নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের কোথাও একটি ছাপ রেখে যেতে চাই

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।

অপর্ণা মম্ময়

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।

অপর্ণা মম্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিহ্বলা

১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৭





প্রায় তিন মাসেরও বেশি হবে আমার কলেজ যাওয়া হচ্ছে না। অবশ্য যাওয়ার মত পরিবেশও যে আছে তাও নয়। তবুও সময়গুলো আগের চেয়ে কেমন বিদঘুটে আর একঘেয়েমিতে ভরে গেছে। তাই আজকাল বিশেষ করে কলেজের ঐ সময়টায় বাড়ির পেছনের বাঁধানো ঘাটটায় আমি ঘুরে ফিরে একটু পর পর আসি। আগে দুপুরের যে সময়টায় নীলুফার ম্যাডামের নীরস রসায়নের ক্লাস করতে করতে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসত, এখন এই সময়টাই আমার কেটে যায় পুকুর ঘাটে। অনেক গাছপালা দিয়ে পুকুরটা চারপাশ থেকে ঘের দেয়া বলে বাইরে থেকে চট করে আমাদের এই পারিবারিক পুকুরটির আয়তন সম্পর্কে সঠিক ধারণা করতে পারে না কেউ। যদিও মা পছন্দ করে না আমার এখানে এসে বসে থাকা। বাড়ির উঠতি মেয়েদের দুপুরে আর সন্ধ্যায় পুকুরপাড়ে বসে থাকা, উঠানের এক কোণে যে চাপকল তার কাছ ঘেঁষেই যে দুইটা তালগাছ সেখানে যাওয়া আর খিলখিল করে হাসাহাসি করাটা শুধু মা-ই না, জেঠিও এটা নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করেন প্রায়ই। সরাসরি ভূত- পেত্নীর কথা তারা না বললেও আকারে ইঙ্গিতে অমনটাই বোঝায় যে, তালগাছে জ্বীনেরা সাত বোন থাকে! আর এইসব শুনলেই আমার হাসি পায়।





এই যেমন এখানে পুকুর ঘাটে দুপুরবেলায় আমি বসে আছি, অন্যসময় হলে ঠিকই মা আমাকে খুঁজতে খুঁজতে চলে আসত। কিন্তু এখন তার হাঁটা – চলার গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে যাওয়াতে হুট-হাট করে আমাকে খুঁজতে পুকুর ঘাটে আসতে না পারলেও ভেতর বাড়ি থেকে গলা উঁচিয়ে ‘মায়া, মায়া ’ করে ডেকে একটু পর পর নিজের উপস্থিতির জানান দেয় কিংবা আমার ছোট ভাই হাসানকে পাঠায় খুঁজতে; আমাকে মায়ের আশেপাশে বা নিজের রুমের পাশে না দেখলে। যদিও খুঁজে না পেলে মা আমাকে বকাঝকা করে কিন্তু আমার তেমন একটা গায়ে লাগে না। রাতের বেলা দাদী তাই জানতে চায় –



- তুই ঐ পুকুরের ঐহানে বইসা বইসা কি করস রে,বুবু?

- কিছু না তো ! নিভুনিভু স্বরে আমি বলি।



দাদীকে বলা আমার উত্তরটা সঠিক নয়। আসলে আমি অনেক কিছু ভাবলেও আমার এসব কথা কাউকে বলা হয় না। মা বলে, “ সময়টা অহন চুপ কইরা থাকনের। কথা কম কইবি। মুখ খুললেই বিপদ!” আমার প্রতিবাদ করে উঠতে ইচ্ছে করে মায়ের কথায়। জেঠিও বলে “ দেখস না চাইরদিক কেমন নিঝুম হইয়া গেছে। অস্থিরতা একটু কমাও এখন, মুরুব্বী গো মুখে মুখে তক্ক কইরো না এত!” জেঠি বেশী রেগে গেলে আমাকে তুমি করেও বলে , আমাকেই না শুধু তার ছেলেদেরকেও বলে , হাসানকেও বলে।





আমি তর্ক না করলেও বিড়বিড় করে নিজের মনে অনেক কথা বলি। অন্য কেউ দেখলে বলবে নির্ঘাত আমার সাথে জ্বীন- ভূতের আছর আছে। আমাদের এই ছোট এলাকাটা হঠাৎ করেই কেমন যেন শুনশান হয়ে গেছে যা কিছুদিন আগেও বেশ সরব ছিল। গত একমাসে এই নীরবতা বেশ অনুভব করতে পারছি বলা যায়। ঈদের ছুটিতে মানুষজন তাদের আত্মীয়- স্বজনের বাড়ি বেড়াতে গেলে হঠাৎ করে যেমন পুরো এলাকা নৈঃশব্দ্যতায় ছেয়ে যায় এখন ঠিক সেইরকমই অনুভূত হচ্ছে। চার/ পাঁচ বাড়ির পরের বাড়ির রেহনুমার মায়ের হাঁপানির টান উঠলেও এখন নাকি পুরো এলাকার মানুষ শুনতে পায়, এমন ধরণের নীরবতা বিরাজ করছে আমাদের এলাকা ছাড়াও অন্য সব জায়গায়। এটা অবশ্য আমার কথা না, দাদীর কথা। মুরুব্বীরা অনেক কিছুই বাড়িয়ে বলে, যেটা ঘটেনি কল্পনায় সেটা ভেবেও তারা বাস্তব জবানীতে কথা বলতে পছন্দ করে – এটা আমি বুঝতে পারছি ইদানীং। গতকাল বিকেলের দিকে মামুন ভাইয়ের মা এসে গল্প জুড়ে দিয়ে বললেন – ‘ রাইত ভইরা কুত্তার কান্দনের চোটে ঘুমাইতেই পারি না ’।



দাদী জানতে চায় – তুমি কুত্তার আওয়াজ ক্যামনে পাও , মামুনের মা ! আমি তো সারা রাইত জাগনাই থাকি! এহন তো কুত্তারাও মিলিটারির ডরে রাও করে না।



দাদী ভুল কিছু বলে নি। মানুষ এখন খুব ভয়ে ভয়ে বাঁচে, নিচু স্বরে কথা বলে। ক’দিন আগেও মাছের ঠোক্করে পুকুরে নেমে গোসল করতে পারতাম না,এখন সে পুকুরেও নিস্তব্ধতা। তারা এখন আর আকাশপাণে মুখ তোলে না। সম্ভবত ভয়ে।আমাদের পুকুরের চারপাশে আব্বা অনেক গাছ লাগিয়েছিলেন। অবশ্য কোনো পরিকল্পনা মাফিক নয়। ডাব, কৃষ্ণচূড়া, মেহগনি যখন যেটা পেরেছেন আব্বা লাগিয়েছেন। ঝড়- বৃষ্টির দিন ঘনিয়ে এলেও তার কোনো লক্ষণ যদিও এখনো দেখা যায়নি কিন্তু রোজ কী করে এত পাতা ঝরে পড়ে থাকে পুকুরের পানিতে কে জানে! ঝরা পাতা আর ময়লার আস্তরণের সর পড়ে পড়ে পুকুরটাও বেশ দ্রুতই তার শ্রী-হানি ঘটিয়েছে। আসলে কোথায় যেন জীবনের একটা সুর কেটে গেছে আমাদের সবারই। এভাবে আর কতদিন বন্দী জীবন কাটাতে হবে কারোরই জানা নেই!







কয়েকদিন আগে দুপুরে মা যখন ঘুমিয়ে ছিল, আমি তখন রত্নাদের বাসায় গিয়েছিলাম। রত্না আমার ছেলেবেলার বান্ধবী। ওদের বাসায় ও আর ওর মা ছাড়া এখন আর কেউ থাকে না অবশ্য। কড়া নাড়তেই ভেতর থেকে ওর মায়ের গলা শুনতে পাই – ‘ দ্যাখ তো রত্না, শামীম আইলো নি

! ’



দরজা খুলে শামীম ভাইয়ের বদলে আমাকে দেখতে পেয়ে খালাম্মা হতাশ হয়। আমিও মনে মনে হতাশ হই শামীম ভাই ফেরেনি জেনে। আমার বা রত্না কারো মুখেই কোনো কথা আসে না একে অপরকে দেখেও। তবু কি করে যেন এ ঘরের দুজন মানুষের বুকের ভাষা আর আমার অব্যক্ত ভাষা একাকার হয়ে মিশে থাকে একসাথে ! এই ঘরের মানুষ দুটো মনোবেদনা নিয়ে বাঁচে প্রতিনিয়ত, বেঁচে থাকে আশায় যে, একদিন শামীম ভাই ফিরে আসবে।



কোনো খোঁজ পাস নাই শামীম ভাইয়ের, না?



আমার কথায় অজান্তেই যেন একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে রত্নার।



- খোঁজ না পাওয়াই ভালো রে মায়া! রাজাকারগো নির্যাতনের মুখে কখন আবার কইয়া ফালাই আমার ভাই কই আছে কে জানে ! জানি না এইটাই এক শান্তি !



