নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের কোথাও একটি ছাপ রেখে যেতে চাই

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।

অপর্ণা মম্ময়

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।

অপর্ণা মম্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

তিনি...

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০২

বাইরে দিনের আলো পুরোপুরি মুছে যায়নি এখনো। তবুও পর্দাটা হাতের ফাঁকে একটু সরিয়ে দেখে নিশ্চিত হন সুফিয়া খাতুন। মাগরিবের আজান দিতে বেশি দেরী নেই। চেয়ারে হেলান দিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে চায়ের কাপটা তুলে নেন তিনি। চায়ের কাপেবেশ দীর্ঘ চুমুকে শব্দ করে করে এর পরিতৃপ্তি তিনি ছড়িয়ে দেন তার চেহারায়, বয়স্ক চামড়ার ভাঁজে ভাঁজে। চা পান করাটা রীতিমত তার অভ্যাসে দাঁড়িয়েছে। ঘুম থেকে বেলা করে ওঠেন বলে ইতিমধ্যেই চা পানের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে তার উপরে। বলা যায় চার ছেলের বৌদের একজনের ঘর থেকেও সকালের চা এখন পান না তিনি। বয়স তো আর কম হয়নি তার। চার কুড়ি তো হইবই, মাঝে মাঝেই আঙুলের কড় গুনেই নাতি-নাতনিদের নিজের বয়সের হিসাব দেন তিনি।



চোখ বুজলেই আন্ধার দেহি, অহন কী ঘুমের সময় নি যে ঘুম আইবো ! মাঝখান দিয়া চায়ের দোষ দিও না তোমরা !



তার এই কথায় ছেলে বা ছেলের বৌদের কেউ খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও তিনি নিজে নিজেই বিড়বিড় করতে থাকেন এক কথা বারবার। তাই বিকেল বেলা হাঁটবার নাম করে বড় মেয়ের বাসায় চলে আসেন। যেদিন তিনি এ বাসায় ঢুকেই দেখেন তার মেয়ে জায়নামাজে দাঁড়িয়েছে কিংবা অজিফা পড়ছে সেদিন মেয়ের কাছাকাছি না থেকে বিছানায় গা এলিয়ে শুয়ে পড়েন। কখনোবা কাতর ধ্বনি করতে থাকেন যাতে পাশের ঘরে নামাজরত মেয়ের কান পর্যন্ত সেটা গিয়ে পৌছায়। জোরে জোরেই বলতে থাকেন –



তিন তলা সিঁড়ি বাইয়া উইঠা হাঁপাইয়া গেছি। হেই বয়স কী আর আছে! পাও দুইডা টনটন করতাছে! এহ্‌



তিনি জানেন একটু পরেই মেয়ে এসে বলবে –



কী হইলো মা, আপনে যে বাইরে থেইকা আইয়াই বিছানায় হুইয়া পড়লেন? নামাজটা তো পড়তে পারতেন! দিন দিন যে আপনে কেমন অলস হইয়া যাইতাছেন!



এরপর মেয়ে কিছুক্ষণ ভ্যাজর ভ্যাজর করতে থাকবে তিনি জানেন। তবুও বিছানা থেকে তার ওঠার লক্ষন দেখা যায় না। তিনি নিজেও বোঝেন না কেন তার নামাজ পড়তে ইচ্ছে করে না ইদানীং। বেশীরভাগ সময়ে কারো বকুনিতে হোক বা অনিচ্ছেয় হোক তিনি অজু করে নামাজে দাঁড়ান ঠিকই কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভুলে যান তিনি নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। কোনো কোনোদিন সূরা পড়তে পড়তেও তিনি মাঝপথে সূরা ভুলে যান। তার আশেপাশে দিয়ে কেউ গেলে সেদিকেই তাকিয়ে থাকেন না হয় বড় বড় হাই তোলেন। রুকুতে গিয়ে তার চোখ চলে যায় নিজের পায়ের দিকে। বুড়ো আঙুলটার নখ কেমন ক্ষয়ে গেছে এমন মনে হয় তার। রুকু ভেঙে তখন তিনি আঙুল নিয়ে মেতে থাকেন। নিজের বিছানার কাছে এসে তোষক- জাজিম উল্টে পাল্টে ব্লেড খোঁজেন, নখের কোণাগুলো যদি কাটতে পারেন এই আশায়। কাজের সময় কিছুই পাওয়া যায় না বলে তিনি হতাশ হলেও পরক্ষণে মনে হয় কাজের বুয়ার কাছে না হয় দারোয়ানের কাছে খুঁজলে ব্লেড পাওয়া যাবে। একবার ব্লেড দিয়ে হাতের নখ কাটতে গিয়ে বেশ একটা রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন বলে কেউ তাকে ব্লেড দিতেও রাজি হয় না।



খালাম্মা আপনেরে না একটু আগে দেখলাম নামাজে খাড়াইছিলেন? এতো জলদি নামাজ শেষ!



