নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাদ্য উৎপাদনে সরকারের সাফল্য

২৪ শে মে, ২০১৭ সকাল ১০:৩৯

সরকারের নানামুখী উদ্যোগ, চাষাবাদে প্রযুক্তির প্রয়োজন, নতুন নতুন জাতের ফসল, বীজ উদ্ভাবন, এক জমিতে দুই বা দুইয়ের অধিক ফসল উৎপাদন করায় দেশে ক্রমাগত খাদ্য উৎপাদন বাড়ছে। বিশেষ করে স্বাধীনতা পরবর্তীতে বিগত ৮ বছরে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি, খাদ্য উৎপাদনে দৃশ্যমান বিপ্লব সাধিত হয়েছে। একই সঙ্গে প্রান্তিক কৃষক থেকে শুরু করে সব কৃষকের সচ্ছলতা ও অর্থনৈতিক উন্নতি সাধিত হয়েছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেশকিছু সংস্থার প্রতিবেদনে ফসল উৎপাদনে এই সাফল্যের তথ্য উঠে এসেছে। মূলত কৃষিতে প্রযুক্তির প্রয়োগের পাশাপাশি এই সেক্টর নিয়ে কর্মরত দেশের মানুষের উদ্ভাবনী শক্তি এবং নিরন্তর পরিশ্রমের ফলেই আজ কৃষিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য এসেছে।
বাস্তবে স্বাধীনতা পরবর্তীতে যেখানে দেশে বছরে খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮ থেকে ৯০ লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু কৃষিনির্ভর দেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ছিল না ওই পরিমাণ খাদ্য। ৪৫ বছরে দেশে মানুষের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। এ সময়ে আবাদি জমির পরিমাণ প্রায় ২২ থেকে ২৩ শতাংশ কমে এলেও খাদ্যের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫ গুণ। এখন বছরে খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি মেট্রিক টন। তাই এখন এদেশের কোথাও আর খাদ্যাভাব বা খাদ্য ঘাটতি নেই। এর ফলে মৌসুমি অভাব নেই বলেই চলে। একইভাবে দেশের উত্তরাঞ্চলের মঙ্গা কবলিত কুড়িগ্রামসহ ওইসব অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাংলা বছরের আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ, পৌষ মাসের খাদ্যাভাব নেই।
আমরা সাম্প্রতিক সময়ে দেখছি, বাংলা বছরের প্রথম মাস বৈশাখকে ঘিরে বরাবরই কৃষক পরিবারের ঘরে বিরাজ করে বাড়তি আনন্দ। উৎপাদনের বিবেচনায় সবচেয়ে বড় ফসল বোরো ধান সংগ্রহ করা হয় এ মাসেই। এ ফসল থেকেই আসে কৃষিনির্ভর পরিবারগুলোর সারাবছরের খাদ্য ও ভরণপোষণের ব্যয়। কয়েক বছর আগেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বোরো ধান ওঠার আগে দেখা যেত চরম খাদ্যাভাব। অগ্রহায়ণ পৌষ মাসের আমন ধাননির্ভর এলাকায় কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে দেখা যেত একই ধরনের অভাব। সময়ের ব্যবধানে ধান উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় এবং মঙ্গাকবলিত অঞ্চলে এখন ওই সময়ে কৃষক নতুন প্রযুক্তিতে চাষাবাদ করে এবং মঙ্গাকালে তাদের কাজ ও খাদ্যের সংস্থান হওয়ায় খাদ্যাভাব চিরতরে দূর হয়েছে। পাশাপাশি কৃষক অন্যান্য ফসল চাষে গুরুত্ব দেয়ায় এ ধরনের মৌসুমি অভাব এখন আর দেখা যায় না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসেবে, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) বর্তমানে কৃষি খাতের অবদান ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০১১-১২ অর্থবছরে এর হার ছিল ১৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। অর্থনীতির আকার বিবেচনায় কৃষি খাতের অবদান ক্রমেই কমছে। গত অর্থবছরে তিন খাত মিলিয়ে জিডিপির ৭ দশমিক ১১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও কৃষিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ২ দশমিক ৬০ শতাংশ। তবে অন্যান্য খাতের বিবেচনায় কৃষিতে নিয়োজিত শ্রমিকের পরিমাণ কমে আসায় এ খাতে মজুরির পরিমাণ বাড়ছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপের তথ্যানুযায়ী, মোট নিয়োজিত ৪৫ দশমিক ১০ শতাংশ শ্রমিক বর্তমানে কৃষি কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। ২০০২-০৩ অর্থবছরে এ খাতে নিয়োজিত শ্রমিকের হার ছিল ৫১ দশমিক ৭০ শতাংশ। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে কৃষিতে শ্রমিকের হার নেমে আসে ৪৮ দশমিক ১০ শতাংশে। আর ২০১০ সালে কৃষিতে শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৪৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ হিসাবে শ্রমিকের হার কমলেও কৃষিতে উৎপাদন বাড়ছে। কৃষিতে উৎপাদন বৃদ্ধির এই ধারা ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী।
তবে এটাও বলা দরকার, মৌসুমি অভাবের প্রকোপ কমে এলেও দেশে এখনো অঞ্চলভিত্তিক কোথাও কোথাও কিছুটা দারিদ্র্যের প্রকোপ রয়েছে। এটা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। সরকারের বিভিন্ন প্রতিবেদনেও বিষয়টি উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসেবে জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় সাড়ে ২৪ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। শহরাঞ্চলে দরিদ্রের হার ২০ দশমিক ২ শতাংশ হলেও গ্রামে এর হার ৩৫ শতাংশের বেশি। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিদ্যুতের ব্যবহারসহ নাগরিকসেবা প্রাপ্তির দিক থেকেও শহরাঞ্চল অপেক্ষা কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে গ্রামের মানুষ। আবার অঞ্চলভিক্তিক এলাকা হিসেবে অবহেলিত রংপুর বিভাগে দারিদ্র্যের হার ৪০ দশমিক ২ শতাংশ। একক জেলা হিসেবে কুড়িগ্রামে দারিদ্র্য হার ৬০ দশমিক ৫ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে এর হার ৩৯ দশমিক ২ শতাংশ। বন্যা, খরা, নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সরকারি বিনিয়োগে ধীরগতি, বৈষম্যের কারণে বেশ কয়েকটি এলাকা অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে পিছিয়ে পড়ছে বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। এমনি অবস্থায় দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে আঞ্চলিক দারিদ্র্য বিমোচনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্য নিরসন ও সম্পদের আঞ্চলিক অসমতা কমিয়ে আনতে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প ও মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। দক্ষিণাঞ্চলের কৃষি উন্নয়নে প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরে মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। হাওরাঞ্চলের বন্যা ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি মানুষের জীবনমান উন্নয়নে নেয়া হচ্ছে ৯৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প।
অতিদরিদ্রদের জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় প্রতি মাসে প্রতি পরিবারকে ৩০ কেজি চাল ১০ টাকা দামে দেয়া হচ্ছে। শহরাঞ্চল, শ্রমিক অধ্যুষিত অঞ্চল, বিভাগ এবং জেলাপর্যায়ে ১৭ টাকা দামে আটা এবং ১৫ টাকা দামে চাল দেয়া, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, বয়স্ক, মুক্তিযোদ্ধা বিধবা, পঙ্গু, অসচ্ছলদের ভাতা, শিক্ষাবৃত্তি, সরকারি চাকরিজীবীদের বৈশাখী ভাতা প্রচলনসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি দেশব্যাপী অব্যাহত থাকায় দেশের সর্বত্র সচ্ছলতা ফিরে আসছে।
উত্তরাঞ্চলের দরিদ্রদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে ৯৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫৯ হাজার কোটি টাকায় নেয়া হয়েছে একটি প্রকল্প। কৃষিপ্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে অর্থনীতির গতি আনার লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৭৩ কোটি টাকা। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আঞ্চলিক দারিদ্র্য কমে আসবে বলে আশাকরা যায়।

