নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপি কী করবে এখন?

২০ শে জুন, ২০১৭ সকাল ১১:১৪

ঈদের (ঈদুল ফিতর) পর সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়ে চলেছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পবিত্র রমজানে রাজধানীতে দল ও জোটের বিভিন্ন ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে ধারাবাহিক গণসংযোগে এ হুমকি দিয়ে আসছেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য সিনিয়র নেতারাও বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও ফোরামে দলীয় প্রধানের হুমকির প্রতিধ্বনি তুলছেন। কিন্তু আন্দোলন তুঙ্গে উঠার মতো সাংগঠনিক সক্ষমতা আদৌ বিএনপির আছে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
অন্যদিকে, ঈদের পর বিএনপির সরকারবিরোধী আন্দোলন অহিংস ও শান্তিপূর্ণ হবে বলে জানিয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি সরকারকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনারা সহিংস আন্দোলন দমন করবেন, অহিংস আন্দোলন নয়।
ঈদের পর আমাদের অহিংস আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করবেন না। তবে তিনি এটাও বলেছেন যে, আমাদের অহিংস আন্দোলন পূর্বের মতো দমনের চেষ্টা করলে আওয়ামী লীগ যে ভাষায় কথা বলবে সে ভাষাতেই জবাব দেওয়া হবে।
বিএনপির আন্দোলনের হুমকি এখন স্রেফ প্রহসনে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বললেও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে দলটি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারছে না। দলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা লক্ষ করা যায়নি।
দল বা জোটের কোনো সাংগঠনিক সভায় আলোচনা-পর্যালোচনার মাধ্যমে আন্দোলন সংগ্রামের বাস্তবতা, করণীয় ইত্যাদি নির্ধারণের কোনো নজির নিকট অতীতে দেখা যায়নি। অথচ ইফতার পার্টিতে রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার কথা প্রতিদিনই বলা হচ্ছে।
বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী শুভানুধ্যায়ী ইফতারে অংশ নিচ্ছেন, খানাপিনা করে যে যার বাড়িতে ফিরে যাচ্ছেন। এতে তারা কতটা চাঙ্গা হচ্ছেন, ঈদের পর ঘোষিত কর্মসূচিতে কতটা অংশ নেবেন সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
অহিংস আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপির পাহাড়সম ব্যর্থতার কথা সবাই জানে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও জানে। আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিএনপির এই দুর্বলতা নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের কটাক্ষ করে বলেছেন, রোজার ঈদের পর সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আন্দোলনের হুমকি ফাঁকা বুলি ছাড়া আর কিছু নয়।
তিনি টিপ্পনি কেটে বলেছেন, বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করবে এটা যদি সত্য হয়, তাহলে আরব্য রজনীর রুপকথাও সত্য হবে। বিএনপির আন্দোলনের আট বছরে ঈদের পর, কোরবানির ঈদের পর, এসএসসি পরীক্ষার পর বলেই আসছে। আমরা জানতে চাই এবারের আন্দোলন কোন ঈদের পর হবে। আর সেটা কোন বছর?
ওবায়দুল কাদেরের এই উক্তি নির্মম হলেও নিরর্থক নয়। বিএনপি আসলে ক্রমেই একটি বুলি-সর্বস্ব দলে পরিণত হচ্ছে। বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির এই ব্যর্থতা ক্ষমতাসীনদের বেপরোয়া হতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ক্ষমতাসীনরা জেনে গেছে, তাদের কোনো শক্ত রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নেই। তাইতো তারা গায়ের জোরে দেশ শাসন করার নীতি গ্রহণ করেছে। যা খুশি তাই করছে।
স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও সুশাসনের পথ থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এই দলটি এখন আদর্শিক বিচ্যুতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারি দলে গণতন্ত্র চর্চা নেই। বিরোধী দলেও নেই। নীতি-কর্মসূচি গ্রহণের ক্ষেত্রে সাধারণ নেতাকর্মীদের কোনো অংশগ্রহণ নেই। এতে করে দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক শাসন উধাও হতে বসেছে। আর গণতন্ত্রহীনতার কারণে প্রতি পদে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, গণতন্ত্র আসলে জনতাতন্ত্র। সাহিত্যে, নাটকে এবং বাস্তবে দেখা যায়, গণতন্ত্র থাকা সত্ত্বেও মানুষ কার্যত রুদ্ধকণ্ঠ।
নোয়াম চমস্কিদের শ্রদ্ধা জানিয়েও বলতে পারি গণতন্ত্র বর্তমানে ধনতান্ত্রিক জীবনধারা রক্ষায় অতি তৎপর। তার জন্য এখনও মানুষের অধিকার তথা স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ের বিরুদ্ধে সৈন্য-প্রেরণ ঘটত না। বলপ্রয়োগে হত না। মানসিক সন্ত্রাস সৃষ্টি হত না। বিশ্ব জুড়ে বৃহৎ শক্তিগুলির গোপন সামরিক রক্ষাবলয় গড়ে উঠত না।
