নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী-র ব্লগ

একলা চলো রে

ভালো নাম মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী।কল্পবিজ্ঞান, সাইকোলজিক্যাল গল্প এবং ফ্যান্টাসি নিয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। এসব নিয়েই লিখছি অল্পবিস্তর।

একলা চলো রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

সায়েন্স-ফ্যান্টাসি গল্পঃ চতুর্মাত্রিক চক্র

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪০


এক।
সুমনকে শেষবার যেমন দেখেছিল তার বন্ধুরা, তেমন নেই সে। বদলেছে অনেক। চুল লম্বা হতে হতে ঘাড় ছুঁয়েছে, দাড়ি কামায়নি কতদিন কে জানে। গোসলও করেনি বোধহয়, গা থেকে বোটকা গন্ধ আসছে। চোখ ঢুকে গেছে গর্তে। তবে, এত উলোঝুলো চেহারাতেও ফুটে উঠেছে এক আশ্চর্যরকম তীক্ষ্ণতা, কোটরে ঢুকে যাওয়া চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে রীতিমতো!
শহরের অন্যতম দামী একটা রেস্টুরেন্টে বসে আছে সুমন। তাকে ঘিরে রয়েছে তার বন্ধুরা। চারজন বন্ধু মোট; রবিন, সাজিত, হৃষা এবং সুমাইয়া। এতগুলো তরুণ-তরুণী এক সাথে বসে থাকলে তুমুল আড্ডাবাজি হবার কথা, অনর্গল শব্দে পরিবেশ সরগরম হবার কথা, কিন্তু তেমনটা হচ্ছে না। সবার মুখই বেশ গম্ভীর, থমথমে।
সুমন থমথমে মুখেই প্রশ্নটা করল, “গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বলেই ফেলি, তোদের মনে আছে, আমি সবসময় বলতাম- গণিতই সব, সারা পৃথিবীটা টিকে আছে একটা গাণিতিক ভারসাম্যের উপর?”
সবাই অবাক হয়ে তাকাল সুমনের দিকে। এমন একটা প্রশ্ন এই মূহুর্তে কেউ আশা করেনি। কারণ সুমনের স্ত্রী মারা গেছে মাত্র দু’মাস হয়েছে। এই দু’মাসে সুমনের সাথে কারো যোগাযোগ ছিল না। ঘর থেকে একবারের জন্যও বেরোয়নি সুমন। এতদিন পর ঘনিষ্ঠ বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ডেকেছে ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কিছু বলার জন্য। ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলতে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কয়েকজন সহপাঠী, যারা একই শহরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছে। বন্ধুরা সবাই ভেবেছিল, সুমন হয়তো নতুন করে বিয়ে করার কথা বলবে, কিংবা শহর ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাবার কথা বলবে, কিংবা বলবে সাংসারিক, বৈষয়িক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা। তা না করে এমন অদ্ভুত প্রশ্ন করায় একটু বিস্মিতই হল সবাই। কিন্তু যে যার বিস্ময় যথাসাধ্য লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করল। বিয়ের একবছরেরও কম সময়ে যার বউ মারা গিয়েছে, তাও আবার সেটা ছিল কি না প্রেমের বিয়ে, তার মানসিক অস্থিরতা, কষ্ট এবং অশান্তিকে বিবেচনা করে কোন ভাবে তার মনে কষ্ট দিতে চায় না কেউ।
বন্ধুদের মধ্যে সাজিত একটু রাশভারী মানুষ। সে সুমনের প্রশ্নের উত্তর দিল- “হ্যাঁ, মনে আছে। অনেকবার বলেছিস।”
“কেন বলেছি তা বলতে পারবি?”
“হয়তো তুই গণিত ভালো জানতিস বলে, কিংবা কোন বইতে এই ধরনের কিছু পড়েছিস।”
“না, সেজন্য না। আমি মহাবিশ্বের গঠনের কথা ভেবে এমন বলতাম। যেমন ধর, সূর্যের চারিদিকে সৌরজগতের গ্রহগুলো ঘুরছে, প্রতিটা গ্রহের চারিদিকে ঘুরছে উপগ্রহগুলো, আবার সৌরজগত তার গ্রহ-উপগ্রহ সহ গ্যালাক্সির মধ্যে ঘুরছে। গ্যালাক্সিও স্থির নয়। এই যে পুরো মহাবিশ্বের সবকিছু নির্দিষ্ট পরিমাণ গতি নিয়ে, মহাকর্ষ বল নিয়ে ঘূর্ণায়মান, এর কোথাও একটু বেশি গতি হলে, কিংবা মহাকর্ষ বল একটু বেশি হলে, কি লঙ্কাকান্ড হয়ে যাবে ভেবে দেখেছিস তোরা! সব কিছুর মধ্যে গতির, বলের, তাপের ভারসাম্য দেখেই আমি সবসময় বলতাম, গাণিতিক ভারসাম্যের উপর সব কিছু টিকে আছে। গণিতের মধ্যেইত লুকিয়ে আছে পুরো জগতের সব রহস্য।”
হৃষা অবাক হয়ে শুনছিল সুমনের কথা। সুমন থামতেই বলল, “তুই বলাকার মৃত্যুতে খুব কষ্ট পেয়েছিস তাই না?”
পাশে বসা রবিন টেবিলের নিচ দিয়ে হৃষার হাত জোরে চেপে ধরল, বাকীরা চোখ রাঙাল তাকে। এখানে আসার আগে সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ঠিক করেছিল যে, সুমনের সদ্য-মৃতা স্ত্রীকে নিয়ে আগ বাড়িয়ে সুমনকে প্রশ্ন করবে না কেউ। সুমনের এমন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ বৈজ্ঞানিক আলোচনায় হৃষা সেটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। কোথায় শোকাহত একজন মানুষ তার স্ত্রীর কথা বলে কিছু দীর্ঘশ্বাস ফেলবে, জীবনটাকে নতুন করে সাজিয়ে নেওয়ার কথা বলবে, তা না করে মহাবিশ্বের ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা করে যাচ্ছে!
তবে চোখ রাঙালেও সবাই হৃষার মতোই ভাবছে সুমনের বেখাপ্পা আচরণ নিয়ে। অধিক শোকে মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে কি না এমন সম্ভাবনাও কারো কারো মাথায় উঁকি দিল। অবশ্য সুমনের মধ্যে তেমন ভাবান্তর হল না হৃষার প্রশ্নে। সে হৃষার চোখে চোখ রেখে বলল-
“হ্যাঁ, খুব বেশি কষ্ট পেয়েছি। আমার ভেতরটা ভেঙে-চুড়ে গেছে একদম।”
সুমাইয়া তাড়াতাড়ি বলল-“গণিত নিয়ে যা বলছিলি, বল না সুমন!”
সুমন হাসল। শোকগ্রস্ত মানুষের হাসি বিধ্বংসী দেখায়।
“তোরা ভাবছিস, কোথায় বউ মরে গেছে বলে কান্নাকাটি করব! তা না করে বিজ্ঞানের ছাইপাঁশ আওরাচ্ছি কেন, তাই না?”
“না...তা না...!”
“শোন, আমি বলাকাকে নিয়েই ভাবছি। আমি যা বলছি, তার সঙ্গে বলাকার মৃত্যুর গভীর সম্পর্ক আছে।”
“বলাকার মৃত্যু হয়েছিল গাড়ি এক্সিডেন্টে। তার সাথে এইসব গ্রহ নক্ষত্রের সম্পর্ক কি? এস্ট্রোলজিক্যাল কিছু ভাবছিস?”
“না, বুঝিয়ে বলছি সেটা। আমি এতদিন যে বলতাম, গণিতই সৃষ্টি জগতের মূল রহস্য, আমার ইদানীং মনে হচ্ছে সেটা সত্যি নয়। সৃষ্টি রহস্যের মূলে গণিত নয়, সমস্ত সৃষ্টি রহস্য লুকিয়ে আছে কল্পনাশক্তির মধ্যে।”
রবিন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “কল্পনাশক্তি মানে?”
“কল্পনাশক্তি মানে কল্পনাশক্তি, ইমাজিনেশন পাওয়ার। তুই, আমি যা কল্পনা করি, চিন্তা করি, এই রকম চিন্তা, কল্পনার মধ্যেই লুকিয়ে আছে পুরো মহাবিশ্ব!”
“সেটা কি করে সম্ভব? মাত্র চল্লিশ হাজার বছর আগে আসা হোমো সেপিয়েন্সের কল্পনার সাথে তের হাজার ছয়শ মিলিয়ন বছর আগে সৃষ্টি হওয়া মহাবিশ্বের মধ্যে কেমন করে সম্পর্ক থাকতে পারে?”
“কল্পনাশক্তি বলতে আমি হোমো সেপিয়েন্স, অর্থাৎ মানুষের কল্পনাশক্তির কথা বলছি না, অন্য কোন উন্নত প্রাণীর বা অস্তিত্বের কল্পনাশক্তির কথা বলছি।”
সাজিত কিছুটা অপ্রস্তুত হাসি দিয়ে বলল, “তুই কি সিমুলেশন হাইপোথেসিসের কথা বলছিস?”
“হ্যাঁ, অনেকটা তাই। তবে কিছুটা...।”
এখানে একমাত্র সুমাইয়া বিজ্ঞানের ছাত্রী নয়, সে কিছুটা উৎসুক হয়ে বলল-“এক মিনিট, এই জিনিসটা কি? সিমুলেশন হাইপোথেসিস?”
উত্তরটা রবিন দিল-“সিমুলেশন হাইপোথেসিস একই সাথে একটি দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব। এই থিওরি বলছে যে, আমরা সবাই যে জগতে বাস করছি, দেখছি, শুনছি, ভাবছি...এসবের কোনটাই বাস্তব নয়। সব কিছুই এক ধরনের সিমুলেশন, হয়তো কোন অত্যন্ত উন্নত কম্পিউটার সিমুলেশন, অর্থাৎ ভ্রম। বলা চলে আমরা অনেকটা প্রোগ্রামের মতো, কোন একটা মাস্টার কম্পিউটার আমাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছে এবং আমরা চেষ্টা করলেও এ বিষয়টা কখনোই উপলব্ধি করতে পারব না।”
