নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী-র ব্লগ

একলা চলো রে

ভালো নাম মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী।কল্পবিজ্ঞান, সাইকোলজিক্যাল গল্প এবং ফ্যান্টাসি নিয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। এসব নিয়েই লিখছি অল্পবিস্তর।

একলা চলো রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ ডিলিউশান

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৪২



পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলার সময় বাসটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলল। জানালা দিয়ে পাহাড়, বড় বড় গাছ পেরিয়ে শূন্যতা দেখতে পেলাম আমি। খাড়া ঢালের পাশে এসে বাসটা ব্রেকফেল করেছে। কিছুক্ষণ শূন্যে ভেসে রইল সেটা ঐ অবস্থায়। তারপর প্রচন্ড জোরে গিয়ে আছড়ে পড়ল মাটিতে। পড়েই ঝাঁকি খেয়ে খেয়ে নামতে লাগল নিচে।
চারিদিকে প্রচন্ড তান্ডব, চেচামেচি শুরু হয়েছে মানুষের। বাঁচার তীব্র আকুতি নিয়ে মানুষ ক্রমাগত চিৎকার করে যাচ্ছে। আর আমি স্তব্ধ হয়ে বসে আছি।
প্রথম ঝাঁকুনিতে বাসের ছাদের সাথে সংঘর্ষে আমার কাঁধটা ভেঙে গেল। গাছের ডাল ভাঙার মতো করে হাড় ভাঙার শব্দ পেলাম। গগন বিরাদী চিৎকার বেরিয়ে এলো আমার গলা দিয়ে। দ্বিতীয় ঝাঁকুনিতে প্রচন্ড জোরে কিছুর সঙ্গে আমার মাথা ঠুকে গেল। রক্ত ছিটকে এসে আমার চোখের পাপড়ি ভিজিয়ে দিল। আমি জ্ঞান হারালাম।
কতক্ষণ কেটে গেল, কি হলো জানি না। অনেকক্ষণ পর এক টেকো ভদ্রলোককে আমার উপর ঝুঁকে থাকতে লাগলাম আমি। আমার গলায় বাম হাত রেখে কি যেন পরীক্ষা করছে সে। আরেক হাতে কব্জি চেপে ধরে পালস দেখছে। দেখা শেষ হলে হতাশ হয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল-
“বেঁচে নেই।”
আমার বুকটা বোধহয় ধড়াস করে উঠল। কি বলে বেঁচে নেই? আমি বেঁচে নেই? সেটা কি করে হয়? এই তো দেখতে পাচ্ছি সব, শুনতে পাচ্ছি, শরীরে টেকো ভদ্রলোকের হাতের স্পর্শ টের পাচ্ছি, তারপরও বলছে আমি বেঁচে নেই? বেঁচে থাকার সংজ্ঞা কি তাহলে?
ভদ্রলোক এবার হাত দিয়ে আমার খোলা চোখ বন্ধ করে দিলেন। আমি চিৎকার করে বলতে চাইলাম, “কি করছেন আপনি? কি করছেন? আমি তো বেঁচে আছি! আমাকে বাঁচতে দিন!!” আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরোল না। অব্যক্ত বেদনায় আমি গলা ছেড়ে কাঁদতে চাইলাম। কিন্তু কণ্ঠস্বরও বুঝি প্রতারণা করল, আমি কাঁদতেও ব্যর্থ হলাম।


হঠাৎ কেমন সবকিছু বদলে গেল চারপাশে! ধড়ফড় করে উঠে বসে বসলাম নিজের বিছানায়। ঘেমে নেয়ে গেছি পুরোপুরি। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, হাত পা ঠিকই আছে। ঘাড় মটকায়নি, এক্সিডেন্টও হয়নি কোন। আমি ঠিক আছি। দুঃস্বপ্ন দেখেছি। আমার পাশে শুয়ে ছিল আমার স্ত্রী, মোহনা। আমার ছটফটানিতে তারও ঘুম ভেঙ্গেছে। সে উঠে বসে আমার হাতে হাত রাখল। মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করল- “স্বপ্ন দেখেছ?”
আমি ঝরঝর করে কেঁদে ফেললাম। মৃত্যু এবং জীবনের মধ্যে কত স্বল্প দূরত্ব আমি সেটা টের পেয়েছি।
মোহনা আর কিছু জিজ্ঞেস না করে আমার হাত ধরে আমাকে বাথরুমে নিয়ে গেল। বলল-
“একটু হাত মুখ ধুয়ে নাও, স্বপ্নের ঘোর কেটে যাবে।”
আমি বেসিনের সামনে দাড়িয়ে জোরে জোরে পানির ছিটা দিতে লাগলাম সারা মুখে। মনে হচ্ছে আমার নাকে-মুখে এখনো রক্ত লেগে আছে। মোহনা পাশ থেকে বলল-
“মাথায় পানি দিয়ে দেব? ভালো লাগবে।”
আমার মাথায় পানি দিতে লাগল সে। ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে আমার স্নায়ু শান্ত, সুস্থির হলো কিছুটা। আমি মাথা থেকে দুঃস্বপ্নটা ঝেরে ফেলতে চাইলাম। এই বেঁচে থাকাটাকে অনুভব করতে চাইলাম সমগ্র অস্তিত্ব দিয়ে।


