নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

দুর্যোগ মোকাবেলায় সেনাবাহিনী

১৮ ই জুন, ২০১৭ সকাল ১০:৫২

১৩ জুন (২০১৭) পাহাড়ধসের কবলে পড়ে কেবল রাঙামাটিতেই শতাধিক মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। তার মধ্যে মানিকছড়িতে পাহাড়ধসে ২ সেনা কর্মকর্তাসহ ৪ সেনাসদস্য নিহত এবং ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আজিজ নামে আরও এক সেনাসদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। রাঙামাটি শহর থেকে ২ কিমি. দূরে শহরের প্রবেশমুখে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের পাহাড়ধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে আছে এমন খবরের ভিত্তিতে রাঙামাটি সদর জোনের সেনাবাহিনীর ১৬ সদস্যের একটি দল উদ্ধার কাজ চালাতে যায়। দলটি ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। সে সময় অকস্মাৎ নতুন করে পাহাড়ধস শুরু হলে সেনাসদস্যরা ৩০ ফুট নিচে নিক্ষিপ্ত হয়ে মাটিচাপা পড়েন। নিহত সেনা কর্মকর্তারা হলেন মেজর মাহফুজ (৪৪ লং কোর্স), ক্যাপ্টেন তানভির (৬৪ লং কোর্স) এবং আহত অপর দুই সেনাসদস্য হলেন করপোরাল আজিজ ও সৈনিক শাহীন। মেজর মাহফুজের ৫ বছরের একটি সন্তান রয়েছে এবং ক্যাপ্টেন তানভির সালমান নববিবাহিত। মেজর মাহফুজ ১৯৯৯ সালে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। তিনি ‘র্যা ব’ এবং শান্তিমিশনেও কাজ করেছেন। অন্যদিকে ক্যাপটেন তানভির ২০০৯ সালে যোগদান করেন এবং এক সময় মাহফুজের সঙ্গে শান্তিমিশনে কাজ করেছেন তিনিও। ১৩ জুনের পাহাড়ধসের ঘটনায় আড়াইশর বেশি মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে। তবে প্রশিক্ষিত সেনাসদস্যদের মৃত্যু অনাকাক্সিক্ষত ছিল। কারণ তারা এর আগেও যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। ২০০৭ সালের ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় সিডর এবং ২০০৯ সালের আইলায় সেনাবাহিনী বিশেষ করে ৫৫ পদাতিক ডিভিশন দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। উপরন্তু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ডিভিশন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে।

প্রায় প্রতিবছরই আমাদের দেশ ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। গত দুই বছরে সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগে পার্বত্য এলাকাগুলোয় প্রচুর মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ১৪ জুনের পাহাড়ধসে নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন লাখো মানুষ। পাহাড়ে একটানা বৃষ্টিতে সব সময়ই ধসের সম্ভাবনা থাকে। বহু ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়। পানিতে তলিয়ে যায় ফসলি জমি। মানবেতর জীবনযাপন করেন লাখো মানুষ। পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ধস, অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল, বজ্রপাত, ভূমিকম্প প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রবণতা বেশি। সেখানকার দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনীর অবদান অনেক।
অর্থাৎ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা দেশ ও মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে কখনো পিছপা হন নাÑ ১৩ জুনের ঘটনাই তার শ্রেষ্ঠ প্রমাণ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আত্মত্যাগে, দেশ ও জাতির যে কোনো দুর্যোগে অগ্রণি ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে পাহাড়ে বিভিন্ন জাতিসত্তার সাধারণ মানুষের শিক্ষা-স্বাস্থ্য অবকাঠামোগত উন্নয়নে আমাদের সেনাবাহিনী নিরলসভাবে নিজের জীবনকে বাজি রেখে দেশ ও জাতির স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। রাস্তায় যখন পাহাড় ধসে পড়েছিল সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাস্তা চলাচলের উপযোগী করার জন্য ওই বৃষ্টি-ঝড়ের মহাদুর্যোগে জনকল্যাণে কাজে করছিলেন। তাই এ আত্মত্যাগে আমরা গভীর শোক জানাই। পার্বত্য এলাকার ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন ও মান উন্নয়নে সেনাবাহিনীর অবদান অনস্বীকার্য। প্রত্যন্ত এলাকায় রাস্তা নির্মাণ, ডিজিটাল শিক্ষা, বিভিন্ন দুর্গম এলাকায় ক্যাম্প করে স্বাস্থ্যগত সেবা ও সব শ্রেণির সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত তারা। পার্বত্য এলাকার নিরাপত্তা বিধানে তারাই সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে দেশমাতৃকার কাজে নিজের জীবনকে উৎসর্গকারীদের স্মরণ করব আমরা।

পার্বত্য এলাকায় দুর্যোগের মুহূর্তে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটে গিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন। তবে দুর্যোগ মোকাবিলায় পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি-বাঙালির ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা জরুরি। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পাহাড়ের বিদ্যমান বৃক্ষবেষ্টনীগুলো সুরক্ষা করতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সংস্কার, দুর্যোগ সহনীয় গৃহনির্মাণ, বিদ্যমান অবকাঠামোর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। তাছাড়া পাহাড়িধস থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষার জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। বনায়ন রক্ষার জন্য লিজ প্রথা বাতিল করে পাহাড়ের প্রকৃতি বজায় রাখতে হবে। উপরন্তু পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জুম চাষের পদ্ধতি পরিবর্তন করলে বন সংরক্ষণের প্রচেষ্টা সফল হতে পারে। বনদস্যু আর সবুজায়নবিরোধী মানুষকে হটিয়ে পাহাড়কে রক্ষা করা গেলে ধসের কবল থেকে পার্বত্য এলাকা এক সময় মুক্তি পাবে। এ ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সঙ্গে জনগণের একীভূত প্রচেষ্টাই জয়ী হবে বলে আমাদের ধারণা।
মিল্টন বিশ্বাস : অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ এবং পরিচালক, জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা দপ্তর, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.