নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানতে চাই,জানাতে চাই

মোমেন মুন্না

ফেইসবুক (InversE EquatioN) :htps://www.facebook.com/inverseme

মোমেন মুন্না › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা আর মাতৃস্নেহ কাছ থেকে নয় দূর থেকে বুঝতে হয়

০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৫১

তারিখটা এই মাসের হলেও ২০১০ এর ঘটনা। H S C পরীক্ষা শেষ এবার বন্ধু বান্ধব মিলে এলাকা ছাড়ার পালা। বেশ আনন্দের ব্যাপার বাবা মায়ের শাসন এড়িয়ে নিজের মত করে এবার থাকতে পারব!! বাড়ি ছাড়ার সব প্রস্তুতি শেষ এবার কোচিংএর জন্য ঢাকা যাবার পালা। আব্বাকে সাথে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম!! লঞ্চে করে ঢাকার পথ সহ যাত্রী আর তিন বন্ধু। রাতে লঞ্চের ছাদে বসে আড্ডা দিচ্ছি কে কি রকম ভাবে সামনের দিন গুলো কাটাব, এর আমার মোবাইল বেজে উঠল। দেখি আম্মার কল,রিসিভ করতেই আম্মা বললেন ছোট বোন আমার জন্য কান্না করছে। তাকে থামাতে পারছে না কেউ,ছোট বলতে সে তখন নাইনে পড়ে। আম্মার গলাও কেমন কাপা কাপা। মনে হয় সেও কান্না করছে। আনেক চেস্টা করেও ছোট বোনের সাথে কথা বলতে পারিনি। সে কান্না করেই যাচ্ছে। এই প্রথম বারের মত নিজেকে তখন পদ্মার বুকে ভেসে চলা লঞ্চের মত একা মনে হতে লাগল। মন খারাপ করে চলে গেলাম ঘুমাতে। কখন ঘুমিয়ে পরছিলাম মনে নেই।পর দিন সকালে ঢাকা পৌছলাম।এর মধ্যে আম্মা আর ছোট বোনের সাথে কথা হইছে। একদিন আব্বা আমার সাথে ছিল এবার তারও বাড়ি ফেরার পালা! ফার্মগেইট থেকে আব্বা সদর ঘাটের বাসে উঠলেন।হাজার মানুষের ভিড়ে এবার আমার একা চলার পালা। অচেনা সেই সব মানুষের ভিরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ফার্মগেট থেকে গ্রীন রোড হয়ে ধানমন্ডি পর্যন্ত হেটে আসছিলাম।আম্মাকে কল দিলাম,তার কাছে ঠিক ধরা পরে গেলাম আমি কান্না করছি। আম্মা তার নিজের কান্না লুকিয়ে আমাকে শান্তনা দিয়েছিলেন!এভাবে একে অন্যের কান্না লুকিয়ে পার করলাম একটানা ৮৭ দিন। রোজার বন্ধে বাড়ি গেলাম। এত দিন পর আম্মাকে দেখে আমি অনেক কষ্টে কান্না আটকাতে পারলেও আম্মা পারেন নি তার কান্না লুকাতে। ঠিক এক মাস বাড়ি থাকার পর আবার বাড়ি ছাড়ার পালা। সে বার বুঝতে পারছিলাম প্রিয় জনকে ছেড়ে আসার বেদনা কতটা কষ্টদায়ক। এভাবে করে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ...... অনেক বার বাড়ি ছেড়ে দূরে এসেছি। প্রতিটা বার মনে হয়েছে কষ্টের পরিমান আর বহুগুনে বেড়ে চলছে। আমার কান্না গুলো হয়ত বা অনেকটা কমে গেছে কিন্তু আম্মা এখনো সবার অজান্তে চোখ মুছে তা বুঝতে পারি প্রতিবার তার ফোনে কাপাকাপ কথা শুনে। প্রথম বাড়ি ছাড়ায় সময় থেকে দিনে যত বার ফোন দিতেন এখনো ঠিক ততবার কল দেন আম্মা। ব্যস্ততার জন্য অনেক সময় ধরতে পারিনা। পরক্ষনে খুব অনুতপ্ত হই। আম্মাকে কল ব্যাক করি আম্মা অপরাধীর মত বলে "বাবা কাজে ছিল বুঝি!!" নিজেকে তখন খুব অপরাধী মনে হয় আমি আম্মকে কেবল কষ্ট দিয়েই গেলাম।

আমার আম্মা গৃহিণী। বাড়ি থেকে আসলে আমাকে দেয়ার মত কোন বড় অংকের টাকা পয়সা তার কাছে থাকে না। এই নিয়ে তার খুব দুঃখ । বার বার আমাকে বলে "বাবা তোকে যে কিছু টাকা দেব আমার কাছে তেমন নেই, রাগ করিস না বাবা" মায়ের এই কথার কোন উত্তর আমি কখনো দিতে পারিনি কেবল হাসি মুখে বলেছি লাগবেন মা,আব্বা দেয় তাতেই হবে! ছোট বোনের কাছে শুনছি আমি বাড়িতে টাকা চাইলে আম্মা বার বার আব্বাকে তাগাদা দেন কেন এখন টাকা দিচ্ছে না!! আব্বা ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন তাই আমার ছোট বেলা কেটেছে আম্মাকে ঘিরে। পড়ালেখা থেকে শুরু করে সবই আম্মা দেখতেন। মাঝে মাঝে আচ্ছামত মাইর খেতাম আম্মার হাতে। তখন ভাবতাম কবে বড় হব আর এই জ্বালা থেকে রেহাই পাব। রেহাই আমি পেয়েছি তবে সেটা এমন হবে ভাবিনি। এখন বাড়ি গেলে আম্মা আমাকে মুখ অন্ধকার করেও একটা কথা বলেনি কোন দিন। যে কদিন বাড়ি থাকি কি খাওয়াবে, কি করবে এই নিয়েই সময় যায় আম্মার আর বাড়ি না থাকলে যায় চোখের পানি ফেলতে ফেলতে। দিন যত যায় আম্মার অভাব আমার কাছে বাড়তে থাকে বহুগুনে।





" পৃথিবীতে আসার দিন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত এক জন মাত্র মানুষ আমাকে হাজার বার কাঁদিয়েছে , কিছু না বোঝার সময়টা কাঁদিয়েছে , সব কিছু বোঝার পর কাঁদিয়েছে , শেষ কান্নাটাও সেই আমাকে কাঁদাবে। "



যে ঋন শোধ করা যায় না তার হিসাব করে কি লাভ।অনেক বড় হয়েছি আম্মা এখন না বললেও অনেক কিছু বুঝতে পারি,তুমি না খাওয়ালেও খেতে পারি, তুমি না ধরলেও চলতে পারি কেবল মুখ ফুটে বলা হয়নি তোমাকে কতটা ভালবাসি।



লেখাটা সেই সব ছোট ভাই বোনদের জন্য যারা এবার H S C পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ছেড়ে আসবে সারাজীবনের জন্য( যার মধ্যে আমার ছোট বোন একজন) তাদের বলছি- মা আর মাতৃস্নেহ কাছ থেকে নয় দূর থেকে বুঝতে হয়।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:১০

আমাজোন বলেছেন: মা তোমাকে ভালবাসি.....

২| ০৮ ই জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২০

মোমেন মুন্না বলেছেন: ভালবাসি আমিও যা বলা হয় নি! ধন্যবাদ shr

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.