নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনের কোথাও একটি ছাপ রেখে যেতে চাই

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।

অপর্ণা মম্ময়

চিত্রদীপ জ্বেলে রেখো ময়ূখ পিদিম; রাত্রি-কথায় বেঁধে নেবো ভোরের খোঁপা।

অপর্ণা মম্ময় › বিস্তারিত পোস্টঃ

নেউপিপি অথবা ডুবসাঁতার

০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:০৬

যেদিন আমার ছয় তলার ফ্ল্যাটের বারান্দায় বাড়িওয়ালী গ্রিল লাগাইলো ঐদিন থেইক্যাই আমার সব স্বাধীনতা মনে হয় গেলো গা। শুনতে আজব শুনাইলেও এইটাই সত্যি। এই জিনিসটা আমার একলা মনে হইলে না হয় হইত কিন্তু চারু ভাবীর কাছেও একই রকম লাগছিলো আমার বারান্দায় গ্রিল বসানের পর। বাড়িওয়ালী ভুটকি বেটিরে মনে মনে আমি বহুতবার গালিও দিছি হারামজাদি ভুটকি মাগী বইলা। আমি যে এলাকায় থাকি সেইখানে চারু ভাবী ছাড়া আমার পরিচিত কেউ নাই। চারু হইলো আমার জা, ভাসুরের বউ। হিসাবে কওন যায় এইটা ভাবীর বাপের বাড়ির এলাকা। আমার জামাই আবার তার বড় ভাবী চারুরে পীরের মতো মান্য করে, তাই আমার এইখানেই বাসা ভাড়া করতে হইছে। নাইলে বাপের বাড়ি সিলেটেই থাকতাম। মনটা আগে ঐখানেই পইড়া থাকতো কিন্তু বাস্তবতা মাইন্যা বিয়ার পর মাইয়াগো জামাইএর কথাই হুনন লাগে নাইলে ভাত-কাপড়ের জোগান পাইতে মুশকিল হইয়া যায়। অশিক্ষিত মাইয়া গো কপালে যা থাকে আর কি। হ, এইটা ভাবতে আর কইতে এহন কষ্টই লাগে। ম্যাট্রিক পাশটাও করতে পারি নাই, এর আগেই তো পলাইয়া যাইয়া সবুজরে বিয়া কইরা ফালাইলাম। আমার আব্বায় ব্যবসা করনের লাইগা মাঝখান দিয়া অনেক বছর ঢাকা আছিলো সবুজগো এলাকায় বাসা ভাড়া লইয়া। অর লগে পরিচয়ডা হেই সময়েই হইছিলো। সবুজ হইলো আমার জামাই। ঢঙ মং কইরা স্বামী, হাবি, হাসব্যান্ড কইতে আমার ভাল্লাগে না। যাই হোক, আমার ছয় তলার এই বাসায় চারু ভাবী প্রায় দিনই তার অফিস শেষ কইরা বাসায় ফিরার আগে আমার এইহানে হইয়া যাইত। বারান্দায় চেয়ার বইসা চা হাতে নিয়া পা দুইটা রেলিং বরাবর তুইল্যা দিয়া কতক্ষণ চোখ বন্ধ কইরা দক্ষিণের টাটকা হাওয়ার গন্ধ নিতো। তারপর কইতো,



- জানো পাপিয়া তোমার বাসায় শুধু এই কারণেই আমি আসি। এই সময়টুকু চা উপভোগ করতে করতে এই যে চুপ করে কিছুক্ষণ একলা বসে থাকি, এই সময়টাই আমার কাছে খুব মূল্যবান!



চারু ভাবী মাঝে মাঝে কেমন কইরা জানি বইয়ের ভাষায় কথা কয়। সে যে ভাষাতেই কথা কউকগা, সে আমার বাসায় আইলে আমারও ভাল লাগতো। ঐ সময়টায় আমার মা আমারে উপদেশ দিতে পারতো না আর জামাইও ফোন কইরা কইরা বিদেশ থেইকা জ্বালাইতো না। তাই আমি চাইতাম ভাবী আরো বেশি সময় আমার বাসায় থাকুক।



ক্যান জানি বৃহস্পতিবার দিনটা আইলে আমার অনেক আনন্দ লাগে। যদিও সবুজ আমারে এইটা নিয়া অনেক কথা শুনায়। ওর শুনানিতে আগে আমার গায়ে লাগতো। এহন আর লাগাই না। আগে ওর কথায় আমার শইল্যে এমন ফোস্কা পড়তো যে আমি একবার সুইসাইড করতে গেছিলাম। সেই সময় আমি চারু ভাবীর বাপের বাড়ির পাশের বাসায় ভাড়া থাকতাম। আমার ঐ সুইসাইডাল ব্যাপার নিয়া ভাবীর আর তার বাপের বাড়ির মানুষজনের অনেক বাজে পরিস্থিতিতে পড়তে হইছিল। বালের আত্মসম্মান। এইদিকে আমি মইরা যাইতাছি হেইদিকে কোন হুঁশ নাই ভাবীর মা -বাপ অনেকেই আমার অনেক সমালোচনা করছিলো এইগুলি আমি পরে সুস্থ হইয়া শুনছি। ভাবী তেমন কিছু কয় নাই, সে অনেক ঠাণ্ডা মাথার মানুষ। যখন আমার মা, ছোট ভাই বইন , আমার পোলা আর আমার দাদাভাই লইয়া হা-হুতাশ কান্দাকান্দি করতাছে, কেমনে হাসপাতালে নিবো, ঐ সময় ভাবী আমারে কইছিলো ,



তোমাকে একটা চড় লাগাতে ইচ্ছা করছে। আগে সুস্থ হয়ে নাও, বাড়িতে ফিরো, তারপর তোমাকে ধরবো।



আমার সেই তন্দ্রা আর অজ্ঞান অবস্থার কিছু কিছু স্মৃতি এখনো খুব স্পষ্ট। আমি সেডিল, নকটিন হেনতেন আরো বহুত পদের ওষুধ দশ দোকান ঘুইরা ঘুইরা দুইদিনে কিন্যা জমাইছিলাম। একটা ফার্মেসির নাম মনে আছে, রাদী ফার্মেসি। আমি না হয় আবেগে পইড়া, অভিমানে পইড়া মরতে চাইছিলাম কিন্তু ঐসব হারামজাদারা ওষুধ ক্যান বেচবো। রাদী ফার্মেসিতেই আমি সুস্থ হইয়া আরেকবার গেছিলাম, স্যানেটারি ন্যাপকিন কিনতে। বদমাইশ দোকানদারটা আমার দিকে ড্যাবড্যাবাইয়া চাইয়া আছিলো, মন চাইছিলো কইতে, " কি মরি নাই দেইখ্যা অবাক হইতাছস ? জুতাইয়া গাল লাল বানাইয়া দিমু" কিন্তু কইতে পারি নাই। আত্মহত্যার করতে চাওয়ার কারণ অন্যগো চোখে বিশাল কিছু না হইলেও যখন মনের মইধ্যে এই জিনিসটা কাজ করে, যারে ভালবাইস্যা বিয়া করলাম, নিজের ক্যারিয়ার নিয়া ভাবলাম না হেয় বিদেশ যাইয়া উঠতে বইতে এত শাসন আর মানসিক অত্যাচার করবো ক্যান, দেশে আইলেও মাঝে মাঝে গায়ে হাত তুলবো ক্যান, সন্দেহ করবো ক্যান আর আমার মায়রে নিয়া 'চ' শব্দে গালি দিয়া কথা কইবো ক্যান! রোজই গালি শুইন্যা অভ্যাস হইলেও সেইদিন ক্যান জানি নিজেরে বুঝাইতে পারলাম না। নিজেরে সবচেয়ে দুঃখী আর ফান্দে পড়া পাখি মনে হইলো আর খাইয়া ফালাইলাম এত্তোডি ঘুমের ওষুধ, আগ পাছ কিছুই ভাবলাম না। পরে চারু ভাবী কইছিলো,



