নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেখ হাসিনার আবেদন

২৫ শে মে, ২০১৭ সকাল ১১:০৮

আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলের পর প্রথম বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় গণভবনে গত ২০ মে শনিবার সকালে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতেই এই বর্ধিত সভা। বর্ধিত সভায় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি, উপদেষ্টামণ্ডলী ও জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। বর্ধিত সভায় দলীয় সভানেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা দলীয় কর্মী ও নেতাদের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা জাতীয় রাজনীতিতে এক শুভ ইঙ্গিত বলে মনে হয়।
শেখ হাসিনার একাধিক বক্তব্যে এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে প্রতিদ্ব›িদ্বতাপূর্ণ, প্রতিযোগিতামূলক, সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও নিরপেক্ষ। কোনো দল, ব্যক্তি, গোষ্ঠী কোনো মহল থেকে কোনো বিশেষ সহযোগিতা পাবে না। যোগ্যতাভিত্তিক ও জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন। তিনি এও বলেছেন, যারা দলীয় নেতৃত্বে আছেন যেমন মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, এমপি বা সংগঠনের উচ্চ পদে আসীন তারাও যদি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, তারা দলীয় মনোনয়ন পাবে না। শুধু বর্ধিত সভাই নয় একাধিক বক্তব্যে তিনি আগামী সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে যে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন, তাতে মনে হয় ২০১৪ সালের মতো সংবিধানের ধারাবাহিকতা রক্ষার খাতিরে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ওই ধরনের নির্বাচন আগামীতে হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বরং সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে প্রমাণ করতে হবে যে, তারা জনগণের কাছে জনপ্রিয়। তাই জনগণের সঙ্গে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
যেসব বিতর্কিত ব্যক্তি দলে ঢুকেছেন বা চেষ্টা করছেন দল বহির্ভূত অন্য দলের নেতাদের আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা তাদের ক্ষমতা ও পেশিশক্তি বৃদ্ধির উপকরণ হিসেবে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে দলীয়ভাবে নিয়োগ দেয়া না হয়, সেই ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কেননা বহিরাগত এসব সদস্য দলে অনুপ্রবেশ করে দলকে অস্থিতিশীল করা, জনগণকে দলের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা, বিশেষ করে জামায়াত-শিবির চক্রের নি¤œ পর্যায়ের কর্মীরা যারা ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে, নিজেদের ফ্ল্যাটফর্মে আর কাজ করা সম্ভব না, তাদের অনেকেই বিত্তের প্রভাবে ক্ষমতাসীন দলে ঢুকে পড়ছেন। তাদের লক্ষ্য একটাই দলের ভেতর বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বিতর্কের জন্ম দিয়ে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করা। এসব বহিরাগত জামায়াত-শিবির ও বিএনপি থেকে আগত ব্যক্তিদের যদি কোথাও স্থান দেয়া হয়ে থাকে, তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছে।
আরো বলা হয়েছে, যারা এদের পৃষ্ঠপোষকতা করবে তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দলের ২০তম কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রায়ই বলে আসছেন দলীয় পরগাছার কথা। বিভিন্ন জেলায় দলীয় সফরে গিয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে ওইসব কথা বলেছেন। অবশ্য কথাগুলো যে সরল ভাষায় বলা হয়েছে, তা মাননীয় সাধারণ সম্পাদকের স্বভাবসূলভ বলেই মনে হয়। ছাত্রজীবন থেকেই সত্য বলার সৎসাহস তিনি বারবার প্রদর্শন করেছেন। চরম দুর্দিনে শেখ হাসিনা যখন দেশের বাইরে, দলীয়ভাবে তাকে ফিরিয়ে আনার তৎপরতা শুরু হয়েছে, যখন অনেক সিনিয়র নেতাই এই প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন, তখন দেশব্যাপী প্রচারণা চালিয়ে জনাব কাদের এক অসাধারণ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে হোটেল ইডেনে কাউন্সিলে শেখ হাসিনাকে দলীয় সভানেত্রী করা হয়, এর পেছনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দলীয় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করে শেখ হাসিনা একজন দুর্দিনের কর্মীকে দায়িত্ব পালনের সুযোগ করে দিয়েছেন। এই ব্যাপারে দলীয় সব কর্মী একমত না হলেও অধিকাংশই ওবায়দুল কাদেরকে সমর্থন দিয়ে চলেছেন। তিনিও দলীয় কার্যক্রম ভাইব্র্যান্ট করতে সক্ষম হয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ধারায় অতি পূর্ব থেকে সাধারণ সম্পাদক কর্মীদের সতর্ককরণ শুরু করেছেন, দলকে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এভাবে তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের মূল্যায়ন করা হলে দলের সঙ্গে জনগণের সম্পৃক্ততা অবশ্যই বৃদ্ধি পাবে। এ কথা সত্য, বিগত ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকভিত্তিক করায় স্থানীয়ভাবে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ভেতর কিছু বিভেদের সৃষ্টি হয়েছে। আগামী নির্বাচনের আগেই এই বিভেদের অবসান ঘটিয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হতে হলে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাইকে জনগণের জন্য কাজ করে যেতে হবে।
