নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী-র ব্লগ

একলা চলো রে

ভালো নাম মোহাইমিনুল ইসলাম বাপ্পী।কল্পবিজ্ঞান, সাইকোলজিক্যাল গল্প এবং ফ্যান্টাসি নিয়ে লেখালেখি করতে ভালো লাগে। এসব নিয়েই লিখছি অল্পবিস্তর।

একলা চলো রে › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাইকোলজিক্যাল গল্পঃ রাইটার\'স ব্লক

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২২


রুদ্র রাজিব তার প্রকাশক মাহমুদ সাহেবের সাথে চেচাচ্ছেন ফোনে।

-.....জ্বী মাহমুদ ভাই, আমি লেখাটা শেষ করে এনেছি প্রায়। এখন আপনি বার বার ফোন দিলে আমি কি করে কন্সেন্ট্রেট করব?...কি? নাহ! আমি সত্যিই লিখছি ভাই। আমি বলেছি লেখাটা কাল পরশুর মধ্যে পাবেন, সত্যিই পাবেন। দয়া করে এই ক’দিনের মধ্যে ফোন দেবেন না।
রেহনুমা এক কাপ কফি নিয়ে রাজিবের পাশে বসল। কিছুটা দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ দেখাচ্ছে তাকে।
- তুমি সত্যিই নতুন উপন্যাসটা প্রায় শেষ করেছ?
-আরে নাহ! কিসের কি!! লেখা শেষ করতে হলে তো শুরু করতে হবে। আমি এখনো শুরুই করিনি। বার বার লিখছি, কয়েক পাতা লিখে কেটে দিচ্ছি। কোন প্লট নিয়েই কয়েক পৃষ্ঠার বেশি এগোতে পারছি না। এমন কখনো হয়নি আগে। মনে হচ্ছে, আমার লেখার ক্ষমতা ফুরিয়ে এসেছে। অথচ প্রকাশক বলছে, বইয়ের প্রচ্ছদও নাকি তৈরি। লেখার কোন নামগন্ধ নেই, উপন্যাসের নামও ঠিক হয়নি, ওদিকে বইয়ের প্রচ্ছদ রেডি করে ফেলছে।
- আমার মনে হচ্ছে, তুমি রাইটার’স ব্লকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছ!
-রাইটার’স ব্লক! এসব ঢংয়ের কথা। আজকালকার উঠতি লেখকরা, নতুন নতুন পুঁচকে লেখকরা যখন প্লট খুঁজে পায় না, তখন ঢং করে বলে, তারা রাইটার’স ব্লকের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। লিখতে শেখেনি, ব্লক শুরু হয়েছে। শব্দটা শুনলেও আজকাল মেজাজ বিগড়ে যায়।
- হুম! কফি খাও। বেশি স্ট্রেস নিও না। আমার মনে হয় আজ রাতটা লেখালেখি বাদ দিয়ে অন্য কিছু করো। আশা করি কাল সব ঠিক হয়ে যাবে!!
-অন্য কিছু? অর্থপূর্ণ দৃষ্টিতে স্ত্রীর দিকে তাকাল সে। কিছুটা লজ্জিত এবং বিব্রত দেখাল রেহনুমাকে।
- না মানে বলছিলাম, একটা মুভি দেখো, কিংবা বই পড়ো, অথবা ঘুমাও। লেখালেখি ভুলে থাকো কিছুক্ষণ। কোন জিনিসে মনোযোগ ফিরিয়ে আনার সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হচ্ছে সেটা কিছুক্ষণের জন্য ভুলে থাকা।
রাজিব মাথা দোলাল।
-ঠিক বলেছ তুমি। আমি একটু হেটে আসি বাইরে থেকে।
পাঞ্জাবীর উপর চাদর জড়িয়ে, ল্যাপটপটা কোল থেকে নামিয়ে উঠে দাড়াল সে। দরজার দিকে গেল।
- এ কি! এত রাতে বাইরে যাবে? ১২ টার বেশি বাজে এখন!
-চিন্তা করো না, বেশি দূরে যাব না।
- কোথায় যাবে?
-বেইলি রোডে। রমিজ মিয়ার দোকানে বসব, চা সিগারেট খাব। দেখি মাথা খোলে কি না!