ঠিক তখনই আবার সব কেমন যেন ঝাপসা হয়ে গেল। আমার সারা শরীর কেমন যেন অনুভূতিশূন্য, কেমন নিষ্প্রাণ হতে লাগল আস্তে আস্তে। পৃথিবীটাকে ঝাপসা দেখলাম।
পরমুহূর্তেই সেই টেকো ভদ্রলোককে দেখতে পেলাম আবার চোখের সামনে। এক হাতে আমার চোখ বন্ধ করে আরেক হাতে একটা কাপড় দিয়ে আমার মুখমন্ডল ঢেকে দিচ্ছেন তিনি।
আমার অস্তিত্ব কেঁপে উঠল ভয়ানক ভাবে, আমি তাহলে সত্যিই মারা গিয়েছি। মৃত্যুর আগে শেষ প্রতিচ্ছবি দেখেছি নিজের জীবনের!
এবার আমি আর কষ্ট পেলাম না। আমার অনুভূতিগুলো মনে হচ্ছে একটু একটু করে মুছে যাচ্ছে। শরীরটা যেন হারিয়ে যাচ্ছে খুব অন্ধকার, জমাট বাঁধা, অজানা কোন বলয়ে। এভাবেই কি সবাই মারা যায়?
চেতনার শেষ বিন্দু পর্যন্ত বেঁচে থাকার প্রচন্ড আকুতি আমার মধ্যে হাহাকার করে গেল।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৫১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: মৃত্যু খুবই শীতল!!! খুবই!!!!

ডিপ ফ্রিজের শীতলতাও যেখানে উষ্ণ মনে হয়!!!!!!!!!!!!

মৃত্যু এক চরম বাস্তব- যাকে বেশীরভাগই এড়িয়ে চলতে চায়!

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৪

একলা চলো রে বলেছেন: মৃত্যুকে এড়িয়েই চলা উচিত, বেঁচে থাকার স্বার্থে। তা বলে অবশ্য মৃত্যুকে ঠেকানো যায় না কোন ভাবেই। সে চিন্তা করাও বোকামী। তবুও তো বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে খুব।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে ভৃগু। প্রায়ই আপনাকে প্রথম মন্তব্যে পেয়ে যাই। অনেক শুভকামনা গ্রহণ করুন।

২| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২০

হাসান মাহবুব বলেছেন: মৃত্যু... যে রহস্যের সমাধান নেই কোন।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:২৬

একলা চলো রে বলেছেন: হ্যা। কোন সমাধান নেই। জন্মিলে মরিতে হয়। মৃত্যু রহস্য যদি সমাধান হয়েই যেত, তাহলে পৃথিবীর মানুষের সংস্কৃতি, বিশ্বাস, ইতিহাস অন্য রকম হতো। মৃত্যু রহস্য জেনে ফেললে হয়তো মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকার প্রবণতাই থাকত না, কে জানে!

পাঠে কৃতজ্ঞতা জানবেন মাহবুব ভাই। ভালো থাকবেন।

৩| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩২

সুমন কর বলেছেন: ভালো লাগল।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

একলা চলো রে বলেছেন: ভালো লাগা সানন্দে গ্রহণ করলাম সুমন কর। আপনার নামটা আমার অত্যন্ত প্রিয়। অনেক গল্পের চরিত্রে এই নামটা আমি ব্যবহার করেছি।
ভালো থাকবেন।

৪| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৯

সুমন কর বলেছেন: ঈদ সংকলনে সংযুক্ত করে দিয়েছি।

২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনার প্রচেষ্টাটুকুতে সাধুবাদ রইল। আমার গল্প যুক্ত করায় কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। অনেক শুভকামনা গ্রহণ করুন।

৫| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৩

কালীদাস বলেছেন: লেখাটা ভাল হয়েছে :)

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১৪

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ কালিদাস , আপনার ভাললাগা গ্রহন করলাম। উষ্ণ শুভকামনা জানবেন। :)

৬| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৮

শামীম আরেফীন বলেছেন: সুন্দর গল্প। প্রথম দুই প্যারা বেশ নাড়া দিল। শেষ পরিণতি অন্যরকম হবে আশা করেছিলাম। "ঠিকাছি" শব্দটা কি ঠিক আছে ব্রাদার?

