নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরেধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরে ধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

মিঠুন চাকমা

মিঠুন চাকমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্নেহকুমার চাকমার জীবনালেখ্য নিয়ে-জীবন যখন ব্যক্তিকে ছাপিয়ে সমষ্টির কথা সমাজের কথা বলতে থাকে

২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:০১

জীবন সংগ্রাম নিয়ে, সংগ্রামের জীবন নিয়ে এবং সংঘাতময় দিনগুলো নিয়ে জনসংহতি সমিতির নেতা ¯স্নেহ কুমার চাকমার লেখা ’জীবনালেখ্য’। পরিচিত এক ছোটোভাইয়ের কাছ থেকে বইটি ধার নিয়ে পড়ছি। এখনো পড়া শেষ হয়নি। মাত্র ৫০ পৃষ্ঠা শেষ করলাম। কিন্তু এই ৫০ পৃষ্ঠার মধ্যেই তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামের যে অধরা ইতিহাসকে লেখায় তুলে এনেছেন তাতে যেন নিজের মালিকানাধীন ’মণিমুক্তা’ নিয়ে নাড়াচাড়া করছি বলেই বোধ হচ্ছে!

বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ২০১১ সালের আগস্ট মাসে। দ্বিতীয় প্রকাশ ডিসেম্বও, ২০১১। রাঙামাটি থেকে বইটি প্রকাশ করা হয়। প্রকাশক মিসেস অনামিকা চাকমা। বইটির দাম ৩৫০ টাকা। ২৪০ পৃষ্ঠার বইয়ের কয়েকটি পাতায় শান্তিবাহিনীর গেরিলা গ্রুপের ছবি রয়েছে।

বইটির মোট তিনটি অধ্যায়। প্রথম অধ্যায়ে তিনি শৈশবের স্মৃতি নিয়ে কথা বলেছেন। সাধারণ গ্রামীণ জীবনেই তিনি বেড়ে উঠেছিলেন। দূর পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে যাওয়া, স্কুলে বন্ধুদের সাথে খেলধূলা, ছেলেবেলার দুষ্টুমি-মশকারী সবই যেন একই অন্য আরেকজন সেই সময়কার দুরন্ত ’ছেলে-ছোকড়া’রই মতো! কিন্তু সব ’ছেলে-ছোকড়া’ তো আর তার মতো লেখেননি!

কিন্তু তার এই ছেলেবেলার জীবন নিয়ে লিখতে লিখতেই তিনি সেই সময়কার পার্বত্য জনপদের চিত্র স্পষ্ট করতে থাকেন পাঠকের মনে। পার্বত্য জনপদের এক নগন্য সন্তান হিসেবে আমি আমপাঠক তাতে সাধ লাভ করি এক অধরা আত্মিক বন্ধনের! বুঝতে পারি এই পার্বত্য জনপদের জাতিসমূহের জীবনের ইতিহাস সবই ছিলো সংগ্রামের-সংঘাতের-বাস্তুচ্যুতির-নতুন আশার-বড় পরঙের! পুরোন রাঙামাত্যা আমার মনের কোণে রূপালী পর্দার মতো ভাসতে থাকে! কিল্লে আদিক্কে সবনে দিক্কোঙ পুরোন রাঙামাত্যা-থূত্তে বুইয়ের বাআর-সিমেততুলো উড়ি যাআর গানটি আপন মনে সুর হয়ে ধরা দিতে থাকে…

সামন্তীয় অধিপতিরা তখন ছিলো শাসনের শীর্ষে। বাড়িতে নতুন কালিশিরে বেড়া যোগ করতে গেলে দেওয়ানকে নজরানা দিতে হয় ৫ টাকা। বিবাহের সময় সোনার অলংকার পরিধান করতে হয় নজরানা দিয়ে। দেওয়ানের ছায়া মাড়ানোও ছিলো অপরাধ।