*** *** ***
রাস্তাটা প্রায় নির্জন। একটা সিগারেট ধরিয়ে আস্তে আস্তে হাটছে রুদ্র। একজন দীর্ঘদেহী মানুষ তার পেছন পেছন আসতে লাগল। থমকে দাড়িয়ে সন্দেহের দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল রাজিব।
-কিছু বলবেন?
- আপনি বিখ্যাত লেখক রুদ্র রাজিব নন?
-হ্যা, আমি রুদ্র রাজিব।
- খুব ভালো লাগল আপনাকে সামনাসামনি দেখতে পেয়ে। আমি আপনার অনেক বড় ফ্যান স্যার।
-আচ্ছা!
বলেই রাজিব হাটতে লাগল আবার। তার পাশে তাল মিলিয়ে হাটতে লাগল ভদ্রলোক।
- স্যার, আপনি সত্যিই খুব ভালো লেখেন, অসাধারণ লেখেন।
-আমার কোন লেখা পড়েছেন আপনি?
- আপনার রৌদ্রছায়া উপন্যাসটা পড়েছিলাম আমি।
-আর?
- আর পড়িনি।
-একটা বই পড়েই ফ্যান হয়ে গেলেন?
- কি করব স্যার বলুন! আমি তো ছাপার অক্ষর ভালোমতো পড়তে শিখিনি এখনো। শিখে ফেললে আরও কিছু বই পড়ব।
-মানে? আপনি ছাপার অক্ষর না শিখেই কি করে পড়লেন আমার বই?
- লম্বা গল্প স্যার!
-বেশি লম্বা?
- না, তা ঠিক না। আসলে গল্পটা খুবই ছোট। আমি জন্মান্ধ ছিলাম। কিছুদিন আগে একটা মানব উন্নয়ন মূলক সংস্থার কল্যানে, এবং একজন মহৎ ব্যক্তির মরনোত্তর চক্ষুদানের ফলে আমি দেখতে শিখেছি। আমি অন্ধ ছিলাম যখন, তখন ব্রেইল হরফে পড়তে শিখেছিলাম। অক্ষর ছুঁয়ে ছুঁয়ে পড়তাম। আপনার শুধু একটা বইয়েরই ব্রেইল সংস্করণ বেরিয়েছিল। সেটা পড়েছি।
রাজিব হাটতে হাটতেই খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করল লোকটাকে।
-নাম কি আপনার ভাই?
- আমার নাম আবীর।
-আবীর ভাই, আপনার সঙ্গে পরিচিত হতে পেরে খুবই ভালো লাগল। আমি প্রথম একজন অন্ধ ভক্তের সঙ্গে পরিচিত হলাম, যে কি না আক্ষরিক অর্থেই আমার “অন্ধ-ভক্ত”। ব্রেইল পদ্ধতিতে আমার একটা বই বেরিয়েছিল বটে, কিন্তু বইটা অন্ধ পাঠকদের কাছে কেমন লেগেছে সেটা জানা হয়নি। সত্যিই খুব ভালো লাগল আপনাকে দেখে।
- আমারও খুব ভালো লাগছে স্যার। এত রাতে বাইরে হাঁটছেন কেন? প্রায়ই কি রাত বিরেতে হাটাহাটি করে থাকেন?
-না, প্রায়ই করি না। আজ করছি। আসলে বইমেলা চলে এসেছে, অথচ এখনও লিখিনি কিছু। লেখা বেরোচ্ছে না হাত দিয়ে। রাইটার’স ব্লক না ছাই, সেটার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি!
- আমি স্যার আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
-আপনি?
- হ্যা স্যার। ব্রেইলে যে অনেক বই পড়েছিলাম, এমন নয়। কিন্তু কিছু চিন্তা ভাবনা আছে আমার। এখনো কোন সাহিত্যিক এই চিন্তাগুলো প্রকাশ করেননি।
-তাই? কেমন চিন্তা ভাবনা?
- একটু জটিল চিন্তা স্যার। যেমন ধরুন, আপনি চোখ বন্ধ করে স্পর্শ করে করে যদি আমার হাতটা ধরেন, আপনি কি বুঝতে পারবেন যে এটা আমার হাত, পা নয়, কিংবা একটা বই নয়, কিংবা একটা ফুটবল নয়।
-নিশ্চয়ই পারব। খুবই সহজ কাজ।
- চোখ বন্ধ করে যখন আপনি আমার হাত ধরবেন, যখন হাতের আকৃতি অনুভব করবেন, তখন কি আপনার মনে হাতের একটা ছবি ভেসে উঠবে না?
-তা তো উঠবেই।
- কিন্তু স্যার, আমরা যারা জন্মান্ধ, যারা কখনো কোন ছবি দেখিনি, আলো দেখিনি, তাদের কাছে আকার-আকৃতির সংজ্ঞা কি? আকার-আকৃতি, দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা এগুলোকে আপনি কল্পনা করেন ছবির মতোন করে, মানসপটে দৃশ্য তৈরির সাহায্য; কিন্তু আমরা যারা জন্মান্ধ, তারা কেমন করে সেটা কল্পনা করি, সেটা অনুমান করতে পারেন? আমাদের কল্পনায় তো দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা বিষয়গুলো নেই। তাহলে আমাদের কল্পনা কি রকম হতে পারে? কোন কিছুকে শূন্য দিয়ে ভাগ দিলে যা আসে, তা অসংজ্ঞায়িত, তার কোন সংজ্ঞা নেই। সেটা আমাদের কল্পনার বাইরের কিছু বিষয়। অন্ধদের কল্পনায় দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, আকার, আকার, আকৃতির যে প্রকৃতি, সেটাকে কি সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব?
