নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী-র ব্লগ

একলা চলো রে

ভালো নাম মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী।কল্পবিজ্ঞান, সাইকোলজিক্যাল গল্প এবং ফ্যান্টাসি নিয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। এসব নিয়েই লিখছি অল্পবিস্তর।

একলা চলো রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

রোবোগড (কল্পগল্প)

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ২:৩১

"ড. জোন, আপনার ফোন এসেছে, খুব জরুরী।"



হালকা পাতলা শরীরের সুন্দরী এসিসট্যান্টের জরুরী সুরে বলা কথাগুলোর কোন প্রভাব দেখা গেল না ড. জোনের মধ্যে। তিনি মাইক্রোস্কোপের নিচ থেকে ব্যাকটেরিয়া ভর্তি প্লেট নামাতে নামাতে মৃদু ভৎসর্নার সুরে বললেন,



"আস্তে কথা বলো মারিয়া। আমার কুকুরটা ঘুমোচ্ছে!"



জোনের কথার সত্যতা প্রমাণ করতেই যেন পায়ের কাছে গুটিসুটি মেরে পড়ে থাকা কুকুর ছানাটা "কুঁইই" করে করুণ সুরে অভিযোগ করে বসল।



ড. জোন ফোনের রিসিভারটা কাঁধ আর কানের ফাঁকে গুজে দস্তানা খুলতে খুলতে বাঁজখাই গলায় বললেন,



"ড. উইলিয়াম জোওন স্পিকিং, হু এম আই টকিং টু প্লীজ?"



ওপাশ থেকে একটি অসম্ভব রকমের কতৃত্বপূর্ণ এবং গম্ভীর আওয়াজ বলে উঠল-



"দিজ ইজ ব্রায়ান এন্ডারসন!"



"হুইচ ব্রায়ান এন্ডারসন? এই নামের কাউকে তো চিনি বলে মনে পড়ছে না!"



এবার ড. জোনের পাশে দাড়ানো সেক্রেটারী মেয়েটা চোখ গোল গোল করে করে কাঁপা কাঁপা গলায় কি যেন বলতে চাইল, জোন হাতের ঝাপটায় তাকে চুপ করে থাকতে নির্দেশ দিলেন।



"আপনি সত্যিই ব্রায়ান এন্ডারসনকে চেনেন না ড. জোন?"



"উমম...আই গেস, নোও!"



"ওয়েল, লেট মি ইন্ট্রোডিউস ইউ, দিজ ইজ ব্রায়ান এন্ডারসন, প্রেসিডেন্ট অফ ইউনাইটেড স্টেইটস অব আমেরিকা!"



খোদ আমেরিকার প্রেসিডেন্টের নাম শুনেও একটুও চমকালেন না জোন। হাতের দস্তানা খুলে বেসিনে হাত ধুতে ধুতে বললেন-



"ও, আই সি!"



যেন জোন আরো বড় মাপের কোন মানুষ আশা করছিলেন।



"ড. জোন, আপনার সঙ্গে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা ছিল।"



"টাওয়েল প্লীজ!"



"দুঃখিত?"



"আপনাকে নয়, আমার এসিস্ট্যান্টকে।"



পাতলা সুন্দরী একটা ছোট টাওয়েল এগিয়ে দিতে সেটা দিয়ে হাত মুছতে মুছতে জোন বললেন-



"আপনার সঙ্গে কথা বলতে কি ওয়াশিংটন আসতে হবে? আমার অতো সময় হবে না!"



ওপাশ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস শোনা গেল। প্রেসিডেন্ট বেশ ব্যঙ্গাত্বক সুরেই বললেন-



"জানি যে আপনি অনেক ব্যস্ত মানুষ ড. জোন। তাই আমরাই কষ্ট করে আপনার বাড়িতে এসেছি। কিন্তু সমস্যাটা কি জানেন? আপনার বাড়ির দাড়োয়ান আমাকে ঢুকতে দিচ্ছে না ভিতরে। তার কথা, আপনি নাকি এই সময় খোদ ঈশ্বরপূত্রকেও বাড়িতে ঢুকতে মানা করেছেন! তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে ফোন করা। এখন আপনি যদি দয়া করে আমাদের প্রবেশ করার অনুমতি দেন....!"



সশব্দে হো হো করে হেসে উঠলেন জোন।



পনের মিনিট পর। সুন্দর-প্রশস্ত লিভিংরুমের সোফায় বসে আছেন ড. জোন। তার সামনে প্রেসিডেন্ট এন্ডারসন এবং দু'পাশে কড়া ছাঁটের কম্প্লিট স্যুট পরা দু'জন জাদরেল চেহারার ব্যক্তি।



সিগারেট ধরাতে ধরাতে তাদের দিকে নির্দেশ করলেন ড. জোন,



"হু আর দেস গাইজ প্রেসিডেন্ট? এরা এখানে কি করছে?"



প্রেসিডেন্ট অমায়িক হাসলেন, "পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি। ইনি হলেন রিয়ার এডমিরাল ড্যানিয়েল সিম্পসন, ইউএস নেভীর প্রধান। আর এই নীল স্যুট পরা ভদ্রলোক হলেন এয়ার ভাইস মার্শাল বেন রবার্টসন। ইউএস এয়ারফোর্সের প্রধান।"



-ভেরি গুড, প্লেজার টু মিট ইও।



এয়ার ভাইস মার্শাল একটু হাসলেন। বললেন,



"আপনার সঙ্গে দেখা করতে পেয়ে আমি গর্বিত ড. জোন স্যার। এনভায়রনমেন্টাল কেমিস্ট্রি আর বায়োটেকনোলজি নিয়ে আপনার যুগান্তকারী গবেষণার কথা আমি শুনেছি। আমার ছোট মেয়েটা আপনার ছাত্রী, মানে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়- ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজিতে পড়ছে, সে আপনার বিশাল ফ্যান! আপনি যেদিন নোবেল পেলেন, সেদিন আমাদের ঘরে রীতিমতো একটা পার্টি দিয়েছিল সে!"



"সাউন্ডস গুড। এবার কাজের কথায় আসবেন আপনারা?" জোন নির্লিপ্ত ভাবে বললেন কথাগুলো।



খুক খুক করে কেশে প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান এন্ডারসন গলা পরিস্কার করলেন।



"ওকে ড. জোন, আমরা কাজ প্রসঙ্গে আসি।"



"প্লীজ!"



"ড.জোন, প্রথমেই আমি আপনার ভাই প্রফেসর এমেট মারিয়ার্টি জোনের মৃত্যুর জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। তার মতো পদার্থবিদ এবং প্রকৌশলী পৃথিবীর ইতিহাসে খুব কমই এসেছে।"



"ধন্যবাদ। কিন্তু শুধু শোক প্রকাশ করার জন্য নিশ্চয়ই পুরো আমেরিকান ডিফেন্স সিস্টেমকে আমার বাসায় নিয়ে আসেননি আপনি?"



"ঠিক ধরেছেন ডক্টর। এবার আপনাকে একটা নিউজ দিই। আপনি কি জানেন, প্রশান্ত মহাসাগরের সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ডে একটা রোবোরিসার্চ সেন্টার আছে?"



