নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরেধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

ভবিষ্যতের আবরণ উন্মোচিত হয় ধীরে ধীরে, অথচ মানুষকে কাজ করে যেতে হয় দিন থেকে দিনে

মিঠুন চাকমা

মিঠুন চাকমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অস্ত্রগুরু বুড়ো ওস্তাদকে স্মরণঃ তার জীবন যেন ইতিহাস বইয়ের একটি পাতা

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৫

পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ একদা এক সুমহান স্বপ্ন পূরণের জন্য, অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল। সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করা ঠিক ছিলো বা বেঠিক ছিলো তা নিয়ে নানা তাত্ত্বিক আলোচনা পর্যালোচনা হলেও হতে পারে। কিন্তু রাজনৈতিক নেতৃত্বের ডাকে যে সকল যুব-ছাত্র-পরিণত বয়সের সাধারণ অগণিত জনতা সেই সশস্ত্র সংগ্রামের অগ্রযাত্রার পথিক হয়েছিল তারা তো এক আশার জন্য, এক নতুন দিনের স্বপ্ন পূরণের জন্যই সেখানে সশস্ত্র লড়াইয়ে যোগ দিয়েছিল।



নলিনী রঞ্জন চাকমাও ঠিক সেই মহান সুমহান আশা নিয়েই যোগ দিয়েছিলেন শান্তিবাহিনীতে। বাংলাদেশ সরকার এই সশস্ত্র সংগ্রামকে বিচ্ছিন্নতাবাদের আন্দোলন, দুস্কৃতিকারীদের সন্ত্রাস ইত্যাদি নামে কালিমা লেপন করতে চাইলেও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ জনগণের কাছে এই আন্দোলন হলো অধিকার আদায়ের আন্দোলন, অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম।

সেই সংগ্রামে এই নলিনী রঞ্জন চাকমা অংশ নিয়েছিলেন। যখন তিনি সংগ্রামে অংশ নেন তখন তার বয়স ৪০ বছর, পরিণত একজন মানুষের বয়সই হয়েছিল তার। ১৯৩২ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭২ সালে তিনি শান্তিবাহিনীতে যোগ দেন। এই শান্তিবাহিনীর পোশাকী নাম ছিলো গণমুক্তি ফৌজ বা পিপলস লিবারেশন আর্মি। শান্তিবাহিনীতে তার নাম রাখা হয় মেজর অফুরন্ত । তিনি যেহেতু পূর্ব পাকিস্তান রাইফেল বা ইপআর-এর একজন ওয়ারেন্ট অফিসার/সুবেদার/নায়েক(!) মর্যাদার একজন সৈনিক ছিলেন এবং যেহেতু তিনি সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন এবং অস্ত্র চালনায়ও দক্ষ ছিলেন সেহেতু পার্টি তাকে অস্ত্র প্রশিক্ষক বা একজন সামরিক প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করে। তিনি তার দায়িত্ব যথাযথভাবেই পালন করেছিলেন বলেই প্রতীয়মান হয়। তাই সাধারণ যোদ্ধা বা যারা শান্তিবাহিনীতে সাধারণ সৈনিক ছিলেন, তিনি তাদের সবার ভালবাসা লাভ করতে সক্ষম হন। সাধারণ সৈনিকদের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে ওঠেন অস্ত্রগুরু হিসেবে, তার নাম হয়ে ওঠে বুড়ো ওস্তাদ। সম্ভবত, তৎকালীন সময়ে শান্তিবাহিনীতে যারা ছিলেন বা যারা সৈনিক ছিলেন তখন ৪০ বছর বয়সের খুব কমই ছিলেন। তিনি ছিলেন হয়তো সবার কাছে বয়স্ক বৃদ্ধ একজন। তিনি সবার কাছে পরিচিত হয়ে ওঠেন বুড়ো ওস্তাদ হিসেবে।