রাজিব বেশ বিস্মিত হলো।
-আপনি একদম ঠিক বলেছেন আবীর। চমৎকার বলেছেন। এ বিষয়টা নিয়ে কখনো ভাবিনি। আলো-বিহীন আকার আকৃতির কল্পনা কেমন, সেটা একজন দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষের পক্ষে কখনো জানা সম্ভব নয়। একটা বিজ্ঞানের উদাহরণ দেই। যেমন, সময়ের দ্বিতীয় মাত্রাকে বিজ্ঞান পঞ্চম মাত্রা বলে থাকে। আমরা ত্রিমাত্রিক প্রাণীরা কখনো অনুভব করতে পারব না পঞ্চম মাত্রা কেমন হতে পারে। যা কিছু আমাদের কল্পনায় নেই, তা আমরা অনুভব করতে পারি না। একজন জন্মান্ধ মানুষ যেমন কখনো আলো কিংবা রঙ অনুভব করতে পারবে না, তেমনি একজন দৃষ্টিসম্পন্ন মানুষও কখনো অন্ধদের অবয়ব জ্ঞান, দৈর্ঘ্য-প্রস্থ-উচ্চতা ইত্যাদি মাত্রাজনিত জ্ঞান ইত্যাদি অনুভব করতে পারবে না।
- জ্বী, সেটাই। এখন যদি একটা উপন্যাস লিখতে বলা হয় আপনাকে, যেখানে একজন অন্ধ মানুষের দিন যাপনের গল্প থাকবে, তার আবেগের গল্প থাকবে, কল্পনার গল্প থাকবে, আপনি লিখতে পারবেন?
-নাহ, পারব না। যদি লিখিও, সেটা হবে অবাস্তব গল্প। সেখানে শুধু কল্পনা থাকবে, আর কিছু নয়। অভিজ্ঞতাহীন কল্পনা নিয়ে কোন গল্প লেখা সম্ভব নয়। আমি লিখতে চাই-ও না।
- তাহলে এমন গল্প কে লিখতে পারবে?
-আপনি। একমাত্র আপনার মতো কেউ, যে জন্মান্ধ ছিল, তারপর চোখের দৃষ্টি পেয়েছে। এই দুই জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সেই সবচেয়ে ভালো লিখতে পারবে।
আবীর দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
- হ্যা, আমি। কিংবা আমার মতো কেউ। আসলে আমি এমন একটা উপন্যাস লিখেছিও। কিন্তু আমার ভাষাজ্ঞান খুব-ই খারাপ। আমি চাই আপনি এটা নতুন করে লিখুন।
পকেট থেকে একটা পেনড্রাইভ বের করে সেটা রাজিবকে দিল সে।
-এখানে আছে উপন্যাসটি। আমি চাই এটা আপনি আপনার মতো করে লিখুন, আপনার নামেই ছাপান।
রাজিব সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখল আবীরকে।
-আপনি পেনড্রাইভটা সাথে নিয়ে ঘুরছেন কেন? আপনি কি জানতেন আমার সঙ্গে আপনার দেখা হবে?
হ্যা, জানতাম। আসলে আমি আপনাকে ফলো করছি বেশ কয়েকদিন ধরে। হয়তো লক্ষ্য করেননি। আজ সুযোগ পেয়ে কথাটা বললাম।
-কেন ফলো করছিলেন? শুধু উপন্যাসটা লেখানোর জন্য? তাও আমার নামে?
- হ্যা, উপন্যাসটা লেখা খুব জরুরী। জানেন, অন্ধদের কল্পনা অনেক সুন্দর। পৃথিবীটাকে আমি যেভাবে কল্পনা করতাম অন্ধ থাকার সময়, বাস্তবে তার মিল পাইনি। অন্ধকারের অবয়ব, অন্ধকারের পৃথিবীও যে কত সুন্দর হতে পারে, সেটা স্বাভাবিক মানুষ কখনোই জানতে পারবে না। যদি একজন ভালো সাহিত্যিক কোন কারণে অন্ধ হয়ে যেত, তাহলে সে এসব নিয়ে লিখতে পারত। যদি একজন ভালো চিত্রশিল্পী কিংবা সংগীতশিল্পী অন্ধ হয়ে যেত, তাহলে তারাও অন্য রকম কিছু শিল্প কর্ম তৈরি করে যেতে পারত। অন্ধকারে জন্মানো শিল্প সাহিত্যের সন্ধান পেত পৃথিবীর মানুষ।
ভয় পেয়ে দু’পা পিছিয়ে এলো রাজিব। মনে মনে ভাবল- সাইকো চরিত্র নাকি! শিল্পী-কবি-লেখকদের ধরে ধরে অন্ধ করে দিতে চায়? যাতে অন্ধদের জগৎ নিয়ে তারা লিখতে পারে?
-দেখুন, আমি আপনার হয়ে কোন উপন্যাস লিখতে চাই না। রাইটার’স ব্লকে ভুগছি বলে গল্প পাবার জন্য ভিখারি হয়ে যাইনি। আপনার সঙ্গে কথা বলে ভালো লাগল খুব। বিদায়।
- আপনি কি ভয় পাচ্ছেন আমাকে স্যার? আমাকে ভয় পাবার কোন কারণ নেই। কোন অসৎ উদ্দেশ্য নেই আমার। আমি চাই, আপনি আমার উপন্যাসটা পড়েন, যদি ভালো না লাগে, লিখবেন না। কোন অসুবিধে নেই। পেনড্রাইভটা রাখুন স্যার।
কাঁপা হাতে পেনড্রাইভটা নিল সে। নিয়েই হন হন করে হাটা শুরু করল। আবীর তার পিছু নিল না। স্থির দাড়িয়ে রইল।