দারোয়ানের বিস্মিত কণ্ঠে তার মনে পড়ে কিছুক্ষণ আগেই তিনি জায়নামাজে দাঁড়িয়েছিলেন। তারপর কী যেন হলো নামাজ ভেঙে নখ নিয়ে পড়লেন। দারোয়ানের বিস্মিত কণ্ঠকে আশ্বস্ত করতে তিনিও বলেন –

হেই কোন সুমায় নামাজ শেষ করছি!



দারোয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে তার কথা বলতে সাহস হয় না পাছে তার মিথ্যে ধরা পড়ে যায়। আজকাল সুফিয়া খাতুনের কারো সাথে কথা বলতেও ভয় লাগে। তার ছোট ছেলে সেদিন কাজে যাবার সময় তার ঘরে একবার উঁকি দিয়েছিলো।



কী করো মা?



সে সময় তিনি বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসেছিলেন। ভাবছিলেন একবার গ্রামের বাড়ি যাবেন। গাছের নারকেলগুলো পাড়াবেন আর জমিতে কয় মন ধান এলো সব হিসাব নিয়ে আসবেন। তাকে গ্রামের বাড়িতে কেউ না দিয়ে এলেও তিনি একা একাই চলে যাবেন এমনটাই ভাবছিলেন। তার বয়স হয়েছে বলে সে একা চলতে ফিরতে পারেন না সবার এই ভুল ধারণাটা তিনি ভেঙে দিবেন। কিন্তু কোট টাই পরা কে যেন তার ঘরের দরজাটা একটু ফাঁক করে তাকে কী জিজ্ঞেস করলো, তিনি ভয় পেয়ে বলে উঠলেন –



কিছু না , কিছু না। কিছু ভাবি না তো !



তার আরও ভয় করতে লাগলো যখন সেই অপরিচিত লোকটা ঘরে ঢুকে তার বিছানার পাশে এসে বসলো। কাঁধে হাত রেখে বললো –



মা, আমি তারেক। চিনতে পারতাছো না আমারে? তুমি আমার কথা শুইনা এমন আঁতকাইয়া উঠলা যে ? এরপর সে লোকটা তার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই খাটের পাশের টেবিলে রাখা ওষুধের বক্স হাতড়াতে লাগলো। ওই বক্সে তিনি তার গলার চেনটা রেখেছিলেন। দুই ভরির চেনটা বড় ছেলে স্বপন বিদেশ থেকে তার জন্য এনেছিলো। ওটা পরে শুলে তার গলা চুলকায় বলে খুলে রেখেছিলেন। লোকটা সে চেন চুরি করতে আসেনি তো! দারোয়ানকে ডাকবে নাকি তিনি বুঝে উঠতে পারেন না।



হ, যা ভাবছিলাম তাই। তুমি ওষুধ খাও না কয়দিন হইছে মা? এই লাইগাই তো তুমি আজকাল উল্টাপাল্টা কথা কইতাছো, আমারেও চিনতে পারতাছো না।



না, আমি ওষুধ খাই তো! আঙুলে হিসাব করে বলেন, তিন বেলায় নয়ডা বড়ি খাইতে অয়,আমার মনে আছে।



তার কথা শুনে লোকটা কী যেন ভাবে। তার দিকে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ। পাতলা হতে হতে তার মাথার চুল নিশ্চিহ্ন প্রায়। সেখানে হাত রেখে লোকটা কিছুক্ষণহাত বুলিয়ে দেয়। সুফিয়া খাতুনের কেমন যেন কান্না কান্না লাগতে থাকে। নিচ তলার এই ঘরটায় তার খুব ভয় লাগে। দিনের বেলাতেও কেমন অন্ধকার অন্ধকার হয়ে থাকে। পর্দা সরিয়ে দিলেও অন্ধকার ভাবটা কাটে না লাইট না জ্বালানো পর্যন্ত। ছেলের বৌ-রা খাবারের সময় না হলে কেউ উপরতলা থেকে নেমেও আসে না। আর বেশীরভাগ দিনই কাজের মানুষরা এসে ভাত-তরকারী দিয়ে যায়। এই লোকটা যে এখন সামনে বসে আছে তার হাত দুটো শক্ত করে সুফিয়া খাতুন ধরে বসে থাকেন। তার মনে হতে থাকে লোকটা চলে গেলেই তার ঘরটায় আবার অন্ধকার ঢুকে যাবে। তিনি ভয় পান বলে মাঝে শুধুমাত্র তার দেখাশোনার জন্য জয়গুনি নামের এক মহিলাকে রাখাও হয়েছিলো। রাতে বিছানার এক পাশে সে মহিলাও তার সাথে ঘুমোতো। কিন্তু তিনি ঘুমিয়ে গেছেন ভেবে জয়গুনি মাঝে মাঝেই তার হাতে, গলায় পরা সোনার চেন,চুড়ি খুব আলগোছে হাতড়ে হাতড়ে খুলে নেয়ার চেষ্টা করতো। একদিন তো সকালে ঘুম ভেঙে উঠে জয়গুনির বালিশের নিচে একটা ছোট কাঁচিও তিনি দেখেছেন। সেই থেকে আরও ভয় তাকে জেঁকে ধরেছে। সুযোগ পেলেই ছেলের বৌদের কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতেন এই জয়গুনিকে তার কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেবার ব্যাপারে।



মা, এইবার হাতটা ছাড়ো। অফিসে যামু। তোমার ঘরে দেখি মশাও। আইজকাই দেখি মশার স্প্রে আনাইয়া দিমুনে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু এই বয়সে হইলে আর রক্ষা নাই। বলতে বলতে তারেক উঠে দাঁড়ায়।



আবার আইসেন!