"অবশ্যই। শুনেছি ঈদানিং সেখানে রোবোটদের মধ্যে মানুষের মতো সুখ-দুঃখের অনুভূতি দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে রিসার্চ সেন্টারটা প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ন্যাশনাল ডিফেন্স সিস্টেমে রোবো-উইপন এবং রোবটদের অংশগ্রহণ করানোর জন্য। এখন নাকি নানা ধরনের রোবোটিক রিসার্চও হচ্ছে।"



"ঠিক শুনেছেন। এবার আপনাকে দু'টো নিউজ দিচ্ছি যেটা এখনো মিডিয়াগুলো জানে না।"



"বলুন।"



"প্রথমত, গত মাসে রোবোগুলোর মধ্যে হিউম্যান ফিলিংস এর স্বার্থক-অনুপ্রবেশ ঘটানো হয়েছে। এখন রোবোগুলো মানুষের মতো সুখ-দুঃখের অনুভূতি বুঝতে পারে। দ্বিতীয়ত, ওখানে পাঁচ হাজার রোবোট এবং রোবো-উইপন আছে। এই পাঁচ হাজার রোবোকে কম্যান্ড দেয়ার জন্য আছে সর্বাধুনিক এবং সবচেয়ে বুদ্ধিমান পঁচিশটা রোবো-লিডার। দুঃখজনকভাবে গতকাল রাতে, রোবোলিডারগুলো হুমকি দিয়েছে যে সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ডকে একটা স্বাধীন সার্বভৌম রোবো রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে। নতুবা তারা মানব-জাতির সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।"



ড. জোনোর ভ্রু কুঁচকে গেল! বললেন- "হোয়াট দা হেক! এত সিনেম্যাটিক আইডিয়া রোবোটগুলোর মাথায় এলো কিভাবে? হিউম্যান ফিলিংস দেয়ার জন্য ট্রান্সফরমার ফিল্ম সিরিজের মুভি দেখিয়েছিলেন নাকি আপনারা?"



এই প্রথম এডমিরাল মুখ খুললেন, "বিষয়টা ফানি এবং ড্র্যামাটিক শোনালেও সত্য ড. জোন। এবং তার চেয়েও ভয়ংকর বিষয়, সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ড আমেরিকার জন্য ভয়াবহ হুমকি এখন। ঐ দ্বীপটার উপর এই মূহুর্তে আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ওদের নিজস্ব পাওয়ার সিস্টেম আছে। ওদের কাছে অত্যাধুনিক রোবো-উইপন আছে। ট্রাস্ট মি, কয়েক হাজার রোবট মিলে যদি আমেরিকার উপর আক্রমণ করে বসে, তাহলে এক মিলিয়ন মানুষের মৃত্যু নিশ্চিত। পুরো আর্মি, এয়ারফোর্স, নেভি মিলেও ওদের কাবু করাটা কষ্টকর হবে।"



জোন গম্ভীর হয়ে গেলেন এবার। বললেন-



"তাহলে আপনারা সময় থাকতেই কেন দু'টো ফাইটার পাঠিয়ে দ্বীপটাকে গুড়িয়ে দিচ্ছেন না?"



এয়ার ভাইস মার্শাল উত্তর দিলেন-"দু'টো নয় ডক্টর। পাঁচটা অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান পাঠানো হয়েছে দ্বীপটাতে। একটাও ফিরে আসেনি। আপনি বোধহয় জানেন না যে দ্বীপটাতে ফ্লাইং রোবো-উইপন আছে ৫০ টা। আধুনিক যুদ্ধবিমানের চেয়ে কোন অংশে কম নয় সেগুলো।"



"হলি কাউ! এতগুলো রোবো উইপন রেখেছেন ওখানে, কোন কন্ট্রোল-সিস্টেম রাখেননি?"



"অবশ্যই," প্রেসিডেন্ট বললেন। "ত্রিশজন বিজ্ঞানী কন্ট্রোল সিস্টেম চালাতো। বাট নো ওয়ান ডিড সারভাইভ!



রোবো-লিডাররা কন্ট্রোল সিস্টেম মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে।"



"হুম বুঝলাম, ভয়াবহ ব্যাপার। কিন্তু এ জন্য আপনাদের ডিফেন্স সিস্টেম আছে, ইন্টারন্যাশনাল রোবো-কাউন্সিল আছে, আমার কাছে আপনারা কি চান? আমি এমনকি কম্পিউটার এবং ইলেকট্রনিকসের উপর কোন বিশেষেজ্ঞও নই!"



"কিন্তু আপনার প্রয়াত ভাই, প্রফেসর মারিয়ার্টি এবং আপনার যৌথ উদ্যেগে একটা রোবোটিক উইপন ইন্ড্রাস্ট্রি চলত, সেটা কি ভুলে গেছেন ডক্টর? আপনার ভাইয়ের মৃত্যুর পর সেটা আপনিই চালান, তাই না?"



"ও, আই সি! আপনারা আমার কাছ থেকে রোবো উইপন কিনতে চান?"



"হ্যা।"



"কতগুলো?"



"আমাদের জানামতে এই মুহুর্তে আপনার কাছে ১১৯ টা অটোমেটিক রোবো-উইপন আছে। আমরা সবগুলো কিনতে চাই।"



"দু'টো প্রশ্ন মি. প্রেসিডেন্ট।"



"বলুন ডক্টর।"



"প্রথম প্রশ্ন, আপনারা নিশ্চয়ই জানেন যে মারিয়ার্টির মৃত্যুর পর রোবো-উইপন ইন্ডাস্ট্রি চালানোর জন্য আমি একটা ম্যানেজমেন্ট কমিটি তৈরি করেছি। আমি শুধু লাভের একটা মোটাসোটা ভাগ পাই, কিন্তু কোন কাজ-বাজ করি না ইন্ডাস্ট্রির জন্য। সুতরাং আপনাদের উচিত ছিল আমার সঙ্গে দেখা না করে ম্যানেজমেন্ট কমিটির সাথে দেখা করা। কিন্তু তা না করে আপনি স্বয়ং আমার কাছে চলে এসেছেন। কেন?"



"আর দ্বিতীয় প্রশ্ন?"



"দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, যখন আপনাদের কাছে এত ভয়ংকর ভয়ংকর সব মারণাস্ত্র আর ম্যান-পাওয়ার আছে, তখন এতগুলো ডলার খরচ করে কেন রোবো উইপন কিনতে চাচ্ছেন আবার?"



"ওয়েল, প্রথমত আপনার সঙ্গে আমি একমত নই যে আপনি ইলেক্ট্রনিকস আর কম্পিউটার বোঝেন না। আপনার একটা বদভ্যাস হলো, নিজের বেশিরভাগ আবিস্কার লুকিয়ে রাখতে চান আপনি। আপনার রোবো ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার নিজের আবিস্কার করা কিছু অত্যাধুনিক টেকনোলজির কথা আমি শুনেছি, আপনার বহুপ্রতিভার কথা আমাদের কাছে গোপন নয় ডক্টর। যাই হোক, দ্বিতীয় প্রশ্নটার উত্তরই আগে দেই কেমন? আমরা আমাদের নিজস্ব ম্যান পাওয়ার ব্যবহার করতে চাচ্ছি না। ডলার যায় যাক, তবুও কতগুলো রোবটকে মারতে গিয়ে দেশের সৈনিকরা মারা যাক, এটা আমরা চাই না।"



মারিয়ার্টি হাসলেন, "গুড পয়েন্ট। প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা?"



"হ্যা, প্রথম প্রশ্ন। আপনার কাছে কেন এলাম।" বলতে বলতে চেহারাটা অসম্ভব রকমের গম্ভীর করে ফেললেন তিনি। তারপর ধীরে ধীরে উচ্চারণ করলেন শব্দগুলো-



"ড. উইলিয়াম জোন, আমরা চাই, সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ডের বিরুদ্ধে আমাদের এই যুদ্ধে আপনি সকল রোবো-উইপন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোবোগড-কে আমাদের সঙ্গে দেন।"



নিমেষেই ড. জোনের হাসি মুছে গেল। এতক্ষণ তার হাবভাবে যে নিরেট আত্মবিশ্বাস দেখা যাচ্ছিল, যেন সেটা গায়েব হয়ে গেল মুহুর্তেই। প্রায় লাফিয়ে উঠে দাড়ালেন তিনি সোফা থেকে।



"হলি শীট মি. প্রেসিডেন্ট! রোবোগডের কথা আপনি কিভাবে জানেন? পৃথিবীতে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোন ব্যক্তি এর কথা জানে না। জানা সম্ভবও নয়। আমি কারো সাহায্য না নিয়ে, নিজের হাতে রোবোগডকে তৈরি করেছি...!"