*** *** ***
নিজের বাসায় ফিরেছে রাজিব। রেহনুমাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলল সে। রেহনুমা বেশ অবাক হলো শুনে।
- লোকটা সত্যিই অদ্ভুত।
-লোকটা আমাকে ফলো করছিল। কথাবার্তাও তেমন সুবিধের ঠেকেনি। মনে হচ্ছে, কোথাও একটা সমস্যা আছে।
- আমারও সেটাই মনে হচ্ছে। পেনড্রাইভে আসলেই কোন উপন্যাস আছে কি না দেখেছ?
-না এখনো দেখিনি, দেখছি দাঁড়াও।
রাজিব পেন ড্রাউভটা লাগালো ল্যাপটপে। সেখানে আসলেই একটা ওয়ার্ড ফাইল দেখতে পেল। সেটা ওপেন করল রাজিব। কয়েক শো পৃষ্ঠার একটা উপন্যাস। শুরুতেই বড় বড় করে কিছু কথা লেখা। সেটা পড়ে মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেল রাজিবের।
- কি হলো? কি লেখা ওখানে?
- পড়ে দেখো।
রেহনুমা পড়তে লাগল জোরে জোরে।
স্যার, আপনি কি জানেন ভাবছেন এই উপন্যাস লেখাটা এত জরুরী কেন? কারণটা বেশ ভয়ংকর। আমি আসলে জন্মান্ধ ছিলাম না। আমি জন্মের সময় স্বাভাবিক দৃষ্টিসম্পন্ন, সুস্থ-স্বাভাবিক একটি শিশু ছিলাম। আমার বাবা ছিলেন একজন বিখ্যাত লেখক। নাম বললে চিনবেন। নাম বলছি না। আমার বাবা চেয়েছিলেন, অন্ধদের জীবন নিয়ে, কল্পনা নিয়ে একটা উপন্যাস লিখতে। কিন্তু লিখতে গিয়ে দেখলেন, এই ধরনের উপন্যাস লেখাটা এত সহজ নয়। তিনি অন্ধ নন, অন্ধদের জগৎ কেমন সেটা তিনি জানেন না। ডাক্তাররা বলে, আমার বাবা মানসিক রোগী ছিলেন, সাইকোপ্যাথ ছিলেন। একদিন তিনি চিমটা দিয়ে খুঁচে নিজেই নিজের চোখের মনি দু’টো নষ্ট করে ফেলেন। অন্ধ হয়ে যান তিনি। ঠিক করলেন, এবার লিখবেন উপন্যাসটা। কিন্তু তিনি বুঝতে পারলেন যে অন্ধ হয়েও তেমন লাভ হয়নি। তার মস্তিষ্কে আলোর, দৃশ্যের, অবয়বের স্মৃতি ছিল। জন্মান্ধের কল্পনা কেমন সেটা জানতে হলে একজন জন্মান্ধকেই এই উপন্যাসটা লিখতে হবে। তিনি বিয়ে করেন। সন্তান নেন এবং জন্মের সময়ই নিজের সন্তানকে নিজে অন্ধ করে দেন, যাতে করে ছেলেটা বেড়ে ওঠে এমন একটা উপন্যাস লিখতে পারে। আমিই সেই সন্তান। আমি ব্রেইলে প্রচুর বই পড়েছি। আমার বাবা আমাকে অনেক কিছু পড়িয়েছেন, শিখিয়েছেন এবং মৃত্যুর সময় বলে গিয়েছেন কেন তিনি এমন করলেন। বাবার উপর আমার মোটেও রাগ হয়নি। আমার মনে হয়েছিল, বাবা খুবই নিবেদিত প্রাণ, মহৎ একজন লেখক। যাই হোক, আপনি হয়তো বুঝতে পেরেছেন এই গল্পটা লেখা আমার জন্য এত জরুরী কেন! আমি পুরো জীবন কাটিয়েছি শুধুই উপন্যাসটা লেখার জন্য। অনুগ্রহ করে উপন্যাসটা নিজের মতো করে, নিজের আবেগ দিয়ে লিখবেন।
পড়া শেষ হতে রাজিব-রেহনুমা দু’জন দু’জনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