শামীম ভাই যুদ্ধে যাবার আগে আমাকে কথা দিয়েছিলেন যেখানেই থাকুক সেপ্টেম্বরের ১ তারিখ আমার সাথে উনি দেখা করবেন। আমাদের একটা সংসার পাতার কথা ছিল – এ কথা আমি আমার বুকের মাটিতে পুঁতে রেখেছি। মানুষের জীবনে কখন কীভাবে কোন সম্পর্কের সূত্রপাত হয় তা আগেভাগে ধারণা করাটা খুব সহজ ব্যাপার নয়। শামীম ভাই কুমিল্লা হয়ে ঢাকায় যোগ দিবেন এমনটাই বলেছিলেন। চুপ করে শোনা ছাড়া সেদিন আমার কিছু বলার ছিল না। উনি যেদিন আমাকে জানালেন উনি চলে যাচ্ছেন, খবরটা আমার মাঝে কাঁপন জাগিয়েছিল ভীষণভাবে। তবে সে কাঁপন আমার অভ্যন্তরের হলেও আমি টের পাচ্ছিলাম আমার ধমনীতে প্রবলবেগে রক্তের চলাচল, কেমন যেন একটা আগুনের হলকায় পুড়ে যাচ্ছিল আমার ভেতরটা। আমার নিস্তরঙ্গ চোখে সে সময় কি কিছু দোল খাচ্ছিলো ? শামীম ভাই নিজের মতো করেই বলতে থাকেন যুদ্ধের ডাক এসেছে। তার ভেতরটা নাকি উল্টেপাল্টে গেছে। শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে যার যার এলাকায়, বিভাগ জুড়ে তারপর গোটা বাংলাদেশে। কিন্তু যুদ্ধে যাবার আগে নিজেকে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে জড়িয়ে নিতে হবে আসলেই কেউ যুদ্ধে যেতে চায় কিনা । সেদিন আমাকে এসব বলতে বলতে শামীম ভাইকে অসহ্য আক্রোশে ছটফট করতে দেখে মনে হচ্ছিল তার রক্তে কেউ বিষাক্ত লাল পিঁপড়া ছেড়ে দিয়েছে।





শামীম ভাইয়ের সাথে সবার সামনে কথা তেমন আমার বলাই হতো না আর সবার চোখ এড়িয়ে একান্তে কথা বলার খুব একটা সুযোগ যে আমাদের অহরহ হতো তাও না। কিন্তু কি করে যেন তার সাথে আমি বাঁধা পড়ে গেলাম যেমন করে শামীম ভাইও পড়লেন ! কলেজ থেকে ফেরার সময় প্রায়ই দেখতাম উনি আর তার সংগঠনের বন্ধুরা ক্লাব ঘরে কাজ করছেন। গ্রামের উন্নয়নের কাজ নিয়েই সারাক্ষণ উনার ভাবনা। ফেরার পথে কখনোবা চোখাচোখি, পরীক্ষার আগে আগে হাসানকে নিয়ে শামীম ভাইদের বাসায় গিয়ে পড়াশুনা করানো, রত্নার সাথে গল্পের ছলে উনার কাছাকাছি একটু থাকা এভাবেই মনে হয় সম্পর্কটা গভীরতার দিকে যাচ্ছিলো । আমার ছোট ভাই হাসান যে স্কুলে পড়ে ঐ স্কুলেরই সহকারী প্রধান শিক্ষক উনি।



খুব ইচ্ছে করছিল জিজ্ঞেস করতে উনি কবে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু কেন যেন পারি নি। আমাদের একটা ছোট স্বপ্ন ছিল ঘর বাঁধার। তাই আমিও আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করি সেপ্টেম্বর মাসের জন্য, শামীম ভাইয়ের ঘরে ফেরার জন্য।





রত্না যদিও চা করতে চেয়েছিল আমাদের তিনজনের জন্য কিন্তু ওকে বিছানা থেকে উঠে বসতে দেখি না। কেমন এক দৃষ্টিতে চিত হয়ে শুয়ে শুয়ে ও ঘরের টিনের চালা ভেদ করে হয়তো বাইরের বিশাল আকাশটাকেই দেখে নিতে চাচ্ছে। আমিও রত্নার পাশে শুয়ে শুয়ে কি আকাশ দেখতে চাচ্ছি কিংবা কিছু ভাবছি কি না ঠিক বুঝে উঠতে পারি না। নিস্তব্ধ দুপুরের এই দুরন্ত অস্থির সময়ে রত্নাদের ঘরের টিনের চালে হয়তো কাক বা অন্য কোনো পাখি থেকে থেকে নখের খচমচ আওয়াজ তুলেই যাচ্ছে। শুয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করে আমার চোখ লেগে এলে পাশের ঘর থেকে রত্নার মা জানতে চায় –



‘ কি রে হুনলাম, শিপ্রারা বলে মুসলমান হইয়া গেছে? কথাডা সত্য নি?’



শিপ্রারা আমাদের প্রতিবেশি। সংখ্যালঘু শব্দটা শুনতে ভদ্র হলেও বেশিরভাগ লোকই শিপ্রাসহ অন্যান্য হিন্দু পরিবারগুলোকে ‘মালাউন’ বা ‘ মালু’ বলেই ডাকে। যুদ্ধ কী বিচিত্র ভাবেই না একটা দেশ, তার মানুষ, সম্পর্ক আর পরিবেশকে বদলে দেয়! আজন্ম লালিত যে বিশ্বাস, সংস্কার বোধ নিয়ে শিপ্রা, ওর ভাই অঞ্জন যে বড় হয়েছে তাকে হত্যা করে যুদ্ধের খাতিরে, বেঁচে থাকার খাতিরে আজ তারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। মৃত্যুভয় ধর্মের চেয়েও বড় হয়ে যায় ক্ষেত্র বিশেষে হয়তো বা!



পাশের ঘর থেকে খালাম্মা নিজের মনেই বলতে থাকেন –



‘ মুসলমান হইয়া, পাঁচ কলেমা শিখ্যা, নামাজ পইড়া আমরাই কি এহন নিরাপদে বাঁচতাছি, নিশ্চিন্তে ঘুমাইতাছি ?’



শুনেছি শিপ্রার বাবা মানে আমাদের নির্মল কাকাও যুদ্ধে গেছেন। কিন্তু কাদের সাথে বা কোথায় গেছেন আমরা কেউ জানি না। শিপ্রারা সারাদিন ওদের বাড়িতে থাকলেও কাকীমা ওদের নিয়ে সন্ধ্যার পর আমাদের বাড়িতে চলে আসেন।









আমাদের উঠোনে গত কিছুদিন আগে বিশাল করে গর্ত খোঁড়া হয়েছে। যখন কোনো যুদ্ধ বিমান যায় বা লোকমুখে কোনো গুজব শুনি, আতঙ্কে আমরা সবাই গর্তে ঢুকে বসে থাকি। তবে দিনের বেলায় এ গর্তের মুখের উপর তালপাতা, খড়কুটো, বাঁশের ভাঙা চাটাই জড়ো করে এমনভাবে রাখি যেন বাইরের কেউ দেখলে বুঝতে পারে যে, এখানে জঞ্জালের স্তূপ রাখা। এরকম বড় বড় গর্ত এখন মাটি কেটে বেশিরভাগ বাড়ির উঠোনেই করা হয়েছে।



এভাবে আমরা সবাই যখন গর্তের মাঝে গা জড়াজড়ি করে বসে থাকি, জানি না কার মনে কি ভাবের উদয় হয়। কিন্তু সে সময় আমি আলাদা করে একটা গরম ভাপ টের পাই, কেমন একটা ঝিনঝিন করা শব্দ শুনতে পাই, কান ব্যথা করে। মাটি থেকে ২/৩ হাত নিচে বসে থেকেই মনে হয় পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। আর বুঝি কখনও পৃথিবীর আলো- হাওয়া- গন্ধ কিছুই পাবো না। আমার ছোট ভাই হাসান কিছুতেই সেই গর্তের ভেতর বসে থাকতে চায় না, শুধু ছটফট করতে থাকে আর বলতে থাকে –



‘ আমাগো যদি এখন আইসা কেউ কবর দিয়া দেয়! মা চলো এইখান থিক্যা বাইর হইয়া যাই। ঘরে গিয়া খাটে শুইয়া থাকি। আমার গরম লাগতাছে অনেক ...’



মা ওকে ধমক দেয় – ‘ চুপ কর। সুখ- দুঃখ দেখি কিছুই বুঝতে চাস না। সবা সময় খালি প্যাচাল পারোন লাগে তোর !’

বলতে বলতে মা নিজেও গরমে হাঁসফাঁস করতে থাকে। মায়ের শরীর আস্তে আস্তে ভারি হচ্ছে। সম্ভবত এখন তার গর্ভধারনের পাঁচ মাস চলছে, কিছুদিন আগে তাকে জেঠির কাছে বলতে শুনেছি। এপ্রিলের এই গা চিটচিটে গরমে মা তার গায়ের কাপড়কে ভারবাহী কিছু ভেবে হয়তো বেশি বেশি ঘামতে থাকে, একটু কথা বলেই হাঁপাতে থাকে।



রাতে শুয়ে শুয়ে দাদীকে যখন বলি আমার গর্তের ভেতর ঢুকে বসে থাকতে ভালো লাগে না,চামড়ার মাঝে কেমন গরম একটা ভাপ লাগে, কানে ঝিনঝিন শব্দ হয়। এসব শুনে দাদী বলতে থাকে



- গরম ভাপ লাগব না আবার! ইগুলি হইল মাডির গোস্বা! মাডির উপরে যেমনে তোরা দপদপাইয়া চলস ! কব্বরে যাওনের আগে আলামত বুইঝ্যা ল, মরণের পর সেইখানে শুয়াইলে কেমন লাগব !



- ধ্যাত দাদী, তুমি কি সব উল্টাপাল্টা কথা কও না ! তুমি মায়েরে বল, আমরা যখন – তখন আকাশে পেলেন উড়লে, গোলাগুলির আওয়াজ পাইলে আর গর্তে ঢুকুম না।



- সেয়ানা ছেমড়ির মায়ের চিন্তা এহন কাঁচা বয়সে তুই বুঝবি না রে বু। তোর বাপটায়ও তো বাইত্তে নাই অহন! বলতে বলতে দাদী চুপ হয়ে যায়।





বাবা চিটাগাং থেকে শেষবার বাড়ি এসেছিলেন প্রায় ন’মাস আগে। তাদের অফিসের কি এক ঝামেলার কারণে বেশ কয়েকমাস তাদের অফিসের অস্থিতিশীল অবস্থার জন্য তাকে বাড়িতেই থাকতে হয় অন্যান্য সহকর্মীদের মতোই। আমার বাবা-মায়ের সম্পর্কের ধরণ বেশ অদ্ভুত। কেন কে জানে। আমাদের বাড়ি থেকে শহর বেশ কয়েক মাইল দূরে। এজন্য বাবার অফিসে ফোন করে খবর নেয়া হচ্ছে না আসলে তিনি কোথায় আছেন – যদিও এটা আমার মায়ের বক্তব্য। তবে আমি নিশ্চিত যে, বাবার অফিসের নাম্বারে ফোন করলে মা কী কথা বলবে তা-ই খুঁজে পাবে না। বাবা বাড়ি আসলেও তাদের দুজনের কাউকেই দেখি নি বিশেষ আহ্লাদিত হতে কিংবা কাউকেই দেখিনি চিঠি বিনিময় করতে। হয়তো বাবা যুদ্ধের মাঝে আটকা পড়েছেন বলে আসতে পারছেন না কিংবা হয়তো নিজেই মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছেন।



যদিও দাদী আমার জেঠার সাথে খ্যানখ্যান করে বলে –



‘ একবার চিটাগাং যাইয়া দেইখ্যা অ্যায় না নাজমুল বাইচ্যা আছে না মরছে?



