নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের কোথাও একটি ছাপ রেখে যেতে চাই

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।

অপর্ণা মম্ময়

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।

অপর্ণা মম্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

তপুর নতুন স্কুল

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:২৮

১।



বছরের শুরুতেই পত্রিকায় রাশিফল পড়ার অভ্যাস তপুর। ও ধনু রাশির। ওর ফলাফল ও পড়ে দেখেছে। মনে হচ্ছে জ্যোতিষী নতুন বছর কেমন যাবে যা যা লিখেছে ওর রাশি নিয়ে, সবই ভুল। অন্যদের জীবনে এতো আনন্দ আর ওর ভাগ্যে যেন সমস্ত দুর্ভোগ লেখা হয়েছে। এই পেশায় যারা কাজ করে তারা মনে হয় মানুষকে খুশী করার জন্যই যতসব উল্টাপাল্টা কথা লিখে রাখে। নতুন বছরের আগেই ও টের পাচ্ছিলো সামনে ওর জন্য ভয়াবহ দিন অপেক্ষা করছে। ওর আব্বু আর আম্মু ওকে গিনিপিগ বানিয়ে নতুন নতুন সব ব্যাপার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রায়শই। মাঝে মাঝে মনে হয় ও একা না হয়ে ওর যদি আরও দুই তিনটা ভাই বোন থাকতো তাহলে ও অন্তত রেহাই পেতো ওর আব্বু-আম্মুর অত্যাচার থেকে। আব্বু-আম্মু নাকি তাদের বিয়ের আগে থেকেই বন্ধু ছিলো,তাই যে কোনো ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় তারা বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা করে ঘরের ভেতর,বিশেষ করে খাবার টেবিলে। তবে আলোচনা বলার চেয়ে সেটাকে তর্ক বলাই ভালো। ওর আম্মু অবশ্য এটাকে 'তর্ক' বলতে নারাজ,তার ভাষায় এটা হচ্ছে ' যুক্তিখণ্ডন বা আলোচনা।সকাল বেলা এমনিতেই তপুর নাস্তা খাওয়ার মুড থাকে না,সেদিন ওর আম্মু যখন ওর আব্বুকে চ্যালেঞ্জ করে বললো -

ওকে এবার হাই স্কুলেই ভর্তি করাবো।



ওর আব্বু আহমেদ সাহেবও ডাইনিং টেবিলে জোরে একটা ঘুশির মতো মেরে বললো -



আরেহ্‌ রাখো তোমার হাই স্কুল। আমার ছেলে আইডিয়ালে ভর্তি হবে। গত বছর ঐ স্কুলে কতগুলো 'এ'প্লাস এসেছে পিএসসি আর জেএসসি পরীক্ষায় তোমার হিসাব আছে?

বলে আব্বু তপুর দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে ওর চুলটা নেড়ে দেয় একটু। টেবিলে আব্বুর ঘুশির ধাক্কায় চায়ের কাপ থেকে একটু চা ছলকে পড়েছিলো। আম্মু সেটা টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বললো -



দেখো আহমেদ,চ্যালেঞ্জ করো না কিন্তু। আইডিয়ালে খেলার মাঠ আছে নাকি যে ও খেলবে সেখানে। বন্ধ জায়গায় বাচ্চাদের শারীরিক, মানসিক বিকাশ ভালো হয় না,মনটাও ছোট হয়ে যায়। হাই স্কুলের রেজাল্ট কম কীসে শুনি?



তপুর আব্বু-আম্মুর তর্ক হয়তো আরও দীর্ঘ হতো পারতো কিন্তু ওর আব্বু-আম্মুর অফিসের সময় হয়ে যাওয়ায় সে বেলার মতো আলোচনা ওখানেই থেমে যায়।



কী হলো তোমার,একটা রুটি শেষ করতে করতে তো তোমার দুপুরের খাবার সময় হয়ে যাবে। তপু ওর আম্মুর তাড়া খেয়েও খাবারের প্রতি ওর আগ্রহ দেখা যায় না। ততক্ষণে ওর টেনশনে পেট মোচড়ানো শুরু হয়ে গেছে নতুন স্কুলের কথা শুনে। ভর্তি পরীক্ষা দিতে এমনিতেই ওর ভীষণ ভয়। তারচেয়েও বড় কথা নতুন স্কুল মানেই নতুন বন্ধু বানানো, নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকা, নতুন পরিবেশ। ওর মনে হতে থাকে সেদিন সকাল থেকেই দুর্দশার শুরু হলো যেন।



২।



তপুর আব্বু-আম্মুর বেশীরভাগ ব্যাপারেই মতের অমিল হলেও ওর স্কুলের ব্যাপারে এবার কেমন করে যেন দুজনে একই সুরে কথা বলছে। এটা সত্যি তপুর আগের স্কুলটায় খেলার মাঠ ছিলো না কিন্তু পড়াশুনার ব্যাপারে টিচাররা খুব যত্ন নিতেন,একটা কম্পিউটার ল্যাবও ছিলো,। কিন্তু নতুন স্কুলে যেদিন তপু ভর্তি পরীক্ষা দিতে গেলো ওর মনে হচ্ছিলো ও যেন একটা মহাসমুদ্রে এসে পড়েছে। এতো এতো ছাত্রছাত্রী ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছিলো, সাথে ওদের মা-বাবারাও এসেছিলো। সারা স্কুল যেন থইথই করছিলো মানুষে! তপুর কেবলই মনে হচ্ছিলো ও এতো মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাবে। তাই শক্ত করে ও ওর আম্মুর হাতটা ধরে রেখেছিলো। কিন্তু সাথে সাথেই ওর আম্মু হাতটা ছাড়িয়ে বলেছে -



এখনো বাচ্চাদের মতো হাত ধরে ধরে হাঁটো কেন? ক্লাস ফাইভের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছ, আর ছোটটি নেই কিন্তু তুমি!



বলেই ওর আম্মু ওর হাত ছাড়িয়ে দ্রুত সামনের দিকে হেঁটে এক অচেনা লোককে জিজ্ঞেস করে ক্লাস ফাইভের ভর্তি পরীক্ষা কোন রুমে হবে। তপুও ওর আম্মুর পেছন পেছন যায়। বারবার জিজ্ঞেস করে জেনে নেয় ওর আম্মু কোথায় ওর জন্য অপেক্ষা করবে পরীক্ষা শেষে।



তপু শান্তি মতো ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেনি। ক্লাসের পরিক্ষার্থীগুলো এতো চেঁচামেচি করছিলো ক্লাস রুম থেকে স্যার, ম্যাডামরা বের হয়ে যাওয়ার পর পর। বেশি শব্দ তপুর পছন্দ হয় না, কান ব্যথা করে। ওর সীট পড়েছিলো ক্লাসের শেষ বেঞ্চে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর সামনের বেঞ্চের ছেলেগুলো বলছিলো -



একটু বলে দাও না এই উত্তর টা ,একটু বলো না...



আরেক ছেলে তো খাতার উপর থেকে তপুর হাত সরিয়েই সাধারণ জ্ঞানের উত্তর গুলো দেখে নিলো। ও এ ধরণের আচরণের সাথে পূর্ব পরিচিত না থাকায় বেশ অবাকই হয়েছিলো। কিছুক্ষণ পর ওর মেজাজ খারাপ হওয়াতে ও ওর খাতা ঢেকে বড় বড় চোখ করে মোটা মতো ছেলেটার দিকে তাকিয়েছিলো। গায়ের রঙটা ছেলেটার কালো,পরনের খয়েরি জ্যাকেটে ছেলেটাকে আরও কালো লাগছিলো, একটা চোখের কোণে একটু ময়লাও লেগেছিলো। তপু ওর খাতাটা ঢেকে ফেলাতে ছেলেটা বললো -



এই স্কুলে ভর্তি হইয়া নেই,দেখিস তোরে চিপায় নিয়া মারমু। শয়তান পোলা ...



