নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্তর মম বিকশিত করো/ অন্তরতর হে/ নির্মল করো, উজ্জ্বল করো,/ সুন্দর কর হে

মহান অতন্দ্র

কবিতার মত মেয়ে

মহান অতন্দ্র › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বর্ষবরণ

১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:২৭


উত্তর গোলার্ধের মানুষ যখন ডিসেম্বর জানুয়ারির শীতে ঘরের ভেতরে কুঁকড়ে ঝিম মেরে আছে, তখন দক্ষিন গোলার্ধের লোকেরা গরমে হাঁপিয়ে ছুটে হয়ত বাইরে হাওয়া খেতে বেরিয়েছে। নর্দার্ন ও সাউদার্ন হেমিস্ফিয়ারের ঋতু বৈচিত্রের এই তারতম্য পৃথিবী ও সূর্যের ঘূর্ণন প্রক্রিয়ার খাম খেয়ালি ছাড়া আর কিছুই না। উত্তরে গোলার্ধে যখন শীতের ঝরা পাতাদের হটিয়ে গাছে গাছে সবুজ কুড়ি এসে বসন্তের দেখা মিলছে তখন দক্ষিনে শরৎ পেরিয়ে হেমন্তের প্রস্তুতি চলছে, প্রকৃতি তার সবুজ যৌবন হারিয়ে বিমর্ষ হলুদ রঙ মাখছে।
গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী আমরা যাকে ইংরেজি বর্ষপঞ্জি বলি সেটির আসলে সর্বপ্রথম শুরু হয়েছিল প্রাচীন রোমান কাস্টম থেকে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী আর আলাদা কিছুই নয় বরং এক সৌর বছরের দৈর্ঘ্য ঠিক রাখতে জুলিয়ান বর্ষপঞ্জীর একটা সংস্করণ বলা যেতে পারে। নর্দার্ন হেমিস্ফিয়ারে ডিসেম্বর মাসে দিনের দৈর্ঘ্য আস্তে আস্তে ছোট হয়ে অন্ধকার অংশ বাড়তে থাকে এবং ২১শে ডিসেম্বরে এসে সৌর ক্যালেন্ডার অনুযায়ী সেটি বছরের সবচেয়ে ছোট দিন হয়। ২১শে ডিসেম্বরের পর দিনের দৈর্ঘ্য বেড়ে অন্ধকার অংশ কমে আলোর অংশের অনুপাত বাড়ে। যেহেতু ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি অন্ধকার এবং জানুয়ারি মাস থেকে সেই অন্ধকার কাটিয়ে আলোর অংশের ক্রমশই বেড়ে যাওয়া, তাই রোমানরা ডিসেম্বরকে বছরের শেষ এবং জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন বলে গণ্য করা শুরু করে। কিন্তু মানুষ স্বভাবতই প্রকৃতিপ্রেমী। শুধু আলো অন্ধকারের হিসেব নিয়ে তারা সন্তুষ্ট থাকবে কেন। প্রকৃতির খাম খেয়ালি বা ঋতু রঙ অনুযায়ী মানুষের মনের রঙেরও তো নানা পরিবর্তন ঘটে। তাই প্রকৃতির রঙের সাথে তাল মিলিয়ে পৃথিবীর অনেক জাতিই গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী ছাড়া আলাদা একটি পঞ্জিকা তৈরির প্রয়োজন অনুভব করে।