তুমি এতো গাধা ক্যানো ? আত্মহত্যা কি মানুষ দুই তিন গ্লাস হারপিক, ৪০/৫০ টা ঘুমের ওষুধ আর র্যা টম খেলেই করতে পারে? খুব সহজ কিছু উপায় আছে, কাজে লাগাতে পারলে দেখবে ফল পাবে। কিন্তু ফল পেলে তোমাকে অনেকদূর চলে যেতে হবে।



বইলা ভাবীর সে কি হাসি। সে পাগলের মত হাসতাছিলো। ক্যান জানি মনে হইছিলো আসলে ভাবীই এরকম আত্মহত্যা করনের মত চিন্তাভাবনা প্রায়ই করে। ভাবীরে লইয়া আমার ভাবোনের তেমন শখ নাই। কিন্তু কি করমু, আমার জীবন, বর্তমান অবস্থা সব তার আশপাশ ঘিরাই চলতাছে। না চাইলেও আমি অনেক সময় তারে অস্বীকার করতে পারি না। হেরে কোন কোনো সময় অনেক আপন লাগে কিন্তু আপন লাগলেও ঐ জায়গাটায় কেমন জানি একটা ফাঁকা জায়গা থাইক্যা যায়। আমি ঠিক বুঝাইয়া কইতে পারতাছি না।



ভাবী আমারে কইছিলো, সবসময় ক্যানো চাও অন্যের উপর ভরসা করতে, তোমার খারাপ লাগলে সেই খারাপ লাগাটা আরেকজনে এসে কমিয়ে দিবে, কারো সঙ্গ ক্যানো কামনা করো সবসময়? একটু নিজেকে সময় দাও না ক্যানো!

নিজেরে ক্যামনে সময় দিতে হয় আমি জানি না। আমার ভাবীর মত প্যানপ্যাইন্যা গান শুনতে ভাল্লাগে না, দুই পাতা বই পড়ার ধৈর্য নাই। আমার হিন্দি গান ভাল্লাগে, আমার শপিং করতে ভাল্লাগে , আমার ফুচকা চটপটি, আইসক্রিম আর ফ্রাইড চিকেন খাইতে ভাল্লাগে। ভাবী কয়- তাইই না হয় করো। সমস্যা কি!



ভাবীরে ক্যামনে বুঝামু আমার সমস্যার কথা। হের জামাইয়ের মত তো আমার জামাই আমেরিকা বইয়া এতো ট্যাকা কামায় না। আর কামাইলেও আমারে মাইপ্যা মাইপ্যা ট্যাকা দেয়। হারামীর জাত একটা। আমার জন্মদিনে চারু ভাবী আমারে একটা ডায়েরি কিন্যা দিছে, সুন্দর কতগুলি কলম দিছে আর মোভেন পিকে নিয়া আইসক্রিম খাওইয়াছে। এইসব কিন্যা না দিয়া যদি আমারে চৈতি থেইক্যা দুইটা জামা কিন্যা দিতো ! শুইন্যা ভাবী হাসছে, কইছে - কিনে দিবো।



আমার মনের জোর মনে হয় কম। নাইলে আমি এতবার একই কথা শোনার পরেও ক্যান নিজেরে নিয়া কোনো পজিটিভ ভাবনায় যাইতে পারি না। চারু ভাবী আমারে এতবার কইছে -

পাপিয়া তোমার সময় না কাটলে তুমি প্রয়োজনে তোমার ছেলের স্কুলে যাও। ওকে দিয়ে আসবে, নিয়ে আসবে। গার্ডিয়ানদের সাথে কথা বলো, টিচারদের সাথে পরিচিত হও। সামিন তো মাত্র ক্লাস টু তে পড়ে, অন্তত ওর পড়াশুনাটা নিজেই ওকে করাও, কেন বাইরের টিচারকে দিয়ে পড়াচ্ছ!

কিন্তু ভাবী যে ভালো উদ্দেশ্য নিয়া কথাগুলি আমারে কইছিলো তার মইধ্যে আমি কিছু খারাপ ব্যাপারও কইরা ফেলছি। সামিনের স্কুলের দুইজন গার্ডিয়ানের লগে আমার পরিচয় হইলো; একজনের নাম দোলা আরেকজনের নাম নিশি। দুইজনের একজন এক প্রভাবশালী নেতার গার্ল ফ্রেন্ড, খারাপ কইরা কইলে নিশি হইলো ঐ নেতার রক্ষিতা। নিশি অনেক স্টাইলিস্ট মাইয়া। ওরে দেইখা আমিও আইজকাইল একটু একটু স্টাইল ধরছি আমার পোশাকআশাকে, কথাবার্তায়। আজাইরা কয়েকটা ইংরেজি ওয়ার্ড ইউস করি সময়ে অসময়ে। আর দোলা হিজাব, বোরকা পিনলেও ও ওর দেবরের লগে পরকীয়া করত, ওর জামাই বলে সিক, ইম্পোটেন্ট না জানি কি বলে এই কারণে। ভাবী আমার মুখে প্রায়ই আমার বান্ধবীগো কথা শুইন্যা একদিন কইছিলো-



নেক্সট তোমার ফ্রেন্ডরা তোমার বাসায় এলে আমাকে জানিও তো! দেখব তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে তোমার সময় কেমন যাচ্ছে!



কিন্তু ভাবী ওগো শুধুমাত্র দেইখাই ক্যান জানি পছন্দ করে নাই। আমারে মুখে কিছু কয় নাই ওগো লগে মিশো না কিন্তু চারু ভাবীর পছন্দ অপছন্দ খুব চড়া সুরে বান্ধা, আমি হের চেহারা আর বিরক্তিতে হালকা ভুরু কুঁচকানি দেইখাই টের পাইছিলাম। কিন্তু খারাপের সঙ্গ যে অনেক আকর্ষণীয় হেইডা তো সবাইই জানে। আমার মায় আমারে কইতো –



দেখ রে পাপিয়া ডেইলি এক পারা কইরা কোরআন শরীফ পড়। তর মন দিল ভালা যাইবো। সংসারে সুখ শান্তি আইবো।