ছেলেটা আর কথা বাড়াবার সুযোগ পায়নি,স্যার আবার ক্লাসরুমে ঢোকাতে যে যার মতো পরীক্ষা দেয়ার দিকে মনোযোগ দেয়। অবশ্য পরীক্ষা দিতে এসে তপুর আম্মুর সাথে তার পুরনো এক বান্ধবীর দেখা হয়ে গিয়েছিলো। তার বান্ধবীর ছেলে অর্কও এবার ক্লাস ফাইভে ভর্তি পরীক্ষা দিবে তপুর সাথেই। শিশির আন্টি খুব করে ওর আম্মুকে শোনাচ্ছিলো উনার ছেলে অর্কের গুনকীর্তন। কিন্তু ক্লাসরুমে ভর্তি পরীক্ষার সময় অর্ক যা যা করেছে সেটা আন্টিকে যদি তপু একবার দেখাতো পারতো তাহলে বুঝতো কতো পাজি এই ছেলে। এই ছেলে মহা দুষ্টু,কেমন শিস মেরে একবার তপুকে জিজ্ঞেস করেছে -

দোস্তো,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে রে !



অর্ক কবে তপুর দোস্তো হলো ও ভেবেই পায় না। বাজে ছেলে একটা। পরীক্ষা দিতে এসে এই নতুন স্কুল এবং সেখানকার পরিবেশ নিয়ে যা যা ধারণা ওর হয়েছে,সেসব নিয়ে তপু আরেকটু রঙ চড়িয়ে খাবার টেবিলে বাবা-মা'কে বলবে বলে ঠিক করে রেখেছে। কিছুতেই আগের স্কুল ছেড়ে আসতে ওর মন চাচ্ছে না।



৩।



তপু এই হাই স্কুলে ভর্তি পরীক্ষায় টিকলেও এখানে পড়বে না এটা জানাবার আগেই ও খেয়াল করলো ওর আম্মু স্কুলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

আহমেদ,হাই স্কুলের গভর্নিং মেম্বার এখন কারা জানো ? এরপর আম্মু তাদের নাম বলে বলে শোনালো। স্কুলের শিক্ষাদান পদ্ধতি, নিয়মকানুন গত কয়েক বছরে চেঞ্জ করা হয়েছে। এই দেখো প্রস্পেক্টাস ! নতুন আরও দুইটা বিল্ডিং তৈরি করেছে আর ভেতরে দেখলাম আরও একটা ভলিবল খেলার বিশাল জায়গা ! বলে ওর আম্মু মোবাইলে তুলে আনা ছবি গুলো ওর আব্বুকে দেখাতে লাগলো। এক পর্যায়ে ওর আব্বুও বললো -

আসলেই ঠিক বলেছিলে,তপুকে আগের স্কুলটায় রেখে আমরা ওকে ফার্মের মুরগীর মতো বড় করছিলাম। অল্প কিছু ছাত্রছাত্রীর সাথে পড়াশুনা করলে প্রতিযোগিতা কী জিনিস ও তো কোনোদিন জানবেই না! তোমার পরীক্ষা কেমন হলো ?

তপু অন্যমনস্ক থাকায় খেয়াল করেনি ওর আব্বু ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেছে। ও প্লেটের ভাত নিয়ে এলোমেলো ভাবে নাড়াচাড়া করছিলো। কী হলো,না খেয়ে ভাত শুধু শুধু নাড়াচাড়া করছ কেন? সকালেও ঠিক মতো খাওনি কিন্তু! ওর আম্মু একটু গলা উঁচিয়ে বলতেই তপুর খেয়াল হলো ওর প্লেটের ভাত যেমন ছিলো তাইই আছে। ও এক নলা ভাত মুখে তুলে বললো -

আব্বু,আমার স্কুলটা ভালো লাগছে না।



ক্লাস করার আগেই বুঝে ফেললে স্কুল ভালো না ? সরকারী স্কুলে পড়ার মজাই আলাদা। শোনো আমরা স্কুলে থাকতে কী কী করতাম। ওর আব্বু যতই তার স্কুল জীবনের মজার মজার কাহিনী শোনাক,তাতে নতুন স্কুলের প্রতি বিন্দুমাত্র উৎসাহী হয় না তপু। ওর আম্মুও হাসতে হাসতে বলে -



জানো একবার কী হয়েছে ? স্কুলে একদিন যাই নি তারপর দিনই হেডস্যারএসে ক্লাসে জিজ্ঞেস করলেন, কে কে আসিস নাই তারা বেঞ্চে উঠে কানে ধরে দাঁড়া।

ওর আব্বু হাসতে হাসতে বললো - কোন ক্লাসের ঘটনা ? শেষ পর্যন্ত কানে ধরেছিলা ?

- হুম ধরলাম তো আর সারা ক্লাসে বসে বসে কাঁদলামও। ক্লাস টেনে পড়ি তখন !



বলে আম্মু আর আব্বুর সে কী হাসাহাসি ! এর মাঝে হাসির কী আছে তপু ভেবে পায় না। ও কখনো ক্লাসে কানে ধরা দূরের কথা,পড়া না শিখে যায় নি। আর আম্মুর হেডস্যার তার স্টুডেন্টদের তুই তুই করে বলতো নাকি এটা জিজ্ঞেস করতেই ওর আম্মু জানালো -



- শুধু তুই তুই করেই যে বলতো তা না,বেতের বারিও খেয়েছি।

- সব সরকারী স্কুলেই কী এমনটা হয়? স্যারেরা ধরে মার লাগায় ?

- ধুর বোকা,সব স্যারেরা মারবে কেন ? তুমি পড়া শিখে গেলেই তো হলো,স্কুলে না গেলে তারপর দিন দরখাস্ত নিয়ে যাবে তাহলেই তো হলো!



আগামীকালই ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিবে তপুর আম্মু জানালো। সাথে আরও জানালো ওর আম্মু চাকরীটা ছেড়ে দিচ্ছে সামনের মাস থেকে। শুনে ওর আব্বু বললো -

আগেই তো বলেছিলাম,চাকরীর ভূত বেশিদিন তোমার মাথায় থাকবে না। দেরীতে হলেও আমার কথাই ঠিক হলো !

- তপুর সমাপনী পরীক্ষা বলেই ছাড়ছি। ওকে নিয়ে স্কুল,কোচিং,বাসায় পড়ানো অনেক সময় দিতে হবে,তুমি তো সময় দিতে পারবে না। তাই কী আর করা! আম্মু টেবিল গোছাতে থাকে। তপু স্কুল নিয়ে ওর অনিচ্ছের কথাগুলো বলার সুযোগ আর পায় না।



ওর আম্মু বাসায় থাকবে,মজার মজার খাবার বানিয়ে খাওয়াবে,আম্মুর মুড ভালো থাকলে মাঝে মাঝে ও আর আম্মু মিলে বাইরে ঘুরতেও যায়। কিন্তু এবার আটঘাট বেঁধে আম্মু ওর পড়ার পেছনে লাগলে ওকে খুব খাটাবে সেটা ও ভালোই বুঝতে পারছে। ওর বাসার টিচারকে নিশ্চয়ই ছাড়িয়ে দিবে। শর্মী মিসকে ছাড়ালেই ভালো হবে। ওকে পড়াতে বসিয়ে মিস খালি ফোনে কার সাথে যেন গল্প করে, মাঝে মাঝে ড্রয়িং রুমে গিয়েও টিভি ছেড়ে স্টার জলসার প্যানপ্যানে নাটক দেখে ওদের বুয়াকে নিয়ে। এসব ওর আম্মুকে ও জানায়নি, ভালোই হবে তাকে ছাড়িয়ে দিলে। কিন্তু পুরনো বন্ধুদের ছেড়ে যেতে ওর যে কতটা কষ্ট হবে সেটা ওর আব্বু-আম্মু কেউই কেন বুঝতে চাইলো না সেটা ওর মাথায় ধরে না। ওর রুমের নীল ঘুমবাতিটা ও জ্বেলে দিয়ে বিছানায় শোবার আগে। রাফসান,অভিজিৎ,সাদিয়া, স্বর্ণা,ইফতি ওদের কথা বারেবারে ওর মনে পড়ে। ক্লাস ফোরের ফাইনাল পরীক্ষার আগে ওরা ক'জন মিলে একটা ঘোস্ট স্টোরি লেখা শুরু করেছিলো। শেষ অংশটার লেখা তপুর ভাগে পড়েছিলো। পরীক্ষার পর ও সেটা লিখেও ছিলো। কিন্তু ওদেরকে দেখানো হলো না।নিজেই নিজেকে বেশ কয়েকবার বলে R.I.P তপু ,R.I.P তপু! এছাড়া আর কী! পুরনো বন্ধুদের ছাড়া ওর নিজেকে মৃত মৃতই মনে হয় এই মুহূর্তে কিংবা মনে হবে নতুন স্কুলে পাশে ওদেরকে না পেলে।



