নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভিশন ২০৩০ এবং বেগম জিয়া

২২ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:০৬

গত ১১ মে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকার একটি হোটেলে একটি লিখিত ভাষণে তাঁর দলের ভিশন ২০৩০-এর কথা ঘোষণা করেন।
গত নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তিনি ছিলেন উচ্চকণ্ঠ এবং দলের ছিল যুদ্ধংদেহি ভাব। মাত্র কয়েকদিন আগে ‘হাসিনার অধীনে নির্বাচন করবেন না’ এমন কথা বললেও ভিশন ৩০ প্রকাশ করা শান্তির লক্ষণ। গত নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াত তাণ্ডবের ফলে পাঁচ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। ভিশন ঘোষণা করা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি। আপাতত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছে দেশের মানুষ। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো মেনিফেস্টো দিয়ে থাকে। নির্বাচনে জিতলে দলটি পরবর্তী পাঁচ বছর কি করবে তারই একটি তালিকা দেয়। মেনিফেস্টো অপেক্ষাকৃত কম সময়ের জন্য। ভিশন ৩০ হচ্ছে ১৩ বছরের জন্য কাজেই এটি শুধু তালিকাই হবে না, এটির বাস্তবতাও আমরা আশা করি। আমরা আশা করি ভিশনে একটি বা ততোধিক আইডিয়ার কথা বলা হবে। নতুন কিছু আমরা জানব এটাই আমাদের প্রত্যাশা। এই নতুন আইডিয়ার মাধ্যমে জাতি লাভবান হবে একাধিকভাবে এটিই সবার প্রত্যাশা। অর্থাৎ ভিশন কেবল একটি কার্যতালিকা নয়। উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে ছয় দফার কথা। ছয় দফায় যা লেখা ছিল এর অন্তর্নিহিত আইডিয়া ছিল তার চেয়েও অনেক বড়। নির্দিষ্ট কিছু অর্জনের মধ্য দিয়ে একটি বৃহৎ অর্জনের আকাক্সক্ষা। প্রথমে স্বায়ত্তশাসন ও পরে স্বাধীনতা। এসব কারণে ছয় দফাকে বলা যেতে পারে ভিশন। ভিশন ৩০ একটি ভিশন না একটি বড় আকারের মেনিফেস্টো তা সময়েই বলে দেবে।
বেগম জিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে তিনি সুশাসন দেবেন জাতিকে। এ ব্যাপারে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে দুটি প্রশ্ন মনে জাগে, শাসনের বহু দিক থাকে। তিনি সুশাসন বলতে কি বুঝাচ্ছেন সেটা জানতে স্বভাবতই মন চায়। এটা সত্য সীমিত সময়ে সবকিছু বলা সম্ভব নয়। তবে ভবিষ্যতে তিনি কিংবা তাঁর দলের নেতারা এসব কথার ব্যাখ্যা করবেন সেটা আশা করি। তিনি জাতীয় সংসদকে সকল কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু করবেন বলেছেন। প্রশ্নটা হচ্ছে যে এটা কি তিনি শুধু ক্ষমতায় গেলে! অতীতে বিরোধী দলের নেত্রী হিসেবে অত্যন্ত কম সময় তিনি সংসদে কাটিয়েছেন। তিনি বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- বন্ধ করবেন বলেছেন খুবই ভাল কথা। সভ্য জগতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলা উচিত নয়। কিন্তু জাতি নিশ্চয়ই ভুলে যায়নি যে, র্যা বের প্রচলন করে তিনিই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রচলন করেছিলেন। জাতি তাঁর কাছে আজ ক্ষমা প্রার্থনা আশা করবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতার কথা বলেছেন তিনি। অনেক জটিল সমস্যা জড়িত রয়েছে এর সঙ্গে। উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের পদ্ধতি এর মধ্যে একটি। মামলার তুলনায় বিচারপতির সংখ্যা এবং ফলস্বরূপ অতিরিক্ত বিলম্ব আর একটি সমস্যা।