কিন্তু মা'র কথা হুনলে আমার জিদ উইঠ্যা যাইতো। আমার ভিত্রেও কাম করতো, আমিও তো একলা, তাইলে আমিও ক্যান একটা বন্ধু খুইজ্যা লই না। আমার মা, আমার পোলা, আমার ছোট বইন সুমি, আমার দাদাভাই মাঝে মাঝে আমার বাসায় আইসা সময় দিলেও, চারু ভাবী আমারে সময় দিলেও আমার ভিতরটা ক্যান জানি খালি খালি লাগতো। সবুজও মনে হয় দিন দিন আমার কাছ থিক্যা অনেক দূরে চইল্যা যাইতাছিলো গা। চোখের আড়াল হইলে আসলেই কি মনের আড়াল হইয়া যায় মানুষ! আমারে তো সবুজ উঠতে বইতে সন্দেহ, গালাগাল কইরা আমার মনটারে নষ্ট কইরা দিছিলো। এই লাইগ্যা মনে হইতো আমি যদি সত্যিই অন্য কারো প্রতি আকৃষ্ট হই, কারো লগে ফোনে সময় কাটাই তাইলে সবুজের কিছু যাইব আইব না কারণ অর কিছু জাননের চান্স নাই। আর এইটারইবা গ্যারান্টি কি সবুজ বিদেশে অন্য কোনো মাইরা লগে সেক্স করে না, উল্টাপাল্টা চলাফেরা, মদ সিগারেট খায় না? আইচ্ছা আমিই বা এতো বাহানা করতাছি ক্যান, যুক্তি খুঁজতাছি ক্যান নিজের খারাপ কাজের বৈধতার পিছনে যে সবুজ খারাপ কাজ করে দেইখ্যা আমিও খারাপ হমু! আমার একলা লাগে, আমার কৌতূহল হইতাছে তাই আমি আমার নিজের ভালো লাগানির লাইগ্যা যা মন চায় আমি করুম, ব্যাস এইটাই আমার কথা। এখন থিকা সবুজ আমারে যা যা নিয়া চার্জ করবো, আমিও ঠিক ওরে ঐ বিষয় নিয়া দৌড়ের উপ্রে রাখুম। দেখি আমারে অয় কত মানসিক অত্যাচার করতে পারে। তবে এই চার্জ সবসময় ওরে করা যাইব না। মাঝে মাঝে ফোনে ওরে দুই তিনটা চুম্মা চাট্টি দিলে অয় গইল্যা যাইব আমি জানি। এইটা মনে অয় ওগো বংশজাত ব্যাপার। সবার মনে হয় মাথার উপ্রে সেক্স উইঠ্যা থাকে। দেশে আইলে অয় প্রত্যেকটা দিন আমার লগে যা করে, আমি অসুস্থ হইয়া যাই। আমারও যে ভাল্লাগে না তাও না, আমিও এঞ্জয় করি কিন্তু রোজ রোজ কি এইসব ভাল্লাগে! যে ব্যাটা বউ পাশে ঘুমাইলেও মাস্টারবেট করে, সে যে বিদেশে কোনো মাইয়ার লগে কিছু করে না এইটা অয় অজু কইরা কইলেও আমি বিশ্বাস করুম না।



সবুজের লগে আমার এত তুচ্ছ তুচ্ছ বিষয় থেইকা ঝগড়া হইয়া সেইটা প্রতিবারই অনেক বিশাল ব্যাপার হইয়া যাইত আর আমার মনের ভার কমাইতে আমার অনেক পরিশ্রম করতে হইত। আমি খাওয়া দাওয়া করতে পারতাম না, খালি কানতাম, চুল সব আউলা ঝাউলা হইয়া থাকতো, গোসল করতে পারতাম না, চারু ভাবীর ভাষায় এই অবস্থার নাম নাকি " শয্যাশায়ী" অবস্থা। যখন নিজেরে বুঝাইতে বুঝাইতে ঠিক করতাম যে সবুজ একলা বিদেশ থাকে আমাগো সবাইরে রাইখা, তাই হয়তো ওর মন মন মেজাজ ভালো থাকে না। এই কারণে আমারে গালি মারে, উঠতে বইতে ডিভোর্স দিবো বইল্যা ভয় দেখায়, ওর পায়ের নিচে দাবাইয়া রাখতে চায়। শারীরিকভাবে অসুস্থ না হইয়াও আমার মনের অসুখে আমার ভিতরটা খুব ক্লান্ত হইয়া থাকতো। গত পরশু দিনও রাইতে এগারোটার পর আমার মা, পোলা আর ছোট বইনরে তাগো ঘরে ঘুমাইতে পাঠাইয়া সোফায় শুইয়া শুইয়া স্টার মুভিজ দেখতাছিলাম। আমি ইংরাজি বুঝি না কিন্তু এমনেই টিভি ছাইড়া রাখছিলাম। ওর নাম্বার দেইখ্যাই আমি টিভির সাউন্ড কমাইয়া দিছিলাম। সবুজের মুড মনে হয় ভালো আছিলো, আমারে জিগায় -



আমার মনিটা কি করে রে ?



আমি যখন কইছি টিভি দেখি জিগায় কোন চ্যানেল?



একটা চ্যানেলে ছবি ছাড়ছে। ওইটা দেখি।



কি ছবি ?



জিসম।



মনে মনে অনেক রঙ দেখা যাইতাছে। এত রাইত কইরা এই ছবি দেইখ্যা কামড়ানি উঠলে কি করবা ?



ওরে কইতে মন চায় তোমার মতো আমিও হাত দিয়া সুখ মিটামু। কিন্তু কই না কোন জায়গা থেইকা কই নিয়া যাইব এই কথারে, তিলেরে তাল বানাইবো বিশ্বাস নাই। আমি চুপ কইরা থাকি দেইখ্যা কয় কথা কইতাছো না ক্যান, টিভির সাউন্ডটা বাড়াও তো শুনি কোন ডায়ালগটা হইতাছে। আমি কইলাম -

কারেন্ট গেছে গা। আমি বারান্দায় আসছি। এই কথা শুইন্যা ওর মনে পইড়া গেলো পাশের ফ্ল্যাটের ভদ্রলোক রাইতে ঘুমানের আগে বারান্দায় আইসা সিগারেট খায়। আমারে জিগায় ওই ব্যাটা কই? আমি তো আচমকা বুইঝ্যা উঠতে পারি না কোন ব্যাটার কথা জিগায়। কয় পাশের ফ্ল্যাটে তোর যে নাগর থাকে হেয় কই, তুই কি বারান্দায় গেছস ওড়না ছাড়া ?



সবুজ, তুমি কি আমার লগে একটু ভালো কইরা কথা কইবা না ? ক্যান প্রত্যেকদিন ঝগড়া করো? এইসব কইতে ফোনের লাইন কাইট্যা গেলো আর আমার কপালে জানি আরেকদফা আযাব নাইম্যা আইলো। আবার ফোন দিয়া কইতে থাকলো,

খানকিমাগি লাইন কাটলি ক্যান? তোর বাপের পয়সা দিয়া ফোন করন মারাইছি ?



এরপর মা বাপ তুইল্যা ও যে কত কিছু আমারে কইলো! কিন্তু অন্যদিনের মতো আমি ফ্যাচ ফ্যাচ কইরা কানলাম না। উলটা ওরে ফাঁপর মাইরা কইলাম, বগলের নিচে কোন বান্ধবী লইয়া ঘুরতাছ যে তোমার বান্ধবী লাইনটা কাইট্যা দিছে ঠিক কইরা কও। ও এত ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া গেলো যে আমি ওরে আর কথা কওনের সুযোগই দিলাম না। ওরে কিরা কসম কাটাইতে বাধ্য কইরা ওর মুখ সেদিনের মতো বন্ধ করাইলাম। ওরে বুঝাইতে চাইলাম কথাবার্তা হিসাব কইরা কইবা। এখন থেইক্যা ঠিক করছি আমারে অয় ডিভোর্সের কথা কইলে উলটা ওরে আমি কমু যে আমিই তোমারে ডিভোর্স দিমু। আমার ধারণা অয় কিছুটা হইলেও বদলাইবো। এই রকম সত্তুরটা উদাহরণ দেওন যাইবো যে তুচ্ছ বিষয় লইয়া অয় আমারে অনেক অশান্তিতে রাখে। সব কথা এত খুইট্যা খুইট্যা ওর জানোনের কি দরকার আছে আমি ঠিক বুইঝ্যা পাই না। আরেকদিনের কথা আমারে জিগায় কি দিয়া ভাত খাইছো আজকা? আমি কইছি -



মুরগী দিয়া। এরপরের প্রশ্ন গুলো কি হইব আমি বুইঝ্যা আগাম জানাইলাম -- ফার্ম খাই নাই। দেশি মুরগী খাইছি। মুরগীর হাত, পাও, গিলা, চামড়া দিয়া খাইছি।

মুরগীর রান, বুকের মাংস কই ?