প্রথমে উত্তর গোলার্ধের গল্পটিই বলা যাক। মধ্য মার্চ থেকেই নতুন বর্ষ বরণের একটা প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় উত্তর গোলার্ধের অনেক দেশেই। রাঁধাচুড়া কৃষ্ণচুড়া গুলমোহর নানা ফুলের দেখা আমাদের দেশেও এই সময়টাতেই মেলে। তাই প্রকৃতির এই ফুলেল সুগন্ধি আমেজের সাথে মানুষের মনও প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। শীতের আড়মোড় ভেঙে বসন্তের শুরু থেকেই নানা উৎসবের আয়োজন চলে, পালিত হয় বসন্ত উৎসব, চৈত্র সংক্রান্তি। দিনের দৈর্ঘ্য বাড়তে বাড়তে মার্চের ২০ তারিখ নর্দান হেমিস্ফিয়ারে দিন রাত্রির দৈর্ঘ্য একেবারে সমান হয়ে যায়। তাই মার্চের ২১ তারিখকে বছরের প্রথম দিন গন্য করে পার্সিয়ানরা. পালন করে তাদের সবচেয়ে বড় উৎসব নওরুজ। নওরুজ শব্দের অর্থ নতুন দিন। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো ইরান একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও তাদের কাছে এই উৎসবের গুরুত্ব ঈদের চেয়েও বেশি। নওরুজ ইরানি বর্ষপঞ্জীর প্রথম দিন হলেও মধ্য এশিয়া, দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর পশ্চিম চীন সহ বিশ্বের অন্যান্য বহু অঞ্চলেও এই উৎসব পালনের রেওয়াজ রয়েছে। নওরুজ পালনকারী দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, জর্জিয়া, ইরাক, কাজাখস্তান, কসোভো, কিরগিজিস্তান, সিরিয়া, তাজিকিস্তান, তুরস্ক ও তুর্কমেনিস্তান।
আমাদের এই উপমহাদেশে ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখের প্রচলন সম্রাট আকবর চালু করলেও এই দিনটি আরও অনেক দেশেই তাদের বছরের প্রথম দিন বলে পালন করে এবং তাদের বর্ষপঞ্জির দিন তারিখ হিসেবের গণনাটাও অনেকটা আমাদের বাংলা বর্ষপঞ্জির মতই। এ প্রসঙ্গে তামিল, থাই, কম্বোডিয়ান, লাও, থিঙ্গিয়ান, এবং অডিয়া বর্ষপঞ্জির কথা বলা যেতে পারে। লাও বর্ষপঞ্জীকে মুলত বৌদ্ধ ধর্মালম্বিদের বর্ষ পঞ্জি বলা হয়। কম্বোডিয়ান, লাও, মায়ানমার, থাইল্যান্ড শ্রীলংকা এই পঞ্জিকা অনুসরণ করে। মূলত এপ্রিলের ১৩ অথবা ১৪ তারিখে পঞ্জিকা অনুযায়ী এই দেশগুলো বর্ষ বরণ উৎসব পালন করে। শ্রীলংকানরা তাদের সিংহলী বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী ১৩ অথবা ১৪ এপ্রিলেকেই বছরের প্রথম দিন হিসেবে গণ্য করে। ন্যাশনাল হলি ডে, ন্যাশনাল প্যারেড নানা জাক জমক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তামিলরা ১৪ এপ্রিল এই উৎসব পালন করে, এরা এটাকে বলে পুঠান্ডু। থাইরা এটাকে বলে সঙ্ক্রান ফেসিটিভাল, সঙ্ক্রান সংস্কৃত শব্দ যার অর্থ পরিবর্তন। বার্মিজরা এটাকে বলে থিঙ্গিয়ান, পালন করে ১৩ থেকে ১৬ই এপ্রিলের মধ্যে। পাঞ্জাবীরা পালন করে ১৩ অথবা ১৪ই এপ্রিল, পাঞ্জাবী পঞ্জিকা অনুযায়ী এটাকে ফসলি উৎসব বা বৈশাখী উৎসব বলে। নেপালি পঞ্জিকা অনুযায়ী তাদের নববর্ষ পড়ে ১১ থেকে ১৫ই এপ্রিলের মধ্যে। নেপালে এটিকে নববর্ষই বলে এবং পঞ্জিকায় চন্দ্রের অবস্থান অনুযায়ী দিন তারিখ তিথি নির্ধারণ করায় দিনটি নির্ধারণে একটু তারতম্য দেখা যায়।