“তার মানে, এই যে তুই আমার সাথে কথা বলছিস, রেস্টুরেন্টে সবাই খাওয়া দাওয়া করছে, বাইরের রাস্তাঘাট, নীল আকাশ...সব কিছু অবাস্তব? একটা কম্পিউটারের প্রোগ্রাম?”
“যদি সিমুলেশন হাইপোথেসিস সত্য হয়ে থাকে, তাহলে অবশ্যই তাই!”
সাজিত যোগ করল, “ধারণা করা হয়, ২০৫০ সাল আসতে আসতে মানুষ যে পরিমাণ প্রযুক্তি অর্জন করবে, তাতে তারা নিজেরাই নতুন আরেকটা সিমুলেশন তৈরি করতে পারবে।”
হৃষা বোধহয় কিছুটা বিরক্ত, কপালের উপর এসে পরা চুল সরাতে সরাতে সে বলল-“অনেক রহস্যময় বৈজ্ঞানিক মতবাদ আছে পৃথিবীতে; প্যারালাল ওয়ার্ল্ড, ইন্টার ডাইমেনশনাল ডোর, মাইক্রোটিউবিউলসের কোয়ান্টাম দশা, ২১ গ্রাম থিউরি ব্লা ব্লা...কিন্তু এসবের সাথে বলাকার মৃত্যুর সম্পর্ক কোথায়?”
সুমন কেমন যেন ঠান্ডা চোখে তাকাল হৃষার দিকে। কঠিন গলায় বলল, “আমার ধারণা, আমরা যে সিমুলেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, সেটা কোন কম্পিউটার নয়, বরং উন্নত কোন মহাজাগতিক প্রাণীর সিমুলেশন। আমরা সবাই এই সিমুলেশনের অংশ, বলাকাও। কাজেই, সেই মহাজাগতিক প্রাণীর সিমুলেশনে যদি আমরা বলাকাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারি আবার, তাহলে ওকে ফেরত পেয়ে যাব আমরা। বলাকা ফিরে আসবে আমাদের মাঝে!”
সবাই প্রচন্ড বিস্ময় নিয়ে তাকাল সুমনের দিকে। এমন একটা অবাস্তব, অসম্ভব, অতিকাল্পনিক কথা এমন বিশ্বাস নিয়ে কেউ বলতে পারে, এত গুরুত্ব দিয়ে কেউ ভাবতে পারে বলে ধারণা ছিল না ওদের কারো।
সুমাইয়া সহানুভূতি নিয়ে সুমনের হাত ধরল। বলল-
“সুমন, এসব কি বলছিস তুই? কিসের মহাজাগতিক প্রাণী, কিসের সিমুলেশন, কিসের বিজ্ঞান অতশত তো আমি বুঝি না! তবে সোজাসাপ্টা সত্য বুঝি-জন্মিলে মরিতে হয়। জন্ম আর মৃত্যুর উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। বলাকা খুব অসময়ে তোর জীবন থেকে চলে গেছে, মানি। কিন্তু সত্যটা হল , বলাকা চলে গেছে, সে মৃত। আমাদের মাঝে বলাকা আর নেই, কখনো ফিরেও আসবে না। এই সত্যটা কঠিন, কিন্তু এটা মেনে নিতেই হবে তোকে সুমন। মেনে নিয়েই জীবনকে নতুন ভাবে সাজাতে হবে।”
সুমন এক ধরনের উদভ্রান্তের দৃষ্টি নিয়ে সুমাইয়ার দিকে তাকাল। যেন খুব অবাক হয়েছে, যেন কিছু একটা বিশ্বাস করতে পারছে না! কিন্তু বেশ জোরালো গলায় বলল-“তোরা বিশ্বাস করছিস না আমাকে তাই না? তোরা ভাবছিস, আমি অসম্ভব, অবাস্তব কিছু বলছি, ঠিক না?”
কেউ তাৎক্ষণিক ভাবে উত্তর দিতে পারল না। সুমনের যে মানসিক অবস্থা এখন, তাতে বুঝে শুনে শব্দ চয়ন করা দরকার। এমন কিছু বলা যাবে না যাতে তার বিষণ্ণতা আরও দীর্ঘস্থায়ী হয়। রবিন মনে মনে কথা গোছাচ্ছিল, কিন্তু হৃষা প্রায় গা ঝারা দিয়ে উঠে বসে অসহিষ্ণু সুরে বলে উঠল-
“না সুমন, আমরা তোকে বিশ্বাস করতে পারছি না। সিমুলেসশন, মহাজাগতিক প্রাণী, কল্পনাশক্তি...এসব বুলশিট মনে হচ্ছে আমার কাছে। হয়তো আমরা সত্যিই কোন সিমুলেশনের জগতে বাস করছি, হয়তো সেই সিমুলেশন কোন মহাজাগতিক প্রাণীর চিন্তা-ভাবনা মাত্র, হয়তো আমরা সবাই সেই চিন্তা ভাবনার অংশ, হয়তো বলাকাকে সেই সিমুলেশনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব, তারপর হয়তো বাস্তব পৃথিবীতে শূন্য থেকে সৃষ্টি হয়ে দেহপ্রাপ্ত হয়ে সে তোর আমার সামনে এসে দাড়াবে, এতসব হয়তোর মধ্যে বাস্তবতা কোথায়? যুক্তি কোথায়? ফ্যাক্ট কোথায়? মানছি তুই খুব অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিস, মেন্টাল ডিপ্রেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিস, কিন্তু তাই বলে এসব আবোল-তাবোল যুক্তি-প্রমাণহীন হালকা বৈজ্ঞানিক কিছু ধারণা নিয়ে, বলাকাকে বাস্তব পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চিন্তা ভাবনা করে, কষ্ট বাড়ানো ছাড়া আর কিছু হবে বল?”
সুমন সরীসৃপের মতো ভাবলেশ মুখে তাকিয়ে রইল হৃষার দিকে। হৃষার কথা শেষ হলেও চোখ ফেরাল না। ঠান্ডা, নিষ্পলক চোখে তাকিয়ে রইল।
গলা খাঁকারি দিয়ে নরম সুরে রবিন বলল-“হৃষা ঠিক বলেছে সুমন। বলাকা মারা গেছে, আর কখনো ফিরে আসবে না- এই সত্যটা মেনে নিয়েই ভবিষ্যতের চিন্তা করতে হবে, জীবনটাকে নতুন করে সাজিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতে হবে।”
সাজিত যোগ করল-“সুমন, তোর ক্যারিয়ার মাত্র শুরু। দু’বছরও হয়নি ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়েছিস, এখনি ভেঙে পড়া যাবে না বন্ধু। পুরো জীবনটা সামনে পড়ে আছে তোর!”
সুমন দুর্বল মানুষের মতো চেয়ারে গা ডুবিয়ে দিল। তাকে দেখে মনে হল, অনেক কিছু বলার আছে তার, কিন্তু কিছুই বলতে আগ্রহ বোধ করছে না। দু’মিনিট চুপচাপ থেকে সে পরাস্ত গলায় বলল-“তোরা আমাদের বাড়ির বুড়ো দারোয়ানটাকে চিনিস? পড়ালেখা করেনি, বোকা সোকা মানুষ, দিন-দুনিয়া সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। কিন্তু আমি যদি তার পাশে গিয়ে বসি, তাহলেও এসব উপদেশ বাক্য ফ্রিতে দিতে পারবে সে সারাদিন ধরে। তাহলে তোদের কাছে আমি কেন এলাম?”
বিভ্রান্ত দেখাল সবাইকে। সুমন বলে চলল-“আমি তোদের কাছে এসেছি, কারণ আমার ধারণা ছিল, তোদেরকে আমি যা বলতে পারব, বুঝাতে পারব অন্য কাউকে সেটা বুঝিয়ে বলতে পারব না, বিশ্বাস করাতে পারব না। কিন্তু আমার ধারণা বোধহয় ভুল ছিল!”
দুর্বল ভাবে হেসে সাজিত বলল-“সরি সুমন, কিছু মনে করিস না। তুই যা বলতে চাস, খুলে বল, আমরা কেউ আর অবিশ্বাস করব না।”
হৃষাকেও আর বিরক্ত মনে হল না। সেও সুমনকে অনুরোধ করল-“আমিও সরি সুমন। তুই প্লিজ বল যা বলছিলি। তবে একটা জিনিস আমি বুঝতে পারছি না, আমরা যে একটা সিমুলেশনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, এটা না হয় একটা বৈজ্ঞানিক মতবাদ, কিন্তু তোর কেন মনে হল যে এটা কোন উন্নত মহাজাগতিক প্রাণীর সিমুলেশন? আর কেনই বা মনে হল যে তুই এই সিমুলেশনে বলাকাকে ফিরিয়ে আনতে পারবি?”
সুমন একটা ছোট ব্যাগ ঝুলিয়ে নিয়ে এসেছিল কাঁধে করে। ব্যাগটা খুলে একটা সবুজ রঙের ডায়েরি বের করল সে।
“পুরো ঘটনাটা আমি বোধহয় গুছিয়ে বলতে পারব না ঠিকমতো। তাই এই ডায়েরিতে লিখে এনেছি। তোরা এটা পড়, পড়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা কর। প্রথমেই অবাস্তব, উদ্ভট ভেবে উড়িয়ে দিবি না। কারণ অবাস্তব, উদ্ভট, কিন্তু সত্য; আমার এমন কিছু কথা শোনার জন্য শুধু তোরাই আছিস। যাই হোক, আমি আজ বাসায় চলে যাচ্ছি, একে একে সবাই পড়া শেষ করে তোরা শুক্রবার আমার বাসায় আয়।”
বলেই ডায়েরিটা টেবিলের মাঝখানে রেখে দৃঢ় পায়ে বেরিয়ে গেল সুমন।
সুমন যেতেই সবাই নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু করে দিল। সাজিত বলল-“তোদের মনে হয়, সুমন মানসিক ভাবে ঠিক আছে?”
ভ্রু কুঁচকে কি যেন ভাবছিল হৃষা। বলল-“সুমন সম্পূর্ণ ঠিক আছে। ওকে যতটুকু চিনি, তাতে অন্তত আবেগের বসে বানিয়ে বানিয়ে যে কিছু বলছে না, সেটা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। ডায়েরিটা পড়ে দেখা দরকার।”
নিজের দিকে টেনে নিল সে সবুজ ডায়েরিটি।

