নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী-র ব্লগ

একলা চলো রে

ভালো নাম মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী।কল্পবিজ্ঞান, সাইকোলজিক্যাল গল্প এবং ফ্যান্টাসি নিয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। এসব নিয়েই লিখছি অল্পবিস্তর।

একলা চলো রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: একজন সৎ মন্ত্রী

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৩



আমি বিশ্বাস করতে পারছি না, খোদ একজন মন্ত্রী আমার সামনে বসে আছেন! ছোট্ট একটা ব্যাংকের ছোট্ট একটা কামরায় একজন জলজ্ব্যান্ত মন্ত্রী কোন নোটিস ছাড়াই চলে আসবেন, এটাকে একদমই স্বাভাবিক বলা যায় না। আমি এসির ঠান্ডা বাতাসেও দরদর করে ঘামছি।

এই মূহুর্তে কামরায় আছি আমরা চারজন। আমি- এই ব্যাংকের ম্যানেজার, আমার পিএ নাসরিন, বিশিষ্ট মন্ত্রী এবং তার একমাত্র বডিগার্ড।

আমি বুকে একটু সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস করলাম-মি. মিনিস্টার স্যার, আমরা আপনার জন্য কি করতে পারি?



মন্ত্রী খুব ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে বললেন,

-আপনি নিশ্চয় জানেন, আমি এদেশের বড় বড় প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মন্ত্রী-মিনিস্টার পর্যন্ত সবার ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসেব নিচ্ছি এবং কে অসৎ পথে কত টাকা কামিয়েছে সেটা বের করার চেষ্টা করছি। এ ব্যাপারে সরকার যাতে কঠোর ব্যবস্থা নেয় সেটাও নিশ্চিত করেছি।



-জ্বী স্যার, খুবই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। আমরা শুনেছি আপনার ব্যাপারে।



-সমস্যা হল, কয়েকজন বিশিষ্ট মন্ত্রী টাকা রেখেছেন আপনাদের ব্যাংকে। আমি আপনাদের নির্দেশ দিয়েছিলাম যাতে ঐ মন্ত্রীদের একাউন্টে কত টাকা আছে তার একটা হিসেব পাঠিয়ে দেওয়া হয় আমার অফিসে, আপনারা দেননি! কেন?

মন্ত্রী তার ভ্রু ভীষণ রকম কুঁচকে আমার দিকে তাকালেন। আমি নার্ভাস বোধ করছিলাম। কোন রকম কথাগুলো গুছিয়ে নিয়ে বললাম,

-মি. মিনিস্টার স্যার, এ বিষয়টা একটু জটিল। আমাদের ব্যাংকটা নিয়ন্ত্রণ করা হয় ইউরোপের একটা দেশ থেকে। সেখান থেকেই কিছু রুলস এন্ড রেগিউলেশনস নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে আমাদের। যার মধ্যে অন্যতম হল- "ক্লায়েন্টের ব্যক্তিগত তথ্য কারো কাছে প্রকাশ করা যাবে না।"



মন্ত্রী মাছি তাড়ানোর মত করে হাত নেড়ে বললেন,

-আই নোউ এবাউট ইওর ড্যাম রুলস! কিন্তু আপনি জানেন আমি কে? এ দেশে আমার কতটুকু ক্ষমতা? আমাকে সহযোগিতা না করার পরিণাম কি হতে পারে কোন ধারণা আছে আপনার?



ভয়ে গলা শুকিয়ে গেল আমার। তবুও জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে যতটুকু সম্ভব দৃঢ় স্বরে বললাম,

-দেখুন মি. মিনিস্টার স্যার, আমরা জানি আপনি একজন অসম্ভব রকমের ক্ষমতাধর মানুষ। কিন্তু আমরা অসহায়। আমরা কোন ভাবেই আমাদের রুলসের বাইরে যেতে পারি না। বারাক ওবামা কিংবা ভ্লদিমির পুতিনের কাছেও আমরা আমাদের ক্লায়েন্টদের তথ্য প্রকাশ করব না!



মন্ত্রী একটু ব্যঙ্গের হাসি হেসে বললেন,

-আই সি! সেক্ষেত্রে মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে আপনাদের ব্যাংককে এদেশ থেকে উৎখাত করা হবে।



-ওয়েল স্যার, আপনি যদি একঘন্টার মধ্যেও আমাদের উৎখাত করেন, তাতেও আমাদের আপত্তি নেই। বাট উই আর নট এলাউড টু প্রোভাইড ইনফরমেইশনস, স্যার!