‘ওহ মা, চুপ কর তো। এহন কইলেই কি যাওন যাইব এত দূরে ? দেখি শহরে যাইতে পারলে ওর অফিসে ফোন দিমু নে।’



একদিন, দুদিন করে প্রায় দু মাস পার হয়ে যাবার পরও জেঠাকে গরজ করতে দেখি না বাবার খবর নেয়ার জন্য ফোন করতে। অপেক্ষা করতে করতে আমার অভিব্যক্তিহীন মায়ের চোখেও অধৈর্যের ছায়া দেখতে পাই। মা’কে বলতে ইচ্ছে করে –



‘ মা, আমিই যাই শহরে। ফোন কইরা আসি বাবারে ! ’ কিন্তু মা কে বলতে পারি না। এ কথা শুনলেই মা বা জেঠি বলবে – মাইয়া মাইনসের এত সাহস ভালো না।



কিন্তু আমার ভাবতে ভালো লাগে যে একদিন শুনবো হঠাৎ করে বাবা ফিরে এসেছেন, তার যুদ্ধের অভিজ্ঞতা শোনাচ্ছেন কিংবা আমি, হাসান খুব গর্ব নিয়ে শিপ্রাকেও বলতে পারবো ‘ আমাদের বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা, যেমনটা তোদের বাবাও।’









আমার বাড়ি থেকে কাউকে না বলে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে। মনে হয় আমিও কিছু করি দেশের জন্য। আমার জেঠা, উনি বাজারের চায়ের দোকানে যেসব আলোচনা হয় বাড়িতে এসে রাতে আমাদের সাথে খেতে বসে কখনও কখনও বলেন। তার মুখেই শুনেছিলাম দেশে নাকি মার্শাল ল জারি হয়েছে। মার্শাল ল কি জানতে চেয়ে হাসান ইতিমধ্যে উনার ধমকও খেয়ে ফেলেছে। জেঠা মার্শাল ল নিয়ে তার অজ্ঞতা ঢাকতে ঘরের সবার উদ্দেশ্যে বলেছেন –



‘ কোনো কথা বাইরে থিক্যা শুনলে সোজা গিল্যা ফালাইবা। পেডের মইধ্যে অইসব কথা উগলাইবা না। যত বেশি জানবা আর বুঝবা তত বেশি বিপদে পড়বা। মাইয়া মাইনসের বিপদ আরও বেশি।’



শেষের কথাটা অবশ্য চাচা আমাকে উদ্দেশ্য করেই বলেছেন। কারণ আমার পড়াশুনা, জেদ করে কলেজে ভর্তি হওয়াকে তিনি ভালো নজরে দেখেননি।



জেঠার বড় ছেলে, তারেক ভাই পরে আমাকে, হাসানকে, ঘরের অন্যান্য সদস্যদের বুঝিয়েছে পাকিস্তানিরা আমাদের মন্ত্রী পরিষদ, সংসদ, আইন সবকিছুকে স্থগিত করে সামরিক শাসন জারি করতে যে নিয়ম তৈরি করেছে তাকেই মার্শাল ল বলে। পাকিস্তানিরা আমাদের উপর অবৈধভাবে মার্শাল ল চাপিয়ে ঘোষণা করেছে – আমাদের দেশ নাকি এখনো গণতন্ত্রের জন্য প্রস্তুত নয়।



এর মাঝেই নাসির ভাই ( আমার জেঠার ছোট ছেলে) খবর শোনায় মুজিবনগর থেকে ১০ এপ্রিল ‘ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ দেয়া হয়েছে। সবাইকে ডাক দেয়া হয়েছে মুক্তির সংগ্রামে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে।



বঙ্গবন্ধুর অমোঘ ডাক উপেক্ষা করতে না পেরেই হয়তো আমার জেঠার দুই ছেলে যুদ্ধে চলে গেল কাউকে কিছু না বলে। কাউকে মানে জেঠা, জেঠি, মা আর ছোট চাচাকে না জানিয়ে। শুধুমাত্র আমি আর দাদী জানতাম। মূলত এসব যুদ্ধসংক্রান্ত খবর জেঠার অনুপস্থিতেই আমাদের ঘরে হতো। উনি ভীষণ ভয় পেতেন, ভাবতেন কেউ যদি শুনে ফেলে আমরা মুক্তির সংগ্রামের পক্ষে আছি তাহলে হয়তো আমরা সবাই বিপদে পড়ে যাবো, মেরে ফেলবে আমাদের। কারণ এর মাঝে কিছু সুযোগসন্ধানী অ-মানুষেরা শান্তি কমিটিতে নাম লিখিয়েছিল। আমাদের এলাকার কয়েকজনও ছিল। তারেক ভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম খুলনায় আনসার ক্যাম্পে প্রথম রাজাকার বাহিনী গঠিত হয় যা নাকি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হতো এবং পরবর্তীতে এ প্রশিক্ষণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের মাঠেও দেয়া হয় যার প্রশিক্ষণ কাল দেড় থেকে দুই সপ্তাহ।





আমাদের বাড়িতে আমরা রেডিও শুনতে পেতাম না। কারণ সেটা জেঠার জিম্মায় থাকত। মাঝে মাঝে অবশ্য রত্নাদের বাসায় গিয়ে রেডিওতে শুনে আসতাম মুক্তির গান কিংবা বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ যা বারবার মুক্তিকামী মানুষকে শুনিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হতো।



ছোট থাকতেই রত্নার বাবা মারা গিয়েছিল। শামীম ভাই যুদ্ধে চলে যাবার পর শিপ্রাদের মত ওরাও বাড়িতে অরক্ষিত অবস্থায় ছিল বলে মা কয়েকবার দুর্বলভাবে জেঠার সামনে বলতে চেষ্টা করেছিল –



‘ রত্নারা না হয় দেশের অবস্থা ভালো না হওন পর্যন্ত আমাগো বাইত্তেই থাকুক।’



কিন্তু জেঠার হুংকারে মায়ের আর্জি আর আশার আলো দেখে নি যখন উনি বললেন –



‘ কোন আক্কেলে তুমি এই কথা কও মায়ার মা ? এমনেই শিপ্রারা থাকে আমাগো এই হানে। অহন যদি শামীমের মা আর বইনরেও আইন্যা আমাগো বাইত্তে জায়গা দেই তাইলে কাদের মিয়ার কানে খবর যাইতে দেরী হইব না। শামীম মুক্তিযোদ্ধা, জানো না তোমরা ?’



তারেক ভাই আর নাসির ভাইয়ের নিরুদ্দেশের পাশাপাশি ছোট চাচাও যখন নিরুদ্দেশ হলেন, আমরা সবাই ধরেই নিলাম উনিও যুদ্ধে গেছেন আর জেঠা আশ্চর্যজনকভাবে তখন থেকে বেশ নীরব হয়ে গেলেন। যদিও রত্নারা আমাদের বাসায় এসে থাকতে রাজি হয়নি। কেননা একটা পর্যায়ে আমি বুঝতে পেরেছিলাম রত্না সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে জড়িয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সাথে।





আমাদের এলাকায় গোপনে গোপনে একটা দল গঠিত হয়েছিল, যার নাম ‘ লিবারেল পার্টি ’ আর সেই দলের নেতৃত্ব দিতো রত্না। শুনে তো আমি থ। ওদের কাজ ছিল রাজাকার বাহিনীতে কারা সরাসরি জড়িত ছিল তার লিস্ট তৈরি করা, তাদের গতিবিধি লক্ষ্য করা আর সেই খবর মুক্তিবাহিনীর কাছ পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। রত্নার কাছেই শুনেছি রাজাকার বাহিনী নাকি নিয়ন্ত্রণ করে জামায়াতে ইসলাম এবং রাজাকার শব্দটা নাকি ভুল, শুদ্ধ উচ্চারণ ‘ রেজাকার ’।



রাজাকার বা রেজাকার যাই হোক যা- ই হোক না কেন এরকম দমবন্ধ পরিস্থিতির মাঝে আমার ছোট ভাই হাসান একটা মজার কথা শোনালো। কাদের মিয়ার সাথে শহরের রাজাকার বাহিনীর সিরাজ সর্দারের দহরম মহরমের ব্যাপারটা আমরা সবাই-ই জানতাম। ঐ সিরাজ সর্দারের প্রধান চ্যালা ফরিদউদ্দিনকে আমাদের এলাকার লিবারেল পার্টির সদস্যরা সুযোগ মত একলা পেয়ে স্কুলের গাছের সাথে বেঁধে আটকে রাখে। হাসানের কাছে এই ঘটনা শুনে খুশিতে আমি নেচে উঠলেও রত্নার জন্য পর মুহূর্তেই আমার চিন্তা হতে থাকে। আমাকে খবরটা দিয়ে হাসান চলে যাবার আগে বলে গিয়েছিল –



‘ ফরিদ্যারে ক্যামনে শাস্তি দেওন যায় ভাইব্যা রাইখো তো মায়া বু। পরে আইসা শুইন্যা যামু। আমাগো লিবারেল পার্টি থেইক্যা বলছে সবার মতামত শুইন্যা অম্নেই রাজাকারটারে শাস্তি দিবো। মাইরাও ফালাইতে পারে মনে হয়।’



