নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বাধীনতা, ক্ষমতা ও বাংলাদেশ

১১ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১৫

আবহমান কাল থেকে যে প্রবাদ-প্রবচনগুলো আমরা ধারণ করি আমাদের ভাষায়, ব্যবহার করি সময়-সুযোগ মতো আমাদের কথা-বার্তায় আর বিশ্বাসে রাখি। আমাদের কর্মক্ষেত্রে সেগুলো কিন্তু মূলত দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা প্রসূত। শুধু এই একটি ক্ষেত্রে আমার ধারণাটা অস্বচ্ছ। রাম উল্টো বুঝলেনটা কখন?
ভগবান রাম ছিলেন রক্ত মাংসের মানুষ, দেশের শাসক। রাম হয়তো ভুল বোঝেননি, কিন্তু শাসকরা ভুল বোঝেন প্রায়ই। ঘরের শাসক আর বাইরের শাসক, কেউই এর ঊর্ধে নন। এমন উদাহরণ আছে ভুরিভুরি।
বোঝেননি সাদ্দাম, পা দিয়েছিলেন মার্কিন ফাঁদে। পরিণতি শিয়ালের মতো গর্তে গা ঢুকিয়ে রাখা আর ধরা পড়ার পর বিশ্বব্যাপী সম্প্রচারের মধ্যে দিয়ে কার্যকর তার ফাঁসি।
বোঝেননি গাদ্দাফিও। ইতালির যে প্রধানমন্ত্রী দু’দিন আগেও তাকে রোম বিমানবন্দরে আদরে-সোহাগে বরণ করে নিয়েছিলেন, সেই ইতালীয় সেনারাই যে তাকে উচ্ছেদ করার মার্কিন উৎসবে যোগ দেবে সে কথা তিনি সম্ভবত ভাবেননি কখনোই। পরিণতিতে রাস্তার ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে গণপিটুনিতে এক সময়কার প্রবল পরাক্রমশালী এ শাসকের বিদায়।
বুঝেছিলেন কি পাক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো? যে একাধিক জেনারেলকে ডিঙ্গিয়ে যে জিয়াউল হককে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন তার হাতেই তাকে ঝুলতে হয়েছিল ফাঁসিতে। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কুকুর নিধনের অমানবিকতায় ফেসবুকে অনেকে সোচ্চার হয়েছেন। ভুট্টোকে আটকে রাখা হয়েছিল লাহোরের শত বছরের পুরাতন মোঘল দুর্গের মাটির নিচের কারাগারে। শোনা যায়, তার ফাঁসিও কার্যকর করা হয়েছিল সেখানেই। সম্ভবত কুকুর নিধনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অমানবিকতা জেনারেল জিয়াকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি।
গদির উপর আর গদির বাইরে ব্যবধানটা বোধ করি যোজন যোজনের। আর এটা বোঝার জন্য গদিতে চড়াটা জরুরি নয়। সে কারণেই গদির বাইরে থাকলে একসময় গদিতে আসীন বিরোধী দলীয়দের ক্ষমতার পাশাপাশি বুদ্ধির ধার আর অনুভূতির সুক্ষ্মতা বোধকরি লোপ পায়।
সাবেক শাসকদের ভুল করার আর ভুল বোঝার উদাহরণও তাই সম্ভবত অনেক বেশি। আর এ ভুলের গোলক ধাধায় একবার পড়ে গেলে সেখান থেকে উঠে আসা অনেক কঠিন। ঘরের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই, মুসলিম লীগের কথাই ধরুন। ধর্মের ভিত্তিতে পাকিস্তান নামক অদ্ভুতুড়ে রাষ্ট্রটির জন্মের কৃতিত্ব তাদের আর তাতে অবাক সারাবিশ্ব। অথচ আজকের বাংলাদেশে তাদের খুঁজে পাওয়া যায় মাঝে মাঝে কিছু সভায়-সেমিনারে আর একজন সাবেক প্রধানন্ত্রীর সঙ্গে একটি রাজনৈতিক জোটের আলোচনায়।
সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রসঙ্গ যখন আসল তখন সাবেক একটি শাসক দলের কথাই ধরুন। ক্ষমতায় থাকতে তারা ঠিকমত বুঝে উঠতে পারেনি সাধারণ মানুষের প্রাণের দাবি, মনের চাহিদা। আর ক্ষমতার বাইরে যেয়ে কানে দিয়েছেন তালা আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, তাও আবার আধার কালো গ্লাসের। জনগণের সাথে দলটির বিচ্ছিন্নতা এখন ক্রম সম্প্রসারমান। নিজেদের ভুলে ছুটে গেছে ২০১৪-র ট্রেন, এবং ছুটতে যাচ্ছে সম্ভবত ২০১৯-র ট্রেনও। তারপর কি? হয়ত মুসলিম লীগের পরিণতি, হয়ত আরো খারাপ কোনো কিছু।
কথা হচ্ছে সেই আরো খারাপ কোনো কিছুটা কি? আমার ধারণা, তারা এ দেশে স্থায়ী বিরোধী দলে পরিণত হতে যাচ্ছে শুধু তাদের ইগনোরেন্স জন্য। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দল হতে হলেতো সংসদে থাকা চাই। কারণ সংসদে প্রতিনিধিত্বশীল দ্বিতীয় বৃহত্তম দলটিই বিরোধী দলের স্বীকৃতি পায়। সেই বিবেচনায় আমাদের বিরোধী দল তো জাতীয় পার্টি। অতএব প্রশ্ন আসতেই পারে অন্য একটি দল কীভাবে স্থায়ীভাবে বিরোধী দলের আসনটি গেড়ে বসেছে।
আসলে কথাটা বলছিলাম অন্য একটা দৃষ্টিকোণ থেকে। যে দল স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দলটির বিরোধিতা করতে গিয়ে হাত মিলায় স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে, যাদের আগুন সন্ত্রাসে দগ্ধ হয় জাতি আর জাতির বিবেক, যারা ক্ষমতায় এলেই পতাকা তুলে দেয় যুদ্ধাপরাধীদের গাড়িতে আর ক্ষমতায় না থেকেও যায় না যাদের জামায়াত প্রীতি, তারাতো ‘সরকার বিরোধী না’, তারা ‘রাষ্ট্রবিরোধী’।
এ দেশের সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ বিবেচনায় কেনো যেনো মনে হয় রাম উল্টো না বুঝলেও, উল্টো বুঝছেন তিনি। আমরা আমাদের রাজনীতিতে কোনো স্থায়ী বিরোধী দল চাই না, চাই না আর কোনো মুসলিম লীগ। কিন্তু আমার চাওয়ায় কার কি বা আসে যায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.