মাগো তোমার পোলারে আপনে কইরা কইতাছো ক্যা ?



তার মায়ের কথা শুনে তারেক হতাশ হয়ে সুফিয়া খাতুনের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে তাকানোতে কী লেখা ছিলো সুফিয়া খাতুন পড়তে পারেন না। তার চোখ দুটো ঘোলা হয়ে আসে সে সময়। অবশ্য তিনি সবসময় যে ভুলে যান মানুষের নাম, পরিচয় তা নয়। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই ভোলার অভিনয় করেন। তখন তার স্পষ্টভাবেই সবকিছু মনে পড়ে। অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু গুটি গুটি পায়ে সিঁড়ি বেয়ে তিনি দুই তলায়, তিন তলায় কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে চার তলায়ও ছেলেদের ঘরে গিয়ে উঁকিঝুঁকি দেন। তার স্মরণশক্তি খারাপ হলেও কানে বেশ ভালোই শোনেন। আগে ছেলের বৌ-রা একসাথে বসে গল্পগুজব করলেও তার উপস্থিতিতে তাদের গল্পে ছেদ পড়তো না। কিন্তু এখন তার সামনে বৌ-রা আগের মতো এতো কথা বলে না। কিন্তু অর্ধেক কথা কানে গিয়ে যদি বাকীটা তিনি শুনতে না পারেন তার খুব অস্থির লাগে। উনি ঘুরে ফিরেই বারবার সেই অসমাপ্ত কথা ছোট ছেলের বৌ কিংবা মেজো ছেলের বৌকে জিজ্ঞেস করতে থাকেন। কিন্তু সবাই যেন শুনেও তার কথাকে পাত্তা দেয় না। বড় ছেলের বৌটার মুখ বড্ড খারাপ। বলে কিনা –

বুড়া হইলে কী মানুষ বেশি কথা কয়? একটু চুপ থাকতে পারেন না? যান আল্লাহ বিল্লাহ করেন গিয়া!



তিনিও কী কম যান! উঠতে বসতে তাকে বড় বৌটা বাজে কথা শোনায় বলে একদিন রাতে তিনি নিজের বিছানাতে প্রস্রাব করেন ইচ্ছে করেই। তখন তিনি বড় ছেলের ফ্ল্যাটে দুই তলাতেই থাকতেন। সকালে উঠে বড় বৌয়ের সে কী রাগারাগি।



আমার পুরা ঘর জুইরা মুতের গন্ধ। তিন বাচ্চা মানুষ করছি, কেউ কোনদিন কইতে পারবো না ঘরে বাজে গন্ধ পাইছে আর এই বুড়ি দিছে আমার তোশকটা ভিজাইয়া।



তিনি শুনেও না শোনার ভান করে মনে মনে হাসেন। তার বড় ছেলেটা একটু সহজ সরল ধরণের। বাপের ধাত পেয়েছে। বলে –



নাসরিন, বাদ দাও না। মায়ের বয়স হয়েছে না। ঘুমের তালে কোন ফাঁকে …

তোমার মায় রে জসিমের ফ্ল্যাটে যাইতে কও। বহুত জ্বালাইছে। আজকাই তারে তিন তলায় দিয়া আইবা খেতা বালিশ সহ।



তাকে যে বুড়ি বললো সেটা শুনেও ছেলে তার বৌকে কিছু বললো না দেখে তিনি বিরক্ত হন। দীর্ঘশ্বাস চেপে উদ্ভুত পরিস্থিতির আনন্দ নিতে চেষ্টা করেন। অন্তত বড় ছেলের বৌকে তো একটু হলেও শিক্ষা দিতে পেরেছেন। তার দিকে কেউ মনোযোগ না দিলেই তার খারাপ লাগে। মেজো ছেলে জসিমের বৌ খারাপ না। মেয়েটার নাম যেন কী তিনি মনে করতে চেষ্টা করেন। অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও যখন মনে করতে পারেন না তিনি হাল ছেড়ে দেন একটা সময়। আজকাল কোনো ব্যাপার নিয়ে তিনি বেশি ভাবতে পারেন না। সব এলোমেলো লাগে! একে একে বড়,মেজো থেকে শুরু করে ছোট ছেলের ফ্ল্যাটে ভাসমান অবস্থায় তার সময় গড়িয়েছে। সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে তাকে ঘিরে ছেলের বৌদের অশান্তি।স্বভাবতই দোষ পড়েছে তার ঘাড়ে। সুফিয়া খাতুন ভেবে পান না তার পাখির মতো ছোট একটা দেহ কোনো ছেলের ঘরেই কেন জায়গা করে উঠতে পারছে না। তিনি কী এতোই খারাপ ! এমন হতো তিনি বেশি খান তাও না হয় বুঝতেন। সকাল বেলা তিনটা রুটি খেতে দিলে একটা কোনোমতে খান আর দুটো আঁচলের নিচে নিয়ে পা টিপে টিপে দারোয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে বড় মেয়ের বাসার দিকে হাঁটা ধরেন। সেখানে গিয়েও বড় মেয়ের মুখ ঝামটা খেতে হয়।