হাসান এখনো অনেক ছোট। ক্লাস ফোরে পড়ে ও। ওর মুখে ‘ আমাগো লিবারেল পার্টি ’ শুনে আমার মাঝে ভালো লাগার একটা বোধ কাজ করতে থাকে। লিবারেল পার্টির ব্যাপারটা হাসানের বয়সী আরও অনেক বাচ্চারাই গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলো। ওরা মুক্তিযোদ্ধা – রাজাকার রাজাকার একটা খেলা খেলত। স্কুলের মাঠে গিয়ে সেই রাজাকারকে দেখতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করলে মায়ের কাছে ঝাড়ি খেতে পারি ভেবে আমি অপেক্ষা করতে থাকি হাসানের বাড়ি ফিরে আসার অপেক্ষায়, কি শাস্তি দেয়া হয়েছে ঐ রাজাকারটাকে তা শোনার জন্য। বিকেল হতেই খবর আসে লিবারেল পার্টির সদস্যদের সাথে এলাকার মানুষরা মিলে ফরিদ উদ্দিনকে আচ্ছা মতো পিটিয়েছে। এক পর্যায়ে উৎসাহী জনতা থেকে সিদ্ধান্ত আসে –



‘ হারামিটারে খেজুর কাঁটা দিয়া ওর শইলডারে কেইচ্যা লবণ মাখাইয়া রইদে ফালাইয়া রাখো। এমনেই ওইটা মইরা যাইব। ’



লিবারেল পার্টির সদস্যরা সেদিন জনতাকে অখুশি করে নি। আমার এক সময় মনে হয়েছিল ফরিদউদ্দিনকে সর্বোচ্চ শাস্তির দেয়ার মধ্য দিয়ে সেদিন বিকেলে আমাদের ছোট এলাকাটিতে স্বাধীনতা নেমে এসেছিলো, লেখা হয়ে গিয়েছিল হাজারো মানুষের মুক্তির গান। খণ্ড খণ্ড অনেক ঘটনা যুক্ত হয়েই হয়তো একটা পরিপূর্ণ বাংলাদেশের স্বাধীন মানচিত্র আসতে পারে। তবে এই কথাটা আমার না ; শামীম ভাইয়ের। হঠাৎ হঠাৎই আমার শামীম ভাইয়ের কথা তীব্রভাবে মনে পড়তো। একটা কান্না পাঁক খেয়ে খেয়ে পেটের মাঝ থেকে উঠে এসে আমার গলার কাছটায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে থেকে আমাকে ব্যথায় আচ্ছন্ন করে রাখতো দিনভর। জানি, রত্নার কাছে হয়তো শামীম ভাইয়ের কোনো খবর পাওয়া যাবে না। তবু ওদের ঘরে গেলে, শামীম ভাইয়ের বিছানাটায় বসলে কিছুটা প্রশান্তি আমাকে আপাতত ছুঁয়ে যেত।







এর মাঝে বর্ষাকাল চলে এলে আগের মত আর তেমন ঘর থেকে বের হতে পারি না। রত্নাদের ওখানেও যাওয়া হয় না তেমন একটা। নাসির ভাই আর তারিক ভাই যুদ্ধে যাবার পর থেকে জেঠার গলার স্বরও তেমন উচ্চে না ওঠায় ভুলতে বসেছিলাম আমার রাগী রাগী জেঠার কণ্ঠস্বর। তবে বর্ষাকাল আসায় হাসান খুব খুশী যে, এখন আর তীব্র আতংক নিয়ে আমাদের সবাইকে যুদ্ধ বিমান উড়ে যাওয়ার শব্দে গর্তে ঢুকে পড়তে হয় না। কারণ বৃষ্টির পানি জমে গর্ত ভরে গেছে। যদিও বাজ পড়ার শব্দে আমরা আঁতকে উঠি। যুদ্ধ বিমান আর বাজ পড়ার শব্দ এখন একই লাগে। হাসানদের যুদ্ধ – যুদ্ধ খেলা সাময়িকভাবে বন্ধ হলেও ওকে প্রায়ই দেখি কাগজে কী কী সব নকশা আঁকতে, নিজের মনে বিড়বিড় করে কথা বলতে।



এদিকে মায়ের চোখের অস্থিরতাও বাড়তে থাকে; বাবার অপেক্ষায়। হয়তো নতুন বাবু হবার সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। হাসান রাতে খেতে বসে জানতে চায় –

‘ ও মা, আমাগো নতুন বাবুটা হইলে কি নাম রাখবা ওর ?’



জেঠার সামনে মা ওকে চাপা ধমক দেয় – ‘ চুপ কর। খাইতে বইসা এত কথা কিয়ের ?’

জেঠা হালকা গলা খাঁকারি দিয়ে বলেন –



‘ হাসান কথা মন্দ কয় নাই। নতুন বাচ্চাটার নাম আমরা “স্বাধীন” রাখতে পারি।

- কিন্তু জেঠা আমাগো একটা বইন হইলে ওর নাম কিন্তু “ মুক্তি ” রাখুম! বলে হাসান।



‘ হ তোরা আছস তোগো নাম রাখন লইয়া। কবে যে দেশ স্বাধীন হইব আর আমার পোলা দুইডা ঘরে ফিরবো ! বলতে বলতে জেঠির চোখ ভিজে ওঠে।



জেঠির কথা শুনে হয়তো মায়েরও আমার বাবার কথা মনে পড়ে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া মায়ের কাছ থেকে আর কোনো শব্দ অবশ্য শোনা যায় না।



বড় চাচা আমাকে জিজ্ঞেস করেন – শুনলাম শিপ্রারা নাকি ইন্ডিয়া যাইব গা ?



আমি উত্তর দেবার আগেই হাসান বলে ওঠে – ‘ ক্যান আমাগো এই দেশটা কি শিপ্রা বু গোও না?’



‘ হিন্দু থিক্যা মুসলমান হইয়া এহন ইন্ডিয়াতে গেলে কি ওরা ঐহানেও আর জায়গা পাইব ? এই দেশের খাইয়া পিন্দা, ধর্ম খোয়াইয়া এহন ইন্ডিয়া যাইয়া লাভ কি ? ’– বলতে বলতে দাদী তার ঘরের দিকে চলে যায়।



রাত আরও গভীর হলে বৃষ্টিও বেশ জোরেশোরে পড়তে থাকে। আমার ঠাণ্ডা লাগতে থাকলে আমি দাদীর গা ঘেঁষে আরও কাছে এসে তাকে জড়িয়ে ধরি। আমি জানি বৃষ্টির ঠাণ্ডায় আমি এমন কাঁপছি না, শীত শীত লাগছে না। কেমন যে একটা হাহাকার আমার বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে এসে রাতের সাথে মিশে গেছে সে শুধু আমিই অনুভব করতে পারি। আমার চোখ বেয়ে ধীরে ধীরে পানির বেগ আরও দ্রুত হয়। আমি কাঁদতে কাঁদতে কেঁপে উঠলে দাদী আমার চুলে বিলি কাটতে থাকে। জানতে চায় -



- কান্দস ক্যান রে বু?

- দাদী, দ্যাশ কবে স্বাধীন হইব? আর কত দিন লাগব?

- বিস্টি বাদলারে হুনছি মিলিটারিরা ডরায়। এমনে বিস্টি পড়তে থাকলে আর কয়দিন বাদেই এই বদগুলা যাইবগা বাংলাদেশ ছাইড়া। অহন ঘুমা তো !



আমি দাদীর কথায় স্বস্তি পাই না। রাত শেষ হলে এক নিদারুণ অস্বস্তিতে ছাওয়া অপেক্ষার সুদীর্ঘতম দিনগুলো আবার আগামীকাল আমাকে একটা চরম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে জানি। আর তাই হয়তো এক নাম না জানা ভয় কিংবা না দেখা অথবা না-ছোঁয়া কোনো সুখের অপেক্ষায় এলিয়ে থাকি নিশ্ছিদ্র রাতের ভেজা বুকে।



সমাপ্ত

মন্তব্য ৭৮ টি রেটিং +১৭/-০

মন্তব্য (৭৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:০১

মাহাবুব১৯৭৪ বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:০১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

২| ১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:১৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

হিন্দু থিক্যা মুসলমান হইয়া এহন ইন্ডিয়াতে গেলে কি ওরা ঐহানেও আর জায়গা পাইব ? এই দেশের খাইয়া পিন্দা, ধর্ম খোয়াইয়া এহন ইন্ডিয়া যাইয়া লাভ কি ? ’– বলতে বলতে দাদী তার ঘরের দিকে চলে যায়।

আপনার গল্পে যুদ্ধের সেই সময়কার সামাজিক প্রেক্ষাপট এর যেন জীবন্ত ছবি দেখতে পেলাম। আমাদের নতুন প্রজন্ম ইতিহাস হয়ত জানে। কিন্তু সমাজের করুন চিত্রগুলো তাদের অজানায় থেকেই যায়। এভাবে গল্পের আকারে হলেও কিছুটা তখনকার দিনের বাস্তবতার সাথে পরিচিত হওয়া যাবে। আপনার গল্প পড়ে অনুপ্রানিত হলাম।

আপনার চেতনাকে স্যালুট জানাতেই হয়। এভাবেই জেগে উঠুক কোটি প্রানে আমাদের চেতনা যেন সামনের দিনগুলোতে এগিয়ে যেতে পারি সেই সব দিনের স্মৃতিগুলো বুকের মাঝে লালন করে।

১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:২১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়া কাণ্ডারি ভাই সত্যিই খুব ভালো লাগলো !

মুক্তিযুদ্ধ একটা বিশাল ব্যাপার , বিশাল আবেগের ব্যাপার! যেহেতু মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি তাই পরিচিত মানুষদের কাছেই শুনে শুনে চেষ্টা করেছি গল্পের আকারে সেটা তুলে ধরতে।

ধন্যবাদ আপনাকে পাশে থাকার জন্য ।

৩| ১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৪

সোহাগ সকাল বলেছেন: এখন না, রাতে পড়বো।

১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ঠিক আছে।

৪| ১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৫

আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
রাতের জন্য তুলে রাখলাম। :)

১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: শোকেসে তো বহুত লেখা জমাইয়া ফেলছো ! হাহাহহা

৫| ১৫ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:২১

একজন আরমান বলেছেন:
সেই সময়ের প্রেক্ষাপট সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।

সাবলীল লেখা। অনেক ভালো লাগলো আপু।

চেতনারা বেঁচে থাক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে, অবিকৃতভাবে।

১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৪৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আরমান আপনার পাঠ প্রতিক্রিয়া ভালো লাগলো ।

মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা, চেতনা কখনোই হারাবার নয় ।

ধন্যবাদ ।

৬| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৮

আজ আমি কোথাও যাবো না বলেছেন: খুব ভালো লাগলো পোস্ট!!!