কই মানে! আছে।

তাইলে হেডি কে খাইছে ? তোর মা আর বইনেরে খাওয়াইছস ? আমার পোলারে তাইলে কি না খাওয়াইয়া রাখস? ব্যাস শুরু হইয়া গেলো ওর গালির বন্যা। আমারে কয় তোর মায়রে ফোনডা দে।



মার লগে পরে শুনছি খারাপ কিছু কয় নাই কিন্তু মায়রেও জিগাইসে আম্মা, কি খাইছেন দুপুরে। ঠিকমতো বাজার করান না ক্যান? আমি কি পাপিয়ারে কম টেকা পাঠাই ? খালি মাংস দিয়া ভাত খান এইটা কেমন কথা। তখন মা কইছে মুরগীর মাংস, শাক, ডাইল, আলুর ভর্তা কত কিছুই তো আছিলো। এরপর হারামিটা আমারে কইলো , মাগী তুই উঠতে বইতে মিছা কথা কস। শাক, ডাইল, আলুর ভর্তার কথা কস নাই ক্যান? আমি তখন উত্তর দিলাম হ এডিও খাইছি, লবন, কাঁচামরিচ, পানিও খাইছি। পানি ফুটাইয়া ঠাণ্ডা কইরা খাইছি। এইবার হইছে?



আমার লগে মশকরা করস?



তুমি কি আমার বিয়াই লাগো নি মশকরা করুম। তুমি তো আমার জামাই না, ভাসুর এইডা আমি ভুইল্যা যাই আর এই লাইগ্যাই তোমার গালি শুনি।





আমি অনেক ফুর্তিবাজ টাইপের মাইয়া উপ্রে উপ্রে দেইখা অনেকেই আমারে এইডা কয়। আনন্দে থাকতে আমার ভালোই লাগে। কিন্তু আগের চেয়ে আমার আনন্দে থাকোনের মাত্রাডা কইম্যা আইতাছে। বয়স হইতাছে এইটা একটা কারণ হইতে পারে। আমার বয়স এখন সাতাইশ। অবশ্য চারু ভাবী কয় বয়সের লাইগ্যা না এইটার কারণ নাকি ম্যাচুউরিটি। তাই আমার মইধ্যে একটা পরিবর্তন আইছে, আমি ধীর স্থির হইয়া যাইতাছি, আগের মতো যহন তহন রাগ হইয়া যাই না এইসব ছাড়াও আরো কিছু আমার মইধ্যে কাজ করতাছে কিন্তু আমি সেইটা ক্লিয়ার কইরা বুইঝা উঠতে পারতাছি না। তাই মনে অয় আমার একটু একটু হতাশও লাগে। আমি পনেরো বছর বয়সে সবুজের লগে ভাইগ্যা গিয়া বিয়া করছিলাম। এক যুগ পার হইয়া গেছে এর পর আমি টের পাইতাছি আসলে এমনে এত অল্প বয়সে বিয়া করনটা ঠিক হয় নাই। আমার মনে অহন অনেক ধরণের চাওয়া পাওয়ার জন্ম নিতাছে। নিজেরে বঞ্চিত মনে হইতাছে। এই লাইগ্যা আমি কাউরে দোষ দিতাছি না কিন্তু আমি সহ্যও করতে পারতাছি না। সবুজ যখন বেকার আছিলো তখন উঠতে বইতে ওর লগে ঝগড়া হইলেও পরে সব ঠিক হইয়া যাইতো কিন্তু এহন ব্যাপারটা ঠিক হয় না। মনের কোণায় জইম্যা ভার হইয়া থাকে ভিতরডা। মাঝে মাঝে মন চায় ওরে ছাইড়া যাই গা কোনো জায়গায়, আরেকবার মনে হয় ছাইড়া গিয়া কি হাত্তি ঘোড়াডা আমার জীবনে হইবো। কয়দিন ধইরাই সবুজরে বলতাছিলাম উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেইকা এসএসসি পরীক্ষাডা দিমু। কিন্তু অয় রাজি হয় না। আমি একবার ভাবছিলাম লুকাইয়া লুকাইয়াই পরীক্ষা দিমু কিন্তু এত বছর পর পড়াশুনা শুরু করলে আমারে টিচারের সাহায্য নেওন লাগবো। সবুজ এই থেইকা অনেক জিনিষ আবিষ্কার কইরা ফালাইবো। চারু ভাবী কইছে সবুজরে ম্যানেজ করবো কিন্তু আমি ডেইলি ডেইলি ওর নতুন আরও অত্যাচারের স্বীকার হমু চিন্তা কইরা ওই ইচ্ছাডাই গেছে গা। যে মানুষের লগে প্রেম করলাম, ধীরে ধীরে বড় হইলাম যার চোখের সামনে হেয় কেমনে এত অবিশ্বাস লইয়া থাকে বুঝতে পারি না।



চারু ভাবীর ভাইয়ের লগে আমার ভালোই সম্পর্ক। সবুজেরও সম্পর্ক ভালো। সবুজ আর তনয় ভাই নাকি ইয়ারমেট আছিলো। এক লগে আমরা আড্ডা দিলে সময়ডা ভালোই কাইট্টা যায়। সবুজই তনয় ভাইরে দাওয়াত দিয়া আনে, লগে ভাবীও থাকে, আমার বড় দাদাভাইও রাজশাহী থেইকা আসে। কিন্তু আমি তো চারু ভাবীরেও কইতে পারি না তার ভাইয়ের লগে কথা কইলে, হাসি মশকরা করলে সবুজ আমার গায়েও হাত তোলে, ফোনে অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়। পরে বুঝতে পারছি তনয় ভাইরে আমার সামনে রাইখ্যা সবুজ চেক করতে চায় তনয় ভাই আর আমার চোখ মুখের ভঙ্গীতে কোনো পরিবর্তন অয় কিনা। আমি তনয় ভাইয়ের স্মার্টনেস নিয়া অনেক প্রশংসা করতাম মনে অয় এইডা ওর সন্দেহের কারণ। তনয় ভাই আমার বিয়াই মানুষ হেয়ও দুষ্টামি কইরা কতো কতো দিন কইছে -



সবুজ তোর বউয়ের সাথে আমার বউ পাল্টাপাল্টি করবি ?



সবুজও কইতো - হ লইয়া যা। এক বউ লইয়া এতদিন থাকতে থাকতে এখন ভাই-বইনের মতো হইয়া গেছি।



ওর মন মতো কিছু না হইলে তনয় ভাইয়ের কথা উডাইয়াও কইতো সত্যি কইরা ক , তনয়ের লগে ফোনে তোর উল্টাপাল্টা সম্পর্ক নাই তো ? নাইলে কোনো কোনোদিন কইতো - দেশ থেইক্যা আওনের পর তোর যে চেহারা দেখছি ভিডিওতে সত্যি কইরা ক তোর চোখে মুখে কিয়ের এত আনন্দ ? তনয়ের লগে লাগাইছিলি?



তাইলে কি ফকিন্নির মতো থাকুম নাকি ? আর আজেবাজে কথা কও ক্যা ?



ফকিন্নির মতো না হইলেও চোখে মুখেও বিরহের ছাপ দেখি নাই। সত্যি কইরা ক তুই আসলে দেশে কি কইরা সময় কাটাস ? আর তোর এত তেজ হইছে কই থিক্যা ? কারো বুদ্ধি পরামর্শ লইয়া চলস ?