আস্বস্তির হাসি হাসলেন প্রেসিডেন্ট। "কাম ডাউন ডক্টর। শান্ত হয়ে বসুন। ভুলে যাচ্ছেন কেন আমরা পৃথিবীর সেরা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো চালাই?"



"আপনার গোয়েন্দা সংস্থা রোবোগডের কাছে পৌঁছল কিভাবে?"



"সেটা জানা কি জরুরী?"



"যদি আমার সাহায্য পাওয়াটাকে জরুরী মনে করেন, তবে অবশ্যই জরুরী।"



কাঁধ ঝাকালেন প্রেসিডেন্ট।



"ওয়েল ড. জোন, আপনার ল্যাব এসিসট্যান্ট, মিস মারিয়া হফম্যান এফবিআই-র স্পেশাল এজেন্ট। তাকে পাঠানো হয়েছে আপনার গবেষণা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য আমাদের জানানোর জন্য।"



কটমট করে পাতলা সুন্দরীর দিকে তাকালেন ড. জোন। মেয়েটা ক্ষমা প্রার্থনার ভঙ্গীতে হাসার চেষ্টা করল।



প্রেসিডেন্টের দিকে ফিরলেন জোন,



"রোবোগড সম্পর্কে আপনারা কি জানেন মি. প্রেসিডেন্ট?"



"তেমন কিছু জানি না। শুধু এটুকু জানি যে এটা পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রোবট। এর বুদ্ধিমত্তা যে কোন বুদ্ধিমান মানুষের চেয়েও বেশি। রোবোগডের এমন কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, যা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না। কিন্তু সেই বৈশিষ্ট্যগুলো কি, সেটা আমরা জানি না।"



"ওয়েল, এবার বলুন আপনি রোবোগডকে কেন চান?"



"কারণ আমরা একটা তথ্য জানি, রোবোগডকে আপনি কোন ধরণের কম্পিউটারাইজড প্রসিডিয়ার ছাডাই শুধু আপনার মস্তিস্ক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। কিভাবে আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন, সেটা অবশ্য আমাদের জানা নেই! জানাটা এই মুহুর্তে জরুরীও নয়। সবগুলো রোবোট যখন রোবোগডের নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তখন ওরা চাইলেও সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ডের রোবটদের মতো বিদ্রোহ করতে পারবে না। আর রোবোগড যেহেতু আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তাই বিদ্রোহী হতে পারবে না সেও।"



"আপনার চিন্তা ভাবনা দেখে আমি মুগ্ধ মি. প্রেসিডেন্ট। বুঝতে পারছি, একদল করিৎকর্মা লোকদের দিয়ে দেশের ডিফেন্স সিস্টেমটা চালান আপনি।"



বিনয়ের হাসি হাসলেন প্রেসিডেন্ট। "তো এবার বলুন ডক্টর, আপনি কি আমাকে সাহায্য করবেন?"



"অবশ্যই মি. প্রেসিডেন্ট, উই ক্যান্ট রিস্ক ওয়ান মিলিয়ন পিপিল'স লাইভস!"



"ধন্যবাদ। তাহলে রোবোগডের নেতৃত্বে সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ডকে গুড়িয়ে দেয়া হোক। কি বলেন আপনারা?"



"ইয়েস স্যার!" বিমান ও নৌ-প্রধান একসাথে বলে উঠলেন। ড. জোনের দিকে তাকালেন প্রেসিডেন্ট, "ড. জোন, তাহলে আমাদেরকে রোবোগড সম্পর্কে সবকিছু বলুন....ইনস এন্ড আউটস, সব।"



রহস্যময় হাসি হাসলেন ড. জোন। "ঠিক আছে, তবে রোবোগডকে বুঝতে হলে আপনাদেরকে এনভায়রেন্টাল কেমিস্ট্রির উপর একটা পাঁচ মিনিটের লেকচার দেখতে হবে Sci-TV তে।"



"ওহ নো! টিভি শো'র জন্য অপেক্ষা করার সময় আমাদের নেই ডক্টর। আপনিই বলুন না।"



"অপেক্ষা করতে হবে না মি. প্রেসিডেন্ট। এই মূহুর্তে লাইভ দেখানো হচ্ছে প্রোগ্রামটা।"



"ঠিক আছে, দ্রুত করুন!"



টিভি সেট অন করলেন ড. জোন। কামরায় উপস্থিত সবাই নড়েচড়ে বসল। মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগল অনুষ্ঠানটা।



টিভিতে একটা অডিটরিয়াম দেখা যাচ্ছে। কোন একটা ইউনিভার্সিটির অডিটরিয়াম। একজন দীর্ঘদেহী প্রফেসর লেকচার দিচ্ছেন। কতগুলো ছাত্র-ছাত্রী শুনছে আর নোট করছে। উপরে বামদিকে লেখা- "LIVE"



মাইকে প্রফেসর বলে যাচ্ছেন...."দিজ ভাইরাস হ্যাজ ভেরি স্মোল এমাউন্ট অফ রাইবোনিউক্লিক এসিড...."



ড. জোন ছাডা অন্যরা প্রথমে লেকচারের জটিল বায়োকেমিক্যাল টার্মের কিছুই বুঝল না। কিন্তু শুনতে লাগল মনোযোগ দিয়ে। পনের সেকেন্ড কেটে গেল। সবাই তাকিয়ে আছে টিভি সেটের দিকে। তারপর টিভিতে এমন কিছু হলো, এমন কিছু বললেন দীর্ঘদেহী প্রফেসর, যে হঠাৎ করেই ঘরের সবাই ভয়াবহ রকমের চমকে উঠল। এমনকি পাতলা সুন্দরী চিৎকার দিয়ে উঠল। প্রেসিডেন্ট লাফ দিয়ে দাড়িয়ে গেলেন।



"ওহ নো...হলি শীট....আই কান্ট বিলিভ ইট....।"



ড. জোন মৃদু মৃদু হাসছেন এখন। সবার বিস্ময় উপভোগ করছেন।



||দুই||



দশ বছর পরের এক শীতের সন্ধ্যা; মস্ত হলঘর, কাঁচাপাকা গোঁফওয়ালা এক কম্পিউটার বিজ্ঞানী স্টেজে দাড়িয়ে স্পিকারে বক্তৃতা দিচ্ছেন-



".....আপনাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক রোবো-কাউন্সিলের ১২১ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আজকের এই অনুষ্ঠানে স্বাগতম। পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে আপনাদের মতো বিশ্ববরেণ্য বিজ্ঞানীরা এখানে এসেছেন, সেজন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আপনারা জানেন যে আজ আমরা রোবোটিক বায়োলজির সর্বাধুনিক প্রযুক্তি PRC-3GS এর উদ্বোধন করতে যাচ্ছি। এই প্রযুক্তি উদ্বোধন করতে স্টেজে আসবে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ রোবট- 'রোবোগড'। হ্যা, সেই রোবোগড, যে আজ থেকে দশ বছর আগে, ২২৭৮ সালে সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ডের এক অবশ্যম্ভাবী রোবোট-বিদ্রোহ দমন করেছিল। দুঃখের বিষয়, সেই রোবো-বিদ্রোহীদের হাতে রোবোগডের স্রষ্টা, ড. উইলিয়াম জোন নিহত হন। এরপর গত দশ বছর থেকে রোবোগড ইন্টারন্যাশনাল রোবো কাউন্সিলে কাজ করছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত আমরা রোবোগডের কপোট্রনিক ফাংশান বুঝতে পারিনি, পারিনি রোবোগডের মতো বুদ্ধিমান কোন রোবোট তৈরি করতে। সেই বিখ্যাত রোবোগড এখন আপনাদের সামনে স্টেজে আসছে, গিভ হিম আ বিগ হ্যান্ড!"



