নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরেধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরে ধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

মিঠুন চাকমা

মিঠুন চাকমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জ্ঞানী বুদ্ধের শিক্ষা: কঠোর কৃচ্ছ্রতা সাধন নয়, বরং নীতি-নৈতিকতাময় জীবনাচরণেই মুক্তি নিহিত

১০ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৪৫

ধ্যানী জ্ঞানী বুদ্ধ একসময় উজুন্যা বা উজুনজার কন্নকথল হরিণচারণ বনে অবস্থান করছিলেন। তাঁর সাথে দেখা করতে আসলেন নির্গন্থ তথা নগ্ন এক সন্যাসী।

সন্যাসী ধ্যানী জ্ঞানী বুদ্ধকে প্রশ্ন করলেন, ভদন্ত গৌতম! আমি শুনেছি আপনি কঠোর তপস্যার নিন্দাবাদ করেন, তাদের তিরস্কার করেনম অপবাদ দেন। তাদের কথা কি ঠিক নাকি বেঠিক?

জ্ঞানী বুদ্ধ সানন্দে সমালোচনা গ্রহণ করতেন

তখন বুদ্ধ সমালোচনাপূর্ণ বক্তব্য সানন্দে গ্রহণ করে বললেন, এ কথাটি সত্য নয়। তিনি বললেন, প্রজ্ঞাপূর্ণ চোখে এটা দেখা যায়, কোনো কোনো কঠোর সাধনাকারী মরণের পরে দুর্গতিপ্রাপ্ত হয়েছেন। আর কোনো কোনো কঠোর সাধানাকারী তপস্বী মরণের পরে সুগতিপ্রাপ্ত হয়েছেন। প্রজ্ঞাপূর্ণ চোখে এ সকল দেখার পরে আমি কিভাবে কঠোর তপস্বী তথা সাধনাকারী মাত্রেই নিন্দামন্দ বা তিরস্কার করি?

মতের বা দর্শনের মিল না থাকলেও আলোচনায় বিশ্বাস করতেন জ্ঞানী ধ্যানী বুদ্ধ

তিনি বললেন, কঠোর সাধনাকারী কোনো শ্রমণ ও মনস্বী/ব্রাহ্মণ আছেন, যারা খুবই জ্ঞানী, অভিজ্ঞ,বুদ্ধিমান ও তার্কিক। তারা প্রজ্ঞার দ্বারা অন্যের মতবাদের খন্ডবিখন্ড সমালোচনা করতে পারেন। তাদের সাথে আলোচনার সময় কোনো বিষয়ে তাদের সাথে আমার মতের মিল হয়, আবার কোনো বিষয়ে মতের পার্থক্য ঘটে। কিন্তু আমি তাদের বলি যে, যে বিষয়ে আমাদের মতের মিল নেই সে বিষয়ে আমরা আলোচনা না-ই করলাম। কিন্তু যে বিষয়ে আমাদের মতের মিল রয়েছে, সে বিষয়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাই।

বুদ্ধ তথা শ্রামণ গৌতম বলেন, গুণ আপনা আপনি প্রস্ফূটিত হয়

এরপর তাকে নিয়ে নির্গন্থ সন্যাসী যে সমালোচনামূলক বক্তব্য দিলেন সে বিষয়ে নিজের বক্তব্য তুলে ধরলেন। তিনি যা বললেন তার সারাংশ হলো, কারোর দর্শনের বা জীবনচর্চার সাথে মিল না হলে যো কেউ সমালোচনা করতেও পারেন বা দর্শনের মিল হলে প্রশংসাও করতে পারেন। তবে গৌতম বুদ্ধ যে নীতি-রীতি প্রণয়ন করেছেন তা অনুসরণ করলে বা বাস্তবে প্রয়োগ করলেই বোঝা যাবে যে শ্রমাণ গৌতেমর নীতি-ধর্ম কতটা গুণময়।