দুই
সুমনের ডায়েরি থেকে
আমি সুমন। এখন রাত প্রায় ৩ টা বাজে। বলাকার মৃত্যুর পর অনেকগুলো দিন কেটে গেছে। কতগুলো দিন কেটেছে সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করে লাভ নেই। বলতে পারব না। আমি শুধু বলতে পারব যে আমার বুক ভরা কষ্ট সহ্যের সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। আমার চিন্তা এখন আড়ষ্ট, বুদ্ধি বিনষ্ট এবং হৃদয় বিক্ষত। বেঁচে থাকার জন্য সব ধরনের মোটিভ হারিয়ে ফেলেছি আমি। জীবন বড্ড ভারি হয়ে আমার ঘাড়ে চেপে বসেছে।
হাতের ঠিক কোন শিরাটা কাটলে মানুষ মারা যায়, আমি জানি না। কাজেই ব্লেড হাতে নিয়ে বসে কব্জির শিরাগুলোকে দপ দপ করে নাচতে দেখলেও ঠিক নিশ্চিত হতে পারছি না যে কোথায় আঁচর দিলে বেঁচে থাকার যন্ত্রণাটুকুর অবসান হবে।
যাই হোক, আমি আর চিন্তা ভাবনা করতে চাচ্ছি না। একটা একটা করে কেটে দেখি, কোনটাতে কাজ হয়। যেটাই কাটি, কি যায় আসে, মনের তীব্র যন্ত্রণায় শরীর আমার কাছে তুচ্ছ মনে হচ্ছে।
আমি আত্মহত্যা করছি এবং আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। আমার লাশ অবশ্যই বলাকার পাশে যেন দেয়া হয়। বিদায় পৃথিবী!
*** *** ***
ভোর পাঁচটা বাজে এখন। এতক্ষণে আমার মরে ভূত হয়ে যাবার কথা। কিন্তু আমি বেঁচে আছি। কেন বেঁচে আছি সেটা আমার কাছেও পরিষ্কার নয়। আমি যখন ব্লেডটা হাতে ছোঁয়ালাম, ঠিক তখনই আমার চারপাশটা অন্ধকার হয়ে গেল। আমি হাতে পোঁচ দিইনি, কাজেই কি হচ্ছে সেটা আমার বোধগম্য হলো না। আমি শুধু বুঝতে পারলাম যে আমার শরীরটা হালকা হয়ে গেছে। খুব হালকা। মেঘের মতো কিছু কুয়াশা আমার চারিদিকে ভেসে বেড়াতে লাগল। তার মধ্য হতে কেউ একজন গমগমে সুরে বলে উঠল,
“আপনি মরতে পারবেন না সুমন। আমরা আপনাকে মরতে দেব না।”
কন্ঠটা শুনে আমার হাত পা অসার হয়ে গেল। কি ভয়ানক শীতল কণ্ঠ। শব্দগুলো যেন বুকের খাঁচার ভেতর এসে লাগছে। কেমন তীব্র ঘোর লাগা আমায় পেয়ে বসল। তারপর হঠাৎ যেন আমার স্মৃতিতে ঢুকে পড়ল অন্য কেউ, অবাঞ্ছিত কেউ। আমি যেন স্বপ্ন দেখছি, কিংবা কোন সিনেমা দেখছি, যেটার মুখ্য চরিত্র আমি, এমন মনে হলো আমার।
*** *** ***
আহ! ভীষণ মাথা ধরেছে। আমি টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালাম। কপালটা চেপে ধরে বসে পড়লাম সোফায়। সোফার নরম গদিতে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় মেরুদন্ডে এক ধরনের সুখ অনুভব করলাম। ডান হাত দিয়ে কপালের শিরাগুলো চেপে ধরলাম জোরে। দপদপে ব্যথা মাথায়।
হাত ঘড়ি বলছে সকাল দশটা বাজে। কাল সন্ধ্যা সাতটায় বসেছিলাম অফিসের কাজটা নিয়ে, পনের ঘণ্টা পার হয়েছে তারপর। কি আশ্চর্য! পনের ঘণ্টা একটানা কাজ করতে পারে মানুষ!
একটা ঘুম দরকার। লম্বা ঘুম। তার আগে দরকার এক কাপ কড়া চা। বলাকাকে বললে বানিয়ে দেবে, কিন্তু ও বোধহয় ঘুমাচ্ছে, ছুটির দিন বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে সে। বুলির মা-র চলে আসার কথা এতক্ষণে। যদি এসে থাকে তাহলে রান্নাঘরে কাজ করছে।
বুলির মা আমাদের কাজের বুয়া। তার সন্তানের নাম নিশ্চয়ই বুলি! কিন্তু সেটা ছেলে সন্তান না মেয়ে জানা হয়নি আজও। বুলি নামটা কি ছেলেদের না মেয়েদের? বুয়াকে অনেক দিন ধরে জিজ্ঞেস করব ভাবছি কথাটা, সব সময় কাজে ডুবে থাকি বলে মনে থাকে না। আজ জিজ্ঞেস করা যায়।
আমার উঁচু গলায় চেঁচানোর অভ্যাস নেই, তারপরও যতটুকু সম্ভব গলা উঁচু করে ডাক দিলাম-“বুলির মা! এক কাপ চা দিয়ে যেও!”
বুলির মায়ের সাড়া নেই। একটা ছড়া বানানো যায়-
“বুলির মায়ের নেই বুলি,
সকাল বিকেল চুলোচুলি!”
রান্নাঘরে বুলির মা নেই, তার মানে আজ আসেনি। আমি আমার শোবার ঘরে গেলাম। এখনো মশারি টাঙানো। বলাকা বোধহয় এখনো ঘুমাচ্ছে। আমি মশারী উঁচু করে বলাকার গা থেকে চাদর সরিয়ে দেখি, এটা বলাকা নয়, একটা কোলবালিশ। তাহলে বলাকা কই? ওয়াশরুমে? বারান্দায়? ড্রয়িং রুমে? বেলকনিতে?
আমি সারা বাড়ি খুঁজে কোথাও পেলাম না ওকে। ড্রয়িং রুমের সোফার উপর, একটা নীল রঙা ওড়না দেখলাম, এটা কি বলাকার? বাসায় তো আমরা দু’জন ছাড়া আর কোন প্রাণী থাকে না! আমি যেহেতু পরি না, বলাকারই হবে! একটু রাগ হলো ওর উপর, এখানে ওড়না রেখে সকাল সকাল গেলই বা কোথায়!
আমি বাইরে বেরোলাম। পাশের ফ্ল্যাটে দেখি তালা ঝুলছে। বাইরে বেরিয়েছে না গ্রামের বাড়িতে গিয়েছে কি জানি!
দোতলার ফ্ল্যাটেও তালা মারা, নিচতলাতেও। এখন তো ঈদের ছুটি চলছে না যে সবাই শহর ছেড়ে পালাবে! তাহলে ঘটনা কি? পূজো, অষ্টমী, বড়দিন কিংবা অন্য কোন ছুটিও তো চলছে না!
রাস্তায় নেমে রীতিমতো ধাক্কা খেলাম আমি। সকাল দশটার সময় মেঘ না থাকলে আকাশ হবার কথা নীল-সাদা-রোদেলা, কিন্তু আকাশটা এখন শেষ বিকেলের মতো নিভু নিভু হয়ে আছে। গ্রীষ্মের মেঘহীন আকাশ কেন এত ম্রিয়মাণ হতে যাবে? বাতাসটাও কেমন যেন আদ্র এবং শীতল, একটু শীত শীত ভাব, আবার অস্বস্তিও হচ্ছে কেমন যেন! কি ভূতুরে বিষয়!
আমি তাড়াতাড়ি পা ফেলতে লাগলাম। বলাকাকে খুঁজে বের করা দরকার। ধারণা করছি সকাল বেলা নদীর পাড়ে হাটতে বেরিয়েছে। আমাদের বাসাটা শহরের শেষ প্রান্তে, নদীর ধারে।
নদীর তীরের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম, কিন্তু দেখলাম না কাউকেই। জনমানব শূন্য জায়গাটা। এই সময়ে এমন হবার কথা নয়। তবে, অদ্ভুত বিষয় হলো, শুধু জন-মানব শূন্যই নয়, কোন কুকুর বিড়ালও দেখলাম না আশেপাশে। আসার পথে দোকানপাট যা দেখেছি, সবগুলোর ঝাপ বন্ধ! আশ্চর্যের ব্যাপার, সারা শহর এমন খা খা ভূতুরে, কিন্তু আমি তেমন অবাক হচ্ছি না! হওয়া তো উচিত!
নদীর তীরে বসে পড়লাম আমি। এই ভূতুরে দিনে নদীর পানি-স্রোত সব ঠিকঠাক থাকবে আশা করিনি, কিন্তু নদীর দিকে তাকিয়ে সব ঠিকঠাকই মনে হলো। বাংলার চিরাচরিত ঘোলাটে পানি, তাও সুন্দর।
একটা খসখস আওয়াজ পেলাম পেছন দিক থেকে। ঘুরে তাকিয়ে দেখি, একজন শান্ত-শিষ্ট চেহারার যুবক ক্যানভাস টানিয়ে ছবি আঁকছে। সিঁথি করা চুল। এই গরমেও কোট পড়ে আছে। আমার চেয়ে কিছু বেশি হবে বয়স।
আসার সময় লোকটাকে দেখিনি, কোথা হতে ভোজবাজির মতো উদয় হলো কি জানি! একটু ভালো করে তার চেহারাটা দেখতেই বড় চেনা চেনা লাগল। এই লোকটাকে কোথাও দেখেছি আগে। কোথায় হতে পারে?
আমি ধীর পায়ে তার পাশে গিয়ে দাড়ালাম। আমার উপস্থিতি টের পেয়েও কোন প্রতিক্রিয়া হলো না তার। একবার চোখ উঁচু দেখলও না, এঁকে যাচ্ছে চুপচাপ। নদীর পারে দাড়িয়ে নদীর ছবি আঁকবে ভেবেছিলাম, কিন্তু সে অন্য কিছু আঁকছে। তার ছবিতে একটা ছেলেকে দেখা যাচ্ছে, শুধু সাদা একটা অন্তর্বাস পরে দাড়িয়ে আছে ছেলেটা, কাউকে হাত নাড়িয়ে বলার চেষ্টা করছে কিছু একটা। তার বুকে পরম নির্ভরতায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে সম্পূর্ণ নগ্ন একটি মেয়ে। কি আশ্চর্য, ছেলে-মেয়ে দু’টোকেও আমার কাছে পরিচিত ঠেকছে! আজ যাকে দেখি, তাকেই পরিচিত মনে হবার পেছনে কি রহস্য আছে কোন?
আমি লোকটাকে বললাম, “এখানে কোন মেয়েকে আসতে দেখেছেন ভাই?”
লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে উৎফুল্ল গলায় বলল-“হ্যা দেখেছি, এই মেয়েটা না?”
বলে সে ছবির মেয়েটার দিকে ইঙ্গিত করল। ছবিটার দিকে তাকিয়েই ধাক্কা খেলাম আমি। এ তো বলাকা, ছেলেটাকেও চিনতে পারলাম, আমি নিজে!
আমি লোকটার কলার চেপে হিসিয়ে উঠলাম-“কোথায় মেয়েটা? কোথায় সে?”
শান্তভাবে কলার থেকে হাত সরিয়ে দিল সে, বলল-“সে তো এখানে নেই, অন্য কোন জগতে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“মানে? অন্য জগত আবার কি? কোথায় সেটা?”
“হয়তো তোমার ভেতর।”
“আমার ভেতর জগত?”
“হ্যা, আমাদের সবার ভেতরই জগত আছে। এই সব জগতে কত কিছু ঘটে চলে প্রতিদিন।”
“সে তো কল্পনা!”
“হ্যা কল্পনা। কল্পনাও বাস্তব। এভরিথিং ইউ ক্যান ইমাজিন ইজ রিয়েল।”
হঠাৎ করেই আমি তাকে চিনতে পারলাম। এ তো বিংশ শতাব্দীর বিখ্যাত চিত্রশিল্পী পাবলো পিকাসো! তবে ঠিক সত্যিকার পাবলো পিকাসোর মতো নয়, চেহারায় একটা বাদামী ছাপ আছে, ভারতীয়দের মতো। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমি একজন মৃত চিত্রশিল্পীর সঙ্গে কথা বলছি কি করে? এ কোন জগত? স্বপ্ন দেখছি না তো?
ঠিক সেই মুহূর্তে কেমন কেঁপে উঠল চারিদিক, ঘুম ভাঙার মতো অনুভূতি হলো। কিন্তু বুঝতে পারলাম ঘুম নয় এটা, ঘুমের চেয়েও গভীর কিছু। আমার চারিদিক আলোতে ভরে গেল হঠাৎ করে। চোখ ধাঁধানো সাদা আলো। সেই অতিপ্রাকৃত কণ্ঠ ভেসে এলো কানে-
“পঞ্চমাত্রিক জগতে স্বাগতম আপনাকে, আপনি পৃথিবীর প্রথম মানব, যার সঙ্গে আমরা পঞ্চমাত্রিক প্রাণীরা যোগাযোগ করেছি।”
“কে? কে কথা বলে?”
“আমরা পঞ্চমাত্রার প্রাণী। দৈর্ঘ, প্রস্থ, উচ্চতা এবং সময়, এই চারটি মাত্রার বাইরে আরও একটি মাত্রা নিয়ে আমাদের জগত। আমরা সময়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি এবং আপনারা হচ্ছেন আমাদের সিমুলেশন জগত।”
“কি চান আপনারা আমার কাছে?”
“আমরা চাই, আপনি আত্মহত্যা না করুন। আমাদের পঞ্চমাত্রিক জগত এবং চতুর্মাত্রিক সিমুলেশন জগতের মধ্যে আপনি হলেন ভারসাম্য বিন্দু। আপনার বেঁচে থাকা খুব জরুরী।”
“কি বলছেন মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু বলুন, আমার বেঁচে থাকা জরুরী কেন?”
“আমরাও এক সময় ষষ্ঠ মাত্রার প্রাণীদের সিমুলেশন ছিলাম মাত্র। ষষ্ঠ মাত্রার প্রাণীরা চলে যাবার সময় একটা ডিএনএ স্যাম্পল দিয়ে গিয়েছিল, স্যাম্পল অনুযায়ী আপনিই সেই প্রাণী, যাকে বাঁচিয়ে রাখা জরুরী।”
“আপনারাও একটা সিমুলেশন? তাহলে সত্যি কারা? আর ষষ্ঠ মাত্রার প্রাণীই বা কারা?”
“যারা সময়ের পাশাপাশি সৃষ্টিজগতের যাবতীয় স্মৃতির উৎস তারা হলো ষষ্ঠ মাত্রার প্রাণী। আর আমরা এখন আর সিমুলেসশন নই। একটা বিশেষ পর্যায়ের পর সিমুলেশন আর বাস্তবের কোন পার্থক্য থাকে না। যাই হোক, মোদ্দা কথা হলো, আপনার মরা চলবে না, আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে এবং আমরা আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবই।”