৪।



তপুর আম্মু তপুকে স্কুলে নিয়ে যেতে যেতে বলেছিলো -

আজকে প্রথম ক্লাস তোমার,তাই আজকে শুধু দেখিয়ে দিবো কোথায়,কয় তলায় তোমার ক্লাস হবে। এরপর কিন্তু একদিনও আমি তোমাকে স্কুলের কোনও কাজে সাহায্য করবো না। সামনের মাস থেকে অফিস রুমে গিয়ে মাসের বেতন নিজেই দিবে। বড় হয়েছো, নিজের কাজ নিজে করতে শেখো।

তপু বাধ্য ছেলের মতো মাথা নেড়েছে শুধু। ওর আগের স্কুলটা ফেলে আরও অনেকদূরে এই হাই স্কুল। তাই যেতে যেতে গাড়ির জানালার কাছে যতটা সম্ভব মাথাটা গ্লাসে ঠেকিয়ে ও স্কুলের দিকে তাকিয়ে রয়। এ যেন স্কুলের দিকে তাকিয়ে থেকেও দূর থেকে যেন ছুঁয়ে থাকা।



কী বলছি শুনছো তো?ওর আম্মু ওর গায়ে ধরে হালকা একটু ছুঁয়ে দেয়। শোনো,প্রতি ক্লাসের শেষে একটা করে ঘণ্টা বাজাবে। এর মানে হচ্ছে ক্লাসের সময় শেষ হয়েছে। এরপর আরেকজন শিক্ষক ঢুকবেন,বুঝেছো ?



তপুর আগের প্রাইভেট স্কুলে ঘণ্টা বাজাবার সিস্টেম ছিলো না। স্কুলের টিচাররা সময় মেনেই ক্লাসে কীভাবে যেন চলে আসতো। কোনও শব্দ পাওয়া যেতো না ক্লাসরুমের বাইরেও,একমাত্র ছুটি হলে বোঝা যেতো এখানে স্কুলের বাচ্চারা পড়ে। সব যেন ঘড়ির নিয়ম ধরে। আগের স্কুলের চার তলায় ঢুকতেই খোলামতো একটা জায়গা ছিলো যেখানে ওরা এসেম্বলির জন্য সকাল সাড়ে দশটায় লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যেতো। এই নতুন স্কুলে কী নিয়ম কে জানে,এসব ভাবতে ভাবতেই স্কুলের গেটে এসে তপুদের গাড়ি থামে। নতুন বছরের প্রথম ক্লাস বলেই আরো অনেক অভিবাবকের জটলা ছিলো স্কুল গেটে। স্কুলে ঢোকার বড় গেটটাও তাই আজ হা করে খোলা।



রুহুল ভাই,এই যে আমার ছেলে তপু,ক্লাস ফাইভে ভর্তি হলো। চিনে রাখেন। গেট আবার খুলে রাখেন না তো ?আপনার ফোন নাম্বারটা দেন তো ভাই। ঐদিন ভর্তি পরীক্ষা দেয়াতে এসে মনে ছিলো না নাম্বার নিতে। বলে তপুর আম্মু দারোয়ানের মোবাইল নাম্বারটাও তার মোবাইলে তুলে নেয়।



বাহ্‌ আম্মু এর মাঝে দারোয়ান আংকেলের নামও জেনে ফেলেছে! এই আম্মুটা চাকরী ছেড়ে দিয়ে ওর জন্য আর কী কী নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করবে কে জানে।



না না ম্যাডাম কী বলেনগেট খোলা রাখমু কেন ? এই রুহুল মিয়া আজ ৪২ বচ্ছর ধইরা এই গেট পাহারা দিতাছে। আমার চোখ ফাঁকি দিয়া একটা পোলাপাইনও এই গেট দিয়া বাইর হইতে পারবো না। নিচ্চিন্তে থাকেন।



তপুর মনে হয় এই দারোয়ান আংকেলটা একটু বাড়িয়ে বাড়িয়েই বলে। ওর আম্মু তার পার্স খুলে একশো টাকার নোট দারোয়ান আংকেলকে ধরিয়ে দিয়ে বলে --



একটু খেয়াল রাখবেন ভাই আমার ছেলেটার দিকে। নতুন ভর্তি হলো তো!

ইশ তপু যেন বড় হয়নি। ওর খেয়াল ও নিজেই রাখতে পারে। আম্মুটা যে কী না !



যেতে যেতে ওর আম্মু আবার আরেকজনের সাথে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ কথা বললো। স্কুলের আয়া আপা হবে হয়তো। নীল রঙের একই রকম এপ্রন গায়ে চাপানো আরও কয়েকজন আয়া আপাকে দেখা যাচ্ছে ছুটোছুটি করে বাচ্চাদের ব্যাগ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সবার কী ভীষণ ব্যস্ততা স্কুলের মাঠ জুড়ে। তপুর আম্মু ওকে ওদের ক্লাস রুম খুঁজে বের করে বসিয়ে দিয়ে বললো –



ছুটি দুপুর একটা পঁচিশে। আমি গেটের কাছে ছাউনির নিচেই থাকবো। লক্ষ্মী হয়ে থেকো।



তপু লক্ষ্মী ছেলেই তবুও আম্মুর কথাটা শুনে ওর একটু লজ্জা লাগলো। ওর ক্লাসমেটরা ওকে কী ভাববে কে জানে। এটুকু করলেও হতো, আম্মু যাবার আগে ওর কপালে একটা চুমুও খেয়েছে। বাসায় চুমু খায়, আদর করে ঠিক আছে, তাই বলে স্কুলেও! এইতো ওর আম্মু ক্লাস রুম থেকে বের হয়ে যাবার পর একটা ছেলে এসে বললো –



তুমি কী ছোট বাচ্চা নাকি ? তোমার মা এসে স্কুলে দিয়ে গেলো ? আমরা তো আরো ছোট বেলা থেকে একাই স্কুলে আসি। বলেই ঐ ছেলে সহ ওদের বন্ধুরা হাসতে শুরু করলো হা হা হা শব্দে। রাগে, অপমানে তপুর কান কেমন গরম হয়ে যাচ্ছে। তপু যাদের সাথে দ্বিতীয় বেঞ্চে বসেছিলো ওদের মধ্যে একজন এসে বললো –



ঐ লুতফরটা অনেক বাজে। ক্লাস ফোরেও আমাদের জ্বালিয়েছে অনেক। তুমি কী অন্য স্কুল থেকে এসেছো ?



তপু মাথা নাড়ায়। ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে তোমার নাম কী?

-রাসেল। তোমার ?