১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ !

৭| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: শেষ প্যারাটা ভালো লেগেছে ! কান্ডারী অথর্ব ভাইয়ের সাথে সহমত ! আর রসায়ন কিন্তু আমার প্রিয় জিনিস , নিরস বলেছেন মাইন্ড করেছি !

১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আমি আর্টসের ছাত্রী , সায়েন্স আমার কাছে জটিল বিষয় , অভি !

ধন্যবাদ গল্প পাঠের জন্য ।

৮| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৯

কয়েস সামী বলেছেন: হামার গল্পে আপনার কমেন্ট পড়ে ভাল লাগল বলে আপনার ব্লগে অাসলাম। আপনার করা গল্পের ব্যবচ্ছেদ বেশ ভাল লাগল। অমন করে খোলামেলা কথা কেউ বলে না। আমার ব্লগে আপনাকে নিমন্ত্রণ করে গেলাম। সমালোচনা পেলে ভাল লাগবে।

১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার লেখার সাথে আমার পরিচয় আছে চতুর এবং নীড়ে কয়েকটা পোস্টের সূত্র ধরে । হাসান ভাইয়ের পোস্টের কমেন্ট সূত্র ধরে আমার ব্লগে এসেছেন , আপনার লেখার সমালোচনা , ব্যবচ্ছেদ করতে বলেছেন এজন্য ধন্যবাদ।

সেই সাথে আমার লেখা নিয়েও আপনার কিছু বলা উচিত ছিল মনে করি । যাই হোক , ধন্যবাদ আপনাকে কয়েস।

৯| ১৫ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: কিছু অনুভূতি বিশুদ্ধ, কিছু অনুভূতি অমর। সেই অনুভূতি থেকে আমাদের নতুন প্রজন্ম খুব একটা সচেতন নয়, সেই অনুভূতি জানবার গরজও তাঁদের খুব কম। তাঁদের জন্য এরকম গল্পের প্রয়োজন অনেক।

এমন পরিষ্কার গল্পের পর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আপনার কাছে আরও তো চাইতেই পারি, নাকি?

১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: এজন্য পরিবারের মুরুব্বীদের সাথে সময় কাটানো দরকার যাদের মুক্তিযুদ্ধের সাথে সরাসরি বা পরোক্ষ সম্পর্ক আছে/ ছিল। এছাড়া মুক্তি যুদ্ধের বই কিশোরদের জন্য উপযোগী করেই লেখা হয়েছে , সেগুলোও পড়া যেতে পারে। পরিবারের উতসাহের পাশাপাশি নিজদের গরজেই এসব ইতিহাস সংগ্রহ করে পড়া উচিত, জানা উচিত , হৃদয়ে ধারণ করা উচিত ।

মুক্তিযুদ্ধের ছোঁয়ায় আরও গল্প লেখার ইচ্ছে আছে।

ধন্যবাদ শঙ্কু ।

১০| ১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৪৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: অপর্ণা মম্ময়,

চেতনা আর একালের প্রজন্মকে নিয়ে অনেক সহ ব্লগারদের মন্তব্যের সাথে একমত । লেখাটি (গল্প, বললাম না ) তাই ভালো লাগবে অনেকেরই ।

সহজিয়া বয়ানে সেদিনগুলোর ছবি ঠিকঠিকই এঁকেছেন ।
আপনার এই লাইনটিতে -কয়দিন বাদেই এই বদগুলা যাইবগা বাংলাদেশ ছাইড়া.. যে বাসনার দেখা মেলে, সেই কালান্তক সময়ে এরকম একটা বাসনা পুরনের প্রতীক্ষা নিয়েই ছিলো সারা দেশ ।

তাই .. লেখাটির নাম " বিহ্বলা " যেন ঠিক মিলছেনা । বিহ্বল হ্ওয়ার মতো মানসিকতা ছিলোনা মূল চরিত্রের । দেখা্ও মেলেনি তার । যা মিলেছে তা, অপেক্ষা ।
শেষ প্যারাতে - .....নিদারুণ অস্বস্তিতে ছাওয়া অপেক্ষার সুদীর্ঘতম দিনগুলো ...... আর .....না-ছোঁয়া কোনো সুখের অপেক্ষায় এলিয়ে থাকি নিশ্ছিদ্র রাতের ভেজা বুকে। এই দু'টো লাইন তো অপেক্ষার কথাই বলছে । অপেক্ষা দেশবাসীর একটি স্বাধীনতার জন্যে আর একজনের অপেক্ষা বিশেষ কারো জন্যে ।

লেখার নামটি তাই আপনার পূনঃবিবেচনার অপেক্ষায় রাখলাম ।

ভালো থাকুন আর সুখে । শুভেচ্ছান্তে ........

১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৪৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: বিহ্বলা অবশ্যই সে, যখন সে প্রতীক্ষায় থাকে সেই সঙ্গে তার সিদ্ধান্তহীনতাও রয়েছে তাই না ? আর যখন সে সরাসরি নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না, বিহ্বল ছাড়া তাকে কী আর বলা যায়?
শেষ প্যারাতে কী আছে --


" আমি দাদীর কথায় স্বস্তি পাই না। রাত শেষ হলে এক নিদারুণ অস্বস্তিতে ছাওয়া অপেক্ষার সুদীর্ঘতম দিনগুলো আবার আগামীকাল আমাকে একটা চরম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে জানি। আর তাই হয়তো এক নাম না জানা ভয় কিংবা না দেখা অথবা না-ছোঁয়া কোনো সুখের অপেক্ষায় এলিয়ে থাকি নিশ্ছিদ্র রাতের ভেজা বুকে।"


মায়া চরিত্রটি অস্বস্তিতে ভোগে। রাত শেষ হলে কী ঘটবে? তা কোথাও উল্লেখ করা হয় নি। একটা অনিশ্চয়তা বা আরো কঠিন বিপদের মুখোমুখি হতে পারে। যে অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে তাকে পালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু তা কি সে পারছে? কোনো এক দায়বদ্ধতা বা কোনো একটি বাধা তাকে তা থেকে বিরত রেখেছে। সুতরাং আমার দৃষ্টিতে নামকরনে কোনো সমস্যা দেখি না।


আর গল্পের নাম এত সহজে পরিবর্তন করা যায় না। অনেকদিন পর পড়লে তখন পরিবর্তন করার একটা ইচ্ছা জাগতে পারে । সেই সুযোগ আসলে হয়ত কাজে লাগাতে পারি। তবুও আপনার পরামরশের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া ।

ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইলো ।

১১| ১৫ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৫৫

মামুন রশিদ বলেছেন: যেখানে আমাদের প্রজন্মের জন্মই হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পর (ধরে নিলাম), সেখানে মুক্তিযুদ্ধের মত একটা সর্বাত্মক আলোড়নকে সঠিকভাবে অনুভব করতে পারা একটা বিরাট চ্যালেন্জ । আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিটা বাঙ্গালী জড়ি্যে পড়েছিলো, সরাসরি যুদ্ধে না হলেও শারীরিক-মানসিক-সামাজিক প্রতিক্রিয়া ব্যাপক ছিলো ।

তাই আমাদের প্রজন্মের কেউ যখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলে, দারুন অনুপ্রানিত হই । মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটা এভাবেই বয়ে চলুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম ধারনা পাই আমার মায়ের কাছে । আমার মায়ের বাবা আর চাচা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের কমান্ডার । এছাড়া আশৈশব মুক্তিযুদ্ধের কথা শুনেছি অনেক মানুষের কাছে, যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন, যুদ্ধে বিভিন্ন সহায়তা করেছেন কিংবা যুদ্ধে যারা ছিলেন শুধুই ভিক্টিম । আর বইপত্র-ইতিহাস তো আছেই । তাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ধারনাটা ঝাপসা নয়, যথেষ্টই পরিষ্কার । আর আপনার গল্পটা পড়ার পর তাই একে বানানো কোন কিছু মনে হয়নি । গল্পে মুক্তিযুদ্ধকালীন একটা পরিবারের উদ্বেগ, উত্তেজনা, মানসিক চাপ, আশা সব কিছু বাস্তবিক ভাবেই ধরা দিয়েছে আমার কাছে ।

চ্যালেন্জ নেয়ার মানসিকতা আর সাহস আপনার গল্প পড়েই অনুভব করা যায় । আমার বিচারে গল্পে এই চ্যালেন্জ আপনি খুব ভালো ভাবে অতিক্রম করেছেন ।

চমৎকার গল্পে প্লাস ++++++

১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: এই গল্পে রাজাকারকে ধরে শাস্তির ব্যাপারটা, মাটির নিচে গর্ত করে থাকার ব্যাপারটা আমার মায়ের কাছেই শোনা !