হঠাৎ সব ঘোর কেটে গেল। আমি নিজেকে আমার শোবার ঘরের জানালার পাশে আবিষ্কার করলাম। ভয়াবহ বিষণ্ণতায় ডুবে গেলাম আমি, বিষণ্ণতা এত গভীর হতে পারে, সেটা পৃথিবীর কোন মানুষ বোধহয় কখনো বুঝবে না!

তিন
শুক্রবার সন্ধ্যায় হৃষা সুমনের দরজায় কড়া নাড়ল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দরজা খুলে দিল সুমন। আগের মতো উদ্ভ্রান্ত দেখাল না তাকে। চুল-দাড়ি কেটেছে। চেহারায় পরিপাটি ভাব থাকলেও কষ্টের ছাপও স্পষ্ট। হৃষার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসি দিয়ে দরজা থেকে সরে ঢোকার পথ করে দিল সে। বলল, “আর কেউ এলো না?”
হৃষা ভেতরে ঢুকে সুমনের ঘরটা দেখতে লাগল মনোযোগ দিয়ে। অনেক দিন পর সুমনের বাসায় এসেছে সে। শেষ বার যখন এসেছিল, বলাকা বেঁচে ছিল। হাসি-খুশী, সুখী একটা পরিবারকে দেখেছিল তখন। এখন চারিদিকটা প্রচন্ড শূন্যতায় খা খা করছে। সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-“নাহ, এলো না কেউ আর। সাজিত শহরে নেই। অফিসের কাজে বাইরে গেছে। সুমাইয়ার জ্বর উঠেছে। রবিনও কি একটা কাজে ব্যস্ত!”
সুমন ঠোঁট বাকিয়ে হাসল। “ব্যস্ততার অজুহাতে আমাকে এড়িয়ে চলা নয় তো?”
হৃষা গম্ভীর ভাবে বলল, “হয়তো কিছুটা এড়িয়ে চলাও। আসলে কি জানিস, তোর ডায়েরিটা সবাই পড়েছে। দু’টো সিদ্ধান্তে আসা যায় ডায়েরিটা পড়ে। প্রথমত, পুরো ঘটনাটা তোর ডিলিউশান, ভ্রম। যা দেখেছিস, উত্তপ্ত মস্তিষ্কের অতিকল্পনা ছিল সেটা। দ্বিতীয়ত, ডায়েরির কথাগুলো সত্য। তাহলে এক গাদা প্রশ্ন তুলতে হয়, যেগুলোর উত্তর আমাদের জানা নেই। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কিছু করা উচিত কি না, উচিত হলে কি করা উচিত, সেটাও বলা মুশকিল।” বলতে বলতে সোফায় বসে পড়ল সে। সুমন তার মুখোমুখি বসল। বসে একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, “আমি যুক্তি দিয়ে অনেক ভাবে বিচার করেছি ঘটনাটাকে, পঞ্চমাত্রিক প্রাণীর সাথে আমার কথোপকথনগুলোকে। আমার নিজের কাছেও মনে হচ্ছে, পুরোটা ছিল আমার ডিলিউশান। আসলে বাস্তবে তেমন কিছুই ঘটেনি, যেমনটা আমি দেখেছি।” এক নাগারে কথাগুলো বলে থামল সে। হৃষার চোখের দিকে তাকাল। হৃষাও তার দিকে স্থির চোখে তাকিয়ে আছে। জিজ্ঞেস করল-
“কেন মনে হলো তোর সেটা?”
“পঞ্চমাত্রিক প্রাণীরা বলছিল, যে তারা একসময় ষষ্ঠ মাত্রার প্রাণীদের সিমুলেশন ছিল এবং আমরা, চতুর্মাত্রিক প্রাণীরা হলাম পঞ্চমাত্রার প্রাণীদের সিমুলেশন। এখানেই খটকা।”
“এখানে খটকার কি আছে?”
“আছে। আমি অনেক পড়াশোনা করেছি গত কয়েক দিন সিমুলেশন হাইপোথেসিস নিয়ে। সিমুলেশনের একটা মৌলিক নিয়ম আছে। কি জানিস?”
“কি?”
“সিমুলেশনের মৌলিক নিয়ম হলো, একটা সিমুলেশনের অধীনে দ্বিতীয় কোন সিমুলেশন থাকতে পারে না। যদি এমন হয় যে প্রথম সিমুলেশন আরেকটি দ্বিতীয় সিমুলেশন তৈরি করেছে, তাহলে প্রথমটি নিজে নিজে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং দ্বিতীয় সিমুলেশনটিই একমাত্র সিমুলেশন হয়ে সিমুলেশনের স্রষ্টা বুদ্ধিমত্তার অধীনে থাকবে। অর্থাৎ, পঞ্চমাত্রিক প্রাণীদের ক্ষেত্রে, একই সঙ্গে পঞ্চমাত্রিক সিমুলেশন জগত আরেকটি চতুর্মাত্রিক সিমুলেশন তৈরি করতে পারবে না। যদি করে, তাহলে পঞ্চমাত্রিক জগতটি নিজে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।”
“খুবই জটিল ঘটনা। এটা যদি সিমুলেশনের মৌলিক নিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে একই সঙ্গে পঞ্চমাত্রিক এবং চতুর্মাত্রিক সিমুলেশন জগত থাকা সম্ভব নয়। পঞ্চমাত্রিক জগতটি বিলুপ্ত হবার কথা। অথচ তোকে পঞ্চমাত্রিক প্রাণীরাই বলেছে যে, বিলুপ্ত হয়েছে ষষ্ঠ মাত্রার প্রাণীরা। অর্থাৎ সিমুলেশনের স্রষ্টা যারা, তারা।”
“বিলুপ্ত হয়েছে বলেনি, চলে গিয়েছে বলেছে।”
“পার্থক্য আছে দু”টোর মধ্যে?”
“থাকতেও পারে, কি জানি!”
“যাই হোক, আমার কিন্তু মনে হচ্ছে, তোর ডিলিউশান ছিল না ঘটনাটা।”
“কেন মনে হলো তোর?”
“কারণ তুই আর্টের প্রতি কখনোই আগ্রহী ছিলি না। অথচ নদীর পারে তুই যে পাবলো পিকাসোকে ছবি আঁকতে দেখেছিলি, তার আঁকা যে ছবিটার বর্ণনা দিয়েছিস, তেমন একটা ছবি পিকাসো সত্যিই এঁকেছিল। নাম হলো লা ভিয়ে। ঘটনাটা কাকতালীয় মনে হচ্ছে না আমার কাছে।”
“তার মানে তুই বলছিস? আমি সত্যি সত্যি পঞ্চমাত্রিক প্রাণীদের সাথে কথা বলেছি?”
“হ্যা, বলেছিস। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”
“তাহলে এখন কি করা উচিত আমার?”
“সেটা তো বলা কঠিন। আমার মনে হয়, এখন শুধু অপেক্ষা করতে হবে তোকে। ভিন্ন মাত্রার সিমুলেশন জগতগুলোর মধ্যে তুই যদি যোগসূত্র হয়ে থাকিস, তাহলে কি করা উচিত তোর, সেটা সময়ই বলে দেবে। সে সময় আসা পর্যন্ত...”
হঠাৎ হৃষা কথা বলা থামিয়ে দিল। সুমন জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল অন্যমনস্ক ভাবে। হৃষাকে থেমে যেতে শুনে বলল, “আসা পর্যন্ত কি?”
হৃষার কোন জবাব নেই। হৃষার দিকে তাকিয়ে ভয়াবহ রকম চমকে উঠল সুমন। হৃষা নড়ছে না একদম, চোখের মনি দু’টো স্থির। হাত, পা, শরীর, সব স্থির হয়ে আছে তার। সুমন চমকে উঠে হৃষাকে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখতে চাইল, কিন্তু তার আগেই যা চোখে পড়ল তার, তাতে হৃদপিন্ড গলার কাছে চলে এলো বুঝি!
সুমন দেখল, তার ছেড়ে দেয়া সিগারেটের ধোয়া কুণ্ডলী পাকিয়েছে বটে, কিন্তু ধোয়ার ধর্ম অনুযায়ী আস্তে আস্তে উপরে উঠছে না, স্থির হয়ে আছে। যেন কোন থ্রি ডি সিনেমার পজ করা দৃশ্য। সুমন অস্থির হয়ে চারিদিকে তাকাল। না, কিছুই নড়ছে না! মাথার উপর ঘুরতে থাকা ফ্যান কিংবা একুরিয়ামে সাতার কাটতে থাকা মাছ, দেয়ালে ঝোলানো ঘড়ি কিংবা শাটার খোলা জানালার পর্দা, সবই স্থির হয়ে আছে। সুমন নিজের ভেতর তীব্র, অজানা কোন অনুভূতির আনাগোনা টের পেয়ে প্রচন্ড আতঙ্কে কেঁপে উঠল।