হাততালিতে ফেঁটে পড়ল পুরো হলরুম।



স্টেজে উঠে আসল লম্বা-চওরা-স্বাস্থ্যবান চেহারার একজন মানুষের আকৃতিতে তৈরি রোবট, রোবোগড। পরনে কম্প্ল্যিট স্যুট। চকচকে পালিশ করা জুতো।



স্টেজে এসে মাইকটা হাতে নিয়ে সে বলল-



"শুভসন্ধ্যা। আমি জানি আপনারা PCR-3GS প্রযুক্তির উদ্বোধনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। আমি আর কথা বাড়িয়ে সময় নষ্ট করতে চাই না।.........."



*** *** ***



গভীর রাত। আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। রোবোগড সেদিকে তাকিয়ে আছে। তার বুদ্ধি মানুষের চেয়ে কোন অংশে কম না। চাঁদের সৌন্দর্য্য বোঝার ক্ষমতা তার কপোট্রনে আছে। কিন্তু এই মূহুর্তে সে তা বোঝার চেষ্টা করছে না। সে বেশ চিন্তিত ক'দিন ধরে। বার বার একটা কথাই মনে হচ্ছে তার, প্রতিদিন সে এমন কোন কাজ করছে, যেটা তার করার কথা না। কিন্তু কাজটা কি, সেটা সে বুঝতে পারছে না। রোবোগড গত দশ বছর ধরে এই রোবো কাউন্সিলের অফিসে আছে। এমন হাজার রকমের গাণিতিক এবং বায়োলজিক্যাল সমস্যা সমাধানে সে রোবো কাউন্সিলকে সাহায্য করেছে, যেগুলো রোবট তো দূরে থাক, দুনিয়ার বাঘা বাঘা কম্পিউটারবিদ এবং জীববিজ্ঞানীরাও করতে পারেনি। তার অসম্ভব রকমের জটিল রোবোটিক ইন্টেলিজেন্স মানুষের ব্রেনকেও হার মানিয়েছে বহুবার। কিন্তু ঈদানিং বেশ ক'দিন ধরেই তার মনে হচ্ছে, কোথাও সে কিছু ভজঘট পাকিয়ে ফেলেছে। এমন কিছু সে করছে, যেটা রোবট হিসেবে তার করার কথা নয়। হ্যা, তার কপোট্রন পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত রোবোটিক-ব্রেইন; কিন্তু যত উন্নতই হোক, রোবটের কিছু বেসিক Laws থাকে, তার মনে হচ্ছে সে কোন বেসিক ল-এর লংঘন করেছে, কিন্তু সেটা কি বুঝতে পারছে না।



হঠাৎ বিদ্যুত চমকের মতো কিছু একটা মনে পড়ল ওর। এক লাফে উইন্ডোজ ফর্টি ফাইভ কম্পিউটারের সামনে চলে আসল। অত্যাধুনিক কম্পিউটারটা তার উপস্থিতি টের পেয়ে অন হয়ে গেল নিজে নিজেই। যান্ত্রিক গলায় প্রশ্ন করল-



"হোয়াট মে আই ডু ফর ইউ স্যার?"



"ঔপেন দা ফাইল Z-95 ।"



বলতে যা দেরি, অসম্ভব দ্রুততায় ওপেন হয়ে গেল জেড নাইন্টি ফাইভ। এন্ডিপড গ্র্যাভিটেশনাল এক্সিলেরেশনের একটা জটিল সমীকরণের সমাধান আছে এতে। কিছুদিন আগে রোবোগড নিজে হাতে সমাধান করেছে এই সমীকরণের।



"কম্পিউটার, সতের নম্বর স্টেপটা সামনে আনো।"



"হিয়ার ইউ আর স্যার!"



মনোযোগ দিয়ে সতের নম্বর স্টেপের সমাধান দেখতে লাগল রোবোগড। দেখতে দেখতে হঠাৎ একজায়গায় এসে তার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। একটা ম্যাথমেটিকাল ভুল আছে এখানে। সাধারণ ভুল, কিন্তু ভুলই। লেখা আছে-



.03^-2.5=5414



অথচ ডানপাশে হওয়ার কথা 6415, অর্থাৎ সে একটা গাণিতিক ভুল করেছে। কিভাবে তা সম্ভব? কোন রোবটের ভুল করার সাধ্য নেই, ইচ্ছা থাকলেও নয়। ভুল করা মানব মস্তিস্কের একটা লক্ষণ, কম্পিউটারাইজড রোবো-মস্তিস্কের নয়। তার মানে কি সে মানুষ? রোবট নয়?



আরো একটা বিষয় রোবগডের মনে পড়ে গেল। রোবো-কাউন্সিলের বার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে যে প্রযুক্তির উদ্বোধন করা হয়েছিল সেটা হলো PRC-3GS, গোঁফওয়ালা ভদ্রলোকও সেটাই উচ্চারণ করেছিল। অথচ রোবোগড উচ্চারণ করেছিল PCR-3GS। "সি" এবং "আর" আগে পরে, অথচ এই ধরনের ভুল একটা অসম্ভব বিষয় কোন রোবটের জন্য।



তার মনে আছে, PRC-3GS প্রজেক্টে বিভিন্ন প্রযুক্তিবিদ এবং উদ্ভিদবিদদের দলে সেও কাজ করেছিল। PRC মানে ফাইকোলজিক্যাল রোবোটিক কো-অর্ডিনেশন। উদ্ভিদ জগতের বিকল্পরূপে কিভাবে রোবোটিক প্ল্যান্ট পরিবেশের উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে, সেটা নিয়ে গবেষণা করাই ছিল প্রজেক্টটার লক্ষ্য। এই প্রজেক্টে কাজ করার পরও প্রজেক্টের নামের উচ্চারণে এই জাতীয় ভুল করার একটাই অর্থ, সে কোন রোবট নয়, মানুষ।



ভাবতে ভাবতে ভয়ানক রকম উত্তেজিত হয়ে উঠল রোবোগড। চট করে একটা স্টিলের পাত তুলে নিল ডেস্ক থেকে,পাতটার সুঁচালো কোনা দিয়ে কেটে দিল নিজের হাত। সে যদি রোবোট হয়, তাহলে সিনথেটিক চামড়া কেটে এলুমিনিয়ামের পাত বেরিয়ে যাওয়ার কথা। আর যদি......



কেটে যাওয়া চামড়ার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল রোবোগড।



এ ভয়ানক!

অবিশ্বাস্য!!

বিস্ময়কর!!!



রোবোগডের কেটে যাওয়া চামড়া থেকে গল গল করে রক্ত বেরিয়ে আসছে। লাল রক্ত, হিমোগ্লোবিন সমৃদ্ধ। তার মানে....তার মানে....সে রোবট নয়, মানুষ।



তিনটা প্রশ্ন উকি দিল তার মাথায়-



এই ঘটনা বুঝতে দশ বছর লাগল কেন তার? সে যদি মানুষ হয় তাহলে তার পরিচয় কি? রোবো-কাউন্সিল বোকা নয়, তারা নিশ্চয় জানে যে সে মানুষ,তাহলে সেটা গোপন করার কারণ কি?



হঠাৎ একটা কথা মনে হতেই কেঁপে উঠল রোবোগড। তার নিজের চেহারাটা কেমন? কখনো কি সে আয়নায় দাড়িয়ে দেখেছে? দেখেনি!



কম্পিউটারের দিকে ফিরল রোবোগড।



"কম্পিউটর, আমার একটা ফটো তোলো, কুইক!"



"সরি স্যার, আপনার ফটো তোলার অনুমতি নেই আমার।"



"হোয়াট? কেন?"