চেষ্টা করেছি একটা সেই সয়মের আবহ ফুটিয়ে তুলতে।

সুন্দরভাবে নিজের কিছু স্মৃতির কথা তুলে ধরার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ মামুন ভাই।

১২| ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:১৮

আমিনুর রহমান বলেছেন:


মুগ্ধ। অসাধারণ ও সাবলীল আপনার লিখনী। পড়তে পড়তে একদম কাহিনীর ভিতরে ঢুকে গিয়েছিলাম। আমাকে লিখা না টানলে আমি সাধারণত এত বড় পোষ্ট পড়ি খুব কম আর তা যদি হয় গল্প তাহলে তো অবশ্যই না। যুদ্ধের সময়কার মানুষগুলো অনুভুতিগুলো দারুনভাবে ফুটে উঠেছে আপনার গল্পে। আমার মা'র কাছে শোনা এই সময়ের তার অনুভুতির সাথে আপনার গল্পের অনেক মিল। গল্প নয় এটা সেই সময়ের প্রতিটি পরিবার আর মানুষের বাস্তব চিত্র।

১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: লেখার আঁকার বড় দেখলে আগে আমিও ভয় পেতাম। এখন আর ভয় পেয়ে লাভ নেই যেহেতু নিজের লেখাই বড় হয়ে যায়/ যাচ্ছে।

তবে আপনি যে আগ্রহ নিয়ে পড়েছেন গল্পটা সেটা শুনে আমারও ভালো লাগছে। সে সময়ের চিত্রটার সাথে অনেকেরই মিলে যাবে। আমিও আমার মায়ের কাছে কিছু কিছু ব্যাপার শুনে গল্পে তুলে ধরেছি।

আপনার লেখা এই মন্তব্যের জন্য আপ্নাক এওনেক ধন্যবাদ --

গল্প নয় এটা সেই সময়ের প্রতিটি পরিবার আর মানুষের বাস্তব চিত্র।

শুভকামনা আপনার জন্য । ভালো থাকুন ।

১৩| ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১২:২১

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
আধো আধো পড়লাম :)
সময় করে পড়তে হবে।

তবে ভালো হয়েছে এমনতর গন্ধ পাচ্ছি।।

১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আচ্ছা সময় হলেই পড় । সমস্যা নাই ।

১৪| ১৬ ই জুন, ২০১৩ সকাল ৯:৫২

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: এত বড় গপ :-B

ওকে বুকমার্ক করে রাখলাম

১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:০৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আমার গল্প গুলো কেন মাসুম ভাইয়ের কাছে গপ হইয়া যায় !!! আহারে আফসুস ! এরকম আমিও অনেক লেখা বুক মার্ক কইরা রাখছি , অনেক লেখাই আর পরবর্তীতে পড়া হয় নাই ।

শুভেচ্ছা ভাইজান আপনার জন্য ।

১৫| ১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫১

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: আপা, চমৎকার হয়েছে গল্পটা। সেই সাথে মায়ার মত একটা চরিত্র উপহার দেবার জন্য অনেক ধন্যবাদ। সবচেয়ে ভালো লেগেছে যেটা তাহলো তৎকালীন প্রেক্ষাপটটা চমৎকারভাবে উঠে এসেছে গল্পে। অগুনিত প্লাস থাকল।

১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৪০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ । তবে আরও যে একটা অসঙ্গতির কথা বলেছিলি সেটা অবশ্যই নোট রাখলাম। আমি কারেকশন করতে চেষ্টা করব ।

ভালো থাকিস ।

১৬| ১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ১:০৬

অদৃশ্য বলেছেন:





সময় লাগবে এই লিখাটি পড়তে... ১ম টা পড়লাম মাত্র

এর ভেতরে গল্পের কিছুটা আন্দাজ করা গেলো... আশাকরি পরের সময়ে সবকিছুই খোলাসা হয়ে যাবে... লিখাটিতে আসলে কি বুঝাতে চেয়েছেন তা শেষ না করা পর্যন্ততো বলা মুশকিল...


শুভকামনা...

১৬ ই জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৪৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: গল্প পাঠের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া ।
ভালো থাকবেন।

১৭| ১৬ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৩

কয়েস সামী বলেছেন: আপনার লেখা নিয়ে অালোচনা করার জন্য আমার যথেষ্ট সময়ের প্রযোজন। আমি সেই সময়ের অপেক্ষা করছি। অন্যদের কমেন্ট পড়ে বুঝতে পারছি আপনার লেখা অামাকে যথেষ্ট আনন্দ দেবে তাই একটু সময় নিয়ে ধীরে সুস্থে পড়ব। শুভ কামনা থাকল। অাপনার অপেক্ষায়।

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৪৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা থাকলো।
ধন্যবাদ আপনাকে ।

১৮| ১৬ ই জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৩৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: অপর্ণা মম্ময়,

ধন্যবাদ প্রতি উত্তরের জন্যে ।
তবে আপনার যুক্তিগুলো জোড়ালো হয়নি মনে হয় । কারন .... "বিহ্বল" শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো - আত্মহারা, অভিভূত, অচেতন ইত্যাদি (বিশেষনার্থে)। মূলচরিত্রে কিন্তু এরকম ভাবটি নেই জোড়ালো ভাবে । কাউকে ভালোবাসার স্মৃতি তাকে ক্ষনেক কাল আত্মহারা করেছে হয়তো পুলকে । কিন্তু সারা গল্প জুড়ে তার হাহাকারটিই ফুঁটে উঠেছে বেশী ।

আপনিও যুক্তি দিয়েছেন এই বলে -
" আমি দাদীর কথায় স্বস্তি পাই না। রাত শেষ হলে এক নিদারুণ অস্বস্তিতে ছাওয়া অপেক্ষার সুদীর্ঘতম দিনগুলো আবার আগামীকাল আমাকে একটা চরম বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেবে জানি।

এটা মূল চরিত্রের অস্থিরতা বা আতংককেই নির্দেশ করেছে , বিহ্বলতাকে নয় । আগামীদিনের অনিশ্চয়তাকেই বুঝিয়েছে, অভিভূত হওয়া কে নয় । ডিপ্রেশান বলা যেতে পারে ( আপনি মানসিক রোগ নিয়ে পড়াশোনা করছেন বলে এই উদাহরনটি দিলাম )

আবার যখোন প্রতি উত্তরের শুরুতে লেখেন -
যখন সে প্রতীক্ষায় থাকে সেই সঙ্গে তার সিদ্ধান্তহীনতাও রয়েছে তখোনও কিন্তু তা কোনও ক্রমেই মূল চরিত্রের বিহ্বল অবস্থার কথা তুলে ধরেনা । এটা মেন্টাল বা সাইকোলোজিক্যাল স্যুইং । একটা মানসিক দোদুল্যতার ধারনা দেয় ।

আবার শেষ প্যারাতে লিখেছেন - ...মায়া চরিত্রটি অস্বস্তিতে ভোগে। রাত শেষ হলে কী ঘটবে ....................যে অবস্থা থেকে বাঁচতে হলে তাকে পালিয়ে যেতে হবে....................... কোনো এক দায়বদ্ধতা বা কোনো একটি বাধা তাকে তা থেকে বিরত রেখেছে।

এটা হয়তো কোনও আত্মহারা ভাব নয় । শঙ্কা । উদ্বেগ বা এ্যাজিটেশান ।

আত্মহারা হয় মানুষ সুখে, দুঃখে নয় । অভিভূত হয় সুন্দরতায়, কদর্য্যে নয় ।

তবু্ও ভালো লাগছে যে, আপনি একটা "ফাইট" দিয়েছেন । এটা আত্মবিশ্বাসের লক্ষন । আপনার অন্য এক পোষ্টে আমার মন্তব্যে তো আমি আগেই বলেছি- লেখককে ডিক্টেট করা যায়না । লেখক তার লেখায় স্বাধীন ।
এটুকু বিশ্বাস করি ।

যাকগে... বাদ দিন এসব ! আপনার লেখা অনুসরনে আছে বলে যা দু'কথা বলি । নইলে হয়তো এতো কথা বলা হতোনা ।

ভালো থাকুন সব সময় । শুভেচ্ছান্তে ...........

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: বিহ্বল [bihbala] বিণ. 1 আত্মহারা, অভিভূত (আনন্দে বিহ্বল, বিস্ময়ে বিহ্বল); 2 বিবশ, অচেতন, বিকল। [সং. বি + হ্বল্ + অ]। স্ত্রী. বিহ্বলা। ̃ তা বি. বিমুগ্ধতা, আত্মহারা অবস্হা বা ভাব; বিবশতা ('সঙ্কোচের বিহ্বলতা নিজেরে অপমান': রবীন্দ্র)।


এর অর্থ কেন কেবল আত্মহারা হতে হবে , কেন বিবশ হবে না ! কেন অচেতন হবে না ! একটা অর্থ নিয়া বইসা থাকলে কেমনে হবে। সে কী মানে মেয়েটা কি কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে ? পারছে না। এই যে হত বিহ্বল মানে কি ? কিংকর্তব্য বিমূঢ়ের মতন না? এইটা যে আনন্দেই হইতে হবে তা তো না।

বিবশ, অচেতন, বিকল অর্থেও তো তা ব্যবহার হতে পারে । সবই তো কেবল আনন্দে না।

তবে যাই হোক , আপনার সাথে গল্পের নামকরণের ব্যপার নিয়ে বেশ ভালো একটা কনভার্সেশন হয়ে গেলো ! ভালো লাগলো এজন্য ।

ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার মতামত জানানোর জন্যও ! ভালো থাকুন ।

১৯| ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:০৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: অপর্ণা মম্ময়,

হুমমমম..... হতে পারে অনেক কিছুই ।

এখানে নায়িকা আবেগ বা ঐ জাতীয় কিছুতে অচেতন ও নয় কিম্বা ভাবে বিবশ ও নয় । বিকল ও নয় ।

হ্যা... আচ্ছন্ন হতে পারে ।

তবে রবীন্দ্রনাথ যখোন বলেছেন , তথাস্তু .....

আর মজাটা কী জানেন ? তর্কটি শেষ হইয়া ও হইলো না শেষ ....

ভালো তো আপনার লাগেই নি, মনে মনে গজরাচ্ছেন ( ইমো দিলাম না কিন্তু )

ভালো থাকুন আর আনন্দে ......

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:২৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: সত্যিই আপনার এই কমেন্ট পড়ে এবার হাসলাম ! ঠিক আছে কল্পনা করে নেন নকল গজরানোর ইমো দিচ্ছি আমিও !