*** *** ***
সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বিছানা হাতড়ে রাজিবকে পেল না রেহনুমা। হয়তো তারাতারি উঠে লিখতে বসেছে। হাই তুলে রান্নাঘরের দিকে গেল সে। চিনি আর কফির কৌটো খুঁজে নিয়ে কফি বানাতে লাগল। স্টাডি রুম থেকে টাইপ করার শব্দ পেল সে। রাজিব হয়তো উপন্যাসটা লিখতে শুরু করেছে। একটু কান পেতে শুনতেই কেমন অদ্ভুত লাগল শব্দটা। টাইপিংয়ের শব্দটা কেমন এলোমেলো। থেমে থেমে শোনা যাচ্ছে। দ্রুত হেটে সে স্টাডিরুমে চলে এলো। এসেই বিস্ময়ের ধাক্কায় মুখ হা হয়ে গেল তার। রাজিব টাইপ করছে, তার চোখ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। চোখের মনি দু’টো আর নেই, তুলে নেয়া হয়েছে কিছু একটা দিয়ে। রাজিব নির্বিকার মুখে টাইপ করে চলেছে।
- রাজিব, এসব কি?
- আমি নিজেকে নিজে অন্ধ করেছি রেহনুমা।
- কেন?
- আমি সারারাত জেগে উপন্যাসটা পড়লাম রেহনুমা। এমন অসাধারণ-সুন্দর গল্প, অবিশ্বাস্য কল্পনা আমি কখনো পড়িনি। এই উপন্যাসটা আমাকে অমর করে দেবে। এই উপন্যাস লিখতে গেলে আমাকে সত্যিকার অন্ধত্বের অনুভূতি নিয়েই লিখতে হবে। একজন মানুষ তার পুরো জীবন অন্ধ হয়ে থেকেছে এই উপন্যাসের জন্য, তার আবেগ, অনুভূতি, কল্পনা বুঝে লিখতে হলে আমাকেও অন্ধ হতে হবে রেহনুমা!

