা নিজের মুখ থেকে বলেছিলেন যে,

আমাদের পার্টি সমর্থক-কর্মীদের একজনকে

তিনি জ্যান্ত পুড়িয়েছিলেন বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে।



বিশ্বাস করো সুর্দীর্ঘ দা,

তারপরও আমি তাঁকে আপন মনে করেছিলাম।

কেন না তিনিও তো এই জুম্ম জনগণের জন্য কাজ করছেন।

তিনি জ্ঞানতঃ তো তা করেন নি।

করেছিলেন পার্টিকে ভালোবেসে,

পার্টির উর্দ্ধতনের নির্দেশ মেনে।

তারপর তিনি যদি সজ্ঞানে তার ভুল বুঝে থাকেন

তবে কেন তাকে আমি আপন মনে করবো না?

যেহেতু এখনো তো পথের শেষ অনেক দূরে!

তারপর কয়েকমাস পরে তিনি নিহত-খুন হন।

আমার মনে পড়ছিলো তাঁর দুই সন্তানের কথা,

একজন মেয়ে ১০-১২ বছরের। আরেকজন ছেলে মাত্র ৫-৬ বছরের।

তাঁর সোহাগিনী স্ত্রী কী নির্মম বেদনায়

ডুঁকরে কেঁদে উঠেছিলেন তাঁর স্বামীর মৃত্যুর খবর শুনে তা আমি দেখিনি।

কিন্তু এই মর্মরে তো তার চিৎকার আমি মন থেকে কান পাতলেই শুনতে পাই।

বিশ্বাস করো সুদীর্ঘ দা,

আমার সহযোদ্ধাকে জ্যান্ত পোড়ানোর হোতা

সেই সেই নতুন সহযোদ্ধার বাড়িতে এখনো যাইনি।

কারণ, আমি কতো কষ্ট আর বেদনা বুকে চেপে রাখার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবো?

এই ধরিত্রীও তো এক সময় বিদীর্ন হয় কষ্টকে চেপে রাখতে না পেরে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.