"আমার জানা নেই স্যার, রোবো কাউন্সিল এভাবেই প্রোগ্র্যাম করেছে আমাকে।"



"ফাক ইউর রোবো কাউন্সিল! আমি বলছি, দ্রুত একটা ফটো তোলো আমার।"



"সরি স্যার, আমি প্রোগ্রাম করা কম্পিউটার, প্রোগ্র্যাম ব্রেক করার ক্ষমতা আমার নেই।"



"তাহলে শোনো, Mac6GKAKJX101DaBNDJ643K, এবার ফটো তোলো!"



"রাইট স্যার, এখনি তুলছি!"



যে কোডটা এইমাত্র রোবোগড বলল, সেটা তার নিজের আবিস্কার করা কোড, এর নাম সে দিয়েছে "Uni-code"। দুনিয়ার সব কম্পিউটারই বাইনোমিয়াল নাম্বার নিয়ে কাজ করে। এই ইউনিকোড পাঁচহাজার বাইনোমিয়াল সংখ্যাকে এমনভাবে এক করেছে, যে পৃথিবীর যে কোন কম্পিউটারে এই কোড ইনপুট করলে সেটার সকল প্রোগ্র্যাম ভেঙে যায়। ইচ্ছেমতো বদলে দেয়া বা নষ্ট করা যায় প্রোগ্র্যাম। এই আবিস্কার সম্পর্কে কাউকে এখনো কাউন্সিলকে জানায়নি রোবোগড।



"কম্পিউটার, ফটো তোলা হয়েছে?"



"পজিটিভ স্যার।"



"শোও মি!"



"হিয়ার ইউ আর স্যার।"



নিজের ছবির দিকে তাকিয়ে রোবগডের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিল; শীতল স্রোত বয়ে গেল মেরুদন্ড দিয়ে! বিস্ময়ের একটা সীমা-পরিসীমা থাকা উচিত, অতিরিক্ত বিস্ময়ে তার সকল অনুভূতি ভোঁতা হয়ে গেছে!



"ও মাই গড! হলি শিট!! আই কান্ট বিলিভ ইট!!!"



ছবিতে রোবোগডের যে চেহারা দেখা যাচ্ছে, সে আর কেউ নয়, রোবগডের স্রষ্টা, ড. উইলিয়াম জোন; তার মানে সে রোবোগড নয়, বরং স্বয়ং রোবোগডের স্রষ্টা-ড. জোন!



||তিন||



"প্রিয় সুধী, এই ই-মেইলটি যার যার হাতে পৌঁছেছে, ধরে নেবেন একই সাথে একটা বিশাল দায়িত্ব এবং ঝুঁকি পিছু নিয়েছে আপনার। তাই সতর্ক হয়ে, গোপনীয়তা রক্ষা করে, খুব গুরুত্বের সাথে মেইলটি পড়বেন।



আপনাদের অবগতির জন্য জানিয়ে রাখি যে, এই চিঠি ইমেইল করা হয়েছে আমেরিকার রাষ্ট্রপতি, তিন সামরিক বাহিনীর প্রধান, মিনিস্ট্রি অফ ডিফেন্স, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি, সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি এবং ফেডরেল বিউরো অফ ইনভেস্টিগেশন এর পরিচালকের কার্যালয়ে।



প্রথমেই আমার পরিচয় দিয়ে রাখি। আমি হলাম ড. উইলিয়াম জোন। হ্যা, সেই ডক্টর জোন যিনি বিশ্ববাসীর চোখে মৃত! আপনাদের জানামতে, দশ বছর আগে, সেন্ট জ্যোসেফ আইল্যান্ডে রোবোট বিদ্রোহের সময় নিজের আবিস্কার করা রোবট-'রোবগড' এর সাথে একটি ফাইটার প্লেনের বিস্ফোরণে মারা গিয়েছি আমি। কিন্তু সত্যটা হলো, রোবোগড সেদিন ধ্বংস হলেও আমি মারা যাইনি। বিদ্রোহী রোবোটের একটা গ্রুপ আমার অজ্ঞান দেহটা চুরি করে নিয়ে পালিয়ে যায়।



সেই পালিয়ে যাওয়া শ' খানেক রোবোট দুনিয়ার চোখের আডালে, শিকাগোর একটা পরিত্যক্ত কয়লা খনিতে তৈরি করেছে নিজেদের ঘাঁটি। মাত্র দশবছরের মধ্যেই ওরা যে ঘাঁটিটাকে কতটা আধুনিক করেছে, আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। ওদের নিজস্ব পাওয়ার হাউজ আছে, নিজস্ব গবেষণাগার আছে, আছে কম্পিউটার এবং নানান ধরণের রোবো-উইপন। সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ডে ওদের হাতে যেসব সুযোগ সুবিধা ছিল, সেগুলো ওরা সব এখানে নিয়ে এসেছে। সেগুলোর ইম্প্রুভ করেছে। এবং এসব কাজে গাধার মতো সাহায্য করেছি আমি।



সম্ভবত কোন সাইকোলজিস্ট রোবোট হিপনোটিজমের মাধ্যমে আমাকে আমার পরিচয় ভুলিয়ে বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়েছে যে আমিই আসলে রোবোগড। তারপর আমার আবিস্কার করা সকল প্রযুক্তি ধীরে ধীরে হাতিয়ে নিয়েছে ওরা! দশ বছর লেগে গেছে আমার, নিজের পরিচয় ফিরে পেতে! কিছু গানিতিক ভুলের মাধমে নিজেকে ফিরে পেয়েছি। এতদিন ধরে আমার কাছে শিকাগোর সেই কয়লাখনিকে ইন্টারন্যাশনাল রোবো কাউন্সিল, এবং মানুষরূপী রোবটগুলোকে সত্যিকারের মানুষ হিসেবে পরিচয় করিয়েছে ওরা!



আপনারা হয়তো ভাবছেন যে একজন মানুষকে কিভাবে বিশ্বাস করানো সম্ভব যে সে রোবট, মানুষ নয়? কারণ মানুষের খাওয়া দাওয়া করতে হয়, বাথরুমে যেতে হয়, ওসুখ বিসুখ হলে চিকিৎসা নিতে হয়, রোবটের এসব ঝামেলা নেই।



উত্তরটা হলো, প্রতিদিন দুই ঘন্টা আমার কোন স্মৃতি থাকে না। চার্জ দেয়ার নামে ২ ঘন্টা অচেতন রাখার কথা বলা হয়। অনেক চেষ্টা করেও আমি বের করতে পারিনি এই দুইঘন্টায় কি হয়! আমার ধারণা, আমার মানবীয় কাজগুলো এই দুইঘন্টায় করানো হয় আমাকে দিয়ে।



এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গে আসি, এই রোবোটদের উদ্দেশ্য কি? উদ্দেশ্য হলো প্রথমে পুরো আমেরিকার উপর কব্জা করা এবং ধীরে ধীরে সারা পৃথিবীর উপর! বিশ্বাস করুন, মাত্র একদিনের মধ্যে গোটা দেশের ডিফেন্স সিস্টেমকে ভেঙে দেয়ার মতো শক্তি এবং পরিকল্পনা রোবোটদের আছে। দশ বছর আগে ওরা যেমন ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এখন। পাঁচশোর মতো নতুন রোবোট এবং রোবো-উইপনও তৈরি করেছে এরা। অতিশিঘ্রই ওরা আঘাত হানবে আমেরিকার উপর। সব পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি শেষ।



বাঁচতে হলে দু'টো কাজ করতে হবে আপনাদের। প্রথমত বিশ্বাস করতে হবে আমাকে। দ্বিতীয়ত, ওরা আঘাত হানার আগেই আপনাদের আক্রমণ করতে হবে। আমি এই ইমেইলের সাথে পুরো রোবো-বেইজের কোথায় ল্যাব আছে, কোথায় পাওয়ার হাউস আর রোবো-উইপন আছে, কোথাও আছে কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সেন্টার, সবকিছুর ডিটেইলস ইনফরমেশন এবং ম্যাপ এটাচ করে দিয়েছি।