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:২১

একলা চলো রে বলেছেন: না, ঠিক আছি হবে। ঠিক করে দিচ্ছি। ধন্যবাদ ধরিয়ে দেবার জন্য। পাঠে কৃতজ্ঞতা। ভালো থাকবেন আরেফীন।

৭| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৩৬

আজমান আন্দালিব বলেছেন: ভালো লাগা

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৬

একলা চলো রে বলেছেন: গৃহীত হলো।

৮| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

নবাব চৌধুরী বলেছেন: আমিতো বেঁচে আছি,আমাকে বাঁচতে দিন।
লেখককে অনেক ধন্যবাদ,গল্পটা আমার বেশ লেগেছে।শুভ কামনায় থাকলাম।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৩৮

একলা চলো রে বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ পড়ার জন্য, পাঠককবিহীন লেখকের কি কাজ! আপনার ভালো লেগেছে জেনে অনেক বেশি আনন্দিত হলাম। ভালো থাকবেন নবাব।

৯| ০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:০০

উপন্যাসের ছেঁড়া পাতা বলেছেন: শেষ সময়ে হলেও সবাই বাঁচতে চায়।।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৫০

একলা চলো রে বলেছেন: সবাই বাঁচতে চায় না, যদি চাইত তাহলে পৃথিবীতে প্রতি পনের মিনিটে একজন করে মানুষ আত্মহত্যা করত না। যারা জীবনকে চিনেছে, জীবনের ভালো-মন্দ দিক দেখেছে, কিংবা যাদের জীবনে কোন উথান পতন নেই, তারাই বাঁচতে চায়।

১০| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩২

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: আপনি ৯ নম্বর মন্তব্যের জবাবে একজায়গায় বলেছেন, কিংবা যাদের জীবনে কোন উথান পতন নেই, তারাই বাঁচতে চায়

আপনার এই বক্তব্যের সাথে আমি মোটেই একমত নই। বরং যাদের জীবনে উত্থান-পতন নাই, একঘেয়ে; তারাই কখনো কখনো একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবে।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৪৬

একলা চলো রে বলেছেন: হা হা হা! আমার মন্তব্যটা অবশ্যই ব্যাখ্যা করা দরকার। তার আগে "যাদের জীবনে উত্থান-পতন নাই, একঘেয়ে; তারাই কখনো কখনো একঘেয়েমিতে আক্রান্ত হয়ে আত্মহত্যার কথা ভাবে।" কথাটার জন্য আমার লেখা মৃত্যুচক্র গল্পটা পড়ার আমন্ত্রণ রইল।

যাদের জীবনে উথান পতন নেই, তারা বাঁচতে চায় কারণ তারা মারা যাবার কথা ভাবে না। যেমন ধরুন যে জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে , সে হয়তো কোন এক সময় ভাববে, এ জীবন রেখে কি লাভ। কিন্তু যে জীবনে তেমন বড় ধরনের কষ্টও পায়নি, সুখও পায়নি, জীবন জীবনের মতো যাচ্ছে, সে জীবন-মৃত্যু নিয়েও চিন্তিত নয়। আপনার কথাও ঠিক, তবে খুব কম সংখ্যক মানুষের জন্য। সে কম সংখ্যক মানুষের আত্মহত্যা নিয়ে মৃত্যুচক্র গল্পটা লিখেছিলাম আমি।

১১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৩

শুভ৭১ বলেছেন: অনবদ্য লেখনিতে শবনিদ্রার সপ্ন রচিত।।।।শুভ হোক লেখকের জীবনী সপ্ন।।

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০৩

একলা চলো রে বলেছেন: ব্লগার হিসেবে এমন কিছু সুন্দর মন্তব্য পাওয়াও আমার স্বপ্ন। :) অনেক ধন্যবাদ আপনাকে শুভ ৭১। আপনার নামটা অনেক বেশি সুন্দর, একে তো শুভ, তার উপর ৭১।
শুভর জন্য শুভকামনা রইল।

১২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:০১

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: একজন সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ কখনই তার নিজের মৃত্যু কামনা করেনা। আর যখন সে বুঝতে পারে মৃত্যু তার দিকে ক্রমশই এগিয়ে আসছে। তখন তার বেঁচে থাকার ইচ্ছাটা আরো প্রবল হয়ে উঠে। কিন্তু মৃত্যুকে কেউ থামিয়ে রাখতে পারেনা। একদিন না একদিন সবাইকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। পরিশেষে ভালো লাগা রইলো।

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:১১

একলা চলো রে বলেছেন: ভালোলাগা গ্রহণ করলাম সানন্দে। শুভকামনা অভ্রনীল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.