তুমি যা শুরু করছো কিছু না করলেও করনের সময় আইছে বুঝতাছি।



হেরপর যে কয়দিন আমার উপ্রে দিয়া আজাব চলছিলো ওইটা মনে করলে এহন আর কান্দন আহে না। জিদ উডে। বালের প্রেম আর সংসার। আমি যদি সত্যই সবুজরে জানাইতাম তনয় ভাই মাঝে মাঝে আমারে ফোন দেয়, গল্পগুজব করে তাইলে যে অয় কি করতো আমারে কে জানে। তনয় ভাই আর চারু ভাবী ভাই বইন হইলেও হেগো দুইজনের মাঝে অনেক ফারাক। তনয় ভাইয়ের দুষ্টামি, হের টেনশন, হের বউ লইয়া অশান্তি ব্যাপার গুলি মাঝে মাঝে আমার লগে শেয়ার করতো আর আমার মনের কষ্টডাও হেয় বুঝতো দেইখা মাঝে মাঝে কইতো -



পাপিয়া, ঘুরতে যাবি আমার সাথে? তনয় ভাই আমারে তুই কইরাই কইতো যেমনডা সবুজরেও কইতো। হের ডাকে খারাপ কিছু থাকতো না কিন্তু মাঝে মাঝে হঠাৎ কইরা ফোন কইরা কইতো -



বাইরে অনেক বৃষ্টি। চল ঘুরে আসি



সত্যি! কিন্তু বাইরে যামু, হঠাৎ সবুজের ফোন আইবো, হাজারটা প্রশ্ন জিগাইবো পরে তনয় ভাইয়ের সামনে ইজ্জত যাইবো। তাই খুশি হইয়া উঠলেও কইতাম - না থাক আজকা যামু না। আরেকদিন। আমার দীর্ঘশ্বাসটা মাঝে মাঝে জোরেই হইয়া যাইতো দেইখা মনে অয় তনয় ভাই কয়দিন পর পর আমারে খোঁচাইতো। অবশ্য যেদিন যেদিন আমার মুড ভালো থাকতো আমিই তারে কইতাম -



চলেন ঘুইরা আসি।



কই যাইতে চাস ?



কক্সবাজার, কুমিল্লা নাইলে সেন্টমার্টিন...



হেয় অবাক হইয়া কইতো সত্যিই যেতে চাস?



হ, মিছা কথা কমু ক্যান। আমি তারপর হাসতে থাকতাম। আর তনয় ভাই কনফিউজড হইয়া যাইতো। এহন কন রেডি হমু কখন? আপনে কিন্তু আপনের প্রিমিও গাড়িডা লইয়া আইবেন। দেইখ্যেন আপনের বউয়ের কিল-গুতা খাইয়েন না।

এহ্‌ আমি কি সুপ্তিকে ভয় পাই নাকি! এক শর্তে নিয়ে যাবো। আগে বল দেখা হলে কিস করবি নাহলে আমাকে কিস করতে দিবি!



আমি এমনেও হের লগে যাইতাম না, শহরের ভেতরেও না আর ঢাকার বাইরে তো যাওনের প্রশ্নই আসে না। কিন্তু মাঝে মাঝে তনয় ভাই দুষ্টামির ছলে যে কথা কয় আমি বুঝতে পারি হের মইধ্যেও অনেক জ্বালা যন্ত্রণা কাম করে। আমিও যে তার কথাতে রাগ করতাম তা না কিন্তু রাগের ভান করতাম, কইতাম ধুর কি কন এইসব? খাড়ান চারু ভাবীর কাছে বিচার দিমু। হিহিহি কইরা হাসতে হাসতে ফোনের লাইন কাইট্যা দিতাম। এইটা সত্য কথা তনয় ভাই খুব হ্যান্ডসাম সব দিক দিয়াই।



ক্যান জানি মনে হয় আমি হঠাৎ কইরাই অনেক বড় হইয়া গেছি। বড় হইয়া যাওনডা সবসময় ভালো না, এইডা এহন বুঝতাছি। খালি যে বুঝতাছি তা না আমি আমার স্বাভাবিক আমিডারেও মনে অয় হারাইয়া ফালাইতাছি। আমার বড় হইয়া উডনের পিছনে চারু ভাবীরও ভূমিকা আছে। ‘বড়’ হওন মানে হইলো আমার ম্যাচিউরিটি আইছে – এইডা চারু ভাবীর মতামত। ভাবীই কইতো যহন আমার ভালো লাগবো না কিছু আমি জানি সেই সময়ডায় আশেপাশের মানুষরে লইয়া ভাবি, মানুষের চেহারার এক্সপ্রেশন দেইখ্যা তার চরিত্রের লগে সেইটা মিলাইয়া দেখি, বুঝার চেষ্টা যাতে করি একজন মানুষের ভিতর আর বাইরে কতখানি তফাত হইতে পারে। প্রথম প্রথম শুইন্যা মনে হইতো ভাবী খালি আজগুবি কথা কয়। কিন্তু এহন একলা হইলেই সেইসব ভাবতে চেষ্টা করি। ঠিক চেষ্টা না অইসব ভাবনা গুলি কেমনে জানি মনের মইধ্যে আইসা পড়ে। ঠিক কোন কারণে আমার মনে হইতো আমি জানি না কিন্তু একটা কথা মনের মইধ্যে আমার সবসময়ই ঘুরপাক খাইতো আমার ভাসুরের লগে চারু ভাবী ঠিক সুখী না কিন্তু চারু ভাবীর বুদ্ধি বেশি তাই হের চিকন ভাবে চলার কায়দা দেইখা, নিজের মনের ভাবসাব গোপন রাখনের লাইগা হেয় সবসময় হাসি মুখে থাকতো। আমি কইতাছি না হেয় অভিনয় করতো কিন্তু ভাবীর মইধ্যে কিছু একটা গড়বর আছে। তাই চাইতাম আমার দাদাভাইয়ের লগে ভাবীর যদি একটা ফ্রেন্ডশীপ করাইয়া দিতে পারতাম অন্তত আমার ভাইয়ের কাছ থেইকা জানন যাইতো আসলে চারী ভাবীর মনের মইধ্যে কি আছে, হেরে ক্যান এতো অসুখী মনে অয় আমার কাছে। কিন্তু আমার দাদাভাই আর চারু ভাবী দুইজনেই এতো ভদ্রতার সীমারেখা মাইন্যা চলতো কি আর কমু। দেখা গেলো দুইজনরে ড্রয়িং রুমে বসাইয়া আমি গেলাম কিচেনে চা বানাইতে কিংবা নুডুলস রানতে আইসা দেখুম দুইজনেই যার যার মোবাইল লইয়া টিপাটিপি করতাছে নাইলে রাজনীতি লইয়া দেশের বর্তমান অবস্থা, ব্যাংকিং সেক্টর লইয়া জ্ঞানী জ্ঞানী ভাষণ নাইলে বিজনেস লইয়া নতুন চিন্তাভাবনা লইয়া হেরা কথা কইতাছে, নাইলে আমার মায়ও আইয়া কোন সময় হেগো লগে বইয়া আমাগো গ্রামের বাড়ির কথা শুরু কইরা দিছে। মাঝে মাঝে জোর কইরা আমি , দাদাভাই আর ভাবীরে নিয়া আজগুবি খেলা খেলতাম মানে স্মৃতিচারণ খেলা কিংবা হুদাই আজাইরা প্রসঙ্গ তুইল্লা বইয়া থাকতাম। একবার কি বুইঝা দাদাভাই জানি কইলো –



আচ্ছা চারু ভাবী আপনার প্রথম প্রেম নিয়ে কিছু বলেন, যদি আপত্তি না থাকে।



আমার দাদাভাইয়ের উপরে আমার এমন রাগটা উঠলো না কি কমু। ক্যান চারু ভাবী আর আমার দাদাভাই দুইজনেই প্রায় সমবয়সী, নাম ধইরা কইলে কি অইতো। এমনেই বাইরে আমার দাদাভাই স্মার্টগিরি দেহায়, ভাবীর সামনে আইলে মেন্দা মার্কা অইয়া যায়। আমি ঠিকই বুঝি আমার ভাই নার্ভাস ফিল করে। কিন্তু ভাবী হাসতে হাসতে প্রসঙ্গ ঘুরাইয়া দিয়া কইলো –