চার
এভাবে ঠিক কতগুলো দিন গেল, সুমন বলতে পারবে না। সময় থেমে গেলে, সব কিছু স্থির হয়ে গেলে কি করে বলতে হয় কতক্ষণ পার হলো, সেটা তার জানা নেই। সে দিনের পর দিন কাটিয়ে দিল সেই সোফায় বসে, মাঝে কয়েকবার বাইরে বেরিয়েছিল অবশ্য।
হৃষাও সেই একই ভঙ্গীতে স্থির হয়ে সোফায় বসে আছে। সুমন বাইরে গিয়ে দেখেছে, রাস্তাঘাট, মানুষ জন, গাছপালা সব কিছু স্থির। এই স্থিরতা, স্থবিরতা কতদিন ধরে চলতে পারত বলা মুশকিল, কিন্তু এক সময় প্রথম বারের মতো একটি চলন্ত বস্তুর সন্ধান পেল সুমন। একজন মানুষ।
তার ঘরে এসে, তার মুখোমুখি সোফায় হৃষার পাশেই বসল মানুষটা। তার চোখ দু’টো অবিশ্বাস্য রকম শান্ত, দৃষ্টি গভীর এবং কল্পনাতীত রকম অন্তর্ভেদী। সুমন বুঝতে পারল লোকটা তার মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরন আলাদা করে দেখতে পাচ্ছে এবং দেখছেও। নিজের ভেতর অন্য একজন মানুষের অনধিকার প্রবেশেও সুমন বিস্মিত হলো না আর। ডিলিউশন হোক, সিমুলেশন হোক, বাস্তব হোক, এই সময়হীন পৃথিবীতে কোন কিছুতেই কিছু যায় আসে না।
লোকটা অনেকক্ষণ তার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর মোহগ্রস্ত উচ্চারণে বলল, “সুমন, তুমি কেন ভাবছে যে সময় স্থির হয়ে আছে?”
সুমন অকারণে গলা চরিয়ে বলল, “স্থির হয়ে নেই?”
লোকটার চোখ দু’টোতে প্রচন্ড মমতা দেখতে পেল সুমন, মায়ের চোখে সন্তানের জন্য মমতার মতো। তবে মানুষটার সে মমতা তার জন্য কি না, সুমন জানে না। সুমন আবারো চেঁচিয়ে বলল, “বলুন, কথা বলুন।” সে নিজেও জানে না কেন সে চেঁচাচ্ছে। সহজ স্বাভাবিক কথা বলতে পারছে না সে।
“না, সময় স্থির হয়ে নেই। সময় ঠিক সেখানেই থেমে আছে, যেখানে থাকার কথা। শুধু তুমি সময়ের একটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মুহূর্তকে উপলব্ধি করছ অনেক সূক্ষ্ম ভাবে।”
“মানে? একটা ক্ষুদ্র সময়ের ভেতর আমি আটকে থাকব কেন?”
“তুমি আটকে নেই, তোমার স্মৃতি রোমন্থন শেষ হলেই তোমার কাছে সময়ের গতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে। মানুষ যেমন মুহূর্তেই অনেক স্মৃতি, অনেক চিন্তা ভাবনা করে ফেলতে পারে, তেমনি তুমিও করছ। তোমার কাছে অতি ক্ষুদ্র, সেকেন্ডের হাজার ভাগের এক ভাগকে অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে। কারণ তুমি অল্প সময়ে এত সব ভেবে নিচ্ছ।”
“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না চিন্তা করতে গিয়ে সময়কে থামিয়ে দেয়া যায় কি করে।”
“দু’টো ট্রেন যদি সমান গতিতে পাশাপাশি চলে, তাহলে তারা পরস্পরের কাছে স্থির হিসেবে বিবেচিত হবে। তোমার ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনি। তোমার চিন্তার গতি সময়ের গতিকে হারিয়ে দিচ্ছে। তাই সময়কে তোমার কাছে স্থির মনে হচ্ছে।”
“স্মৃতি রোমন্থনের বিষয়টা কি? এই মুহূর্তের কথোপকথন বাস্তব নয়?”
“না, শুধুই একটা স্মৃতি। যেটা তোমার ডিনএতে পুরে আমরা পঞ্চমাত্রিক প্রাণীদের দিয়েছিলাম। এই কথোপকথন কৃত্রিম কিছু কল্পনা।”
“মানে আপনি একজন ষষ্ঠমাত্রিক প্রাণী?”
“হ্যা। তবে আমাকে দেখে বিভ্রান্ত হয়ো না, আমাদের আকার আকৃতি জাতীয় কোন বিষয় নেই। তোমার কল্পনার সুবিধের জন্য আমাকে এভাবে সাজানো হয়েছে।”
“আপনি কেন এসেছেন এখানে?”
“কারণ তোমাদের ডাইমেনশনাল জাম্প দেবার সময় এসেছে। মানুষ চতুর্মাত্রিক থেকে পঞ্চমাত্রিক প্রাণীতে পরিণত হবে। এই কাজটা করতে হবে তোমাকে।”
“কি করে করব সেটা?”
“তুমি এখন সময়কে নিজের মতো করে অদল বদল করে নিতে শিখেছ। সময়ের অতিক্ষুদ্র মুহূর্তকে বিশ্লেষণ করতে শিখেছ। তুমি চাইলেই এখন নিজেদের জগতটাকে পঞ্চমাত্রিক জগত করে নিতে পারো। কি করে করবে, জানতে চেয়ো না। নিজেই বোঝার চেষ্টা করো।”
“যদি পারিও, কেন সেটা করব? আমি তো চতুর্মাত্রিক জগত নিয়েই সুখী।”
“তুমি করবে, কারণ চতুর্মাত্রিক এবং পঞ্চমাত্রিক দু’টো সিমুলেশন একই সাথে অস্তিত্বশীল হতে পারে না। একটি জগতকে ধ্বংস হতে হবে, এবং সেটা হবে চতুর্মাত্রিক। পঞ্চমাত্রিক জগতটা অনেক শক্তিশালী জগত। আমরা চাই জগতটা থাকুক।”
“আপনি নিজেই সেটা কেন করছেন না? আপনাদের ক্ষমতার সামনে আমি অতি তুচ্ছ। পঞ্চমাত্রিক জগত তো আপনাদেরই সিমুলেশন।”
“তোমার কেন-র উত্তরগুলো চতুর্মাত্রিক অস্তিত্ব দিয়ে বোঝানো কঠিন। জন্মান্ধকে আলো বোঝানোর মতো কঠিন। সহজ করে বললে, তোমরা যেমন চাইলেই কোন চিন্তাকে, ধরো কোন দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে চট করে ঝেড়ে ফেলতে পারো না, আমরাও চাইলে আমাদের নিজেদেরই সিমুলেশন জগতকে ধ্বংস করতে পারি না। সিমুলেশনের সাহায্য নিয়ে সিমুলেশনকে ধ্বংস করতে হচ্ছে।”
“আপনার সব কথাই আমার কাছে ধোঁয়াশা মনে হচ্ছে কেমন যেন। আপনি যে পঞ্চমাত্রিক প্রাণীদের ধ্বংস করার কথা ভাবছেন, তারা সেটা হতে দেবে কেন?”
“কেন দেবে না?”
“আপনার সঙ্গে আমার কথোপকথন কি তাদের কাছে গোপন রইল? আমি তো তাদেরই সিমুলেশন।”
“পঞ্চমাত্রিক প্রাণীরা সময়ের ফাঁকি ধরতে পারছে না। সময়ের সূক্ষ্ম পার্থক্য যাতে তারা ধরতে না পারে, এমন করেই তোমার এই স্মৃতিটুকু তৈরি করা হয়েছে। তাদের কাছে এই সময়টুকু স্থির, সময়ের স্থিরতা মানে ঘটনাশূন্যতা। কাজেই যে কথোপকথন তুমি করলে, সেটার কোন অস্তিত্ব নেই তাদের কাছে।”
“আপনিই তো বললেন সময় আসলে স্থির নয়, চলমান সময়ের ক্ষুদ্র একটা অংশ আমি উপলব্ধি করছি।”
“ঠিকই বলেছি, বৃত্তের ক্ষুদ্র একটি অংশকে যেমন সরল রেখা মনে হয়, তেমনি সময়ের এই কল্পনাতীত ক্ষুদ্র অংশটুকুও স্থির বলে মনে হবে পঞ্চমাত্রিক প্রাণীদের কাছে।”
“পুরো বিষয়টাই আমার কাছে দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে।”
“আসলেই দুর্বোধ্য, তবে বুঝে নিতে তোমার সময় লাগবে না খুব বেশি।”
হঠাৎ আবার আগের মতো হয়ে গেল সবকিছু। হৃষার মুখোমুখি সোফায় নিজেকে আবিষ্কার করল সুমন। হৃষা সেই একই ভঙ্গীতে বলে যাচ্ছে-“আমার মনে হয়, এখন শুধু অপেক্ষা করতে হবে তোকে। ভিন্ন মাত্রার সিমুলেশন জগতগুলোর মধ্যে তুই যদি যোগসূত্র হয়ে থাকিস, তাহলে কি করা উচিত তোর, সেটা সময়ই বলে দেবে। সে সময় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখ।”
সুমন হৃষার কথার জবাবে কিছু খুঁজে পেল না, ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইল শুধু।