পার্বত্য চট্টগ্রামে অস্ত্রগুরু বা সশস্ত্র গেরিলা প্রশিক্ষক হিসেবে বলি ওস্তাদ, বুড়ো ওস্তাদ যেন কিংবদন্তীর এক নাম! সশস্ত্র লড়াইকালীন সময়ে তাদের নিয়ে নানা মিথ নানা গল্প সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল। জনগণের কাছে তারা শক্তিশালী, শত্রুর বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়ার এক কিংবদন্তী চরিত্র পরিচিতি লাভ করেছিলেন। বলা হয়ে থাকে এই অস্ত্রগুরুগণ দুই হাতেই একইসাথে শক্তিশালী ভারী হাতিয়ার এলএমজির মতো অস্ত্র ব্যবহার করতে পারতেন। তাদের শরীরে এমন শক্তি ছিলো যে, আটদশজন সৈনিকও তাদের সাথে পেরে উঠতো না। এভাবেই তাদের পরিচিতি সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছিল।

বুড়ো ওস্তাদ ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ছিলেন শান্তিবাহিনীতে কাজ করেছেন। এবং একসময় শান্তিবাহিনীতে আদর্শগত এবং একইসাথে ক্ষমতাগত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবার পরে লাম্বা ও বাদি নামে দুই গ্রুপ বা উপদলের সৃষ্টি হয়। তাদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এবং সেই সময়ই বুড়ো ওস্তাদ গেরিলা জীবন ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে চলে আসেন। তিনি সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেন।

শান্তিবাহিনী বা তার রাজনৈতিক শাখা জনসংহতি সমিতি’র লড়াইয়ে তিনি ছিলেন সাধারণ একজন যোদ্ধা মাত্র। তিনি আন্দোলনের নেতৃত্বসারির একজন ছিলেন না। তিনি রাজনৈতিক নেতা ছিলেন না বা তিনি শান্তিবাহিনীর ডিসিশন মেকার কেউ ছিলেন না।

সুতরাং, লাম্বা বা বাদি এই দুই ধারার রাজনৈতিক নেতাদের ভুলের দায় তিনি নিতে পারেন না। এবং তিনি যেহেতু একজন রাজনৈতিক নেতাও নন সুতরাং তিনি গোটা রাজনৈতিক সামরিক লড়াইয়ের এক দাবার ঘুঁটি মাত্র।

রাজনৈতিক নেতৃত্ব কৌশল নীতি বাতলিয়েছেন এবং তিনি সেই নীতি কৌশল বাস্তবায়নের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন মাত্র।

২০১৫ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০.৪৫ টায় তিনি ৮৪ বছর বয়সে স্বাভাবিক বৃদ্ধ বয়সেই মৃত্যুবরণ করলেন।

আজ তার মৃত্যুর পর আমরা হয়তো তাকে নিয়ে নানা কথা সমালোচনা আলোচনা করতেই পারি। বা তাকে নিয়ে আমরা নিরব নিশ্চুপই থাকতে পারি। তাকে নিয়ে আলোচনা না করা মানে এটাই বোঝাবে যে আমরা যেন ক্রমেই আমাদের ইতিহাস থেকে বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছি। আর যদি আলোচনাই করে থাকি তবে এটাও বলা দরকার যে ইতিহাসে যার যা অবস্থান তাকে তা-ই দেয়া দরকার।

তিনি বা এই অস্ত্রগুরু বলী ওস্তাদ, বুড়ো ওস্তাদ, সুবীর ওস্তাদ তারা যেন পার্বত্য চট্টগ্রামের লড়াই সংগ্রামের ইতিহাস বইয়ে অন্তত একটি পাতায় ঠাঁই পান এই প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।

তারা ছিলেন, জুম্ম জনগণের সোনাঝরা অধ্যায়ের সেই বলবান বলদর্পী যোদ্ধা অগ্রসৈনিক যাদের ছাড়া রাজনৈতিক নেতা নেতৃত্ব সংগ্রামের নেতৃত্ব প্রদানকারীগণ যেন অসহায় হাত বা পা হারোনো ব্যক্তির মতোন!

আগামীতে এই বলদর্পী লড়াকুরা শতে হাজারে জন্ম নিক যারা দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে হয়ে উঠবে দুর্ধর্ষ, শত্রুর হৃদকম্পনকারী!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.