ছোটদের দিয়ে শুরু করি। প্রথমে পাপিয়া তুমি তোমার প্রেমের কাহিনি বলো।



হুহ্‌ আমার আবার প্রেম। বুঝ হওনের পর থেইক্যাই তো সবুজের লগে ঝুইল্যা পড়লাম। কোন কপাল লইয়া যে আইছিলাম ! আমার দীর্ঘশ্বাসতা শেষ হওনের আগেই দাদাভাই দিলো একখান ধমক –



চুপ করতো তুই । খালি এক গান গাস চান্স পেলেই।



ভাবী হাসতে হাসতে কইলো – সোহেল ভাই এবার আপনার খবর বলেন।



আমার দাদাভাই এইবার বুদ্ধির পরিচয় দিয়া কইলো – আপনি কি আমার বয়সে বড় নাকি ? ছোট হবেন কে বললো ? এরপর কাহিনীই ঘুইরা গেলো। চারু ভাবীর প্রথম প্রেমের কাহিনীই জানতে পারলাম না! এইসব টেকনিক আর স্মার্টনেসের লাইগ্যা যে আমি চারু ভাবীরে হিংসা করতাম না তা না। সে একটা কমদামী ব্লক বাটিকের জামা গায়ে দিলেও মনে হইতো কত্তো দামী জামাটাই না জানি পড়ছে। আর আমি ভালো দেইখ্যাও জামা পড়লে আমারটা এমন লাগতো না। এমনে আরো অনেক অনেক জিনিস লইয়া ভাবীরে আমার হিংসা হইতো।



আমার আসলে এইসব ভাবতে ভাল্লাগে না কিন্তু আমার জীবনটা এই ছয় তলার ফ্ল্যাটে কেমন জানি আটকা পইড়া গেছে খালি এইটাই মনে অয় বারবার । মন চায় সব ছাইড়া ছুইড়া আমি আমার বাপের দেশে যাই গা, বিশাল হাওরে নৌকা লইয়া ঘুরি। আগের মতো চাচাতো ভাইগো লগে ঘুরি ফিরি, পূর্ণিমার রাইতে উঠানে নাচি। আমি অনেক সুন্দর নাচতেও পারতাম। এহন ভুটকি হইয়া গেছি, মনমিজাজ ভালো থাকে না, নাচের মুডটাও আর আগের মতো কাজ করে না। চারু ভাবীর লগে থাইক্যা অনেক সুন্দর একটা জিনিষ আমি আমার মইধ্যে আবিষ্কার করছি। আমাগো মানুষগো কল্পনা করনের একটা মন আছে ওইটা আমিও এহন ফিল করতে পারি। নিজেরে অনেক বন্দী বন্দী লাগে তাই আমি অন্য কিছু ভাবতে চাই। কল্পনায় দেহি আমি হাওরে সাঁতার কাটতাছি। চিৎসাঁতার, ডুবসাঁতার আরো কতো কি! আমি দম বন্ধ কইরাও অনেক্ষন পানির নিচে থাকতে পারি। আগে আমরা যহন বিলে নাইম্যা গোসল করতাম আমার অন্য ভাই বইনেরা এই দম বন্ধ কইরা পানির নিচে থাকোনের খেলায় পারতো না। চোখ খুইল্লেই কেমন সবুজ সবুজ একটা দুনিয়া দেখতাম, শাপলা শালুক আর লতাপাতারা মনে হইতো নাচানাচি করতাছে। এইসব ভাবতে ভাবতেই আমার মাঝে আরো একজন মানুষও এহন কথা কইয়া উডে। নেউপিপির কথা আচমকা আচমকা মনের মইধ্যে আইসা পড়ে। আমার গা কাইপ্যা উডে অর কথা মনে পড়লে। এই কাঁপুনিডা আইলে আমার শীতের বাতাসের কথা মনে অয়। আমার বাপের বাড়িতে আমার যে শোয়ার ঘর, অইডা উত্তরমুখি। ওই ঘরের জানালা দিয়া ঠাণ্ডা বাতাস আইতো। আমারে ইদানিং নেউপিপি কয়, বাইরে ওর লগে দেখা করতে। কিন্তু মন সায় দেয় না বাইরে যাইয়া দেখা করতে। নতুন নতুন ফোনে পরিচয় হুট কইরা দেখা করতে যাওনটা মনে হয় ভালো হইব না। ওর নাম সাব্বির কিন্তু আমি ওরে নেউপিপি কইয়া ডাকি। উলটা পাল্টা নাম্বারে টিপতে টিপতে ওর নাম্বারে ফোনটা গেছিলো আর গলার আওয়াজও ভালো লাগছিলো। ওর নাম জিগাইছিলাম মতো আমারে কইছিলো আপনিই একটা নাম দিয়ে দেন।



আমিও কইয়া উঠলাম 'নেউপিপি'। কয়দিন আগেই চারুভাবীর মুখে নামটা শুনছিলাম। নেউপিপিরে কেউ কেউ পদ্মপিপিও কয়। এইটা নাকি একধরণের পাখি। বাংলাদেশে এই পাখিটা বলে বিপন্ন হওনের মুখে। চারু ভাবীর কাছে খালি জ্ঞানের কথা শুনতে হয়, চান্স পাইলে কইতেই থাকে। সে যাই হউক সাব্বির নামটা শুইন্যা কইছিলো -



বাহ্‌ অদ্ভুত নাম তো। আমারেও সাব্বির একটা নাম দিছে - জারা।



বারান্দায় বইসা বইসা আমার এখন জারা আর নেউপিপির কথা ভাবতেই ভালো লাগতাছে। মনে হইতাছে রেলিং এ মাথা ঠেকাইয়া রাখি সারা রাত। ওর লগে গল্প কইরা কইরা রাত পার কইরা দেই। সংসারে অশান্তি লাইগা থাকলে কি এমন কইরাই পদ্মপিপিরা জাইগ্যা উঠে ? আমার মনে এহন এইডাও কাজ করে আসলেই কি আমি সবুজের লগে সুখী না? সুখ আর অসুখের এই ভাবনাডা আমারে ক্যান এতো যন্ত্রণা দিতাছে? এইসব ভাবতে ভাবতে আমি ডুবসাঁতার দিতেই থাকি, দিতেই থাকি আর আমার অনেক ক্লান্ত লাগতে থাকে।



সমাপ্ত



মন্তব্য ৫২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৫২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:৪১

তুষার কাব্য বলেছেন: গল্প এত বড় হয় কেন...পরে এসে পরে যাব...আর ধৈর্যে কুলোচ্ছেনা... :#)

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:০৫

মামুন রশিদ বলেছেন: মনে ব্যাফুক আনন্দ নিয়া ভাব ভাষারে ইচ্ছামত ভাইজ্যা ভাইজ্যা যে গল্প লিখছেন, তার কাহিনীডা হয়ত চেনাজানা । কিন্তু প্রকাশের ভঙ্গিটা এমুনই জব্বর, প্রথম কয়েক লাইন পইড়াই চোখ দেহি কপালে উডা শুরু করছে । পরে কিছু সোময় চক্ষু বন্ধ কইরা পণ করিলাম, এই গল্প আমাকে পড়তে হইব! নিভৃতে আড়ালে থাকা মধ্যবিত্ত স্বামীসঙ্গহীন যৌবনবতীর করুণ রুদ্ধ বিষাদের সুর প্রকাশে লেখিকা যে ভাষার আশ্রয় নিয়েছেন- তা কিঞ্চিত শ্রুতিপীড়ক বটে, কিন্তু স্বামীকর্তৃক ঘৃণ্য মানসিক অত্যাচার বিবেচনায় চরম বাস্তবতাকেই তুলে ধরে ।

নেউপিপি- নামের মাঝেই রোমান্সের গন্ধ পাই ;)

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: লিখছি আনন্দ নিয়াই কিন্তু এই চিন্তাও মনে কাজ করছে সাহিত্যমান নিয়া। ব্লগে দেবার আগে কয়েকজনকে পড়তে দিয়েছিলাম শ্রুতিকটু লাগে কিনা বা সমস্যা মনে হয় কিনা!