সকল কালাকানুন দূর করার কথা বলেছেন খালেদা জিয়া। কালাকানুন যে কত রয়েছে আর কত যে সৃষ্টি হচ্ছে তিনি যদি দূর করতে পারেন তবে জাতি কৃতজ্ঞ থাকবে। একটু পেছনে তাকিয়ে নিজের প্রধানমন্ত্রিত্বের কথা মনে করে দেখলে তাঁর কাজে লাগবে। গ্রাম্য-আদালত স্থাপনের কথা বলেছেন তিনি, খুবই ভালো কথা। প্রচলিত আদালতগুলোর অবস্থা মনে হলে নতুন আদালতের বিষয়ে উৎসাহ থাকে না। ছাত্র সংসদের নির্বাচনের কথা বলেছেন তিনি। কবে থেকে এবং কেন ছাত্র সংসদর নির্বাচন হচ্ছে না এটা ভেবে দেখতে তাঁকে অনুরোধ করছি। দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলেছেন তিনি। এ ব্যাপারে বাস্তব অভিজ্ঞতা আমাদের দেশের কারওই নেই। অনেক অর্থ ব্যয় হবে এতে করে। বিদেশসহ সবখানে আরও খোঁজ-খবর নিলে ভাল হয়।
প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করার কথা বলেছেন তিনি। এই বিষয়টি আমাদের দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ’৭৫ সালের পর থেকে অসংখ্য রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটেছে আমাদের এই হতভাগ্য দেশে। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ এই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে। আর কত চলবে এসব? রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলুক কিন্তু শত্রুতা বন্ধ হোক এই প্রার্থনা করি। একটি অতি সরল কথা আমাদের বুঝতে হবে আর তা হচ্ছে এই যে রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড চলতে থাকলে সবপক্ষই এর শিকার হবে। এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে, রাজনীতিতে ভাষার ব্যবহার সম্বন্ধে সচেতন হতে হবে। আক্রমণাত্মক ভাষা আক্রমণাত্মক মনোভাবের জন্ম দেয়।
বেগম জিয়া উল্লেখ করেছেন, প্রধানমন্ত্রী অতিরিক্ত ক্ষমতার অধিকারিণী হয়েছেন। বিএনপি ক্ষমতায় এলে সংবিধান সংশোধন করে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কম করা হবে বলে তিনি ঘোষণা করেছেন। আমাদের অনুরোধ করতে ইচ্ছা করছে তার নিজের সময়ের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার তুলনা করা। সংবিধান সংশোধন করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে এমনটা আমাদের জানা নেই। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার আমলে সরকার প্রধানের ক্ষমতার কথা মনে করা যেতে পারে। সরকারী চাকরিতে বহাল থাকা অবস্থায় তিনি ছিলেন একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান। তিনি ছিলেন একইসঙ্গে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপ্রধান। বিএনপির বর্তমান নেতাদের একজনের লেখা বই থেকে জেনেছি, জিয়াউর রহমান শুধু দলের লোকদের কথা বলতে দিতেন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঝগড়া করার সময়। বাকি সময়টা তাদের মুখ তিনি বন্ধ করে রাখতেন। আসলে আমাদের রাজনীতির কালচার ও প্র্যাকটিস সম্পর্কে চিন্তা করার সময় এসেছে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার দেয়ার কথা বলেছেন তিনি, এতে করে আমার মতো প্রবাসীরা সন্তুষ্ট হবে নিশ্চয়ই। পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণ উন্নত করার কথা বলেছেন তিনি এবং বলেছেন তাদের চাকরির অবস্থার উন্নতির কথা। প্রশাসন উন্নত করতে হলে এসব কথা অবশ্যই চিন্তা করতে হবে। স্বল্প মানুষের কথা তিনি মনে রেখেছেন যেটা অত্যন্ত ভাল কথা।
প্রায় এক দশক আগে আওয়ামী লীগ ভিশন প্রকাশ করেছিল। অপেক্ষাকৃত দেরিতে হলেও বিএনপি ভিশন প্রকাশ করল। ইংরেজীতে বলে ‘বেটার লেট দেন নেভার।’ একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়া ভাল। বেগম জিয়া বলেছেন, মালিকানা জনগণের হাতে দিয়ে দেবেন। অর্থাৎ তিনি বোঝেন যে মালিকানা জনগণের হাতে নেই। আমাদের অর্থাৎ জনগণের বোঝার সময় এসেছে যে আমাদের আজ সজাগ হতে হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.