- তপু



এর মাঝেই তপুরা ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো। সেই আয়া আপাটাকে দেখা যাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে তপুদের ক্লাসের দিকেই আসছে। ওর দিকে তাকিয়ে বললো –



আমার নাম সালমা। তোমার কোনও দরকার হইলে আমারে জানাইয়ো। তোমার আম্মু বারবার বইলা গেছে। আমি আশেপাশেই আছি। অহন এসেম্বলিতে গিয়া লাইন ধরো। যাও।



আয়া আপা অন্যদেরকেও ক্লাসে গিয়ে তাড়া দেয় এসেম্বলির জন্য। যদিও তপু ক্লাসে এসে ভর্তি পরীক্ষার সময় যে ছেলেটা ওকে শাসিয়েছিলো মারবে বলে, খুঁজে দেখেছে ঐ ছেলেটাও এসেছে কিনা। মনে হয় ছেলেটা ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছে। কিছুক্ষণের মাঝেই মাঠ জুড়ে ছাত্রছাত্রীরা লাইন বেঁধে এসেম্বলির জন্য দাঁড়িয়ে যায়। মাইকে এক স্যার এনাউন্স করছে সবাইকে এসে লাইনে দাঁড়াবার জন্য। তপুও রাসেলদের সাথে সাথে ক্লাস ফাইভের ছেলেদের সারি খুঁজে নিয়ে দাঁড়ায়। ওর ঘাড়ে একজনের হাত পড়তেই পিছনে তাকিয়ে দেখে ওর আম্মুর বান্ধবীর ছেলে অর্ক।



- হাত নামাও তো অর্ক! ও বিরক্ত হয়েই বলে।



- স্যার বলছে এক হাত সামনে রেখে গ্যাপ দিয়ে দিয়ে দাঁড়াতে। শোনো নাই?



এই ছেলেটা সুস্থির হয়ে দাঁড়াতেই পারে না যেন। কেমন ছটফট আর নাচানাচি করছে। একটু পরেই কানের কাছে মুখ এনে বলে –

দেখছো কত্তো স্টুডেন্ট এখানে। আমাদের কলরব স্কুলে এইসব দেখি নাই । হেহেহহে



- কোন সব দেখো নি?

- এই যে এত্তো ছেলে মেয়ে

-

এর মাঝে হাসির কী হলো আর ছেলে-মেয়ে দেখার ব্যাপারে কী আছে তপু বুঝে পায় না। তবে তপুর একটু একটু ভালো লাগতে থাকে। এখানে সবাই জাতীয় সঙ্গীতের সাথে সাথে সুর মেলাচ্ছিলো। কোরান তেলাওয়াত আবার তারপর পরই গীতা পাঠের ব্যাপারটা নতুনই লাগলো ওর কাছে। অবশ্য শপথ বাক্য পাঠ ওর আগের স্কুলেও হতো, এটা নতুন না। স্কুলে ঢুকতেই বিশাল মাঠ আর তিন দিক জুড়ে স্কুল বিল্ডিং, কোনটা দুই তলা আবার কোনটা তিন তলা সাথে টানা বারান্দা। টিফিন টাইমে ঘুরে ঘুরে দেখতে হবে স্কুলটা। অর্ক ওর পিঠে খোঁচা দিয়ে আবার বলে –



দেখছো কলেজের ভাইয়া গুলি খালি কথা বলতাছে!



- বুঝলে কীভাবে ওরা কলেজে পড়ে ?

- না বুঝার কী আছে? দেখো না ওরা কতো লম্বা!

- তুমিও তো কথা বলছো! চুপ করো না। স্যারের কথা শুনতে দাও। বলে তপু সেদিকে মনোযোগী হয়। একটু পর ঢং করে ঘণ্টা পড়ার শব্দ হয়। এই একটা ব্যাপারেই তপু খুব চমৎকৃত হয়। সোনালি রঙের গোল থালার মতো একটা জিনিস। দপ্তরি চাচা একটা হাতুড়ির মতো কী দিয়ে যেন জোরে জোরে বারি দেয় আর কী সুন্দর একটা ঝংকার বাজতে থাকে। এসেম্বলি শেষে একে একে ওরা লাইন ধরে ক্লাসে ঢোকে।





৫।



প্রথম দিনে ক্লাসে তপুদের কিছুই পড়ানো হয়নি। রোল কল আর পরিচয় পর্ব চলেছে। তারপর সেকশন ভাগ করে দিয়েছে আরেক স্যার এসে। স্যারের নামটা এখনো তপু জেনে উঠতে পারেনি। তপুর রোল ১০৭, খ শাখায় পড়েছে ও। নতুন স্কুলে এটাও তপুর একটা হতাশার কারণ। ও ক্লাস ফোরে সপ্তম হয়েছিলো বার্ষিক পরীক্ষায়, আর এখানে কি না রোল হয়েছে ১০৭ ! এটা নিয়ে ও ওর আম্মুর সাথে টিভি দেখতে দেখতে ঘ্যানঘ্যান করতেই ওর আব্বু বললো –



আরে ইয়ং ম্যান একশো সাত থেকে একশোটা ফেলে দাও। দেখো সেই আগের সাতই হয়ে গেছে।



তপু বুঝে গেছে এর মাঝে ওর আব্বু-আম্মুকে স্কুলের ব্যাপারে কোনো নেতিবাচক কথা বলে যে লাভ হবে না! তাই ইদানীং আর কিছু বলে না। এমন কী বাসার সেলিনা বুয়াও বলেছে –



ইশ তোমাগো কী কপাল! ইশকুলে যাইতে পারো! আমরা তো হেই সুযোগও পাই নাই। কত্তো সোন্দর তোমার ইশকুল!



এর মাঝে আম্মু একবার ব্যস্ত থাকায় বুয়ার সাথেই ও স্কুলে গিয়েছিলো। তখন বুয়া দেখেছে ওর স্কুল টা। বাসায় আসার পর আম্মুর কাছে এসে কী প্রশংসা। এই বুয়াটাকেও এখন ওর কাছে খারাপ মনে হয়।



স্কুলের স্যারেরাও যে গালি দিতে পারে এটা ছিলো তপুর জন্য বিরাট বিস্ময়। সেদিন অঙ্ক ক্লাসে গোপাল বাড়ির কাজ না করে আনায় স্যার ওকে যে গালি দিয়েছে সেটা মুখে আনতেও তপু ভয় পায়। তাই বাসায় গিয়ে কাউকে কিছু বলেনি। শুধু কী গালি গোপালকে কয়েকটা বেতের বারিও দিয়েছে। সরকারী নিয়ম বোধহয় তপুদের এই স্যার মানেন না যে ছাত্রছাত্রীর গায়ে হাত তোলা যাবে না। ওর নাম গৌর গোপাল। কিন্তু শুধু স্যারই না যারা এই ক্লাসের যারা পুরনো তারাও ওকে গরু গোপাল বলে ডাকে। ও পরীক্ষায় ফেল করে আবারও ক্লাস ফাইভেই রয়ে গেছে। তপু এখনো বুঝে উঠতে পারছে না ওর ও কী এই নামে ডাকা ঠিক হবে কিনা। এই ছেলের আবার মুখ খারাপ। গতকালই হাসনাত নামের একজনকে একটা খারাপ গালি দিয়েছে, তারপর মারামারি করেছে। বলা তো যায় না আবার তপুকেও কখন মেরে বসে। স্কুলের এসব ব্যাপার ওর কাছে খারাপ লাগলেও তপুর কাছে এসবের অভিজ্ঞতা একেবারেই নতুন। উপরে উপরে ও নাক সিটকালেও কীসের যেন একটা আকর্ষণ এর মাঝে আছে ও বুঝতে পারে। মাত্র এক মাস পার হয়েছে তপুর এই স্কুলে। ও নিজ থেকে সেধে সেধে কারো সাথেই আগে কথা বলতে পারে না। তবে দীপ্ত, আশফাক আর তুর্যদের সাথে ও আপাতত এক বেঞ্চেই বসে। ওদেরকে ওর ভালোই লাগে। ওরা ক্লাসে খুব একটা চেঁচামেচি করে না, ক্লাসের পড়াগুলোও ঠিক ভাবে করে আসে। এর মাঝেই ও বুঝে গেছে এখানে স্যারেরা শুধু পড়িয়েই যায় কিন্তু হোম ওয়ার্ক চেক করে না, পড়াও ধরে না। তপুর মাঝে বেশ একটা নির্ভার ভাব কাজ করে। ডায়েরিতে নিয়মিত ক্লাসের পড়া তুলে আনলেও হোমওয়ার্কের খাতা গুলোতে স্যারদের কোনও সিগনেচার না দেখে ওর আম্মু কী কিছুটা হতাশ হয় কিনা ও বুঝতে পারে না। এই স্কুলটা তপুদের বাসা থেকে কিছুটা দূরে বলে ওকে বাসা থেকে ওর আম্মু একটা একশো টাকার নোট দিয়ে বলেছে খুব প্রয়োজন হলে যেন ও সেটা খরচ করে। টাকাটা ওর পেন্সিল বক্সে রাখা আছে। তপু মাঝে মাঝে টিফিন টাইমে টাকাটা বের করে দেখে। ও বুঝে উঠতে পারে না টাকাটা আসলে কী কাজে দরকার হতে পারে। বাসা থেকে ওর আম্মু টিফিন দিয়ে দিলেও তপুর সেসব খেতে ইচ্ছে করে না। তপু দেখেছে ওর ক্লাসমেটরা টিফিন খাওয়ার চেয়ে বাইরে বিশ মিনিট সময় খেলাধুলা করেই পার করে দেয়। তারপর ক্লাসে এসে নাকেমুখে টিফিন খেতে খেতেই স্যার চলে আসে কিংবা কখনো মিস। আজকে ও টিফিন বক্স খুলে দেখে ওকে নুডুলস দিয়েছে বাসা থেকে। এক চামচ খেয়ে ওর আর ইচ্ছে করে না খেতে। দীপ্তর চোখে চোখ পড়তেই বলে –