বাংলাদেশে বসন্ত উৎসব, চৈত্র সঙ্ক্রান্তি ও ১৪ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ ছাড়াও বাংলাদেশের আদিবাসিরা পালন করে বৈসাবি উৎসব। চৈত্রের শেষ ২দিন ও বৈশাখের প্রথম দিন তিনদিন ধরে এ বৈসাবি উৎসব চলে। পহেলা বৈশাখ আরও পালন করা হয় ভারতের পশ্চিম বঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড ও উড়িষ্যা রাজ্যে। চিনা পঞ্জিকা অনুযায়ী তারা তাদের নববর্ষ উদযাপন করে ফেব্রুয়ারির সাত তারিখে। ইসলামি বর্ষপঞ্জি মুলত হিজরি বর্ষপঞ্জি এবং চন্দ্র মাস অনুযায়ী নির্ধারণ করায় বছরের প্রথম দিনটি ইংরেজি বর্ষপঞ্জির একই দিনে পড়ে না। মুহাররম মাসের এক তারিখকে ইসলামি বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বছরের প্রথম দিন বলা হয়। নর্দান হেমিস্ফিয়ার বা উত্তর গোলার্ধের মধ্যে উত্তর আমেরিকা দক্ষিণ আমেরিকা, দুই তৃতীয়াংশ আফ্রিকার, ইউরোপের কিছু অংশ এবং ইন্দোনেশিয়া পড়লেও তাদের মধ্যে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী ছাড়া আলাদা করে নববর্ষ উদযাপনের রীতি নেই।
এবার বলা যাক সাউদার্ন হেমিস্ফিয়ার বা দক্ষিন গোলার্ধের কথা। দক্ষিন গোলার্ধের দেশের মধ্যে পড়েছে অস্ট্রেলিয়া, এন্টার্টিকা, সাউথ আমেরিকার সামান্য কিছু অংশ, আফ্রিকার দক্ষিণ অংশের এক তৃতীয়াংশ, এশিয়ার কিছু দ্বীপ, ভারত দক্ষিন আটলান্টিক, দক্ষিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু অঞ্চল আর বেশিরভাগ ওশেনিয়া মহাদেশের কিছু অংশ। দক্ষিন গোলার্ধের ইংরেজি বর্ষ পঞ্জি ছাড়া আলাদা করে এরকম নববর্ষ উদযাপনের কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারিনি। আশা রাখছি দক্ষিন গোলার্ধের কোন বন্ধুর সাথে পরিচয় হলে তার কাছ থেকে জেনে সেও কোন একদিন লিখব।
শেষ কথা, এই দীর্ঘ গদ লেখার একটাই উদ্দেশ্য। বর্ষবরণকে যারা মুশরিকদের কাফিরদের বেদায়াতি কাজ বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদের বলছি, সব কিছুতেই এত ঘণ্ট পাকানোর প্রয়োজন নেই। যে ইংরেজি বর্ষপঞ্জী ছাড়া আপনাদের একেবারেই চলছে না সেটিও মুশরিকদেরই বানানো। তাই সেটি যদি মানতে আপত্তি না থাকে আসুন বিতর্ক, জরা ক্ষোভ সব সরিয়ে প্রকৃতিকে বরণ করে নেই এবং আমাদের দীর্ঘদিনের চলে আসা ঐতিহ্য রক্ষা করি। সবাইকে শুভ নববর্ষ।