মনে রাখবেন, আপনাদের হাতে সময় খুব কম, খুব বেশি হলে মাত্র তিন দিন। কারণ এখানকার পুরো ইন্টারনেট হিস্ট্রি রোবো-লিডাররা নিজ হাতে চেক করে। ভিতর থেকে কেউ বাইরের দুনিয়ায় যোগাযোগ করলে কিংবা বাহির থেকে কেউ যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেয়া হয়। আমি আমার নিজের আবিস্কার করা ইউনিকোডের মাধ্যমে আগামী ৭২ ঘন্টা আমার ইন্টারনেট হিস্ট্রি লুকিয়ে রাখতে পারব, এর বেশি নয়।



আপনাদের সাহায্যের অপেক্ষায়- ড. উইলিয়াম জোন।



||চার||



৭২ নয়, মাত্র ৪৮ ঘন্টার মাথায় ইমারজেন্সি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হলো। ৫৩ তম ঘন্টায় আক্রমণ করা হলো শিকাগোর সেই কয়লাখনির রোবোট-ঘাটিতে। রোবোটরা সতর্ক থাকার পরও শেষরক্ষা হলো না। প্রথমেই পাওয়ার হাউজগুলো ধ্বংস করে দেয়ায় শক্তিও দ্রুত শেষ হয়ে আসতে লাগল তাদের। অল্প সময়েই রোবোট-ঘাটি টাস্ক ফোর্সের নিয়ন্ত্রণে চলে এলো।



যুদ্ধ শেষ হতে টাস্ক ফোর্সের লিডার ফ্লিন রাইডার দলবল নিয়ে হন্য হয়ে খুঁজতে লাগল ড. জোনকে। ড. জোন আগে থেকেই সুরক্ষিত স্থানে লুকিয়ে ছিলেন। টাস্ক ফোর্সের সাড়া পেতে বেরিয়ে এলেন।



"ড. জোন? আপনি ঠিক আছেন?"



ফ্লিন রাইডারের প্রশ্নে মৃদু হাসলেন ড. জোন।



"হ্যা, আমি ঠিকাছি। আপনাদের কি অবস্থা অফিসার? পুরো বেইজ নিয়ন্ত্রণে আছে তো?"



"ইয়েস ডক্টর, পরিস্থিতি সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে।"



"গুড! এখন কিছু কাজ করতে হবে আমাকে। যত দ্রুত সম্ভব বিজ্ঞান একাডেমীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ব্যবস্থা করুন অফিসার!"



ফ্লিন রাইডার তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল, "অবশ্যই ডক্টর, এখনি করছি!" বলেই হাতের রিভলভারটা ড. জোনের হৃৎপিন্ড বরাবর তাক করে গুলি করল সে। ছিটকে গিয়ে পাঁচ হাত দূরে পড়লেন ড. জোন। দু'হাতে বুক চেপে ধরে দাঁতে দাঁত ঘষে গর্জে উঠলেন-



"হোয়াট দা হেক আর ইউ ডুয়িং ইউ সান অফ বিচ?"



"আয়াম জাস্ট ফলোয়িং অর্ডার!" ঠান্ডা গলায় উত্তর দিল ফ্লিন রাইডার।



||পাঁচ||



(দশ বছর আগের কথা।)

টিভিতে একটা অডিটরিয়াম দেখা যাচ্ছে। কোন একটা ইউনিভার্সিটির অডিটরিয়াম। একজন দীর্ঘদেহী প্রফেসর লেকচার দিচ্ছেন। কতগুলো ছাত্র-ছাত্রী শুনছে আর নোট করছে। উপরে বামদিকে লেখা- "LIVE"



মাইকে প্রফেসর বলে যাচ্ছেন...."দিজ ভাইরাস হ্যাজ ভেরি স্মোল এমাউন্ট অফ রাইবোনিউক্লিক এসিড...."



ড. জোন ছাডা অন্যরা প্রথমে লেকচারের জটিল বায়োকেমিক্যাল টার্মের কিছুই বুঝল না। কিন্তু শুনতে লাগল মনোযোগ দিয়ে। পনের সেকেন্ড কেটে গেল। সবাই তাকিয়ে আছে টিভি সেটের দিকে। তারপর টিভিতে এমন কিছু হলো, এমন কিছু বললেন দীর্ঘদেহী প্রফেসর, যে হঠাৎ করেই ঘরের সবাই ভয়াবহ রকমের চমকে উঠল। এমনকি পাতলা সুন্দরী চিৎকার দিয়ে উঠল। প্রেসিডেন্ট লাফ দিয়ে দাড়িয়ে গেলেন।



"ওহ নো...হলি শীট....আই কান্ট বিলিভ ইট....।"



ড. জোন মৃদু মৃদু হাসছেন এখন। সবার বিস্ময় উপভোগ করছেন।



ক্যামেরাটা দীর্ঘদেহী প্রফেসরের মুখের উপর জুম করা হলো, যে দীর্ঘদেহী প্রফেসরকে টিভিতে দেখা যাচ্ছে, সেটা ড. জোনের চেহারা। এটা দেখেই সবাই বিস্মিত। কেউ বুঝতে পারল না যে, টিভির লাইভ প্রোগ্রামে যে চেহারাটা দেখা যাচ্ছে, সেটা যদি ড. জোন হয় তাহলে তাদের সামনে যে বসে আছে সে কে!



এয়ার মার্শাল গর্জে উঠলেন-



"এসব কি ডক্টর? টিভির প্রফেসরটা কে?"



জোন হেসে উত্তর দিলেন, "উনিই আসল ডক্টর জোন।"



"তাহলে আপনি? আপনি কে?"



"আমিই রোবোগড।"



"হোয়াট?" পাতলা সুন্দরীর দিকে কটমট করে তাকাল সে।



মেয়েটা কাঁধ ঝাকিয়ে বুঝাল যে সে নিজেও বিভ্রান্ত!



"ওয়েল জেন্টলম্যান! আমি ব্যাখ্যা করছি," জোনরূপী রোবোগড বলতে লাগল, "ড. জোন রোবোগডকে, মানে আমাকে হুবুহু নিজের মতো করে তৈরি করেছেন। আমার কপোট্রনে এক ধরনের বায়ো-ইলেকট্রিক্যাল কপোট্রন রয়েছে, যেটাতে ইন্সটল করা হয়েছে ড. জোনের ব্রেইন। পৃথিবীতে এটাই একমাত্র বায়ো-ইলেক্ট্রিক রোবোট-ব্রেইন, যা প্রায় মানুষের মস্তিস্কের মতো করে কাজ করতে পারে। শুধু একটাই পার্থক্য, মানুষের ব্রেন ভুল করে, আমারটা করে না। ড. জোন যখন কোন কাজে ব্যস্ত থাকেন, তার অন্য কাজগুলো আমিই করি।"



প্রেসিডেন্ট হাততালি দিয়ে বলে উঠলেন, "ওয়াও! ড. জোন আসলেই একজন এক্সট্রাঅর্ডিনারি পার্সন!!"



এয়ার ভাইস মার্শাল হাত তুললেন, "এক্সকিউজ মি মিস্টার রোবোগড, আই হ্যাভ আ কোয়েশ্চেন।"



"বলুন।"



"আমি শুনেছি ডক্টর জোন আপনার ব্রেনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন এবং আপনি পারেন যে কোন রোবটের ব্রেইন নিয়ন্ত্রণ করতে। কিভাবে?"



"ওয়েল স্যার, আপনি UNF এবং URF টার্ম দু'টোর সাথে পরিচিত?"