আপনে কী ভাবছেন আমার ঘরে খাওন নাই? কী ছাতার মাথা দুইডা রুটি লইয়া আইছেন, আপনের কোটিপতি পোলার বৌরা তো মাইনসের কাছে গপ্পো কইয়া বেড়াইবো সাথীর মায় তার ভাইয়ের বাড়ির এইডা ওইডা খাইয়া বাইচ্যা আছে। আমার জামাই মইরা গেছে দেইখ্যা কী আমি পানিতে পইড়া গেছি ভাবছেন?



বড় মেয়ে রাগে গজগজ করতে করতে রুটি দুটো তাদের খাবার টেবিলে ফেলে রাখে অবহেলা ভরে। রুটি দুটোর দিকে সুফিয়া খাতুনের মনে পড়ে যায় প্রথম যৌবনে একটা রুটি খাবার জন্য সেই ফজরের ওয়াক্তে শুরু হতো সংসারের ঘানি টানা। তার শাশুড়িটা এতো খাবার কষ্ট দিতো ইচ্ছে করতো সেই বুড়ির চুল টেনে ছিঁড়ে দিতে। গর্ভাবস্থায় ঢেঁকি পাড়ানো, গরুকে ভুষি-ভাতের মাড় খাওয়ানো, এতো গুলি ছেলেমেয়ে পালা, ভাসুর- ননদ- ননাস নিয়ে একপাল মানুষের ভিড়ে তার ভীষণ দিশেহারা লাগতো। তার স্বামীর কথা মনে হলেও এক প্রচণ্ড রাগ তার ভেতরটা অস্থির করে ফেলে। দিনের পর দিন চট্টগ্রামে জাহাজে জাহাজে লোকটা কাটিয়ে দিয়েছে। ভালো মতো দুটো কথাও বলতো না। চট্রগ্রাম থেকে বাড়িতে আসলে সবসময় মায়ের আঁচলের নিচে না হয় বন্ধু-বান্ধবের সাথে তাশের আড্ডায় বুঁদ হয়ে থাকতো। বিগত দিনের স্মৃতি মনে পড়তেই স্বামীর প্রতিও তার পুরনো অপ্রাপ্তির ক্রোধ ফিরে আসে। মনে মনে ভাবা কথাগুলো অপ্রাসঙ্গিকভাবেই বড় মেয়ের সামনে বলে ওঠেন -



শয়তান ডায় মরছে ভালো হইছে। দে দেহি এক কাপ চা। বলে তিনি তার পা দুটো চেয়ারে তুলে আয়েশ করে বসেন। পান খাওয়া ঠোঁটে দাঁত বের করে হাসেন। জায়গায় জায়গায় কয়েকটা দাঁতও তার অবস্থান হারিয়েছে। পরনে আকাশি সাদা তাঁতের শাড়ি। আঁচলটা পিঠে ভালমতো জড়িয়ে মাথায় ঘোমটা তুলে দেন।



আইজকা ঠাণ্ডাডা ভালাই পড়ছে, না রে সাথীর মা? উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে নিজেই আবার বলেন



মাঘ মাস, ঠাণ্ডা তো পড়বই!



কোন শয়তানের কথা কইতাছেন? কোন সময় যে আপনের কি মনে পড়ে ঠিক ঠিকানা নাই।



তোর বাপের কথা কই। মইরা গেছে ভালা হইছে। হায়রে জ্বালান ডা আমারে জ্বালাইছে। মরণের আগেও জ্বালাইয়া নাশ বানাইয়া গেছে। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে তার কাছে মনে হয় চিনি হয়নি। কাঁপা কাঁপা হাত বাড়িয়ে টেবিলে রাখা চিনির কৌটার দিকে তিনি হাত বাড়ান। কিন্তু সাথীর মা চিনির কৌটা শক্ত হাতে নিজের কাছে আটকে রেখে তাকে জিজ্ঞেস করে –



আপনের মাথা মুথা ঠিক আছেনি ? কথাবার্তা সাবধানে কইবেন। মরণের আগে আব্বার ভুইল্যা যাওয়া রোগ হইছিলো, খালি ডরাইতো। আপনে হেরে তখন লাডি দিয়া বাইরাইতেন। বলতে বলতে তার মেয়ের চেহারা মনে হয় রাগে লাল হয়ে ওঠে। কিন্তু তিনি সে কথার উত্তর না দিয়ে আবার চিনির কৌটার দিকে হাত বাড়ান।



কি রে ডিব্বাডা কোলে লইয়া বইলি ক্যান? একটু চিনি দে, চা তিতা লাগে।



তিতা চা’ই খান। ডায়াবেটিস বাইরা রইছে হেই খেয়াল আছে নি?