রেহনুমা আর ভাবতে পারল না কিছু! তার পা দুটো দুর্বল হয়ে এলো। জ্ঞান হারাল সে।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫

উল্টা দূরবীন বলেছেন: গল্পের প্লটটা ভালো। পড়েও বেশ লেগছিলো। সুন্দর এবং সাবলীল ঝরঝরে বর্ণনা।
কিন্তু একটা জায়গায় খটকা লাগলো।
লোকটার বাবা তার চোখ জন্মের সময়ই নষ্ট করে দিয়েছিলো। এই লোক রাজীবের একটি মাত্র উপন্যাস পড়েছে তাও ব্রেইল পদ্ধতিতে। আর কোন বই পড়েনি। লোকটা রাজীবকে ফলো করতো কিছুদিন থেকে। আবার একদিন রাতে সরাসরি এসে রাজীবের সাথে বিশদ কথাও বললো।
আবীর যদি জন্মান্ধ হয় তাহলে সে রাজিবকে কিভাবে ফলো করতো এবং সেদিন রাতে কিভাবে চিনলো? আবীর তো চোখে দেখে না।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:১৯

একলা চলো রে বলেছেন: দৃষ্টি পাবার পর সে রাজিবের ছবি দেখেছিল নিশ্চয়ই। আবীর যে চোখের আলো পেয়েছে, এ কথাটা বোধয় মিস করে গেছেন।

আমি জন্মান্ধ ছিলাম। কিছুদিন আগে একটা মানব উন্নয়ন মূলক সংস্থার কল্যানে, এবং একজন মহৎ ব্যক্তির মরনোত্তর চক্ষুদানের ফলে আমি দেখতে শিখেছি।

২| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৮

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:


গল্পটা ভাল কিন্তু কিছু অসামঞ্জস্যতা রয়েছে।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২০

একলা চলো রে বলেছেন: অসামঞ্জস্য থাকতে পারে, নিজের লেখার ভুল আসলে নিজের চোখে তেমন পড়ে না।

৩| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৯

অগ্নি কল্লোল বলেছেন: চমৎকার। পুরো গল্পে একটা লাইনও এদিক ওদিক হয়নি।নতুন কাহিনী।লেখার ধরণ। এক কথায় মুগ্ধ হয়েছি।।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২০

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে কল্লোল। শুভকামনা।

৪| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: শুরুর ছবি দেখে মাথা ঘোরাচ্ছে, তবে গল্প ভালই ছিল।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২২

একলা চলো রে বলেছেন: এগুলো আসলে ইল্যুশন। কিছু নির্দিষ্ট রঙের বর্ণালি দিয়ে তৈরি ছবি।
ভালো লেগেছে জেনে খুব আনন্দিত হলাম। ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: সাইকো গল্প হিসেবে চমৎকার। গল্পটি পড়ার পর আমার মধ্যেও তীব্র ইচ্ছে জাগলো জন্মান্ধদের দৃষ্টি কেমন হয়, আর দৃষ্টি ফিরে পেলেই বা তারা কেমন অনুভব করে তা জানতে।