"আয়াম আফ্রেইড, নো! উড ইউ এক্সপ্লেইন?"



"শুনুন, মানুষের ব্রেনে কিছু ফ্রিকোয়েন্সি থাকে। রেগে গেলে এক ফ্রিকোয়েন্সি, দুঃখ পেলে আরেক ফ্রিকোয়েন্সি, খুশী হলে আরেক ফ্রিকোয়েন্সি, এভাবে অনেকগুলো ফ্রিকোয়েন্সি আছে। এই ফ্রিকোয়েন্সিগুলো সব মানুষের মধ্যেই মোটামুটি কমন। কিন্তু এসব ছাডাও এমন একটি ফ্রিকোয়েন্সি আছে, যেটা সবার ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র। দু'জন মানুষের ফিঙ্গার প্রিন্ট যেমন এক হয় না, রেটিনার গঠন যেমন এক হয় না, ডিএনএ যেমন এক হয় না, তেমনি দু'জন মানুষের এই বিশেষ ধরনের ব্রেন-ফ্রিকোয়েন্সিও এক হয় না। এটাকে বলা হয় UNF বা ইউনিক নিউরোলজিক্যাল ফ্রিকোয়েন্সি। ঠিক একই ভাবে সকল আধুনিক রোবোটের কপোট্রনে এক ধরনের URF বা ইউনিক রোবোটিক ফ্রিকোয়েন্সি পাওয়া যায়। যেহেতু আমার কপোট্রন একটি বায়ো-ইলেক্ট্রিক কপোট্রন, এখানে UNF এবং URF দুই ধরনের ফ্রিকোয়েন্সিই রয়েছে। ড. জোনের ব্রেন ইন্সটল করার কারণে আমার আর ডক্টরের UNF একই। তাই ড. জোনের যে কোন নির্দেশ ব্রেনওয়েভের মাধ্যমে আমার মেমোরিতে পৌঁছে যায়। আমি চাইলেও আমার UNF বদলাতে করতে পারব না, কিন্তু URF পারব। যে কোন রোবোটের URF এর সাথে নিজেরটা সেট করে আমি ইচ্ছেমতো যে কোন রোবটকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। বুঝেছেন?"



"এক্সিলেন্ট!" সবাই সমস্বরে বলে উঠল।



"আর কোন সিক্রেট আছে আপনার মি. রোবোগড?" প্রশ্নটা করলেন প্রেসিডেন্ট।



"হ্যা। আমি নিজে নিজে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করতে পারি, নিজেই প্রোগ্র্যাম তৈরি করতে পারি। মানব-মস্তিস্ক যা পারে, তা সব পারি। এমনকি যা পারে না, তাও পারি! আমি চব্বিশ ঘন্টা বিনা বিশ্রামে কাজ করতে পারি। সে জন্যই ড. জোন আমার নাম দিয়েছেন- রোবোগড! রোবোটদের ঈশ্বর।"



"ওয়েল, আয়াম ইম্প্রেসড! তাহলে এবার কাজের কথায় আসা যাক। সেন্ট জোসেফ আইল্যান্ডে অভিযানের জন্য আপনি তৈরি তো?"



"ইয়েস প্রেসিডেন্ট!"



"এক মিনিট," এয়ার মার্শাল বললেন-"কাজ প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে আমি শেষবারের মতো একটা প্রশ্ন করতে চাই রোবোগডকে। আর কোন সিক্রেট নেই তো?"



"হ্যা...আর মাত্র একটা। তবে সেটার কোন গুরুত্ব নেই।"



এ কথা শুনে পাতলা সুন্দরী অর্থপূর্ণভাবে হাসল, বোঝা গেল- সিক্রেটটা তার অজানা নয়। সেটা লক্ষ্য করলেন এয়ার মার্শাল । বললেন-



"ওয়েল, ঠিক আছে! এবার তাহলে কাজের প্রসঙ্গে আসা যাক।"



সবাই আলোচনায় ব্যস্ত হয়ে গেল অভিযানের পরিকল্পনা নিয়ে।



||ছয়||



চোখ মেললেন ডক্টর জোন। আশেপাশে তাকিয়ে বুঝলেন যে তিনি বেঁচে আছেন এবং ফ্লিন রাইডার গুলি করে তাকে কয়লাখনির রোবোট-ঘাটির যে জায়গাটাতে ফেলে গিয়েছিল, এখনও সেখানেই পড়ে আছেন তিনি; আশে পাশে কেউ নেই, খাঁ খাঁ নির্জনতা। বুকের কাছে শার্টটা রক্তে ভিজে গেছে।



তিনটা জিনিস তাকে অবাক করল! এক-বুকের বামপাশে গুলি লাগার পরও তিনি বেঁচে আছেন। দুই-তিনি কোন ব্যাথা অনুভব করছেন না। তিন-কোন অজ্ঞাত কারণে টাস্ক ফোর্স তাকে গুলি করে ফেলে রেখে গেছে। কারণটা কি?



বেশি ভাবার সময় পেলেন না তিনি। তার আগেই হলোগ্রাফিক স্ক্রিণ জ্যান্ত হয়ে উঠল। হলোগ্রাফিক চিত্র কেন কিভাবে এল বুঝতে পারলেন না তিনি। তবে যে লোকটাকে চিত্রে দেখা গেল,তাকে তিনি চেনেন।



চিত্রের লোকটা কথা বলে উঠল-



"গুড আফটারনুন ড. জোন। আমাকে চিনতে পারছেন তো?"



"হ্যা, আপনি ইউএস এয়ার মার্শাল । দশ বছর আগে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমার বাড়িতে এসেছিলেন।"



"রাইট! সেদিন আপনার বাড়িতে গিয়ে আমরা একের পর এক সারপ্রাইজ পেয়েছিলাম। তাই না? আজ আপনাকে কিছু সারপ্রাইজ দিই, কেমন?"



"আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন। আমাকে গুলি করা....."



"থামুন ডক্টর, আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন একে একে। আগে আমার কথা শুনুন!"



"ঠিক আছে, বলুন।"



"সারপ্রাইজের জন্য রেডি তো? তাহলে শুনুন, আপনি নিজেকে যে ড. জোন ভেবে বসে আছেন, আপনি কিন্তু জোন নন, আপনি হলেন রোবোগড!"



"হোয়াট?"



"হ্যা, হিপনোটিজমের মাধ্যমে আপনাকে মানসিকভাবে রোবোগড বানানো হয়নি, এমনিতেই আপনি রোবোগড! আপনার চেহারা আর ডক্টরের চেহারা এক হওয়ায় এবং আপনার আংশিক স্মৃতিভ্রষ্ট হওয়ায় আপনি নিজেই বিভ্রান্ত হয়ে গিয়েছেন।"



"তা কি করে হয়? কি করে সম্ভব? এই যে দেখুন, আমার বুক থেকে রক্ত পড়ছে।"



"হ্যা পড়ছে! কিন্তু কোন ব্যথা অনুভব করছেন? করছেন না! রক্তও ফুরিয়ে যাবে কিছুক্ষণের মধ্যে।"



"তার মানে?"



"আপনি, রোবগড, দশ বছর আগে একটা সিক্রেট লুকিয়েছিলেন আমাদের কাছ থেকে! সেটা আমরা পরে ড. জোনের এসিসট্যান্ট মারিয়ার কাছ থেকে জেনেছি।"



"কি সেটা?"



"তেমন কিছু না! জোনের একটা রসিকতা। ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত কিনে আপনার সিনথেটিক চামরার নিচে কৃত্রিম শিরা আর ধমনী তৈরি করে প্রবেশ করানো হয়েছে, যাতে অন্যরা বিভ্রান্ত হয়।"



"তাহলেও প্রশ্ন থেকে যায়। আগেরবার যখন হাত কেটেছিলাম, আমার কেটে যাওয়া চামরা জোড়া লেগে গিয়েছিল। কি করে?"



