নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভালোবাসি আশ্চর্য মেঘদল...

আমাকে তারা খুঁজেছিলো সম্ভাবনার নিচে..

মোহিত সোহাগ

না-মানুষ

মোহিত সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জারজঃ আমৃত্যু ফেরারী আসামি; এবং একটি চলচ্চিত্র

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ২:৫৪

১।(প্রথম অংশ)

জারজ শব্দটি কানে এলে আমাদের ভেতরে কী প্রতিক্রিয়া হয়? আমরা কি আর দশটি সাধারণ শব্দের মতই এর অভিব্যাক্তি-নিরপেক্ষ আভিধানিক অর্থ নিয়ে নিবৃত্ত থাকি নাকি একটি নেতিবাচক ঘৃণাভাব মনে উদয় হয়? যে শব্দগুলো ব্যবহার করে আমারা গালি দেই, ঘৃণা প্রকাশ করি, তার মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম শব্দ এটি।এটি একটি শব্দ মাত্র নয়, এটি একটি অতীত; একটি ইতিহাস; একটি কালো ইতিহাস।



২।

নারী-পুরুষের দেহজ প্রেমের স্মারক হয়ে মানব শিশুর পৃথিবীতে আসা ও এই প্রক্রি্যার ধারাবাহিক চলমানতাই এই পৃথিবীকে টিকিয়ে রেখেছে।এটি প্রকৃতিরই সৃষ্ট এক পবিত্র প্রক্রি্যা। কিন্তু মানব সৃষ্ট সভ্যতা ও তার সংস্কার এই প্রক্রিয়ার উপর মার্কা বসিয়েছে- বৈধ ও অবৈধ! যে মানব শিশুটি জানেই না যে জন্ম প্রক্রিয়া কী বস্তু; তার পিতামাতার সম্পর্ক কি দাম্পত্য না পরকিয়া, সামাজ স্বীকৃত না সমাজ ধিকৃত; সে কি প্রেমের ফসল না ধর্ষণের; তকেই আমৃত্যু বয়ে বেড়াতে হয় ভ্যাবিচারের কলঙ্কতিলক!সমাজে সে পতিত, ধিকৃত, নিন্দিত, বঞ্চিত। সারা জীবন সে এক বিভীষিকাময় শব্দের ভয়ে আতঙ্কিত- ‘জা্রজ সন্তান’!সে তার পরিচিত জগত ছেড়ে পালায়; আজীবন পালায়; আমৃত্যু সে ফেরারী আসামী, চির পলাতক!



কিন্তু এই ‘মার্কা বসানো’ ন্যায় কি অন্যায় সে আলোচনা এখানে করবো না। আপাতত আমি জারজ শব্দটির অভিব্যাক্তি ও তার ব্যাবহার নিয়েই বলবো। আলোচনার খাতিরে তথাকথিত সামাজিক সংস্কারকে যদি মেনেও নিই, যদি বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক-জাত শিশুকে জারজ বলতেই হয়, তবুও ঐ সম্পর্কের ‘সময় ও পরিস্থিতি’ এবং তার প্রভাব বিবেচনা জরুরী। আমি মনে করি মানব সন্তানকে জারজ বলাই অন্যায়, আর যুদ্ধের সময় শত্রুপক্ষের দ্বারা জোরপুর্বক শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে যে শিশুর জন্ম তাকে জারজ বলা পাপ।



১।(চলমান)।

বাংলাদশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে যদি রাষ্ট্রের গর্ভাবস্থা ধরে নেই, তবে তিরিশ লাখ শহীদের প্রাণ আর দুই লাখ নারীর সম্ভ্রমকে বলতে হবে তার প্রসব বেদনা। সেই প্রসব বেদনাকালীন রক্তক্ষরণ হলো অসংখ্য যুদ্ধশিশুর জন্ম। এই যুদ্ধশিশুকে যারা জারজ বলে সম্বোধন করে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে আমার প্রশ্ন আছে।কথায়, বলায়, লেখায়, গানে, ছবি্তে যারা মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে ব্যাবসা করে তারাই যুদ্ধশিশুকে জারজ শিশু (Bustard Child) সম্বোধন করে।



১।(শেষ অংশ)

সম্প্রতি The Bastard Child নামে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভারতে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আপাত দৃষ্টিতে এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকালিন সময়ে নারী নির্যাতনের যে ঘটনা ঘটছে সেটাকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে বলে মনে হয়। নির্মাতাও তেমনটিই প্রচার করছেন। চলচ্চিত্র হিসেবে এটি কেমন হবে ছবি না দেখে তা বলা যাবে না; কিন্তু ছবির নামটি আমাকে ভা্বাচ্ছে। এটি যদি The War Child হত, খারাপ কি হত? নাকি দর্শককে একটি রগরগে ছবির পুর্বাভাস দেয়ার জন্যই এই নামকরন? সেদিনের যে শিশুরা আজ তাদের কলঙ্কময় জন্ম-ইতিহাস ভুলে থাকতে অভ্যস্ত হয়েছে, তাদের নতুন করে কি অপমান করা হচ্ছে না এই নামকরনের মাধ্যমে?

ছবিতে রাইমা সেন একজন বীরাঙ্গনা নারীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। ট্রেলারে তার একটি ধর্ষণ দৃশ্যও জুড়ে দেয়া হয়েছে। ছবিতে এরকম দৃশ্য আরও আছে সন্দেহ নেই। যা দেখানো হচ্ছে তা ঘটেছে, বরং আরো বিভতস ঘটনা ঘটেছে। তাই বলে সেটির রগরগে চিত্রায়ণ শিল্প-সম্মত নয়।কী ঘটেছে তা এই প্রজন্মের জানা উচিত, সেটা ঠিক। কিন্তু মায়ের ধর্ষণের খবর তার সন্তানের কাছে পৌছাতে গিয়ে তার ভিডিও টেপ দেখানো কি সমীচীন? মায়ের শরীরের কোন অংশে কিভাবে নরপশুর নখরের দাগ পড়েছে আর তাতে মায়ের মধ্যে কী প্রতিক্রিয়া হয়েছে তাও কি দেখানো লাগবে? শিল্প সবসময় ইঙ্গিতে কথা বলে, তা সে কবিতা, গল্প, চিত্র, চলচ্চিত্র, যে মাধ্যমেই হোক।এর ব্যাত্যয় ঘটলে সেটি আর শিল্প থাকে না।তাই আমদের ভাবতে হবে এই চলচ্চিত্রের উদ্দেশ্য কী? এ্তে কি আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নারকীয়তাকে চিত্রায়িত করা হছে নাকি আমাদের ঐতিহাসিক হাহাকারকে পুঁজি করে অশ্লীল ব্যাবসা করা হচ্ছে? ছবিটি নিয়ে বাংলাদেশেও অনেক আলোচনা হচ্ছে। অনেকে এর সফলতা নিয়েও ব্যাতিব্যাস্ত হবেন। তবে কাজে নামার আগে এই বিষয়টি একবার ভাববার অনুরোধ জানাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.