** লেখাটি আমার বিদেশী বন্ধুদের কাছ থেকে তাদের গল্প শুনে কৌতূহলী হয়ে লেখা। অনেকদিন পর ব্লগে লিখলাম। কাউকে মন্তব্যের উত্তর দেবার বা সবার পোস্ট পড়ে দেখার সময় পাই না যেটা ব্লগার হবার পরিপন্থী। তাই ব্লগে পোস্ট করা হয় না। এই জন্য ক্ষমা চাইলাম। সবাই অনেক ভালো থাকুন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫

কথাকথিকেথিকথন বলেছেন: সুন্দর লেখা । কিছু তথ্য জানলাম নববর্ষ নিয়ে ।

অনেক ধন্যবাদ ।

নববর্ষের শুভেচ্ছা ।

২| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৫০

আহমেদ জী এস বলেছেন: মহান অতন্দ্র ,




প্রকৃতি বদলে বদলে যায় , বদলে যায় মানুষেরও মনের রঙ । কিছু মানুষ থাকে এই বর্ণিল রঙের মাঝে ও কালো কালো রঙ দেখে । জ্ঞানের চোখ অন্ধ বলেই সব কিছু কালো বলেই ধরে নেয় তারা ।

সুন্দর লিখেছেন সবটা মিলিয়ে ।
নতুন বছর আপনার জীবনেও নতুন রঙের দিগন্ত খুলে দিক ।

৩| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯

সুমন কর বলেছেন: শুভ নববর্ষ।

৪| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:০২

ডি মুন বলেছেন: যেহেতু ডিসেম্বর মাসে সবচেয়ে বেশি অন্ধকার এবং জানুয়ারি মাস থেকে সেই অন্ধকার কাটিয়ে আলোর অংশের ক্রমশই বেড়ে যাওয়া, তাই রোমানরা ডিসেম্বরকে বছরের শেষ এবং জানুয়ারিকে বছরের প্রথম দিন বলে গণ্য করা শুরু করে।

--------- জানতাম না তো এই তথ্য।

ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালো থাকুন। শুভ নববর্ষ।

৫| ১৪ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৫:০৮

আরজু পনি বলেছেন:
নওরুজের ব্যাপারটা জানতাম। আজ আপনার কারণে পুঠান্ডু, থিঙ্গিয়ান সহ আরো কিছু নাম জানলাম।

অনেকদিন পর এলেন। দেখে ভালো লাগছে, অতন্দ্র।

নতুন বছরের অনেক শুভেচ্ছা রইল।

৬| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১২

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ভালো লাগলো মহান অতন্দ্র।

প্রিয়তে থাকছে।

অনিঃশেষ শুভকামনা।

নববর্ষের শুভেচ্ছা।

৭| ১৫ ই এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:১২

দীপংকর চন্দ বলেছেন: ভালো লাগলো মহান অতন্দ্র।

প্রিয়তে থাকছে।

অনিঃশেষ শুভকামনা।

নববর্ষের শুভেচ্ছা।

৮| ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো পোস্ট।

৯| ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০১

মুহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেছেন: সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো ইরান একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হলেও তাদের কাছে এই উৎসবের গুরুত্ব ঈদের চেয়েও বেশি।

সত্যি বলেছেন, ইরানিদের কাছে মুসলমানদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার কোন গুরুত্ব নেই। ঐ দুই দিন আপনি বুঝবেন না যে এটা ঈদের দিন।

এই "মুসলিম" শব্দটা ইরানে একটু প্রশ্নের সম্মুখীন আসলে। নোরুজকে ঘিরে এখানে যেসব কাজ কর্ম হয় তা মূলতঃ মুসলিমদের ধর্ম বিশ্বাসের সাথে মানানসই নয়। যেমন ধরে, নোরুজের আগে শেষ মংগলবার দিবাগত রাত হল "চাহার সাম্বে সুরি"। এদিন ওরা আগুনের উপর দিয়ে লাফায়। বিশ্বাস করে যে সব অমংগলকে দূর করে দিচ্ছে এর মাধ্যমে। এছাড়া নতুন মাসের ১৩ তম দিনে "সিসদাহ বেদা", এই দিন কেউ বাসায় থাকে না, প্রকৃতির কাছে চলে যায়, সাথে নিয়ে যায় নোরুজের সময় বাসায় নেয়া কচি গাছের চারা, ওটাকে প্রকৃতিতে ফেলে আসে এবং মনে করে এর মাধ্যমে তাদের মনের বাসনা পূরণ হবে। এরকম বহু জিনিস আছে যেগুলো মূলতঃ প্রাচীন পারস্য সংস্কৃতি থেকে এসেছে, জারতোস্তি ধর্মের একটা প্রভাবও আছে এসব সংস্কৃতির উপর। জারতোস্ত ধর্ম হল ইরানের প্রাচীন এক ধর্ম, মূলতঃ অগ্নি উপাসক। এরকম বহু উদ্ভট বিশ্বাসে ভরপূর ইরানিদের জীবন।

১০| ২২ শে জুন, ২০১৭ রাত ১০:১৫

বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে ফিরে আসুন, নতুন পোস্ট দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.