শুভেচ্ছা।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫২

একলা চলো রে বলেছেন: শুনেছিলাম জন্মান্ধদের দৃষ্টি হলো শ্রবণ নির্ভর। তাদের কল্পনায় শব্দ থাকে শুধু। কোন কিছুর অবয়ব বোঝার জন্য তারা গন্ধ আর শব্দের উপর নির্ভর করে। দৃষ্টি সম্পন্ন মানুষও কোন কিছুর অবস্থান বোঝার জন্য শব্দের উপর কিছুটা নির্ভর করে, কাজেই অবয়বের সাথেও শব্দ তরঙ্গের এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে।
আপনার শুভেচ্ছা পয়ে খুব ভালো লাগল। ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:৪২

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সাইকো গল্প হিসেবে খুব ভালো হয়েছে, এমনটা হয়। জন্মান্ধদের ব্যাপারটা বেশ নতুন লাগল।
আবার রুদ্রের অন্ধ হয়ে যাওয়ার কোন কারণ খুঁজে পেলাম না। কারণ সে অন্ধ হয়েও জন্মান্ধদের মতো দেখার ক্ষমতা লাভ করবে না (আসলে কি দেখার? নাকি অনুভবের?) কারণ তার চিন্তায় আলো, আঁধার, রঙ ইত্যাদি খেলা করবেই আর এটা সে জানত যেহেতু ঐ অন্ধলোকটার বাবার ব্যাপারে সে অবহিত।
যাই হোক, কিছু অসঙ্গতি থাকলেও বেশ সুখপাঠ্য ছিল আর গল্প পড়ার পর পাঠকের মনে হবে না যে, "সময় নষ্ট হলো"।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪০

একলা চলো রে বলেছেন: আসলে বোঝাতে চেয়েছিলাম যে রুদ্র অন্ধ হয়ে, অন্ধদের মতো অনুভূতি নিয়ে, জন্মান্ধ না হলেও, উপন্যাসটা শেষ করতে চেয়েছিল।
পাঠে কৃতজ্ঞতা। শুভকামনা।

৭| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:০০

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: নিজ হাতে খুঁচিয়ে চোখের মনি তুলে ফেলা! :-&
দারুণ সাইকো গল্প। ভয়াবহতার মাঝে ভালই লাগল।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৯:৪২

একলা চলো রে বলেছেন: ভালো লেগেছে জেনে খুশী হলাম। ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা।

৮| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৭

অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: গল্প ভাল লেগেছে। আর আমার কথা অনেকটাই আরণ্যক রাখাল বলে দিয়েছেন।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার জন্যও শুভকামনা।

৯| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৮

জেন রসি বলেছেন: গল্পের প্লটটা চমৎকার। ভালো লেগেছে।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৩৮

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে জেন।

১০| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৫

অপর্ণা মম্ময় বলেছেন: গল্পের প্লটটা ভালো।
( আপনার কি আরও নিক আছে ? বাপ্পী নামে ?)

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৪

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ।
না, বাপ্পী নামে আমার অন্য কোন নিক নেই। তবে আমার নাম বাপ্পী। ফেসবুকে বাপ্পী নামে আপনার বন্ধুতালিকায় আছি ৩ বছর ধরে।

১১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৪

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: বহুদিন পর একটা সাইকো গল্প পড়লাম। অসাধারণ।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৪

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ শাহাদাত। ভালো থাকবেন।

১২| ০৩ রা মার্চ, ২০১৬ রাত ১১:০৪

অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: চমৎকার একটি সাইকো গল্প। অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫০

একলা চলো রে বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

১৩| ২২ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭

Saeid Fmh বলেছেন: সত্যি, অসাধারণ, বলার ভাষা নেই,
এখন আমার ও ইচ্ছা হয়,অন্ধদের সেই অনুভূতি টি বুঝার!;

৩০ শে জুন, ২০১৭ রাত ৯:০৮

একলা চলো রে বলেছেন: প্রশংসার জন্য ধন্যবাদ সায়েদ। ভাল থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.