আমি কি মনে করি জানেন , যখন আমি আমার কোন বক্তব্য বা লেখা একের অধিক লোকের সামনে তুলে ধরব সেটা যেন সুচারুভাবে হয় সেটার দিকে খেয়াল রাখা । যা তা কিছু একটা দিয়ে দিলাম আর ভালো হয়েছে, সুন্দর হয়েছে ইত্যাদি শুনে বাড়ি ফিরে আসলাম ব্যাপারটা তা নয় আমার কাছে।

ব্লগে লেখার কায়দা কানুন শেখার, জানার ও অনেক ব্যাপার আছে। এখান থেকে আমরা আমাদের অনেক ত্রুটি কাটিয়ে নিতে পারি আন্তরিক হলে।

আমি খুশিই হয়েছি আপনি যুক্তি ধরে ধরে নামকরণ নিয়ে আলোচনা করেছেন।
আপনিও ভালো থাকুন । :)

২০| ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৩১

সায়েম মুন বলেছেন:
সময়াভাবে হালকা পড়ে গেলাম। তাই বিশদ মন্তব্য দিচ্ছি না। যেটুকু পড়েছি বেশ লেগেছে। লিখতে থাকুন হাত খুলে।

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ৯:৩৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ সায়েম ।

২১| ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:২৬

মায়াবতী নীলকন্ঠি বলেছেন: বুবু আরেকটা পর্ব করলে ভাল হয়..জাদুবিদ্যা ভাল হইছে...++++++

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৩৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: পর্ব আকারে দেয়ার মত অন্য গল্প আছে , সেটা দেয়া যাবে না হয় পরে।
প্লাসের জন্যও ধন্যবাদ মায়াবতী

২২| ১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৪

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: গপ আর গল্প শব্দটার মাঝে কোন পার্থক্য আছে নাকি? আমি তো জানি একি জিনিস। গপ শব্দটা সিলেটি, এই আর কি !

আর আমি বুক মার্ক কইরা রাখলে সেটা পড়ি

১৬ ই জুন, ২০১৩ রাত ১০:৪৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আরে ভাই , আমি তো ইমোর অপশন পাচ্ছিলাম না তাই ইমো দিতে পারি নাই ! ফান করেই বলছি । তবে গপ সিলেটী ভাষা সত্যিই জানতাম না । তবে আমাদের দেশে আবার গপের মানে অন্যটা :p

ওকে , পড়া শেষ হলে জানাইয়েন । শুভেচ্ছা আপনাকে

২৩| ১৭ ই জুন, ২০১৩ রাত ২:১২

ঘুড্ডির পাইলট বলেছেন: লেখার মাঝে যুদ্ধ চলে আসায় অন্যরাকম ভালো হইছে :)

১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:০৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: হাহাহা পাইলট ভাই , লেখাটা যুদ্ধের আবহ নিয়েই , তাই লেখার মাঝে যুদ্ধ চলে এলো !
সুপ্রভাত। ভালো থাকবেন।

২৪| ১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১২

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: :) :) :) :)

১৭ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:২৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার এই ইমোর মানে আমার কাছে পরিষ্কার না।

২৫| ১৭ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: ট্র্যাক চেঞ্জ করেও সাচ্ছন্দ্যে দৌড়োলো শব্দরা। ভালো লাগলো।

১৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:১৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে ।

২৬| ১৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৪২

অদৃশ্য বলেছেন:





এবার ২য় আর ৩য় অংশটুকুই পড়া হলো...

রাগ করছেন নাতো ?


শুভকামনা...

১৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: কি যে বলেন না ! রাগ কেন করব !
সবারই কাজ থাকে বা নিজের অবসরের একটা মুহূর্ত থাকে। সেখান থেকে বেশ কয়েকজনের জন্য ( ব্লগের লেখা পড়ার জন্য ) সময় বের করাটা সবসময় সম্ভব হয় না আমি জানি, বুঝিও।

আপনার জন্যও শুভকামনা রইলো ভাইয়া।

২৭| ১৮ ই জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১

আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
৩৩৭৫ শব্দ মাত্র! এতোদিন সময়াভাবে পড়তে পারি নাই। আজ পড়লাম। ভালো লাগলো।

মুক্তি ও স্বাধীন। কী চমৎকার দুইটা নাম। খুব একা যখন থাকি তখন মাঝে মধ্যেই এই শব্দ দুইটা হানা দ্যায়। সত্যিই কী আমরা স্বাধীন। না মুক্তির নাম করে অদৃশ্য শিকলে আঁটকে আছি!

অতো ভাবতেও পারি না। মাথায় ক্যামন জট পাঁকিয়ে ফেলি।

ভিন্ন ট্রেক এর লেখা পড়ে ভালো লাগলো।


যদিও মাঝে মধ্যে মনে হইসে এই গল্পের যারা চরিত্র তাদের মধ্যে প্রিয়জনদের জন্য যে উৎকন্ঠা বা যুদ্ধ যেমন ভিতীকর ব্যাপার সেভাবে আসে নাই।

১৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তোমার মন্তব্য আর পর্যবেক্ষণের জন্য ধন্যবাদ আলাউদ্দিন।

আমি মুক্তিযুদ্ধের সশস্ত্র বর্ণনা দেইনি তাই অইভাবে ভীতি আসে নাই । কিন্তু প্রিয়জনদের উৎকণ্ঠা শামীম ভাইয়ের জন্য মায়ার , মায়ার বাবার জন্য উৎকণ্ঠা তার দাদী , তার মা এবং মায়ার নিজের , শামীম ভাইয়ের জন্য তার মা আর বোনের অপেক্ষা, মায়ার দুই ভাই এর জন্য তার জেঠির উৎকণ্ঠা এসব যেভাবে এসেছে তেমনি যুদ্ধের আবহ বোঝাতে
---
দাদী জানতে চায় – তুমি কুত্তার আওয়াজ ক্যামনে পাও , মামুনের মা ! আমি তো সারা রাইত জাগনাই থাকি! এহন তো কুত্তারাও মিলিটারির ডরে রাও করে

কিংবা যুদ্ধ বিমান গেলে মায়ারা মাটিতে গর্ত করে ওখানে সাময়িক সময় লুকিয়ে থাকতো !

ইত্যাদি ছোট ছোট করে ভীতি টা আসছে , আসছে অপেক্ষা এবং একজন বিহ্বল তরুণীর কথা।

ভালো থেকো ।

২৮| ১৯ শে জুন, ২০১৩ ভোর ৫:১৪

সোনালী ডানার চিল বলেছেন:
আবহ তৈরীর পোক্ত কৌশলে গদ্যের শৈল্পিক চলাচল মুগ্ধকর,
আর বিষয়ের দারুন বিন্যাস তো ঈর্ষানীয়; আপনার এ প্রয়াস খুব সাধুবাদ পাবে।

শুভকামনা রইল.......

১৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:৪৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা ভাইয়া।
ভালো থাকবেন।

২৯| ১৯ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৩১

দেহঘড়ির মিস্তিরি বলেছেন: ভাল লাগল । গল্পের প্লট বেশ ভাল লাগল , অনেকদিন যাবত

এই প্লটে কিছু লিখব বলে পড়ে যাচ্ছিলাম , আপনার লেখা দেখে অনুপ্রাণিত হলাম ,

রাজাকার শব্দের আসল উৎস "রেজাকার" , এটা আপনার লেখায় দেখে আরো ভাল লাগল , আমার একটা পোষ্টে
হাল্কা পাতলা কিছু ইতিহাস এনেছিলাম ,সামান্য কিছু শেয়ার করে গেলাম

রাজাকারঃ এই শব্দের অনেক ভুল ব্যখ্যা দিয়ে থাকে আমাদের অনেক গুরুজনই । শব্দটির উতপত্তি ফারসি শব্দ "রেজাকার" হতে যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে স্বেচ্ছাসেবক , সর্বপ্রথম ব্যাবহার করেন জামাত নেতা এ,কে এম ইউসুফ,
এটা বললে একটু ভুল থেকে যায় সর্বপ্রথম ব্যাবহৃত হওয় ১৯৪৭ সালে হায়দ্রাবাদের নিজাম কর্তৃক । ৯৬ জন লোকবল নিয়ে এর কাজ শুরু হলেও এটার পরিধি ক্রমশ বাড়তে থাকে
এরাই সর্বাধিক ক্ষয়ক্ষতির কারন ছিল মুক্তিযুদ্ধে ।
এই বাহিনী নিয়ন্ত্রিত হত জামায়াতে ইসালাম কর্তৃক।১৯৭১ সালের জুন মাসে জেনারেল টিক্কাখান রাজাকার অধ্যাদেশ জারি করে এদের সাংবিধানিক বৈধতা দেন।

১৯ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:০২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: রাজাকার শব্দের উৎপত্তি এদের কার্যক্রম সব কিছু আমি বিস্তারিত পড়েছিলাম কিন্তু এত কথা আসলে গল্পে নিয়ে আসলে প্রতিবেদনের মত হয়ে যাবার সম্ভাবনা ছিল।

তবুও আপনার এই আন্তরিক তথ্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
শুভকামনা থাকলো

৩০| ১৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:২৯

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

আপনার পোস্টে আবার এলাম। হাজিরা দিতে নয় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। এভাবে ইতিহাস না লিখেও যে ইতিহাস তুলে ধরা যায় সাধারন একটি গল্পের মধ্য দিয়ে সেটা সত্যি চমৎকার।

আপনার লেখা ও মন্তব্য সত্যি প্রশংসনিয়। শুভ কামনা নিরন্তর।

১৯ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: কাণ্ডারী ভাই , আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে তো একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে। গল্প লেখা শেখার শেষ নেই । তাই শিখে যাচ্ছি প্রতিনিয়তই , আর আপনাদের কারণেই ভালো বা ত্রুটি গুলো এখান থেকেই শুধরে নিতে পারছি।

আপনার জন্যও শুভকামনা থাকবে।

৩১| ১৯ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৯

লেজকাটা বান্দর বলেছেন: আপনার এই লেখাটা দেখে যেটা মনে হল, আপনার ডিটেইলিং এর কাজ অত্যন্ত সুন্দর। আপনার লেখা পড়লে মনে হয় যেন আমিই গল্পের নায়ক বা নায়িকা হয়ে বসে আছি, ঘুরে বেড়াচ্ছি। তবে গল্পটার কাহিনী আরও টানা যেত, আপনি চূড়ান্ত স্বাধীনতা পর্যন্ত গল্পটাকে টানতে পারতেন। বেশ ভালো লাগল সবমিলিয়ে।

১৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:২৬

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ডিটেইলিং নিয়ে লিখতে যাই বলেই আমার অনেক গল্প বেশ বড় হয়ে যায়, তাই আর ব্লগে সব গল্প পোষ্ট করা হয় না। কারণ অল্প কথায় লিখা টা আমার কাছে কঠিন লাগে ! গল্পের ভেতরে ডুবে যেতে চাইলে উত্তম পুরুষে গল্প লেখাটা সুবিধার ।