মন্ত্রীর চেহারা এবার বাঘের মত ভয়ংকর হয়ে উঠল! তিনি বললেন,

-দেখুন, আপনাদের দেশ বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ব্যবসা করছে। টেক্সটাইল, শিপিং লাইনস, ভেহিকলস.... সব ব্যবসা আমি বন্ধ করে দেব যদি আপনারা আমাকে ইনফরমেশন না দেন। আর এ জন্য আপনার দেশ কাকে একিউজ করবে জানেন? আপনাকে আর আপনার ব্যাংককে।



আমি ভয়ানক রকম অবাক হলাম!

-হোয়াট? স্যার,আপনি নিশ্চয়ই সত্যি সত্যি এটা করবেন না?



-অবশ্য করব, যদি আপনি আমাকে সাহায্য না করেন।



-ওকে স্যার। আপনি চাইলে আমাদের দেশের সকল ব্যবসা বন্ধ করে দিতে পারেন। তারপরও আমি আপনাকে আমাদের ক্লায়েন্ট সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারব না, তাতে করে আমাদের দেশ আমাদের একিউজ-ই করুক কিংবা ইলেক্ট্রিক চেয়ারে বসাক। উই ডোন'ট কেয়ার।



মন্ত্রীর চেহারা স্পষ্ট প্রত্যাখানের অপমানে পাকা আপেলের মত লাল হয়ে গেল। তিনি টেবিলে জোরে থাবড়া মেরে বললেন,



-শেষবারের মত বলছি, আপনারা আমাকে তথ্য না দিলে আমি বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে আপনাদের কোন ফ্লাইট ল্যান্ড করতে দেব না, আপনাদের দেশের সাথে সকল প্রকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করব...।



-স্যার, সেটা কি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে না?



-হলে হবে। হু কেয়ারস?



-ঠিকাছে স্যার, আপনি চাইলে আমাদের দেশের সাথে যুদ্ধও ঘোষণা করতে পারেন। তবুও আমি আপনাকে কোন ধরণের তথ্য দিতে পারব না। আ রুল ইজ আ রুল!



মন্ত্রী কেমন যেন হতাশ হয়ে চেয়ারে ডুবে গেলেন। পরাস্ত কন্ঠে বললেন,

-তাহলে তো একটা উপায়ই আছে।

তিনি বডিগার্ডের দিকে ইশারা করলেন, বডিগার্ড সাথে সাথে একটা রিভলভার বের করে আমার মাথায় তাক করল।



-শেষবারের মত সুযোগ দিচ্ছি আপনাকে ম্যানেজার সাহেব। তথ্য দিন নতুবা জীবন।



আমি চোখ বন্ধ করে রইলাম।বললাম,

-আপনি আমাকে খুন করতে পারেন, তবুও আমি ক্লায়েন্টদের তথ্য দেব না আপনাকে।



রিভলভারের সেফটি ক্যাচ অফ করার শব্দ শুনলাম আমি। ভয়ে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল। এখনি হয়ত ট্রিগার টিপে দেয়া হবে। মৃত্যুর হাতে নিজেকে সপে দেওয়ার জন্য সকল মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে ফেললাম।



ট্রিগার টিপছে...টিপছে...টিপছে...এই তো, আমি শেষ!



এক সেকেন্ড!

দুই সেকেন্ড!

পাঁচ সেকেন্ড!

দশ সেকেন্ড!



কই কিছু হচ্ছে না কেন? ভয়ে ভয়ে চোখ খুললাম। দেখি মন্ত্রী সাহেব সব ক'টা দাঁত কেলিয়ে হাসছেন। হাসতে হাসতেই বললেন,

-আমি সন্তুষ্ট মি. ম্যানেজার। এবার বলুন তো,আপনাদের ব্যাংকে একাউন্ট খোলার প্রসিডিয়ার-টা কি?

(সমাপ্ত)



(বিঃদ্রঃ এই গল্পটি একটি ইংরেজি গল্প দ্বারা অনেকাংশে প্রভাবিত।)

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এই কাহিনীটা বিদেশের ব্যাকগ্রাউন্ডে লেখা পড়েছিলাম একবার।

সুইস ব্যাংকে আফ্রিকান কোন এক কথিত সৎ মন্ত্রীর একাউন্ট খোলা নিয়ে!!!!!

আমাদের দেশের মন্ত্রীরাওতো এর বাইরে নন।

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:২১

একলা চলো রে বলেছেন: ভাগ্যিস, আমাদের দেশে এই ধরণের ব্যংক নেই।

২| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:২১

এ.টি.এম.মোস্তফা কামাল বলেছেন: বাংলাদেশের আইনেও ব্যাংক আদালতের আদেশ ছাড়া কোন গ্রাহকের তথ্য দিতে পারে না। ব্যাংকের যে দেশের উৎসই থাকুক বাংলাদেশের নিয়ম মেনে ব্যাংকিং করতে হয়।

গল্প ভালো লেগেছে।

২৩ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:২৯

একলা চলো রে বলেছেন: তাই নাকি? জানা ছিল না তো।

ধন্যবাদ।

৩| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:২৫

দরিয়ানগর বলেছেন: এ বার বলুন তো,আপনাদের ব্যাংকে একাউন্ট খোলার প্রসিডিয়ার-টা কি?