তার মেয়ের বিরক্তিমাখা চেহারার দিকে তাকিয়ে তার মনে হতে থাকে মেয়ে না যেন মেয়ের বাপই বসে আছে সামনে। সেই ফর্সা ধবধবে গায়ের রঙ, খাড়া নাক, চোখে চশমায় মেয়ের চেহারার সাথে তার স্বামীর চেহারার অনেক মিল। তিনি জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকেন। মেয়ের চোখে চোখ পড়লেই এখন ওষুধ ঠিকমতো না খাওয়া নিয়ে কথা তুলবে। বয়স হয়েছে তার, একটু অসুখ-বিসুখে তো ভুগবেনই। আর না ভুগলে কী ছেলেমেয়েরা খোঁজ খবর নেয়, কাছে এসে গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়! ছেলেমেয়েদের গায়ের একটু ছোঁয়া পেলে যে তার ভেতরটা একেবারে শান্ত ভরা নদীর মতো হয়ে হয়ে যায় এটা ওরা বুঝবে কী! তারপর তুলবে চিনি আর মিষ্টি খাওয়া নিয়ে এবং শেষ হবে তার বাবা প্রসঙ্গতে। জানালার ফাঁক গলে কনকনে একটা ঠাণ্ডা বাতাস টের পাচ্ছেন তিনি। হাত দিয়ে টেনে তিনি জানালার কাঁচটা টেনে দিতে চেষ্টা করেন। নাহ এবার তার ওঠা দরকার। এখানে থাকলেই মেয়ে আবার নামাজ পড়া নিয়ে ধরবে। কিছুক্ষণের মাঝেই আজান হবে। তেতো চা পান করতে করতে ভাবছিলেন শীতের দিনগুলো কতো দ্রুত শেষ হয়ে যায়! এক চামচ চিনি হলে চা’টা পান করতে কতো আরাম হতো! একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন তিনি।



কী হইলো আমার বাপেরে শয়তান কইলেন ক্যান?



শয়তান কইছি ভালাই করছি। বুইড়ায় মরণের আগে আমারে যেমন জ্বালাইছে, তোর ভাইয়ের বৌ-গো কাছে কী কম কথা হুনছি আমি হের লাইগ্যা!

হের লাইগ্যা আমার বাপেরে লাডি দিয়া পিডে বাড়ি দিবেন নি? ফর্সা মানুষটার পিডে জায়গায় জায়গায় দাগ পইড়া গেছিলো! বলতে বলতে তার বড় মেয়ে চোখের পানি মোছে। ইশ্‌ দরদ কতো! বাপ সোহাগী! এদিকে তার যে কতো কষ্ট হতো মানুষটাকে চোখে চোখে রাখতে। তিনি নিজেও তো অসুস্থ মানুষ ছিলেন তখনো, এই এখনো। তার কোনো ছেলেমেয়ে কেন যেন তাকে পছন্দ করে না, সময়ে সময়ে তার এমন মনে হয়। তাদের বাবার প্রতিই সব ভালোবাসা গচ্ছিত রেখেছে তারা। সারা বছর যে মানুষটা কর্মক্ষেত্র থেকে তার ছেলেমেয়েকেও দেখতে আসে নি, কোন ফাঁকে ছেলেমেয়েরা বড় হয়েছে, স্কুলে গেছে সে সবের খোঁজও রাখেনি। শুধু টাকা দিয়েই দায়িত্ব পালন করেছে কিন্তু সে মানুষটার জন্যই তার ছেলেমেয়েদের এতো আহা উহু, এতো আহাজারি! নিজেকে ঠিকভাবে মূল্যায়িত হতে না দেখে মৃত মানুষটার প্রতি তিনিও ফুঁসে বলে ওঠেন –



মারুম না তাইলে ? বিছানাত্তে নাইম্যা দুই পাও বাড়াইলেই পায়খানা। ঐহানে যাইয়া হাগতে মুততে পারলো না ? বিছানায় হুইয়া হুইয়া নাইলে ঘরের চিপায় খাড়াইয়া লুঙ্গি ভিজায়। কার এতো ঠেকা পড়ছে হের গু মুত সাফ করবো! আমি কী হের দাসী বান্দি নি ?



মেয়ে তার কথা শুনে আর্তনাদ করে ওঠে – মা ! চুপ করেন। আপনেরও তো বয়স হইছে। দেখুম তো আমার বাপের বয়সে আইলে আপনে কী করেন! আর এখনো তো দেখতাছি কি কি করতাছেন ?