চূড়ান্ত স্বাধীনতা টানা নিয়ে অন্য কোন গল্পে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
ভালো থাকবেন ভাই।

৩২| ১৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:২১

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: এই কারনেই আমি আপনার ভক্ত, অপর্ণা আপু। আপনার লেখা অনেকক্ষণ ভাবায়, চিন্তার কিছু খোঁড়াক যোগায় আর পড়ার পর থেকে যায় অসঙ্গায়িত কিছু অনুভূতি।

মুক্তিযুদ্ধের পটভূমিতে একটা গল্প লেখার চেষ্টা করছি। অর্ধেক এসে থেমে গেছে। গল্পের কাহিনী ঠিক আছে কিন্তু লাইন খুঁজে পাচ্ছিনা সামনে এগোনর জন্য। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সুন্দর একটা লেখা সাজানো খুব টাফ।

গল্পটা আগে কয়েকবার পড়ার চেষ্টা করছি, কিছুদুর পরতেই কারেন্ট চলে যায় বার বার। এইবার আর যায় নাই! ;)

১৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৩২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তাও তো ভালো অর্ধেক পথে এসে কিছুটা ব্রেক পড়েছে তোমার ! আর আমি কোন লেখা শুরু করলে প্রথম লাইন বা শুরুটাই করতে পারি না অথচ জানি কি লিখতে চাচ্ছি ! তবে দুশ্চিন্তার কিছু নাই , আবার তোমার মাথায় লাইন চলে আসবে লেখার হঠাৎ করেই।

সুন্দর মন্তব্যের জন্যও ধন্যবাদ নাজিম !
ভালো থেকো

৩৩| ১৯ শে জুন, ২০১৩ রাত ১১:৪৯

আরমিন বলেছেন: চমৎকার লেখনী! একটানে পড়লাম! যদিও অনেক বড়! পর্ব করে দিতে পারতেন। এতদিন আপনাকে কবি হিসেবে জানতাম, এখন গদ্যকার হিসেবে জানবো।

কাহিনীর প্লট আর বর্নণা সম্পর্কে কিছু বলার নেই, সবাই উপরে বলে গেছেন!
আমি শুধু চুপচাপ প্লাস বাটন চেপে গেলাম!

২০ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:২১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: পর্ব করে দিলে পাঠকের পড়ার আনন্দ নষ্ট হয়ে যায় , অন্তত আমার নিজেরই নষ্ট হয়ে যায়।

প্লাসের জন্য ধন্যবাদ আরমিন ।

৩৪| ২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ১:২৭

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: একটা বড় কমেন্ট লেখে বেকষ্পেস মেরে দিছি -

এনি হাউ যা মনে আছে আবার লিখছি -

কাহিনীর প্লট কমন আর বর্নণায় তেমন এক্সসেপশনাল কিছু নাই। গপের মধ্যে মনোযোগ ধরে রাখতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। মাঝেমাঝে অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য ঢুকে গেছে। সময় আর পরিবেশের দিক বিবেচনা করলে কিছু দৃশ্য বেমানান লাগছে - যেমন ধরেন এপ্রিলের এই গা চিটচিটে গরমে এখানে বানলা মাসের নাম ব্যবহার দরকার ছিল, বাবা'র অফিসের ফোনের ব্যাপারটা ইত্যাদি !


আর মনে পড়ছে না কি কি লিখছিলাম-

তবে গপটা নাটক বা টেলিফিল্মের জন্য পারফেক্ট!

২০ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: একজন লেখকের সব লেখার ভাষা এক রকম হয় না বলেই বর্ণনায় তেমন ব্যতিক্রমী কিছু হয়ত পান নি আপনি । আর মুক্তিযুদ্ধের একটা আবহ তৈরি করা আমার মতো শিক্ষানবীশ একজনের জন্য একটু কঠিনই , সেটাও আপনার কাছে ব্যতিক্রম না লাগার কারণ হতে পারে।

এপ্রিলের এই গা চিটচিটে গরমের জায়গায় হয়ত জ্যৈষ্ঠ মাসের দিকের শুরু গরম এভাবেও লেখা যেতো। তবে বাবার অফিসের ফোনের ব্যাপার আমার কাছে বেখাপ্পা কিছু মনে হয় নাই। একটা পরিবারের মানুষ গুলো তাদের একজন সদস্যের জন্য চিন্তিত , সেখানে ফোনের সুযোগ আছে বলেই শহরে গিয়ে ফোন করবে চিন্তা করে মনে করে। যুদ্ধের সে সময়ে তখন বৈদ্যুতিক খুঁটি , টেলিফোনের লাইনের সংযোগ তখনও বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে কিনা মায়ার পরিবার সে সম্পর্কে জ্ঞাত নয়। তাই ফোনের বিকল্প কিছু ভাবতে পারেনি তারা।

বলেছেন মাঝেমাঝে অপ্রয়োজনীয় দৃশ্য ঢুকে গেছে - সেটা কোথায় কোথায় ঢুকেছে বললে আমার জন্য সুবিধা হতো । যেহেতু সম্পাদনার সুযোগ আছে এবং প্রয়োজন মনে করলে সেটাও করে নিতে পারব।

ধন্যবাদ মাসুম ভাই । ভালো থাকবেন ।

৩৫| ২০ শে জুন, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৪

নীল কথন বলেছেন: -মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সব লেখা, মুভি পড়ে আনমনে বেদনাসিক্ত হই। মাঝে মাঝে বেদনা চোখের কোনে ভীড় করে। তোমাকে সাধুবাদ আরেকটা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প পড়ার সুযোগ দানে। তোমার প্রয়াসকে অভিনন্দন।

-গল্পে কিছু অসংহতি রয়েছে। ৯ মাস বাবা বাড়ি আসে না, আবার মা ৫ মাসের গর্ভবতী। গোলমেলে ব্যাপার। এইগুলো ঠিক করা দরকার।

-কিছু কিছু ব্যাপার অপ্রয়োজনীয় মনে হয়েছে। যেমন, তালগাছে জ্বীনেরা সাত বোন থাকে! এইসব কলেজপড়ুয়া মেয়েকে বলাটা একেবারে বেমানান। জায়গাটায় পরিবর্তন করলে ভালো লাগতো। গল্পটা ঠিক আঠঁসাটে হয়েনি, যে তোমার লেখায় দেখা যায় না। সহজ ভাষায়, কিন্তু মাঝে মাঝে মনে হয় যে একটা রচনা পড়তেছি। ছুটে গেছি ভাবনা থেকে। (সলি, বেশি বলে ফেললে মাইন্ড নিজ দায়িত্বে খাইও :P)

-ভালো থাকা হোক অবিরত। তোমার গল্প আমাকে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গল্প লিখতে উৎসাহিত করছে।

২০ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:২৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তোর বলা অসঙ্গতি আমার কাছে মনে হচ্ছে বিশাল ব্যাপার না । কলেজে পড়ুয়া মেয়ে বলে নয় অনেক বেশী শিক্ষিতদের মাঝেও জ্বিন - ভূতের বিশ্বাস করার ব্যাপার কাজ করে। আর মায়া এসব বিশ্বাস করত এমন বলা হয় নাই , সে তার মা আর জেঠির ব্যাপারে এ কথা বলেছে।

বাবা চিটাগাং থেকে শেষবার বাড়ি এসেছিলেন প্রায় ন’মাস আগে।

---- বাবা বাড়ি থেকে চলে যাবার পড়েই মা গর্ভ ধারণ করেছে। পাঁচ মাস চলছে।

অফিস থেকে চুরি করে ব্লগ পড়েছিস, বেশী বলিস নাই তাই। আবার মনোযোগ দিয়ে পড়িস।

তুইও ভালো থাকিস । :)

৩৬| ০২ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৩৭

বৃতি বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধের মত এক বিশাল ক্যানভাসের ছবি বেশ সাবলীলভাবে এঁকেছেন । খুব ভালো লাগলো ।

০২ রা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ বৃতি । শুভকামনা আপনার জন্য।

৩৭| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩০

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: না দেখা একটা বিষয় নিয়ে কিছু লিখাটা অনেক পড়াশুনা আর তীব্র অনুভবের ব্যাপার । সন্দেহ নেই আপনার দুটোই অনেক আছে । আপনার জন্য শুভকামনা । :) :)

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:২৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়াশুনা তেমন একটা নেই। অনেক ঘটনাই লিপিবদ্ধ নেই মুক্তিযুদ্ধের দলিলে। তবে যা দেখিনি কিন্তু প্রাণের মাঝে বহমান সেখানে অনুভূতির বিকল্প কিছু নেই।

আপনার জন্যও অনেক শুভকামনা রইলো।

৩৮| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১:৩৪

সানফ্লাওয়ার বলেছেন: সেই সময়টা যেন আমার চারপাশে দেখতে পাচ্ছিলাম। সাবলীল গতিতে লেখা এগিয়েছে। ভাল লিখেছেন।

০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ১১:৩০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ সানফ্লাওয়ার। আপনার জন্য রইলো শুভকামনা

৩৯| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৪৬

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
তবু ওদের ঘরে গেলে, শামীম ভাইয়ের বিছানাটায় বসলে
কিছুটা প্রশান্তি আমাকে আপাতত ছুঁয়ে যেত।


@ নীল কথনের ৯/৫ এর সাথে আমি একমত ৷

আপনার লেখাটি সাবলীল-সরল-সুন্দর ৷

আবেগ/গভীরতা কম মনে হয়েছে,
আপনার লেখায় আরো গভীরতা,দর্শন কাম্য ।

আপাতত এটুকুই থাক ।

অনেক ভালোলাগা ।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৬

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: মুক্তিযুদ্ধ এমন এক বিশাল অনুভূতি, লেখাটা কঠিন মনে হয় আমার কাছে। যা দেখিনি কিন্তু ধারণ করে আছি, এই অনুভূতি টা খুব অসাধারন লাগলেও কলমে তুলে আনা শক্ত।

ধন্যবাদ পুরনো লেখা খুঁজে পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.