নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

৬ দফার আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি

০৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:২১

গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিরোধী দলের হাতিয়ার হচ্ছে রাজনৈতিক আন্দোলন। ক্ষমতার পরিবর্তন করতে হলে রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমেই তা করা সম্ভব। এই উপমহাদেশে দফাভিত্তিক আন্দোলন অনেক দেশেই হয়েছে। পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা কেন্দ্রীয় পাকিস্তান সরকারের শাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে নিরবচ্ছিন্নভাবে আন্দোলন করেছে। পাকিস্তানের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৭ সালে। ১৯৪৮ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালিরা পাকিস্তানি শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করে। বাঙালিকে শোষণ করার জন্য পাকিস্তানি শাসকরা বাংলা ভাষার ওপর যে আগ্রাসন চালায় তার একমাত্র লক্ষ্য ছিল নির্মম শোষণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা। যদিও ভাষা আন্দোলন বলতে আমরা '৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারিকে বুঝি। এই আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৮ সাল থেকে। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের ইতিহাসই বলে দেয় কীভাবে তিনি ছাত্রলীগের মাধ্যমে এই আন্দোলন শুরু করেন। মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই ভাষা আন্দোলন শুরু হয়। তবে সেই আন্দোলন শুধু মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ছিল না। স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে অব্যাহত ছিল। ভাষাভিত্তিক সাংস্কৃতিক আন্দোলনের সঙ্গে সমন্বিত হয়ে এক বৃহত্তর রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিক হয়। ১৯৫৪ সালে এ দেশে প্রথম দফাভিত্তিক আন্দোলন শুরু হয়। '৫৪ সালের নির্বাচনে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তা ছিল মুসলিম লীগ উৎখাত করার সর্বপ্রথম আন্দোলন। তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের মুসলিম লীগের নেতারা ক্ষুদ্র স্বার্থের বিনিময়ে পাক সরকারের পদলেহন করতেন, তার বিরুদ্ধে আন্দোলনই ছিল ৫৪-র ২১ দফার আন্দোলন। এই আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এ কথা সত্য ৬ দফা আন্দোলনের দাবিগুলোর সঙ্গে ২১ দফা আন্দোলনের অনেক দাবির মিল রয়েছে। পাকিস্তানি কু-শাসন, শোষণের বিরুদ্ধে স্বায়ত্তশাসনের যে আন্দোলন শুরু হয়, সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু তার ৬ দফা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়ে ৬ দফা ঘোষণার দুঃসাহস তৎকালীন রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব ছিল না। স্বায়ত্তশাসনের দাবি ছিল বেশ কিছুটা ভেগ। জনগণের কাছে বেশ কিছুটা অস্বচ্ছ। বঙ্গবন্ধু অনেক চিন্তা-ভাবনা করে কয়েকজন বাঙালি বুদ্ধিজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে একটা কংক্রিট সেপ দিলেন। লক্ষ্য জনগণের কাছে স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে বোধগম্য করা। তাই দেখা যায় ৬ দফার আন্দোলনের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কীভাবে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ পাচার রোধ করা যায়। ওই দাবিতে তাই বলা হয়েছে পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে পৃথক মুদ্রা ব্যবস্থার কথা। অথবা একই মুদ্রা রেখে দুই অংশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে রেখে সম্পদের বণ্টনের সঠিক হিসাব রাখা। অনুমতি ছাড়া সম্পদ পাচার নিষিদ্ধ করা। পূর্ববাংলার পাট রপ্তানি করে যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সক্ষম হতো তার সবটাই পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার নিজস্ব কায়দায় পশ্চিমপাকিস্তানের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করত। পূর্বপাকিস্তানের অর্জিত অর্থ এই অঞ্চলের জনগণের জন্য ব্যয় করা হতো না। এই ধরনের ঘটনা যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে ৬ দফায়ই তার নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছিল। পূর্ববাংলাকে সরাসরি বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাণিজ্যের অধিকার প্রদান করা হয়েছিল। পূর্ববাংলার নিরাপত্তা বিধান করার জন্য যে প্যারামিলিশিয়া গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছিল তা বাস্তবায়িত হলে কিছু সময় পেলে বিনা রক্তপাতে বাংলাদেশ স্বাধীন করা