"হা হা হা! এটা একটা প্রাচীন পদ্ধতি। একবিংশ শতাব্দী থেকেই এই প্রযুক্তি সামরিক কর্মকর্তাদের গাড়িতে ব্যবহৃত হতো। এক ধরণের তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব; টায়ারে কেউ গুলি করলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাপমাত্রা বেড়ে-কমে টায়ার আবার জোড়া লেগে যেত। সে প্রযুক্তিই আপনার সিনথেটিক চামরায় ব্যবহার করা হয়েছে।"



"হলি কাউ!"



"আর কোন প্রশ্ন ড. জোন..... ওপস! মি. রোবোগড?"



"হ্যা, আমি বেশ কয়েকবার ভুল করেছি। গাণিতিক ভুল, উচ্চারণগত ভুল। মানুষ ভুল করে, রোবট করে না! এর ব্যাখ্যা কি?"



"ওয়েল, এটা আমাদের কাছেও পরিস্কার নয়। তবে আপনি এক বিশেষ ধরনের বাইনোমিয়াল কোডের কথা বলছিলেন, রাইট?"



"ইয়েস, ইউনিকোড!!"



"হোয়াটএভার, বিজ্ঞান একাডেমির ধারণা, কোডটা এতই শক্তিশালী যে আপনার বায়ো-ইলেক্ট্রিক ব্রেইনের সিস্টেমে একটা কম্পিউটার ভাইরাস তৈরি করেছে। হয়তো দেখবেন, প্রতি একশোটা অংক করার পর ১০১ নম্বরের সময় হিসেবে ভুল করবেন।"



কেমন যেন অবিশ্বাসের ছায়া দেখা গেল জোনরূপী রোবোগডের চেহারায়। হতাশ গলায় প্রশ্ন করল-



"শেষ একটা প্রশ্ন! আমাকে ড. জোন ছাড়া আর কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারত না। রোবোটরা কিভাবে পারত?"



"এটা ডক্টর জোনের একটা গাধামী। কখনো যদি তার নিজের ব্রেন ফ্রিকোয়্যান্সি দিয়ে আপনাকে নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তখন কাজ চালানোর জন্য একটি ফ্রিকোয়্যান্সি রেগিউলেটর যন্ত্র তৈরি করে রেখেছিলেন। টের পেয়ে রেগিউলেটরটা চুরি করে নেয় বিদ্রোহী রোবটরা। আসলে ড. জোন যে মারা গেছেন, এবং রোবোগড বিদ্রোহী রোবোটদের হাতে চলে গেছে, সেটা আমরা আগে থেকেই টের পেয়েছিলাম। হন্য হয়ে খুঁজছিলাম আপনাকে। কিন্তু পাইনি!"



"এখন তো পেলেন, এবার? কি করবেন আমায় নিয়ে?"



"সরি টু সে, বাট ইউ আর আ গ্রেট রিস্ক ফর হিউম্যানিটি। রোবোগডের সাহায্য না পেলে হয়তো আর অনেক আগেই বিদ্রোহী রোবটদের শেষ গ্রুপটা ধরা পড়ে যেত! তাই বর্তমান ইউএস প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আপনাকে ধ্বংস করে ফেলা হবে।"



এমন ভয়ংকর কথা শুনেও কোন ভাব দেখা গেল না রোবগডের। এয়ার মার্শাল বলে যেতে লাগলেন-



"রোবোগড, আপনি অনেক বড় একটা শক্তি ছিলেন, কিন্তু আফসোস! মানবজাতির আর কোন কাজে আসতে পারবেন না। তবে ধন্যবাদ জানাতে চাই আপনাকে, পৃথিবীবাসীকে দু' দু'টো ভয়ংকর রোবো বিদ্রোহ থেকে বাঁচিয়েছেন আপনি।"



"ইউ আর ওয়েলকাম!" কথাটা ব্যাঙ্গাত্বক সুরে বলল রোবোগড।



"এখন, বিদায় নিতেই হয়! শুভ বিদায় রোবোগড!!"



"ডেথ ইজ জাস্ট দা বিগিনিং, বিদায়!"



হলোগ্রাফিক স্ক্রিনটা গায়েব হয়ে গেল।



দিনটা ছিল ২২৮৮ সালের ৩১ শে জানুয়ারি,



কোন এক পরিত্যক্ত কয়লাখনিতে প্রচন্ড বিস্ফোরণের ফলে কেঁপে উঠেছিল পুরো শিকাগো শহর।



(সমাপ্ত)



মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৪২

সমুদ্র কন্যা বলেছেন: ভাল লাগল গল্প। শেষে ভেবেছিলাম সত্যি বুঝি বিজ্ঞানীকেই মেরে ফেলল, সিনেমাতে তাই দেখায়।

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১

একলা চলো রে বলেছেন: হ্যা, সিনেমাতে তাই দেখায়। :P

ধন্যবাদ পড়ার জন্য। :)

২| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:২৯

মামুন রশিদ বলেছেন: দুর্দান্ত!

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৬

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৮:৪৩

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: অসাধারণ একটা গল্প। মুগ্ধ হয়ে পড়লাম!

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:০৭

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনার মুগ্ধতা আমার প্রেরণা।

৪| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৬

অরুদ্ধ সকাল বলেছেন:
দারুন লিখতে পারেন আপনি।
আজ খানিকটা পড়লাম।
আপনার হাত থেকে আরো গল্প পড়তে চাই

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১০

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ। আজ নিশ্চই পুরোটা পড়েছেন?

ভালো থাকবেন।

৫| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৩১

হাসান মাহবুব বলেছেন: দুর্দান্ত! মুগ্ধ হলাম পড়ে।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ৯:১০

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৬| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৯

বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: আমি মুগ্ধ !!!!! অসম্ভব ভাল লেগেছে। ধন্যবাদ।

০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:৪০

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

৭| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪২

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


এক কথায় অসাধারন লাগল। ++++++++

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭

একলা চলো রে বলেছেন: এত বড় গল্প সময় নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। :)

৮| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:২৯

নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন:

দুর্দান্ত একটা সায়েন্স ফিকশন পড়লাম! টুইস্টের উপরে রাখছেন সমস্ত গল্পে! পাঠকের মন নিয়ে দারুন খেলেছেন ভাই!শুরুটা একটু ঢিমে তালে হলেও একটু পরেই চমৎকার মোড় নিয়ে এগিয়েছে। বিশেষ করে টাইম জাম্পটা ছিল গল্পের বাড়তি আকর্ষণ!

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। খুটিনাটি খেয়াল রেখে গল্প পড়েন এমন পাঠকই ভালো লাগে। অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন। :-)

৯| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৮

শান্তির দেবদূত বলেছেন: এক কথায় দূর্দান্ত! এত গতিশীল আর চমকে ভরপুর সাই-ফাই অনেকদিন পড়ি না। পুরাটা সময় বলতে গেলে একটা ধাঁধাঁর মধ্যে ছিলাম, এত দ্রুত ঘটনাপ্রবাহ বদলাচ্ছিল যে চুম্বকের মত এটে ছিলাম গল্পটায়। অনেক অনেক ভালো লিখেছেন। এমন গল্প সামনে আরও আশা করছি। শুভেচ্ছা রইল।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। সত্যি বলতে সাইফাই গল্প সবসময় আপনারী মন্তব্যের আশায় থাকি। :P

অনেক ধন্যবাদ।

১০| ০৫ ই মার্চ, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৪

উদাস কিশোর বলেছেন: অসম্ভব রকম ভাল লেগেছে ।
সত্যিই চমত্‍কার

০৬ ই মার্চ, ২০১৪ রাত ১১:৩৩

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ , ভালো থাকবেন

১১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১:৪০

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: জটিল ++

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৪৫

একলা চলো রে বলেছেন: :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.