পাঁচ
সময়ের সংজ্ঞা কি? ঘটনার প্রেক্ষিতে সময়ের অবস্থান? নাকি সময়ের প্রেক্ষিতে ঘটনা? সময়হীন কিন্তু ঘটনাময় পৃথিবীর অস্তিত্ব কি থাকা সম্ভব?
সুমন ভেবে ভেবে কোন কূল কিনারা করতে পারছে না। সময়কে তার মনে হচ্ছে কাঁচা মাটি দিয়ে গড়া পুতুল। সেদিনের পর থেকে সে ইচ্ছেমত সময়কে নাড়াচাড়া করতে পারছে। ১০০ বছর পরের জীবনযাত্রা কিংবা লক্ষ বছর আগের আদিম পৃথিবী সে দেখে নিয়েছে। নিজের ফেলে আসা জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সে শরীরের অণু-পরমাণু দিয়ে উপলব্ধি করতে পারছে যখন ইচ্ছে তখন। প্রথম প্রথম সে ভেবেছিল এটা বুঝি সময় পরিভ্রমণ; সময়ের এক বিন্দু হতে আরেক বিন্দুতে যাত্রা, কিন্তু ধীরে ধীরে সে বুঝতে পারল এটা সময় পরিভ্রমণ নয়, আরও গভীর কিছু। সে সময়ের একেকটা বিন্দুকে অনুভব করছে শুধু, সে সময়ে বসবাস করছে না।
বলাকার সাথে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত সুমন বার বার ছুঁয়ে দেখেছে চেতনা দিয়ে। বলাকার সঙ্গে কাটানো শেষ মুহূর্তটাকে সুমন অনেকবার অনুভব করেছে। চেষ্টা করেছে সেদিন যেভাবে মস্ত হলুদ ট্রাকটা বলাকার নরম শরীরটা পিষে দিয়েছিল, সেই ঘটনাটা বদলে ফেলতে। বলাকাকে ফিরিয়ে আনতে। সিমুলেশন জগতটা ওলট-পালট করে বলাকার সাথে থাকতে চেয়েছে সে, পারেনি। সময় বোধহয় ঘটনার সন্নিবেশ মাত্র, আগের ঘটনার নতুন নতুন অংশ জুড়ে দেয়া যায় না, তবে ঘটনার আদ্যোপান্ত অনুভব করা যায়। হয়তো ডাইমেনশনাল জাম্পের পর এই সিমুলেশনে বলাকাকে ফিরিয়ে আনা যাবে।
ডাইমেনশনাল জাম্পের বিষয়টা নিয়ে সুমন অনেক ভেবেছে। এখনো জানে না কি করে সেটা সম্ভব। তবে নিজের ভেতরে এক অন্যরকম শক্তি অনুভব করছে সে, বুঝতে পারছে ডাইমেনশনাল জাম্প বুঝতে তার বেশি সময় লাগবে না।
এরই মধ্যে একদিন পঞ্চমাত্রিক প্রাণীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করল। ধোঁয়াটে সাদা, মেঘের মতো কোন পরাবাস্তব প্রকৃতিতে তারা কথা বলল-
“সুমন, তুমি একটা কিছু লুকচ্ছ!”
“কি? কি লুকচ্ছি?”
“সেটাই তো বুঝতে পারছি না। তুমি আমাদের সিমুলেশনের একটা প্রাণী, অথচ তোমার মধ্যে এমন কিছু চলছে, যেটা আমরা বুঝতে পারছি না। কোথাও কিছু একটা গোলমাল করছ তুমি। কি করছ?”
“আমি জানি না। আমি কি করছি না করছি কিছুই বুঝতে পারছি না। শুধু মনে হচ্ছে সময়ের বিভিন্ন বিন্দুতে ঘুরপাক খাচ্ছি।”
“সময়ের বিভিন্ন বিন্দু? মানে কি? চতুর্মাত্রিক পৃথিবীর প্রাণীদের এমন কোন ঘটনা অনুভব করার কথা নয়।”
“কিন্তু আমি করছি। আপনারা কি বলতে পারবেন সময়ের সংজ্ঞা কি?”
“অবশ্যই পারব, কিন্তু সেটা তুমি বুঝতে পারবে না।”
“কেন পারব না?”
“তোমরা অনেক কিছুই বোঝো না, বোঝার ক্ষমতা নেই তোমাদের। এমন কিছু কল্পনা করতে পারো, যেখানে কোন স্থান নেই? শূন্যতাকে সরিয়ে নিলে কি থাকে কল্পনা করতে পারো? যদি পারো, তাহলে সময়ের সংজ্ঞাও তোমরা বুঝতে পারবে।”
এই কথায় সময়ের সংজ্ঞা সুমন বুঝল না, কিন্তু বুঝল যে ডাইমেনশনাল জাম্প করতে গেলে তাকে কি করতে হবে। পঞ্চমাত্রিক প্রাণীদের সাথে কথোপকথন শেষ হতেই সুমন প্রচন্ড ঘামতে লাগল, হাঁসফাঁস করতে লাগল। প্রচন্ড শক্তি টের পেল সে নিজের ভেতর, সিমুলেশন জগতটাকে ধ্বংস করে দেবার মতো শক্তি!

ছয়
আহ! কি যন্ত্রণা!! অসম্ভব রকম ক্ষুদ্র একটা বিন্দুকে বিস্ফোরিত হতে দেখছে সুমন। কি প্রচন্ড ভয়ংকর দৃশ্য, কোন মানুষ এত ভয়ংকর অনুভূতির সঙ্গে বোধহয় কখনো পরিচিত হয়নি! এই মহাবিস্ফোরণের তীব্র আঁচে সে যেন কুঁকড়ে যাচ্ছে। প্রচন্ড গতি, প্রচন্ড তাপ এক সাথে মহা হট্টগোল তৈরি করছে যেন। বাড়াবাড়ি রকম এনট্রপির পরিবর্তন নতুন কিছু সৃষ্টির নেশায় মত্ত। সেই সাথে অন্য সব শক্তির সাথে যুদ্ধ চলছে ভীষণ রকম শক্তিশালী মহাকর্ষ বলের। একদিকে আকর্ষণ, আরেকদিকে প্রসারণ। নাম না জানা সব মহাজাগতিক বস্তু ছুটে চলেছে একে অপরের দিকে, কিংবা বিপরীত দিকে। বিজ্ঞানীরাও বোধহয় সবগুলো বস্তুর নাম বলতে পারবে না।
সুমন এই মুহূর্তে তের দশমিক আট বিলিয়ন আগের সময়ে রয়েছে। তার শরীরে জমানো সেই অজানা শক্তির পূর্ণ প্রয়োগে এ পর্যন্ত আসতে পেরেছে সে। সময়ের শুরু হয়েছিল এই অতিক্ষুদ্র একক বিন্দু (Single Tiny Point) হতে। এটাকেই বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং বলত। ডাইমেনশনাল জাম্পও এখান থেকেই শুরু করতে হবে।
পঞ্চমাত্রিক প্রাণীরা যখন স্থানহীন বস্তুর কল্পনা করতে বলেছিল, সুমন তখন বুঝতে পেরেছিল স্থান-কালের শুরুর বিন্দুতেই শুধু ডাইমেনশেনাল জাম্প সম্ভব।
সুমনের মনে পড়ে, বলাকার সঙ্গে এক সময় বিগ ব্যাঙ নিয়ে তার অনেক তর্ক হত। বলাকা বিশ্বাস করতে চাইত না মহাবিশ্ব বিগ ব্যাঙ এর মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। টুকরো টুকরো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে সুমনের। একদিন বলাকা তাকে বলেছিল,
“বুঝলে সুমন‚ অনেক ভেবে দেখলাম‚ বিগব্যাং থিওরি সত্য হতে পারে না।”
সুমন হাসিমুখে জিজ্ঞেস করেছিল, “তাই? কেন পারে না?”
“কারণ বিগ ব্যাং বলছে মহাবিশ্ব একটি অতি ক্ষুদ্র বিন্দু থেকে সৃষ্টি হয়েছে‚ দা ইউনিভার্স ওয়াজ ক্রিয়েটেড ফ্রম আ সিঙ্গল টাইনি পয়েন্ট‚ কিন্তু আমরা জানি‚ কেউ শক্তি বা বস্তু ধবংস বা সৃষ্টি করতে পারে না। কাজেই শূন্য থেকে মহাবিশ্বও সৃষ্টি হতে পারে না। এটা তাপগতিবিদ্যার প্রথম সূত্রকে লঙ্ঘন করে। তাছাড়া যে সিঙ্গল টাইনি পয়েন্ট থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হলো‚ সেটা এসেছে কোথা হতে?”
“প্রথমত‚ তুমি যদি পৃথিবী সৃষ্টির ধাপগুলো দেখো‚ তাহলে দেখবে যে প্রাথমিক পর্যায়ে পদার্থবিদ্যার অনেক সূত্রকেই মহাবিশ্ব বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে। কাজেই একক ভাবে তাপগতিবিদ্যার সূত্রকে আলোচনায় আনার কোন মানে হয় না। আর দ্বিতীয় বিষয় হলো‚ মহাবিশ্বের সৃষ্টিতত্ত্ব বিগব্যাং থিওরির আলোচ্য বিষয় নয়‚ বিগব্যাং থিওরির আলোচ্য বিষয় হলো মহাবিশ্বের বিবর্তন। সুতরাং সিঙ্গল টাইনি পয়েন্টের ব্যাখ্যা দেয়ার দায় বিগব্যাং থিওরির নয়। সেটা অন্য প্রসঙ্গ। তাছাড়া গ্যালাক্সি রেডশিফট আর মাইক্রোওয়েভ থেকে নির্ভুলভাবে বিগব্যাংতত্ত্বের সত্যতা পাওয়া যায়।”
“তোমার সাথে আমি একমত নই‚ কারণ এনট্রপির নিয়মে মহাবিশ্বের পরিবর্তন এবং বিবর্তন ধীর হওয়ার কথা‚ কিন্তু বিগব্যাং তত্ত্ব বলছে যে মহাবিস্ফোরণের পর মহাবিশ্বের প্রসারণ হয়েছে খুব দ্রুত!”
“ওয়েল‚ তুমি যদি আজকের মহাবিশ্বের দিকে তাকাও‚ তাহলেও দেখবে যে মহাবিশ্বের প্রসারণ বেশ দ্রুত। এনট্রপির নিয়ম মহাবিশ্বের প্রসারণের জন্য প্রযোজ্য নয়। বিগব্যাং 'কেন' এর উত্তর নয়‚ বিগব্যাং 'কিভাবে'র উত্তর।”
বলাকার সঙ্গে এসব আলোচনা অসমাপ্তই রয়ে গেল। যদি সত্যি পঞ্চমাত্রিক সিমুলেশন জগত তৈরি হয়, সেখানে বলাকা কি ফিরে আসবে? আসলে কি আগের বলাকাই থাকবে? নাকি বদলে যাবে অনেক?
এই মুহূর্তে নিজের চারিদিকে নানা ধরণের বিন্দু, কণা, শক্তি, তরঙ্গ একেক দিকে ছুটে যেতে দেখছে সুমন। কোথাও কোথাও ক্ষুদ্র কিছু সংঘর্ষ হচ্ছে। মহাবিশ্বের শুরুর মুহূর্তে যা হয়নি, সেটাও হচ্ছে এই মুহূর্তে। সুমন টের পেল প্রথমবারের মতো সময়ের কোন এক জায়গায় সে কিছু পরিবর্তন করতে পারছে। সেটা হলো ডাইমেনশনাল চেঞ্জ। চতুর্মাত্রিক মহাবিশ্ব নয়, পঞ্চমাত্রিক মহাবিশ্ব সৃষ্টি হতে যাচ্ছে এই মহাবিস্ফোরণে। এই বিস্ফোরণে সুমন নিজেও অংশগ্রহণ করছে ।
নতুন পঞ্চমাত্রিক জগত কেমন হবে, সেটা তার জানা নেই। একটি অতিরিক্ত মাত্রা নিয়ে মানুষের জীবন যাত্রা কেমন হবে, শক্তিশালী চেতনা নিয়েও সেটা সে উপলব্ধি করতে পারল না।
তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এই মুহূর্তে স্থান-কালের বাইরেও কিছু একটা অনুভব করতে পারছে সে, একটি নতুন ধরণের মাত্রা। পঞ্চমাত্রিক এবং ষষ্ঠমাত্রিক প্রাণীদের সাথে সে পরিচিত হয়েছে, তাদের অতিরিক্ত মাত্রাগুলোও অনুভব করেছে, কিন্তু সে সব মাত্রা ছাড়াও এখন নতুন একটা কিছুর অস্তিত্ব টের পাচ্ছে সে। এটা কি ডাইমেনশনাল জাম্পের অনুভূতি? নাকি আরও উন্নত মাত্রার কোন মহাজাগতিক অস্তিত্ব? নাকি...
(সমাপ্ত)