বাইরে মাঠে খেলবে ?



তপু চুপ করে থাকাতে আশফাক বলে চলো তাহলে আমরা ভেতরে যে ভলিবল খেলার জায়গাটা আছে ওখানে যাই।



এর মাঝেই অর্ক দৌড়ে এসে ক্লাসে ঢোকে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে –



জানস দোস্তো, এইস্কুলে না একটা ক্যান্টিন আছে। আমার আম্মু আমারে দশ টাকা দিছে। আমি গিয়া সমুচা আর পুরি খামু। পাঁচ টাকা পিস। তোরা খাবি?



অর্ক কাকে দোস্তো বলে ডাকলো তপু ঠিক বোঝে না। এই ছেলেটার মুখের ভাষা যেন কেমন। ইদানীং ও খেয়াল করেছে তপুকে তুই তুই করে ডাকে। তুই করে বললে নাকি বন্ধুত্ব বাড়ে। অর্কের সাথে ওর মোটেও বন্ধুত্ব করার ইচ্ছে নাই। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকেই ও রুম থেকে বের হয়ে যায়, বারান্দায় গিয়ে এক চক্কর ঘুরে আসে না হয় দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে গিয়ে ধুপধাপ লাফায়। তপুদের ক্লাসটা নিচ তলায় আর ক শাখাটা দুই তলায়, প্রথম যেখানে তপুরা বসেছিলো। দুই তলাটাই তপুর ভালো লাগে। বারান্দায় দাঁড়ালে পুরো স্কুলটা দেখা যায়। কলেজটা তপুদের ক্লাসের বিপরীতমুখী বিল্ডিঙে। তিন তলা। কলেজে ও শুধু ভাইয়াদেরই দেখেছে, কোনো আপুদের দেখেনি। একবার এক ভাইয়ার পাশ দিয়ে হেঁটে যাবার সময় তপু কেমন সিগারেটের গন্ধ পেয়েছে। এই বাজে জিনিস বড় হলেও কখনো তপু খাবে না ঠিক করেছে। ওর আব্বুও এই সিগারেট খাওয়া নিয়ে আম্মুর বকা খায়। তবে ওর আব্বু বাসায় বা তপুর সামনে সিগারেট না খেলেও ও আব্বুর রুমে দেখেছে ওয়ারড্রবের উপর সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার।



তপু উত্তর দেবার আগেই আশফাক অর্ককে বলে –



না, আমরা এখন স্কুলের ভেতরের যে ভলিবল খেলার মাঠ আছে ওখানে হাঁটবো।



অর্কও বলে – আমিও যামু। তোদের সাথে হাঁটুম। তার আগে চল ক্যান্টিনে যাই। সমুচা কিনি গা



দীপ্ত জানায় – আমি তো টাকা আনি নি বাসা থেকে। আশফাক বলে – আমিও।



এরই মাঝে অর্কের চোখ পরে তপুর টিফিন বক্সের দিকে। ও সামনে এগিয়ে এসে বলে –



তুই কী খাস রে তপু দেখি? ওরে রে নুডুলস ! আমার অনেক পছন্দের। ওর চোখ দুটো খুশীতে চকচক করে ওঠে। তুই তুই করে বলাতে তপু ভেবেছিলো অর্কের কথার উত্তর দেবে না। কিন্তু এর আগেই অর্ক তপুর বক্স নিয়ে নুডুলস খেতে শুরু করে।



অনেক মজা হইছে তো । আমার আম্মু খালি ঝোল ঝোল কইরা রান্না করে। ফ্যানের মতো লাগে খাইতে। ও চপচপ আওয়াজ করে তপুর নুডুলস খেতে থাকে।



এই অর্ক তুমি না ক্যান্টিনে গিয়ে খাবে বললা ? এখন আবার ওরটা খাচ্ছো কেন ? দীপ্তর কথায় ও চটপট জবাব দেয় –



তপু তো খাইবো না। কী রে খাবি ? ততক্ষণে অর্কর খাওয়া শেষ। চল ক্যান্টিনে যাই।



দুইতলার শেষ মাথায় তপুদের স্কুলের ক্যান্টিন। ক্লাস থেকে বের হবার আগে তপু ওর বক্স থেকে একশো টাকার নোট টা সাথে নিয়ে নেয়। তাই দেখে অর্ক বলে –



ভালোই হইলো সবাই মিল্যা মজা কইরা খাওন যাইবো। একটু খানি নুডুলস খাইয়া তোর পেট ভরে? এই লাইগ্যাইতো তুই এতো শুকনা।



অর্ক তুমি একটু সুন্দর করে কথা বলতে পারো না? তপুর কথাকে পাত্তা দেয়ার কথা ভাবে না অর্ক। নিজেই গিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে সবার জন্য একটা করে সমুচা অর্ডার করে আবার নিয়েও আসে। বলে –



চল এইবার হাঁটতে হাঁটতে খাই।সসও আনছি লগে। তপু সাধারণত বাইরের ভাজা পোড়া খাবার খায় না। অবশ্য খায় না বলার চেয়ে বলা ভালো ও ওর আম্মুর জন্য খাবার সুযোগ পায় না। আজকের সমুচা একটা খাবার পর ওর মনে হচ্ছিলো আরও একটা এনে দিলেও ও খেতে পারবে।



তপুদের স্কুলের ভেতরে ঢুকতেই যে মাঠ সেটা দেখে বোঝার উপায় নাই তিন দিকের ঘেরাও করা বিল্ডিং এর পেছনেও বড়সড় একটা ভলিবল খেলার জায়গা সহ আরও নতুন বিল্ডিং করা হয়েছে। এক পাশের নিচ তলা থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত নার্সারি আর প্লে’র বাচ্চাদের ক্লাস আর আরেক পাশের তিন তলা জুড়েও ক্লাস রুম । এর মাঝে তৃতীয় তলায় বোধ হয় এই স্কুলের হেড স্যারের বাসা। এটা অর্কের ধারণা। বারান্দায় গামছা, লুঙ্গি, জামা কাপড় ছড়ানো দেখে ও বলেছে। দীপ্ত, আশফাকও সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়েছে। যদিও সেখানে গিয়ে কাউকে বল খেলতে দেখা যায় না। বড় ক্লাসের ছেলেদের ক্রিকেট খেলতে দেখা যাচ্ছিলো ভলিবল খেলার জায়গাটায়। ওদের ক্রিকেট খেলতে দেখে তপুর অতৃপ্তিটাও বেড়ে যায় খেলতে না পারার জন্য। একদিন ওর আব্বু কথায় কথায় বলেছিলো ওকে বিকেএসপিতে ভর্তি করিয়ে দিবে। আর তপুর খেলাধুলার জায়গায়ই তো নাই, বাসার আশেপাশে মাঠ নেই, বন্ধু নেই। খেলবে টা ও কার সাথে।