নতুন করে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে দারিদ্র্য নিরসনের বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হবে। আঞ্চলিক দারিদ্র্য নিরসনে নেয়া প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকারের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে। তবে বর্তমান সরকারের কৃষিতে নানামুখী পদক্ষেপ বিশেষ করে বীজ, কীটনাশক, সার ও সেচ সহজলভ্য করার পাশাপাশি নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করায় খাদ্য উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে এখন আর বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি করতে হচ্ছে না। তবে বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো কিছুটা দারিদ্র্য দেখা যাচ্ছে। দুর্যোগপ্রবণ কিছু এলাকায় দারিদ্র্যের হার এখনো ৪৫ শতাংশের বেশি। সম্প্রতি সরকারের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আঞ্চলিক দারিদ্র্য নিরসনে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে পরিকল্পনাটিতে। এসব বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হলে আগামীতে আঞ্চলিক দারিদ্র্য কমে আসবে।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের তৈরি করা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতীয় আয়ের মাত্র ৫ দশমিক ২০ শতাংশের মালিক সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ মানুষ। ২০০৫ সালে এর পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ১৯৯২ সালে ২০ শতাংশ দরিদ্র মানুষের আয় ছিল জিডিপির ৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। আসন্ন বাজেটে দারিদ্য নিরসন, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পায়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলে আসছেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে এসব কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাজেটে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসব কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ এবং দারিদ্র্য মুক্ত করা। তবে এসব কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজন সরকারের ধারাবাহিকতা। কৃষিকে আরও যুগোপযোগী করা, নতুন নতুন প্রযুক্তি, উদ্ভাবন, জলবায়ু সহিষ্ণু বীজ উদ্ভাবন করা সম্ভব হলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনই নয় আরও বেশি পরিমাণ খাদ্যশস্য বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। তবে এখন সীমিত পরিমাণ চাল রপ্তানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারি প্রশাসনে কর্মরত, নেতৃত্বের শীর্ষে থাকা নীতিনির্ধারণী মহলের স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং 'কথা আর কাজে মিল' রাখা, সেবাধর্মী মনোভাব থাকলে প্রত্যাশিত অর্জন অসম্ভব কিছু নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.