নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তর মম বিকশিত করো/ অন্তরতর হে/ নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,/ সুন্দর কর হে

মহান অতন্দ্র

কবিতার মত মেয়ে

মহান অতন্দ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেলাল ও বেলার গল্প

১৭ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ৯:৫৫

আজকের সলিউসনটা কিছুতেই সে ঠিক মত মিলাতে পারছে না । এ নিয়ে তিন তিন বার হল । তাকে বের করতে হবে , ঠিক কত কম পরিমান নাইট্রেটেও সলিউসনটি তৈরি করা যায় । মানুষের ডাইজেস্টিভ সিস্টেমে সঠিক মাত্রার নাইট্রেট বের করায় তাদের প্রজেক্টের মূল উদ্দেশ্য । হাতে আর বেশি সময় নেই । প্রজেক্টের ডিউ ডেট এপ্রিল ১১ ।
কিন্তু বার বার ভুল হচ্ছে আজ । বেলাল এই ল্যাবে ২ বছর কাজ করে । তবে আমেরিকায় ১০ বছর । সেই ১৮/১৯ বছরে বাবা-মা তাকে পাঠিয়ে দিল , এখনও চোখে ভাসে । মনে হয় এইতো সেদিন ।
বেলাল বোঝে তার কাজে একটু বিরতি দেওয়া প্রয়োজন ।তার অস্থিরতায় কাজটি ঠিক মত করতে দিচ্ছে না ।ল্যাবের টেবিলে শুয়ে পড়ে সে ।কিন্তু চোখ বন্ধ করে রাখতে পারে না । ছাদে আটকে যায় ।যদিও সেখানে দেখার মত কিছু নেই ।একটা টিকটিকি ও নেই । দেশে থাকতে প্রায় সে টিকটিকি আর তেলাপোকাদের ছুটোছুটি দেখত । এখানে একটা ইন্সেক্ট ও নেই ।বিদেশে আসার পর প্রথম প্রথম খুব চিঠি লিখত । সেই সব চিঠি থাকত আমেরিকার প্রশংসাই ভরা । আমেরিকা একটি কীট পতঙ্গহীন দেশ , এক ফোটা আবর্জনা নেই ,রাস্তাঘাট মাজা বাসনের মত ঝক ঝকে । আমেরিকানরা ভীষণ ভাল , সচেতন ।কুকুরের মলটুকুও এরা টিস্যু দিয়ে মুছে ফেলে । কিভাবে একটি লোক শুধু যন্ত্রের সাহায্যে মাইলের পর মাইল আবর্জনা নিখুঁত ভাবে কালেক্ট করে । তবে এ বিসয়টি তাকে সত্যিই অভিভুত করত । অনেকদিনতো ক্যাম্পাস এ যাবার পথে থেমে যেত সে । দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখত, ভাবত আমাদের দেশের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা যদি এরকম কোন রোবট বানাত । দেশটাই আর আবর্জনা থাকতনা বোধ হয় ।
ওর এরকম চিঠিতে ভীষণ হাসাহাসি করত ওর কাজিনরা । তবুও ও লিখত , আমেরিকা খুব সুন্দর , ও খুব ভাল আছে ।টেক্সাসে ওর সাথে ছিনতাই এর যে ভয়ানক ঘটনা ঘটেছিল বেমালুম চেপে যেত সে। লিখত ও ভীষণ ভাল আছে ।
তবে বেশিক্ষণ ভাববার অবসর পায় না সে । তার স্ত্রী মুক্তা ফোন করেছে । মুক্তার সাত মাস চলছে । মুক্তার খুব যত্ন নেয় বেলাল ।এইবার যেন কোন ভুল না হয় । ভাবতে ভাবতে ল্যাবেই ঘুমিয়ে পড়ে সে ।
মুক্তার ব্যাথা উঠেছে , যন্ত্রণায় ছটফট করছে । তবুও ডক্টর কিছুতেই হাসপাতালে নিতে পারমিট করছেন না । আর ও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলছেন । মুক্তার চিৎকারে দিশেহারা বেলাল । মুক্তার চিৎকার থেমে আসে । তাদের একটি ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে । অনেক্ষন ধরে সে দেখছে তার মেয়েকে । কিন্তু তাকে আম্বিলিকাল কর্ড কাটতে হবে । ছুরি , কাচি কিছুই পাই না সে । সে কি কিচেন এ যাবে , ওখানে খুঁজবে । কিন্তু মেয়েটা তার কোলে , কিভাবে যাবে সে । ভীষণ চিন্তায় পড়ে ।এরকম সময় তার ঘুম ভেঙ্গে যায় ।