পুরোন রাঙামাত্যায় এক সময় ভারত থেকে তাড়া খাওয়া ’মুসলমান বাঙালী’ আসতে থাকে। কাপ্তাই বাধ তৈরী হতে থাকে। শত শত শ্রমিক কাজ করতে আসে। রেঙখ্যং বাজার জমজমাট হতে থাকে। তখনো ’বাঙালী’দের ”মেয়েদের প্রতি চাহনি ক্ষুধার্ত ব্যাঘ্রের মতে’ ছিলো। নানা কারণে তাদের সাথে ’যুদ্ধ’ও হয়ে যায় এক দফা। মিজিলিকের ভয়ে ছেলেবুড়ো তটস্থ থাকতো।

’৫৬ সালে প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচন আসলো। কামিনী মোহন দেওয়ান নির্বাচিত হলেন। কাপ্তাই বাধ নির্মাণ হতে থাকলো। কামিনী মোহন দেওয়ান তো কাপ্তাই বাধ নির্মাণের বিরোধীতা করলেন না! সহজ সরল পাহাড়ীরা বিশ্বাস করেনি যে এতবড় ’বড়গাঙ’-এ বাধ দেয়া সম্ভব। কিন্তু একদিন ’সরল পাহাড়ীরা বুঝতে পারলো সত্যি সত্যি নিজ বাস্তুভিটা পানিতে তলিয়ে যাবে’। বিষাদ-হাহাকার দেখা দিলো সকলের চোখে মুখে। সবাইকে বড় পরঙের জন্য প্রস্তুত হতে হলো। বড়পরঙের দিন সমাগত, ¯স্নেহ কুমার চাকমার বাবা-মায়ের মুখ মলিন। কিন্তু তারপরও ’ মা রান্নার কাজে ব্যস্ত, বাবা বাগানের এদিক সেদিক ঘুরলেন। তারপর বাড়ীর চতুর্দিকে ঘুরে ঘুরে কী যেন লক্ষ্য করছেন।’

কাপ্তাই বাধে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে সরকার ও তার কর্তাব্যক্তিরা সাধারণ সিধেসাদা পাহাড়ীদের ঠকালো। পানির লেভেল ১২০ ফুট উঠে আসলে যে পরিমাণ জায়গা ডুবে যাবার কথা তাদের সবাইকে ’ক্ষতিপূরণ’ দেয়া হবে বলা হয়েছিল। পানির লেভেল পরিমাপের সময় ঠকানো হলো। পানি বাড়তে লাগলো। ১২০ ফুট লেভেল অতিক্রম করা তখন অনেক দূর। ১১২ ফুট লেভেলে পানি আসতেই ডুবে গেলো নির্ধারণ করা ১২০ ফুট লেভেলের জায়গা। সরকার কর্তৃক ধার্যমতে আরো ৮ ফুট বেশি পানি অর্থাৎ মোট ১২০ ফুট পানির লেভেল বাড়িয়ে দিলে আরো অনেককে উদ্বাস্তু হতে হবে। কিন্তু তারা ’উদ্বাস্তু’ হিসেবেও বিবেচিত হবে না এবং ’ক্ষতিপূরণ’ও পাবে না।

বড় পরঙ হয়ে অনেকে চলে গেলো কাচালঙ ভ্যালী। সেখানে রিজার্ভ ফরেস্টের বড় বড় গাছ কেটে এলাকাকে তারা ’বসবাসযোগ্য’ করে তুললো। ’ফরেস্ট’ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তারা আরেকবার হয়রানীর শিকার হলো।

জীবনযুদ্ধ করতে হলো প্রকৃতির সাথে। অনেকে অকালে অসুখে-বিসুখে মারা পড়লো। হাজার হাজার পরিবার পাড়ি জমালো অজানার উদ্দেশ্যে।

সাধারণ গীদে-রেঙে-উভগীদে কাটানো সমাজ জীবন উলটে গেল।

তারপরও ’সত্যি বলতে কি ১৯৬০ সনে কাপ্তাই বাধের কারণে উদ্বাস্তু হয়ে যারা … গিয়েছিল সেদিনই তারা দেওয়ানের অত্যাচার, নির্যাতন, শাসন-শোষণ থেকে মুক্ত হয়েছিল।’

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মার্চ, ২০১৪ রাত ১০:১০

টয়ম্যান বলেছেন: +++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.