এরপর নির্গন্থ নগ্ন সন্যাসীগণ বাহ্যিক যে আচার পালন করেন সে বিষয়ে নির্গন্থ সন্যাসী বুদ্ধের কাছে তুলে ধরলেন এবং এগুলো পালন করা অনেক সন্যাসী তপস্বী যথাযথ বলেই মনে করেন, এতে বুদ্ধ কী মত দেন তা তিনি জানতে চাইলেন।

সেই আচারসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- নগ্ন থাকা, দাঁড়িয়ে খাওয়া দাওয়া করা, ভিক্ষা করে আহার করা, প্রতিদিন প্রতি ঘর থেকে কেবল একগ্রাস করে সাত ঘর থেকে সাতগ্রাসমাত্র খাবার গ্রহণ করা, অথবা কেবল দিনে একবার খাওয়া, সাতদিকে একবার খাওয়া বা ক্রমে ১৫দিনে একবার খাওয়ার অভ্যাস করা, শ্মশানের পরিত্যক্ত কাপড়চোপড় পরা, ময়লা দেহে খোলা আকাশে দিনকাটানো ইত্যাদি ইত্যাদি।

বুদ্ধ দর্শনে নীতি-নৈতিকতাময় জীবনযাপনই প্রধান,আচার সর্বস্ব কৃচ্ছ্রতা সাধন নয়

জ্ঞানী ধ্যানী বুদ্ধ তথা গৌতম সকল বিষয় শুনে বললেন দ্ব্যর্থহীন কন্ঠেই বললেন, এসব কিছু আচার আচরণ পালন করার পরেও যদি কেউ নীতি-নৈতিকতা শীল প্রজ্ঞার অনুশীলন না করে তবে তিনি এত সাধনা করেও সফল হবেননা। সঠিক শ্রামণ বা মনস্বী বা ব্রাহ্মণ তিনিই যিনি নীতি-নৈতিকতা অনুশীলন করেন, যিনি মোহ-দ্বেষ-হিংসা থেকে মুক্ত যিনি অপরের কল্যাণ কামনা করেন তিনিই মুক্তপুরুষ।

জ্ঞানী বুদ্ধ গুঢ়বাদী তত্ত্বকে প্রত্যাখ্যান করলেন

এরপর তিনি নির্গন্থ সন্যাসীর সাথে এসকল বিষয়ের আলোচনার সাথে সাথে কোনো কিছুই তথা কল্যাণময় কিছুই যে গুঢ় বা নিগুঢ় বা গোপনীয় নয় এই প্রসঙ্গের অবতাড়না করলেন। তিনি বললেন, জ্ঞানী ধ্যানী বুদ্ধ যে নীতি ধর্মের কথা বললেন, তিনি তা নিজে পালন করেন, এ বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন, কেউ ভুল দেখিয়ে থাকলেও তিনি এ বিষয়ে সানন্দে আলোচনা করেন, তিনি শুধু তার নিজের শিষ্যদের সাথেই এ বিষয়ে আলোচনা করেন না, বরং যারাই আলোচনা করতে চায় তাদের সাথে্ও তিনি আলোচনা করতে প্রস্তুত এবং বুদ্ধের প্রদত্ত এই নীতি তিনি পালন করেন, লালন করেন।

এভাবেই জ্ঞানী ধ্যানী বুদ্ধ বাস্তবমূখী থেকে আড়াই হাজার বছর আগে তার প্রবর্তিত ধর্ম দর্শনের ব্যাপক প্রচার প্রসার ঘটাতে পেরেছিলেন।

নির্গন্থ সন্যাসী কশ্যপের সামনে তিনি সিংহ গর্জন করে নিজের দর্শনের তথা পথের সঠিকতা নির্ণয় করেছিলেন।

তিনি বলেছিলেন, আচার সর্বস্ব কঠোর সাধনা নয়, নীতি নৈতিকতাপূর্ণ জীবনযাপন পদ্ধতিই মুখ্য

ত্রিপিটক গ্রন্থের সুত্তপিটকের দীঘনিকায় অংশের কশ্যপ সিংহনাদ সুত্র অনুসরণে লিখিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.