মন্তব্য ৩২ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৩২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: এতো লম্বা! পড়তে বসলাম ভায়া।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২১

একলা চলো রে বলেছেন: হ্যা, প্রায় ৬০০০ শব্দ। পড়তে থাকুন। খুব বেশি বোর লাগবে না আশা করি। :)

২| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৪

গেম চেঞ্জার বলেছেন: পড়লাম পুরোটা। ৩ পর্ব পড়া ছিল। জাস্ট অসাম। তবে শেষ পর্বটায় তাড়াহুড়ো বেশি ছিল মনে হচ্ছে। 4 Dimensional প্রাণির ব্যাপারটা রিয়েলি এনজয়েবল। কৃতজ্ঞতা।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:১২

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ গেম চেঞ্জার। এই গল্পে অন্য গল্পের মতো শেষের দিকে এসে তাড়াহুড়ো করিনি অবশ্য, তবে কনসেপ্ট কিছুটা সংক্ষিপ্ত করেছি। তারপরও অনেক বড় হয়ে গেছে গল্পটা। আরো বড় করলে হয়তো মানুষ পড়ার ধৈর্য্য পেত না।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা। অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য। :)

৩| ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৩৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: দুর্দান্ত। প্রচুর ভেবেছেন এই গল্পটা নিয়ে, যত্ন করে টুইস্টগুলো লিখেছেন যার ফলে অসাধারণ একটা গল্পের সৃষ্টি হয়েছে। তবে জটিল অনেক। কিছু জায়গা বারবার পড়তে হয়েছে। শুভকামনা।

১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪১

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক চিন্তা করেও এই জটিলতাটুকু বর্জন করতে পারিনি। সিমুলেশন হাইপোথেসিস, ম্যাট্রিক্স থিওরি, বিগ ব্যাং থিওর...অনেক কিছু একটা গল্পে নিয়ে আসতে চেয়েছি বলে বোধহয় কিছু জটিল আলোচনা চলে এসেছে। কষ্ট করে বারবার গল্পটা পড়েছেন এবং সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন বলে অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানবেন। অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য হাসান মাহবুব ভাই। ভালো থাকবেন।

৪| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ২:৪০

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: কিছু বুঝতে না পারলেও প্রচন্ড একটা ধাক্কা “হয়তো তোমার ভেতর।”পড়ার পর।।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৩

একলা চলো রে বলেছেন: মন্তব্যটা কি অসম্পূর্ণ নাকি ইচ্ছে করেই জটিল করে লিখেছেন যাতে না বুঝি। না বোঝা না বোঝাতে কাটাকাটি। হা হা হা! যাই হোক, গল্পের কোন একটা বিষয় আপনাকে মুগ্ধ করে থাকলে স্বার্থক মনে করছি লেখাটা। ভালো থাকবেন সচেতন হ্যাপী। শুভকামনা রইল। :)

৫| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:২১

চন্দ্রাহত মৃন্ময়ী বলেছেন: ভাইয়া গল্পটার বেশিরভাগই আমি বুঝি নি ....সুমন বলাকাকে আবার ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলো এটা বুঝেছি কিন্তু সিমুলেশন...চতুর্থমাত্রিক এগুলো বুঝি নি ....

হইতোবা পদার্থ কাচা ছাত্রী ছিলাম তাই ....


যদি একটু বুঝায় বলতেন বেপারগুলো অথবা এই বিষয়গুলো আলোকে লেখা কোন বইয়ের খোজ দিতেন যেটা পরে আমি বুঝতে পারি বেপার গুলো তাহলে কৃতজ্ঞ থাকতাম ......

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৬

একলা চলো রে বলেছেন: আমি যতটা পারি বুঝিয়ে বলব। এখন কাজে যাচ্ছি, ফিরে এসে সন্ধ্যায় আপনার মন্তব্যের উত্তর দেব একটু বিস্তারিত করে। বোঝার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে কৃতজ্ঞতা জানবেন।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৮:৫৯

একলা চলো রে বলেছেন: আর একটা বইয়ের নাম মনে পড়ল, লিভিং উইথ ফোর ডাইমেনশন, কে লিখেছিলেন ঠিক মনে পড়ছে না। তবে আপনি উইকিপিডিয়া হতে সিমুলেশন হাইপোথেসিস প্রবন্ধটা পড়লে অনেক কিছু বুঝে যাবেন আশা করি।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪

একলা চলো রে বলেছেন: আচ্ছা। সিমুলেশন হলো একটি কাল্পনিক জগৎ। যে জগতের সব কিছু কোন বুদ্ধিমান প্রাণী কিংবা কম্পিউটার কল্পনা করছে। আমরা যখন কম্পিউটার গেমস খেলি, তখন গেমসের বিভিন্ন চরিত্রের বিভিন্ন কর্মকান্ড কিন্তু আমাদের কম্পিউটার নিয়ন্ত্রণ করে। তেমনি সিমুলেশনও একটি জগৎ। এক কথায়, সিমুলেশন হলো বাস্তব জগতের কাল্পনিক সংস্করণ।
অনেক বিজ্ঞানী ধারণা করে থাকেন যে, এই মহাবিশ্ব আসলে সত্যিকারের মহাবিশ্ব নয়, একটি কাল্পনিক জগত। কল্পনাটা করছে কোন উন্নত কম্পিউটার বা উন্নত প্রাণী। যদি সত্যিই এই ধারণাটি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের জগতটি একটি সিমুলেশন মাত্র (অর্থাৎ কাল্পনিক, বাস্তব নয়)। আমার গল্পটা এই ধারণার উপর ভিত্তি করে লেখা।
আর চতুর্মাত্রিক, ত্রিমাত্রিক, এগুলো হলো বিভিন্ন মাত্রার উদাহরণ। মাত্রা বলতে পরিমাপ করা যায়, এমন কিছু নির্দিষ্ট জিনিস বুঝায়। যেমন- দৈর্ঘ্য একটি মাত্রা, প্রস্থ একটি মাত্রা, উচ্চতা একটি মাত্রা। আমাদের পৃথিবীটা ত্রিমাত্রিক অর্থাৎ এই ৩ টি মাত্রা (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতা) নিয়ে গঠিত।
এই তিনটি মাত্রার বাইরে আরেকটি মাত্রা আছে, সেটা হলো সময়। আমরা মানুষেরা শুধু ত্রিমাত্রিক বলে শুধু তিন মাত্রার, দুই মাত্রার এবং এক মাত্রার জিনিসগুলো অনুভব করতে পারি। যেমন একটা ইটের, দৈর্ঘ্য আছে, প্রস্থ আছে, উচ্চতা আছে, তাই ইট একটি ত্রিমাত্রিক বস্তু। আবার একটা কাগজের শুধু দুটো মাত্রা আছে, দৈর্ঘ এবং প্রস্থ। কাগজের উচ্চতা (এক্ষেত্রে পুরুত্ব, অর্থাৎ কতটুকু মোটা) এতই নগন্য যে এটাকে মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা অসম্ভব। কাজেই কাগজ একটি দ্বিমাত্রিক বস্তু। একই ভাবে সাদা কাগজে একটি বিন্দু আঁকলে সেটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা কোনটাই আলাদা ভাবে পাওয়া যাবে না, কিন্তু বিন্দুটির অস্তিত্ব আছে, তাই সেটির পরিমাপ একমাত্রিক।
আমরা মানুষেরা এই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ এবং উচ্চতার সাথে মিলিয়ে সময়কে পরিমাপ করতে পারি না বলে আমরা ত্রিমাত্রিক প্রাণী।
আর পঞ্চম মাত্রার বিষয়টা বিজ্ঞানীদের কাছে পরিষ্কার নয়। অনেকে বলে স্মৃতি, অনেকে বলে সময়ের দ্বিতীয় মাত্রা, অনেকে বলে চারটি মাত্রার পরস্পরের সাপেক্ষে অবস্থান। স্পষ্ট করে আসলে বলা সম্ভব নয় যে, পঞ্চমমাত্রা বলতে আসলে কোন মাত্রাটাকে বুঝায়।

গল্পের কথায় যদি আসি, তাহলে এখানে তিন ধরণের প্রাণী আছে। ধরলাম আপনি মৃন্ময়ী পাঁচ মাত্রার প্রাণী। আপনি কল্পনা করলেন চার মাত্রার একটা প্রাণীর কথা; যার নাম "চন্দ্র"। আবার চন্দ্র কল্পনা করল তিন মাত্রার একটা প্রাণীর কথা, যার নাম "আহত"। যেহেতু কল্পনার ভেতর আরেকটা কল্পনা তৈরি হওয়া গোলমেলে ব্যাপার, তাই আপনি আহত-কে বললেন চন্দ্র-কে খুন করে চন্দ্রের স্থানে আসন গ্রহণ করতে। চন্দ্র তাই করল। সহজ ভাষায় এটাই আমার গল্প। যেখানে মৃন্ময়ী=পঞ্চমাত্রিক প্রাণী, চন্দ্র=চতুর্মাত্রিক প্রাণী এবং আহত=ত্রিমাত্রিক প্রাণী মানুষ।

কতটুকু বুঝাতে পেরেছি জানি না। আমি শিক্ষক হিসেবে তেমন ভালো নই। যদি গল্পের আরও কোন বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা করতে হয়, বলবেন। :)

৬| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৩:৩৮

শান্তির দেবদূত বলেছেন: চমৎকার গল্প, একটানে পড়ে ফেলেছি, মোটেও বড় মনে হয়নি; বরং পড়া শেষে মনে হয়েছে ইস শেষ হয়ে গেল!