ভাল লাগল।

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩১

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার নামটা তো বেশ!

৪| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:২৫

মদন বলেছেন: শেষ টুইস্টটা সেইরাম =p~

২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৩২

একলা চলো রে বলেছেন: মদনকে ধন্যবাদ। :)

৫| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:৫৮

হাসান মাহবুব বলেছেন: গল্পটা যে মৌলিক না সেটা উল্লেখ করা উচিত ছিলো। একই কাহিনীর ইংরেজি গল্প অনেক আগেই পড়েছি নেটে।

২৩ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৩৭

একলা চলো রে বলেছেন: সাত-আট বছর আগে ইংরেজি গল্পটা পড়েছিলাম। কিন্তু গল্পের নাম আর লেখকের নাম মনে পড়ছিল না। তাই অনুবাদ করার ইচ্ছে নিয়ে লিখতে বসেও লিখিনি, বরং থিমটাকে ঠিক রেখে নিজের মত করে লিখেছি। তাই প্রথমে উল্লেখ করিনি। তারপরও আপনি যখন বললেন আপনার মন্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ পোস্টটা এডিট করে নিলাম।

৬| ২২ শে জুন, ২০১৩ রাত ৯:১২

বটের ফল বলেছেন: হাসান মাহবুব ভাইয়ের সাথে একমত পোষন করছি।

একই সাথে ভালোলাগা জানিয়ে যাচ্ছি।

ভালো থাকবেন।

২৩ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৩৯

একলা চলো রে বলেছেন: পোষন বানান ভুল।

যাই হোক, আপনিও ভালো থাকবেন।

৭| ২৩ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৬

মাক্স বলেছেন: সুন্দর!

২৪ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৫

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ।

৮| ২৪ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:৩৬

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: ইস! বাস্তবে যদি মন্ত্রিরা সব এমন হত!

পোস্টে প্লাস ভাইজান। ভাল লেগেছে গল্প। আমি আপনার ভার্সনটাই প্রথমে পড়লাম। মূল ইংরেজি লেখাটা আগে কখনো পড়িনি আমি।

২৪ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৭

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ। কিন্তু বাস্তবে এমন মন্ত্রী কেন?

৯| ২৫ শে জুন, ২০১৩ রাত ১০:৫৩

মায়াবতী নীলকন্ঠি বলেছেন: সুন্দর

২৯ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১:১৪

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ মায়াবতী।

১০| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৩ দুপুর ১:১৯

শুঁটকি মাছ বলেছেন: হুর মিয়া!
এইডা আগেই পড়ছিলাম!মূল গল্পে মনে হয় সুইস ব্যাংকের কথা লেখা আছিল!

০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:১৪

একলা চলো রে বলেছেন: আমি আন্তরিকভাবে দু্ঃখিত এই গল্পটা লেখার জন্য।

১১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৯

শুঁটকি মাছ বলেছেন: ধুর মিয়া,কষ্ট পান ক্যান?গল্প কি খারাপ হইছে নাকি?গল্প তো সুন্দর হইছে!!!!!হতাশ হইছিলাম কারণ কাহিনী আগেই বুঝে ফেলছিলাম!আপ্নার কাছ থেকে একদম ঝরঝরা গল্প আশা করছিলাম!!!!

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৩০

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ।

১২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪৬

ইরফান আহমেদ বর্ষণ বলেছেন: ভালা হইছে!!!!!!!!!!!!!

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৩১

একলা চলো রে বলেছেন: :)

১৩| ০৬ ই জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫১

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেকদিন পর দারুন একটা গল্প পড়লাম।
মনে করেছিলাম হয়তোবা স্বপ্ন হবে। যে টা সাধারণতঃ হয় আর কি।
দূর্বল লেখকরা হয় স্বপ্ন না হয় মৃত্যু দিয়েই ঘটনার সহজ সমাপ্তি করেন।কিন্ত শেষের টুইস্টটা দারুন লেগেছে।

আমি গল্পটি আগে পড়িনি সেইজন্যই হয়তোবা আমার বেশী ভালো লেগেছে।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++++
একগুচ্ছ প্লাস।

০৭ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১১:৩৩

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ। তবে আসল ক্রেডিট হল মূল ইংরেজি লেখকের।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.