তার মেয়ে চক্ষুলজ্জায় হয়তো তাকে বলে না কিন্তু তার মনে পড়ে যায় কয়েকমাস আগে বড় মেয়ের সাথে গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যাবার কথা। রাতে তিনিও বাথরুমে যেতে যেতে নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন নি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘর ভাসিয়েছেন তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে। তারপর ঘরের বাতি জ্বালিয়ে কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে ভয়ে ভয়ে নিচু গলায় ডেকেছেন –



সাথীর মা, ঐ সাথীর মা …



সে ঘটনা মনে করে এই মুহূর্তে তার নিষ্ঠুর রাগ রাগ ভাবটা একটু একটু করে মিশে যেতে থাকে কোনো শব্দহীন বেদনার চোরাবালিতে। এক অদ্ভুত পীড়ন তার ভেতরটা ক্রমশ ছায়াচ্ছন্ন করে তুলতে থাকে। ভুলে যান অতীত বা বর্তমান। অস্ফুটে বলে ওঠেন – আমি মরি না ক্যা ?



সমাপ্ত



মন্তব্য ৪৮ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৪৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
অপর্ণা মম্ময়,
শব্দহীন বেদনার চোরাবালিতে অদ্ভুত পীড়নের যে দেউটি আঁকলেন।আশা রাখি আমাদের সন্তানেরা তার সলতে হবে না ...

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:২৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ অন্ধবিন্দু।

২| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪

আজাইরা পঁ্যাচাল বলেছেন: লিখাটাতে সমাজের বাস্তব চিত্রের আভাস পাওয়া যায়।
সুন্দর লিখেছেন। :)

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৪৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৪৫

মামুন রশিদ বলেছেন: এই বয়সের একজন মানুষের চিন্তা আর জীবন যাপনের চমৎকার দৃশ্যপট এঁকেছেন । একজন বুড়ো মানুষের কাছে সময় অতি দীর্ঘ আর বিরক্তিকরভাবে স্লথ । সেই স্লথ সময়ের চিত্র আঁকা এত সহজ না । অভিজ্ঞতার বাইরে কেবল নিখুঁত পর্যবেক্ষণ আর উপলব্ধি করার ক্ষমতাই পারে এত সুন্দর করে সময়কে তুলে আনতে ।

অনেক দিন পর লিখলেন অপর্ণা । ব্যস্ততা মানুষের নিউরনের সূক্ষ্ন অনুভবে কোন বাঁধা হতে পারেনা, কিংবা লিখালিখি থেকে সাময়িক দুরে থাকলেও প্রকৃত লেখকের হাতে কখনো মরচে ধরে না- আপনার এই গল্পটি পড়লে তা নির্দ্বিধায় বলা যায় । কোন তাড়াহুড়া নেই, বর্ণনায় একটা স্বস্তিকর ধীর-স্থির আমেজ যেন ঐ মানুষটার স্লথ সময় পার করার কথাই মনে করিয়ে দেয় ।

এরকম একটা গল্পে টাইপো থাকা ঠিক না । তৃতীয় লাইনে চেয়ার>চায়ের হবে ।


লেখালেখিতে ফিরে আসুন পুরোদমে । শুভ কামনা ।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: খুব কাছের একজন মানুষকে দেখে এই লেখার অনুভবটা এসেছিলো। আমার খুব টেনশন লাগে আমিও এই সিচুয়েশনে পড়বো বলে। বৃদ্ধ হবার ভয় বলতে পারেন!

রোজই মাথার মাঝে কোনও না কোনও লেখার আইডিয়া কিলবিল করে। যখন সব কাজ শেষ করে ফ্রী হই তখন গভীর রাত, ইচ্ছে থাকলেও আর এনার্জি থাকে না লিখতে বসার! আর যে সময় লেখার ভাব আসে সে সময়ে সুযোগ থাকে না!

টাইপো ঠিক করে দিচ্ছি।

পুরোদমে না হলেও একটু একটু করে ব্লগিং এ ফিরবো , না হলে তো দেখা যাবে আমাকে ভুলেই গেছেন!

৪| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৯:৪৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আগে নতুন বউদের বলা হত- নিজে শাশুড়ির সেবা করো, তোমার ছেলের বউ-ও তোমাকে একই রকম সেবা করবে! সবসময় একই জিনিস ঘটে না অবশ্য, কিন্তু গল্পটা পড়ে এই কথাটা মনে পড়ে গেল।

বয়স বেড়ে গেলে ঘুম না আসা, ভুলে যাওয়া, মনোযোগ কমে যাওয়া, মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে থাকা- এই বৈশিষ্ট্যগুলো গল্পের সুতোয় চমৎকার ভাবে গেঁথেছেন। সেই সাথে বৃদ্ধার নিঃসঙ্গতা, পরিবারের বোঝা হয়ে থাকার যন্ত্রণার কথাও এসেছে। সবমিলিয়ে সুলিখিত গল্প।

প্রিয়তে নিলাম। শুভরাত্রি।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আমি তোমার উপকার করলে তুমিও আমার উপকার করবে --- এই বিনিময় বা প্রথা এখন না ভাবাই ভালো ! মানুষের মন সময়ের সাথে সাথে আধুনিক হয় বা পিছিয়ে যায় !

প্রিয়তে নেয়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন প্রিয় ব্লগার।

৫| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১০:০৭

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
ঝরঝরে সাবলীল গল্প অনেক ভালো লাগলো !

তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধের মতোই আমাদের সমাজের প্রচলিত বাস্তবতা !

আপনাকে পাওয়া যাচ্ছে না,
ব্যাস্ততার চাঁদে গ্রহণ লেগেছে বুঝি !

ফিরে আসুন,
ফিরে আসুন,

ভালো থাকুন ।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ গ্রানমা।

ব্যস্ততা তো কিছুটা বেড়েছেই। তবে ফাঁকে ফাঁকে তো আসিই। যেমন আজ কিছুটা সময় দেবো , অন্যদের লেখা পড়বো ভাবছি।

আপনিও ভালো থাকুন।

৬| ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১১:১৫

ক্লান্ত তীর্থ বলেছেন: আমাদের নিজেদের যাপিত জীবনটা অনেক বেশি অর্থহীন লাগে যখন মনে পড়ে এমন একটা সময় অপেক্ষা করছে!!!



ভালো থাকুন!

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: মন্তব্যে সহমত !
আপনিও ভালো থাকুন।

৭| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:২৯

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
গল্প, সময় নিয়ে পড়তে হবে :)

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তোমাকে সেই কবে বলছিলাম একটা গল্প লেখা শুরু করতে ! করলে না তো !

৮| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১:২০

বটের ফল বলেছেন: আমদের মনের ভেতরের বোধ জাগ্রত হোক।

ভালো থাকুন আপু অনেক বেশি।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনিও ভালো থাকুন বটের ফল।

৯| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ২:৪২

রাখাল রাাজু বলেছেন: দারুন লিখেছেন।
ভালো থাকুন।
অনেক অনেক শুভকামনা

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:০১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনার জন্যও শুভকামনা

১০| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১২

হাসান মাহবুব বলেছেন: এরকম গল্প পড়লে মনটা বড় বিষণ্ন হয়ে যায়। আপনাকে লেখায় ফিরতে দেখে ভালো লাগছে।

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১:১৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: কমেন্টে ফিরতে পারলে আরো ভালো লাগতো !

সুফিয়া খাতুনের রাস্তায় আমরাও ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছি!

১১| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

এহসান সাবির বলেছেন: অনেক দিন পর মনে হয় আপনার লেখা পড়ছি। কেমন আছেন?

এই টাইপের গল্প পড়লে কেন জানি আমার মন খারাপ লাগে, মনে হয় একদিন আমিও বুড়ো হবো........!!

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: হুম অনেকদিন পর!
আগামী দিনের কথা ভেবে নিজেকে স্বাবলম্বী করা প্রয়োজন মানসিক এবং অর্থনৈতিক দিক দিয়ে। আর বয়সজনিত রোগ নিয়ে আসলে কিছুই বলার নেই!
আপনি কেমন আছেন? আমি ভালো আছি

১২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:০৫

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

কী নিষ্ঠুর জীবনচক্রে পড়েছি আমরা। স্ত্রী তার স্বামীর সেবা না করলে সেটি কড়ায় গণ্ডায় হিসেবে হয়; একই হিসাব হয়, সন্তান তার মায়ের প্রতি কর্তব্য পালন না করলে।

হিসেবের চিন্তা না করে নিজের দায়িত্বটি পালন করলেই দেনাপাওনা চুকে যায়।

একে অন্যের কর্মফল থেকে পরিত্রাণ দেবার কোন উপায় নেই।

অপর্ণা মম্ময়কে অনেক দিন পর পেলাম... :)

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ মাইনুল ভাই। আশা করি ভালো আছেন

১৩| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:২৫

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার লিখা পড়লাম । কি বোর্ডের ধার একটুও কমেনি । চোখের সামনে চলতে থাকা একটা হৃদয়হীন বিষয় নিয়ে মন খারাপ করিয়ে দিলেন । অনেক মুগ্ধতা ।

ভালো থাকবেন সবসময় । :)

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন। আপনার ব্লগ এর মাঝে ঘুরে দেখার সময় করতে পারিনি। আশা করছি আপনার লেখা গুলোও পড়ে নেবো এর মাঝে।

১৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ রাত ১২:০০

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: অনেকদিন পর তোমার লেখা পড়লাম আপা। ব্লগে আসি না তাও বেশ কিছুদিন হল। আজ আসা যে সার্থক হল। তোমার চমৎকার লেখাটা পড়লাম। দারুণ হয়েছে। সত্যিই অসাধারণ!!


অনেক ভালো থেকো।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: হুম তোকেও অনেকদিন পর পেলাম আমার ব্লগে।
ভালো থাকিস।

১৫| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১০:৫৭

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন: সত্য বড় নিষ্ঠুর ৷ চোখের দেখা বর্তমান সময়ের চেনাজানা দৃশপট ৷


ঠিকই বলেছেন সুফিয়া খাতুনের রাস্তায় আমরাও ধীরে ধীরে এগিয়ে

যাচ্ছি
শুধু ধীরে নয় খুব দ্রুত ৷

বর্ণনাশৈলী নিয়ে বলা অপেক্ষা বেশী নাই ৷ এককথায় নিপাট মেদহীন ৷


শুভকামনা..........