ইশ ঘণ্টা পড়ে গেছে। টিফিন টাইম শেষ। দীপ্ত ডাক দেয় তপুকে। চলো, ক্লাসে যাই। আজকে কিন্তু গাইড ক্লাস। কার কার কপালে যে মার আছে কে জানে।



এই প্রথম তপুর মাঝে একটু অস্থিরতা লক্ষ্য করা যায়। ওর মনে হতে থাকে আজকে টিফিনের সময়টা খুব দ্রুতই যেন শেষ হয়ে গেলো। মাত্রই ক্রিকেট খেলাটা উপভোগ করতে নিয়েছিলো। তপু যে একেবারেই খেলতে পারে না তা নয়। ওর নানু বাড়িতে গেলে ওখানে ওর মামাতো, খালাতো ভাইদের সাথে ও খেলতে পারে। ওরাও তপুদের মতো ছুটিতেই বেড়াতে যায়। তপু ডান হাতি ব্যাটস ম্যান। বড় কারো সাথে খেলতে গেলে ও ভালো রান করতে পারে না বল শুধু সুইং হবার কারণে। কারণ ওর কাজিনদের উচ্চতা ওর চেয়েও বেশি।



ক্লাসের দিকে যেতে যেতে তপু বলে – টিফিন টাইম এতো কম কেন এই স্কুলে। খেলাটা দেখতে পারলাম না।



খেলা দেখার অনেক টাইম পাবে। স্কুলে তো ক্রিকেটেরও কোচিং হয়। বেলাল স্যার করায়।



আশফাকের কথাটা শুনে তপু লাফ দিয়ে ওঠে। তাই নাকি ? কখন করায় ?



বিকালে মনে হয়। কয়টার সময় সেটা অবশ্য জানি না। তাড়াতাড়ি ক্লাসে চলো, আজকে গাইড ক্লাস আছে কিন্তু!



আমি ভর্তি হমু তাইলে। অর্কের কথা শুনে এই প্রথম তপু বিরক্ত হয় না। হেসে বলে – আমিও হবো।



এই গাইড ক্লাসটা এলেই তপুর পা কাঁপে। পেটও কাঁপে একটু একটু। গনি স্যার অনেক রাগী। গত বছর গৌর গোপালকে অনেক জোরে নাকি মেরেছিলেন পিঠে। এক্সরে রিপোর্টে এসেছিলো হাড়ে ফ্র্যাকচার হয়েছিলো। গত সপ্তাহে গোপাল ওর ডায়েরিতে ওর বাবা-মায়ের সিগনেচার করিয়ে আনেনি বলে স্যার ডায়েরিটা ওর দিকে ছুঁড়ে মারতে মারতে বলেছিলেন –



কি রে গত বচ্ছরের মাইরের কথা ভুইল্যা গেছস ?



আর আজকে সেই স্যারেরই ক্লাস। এই স্কুলের অন্যান্য ব্যাপারের সাথে মোটামুটি কিছুটা অভ্যস্ততা আসলেও এই স্যারের ক্লাসে তপুর পেট ভয়ে গুটগুট করে ডেকে ওঠে। তপুর ডায়েরিতে সবসময়ই ওর আম্মুর সিগনেচার থাকে, সব সাবজেক্টের খাতাও ও নিয়ে আসে, বইও। যদিও স্কুল থেকে এবার ও মাত্র দুটো বোর্ড বই পেয়েছে, বাকি বই নাকি পরে দিবে। জানুয়ারি মাস শেষ হয়ে গেলো, কবে কে বাকি বই পাবে কে জানে। তপুর একমাত্র ফুপি আবার কুমিল্লার একটা স্কুলের হেড মিস্ট্রেস। ফুপু ওকে জানুয়ারির এক তারিখের আগেই এক সেট নতুনবই পাঠিয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু ও সে বই স্কুলে আনে না। সেগুলো দেখলে যদি স্কুল থেকে নতুন বই না দেয় তাই। তপুর একমাত্র ভয় ও এখনো স্কুলের ড্রেস পায়নি টেইলার্সের দোকান থেকে। তাদের নাকি অনেক চাপ, আর সপ্তাহ খানেক লাগবে ড্রেস বানিয়ে দিতে। গত ক্লাসেই স্যার বলেছিলেন –



সামনের ক্লাসে যদি দেখি স্কুল ড্রেস পইড়া আসস নাই দেখিস মাইরা পিঠের ছাল তুইল্যা দিমু।



অর্ক, হাসিব, বকুল, তিন্নি সহ এ ক্লাসে মোট সাত জন নতুন ভর্তি হয়েছে, যাদের কারোই আপাতত স্কুল ড্রেস নেই। মার তপু একলা খাবে না, খেলে ওরাও খাবে। অর্ক ফিসফিস করে তপুকে জানায় ওর পেছনের বেঞ্চ থেকে –



ভয় পাইস না দোস্তো। শীতের দিন না , সোয়েটারের উপর দিয়া বেতের বারি বেশি জোরে লাগবো না।



অর্কর কথা শুনে তপুর একটু একটু বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে স্যার পেটালেও তেমন ব্যথা ও পাবে না। পরনে জিন্সের প্যান্ট। পায়ে বারি দিলেও ব্যথা লাগার কথা না। তপু হিসাব করে দেখেছে সামনের দিকে মেয়েদের তিনটা বেঞ্চ আর আর অপর সারির চারটা বেঞ্চ সব ডায়েরি চেক করে তপুদের পঞ্চম বেঞ্চে স্যার আসতে আসতে ততক্ষণে ঘণ্টা পড়ে যাবার কথা। ও মার খেলে শুধুমাত্র স্কুল ড্রেসের জন্যই খেতে পারে।



আমাগো ক্লাসের পিছন দিক দিয়াও যদি একটা দরজা থাকতো তাইলে পলাইয়া যাইতাম গা।



অর্কর কথা শুনে তপুর গায়ে কাঁটা দেয়। ও কল্পনা করার সাহসও পায় না স্যারের মারের ভয়ে ও ক্লাস থেকে পেছনের দরজা দিয়ে চুপি চুপি বের হয়ে যাচ্ছে। এই স্কুলে এসে কতো নতুন নতুন ব্যাপারই ওর জানা হচ্ছে। পড়াশোনা, মার খাওয়া কিংবা কাউকে মার খেতে দেখা, ক্যান্টিনে গিয়ে খাবার কিনে খাওয়া, ক্রিকেট কোচিং সব কিছুতেই কেমন একটা অপার স্বাধীনতা অনুভব করে। ও ঠিক করে রাখে আজকে ওর আম্মু ওকে নিতে আসলে ক্রিকেটের কোচিং এ ভর্তি করে দিতে বলবে।



ঐ তোরা এতো ফিসফাস কইরা কি কস ? কতক্ষণ ধইরা দেখতাছি কথা কইতাছস। পিঠে দুইটা বারি পড়লে ঠিক হইয়া যাবি খাড়া !