আজকের গণতন্ত্রের একটি ভয়ঙ্কর খারাপ দিক হল রাষ্ট্রশক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পেশি আস্ফালন। দলতন্ত্র গণতন্ত্রের এই সর্বনাশটি ঘটিয়েছে। কারণ, গণতন্ত্রের বিকাশ একটি বদ্ধ জায়গায় উপনীত হয়েছে। বাণিজ্যভিত্তিক অর্থশক্তির দাপট মানুষকে অন্য একটি জীবনব্যবস্থার দিশা দেখতে বলছে।
সেই জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করার পথে বিত্ত-বৈভব অর্জন করতে না পারাটা একটি বড় বাধা। এবং বৈভব-সমৃদ্ধ এলিটদের বড় অংশই কার্যত বস্তুভারহীন বিমূর্ত গণতন্ত্রের স্তাবকে পরিণত হয়ে নতুন দিশা গ্রহণ করতে পারছে না।
গণতন্ত্রের সংকট হল, সংখ্যালঘিষ্ঠদের মধ্যেও যে সত্য নিহিত থাকে, এই ধারণাটি অনেক সময়ই বাতিল হয়ে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠতাই গণতন্ত্রের প্রধান কার্যকর উপাদান হয়ে ওঠে। গণতন্ত্রের মানস-প্রক্রিয়াটি কার্যকর হয়নি বলেই বাহুবলীদের হাতে সাধারণ মানুষ মার খাচ্ছে। সাধারণ মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার তেমন কোনো বাস্তবায়ন নেই রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি-কর্মসূচিতে।
তা হলে প্রশ্ন উঠে, আমরা কোন পথে চলেছি? আমাদের দেশে তো গণতন্ত্র বদ্ধ জলাশয়ে আটকে আছে। জাতীয় পার্টি, বিএনপি তো দূরে থাক, গণতন্ত্রের ধ্বজাধারী আওয়ামী লীগও গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে পারেনি। এমনকি আমাদের দেশের কমিউনিস্টরা পর্যন্ত পারছে না পার্টিতন্ত্রের সংকীর্ণতাকে উপেক্ষা করতে।
এখানে দলতন্ত্রের সঙ্গে যোগ হয়েছে স্বেচ্ছাতন্ত্র বা স্বৈরতন্ত্র। স্বৈরতন্ত্রে আকস্মিকতা আর খামখেয়ালই প্রত্যাশিত। আজ সবাই যাকে খুব ক্ষমতাধর ভাবছেন, দেখা যায় আকস্মিক এক দিন তিনি বিতাড়িত হলেন। ক্ষমতার শীর্ষে যখন নেত্রীর নেকনজর নিয়ে এমন চরম অনিশ্চয়তা, তখন প্রশাসনের আর সব কর্তাব্যক্তিরা যে লোভ সংবরণ করে, নির্ভয়ে, আত্মসম্মান বজায় রেখে নিয়মানুবর্তী হবেন, সে জন্য বোধহয় বিশেষ চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রয়োজন।
আমাদের দেশে তেমন চরিত্রগুণ বড় একটা দেখা যাচ্ছে না। গত দুই দশকে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক ক্ষতি যা হয়েছে সেটা হলো ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক অবক্ষয়, যার সংশোধন দুঃসাধ্য। অনেককে বলতে শুনি, ও সব কেতাবি তত্ত্ব রাখুন, এটাই আজ বাস্তব। বেশি নিয়ম দেখাতে গেলে ওএসডি করে রাখবে, অথবা মিথ্যে অভিযোগে ফাঁসিয়ে সাসপেন্ড করে দেবে। দেখলেন না, অমুকের কী হল?
অথচ যিনি বলছেন, তিনিও এক কালে শিখেছিলেন যে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে পেশাদার বিশেষজ্ঞের স্বাধীনতা রক্ষার হাতিয়ার হিসেবেই গড়ে উঠেছিল আমলাতন্ত্র আর শিক্ষক, বৈজ্ঞানিক, আইনজীবী, চিকিৎসক ইত্যাদি পেশার নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক রীতিনীতি। শাসক ইংরেজের সমকক্ষ হওয়ার জেদ থেকে বহু চোখ রাঙানি আর শাস্তি সহ্য করে গত দেড়শো বছর ধরে এই সব প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছিল শিক্ষিত বাঙালি সমাজ।
আজ সমূহ ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে সাধারণ ভোটদাতার অজ্ঞানতা বা অপরিণামদর্শিতাকে দোষ দিলে নিজেকে ঠকানো হবে। প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর দায় সাধারণ ভোটদাতার নয়, তার সে সুযোগও নেই। প্রতিষ্ঠান রক্ষার প্রধান দায়িত্ব সেই সব দফতর, হাসপাতাল, বিদ্যালয়, আদালত যারা চালান, তাদের, অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী শিক্ষিত সমাজের সদস্যদের।
তারা যে জ্ঞানপাপী হয়ে আশু সুযোগসুবিধার লোভে অথবা অন্যায় শাস্তির ভয়ে স্বৈরতন্ত্রের কাছে নিজেদের বিকিয়ে দেবেন না, সে জন্য তারা বৃহত্তর সমাজের কাছে অঙ্গীকারবদ্ধ ছিলেন। আজ কি তারা সেই প্রতিশ্রুতি রাখতে পারছেন?

আসলে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে এক খাদের কিনারায়। এখান থেকে গণতন্ত্রের শক্তি জোটবদ্ধ হয়ে দলতন্ত্রের বিপরীতে গণতন্ত্রে নিয়ে যাবে, অন্যথায় দলতন্ত্রের বদলে নতুন দলতন্ত্রের অপশক্তি দেশকে স্বৈরতন্ত্রের রথে অনিবার্য ভাবে জুড়ে দেবে। আর সেই আলামত ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৭

রানার ব্লগ বলেছেন: কি আর করবে প্রতিবারের মতো ঈদের পর দেখে নেব বলে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুম দিবে। কারন মানুষের সমস্যা নিয়ে তাদের মাথা ব্যথা নাই তাদের মাথা ব্যাথা কেন তারা ক্ষমতায় নাই ভাব খানা এমন ক্ষমতায় থাকলে দেশ উল্টিয়ে হনুলুলু বানিয়ে দিবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.