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৫:০৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকবেন ভাইয়া

১৬| ২৮ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:১৪

অদৃশ্য বলেছেন:





চমৎকার লিখা... গল্পটির বিষয় নিয়ে অনেক কথা বলবার থেকে যাচ্ছে... বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না... কিছু স্মৃতি মনে পড়ে মনটা খারাপ হয়ে গেলো...


শুভকামনা...

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৩১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: হুম এটা আমাদের পরিচিত জীবনেরই গল্প আর আমাদের চলার পথটা সবসময় মসৃণ নয়, সব অনুভূতি বাঁ বোধ আনন্দের নয়।

আপনার জন্যও শুভকামনা রইলো।

১৭| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ১১:২১

অচিন্ত্য বলেছেন: খুব সুন্দর লিখেছেন। অদ্ভুত নিপুণতায় ধরেছেন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অনুভূতি। ['কী' এর ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার]

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: কী আর কি নিয়ে পড়াশুনার গাঁথুনি মনে হয় ভুলে গেছি ! দেখি আবার ঝালাই করবো সময় পেলে।
শুভকামনা রইলো

১৮| ২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ২:০১

দ্য ইলিউশনিস্ট বলেছেন: গল্পে অসহায় একটা সময়কে বন্দী করেছেন। চমৎকার লিখা।

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ ইলুউশনিস্ট

১৯| ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ২:১৯

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: সত্যি চমৎকার শব্দের গাঁথুনিতে, সাধারণ জীবনবোধের অসাধারণ গল্প।

শুভ কামনা লেখিকা।

০৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:১৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ রিয়াদ। শুভ রাত্রি

২০| ০৩ রা মে, ২০১৪ সকাল ১০:৫৩

সুলতানা সাদিয়া বলেছেন: প্রথম পাঠে চমৎকৃত হয়েছিলাম। আমার দাদীও এমন করতো। সকালে নাস্তা খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই চাচীর বদনাম করতো, নাস্তাই নাকি দেয় নাই! যে জিনিস চিবুতে পারতো না, সেটা না দিলেও বলতো ভাগেরটা দেয় নাই, কখনো কখনো লুকিয়েও খেতো.....খালি ভাবতো যত্ন করে না কেউ। আমরা লেখকরা কি...না..সব কিছুতেই গল্পের উপাদান ঠিক খুঁজে নেই।

০৮ ই মে, ২০১৪ রাত ১২:২০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আবারো গল্প ঘুরছে মাথায় আর অসমাপ্ত গুলো কবে ধরতে পারবো জানি না।
ভালো থেকো। মা দিবস আসছে, লিখে ফেলো আরেকটা গল্প !

২১| ১০ ই মে, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৫

নীল কথন বলেছেন: অনেকদিন পর তোমার গল্প পড়লাম। ফেবু শেয়ারিং দেখছিলাম। সময়ই পাচ্ছিলাম না।
-
বাস্তবচিত্রটা পুরোপুরি নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে পারছো। সার্থক গল্প। গল্প হিসেবে বেশ ভালো লাগছে। তবে মন খারাপ হল, এমনটি প্রায়শ দেখি নানা পরিবারে। আমি আমরাও এমন করি।
-
নিয়মিত লেখ। ব্যস্ততা কমাও। নিরন্তর শুভেচ্ছা। ভাল থাকা হোক।

১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: পড়ার জন্য কৃতজ্ঞতা।
ভালো থাকিস । সময় দিতে পারি না তোকে, এজন্য দুঃখিত!

২২| ১৩ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৫

শামীম সুজায়েত বলেছেন: অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম।
এর ভেতরে খেয়াল করা হয়নি আরও লেখা দিয়েছিলেন কিনা।

এখন কি দেশের বাইরে আছেন?

ভাল থাকবেন।

১৪ ই মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আমিও অনেকদিন পর আপনাকে দেখলাম নিজে অনেকদিন পর পর এসে।
না এখন বাংলাদেশেই আছি বর্তমানে।
আপনিও ভালো থাকবেন

২৩| ০৯ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

জাফরিন বলেছেন: কাঁদিয়ে ফেললেন! নির্মম বাস্তবতার চিত্রকর্ম!

১০ ই জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: কাঁদাতে পেরে খুশি হয়েছি জাফরিন

২৪| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: অপর্ণা মম্ময় ,



এ সংসারের সুফিয়া খাতুনেরা এমনিই হন । সেনাইল ডিমেনশিয়ায় ভুগতে হয় এরকম করেই । কখোনও পুরোনো স্মৃতি ঘাই দিয়ে যায় বড় বেশী । বয়সের সাথে সাথে শারীরবৃত্তিয় ঘটনাক্রম এরকম বাস্তবেরই জন্ম দেয় ।

সুন্দর ফুঁটে উঠেছে বাস্তবের এক নিটোল ছবি ।

ভালো থাকুন ।

০৭ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৩৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্যের জন্য।

শুভ রাত্রি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.