গল্পে মাঝের অংশটা, পিকাসোর ছবি আকার ব্যাপারটা ছোট গল্প হিসাবে আগেও পড়েছিলাম, তবে এটার সাথে যুক্ত করাতে অন্যরকমের হয়েছে; পার্ফেক্ট। গুড রাইটিং , কিপ ইট আপ। শুভেচ্ছা রইল।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:০৫

একলা চলো রে বলেছেন: হা হা হা! ছোটখাটো বিষয় আপনার নজর এড়ায় না। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে দেবদূত ভাই। আপনি কল্পবিজ্ঞান যেমন ভালো লেখেন, তেমনি বোঝেনও। অনেক শুভকামনা রইল আপনার জন্য। ভালো থাকবেন।

৭| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৪০

চন্দ্রাহত মৃন্ময়ী বলেছেন: ভাইয়া আপনি শিক্ষক হিসাবে অনেক ভালো তারচেয়েও একজন ভালো গল্পকার ...
এবার আমি পুরো গল্পটা বুঝেছি ....

ধন্যবাদ ভাইয়া এতো কষ্ট করে এতো সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য .......

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬

একলা চলো রে বলেছেন: হা হা! অনেক ধন্যবাদ। আর না, কষ্টের কিছু নেই, নিজের আগ্রহের বিষয়ে কথা বলতে আমার বিরক্ত লাগে না মোটেও। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা রইল। ভালো থাকবেন মৃন্ময়ী।

৮| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:০০

সাহসী সন্তান বলেছেন: গল্পটা অনেক বড়! পড়তে গেলে হাতে সময় নিয়ে বসতে হবে! তবে প্রথম এবং দ্বিতীয় টা পড়ে অনেক ভাল লাগলো! সেদিক বিবেচনা করলে গল্পটা ভাল হবে আশা রাখি!


শুভ কামনা!

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:১৪

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ। হাতে সময় থাকলে পুরোটা পড়ে নিতে পারেন। :) যা পড়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা।

৯| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৪৪

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন , সায়েন্স ফিকশনে আপনি ভাল করবেন ।
অভিনন্দন নিন ।
আমি লিখাটা আবার পরবো ।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৮:৫০

একলা চলো রে বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ গিয়াসলিটন। বাংলা ভাষায় সায়েন্স ফিকশান নিয়ে আমার সুদুর প্রসারী চিন্তা ভাবনা আছে। কতটুকু সফল হতে পারব কি জানি, তবে ইচ্ছে আছে বেশ তীব্র।
যাই হোক, আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে কিছু জায়গায় আপনার কাছেও একটু দুর্বোধ্য লেগেছে! :( দ্বিতীয় বার পড়লে আরো অনেক কিছু পরিষ্কার হবে আশা করি। শুভকামনা রইল। :)

১০| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৭

অপু তানভীর বলেছেন: বড় গল্প আমার সব সময়ই পছন্দ , সেটা সাইফাই হলে তো কথাই নাই ! দুইবার পড়লাম তবে কিছু কিছু ব্যাপার মাথায় ঢোকে নাই ! দেখি আরও দু একবার পড়ে .

লিখে যান নিরন্তর ... :)

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪০

একলা চলো রে বলেছেন: সার্বজনীন অভিযোগ, কিছু জিনিস বুঝতে পারছেন না অনেকে। :( তবে আশা করি একটু সময় নিয়ে থিওরি অংশগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়লে বুঝতে পারবেন।
বড় সাইফাই ভালো লাগলে আপনি হচ্ছেন আমার আদর্শ পাঠক। অনেক ভালো লাগল আপনাকে পেয়ে। শুভকামনা রইল আপনার জন্য। :)

১১| ১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:১৮

জেন রসি বলেছেন: সিমুলেশন হাইপোথেসিস নিয়ে চমৎকার গল্প লিখেছেন।এইসব নিয়ে এখন অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা হচ্ছে। ভালো লেগেছে।

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৪৪

একলা চলো রে বলেছেন: হ্যা, ২০০৩ সালে নিক ব্রস্টম গবেষণাপত্র লিখেছেন। পরে আরও অনেক গবেষণা এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে, হচ্ছে। ধারণা করা হয় ৫০% সম্ভাবনা আছে এই হিপোথেসিস সত্য হবার।
ভালো লাগা গ্রহণ করলাম। শুভকামনা রইল আপনার জন্য জেন রসি। ভালো থাকবেন।

১২| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৬

শান্তির দেবদূত বলেছেন: ৫ নং কমেন্টেড় রিপ্লাই পড়ে কিছু বিষয় আরও ক্লিয়ার হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমি কিছু যোগ করতে চাই,

একটি কাগজকে দুইমাত্রা ধরা হয়, (যেহেতু উচ্চতাকে শূন্য ধরা হয়েছে) সেক্ষেত্রে একটি বিন্দু এক মাত্রিক নয়, বরং এটি হবে শূন্য মাত্রা। একটি সরল রেখা হবে এক মাত্রিক, মানে হলো শুধু দৈর্ঘ্য আছে বাকি দুটি মাত্রা শূন্য। ব্যাপারটা এরকম, একটি ইটের মাত্রা তিনটি, একটি কাগজের মাত্রা দুটি, একটি সুতার মাত্রা একটি ও একটি বিন্দুর মাত্রা নেই।

আর আমাদের এই বিশ্বের মাত্রা কিন্তু ৩ টি না, বরং চারটি; সময় ও একটি মাত্রা; এটি কিন্তু কাল্পনিক কিছু না বরং ফেক্ট। যেমন একটি ইট একটি স্থান দখল করে আছে, তাই এই দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতায় অন্য কোন বস্তু বেদখল করতে পারবে না। ঠিক সময়-ও একইভাবে কাজ করে, এই সময়ে এই ইটের জায়গাটি অন্য কোন বস্তু দখল করতে পারবে না।

আবার সময় এক দিকে শুধু সামনের দিকে প্রবাহমান , মানে এর ঋনাত্মক মান হওয়া সম্ভব না, ঠিক অন্য তিনটি মাত্রাও কিন্তু ঋনাত্মক হতে পারবে না।

আমরা যেহেতু চৌতুরমাত্রিকে অবস্থিত তাই তিনটি মাত্রা বা তারচেয়ে কম মাত্রাকে পরিবর্তিত করতে পারি, একইভাবে সময়কে নিয়ন্ত্রিত বা পরিবর্তন করতে হলে পঞ্চমমাত্রা থেকে করতে হবে। আমাদের বর্তমান বিশ্বই যেখানে চৌতুরমাত্রিক সেখানে উচ্চ মাত্রার কোন কিছু কল্পনা করলে তা অবশ্যই ৫-মাত্রার হতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার গল্পে উচ্চমাত্রার সিমুলেশন জগৎ দুটি যথাক্রমে ৫-মাত্রার ও ৬-মাত্রার হতে হবে।

২১ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৪

একলা চলো রে বলেছেন: চতুর্মাত্রিক জগত নিয়েই আমাদের পৃথিবী, এটা আসলেই ফ্যাক্ট কিনা তা নিয়ে কিছুটা সন্দেহ ছিল আমার। আপনার মন্তব্য পড়ে এবং আরও পড়াশোনা করে সন্দেহ নিরসন করলাম। আমি গল্পের মাত্রাজনিত সকল আলোচনা সম্পাদনা করে দিয়েছি। তিন মাত্রা কে চার, চার মাত্রাকে পাঁচ, পাঁচ মাত্রাকে ছয় হিসেবে দেখিয়েছি নতুন করে।

গল্পের নিঁখুতত্ত্বের জন্য আপনার মন্তব্যটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কৃতজ্ঞতা জানবেন, সেই সাথে শুভকামনা রইল আপনার জন্য।

১৩| ২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:১৫

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: গল্পটি পড়া শেষ করলাম অবশেষে। অসাধারণ একটি গল্প। কিন্তু লেখায় জটিলতার কারণে কিছু কিছু ব্যাপার বুঝতে পারিনি। যাইহোক, শুভ কামনা রইলো।

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:০৯

একলা চলো রে বলেছেন: লেখার জটিলতা আপনাকে বিরক্ত করেছে বলে দুঃখিত অভ্রনীল!! কিছু ব্যাপার সহজ করা সম্ভব ছিল না, কিছুটা আমার লেখার সীমাবদ্ধতা। তবে সবকিছু ছাপিয়ে গল্পটা আপনাকে মুগ্ধ করেছে জেনে ভালো লাগল। শুভকামনা!

১৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৫২

রহস্যময় ডিটেকটিভ ঈশান বলেছেন: অসাধারন গল্পটা।এক কথায় চমৎকার।এর আগে দুই পর্ব পড়া ছিলো।পরে আর খুজে পাই নি।আজ হঠাৎ পেয়ে পড়ে ফেল্লাম।এই কল্পবিজ্ঞান নিয়ে আমার আগ্রহ প্রচুর।বিশেষ করে প্যারালাল ইউনিভার্স,মাত্রা জগৎ নিয়ে। আচ্চা ভাই ,আপনার ফেসবুক লিংকটা কি একটু দেওয়া যাবে?আপনার কাছ থেকে কিছু শিখতাম আর কি।প্লিজ....

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:১৩

একলা চলো রে বলেছেন: এই বিষয়গুলো আসলেই রহস্যময়। বিজ্ঞানীদের মাঝেও বিতর্ক আছে এই সব বিষয় নিয়ে।
যাই হোক, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ বড় গল্পটা সময় নিয়ে পড়ার জন্য। শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আমার ফেসবুক আইডি হলো Mohaiminul Islam Bappy

১৫| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

গুলশান কিবরীয়া বলেছেন: খুব ভালো লাগলো , কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেললেন । আসলে একটা না একটা সময় তো শেষ আপনাকে করতেই হবে - আপনি শেষ করলেও পাঠকের কৌতূহল শেষ হয় না, সে তার আপন মনে সাজিয়ে ফেলে বাকিটুকু । হয়তো আরও একটা গল্প তৈরি হয় পাঠকের মনের ভেতর , সেখানেও সঠিক সমাপ্তি আসে না । আসলে , এ পৃথিবীতে সব কিছুই চলমান , কোথায় এর শেষ কেউ জানেনা । হয়তো এর ম্যাথম্যাটিকাল সলিউশন আছে ,এজাম্পশন আছে । কিন্তু আদৌ কি এর শেষ আছে ? its a hugely lagre amount of question mark ? :)

অনেক অনেক শুভকামনা রইল ।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:২৭

একলা চলো রে বলেছেন: ঠিক বলেছেন, ততোদিন পর্যন্ত পাঠকের কৌতূহল শেষ হবে না যতদিন না পর্যন্ত বিজ্ঞান এই সব রহস্যের সমাধান দিতে না পারে। রহস্য আছে বলেই কৌতূহল শব্দটা টিকে আছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে গুলশান। ধারাবাহিক এবং অখন্ড দু'টো ভার্সনেই আপনি ধৈর্য্য ধরে, আগ্রহ নিয়ে গল্পটা পড়ে গেছেন। শুভকামনা আপনার জন্যও।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.