প্রফেসর এরন তাকে ডেকে তুলেছে । “এই কাঁচ নল টা ১৫ সেমি. এর বদলে ২০ সেমি. করে কাটতে হবে , যাতে , সলিউসন মিশতে বেশ কিছুটা সময় পায় । পুরা ব্যাপারটা খুব ধীর গতিতে হবে ।“ ওকে বলে কাজ শুরু করে বেলাল ।
কাঁচনলটি কাটতে কাটতে তার মনে পড়ে যায় ৪ বছর আগের কথা ।মুক্তা তখন প্রেগনেন্ট ।বিয়ের পর প্রথম সন্তান ।আলট্রাসনগ্রাফিতে এসে ছিল মেয়ে ।নাম ও ঠিক করে ফেলল , বেলা ।বাঙালি নাম , আবার আমেরিকান বন্ধুদেরও ডাকতে অসুবিধা হবে না । আমেরিকান মেয়েদের নাম ও বেলা হয় ।বেলাল ঠিক করেছিল প্রতি বেলায় বেলাকে বাংলাদেশের গল্প শোনাবে। ইন্টারনেট আর উইকিপিডিয়াতে ও নিশ্চয়ই পড়বে বাংলাদেশে খুব গরীব , শিক্ষার হার এদেশে খুব কম । এদেশে সবাই দুর্নীতি করে । কারণে অকারণে মিথ্যে বলে । সব ধারণা পাল্টে দেবে সে ।
স্কুলে কলেজে বেলাকে কেউ কিছু বললে , বেলা ওদের শুনিয়ে দেবে খান একাডেমীর গল্প , নাফিস বিন জাফর , রবীন্দ্রনাথ , অমর্ত্য সেন , ইউনুস এর গল্প । বেলাল ঠিক করতে থাকে বেলা তার বন্ধুদের কখন কোন গল্পটা শোনাবে ।সামারে যখন হাইকিং এ যাবে বেলা , তখন শোনাবে নিশাদ মজুমদার আর মুসা ইব্রাহীম এর গল্প । প্রচণ্ড বিষিয়ে ওঠে তার মন । কাচ নলটা ছুড়ে ফেলে মেঝেতে ।
সবাই ছুটে আসে । ফরাসি একটি মেয়ে জিজ্ঞেস করে “ কি হয়েছে বালাল তোমার ।আর ইউ ডিস্টার্ব ।এভ্রিথিং ইজ ওকে ইন ইওর হোম ?” ওর স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার কথা সবাই জানে ।বছর চারেক আগের মিস কারেজ এর কথাটাও ।এবার যেন মুক্তার ব্যাপারে বেলাল এর চেয়ে বেশি যত্নবান ওর কলিগরা ।ওকে সবার আগে ছুটি দেওয়া হয় , বাড়তি কাজ দেওয়া হয় না ।
সরি বলে বেলাল জানায় , সব ঠিক আছে ।নেপালি ছেলেটা আড়চোখে মিটি মিটি হাসে ওর দিকে তাকিয়ে । সকালেও দু’ তিনবার বিষয়টা তুলেছে সে ।বেলাল এড়িয়ে গেছে ।
বেলাল ভাবে আজ বেলার বয়স হত চার । এতদিনে হয়ত আধো আধো বুলিতে সব গল্প মুখস্ত হয়ে যেত তার । মুক্তার কথা মনে পড়ে তার আবার। মুক্তা ১ বোতল ইন্ডিয়ান পিকল আনতে বলেছে ।
বেলাল বাসায় ফেরে ।পার্কিং লট থেকে গাড়ি বের বের করতে করতে গল্পগুলো সাজায় আবার । মুসা ইব্রাহীম এর নামটা বাদ দেয় সে ওখান থেকে । এই প্রথম মুক্তার মিস কারেজটা সৌভাগ্যের মনে হয় তার কাছে । স্পীডমিটার এর কাটা ৩৫ এ তুলে ডাউনটাউন এ পিকল আনতে ছোটে ।

বি দ্র ঃ আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা হরহামেশায় মিথ্যা বলেন , তারা ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে ইতিহাস বদলে ফেলেন । তাদের কাছে কোন প্রত্যাশা নেই আমাদের । প্রত্যাশা তরুণদের কাছে । ভেবেছিলাম ,প্রবীণদের পর আমরা এই তরুনরা যখন দেশের হাল ধরব , আমাদের ছেলে মেয়েরা সত্যি গল্প শুনে বড় হবে । ইতিহাস বদলানোর নোংরা গল্পটুকু ওরা কখনও জানবে না ।দুর্ভাগ্য আমাদের এই তরুণদের মাঝেই কারো কারো শরীরে প্রবীণদের খারাপ জিনগুলো রয়ে গেছে । তাই এক দুঃসাহসী তরুন মুসা ইব্রাহিম ষোল কোটি মানুষের সাথে মিথ্যে বলেছেন । দিনের পর দিন নিখুত অভিনয়ে ঠকিয়েছেন ।
প্রচণ্ড ঘৃণা আর হতাশা থেকে আমার এই গল্প ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.