গনি স্যারের ধমক খেয়েও এবার আর তপুর ভেতরে খুব একটা ভাবান্তর হয় না। ওর আব্বুর কথা মনে পড়ে কিছুদিন আগে বলেছিলো - স্কুলে মাঝে মাঝে মার খাওয়া খারাপ না। এই অভিজ্ঞতাও নাকি থাকতে হয়। হাতের ঘড়িটার দিকে তাকায় তপু। দপ্তরি তাপস চাচা আর মিনিট দশেক পরেই ঘণ্টা বাজাবে। স্যারের আরও দুই বেঞ্চ ডায়েরি চেক করা বাকী। এর মাঝেই যেন ঘণ্টা টা পড়ে যায় মনে মনে এই কথাই জপতে থাকে তপু। ওর নিজের এই পরিবর্তনে ও অবাক হলেও এই মুহূর্তে এমনটাই ওর কাছে স্বাভাবিক লাগতে থাকে যেন। ওই তো স্যার এগিয়ে আসছে ওদের বেঞ্চের দিকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ও দেখে ঘণ্টা পড়তে আর মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড বাকী!



সমাপ্ত













মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:০৯

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
অপর্ণা মম্ময়,
তপুদের গল্প তপুমন নিয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম। নিরালা মেজাজে বিনীত স্ফুটন। তপুদের চিন্তাপ্রণালী অমনি দাগে। অনুভূতি এবং মাংসপেশি উভয়ের স্বাধীনতা বিঘ্নিত করে সৃষ্টিশীলতার অবাধ বিচরণ সম্ভব নয়।

তপুদের জন্য শুভ কামনা রইলো।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তপুমন নিয়ে অনেক ভাবনা আসলেও লিখতে বসলে তপুর আম্মুর ভাবনার মতো চলে আসে যাতে আসলেই শেষ পর্যন্ত স্বাধীন থাকা যায় না!

শুভকামনা রইলো

২| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:১৪

মামুন রশিদ বলেছেন: গল্প নয়, তপুর মাঝে যেন নিজের সন্তানকেই দেখছি । স্কুলের বাস্তব চিত্রটা গল্পে তুলে এনেছেন সুন্দর ভাবে । বিশেষ করে ক্লাস ফাইভের একটা বাচ্চার মনোজগত আর পছন্দ অপছন্দগুলো উঠে এসেছে চমৎকার ভাবে ।

আহারে, বই আর সিলেবাসের বোঝা টানা ছেলেগুলোকে তাদের মাস্টার মশাইরা একটু যদি বুঝতো ।

বাচ্চাদের নিয়ে আগেও আপনি কাজ করেছেন । ওদের সাইকোলজি আপনি খুব ভালো পড়তে পারেন । তাই ওডের নিয়ে আপনার লেখালেখি চলতে থাকুক । পাশাপাশি আমরা যারা বড় হয়ে গেছি, তাদের কথাও একটু মাথায় রেখে নিয়মিত লেখালেখি চালিয়ে যান ।

শুভকামনা অপর্ণা ।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: বই আর সিলেবাসের বোঝা যে কতটা ভারী সেটা নিজের ছেলের টা মাঝে মাঝে টানার সুযোগ হয়, তখন বুঝি।

কিছু কিছু লেখার আইডিয়া আসে কিন্তু সময় সুযোগ মেলে না বলে লেখা হয়ে ওঠে না। আর বড়দের জন্য লেখালেখি চলবেই। হাহাহহা

আপনার জন্যও শুভকামনা মামুন ভাই

৩| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:১৭

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: হা হা হা B-)

আপা, ব্যপক মজা পেলাম তোমার লেখা টাটকা গল্পটা পড়ে। মনের চোখে দেখছিলাম ক্লাস ফাইভের পিচ্চিদের দিনলিপি। খুব ভালো লাগলো।

তপুদের জন্য রইল অনেক শুভকামনা :)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তোকেও অনেকদিন পর দেখে ভালো লাগলো। গল্পটা জানুয়ারিতে লেখা।

ভালো থাকিস

৪| ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৩৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

//অন্ধবিন্দু বলেছেন:
অপর্ণা মম্ময়,
তপুদের গল্প তপুমন নিয়ে পড়ার চেষ্টা করলাম। নিরালা মেজাজে বিনীত স্ফুটন। তপুদের চিন্তাপ্রণালী অমনি দাগে। অনুভূতি এবং মাংসপেশি উভয়ের স্বাধীনতা বিঘ্নিত করে সৃষ্টিশীলতার অবাধ বিচরণ সম্ভব নয়।//



যেমন গল্প, তেমন তার মন্তব্য।

ধন্যবাদ, অন্ধুবিন্দু :)
অভিনন্দন, অপর্ণা মম্ময় :)

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ মইনুল ভাই । ভালো থাকবেন

৫| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো। অনেক ডিটেইল লেখা। একটা জায়গায় ছোট্ট একটু ভুল আছে। পুরা গল্পটা তৃতীয় পুরুষে লেখা।

এ'প্লাস এসেছে পিএসসি আর জেএসসি পরীক্ষায় তোমার হিসাব আছে?
বলে আব্বু আমার দিকে হাসি হাসি মুখে তাকিয়ে আমার চুলটা নেড়ে দেয় একটু।

এখানে আমার এর জায়গায় তপুর হবে। শুভকামনা।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ঠিক করে দিয়েছি উত্তম পুরুষের ব্যাপারটা। আমার তখন স্বগোতোক্তি লেখার অভ্যাস যাচ্ছিলো না কিছুতেই, সাদিয়ার জন্যই নামপুরুষে লেখার প্র্যাকটিস শুরু করেছিলাম।

আপনার জন্যও শুভকামনা রইলো

৬| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১০

সুলতানা সাদিয়া বলেছেন: রাগ করছি। গল্প পোস্ট দেয়ার টাইম পাইলা আর আমারে দেখতে আসলা না। গল্পটা আমি টাটকাই পড়ছিলাম...।তাই পইড়া রাগ কমে নাই।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: গল্পটা কখন পোস্ট দিছি দেখো, ঐ টাইমে আমি লাঞ্চ সেরে একটু রিফ্রেশ হচ্ছিলাম অফিসে । রাগ করো সমস্যা নাই, আমাকেও দেখতে আসো নাই তুমি। রাগ কমলে আবার আইসো। হাহহাআহ

৭| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯

ডি মুন বলেছেন: এখনো বাচ্চাদের মতো হাত ধরে ধরে হাঁটো কেন? ক্লাস ফাইভের ভর্তি পরীক্ষা দিতে এসেছ, আর ছোটটি নেই কিন্তু তুমি! ----- আম্মুটা কি নিষ্ঠুর !!!!!



এই স্কুলে ভর্তি হইয়া নেই,দেখিস তোরে চিপায় নিয়া মারমু। শয়তান পোলা ... ---- শয়তান পোলা !!!!!



ক্লাসরুমে ভর্তি পরীক্ষার সময় অর্ক যা যা করেছে সেটা আন্টিকে যদি তপু একবার দেখাতো পারতো তাহলে বুঝতো কতো পাজি এই ছেলে। এই ছেলে মহা দুষ্টু,কেমন শিস মেরে একবার তপুকে জিজ্ঞেস করেছে -
দোস্তো,শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কবে রে !
--- হুম আসলেই তো ছেলেটা খুব পাঁজি ।


তপুর সমাপনী পরীক্ষা বলেই ছাড়ছি। ওকে নিয়ে স্কুল,কোচিং,বাসায় পড়ানো অনেক সময় দিতে হবে,তুমি তো সময় দিতে পারবে না। তাই কী আর করা! --- বাহ, তপুর আম্মু তো ভীষণ ভালো।


শোনো,প্রতি ক্লাসের শেষে একটা করে ঘণ্টা বাজাবে। এর মানে হচ্ছে ক্লাসের সময় শেষ হয়েছে। এরপর আরেকজন শিক্ষক ঢুকবেন,বুঝেছো ? ---- এ জায়গাটুকু অনাবশ্যক মনে হয়েছে। কারণ ক্লাস ফাইভের একটা ছেলের এটা জানারই কথা। মনে করিয়ে দেয়াটা অপ্রয়োজনীয়।


তপুর রোল ১০৭, খ শাখায় পড়েছে ও। নতুন স্কুলে এটাও তপুর একটা হতাশার কারণ। ও ক্লাস ফোরে সপ্তম হয়েছিলো বার্ষিক পরীক্ষায়, আর এখানে কি না রোল হয়েছে ১০৭ ! ---- এই জিনিসটা সত্যিই পীড়াদায়ক। আমি যখন ক্লাস ফাইভে ফার্স্ট হয়েছিলাম তখন আমাকেও তপুর মতো স্কুল চেঞ্জ করতে হয়েছিল :(


এরই মাঝে অর্কের চোখ পরে তপুর টিফিন বক্সের দিকে। ও সামনে এগিয়ে এসে বলে –

তুই কী খাস রে তপু দেখি? ওরে রে নুডুলস ! আমার অনেক পছন্দের। ওর চোখ দুটো খুশীতে চকচক করে ওঠে। তুই তুই করে বলাতে তপু ভেবেছিলো অর্কের কথার উত্তর দেবে না। কিন্তু এর আগেই অর্ক তপুর বক্স নিয়ে নুডুলস খেতে শুরু করে।
----- বেচারা তপু !!!!

