নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাহাড়ে চক্রান্ত নয় তো!

০৫ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১০

২ জুন (২০১৭) রাঙামাটির লংগদুতে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল থেকে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনা পার্বত্য এলাকায় শেখ হাসিনার শান্তি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। কারণ তিনি লিখেছেন—‘আমরা অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। সংঘাত নয়, শান্তি ও সমঝোতায় সকলকে নিয়ে চলতে চাই।’ (পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তির অন্বেষায়) অথচ ওই দিন বাঙালিদের জঙ্গি মিছিল থেকে লংগদু উপজেলা সদরের তিনটিলা পাড়া ও মানিকজোড় ছড়াসহ চারটি গ্রামে পাহাড়িদের আড়াই শর বেশি বসতঘর ও দোকানপাট পুড়িয়ে দেওয়া হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লংগদু উপজেলা সদরে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আগুন দেওয়ার ঘটনার সময় তিনটিলা এলাকার এক চাকমা বৃদ্ধা নিহত হয়েছেন এবং এক দম্পতি নিখোঁজ রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার পর স্থানীয় পাহাড়িরা আতঙ্কে এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে গেছে—এই দৃশ্য আমরা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছি। ওই নাশকতার ঘটনায় ইতিমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পাহাড়িদের সুরক্ষা ও বসবাসের নিশ্চয়তা নিয়ে কেউ কাজ করছেন না কেন—এটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। অবশ্য বাংলাদেশের সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মৌলিক অধিকারের কথা ফলাও করে বলা হয়েছে। আর বর্তমান সরকার উপজাতি কোটায় সরকারি চাকরি প্রদান করছে যোগ্য পাহাড়িদের। আসলে পার্বত্য এলাকায় সংঘাত জিইয়ে রেখে এক শ্রেণির মানুষ অস্ত্র ব্যবসা ও রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে তত্পর রয়েছে বলেই আমাদের মনে হচ্ছে।
দুই.
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম : শান্তির অন্বেষায়’ প্রবন্ধে ১৯৯৮ সালে লিখেছেন, ‘পাহাড়ে বসবাসকারী কি পাহাড়ি কি বাঙালি সকলেই দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত। শান্তি স্থায়ী করতে হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করতে হবে।... শিক্ষায় স্বাস্থ্যকর্মে উন্নত সমাজ গড়তে পারলেই স্থায়ী শান্তি স্থাপন হবে। মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিই হচ্ছে শান্তির পক্ষে। সকলেই শান্তি চায়।’ (শেখ হাসিনা রচনাসমগ্র ১, পৃ. ২৩৯) শান্তির এই প্রত্যয়কে রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় ধারণ করে শেখ হাসিনার উদ্যোগে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পার্বত্য সমস্যার সৃষ্টি করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর। সে সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে সামরিক জান্তা জিয়াউর রহমান ওই এলাকায় স্থায়ী বসবাসের জন্য অন্যান্য স্থান থেকে মানুষ স্থানান্তর করেন। সেই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ছিল অগ্রহণযোগ্য। তত্কালীন সরকারি প্রশাসন সমতল জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের নদীভাঙা ভূমিহীন, দিনমজুর, অসহায় দুস্থ পরিবারগুলোকে এনে সরকারি খাসভূমিতে পুনর্বাসন করে। এই পুনর্বাসনের কয়েক বছর যেতে না যেতেই শান্তিবাহিনী নামক উপজাতীয় গেরিলারা সরকারের ওপর প্রতিশোধ নিতে পুনর্বাসিত বাঙালিদের ওপর হামলা চালায়। সুরক্ষিত ওই অঞ্চলে ভারতের জঙ্গিরা সহায়তা করত শান্তিবাহিনীকে। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের জড়িত হওয়াটা ছিল ব্যয়বহুল। কিন্তু তাদের সঙ্গে আমাদের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধ করতে হয়েছে দৃঢ়চিত্তে। ছয়জন তরুণ অফিসার, একজন মেজর, তিনজন ক্যাপ্টেন, দুজন লেফটেন্যান্টসহ ৩১২ জন সৈনিক পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে শহীদ হন। অপর দিকে শত শত পাহাড়ি জনগোষ্ঠী সেখানকার বাঙালি সেটেলার কর্তৃক নৃশংস অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যেই সেখানে উন্নয়নের গতি সচল রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের কয়েক হাজার কিলোমিটার রাস্তার অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক নির্মিত। নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক বান্দরবানের নীলগিরিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের যেসব স্পটে ছুটে যায়, তার পুরো অবদানটাই সেনাবাহিনীর। নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ ও রাস্তা নির্মাণ না করা হলে রাত্রি যাপন করে নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করা দূরের কথা, সেখানে কেউ যাওয়ার কল্পনাও করত না। বর্তমানে অপহরণ একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে ভারতের সঙ্গে পুনরায় সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামের দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে। বলা বাহুল্য, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সহাবস্থানের রাজনীতি। শেখ হাসিনার রাজনীতি সুবুদ্ধি দিয়ে টিকে থাকার রাজনীতি। হিংসা-বিদ্বেষের রাজনীতি, ধর্মের রাজনীতি চালু করে গেছেন মরহুম জিয়াউর রহমান, তা চালু রেখেছে জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি, জামায়াতের হিংসাত্মক, সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পথ থেকে বের হয়ে আসার সময় অনেক আগেই তৈরি করে দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
তিন.
এ কথা সত্য, পাহাড়িরা সহজ-সরল ও শান্তিতে বসবাসে বিশ্বাসী। কিন্তু অশান্তির বিষে পার্বত্য এলাকা বিষাক্ত হয়েছে। বাঙালি জনগোষ্ঠীর দখলদারি মনোবৃত্তি কোনো স্বস্তির বাতাস সেখানে আনতে পারেনি। শুধু লংগদু নয়, পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতের আগুনে দগ্ধ হয়ে মরেছে অসহায় উপজাতির বহু মানুষ। সাম্প্রদায়িক আচরণে, নারী নির্যাতনে তারা এখন আর বাঙালিদের সহজে বিশ্বাস করতে চায় না। চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আদর তঞ্চঙ্গ্যা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পুড়ে জ্বলছে রাঙামাটির লংগদু উপজেলা! অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ...অনিশ্চিত আমাদের জীবন! প্লিজ! চোখ খুলুন, এগিয়ে আসুন...।’ আদর আরো লিখেছেন, জাতির সঙ্গে যারা প্রতিনিয়ত বেঈমানি করছে, প্রজন্মের প্রতিটি প্রাণের সঙ্গে যারা ছিনিমিনি খেলছে, যারা ভবিষ্যেক অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে, সেই সব দালাল ও দুমুখো সাপদের আগে মেরে ফেলতে হবে, মেরে একদম মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে। নেতা, আপনাকে বলছি...একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন। শুধু চেয়ারে বসে থাকলে নেতা হওয়া যায় না, সবাই নেতা হতে চাই, তবে ভালো ও সফল নেতা হয় কয়জন? নেতা হতে ভালো নেতৃত্বের গুণাবলি লাগে। লাগে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সঠিক নির্দেশ, নিপুণতা, ভিশন ও মোটিভেশন, যা আপনাদের কাছ থেকে আমরা পাই না। ভালো নেতা কখনো ব্যর্থ হয় না, একজন ভালো নেতাকে সবাই আদর্শ মানে। যেমন—মাহাত্মা গান্ধী, মাও জে দং।’ আদরের কথার সূত্র ধরে বলা যায়, সঠিক নেতৃত্বই পারে পাহাড়ে শান্তি আনতে। শেখ হাসিনা সেই কাজই করছেন অনেক আগে থেকে।
তবে সংবাদপত্রজুড়ে অসহায় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর পলায়নদৃশ্য আর বাঁশের সেতু পেরিয়ে অজানার পথে এগিয়ে যাওয়া শিশুদের করুণ মুখচ্ছবি—বেদনাবহ দৃশ্যগুলো মানুষ হিসেবে, রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক নীতির প্রচারক হিসেবে আমাদের ব্যর্থতাকে চিহ্নিত করে। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হলে পাহাড়ি-বাঙালি উভয় জনগোষ্ঠীর সম্মিলিত প্রচেষ্টা জরুরি। তা না হলে শেখ হাসিনার শান্তি প্রচেষ্টাও সফলতার মুখ দেখতে পাবে না। বারবারই তাঁর সব সদিচ্ছা পাহাড়ি রাজনীতির হীনস্বার্থের কাছে বিনষ্ট হবে। অবশ্য বর্তমান সরকার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা হিসেবেই সব ক্ষুদ্র জাতি ও জনগোষ্ঠীর জানমাল ও সম্পদ সুরক্ষার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:০৭

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: সকল প্রকার ক্ষতিকর কাজই খারাপ। পাহাড়ী সন্ত্রাসীরা নিরীহ বাংগালী পর্যটকদের অপহরন করে , দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, আবার শান্তি চায় কিভাবে? এরা কখনই বাংলাদেশকে আপন করেনি। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংগালীদের টাকায় পড়াশোনা করে বাংগালীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে চায় , এদেরও তো কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.