নেউপিপি নামটা আমারও মনে ধরছে

৩| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

পার্সিয়াস রিবর্ণ বলেছেন: গল্পের নামের মধ্যে কি যেন এক রহস্য লুকিয়ে আছে !! সেই রহস্য যখন টেনেটুনে পুরো গল্পটাই পড়িয়ে ছাড়লো খেয়াল করলাম আরেহ এ তো অনেকটাই চেনা !!!

তবে প্রকাশভঙ্গি ( আসলে লেখনভঙ্গী) ভালো লেগেছে ।


ভালোলাগা রইলো ।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:২৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: অনেক শুভকামনা আপনার জন্য রিবর্ণ

৪| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০০

সকাল রয় বলেছেন:
অনেকদিন পর আবার একটা দুর্দান্ত লেখা পড়লাম। অনেক ভালো লাগলো। শুভকামনা রইল

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: তোমাকেও শুভেচ্ছা

৫| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:০৪

আশরাফুল ইসলাম দূর্জয় বলেছেন:
এই গল্পটা আমি আগেই পড়ছি :)

অনেক ভালো একটা লেখা হয়েছে। অনেকদিন পর গল্প পড়ে ভাল্লাগছিলো।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: যখন বলেছিলে, জেনে ভালো লেগেছিল আমারও

৬| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৮

আবু শাকিল বলেছেন: একটানে গল্প পড়লাম।

লেখার ভাষায় বৈচিত্র আনাতে গল্প বেশ ভাল লাগছিল।

চমৎকার লিখেছেন।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩১

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

৭| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১০

মায়াময় বলেছেন: পৃথিবীর ঘৃণ্য চরিত্র গুলো নারীদের মাঝে দেখা গেলেও, তার পিছনে পুরুষের ব্যবহার শতভাগ !!!

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৩

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: জি কবিসাব

৮| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৫

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: গল্পডা ভাল্লাগছে , কতডা ভাল্লাগছে আমি ঠিক বুঝাইয়া কইতে পারতেছিনা !

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: দুষ্টামি করতাছো নাকি ? B-)

৯| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৫

বৃতি বলেছেন: অন্যভাবে গল্পটা লিখেছো, এক্সপেরিমেন্টাল-টাইপ। বেশ ভালো লাগলো অপর্ণা আপু। নামকরণটাও ভালো লেগেছে।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৬

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আমার জন্য এটা এক্সপেরিমেন্টাল-টাইপ লেখা যদিও আরও আগে থেকেই এভাবেও লেখার অভ্যাস অনেকেরই ছিল। যে কোনো লেখার শেষে নাম দিতে গিয়ে খুব হিমশিম খাই। ভালো থেকো বৃতি

১০| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:১৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: গল্প ভালো লেগেছে। তবে মাঝখানটায় কিছুটা ক্লান্ত লাগছিলো পড়তে। শেষটায় এসে আবারও ভালো লাগলো।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ হাসান ভাই। ফর্মে আসেন আগে B-)

১১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৫

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:




বোদ্ধারা যা বলে বলুক, আমার কাছে জব্বর লেগেছে। যেমন ভাষা, তেমন তার কাহিনি....... 'সেইরাম' তার চরিত্র ও চিত্রণ......


একদম ‌‌'ওয়াও' গল্প হয়েছে.............. :)

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ মইনুল ভাই , শুভকামনা রইলো

১২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: পুরোটা পরে ফেললাম |-) |-)

এককথায় চমৎকার হয়েছে++++...

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৬

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

১৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩৮

সুলতানা সাদিয়া বলেছেন: প্রথম পাঠক কি আমিই ছিলাম? তাই হয়তো গল্পটা পড়ার চেয়ে আজ আমার আগ্রহ বেশি ছিল পাঠক তোমার গল্পটা কিভাবে নেয় তা দেখার। বেশ ইতিবাচকভাবে উতরে গেছো দেখা যাচ্ছে। কনগ্রেটস্!

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: পুরো লেখাটা তুমি একবারে পড়তে পার নি, ভেঙে ভেঙে পড়তে দিয়ে তোমাকেও যন্ত্রণা দিছি। তাই তোমার মতামতও ভেঙে ভেঙ্গেই পাইছি। সময়ে মুড আসলে এই লেখাটা নিয়ে আরও কাজ করার ইচ্ছা রাখি, এখন আইলসামিতে না ধরলেই হয় আর কি

১৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৪

নিমচাঁদ বলেছেন: অনেকদিন পর ভীষণ ধৈর্য নিয়ে গল্প পড়া শুরু করলাম ।
মাঝে এসে থমকে গেলাম ।
আবার পড়া শুরু করলাম ।
একটু ভ্রু কুঁচকে উঠলো আবার । শেষের অংশে পৌঁছে গেলাম ।

পাঠক কিন্ত তার অবচেতন মনে সব সময়েই গল্পের শেষে একটা সলুশন চায় , আমিও চেয়েছিলাম ।আমার মনে হলো নেউপিপি আর জারা কোন সলুশন না , এটি আরেকটি মধ্যবিত্ত টানা পোড়নের শুরু , আরেকটা সুখের পিছনে হ্যালুসিনেশন ।

এল্ডোরাডোর বিস্তীর্ণ প্রান্তরে অনেকেই স্বর্ণ খুজঁতে গিয়েছিলো , বেশীরভাগই বিভিন্নভাবে মরে গেছে , সামান্য দুইএকজন হঠাত অনেক সোনা পেয়ে গেছে ।অনেক সুখী হয়ে গেছে ।অবশ্য একমাত্র টাকা পয়সার মধ্যে যদি সুখ বলে কিছু থেকেই থাকে ।

ভিতরের অনেক টানাপোড়নের লেখা , মিডল লাইফ ক্রাইসিসের এক পক্ষের পার্ট । যেভাবে এটা উঠে এসেছে লেখিকার হাতে , এতে তার সাহসের প্রশংসা করতেই হয় ।

ধন্যবাদ অপর্ণা , লেখা পড়ে , মাঝখানের 'র' ভাষায় স্কুল জীবনে হারিয়ে গেছিলাম ।আমাদের ঢাকার স্কুল জীবনটা কিন্ত এই রকমই 'র' ভাষা আক্রান্ত ছিলো । সুন্দরভাবে পোচ দিয়ে প্যাষ্টেলে তুলে এনেছেন বলে ধন্যবাদ পেতেই পারেন ।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ভ্রু কুঁচকে হলেও শেষ পর্যন্ত পড়েছেন জেনে ভাল্লাগলো। এটা ঠিক আমরা সিনেমা, নাটক বা সাহিত্যে এবং জীবনেও একটা হ্যাপি এন্ডিং বা মিনিমাইজ করার মতো সল্যুশন যেখানে চাই সেখানে পাপিয়া বা জারার সল্যুশন এইটা না। কিন্তু এটাও ঠিক রিলেলিটি যখন স্বস্তি দেয় না আমরা কল্পনা বা কম ঝামেলার দিকেই ঝুঁকে পরি সাময়িক রিলিফের জন্য।