শেখ হাসিনার সরকার যে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের সাধারণ জনগণের ভাগ্য পাল্টে দিয়েছেন এ কথা সত্য। কর্মীরা যদি নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে সরকার নির্দেশিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হন, তাহলে শুধু উন্নয়ন প্রক্রিয়ার ওপর ভিত্তি করে গ্রামের মানুষ শেখ হাসিনাকে বিজয়ী করে আবার ক্ষমতায় আনবেন। গ্রামের মানুষ কেন, সরকারি-আধা সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৃদ্ধি করে যে পর্যায়ে আনা হয়েছে, উৎকোচ না গ্রহণ করেও ওইসব সরকারি কর্মচারীদের সৎভাবে জীবনযাপন করা সম্ভব। একজন কৃষি শ্রমিক এখন দৈনিক ৫০০ টাকা মজুরি পান। যা দিয়ে ১০-১২ কেজি চাউল ক্রয় করা সম্ভব। অধিকাংশ পরিবারেই ৩-৪ কেজি চালের প্রয়োজন হয় না। বাকি মজুরি দিয়ে তারা প্রোটিনসমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাদ্য আহরণ করতে সক্ষম।
জনগণের জন্য সরকার কী করছেন, তা এখন জাতীয় গণমাধ্যমে নিয়মিত প্রচার করা হচ্ছে। তবে প্রতিপক্ষ বিশেষ করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মসজিদ, মাদ্রাসা কেন্দ্র করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে যে বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন তা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রতি নিদারুণ অবহেলা ও নিরেট মিথ্যাচার মাত্র। এ ক্ষেত্রে ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগের কর্মীবাহিনীকে সংঘবদ্ধভাবে উন্নয়ন তৎপরতার তথ্য-উপাত্ত দিয়ে জনগণের কাছে সঠিক বাস্তবতা তুলে ধরা দরকার। যে শ্রমিক ৬০ টাকার জায়গায় বর্তমানে ৫০০ টাকা দৈনিক মজুরি পান, যে সরকারি কর্মচারী ১০ হাজার স্থলে ২৫ হাজার টাকা এখন বেতন পান, ২৫ হাজার স্থলে ৪৫-৫০ হাজার টাকা বেতন পান, যারা উচ্চ পর্যায়ে আছেন তাদের কথা বাদ দিলেও সাধারণ মানুষের সরকারবিরোধী হওয়ার কোনো কারণ নেই।
২০০১ সালের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা বলে দেয়, শুধু উন্নয়ন দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হওয়া যায় না। ১৯৯৬-২০০১ সালে শাসনামলে শেখ হাসিনার সরকার দ্রুত দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে কাজ করেছেন। অনেক ক্ষেত্রে এই উন্নয়ন ছিল উদাহরণস্বরূপ। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও খাদ্যে তখনই দেশ স্বনির্ভর হয়। অথচ গভীর ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে এত উন্নয়নমূলক কাজ করার পরেও আওয়ামী লীগের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া সম্ভব হয়নি। তাই সন্দেহ জাগার অনেক কারণ আছে। তাই উন্নয়ন করেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া না-ও যেতে পারে। কোনো বানোয়াট কথা নয়। সরকার জনগণের জন্য কল্যাণমুখী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেভাবে সফলতা অর্জন করেছে এই সফলতা জনগণের কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারলে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় সুনিশ্চিত। তাছাড়া শেখ হাসিনার সরকার সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে বিশ্বে বাংলাদেশকে এক মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বাংলাদেশের অনুসৃত জঙ্গি দমন কৌশল আজ সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যে দক্ষতার সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কাজ করে একের পর এক সাফল্য অর্জন করছে তা প্রশংসিত হচ্ছে। সরকারের জিরো টলারেন্সের যে ফর্মুলা বাস্তবায়িত হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে। সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদকে কখনো আওয়ামী লীগ প্রশ্রয় দিতে পারে না। স্বাধীনতার শত্রুদের সব সময় আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষ মনে করে। ধর্ম ব্যবসায়ী, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির কারো আওয়ামী লীগে স্থান নেই। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে এর দিকদর্শন রয়েছে। সেই মহান মুক্তিযুদ্ধের শত্রুদের অন্য দল গ্রহণ করলেও আওয়ামী লীগের পক্ষে তা সম্ভব নয়। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের ভ্যানগার্ড হচ্ছে আওয়ামী লীগ। পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, সাম্প্রদায়িক, মৌলবাদী শক্তি তথাকথিত গণতন্ত্রের দাবিদার এর সঙ্গে এক হয়ে আওয়ামী লীগকে পরাজিত করার চেষ্টা করবে। তাই স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি, বাম শক্তি, অসাম্প্রদায়িক শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে ব্যর্থ হলে, শুধু উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই থমকে যাবে না বরং স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে। আমাদের স্বাধীনতা এখনো ১০০% নিরাপদ নয়। স্বাধীনতার শত্রুদের রাজনীতি করার অধিকারই তার প্রমাণ। তাই স্বাধীনতার পক্ষের সব শক্তির উচিত সব ভেদাভেদ ভুলে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে আগামী নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির বিজয়কে সুনিশ্চিত করা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.