সম্ভব হতো। আসলে ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ববাংলা প্রকৃত অর্থেই ভারতের দয়ার ওপর নির্ভর করে স্বাধীন ছিল। কেন্দ্রীয় সরকার তখন পূর্ববাংলার কোনো প্রয়োজনে আসেনি। ঠিক এরূপ একটা সুযোগ গ্রহণ করেই বঙ্গবন্ধু তার ৬ দফা ঘোষণা দেন। তিনি ভালো করেই জানতেন, পাকিস্তানি শাসকরা কখনো ৬ দফাভিত্তিক সংবিধান প্রণয়ন করতে উদ্যোগী হবে না। বরং পাকিস্তানের দুই অংশে সংঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। ৬ দফার কারণেই আজ আমরা স্বাধীন হয়েছি। ৬ দফা ও ১১ দফা এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এই তিনটি উপাদানকে সনি্নবেশিত করে আন্দোলনকে প্রখর থেকে প্রখরতর করতে না পারলে বঙ্গবন্ধু আগরতলা মামলা থেকে ছাড়া পেতেন না। ইয়াহিয়া তখন নির্বাচন দিতে বাধ্য হতেন না ও '৭০-এর নির্বাচনে ওইভাবে বিপুলভাবে বিজয় অর্জন করা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব হতো না। পাকিস্তান সৃষ্টির পর হতেই পূর্ববাংলার রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তি মাত্রই অবহিত ছিলেন কি নির্মমভাবে পাকিস্তান পূর্ববাংলাকে শোষণ করছে। শোষণের প্রকৃতি ও তা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য স্বায়ত্তশাসনের যে সুপরিকল্পিত দফাগুলো পেশ করা হয়েছিল ওটাই ছিল ৬ দফা। পূর্ববাংলার মানুষ পাকিস্তানের সরকার কর্তৃক শোষণের প্রকৃতি-৬ দফা ঘোষণার আগে বুঝতে পারেনি। এজন্য ৬ দফায় শোষণের প্রকৃতি অনুধাবন ও তার অবসানের জন্য কি কি বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার তা ছিল সুস্পষ্ট। তাই ৬ দফা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অতি অল্প সময়ের ভিতর টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া সর্বত্র এই আন্দোলন দ্রুত বিস্তার লাভ করে। ওই আন্দোলনের নেতৃত্বে এককভাবে বঙ্গবন্ধু থাকার কারণে তার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকার ও তার একান্ত অনুগত কুখ্যাত মুনায়েম সরকার (পূর্ববাংলার গভর্নর) এমনভাবে নির্যাতন শুরু করে যা অবর্ণনীয়। শেখ মুজিবকে দিনের আলো দেখতে দেয়া হবে না বলেও মোনায়েম খান আস্ফালন করেছিল। দেশব্যাপী আন্দোলন শেখ মুজিব এমনভাবে পরিচালনা করেন এবং জনগণকে এমনভাবে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হন যে একজন বৃদ্ধ গ্রাম্য কৃষক মশাল জ্বেলে রাত ৩টার সময় তার প্রিয় নেতা শেখ মুজিবকে এক নজর দেখার জন্য বসে থাকতেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য যতগুলো আন্দোলন সংগ্রাম হয়েছে, ৬ দফা ছিল অনন্য ও অসাধারণ। ৬ দফার মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে ৬ দফার গুরুত্ব অপরিসীম। ৬ দফার যৌক্তিক পরিণতি হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা। ৬ দফার প্রতি এভাবে অনুগত না হলে '৭০-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে (১৬৯-১৬৭ টি) আসন লাভ করা সম্ভব হতো না। ৬ দফাকে বঙ্গবন্ধু জনগণের মেন্ডেট হিসেবে ব্যবহার করে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন 'তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না, বাংলার মানুষের অধিকার চান।' অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসকরা যখন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত করলেন তখন তিনি বাংলার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলে বিশ্ববাসীকে বোঝাতে সক্ষম হলেন যে পূর্ববাংলা শাসন করার অধিকার আর পাকিস্তানি শাসকবর্গের নেই। বিশ্বের ইতিহাসে সে এক বিরল ঘটনা। একজন জননেতা জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই দেশ শাসন করলেন।
সুতরাং এ কথা অনস্বীকার্য যে, ৬ দফার আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি রচনায় সুদূরপ্রসারী ভূমিকা পালন করে। ৬ দফা ছিল বাঙালির প্রাণের দাবি, বাঁচা-মরার লড়াই। ৬ দফার হাত ধরেই এসেছে আমাদের বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। এজন্য ৬ দফাকে বাঙালির মুক্তির সনদ বা ম্যাগনাকাটা বলে অভিহিত করা হয়।

ডা. এস এ মালেক : রাজনীতিক ও কলাম লেখক

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:০৭

স্বতু সাঁই বলেছেন: ৬ দফা কি কি? জানালে আমার মত অনেক অজানা পাঠক জানতে পারতো, সঙ্গে ২১ দফাটাও উল্লেখ করলে ভালো হতো

২| ০৮ ই জুন, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৪

আল ইফরান বলেছেন: আঞ্চলিক স্বায়ত্বশাসনের দাবী কি করে আমাদের স্বাধীনতার ভিত্তি হয় তা একটু হাতে কলমে বুঝিয়ে দিলে ভালো হত।
কপি-পেস্ট পোস্ট থেকে কিছুই বুঝলাম না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.