প্রাত্যাহিক বা র ভাষা কম বেশি সবাই হয়তো ব্যবহার করি কিন্তু সেটা লেখায় উঠে আসলে কতটা রিয়েলিস্টক হয় সেটা দেখাও উদ্দেশ্য থাকে। পুরান ঢাকা বা আশেপাশের এলাকার ভাষা মিলে সব মিলিয়ে 'একটা এক্সেন্ট' দাঁড়িয়ে গেছে মে বি। আর লেখক লেখিকার বিষয় আসাতে বলি, আরো অনেক থীম ঘুরে মাথায় কিন্তু জেন্ডার ইস্যুতে আক্রান্ত হবার ব্যাপার অপ্রত্যাশিত ভাবে চলে আসার সম্ভাবনাও উরিয়ে দেয়া যায় না। সময় এবং মুডের অপেক্ষায় আছি।

ভালো থাকবেন ভাইয়া

১৫| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ২:১৯

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ভালো লাগা। অনেক।

শুভকামনা জানবেন। অনিঃশেষ। সবসময়।

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

১৬| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৩১

নীল কথন বলেছেন: গল্পের শুরু আর শেষটা সুন্দর। ভালো লাগছে গল্প। :)
ভাষার ব্যবহার আর মানুষের মানুষে লুকিয়ে রাখা সম্পর্ক, চিন্তাভাবনা, এমন কী বিরক্তির প্রকাশটা সাবলীল লাগছে। তাই সাত তারা।
-
কি আর কী। এখানে গন্ডগোল বাধাইছো।
চিৎসাঁতার, ডুবসাঁতার আরো কতো কি! > চিৎ-সাঁতার আর ডুবসাঁতার আরো কতো কী!

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: কি আর কী নিয়ে পড়াশুনা যা ছিল আমার, ভুলে খেয়েছি প্র্যাকটিস এর অভাবে।

ভালো থাকিস।

১৭| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:২১

স্বপ্নচারী গ্রানমা বলেছেন:
সোময় চক্ষু বন্ধ কইরা পণ করিলাম, এই গল্প আমাকে পড়তে হইব! নিভৃতে আড়ালে থাকা মধ্যবিত্ত স্বামীসঙ্গহীন যৌবনবতীর করুণ রুদ্ধ বিষাদের সুর প্রকাশে লেখিকা যে ভাষার আশ্রয় নিয়েছেন- তা কিঞ্চিত শ্রুতিপীড়ক বটে, কিন্তু স্বামীকর্তৃক ঘৃণ্য মানসিক অত্যাচার বিবেচনায় চরম বাস্তবতাকেই তুলে ধরে ।

ইদানিং টানাপড়েন নিয়ে লিখছেন ! বেশ ভালো লাগলো আপু । ++

ভালো আছেন আশা করি ?

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।
টানাপড়েন জীবনেরই অংশ, আশেপাশে বা নিজেদের দিকে তাকালেও সেটা বোঝা যায়। আপ্নিও ভালো থাকবেন

১৮| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৬

অন্ধবিন্দু বলেছেন:
প্রতিটা বাক্য কর্কশতর হয়ে কানে লাগছিলো। অমার্জিত ঢঙে নিভাঁজ বাস্তবতার মুহুর্মুহু রণমূর্তি। সাহিত্যমান নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে নিজের লেখনী-সৃজনশীলতা সংকীর্ণ করে তুলবেন না যেনও। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সাহিত্যমান নিতান্তই একটি অমূলক শব্দ মাত্র ...

শুভ কামনা, অপর্ণা মম্ময়।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৭

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: মনে থাকবে আপনার পরামর্শ। ধন্যবাদ অন্ধবিন্দু

১৯| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:২৩

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: ছদ্ম নামে নয় যারা পোষ্টে আপনার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। যদি আপত্তি থাকে তবে নাম সরিয়ে নিবো। জানাবেন প্লিজ।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ নোটিফিকেশনের জন্য। তবে কারো পোস্টে এসে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কথা বলাটা শোভন ব্যাপার।

২০| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১২

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
আসলে এতো ভীড়েও দিনশেষে সবাই একা ৷

কথ্য ভাষা ব্যবহারে আসলে বড় সুবিধা ইচ্ছার সাবলীলতা আর বানানের স্বাধীনতা ৷ মনে হল লেখায় অনেক আনন্দ নিয়ে লিখেছেন ৷ সাহস ও অন্তর্ভেদী দৃষ্টি একজন লেখকের শক্তি যা মৌলিকতায় ঋদ্ধ করে সবসময় আগামীদিনে ৷

শুভেচ্ছা ৷

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও

২১| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৫০

ডি মুন বলেছেন: গল্প মোটামুটি ভালো লেগেছে। তবে একটু ধৈর্য হারিয়ে ফেলছিলাম মাঝে মধ্যে।

চতুর্থ ভালোলাগা +++++

এমন করেই আরো সুন্দর সুন্দর লেখা উপহার দিয়ে যান আমাদেরকে।
শুভেচ্ছা রইলো।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ ডি মুন

২২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৭

ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: আমি কিন্তু এই ভাষার প্রকাশের প্রেমে পড়েছি, এই অর্থে যে এই ভাষাটাই যেন চরিত্রটা আমার সামনে ভেসে উঠল, প্রমিত বাংলায় হতে পারতো না! লেখনী চমৎকার হইসে! এক্সপেরিমেন্টাল কিনা জানি না, কিন্তু ভালো হইসে!

* পাপিয়ার বাপের বাড়ি সিলেট হইলে মুশকিল, সে তো সিলটি বলে নাই, ঢাকার ভাষাতে কথা বলসে, নাকি? (এইটা একটা আজাইরা পয়েন্ট! )

০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৪

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: হুম এক্সপেরিমেন্টাল লেখা। তুমি যে আজাইরা পয়েন্ট ধরসো সেটা আজাইরা না। তাই একটু এডিট কইরা দিছি যে পাপিয়ার বাবা আগে ঢাকা থাকতো ব্যবসায়ের জন্য।

অনেকদিন পর তোমাকে দেখলাম !

২৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ২:০৩

নাভিদ কায়সার রায়ান বলেছেন: কেন্দ্রীয় চরিত্র কেন্দ্রীভূত থেকে গেছে তাঁর ভালবাসার মানুষের কাছ থেকে চাওয়া পাওয়ার হিসেবের মধ্যে, এই জন্যই গল্পের মাঝামাঝি এসে পড়তে একটু বিরক্তি এসে যাচ্ছিল। কিন্তু গল্পের টানেই গল্পের শেষ অবধি আসতে হল। ভালো লাগলো।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: শেষ অব্ধি পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে

২৪| ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৭

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: অসাধারণ একটা গল্প পড়লাম, চমৎকার নির্ভেজাল বর্ণনাময় জীবনের এক চোরাদুঃখের গল্পকথা... একগাথা ভালো লাগা, লাইক এন্ড ++++ সাথে প্রিয়তে রইল আবার পড়ব বলে...অবসরে...

শুভকামনা জানবেন।

১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৪০

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ বোকা মানুষ। ভালো থাকবেন

২৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:৩১

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: + + + + + । ভাল থাকুন সব সময় ।

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:২২

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: ধন্যবাদ

২৬| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৮

শোভন ওকে বলেছেন: "সে একটা কমদামী ব্লক বাটিকের জামা গায়ে দিলেও মনে হইতো কত্তো দামী জামাটাই না জানি পড়ছে। আর আমি ভালো দেইখ্যাও জামা পড়লে আমারটা এমন লাগতো না'- আসলেই..... বিষয়টা উপর উপর জানলেও, আজ যেনো নতুনভাবে জানলাম ।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৩৮

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: কোনো কিছু স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিক ভাবে নিবো কিনা এটা আসলে আমাদের নিজেদের উপরেই নির্ভর করে।
ধন্যবাদ পুরনো লেখা খুঁজে পড়ার জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.