গত ক্লাসেই স্যার বলেছিলেন –

সামনের ক্লাসে যদি দেখি স্কুল ড্রেস পইড়া আসস নাই দেখিস মাইরা পিঠের ছাল তুইল্যা দিমু। --
এরকম ভয়ে আমিও দিন কাটিয়েছি।




কোমলে কঠোরে মেশানো মা সামাজিক প্রতিযোগিতার এই বাস্তবতায় তার সন্তানটিকে সঠিকভাবে শিক্ষিত করার প্রয়াসে তাকে একটি 'গিনিপিগে' রুপান্তরিত করেছেন।

শিশুদের মনোজগত পর্যবেক্ষণের ক্ষমতা নিঃসন্দেহে প্রশংসা করার মতো। খুব ছোট ছোট বিষয় তুলে এনেছেন যত্নের সাথে।

আর শেষ লাইনটা অসাধারণ।

ওই তো স্যার এগিয়ে আসছে ওদের বেঞ্চের দিকে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ও দেখে ঘণ্টা পড়তে আর মাত্র ত্রিশ সেকেন্ড বাকী!

সুন্দর সমাপ্তি।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানবেন। ভালো থাকা হোক।

০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তপুকে যাতে গিনিপিগ না হতে হয় সেজন্যই তো তপুর বাবা-মা তাকে এমন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো যাতে সে সাবলম্বি হতে পারে চিন্তায়, কাজে আর এ কারণেই তো মা বলল -- হাত ধরে ধরে হেঁটো না।

নিজের ছেলেকে নতুন স্কুলে যখন ভর্তি করাতে যাই আমি নিজেই এলোমেলো হয়ে টেনশনে পড়ে যাই ছুটি শেষে ওকে খুজে পাব তো ! হাহাহা । হুম এটা ঠিক নতুন স্কুল মানেই নতুন রোল নাম্বার, এতার একটা কষ্ট থেকেই যায়। আমিও ক্লাস সিক্সে নতুন রোল পেয়েছিলাম ।

তপুর আগের স্কুলে ঘণ্টা বাজাবার সিস্টেম ছিল না, ঘড়ি ধরে সব নিয়ন্ত্রিত হত শব্দহীন ভাবে, তাই তপুকে মনে করিয়ে দেয়া।

আপনার সুন্দর বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ মুন।
শুভকামনা রইলো

৮| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪৮

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:

অনেকদিন পর আপনার গল্প পড়লাম।
গল্পে কিছু জায়গায় অতীতে ও ফিরে গেলাম।
শৈশব বেলা, স্কুল :)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৬

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: শৈশব আমাদের বেশিরভাগদের জন্যই অনেক আনন্দময় ব্যাপার

৯| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:১৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আমার স্কুলজীবন সরকারিতেই কেটেছে, তপুর সাথে প্রায় সব ক্ষেত্রেই কানেক্ট করতে পারলাম। দারুণ ডিটেইলিং।

উপভোগ করেছি :)

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ শঙ্কু সাহেব

১০| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:০৮

সুলতানা সাদিয়া বলেছেন: রোগী কে আমি না তুমি, যে তোমারে দেখতে যামু, রাগ পড়ে নাই! নতুন লেখা তাড়াতাড়ি শেষ করো। দেখি পইড়া রাগ পড়ে নাকি!

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: লেখালেখিতে বেশি মন নাই, সংসার আর জীবিকা নিয়া ব্যস্ততা যাচ্ছে। নতুন লেখা একটা তো পড়ছ, আর ওইটা শেষ হয় নাই মনোলগ টা

১১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৬

পার্সিয়াস রিবর্ণ বলেছেন: খুবই ডিটেইলস ব্যাখ্যা ...এবং অনেকাংশেই ছোটবেলার স্কুল লাইফের সাথে মিল পেলাম ।

খুব ভালো লাগলো । :-B

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ পার্সিয়াস

১২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৮

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: নামটা দেখেই প্রথমেই মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর তপুর কথা মনে পড়ে গেল। লেখনীটা বার বার উনার কথা মনে করাচ্ছিলো, পজেটিভ অর্থে বললাম।

আমার দঃখ এক স্কুলেই পুরো স্কুল লাইফ কেটেছে, ফলে নতুন স্কুলের এই মিশ্র অনুভূতি থেকে বঞ্চিতই থেকে গেলাম। :(

গল্পে অনেক ভালো লাগা এবং +++।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: লেখা শেষ হবার পর আমার ছেলে ঘ্যান ঘ্যান করছিল তপুর জায়গায় ওর নাম কেন দেই নাই। পজিটিভ অর্থে বলা কথা পজিটিভ ভাবেই নিয়েছি।

আমারও স্কুল নিয়ে তেমন ভ্যারিয়েশন নাই। স্কুল পালানোর মজা বা ক্লাস ফাকি দেয়ার মজা কলেজে বা ইউনিভারসিটিতেও বুঝে উঠতে পারি নাই। ম্যাড়ম্যাড় এ একটা ব্যাপার।

ধন্যবাদ আপনাকে

১৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৩

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
ভাল লাগলো কিশোর উপযোগী উদ্দ্যোগে ৷ এ বয়সীরা মনে হয় এমন বিস্তৃতি বর্ণনাই চায় ৷ এখনকার ছেলেদের চোখের দৃষ্টিভঙ্গিটাই তুলে ধরেছেন সুন্দর করে ৷

শেষটায় উৎকন্ঠা রয়ে যায় ৷ তারপর জানার আগ্রহ ও মতান্তরে তর্ক চলবেই ৷

কিছু জায়গায় বারবার 'ওর' ব্যবহার করে মনে হয় তপুর দৃষ্টিভঙ্গিতে লেখাতে খটকা রয়ে যায় ৷ ওদের দৃষ্টিতেই লিখলে ভাল মানে অনেক গভীরে ছোঁয়ে যাবে ৷ এমনিতে অনেক ভাল লাগলো ৷ সবাই পড়ে আনন্দ উপভোগ করবে নিশ্চয়ই ৷

মঙ্গলার্থে.........

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: যে কোনো লেখা লিখতে বসলেই ছেলের দাবী থাকে ওকে নিয়ে যেন আগে লিখি, লেখার লাইনে লাইনে আমার ছেলে তার নিজেকে খোঁজে। ওদের জগতের অনেক কিছুই আমার কাছে রহস্যময় লাগে, ওদের যে ব্যাপারটা আমাকে আকৃষ্ট করে বেশি সেটা হচ্ছে ওরা সহজেই পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নেয়, মনে নিয়ে মেনেও নেয়।
আমার উত্তম আর নামপুরুষ নিয়ে লেখায় মাঝে মাঝে সমস্যা তৈরি হয়ে যায় কারণ শুরুটাই উত্তম পুরুষ দিয়ে হয়েছিলো বলে।
শুভকামনা রইলো আপনার জন্যও।

১৪| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: চমৎকার!

৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.