নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

নতুন বিনিয়োগ উন্মুক্ত হচ্ছে

০৯ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৫৬

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত হচ্ছে। এর জন্য নীতিমালা তৈরির কাজ শুরু করেছে সরকার গঠিত কমিটি। এতে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ করা যাবে, বিনিয়োগ করা অর্থ ও লভ্যাংশ দেশে কী পরিমাণে এবং কী পদ্ধতিতে ফেরত আনতে হবে, বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান কিভাবে নিশ্চিত করতে হবে সেসব শর্ত থাকবে। এসব শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আগ্রহীরা বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ পাবে।
নীতিমালা প্রণয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় গঠিত কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সচিব অজিত কুমার পাল গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘নীতিমালা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে কমিটির বৈঠক হয়েছে। আজও আমরা একটি বৈঠক করেছি। বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার নীতিমালা প্রণয়ন করতে আরো কয়েকবার আমাদের বসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বার্থ রক্ষা করে ব্যবসায়ীরা যাতে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ পান, নীতিমালায় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ জন্যই একটু সময় লাগছে। সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার, এফবিসিসিআই, বিভিন্ন চেম্বার ও গবেষণা সংস্থাগুলোর মতামত নিয়ে এই নীতিমালা চূড়ান্ত করা হচ্ছে।’
বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রানীতি আইন-১৯৪৭ অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে বিদেশে বিনিয়োগ করা কার্যত নিষিদ্ধ। তবে কোনো ব্যবসায়ী বিশেষ প্রয়োজনে বিদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে তাঁকে বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ওই আবেদন অনুমোদন করলে তখন তিনি বিনিয়োগ করতে পারেন। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে এভাবে বিভিন্ন দেশে অল্প পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক অর্থপাচারবিরোধী সংস্থা গ্লোবাল ফিন্যানশিয়াল ইনটিগ্রিটি (জিএফআই) গত ১ মে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে, শুধু ২০১৪ সালে বাংলাদেশ থেকে আরো প্রায় ৭৩ হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। আর গত ২৯ জুন সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালে দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশিদের আমানতের পরিমাণ পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। বিভিন্ন বৈশ্বিক সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার বাড়ছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে পাচার কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
গত ২ জুন বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘টাকা ধরে রাখা যাবে না। যেখানে সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়া যাবে, টাকা সেখানে যাবেই। তাই শুধু আইন করে অর্থপাচার প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। এ জন্যই আমরা বৈধভাবে বিদেশে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগের সুযোগ দিতে যাচ্ছি। এর মধ্য দিয়ে পাচার কমবে বলে আশা করি।’
সম্প্রতি আকিজ জুটমিলস লিমিটেড মালয়েশিয়ায় রোবিনা রিসোর্সেস (মালয়েশিয়া) এসডিএন বিএইচডি ও রোবিনা ফ্লোরিং এসডিএন বিএইচডি নামের দুটি কম্পানি অধিগ্রহণ করতে দুই কোটি ডলার (১৬১ কোটি টাকা), হা-মীম গ্রুপ হাইতিতে একটি গার্মেন্ট কারখানা স্থাপনের জন্য এক কোটি চার লাখ ৪০ হাজার ডলার (৮৪ কোটি টাকা) এবং নিটল-নিলয় গ্রুপ গাম্বিয়ায় ‘গাম্বিয়া কমার্স অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল ব্যাংক লিমিটেড’ নামের একটি ব্যাংক স্থাপনে ৭০ লাখ ডলারসহ (৫৬ কোটি টাকা) আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগের আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব আবেদন অনুমোদন করে মতামতের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। পরে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে এ নিয়ে আলোচনার পর এই নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সরকারের সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকরা জানান, গত ১৪ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজিবিষয়ক) আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে বিদেশে বিনিয়োগ সুবিধা দিতে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য প্রথম একটি বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে বিডার সচিব অজিত কুমার পালকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি গত মে মাসে নীতিমালা প্রণয়নের জন্য বৈঠক করেছে। সেখানেও বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবসায়ীদের বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ উন্মুক্ত করার বিপক্ষে মত দিয়েছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বিডা এ ধরনের সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশ কয়েক বছরের মধ্যেই স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়শীল দেশে উন্নীত হবে। তখন বাংলাদেশ বিদেশে পণ্য রপ্তানিতে আর জিএসপি পাবে না। কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলোর এ সুবিধা থাকবে। তাই সেখানে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের সুযোগ পেলে ওই সুবিধা ভোগ করা যাবে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিদেশে বিনিয়োগ করলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের সুনাম বাড়বে বলে মত দিয়েছে সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা।
গত বৈঠকে অজিত কুমার পাল বলেন, ‘আমাদের সামনে যে সুযোগ ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হচ্ছে, তা গ্রহণ না করে আমরা ভবিষ্যতে যেন পরিতাপ না করি। তাই সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা আছে কি না, সে বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। বিদেশে তাঁরা যখন বিনিয়োগ করবেন, তখন বাংলাদেশের ইমেজ তৈরি হবে। তা ছাড়া আমাদের মনে রাখতে হবে যে, তুলনামূলক সুবিধা তত্ত্বের অনুকরণে যদি বিদেশে বিনিয়োগের ফলে আমাদের দেশের মানুষের কর্মসংস্থান, আর্থিক সচ্ছলতা ও রেমিট্যান্স বাড়ে, তাহলে ধীরগতিতে হলেও তা অনুমোদন করা সমীচীন হবে।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিয়োগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এ এন এম আবুল কাশেম সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের কাছে এক প্রতিবেদন পাঠিয়ে বলেছেন, বিদেশে বিনিয়োগের জন্য দেশ থেকে মূলধন নেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনার বিষয় হলো দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পর বিদেশে বিনিয়োগযোগ্য যথেষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ থাকলে এবং দেশের রপ্তানি বৃদ্ধির হার, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স ও দেশে বিদেশি বিনিয়োগের আন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধির হার দীর্ঘ মেয়াদে অব্যাহত থাকলে তবেই মূলধনী হিসাব রূপান্তরযোগ্যকরণের বিষয়টি বিবেচনা করার সুযোগ থাকে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলেও এর বর্তমান প্রবৃদ্ধির হার অত্যন্ত ধীরগতিসম্পন্ন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিদ্যুৎ সমস্যা মোকাবেলায় জ্বালানি তেল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও ভোগ্য পণ্য আমদানি ব্যয় বাড়ছে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স প্রবাহও উল্লেখযোগ্য হারে কমছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক আরো বলেছে, এরই মধ্যে রিজার্ভ থেকে প্রতিবছর দুই বিলিয়ন ডলার নিয়ে পাঁচ বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার বা এক হাজার কোটি ডলারের বাংলাদেশ সার্বভৌম সম্পদ তহবিল গঠনের প্রস্তাবে সরকার সম্মতি দিয়েছে। এ ছাড়া দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল করার উদ্যোগ রয়েছে। বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলো এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করতে পারে। জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) জিডিপির কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ন্যূনতম স্থানীয় বিনিয়োগ জিডিপির ৩২ শতাংশ হওয়া প্রয়োজন। তাই এ পর্যায়ে স্থানীয় বিনিয়োগে উৎসাহিত না করে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যথাযথ হবে কি না, তা সতর্ক বিবেচনার দাবি রাখে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ উন্মুক্ত করার পক্ষে মত দিয়ে বলেছে, ‘আমরা একপর্যায়ে এলডিসি থেকে উন্নীত হব। সে ক্ষেত্রে আমাদের অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে হবে। আফ্রিকায় অনেক কাঁচামাল পাওয়া যাবে। এলডিসিতে না থাকলে জিএসপি কোটা থাকবে না। তখন এলডিসিতে বিনিয়োগ করলে লাভবান হওয়ার সুযোগ হবে। বিদেশে বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীদের সক্ষমতা বাড়বে, সেখানে আমাদের শ্রমিকরাও কাজ করছে। তবে বিনিয়োগ করা অর্থ দেশে ফেরত আসছে কি না, তা নিশ্চিত করতে হবে। শুরুতে অপ্রদর্শিত অর্থকে করের আওতায় এনে বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া যায়। তবে শুরুতেই পুরোটা উন্মুক্ত করে দেওয়া ঠিক হবে না। আস্তে আস্তে এগোতে হবে।’
এনবিআর বলেছে, বিদেশে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে করসংক্রান্ত বিষয়গুলো তারা দেখবে। বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরাও বিদেশে সেসব সুযোগ পাবেন কি না, তা জানা দরকার।
হা-মীম গ্রুপের মালিক এবং দেশের ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাংলাদেশে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জমির স্বল্পতাসহ অবকাঠামোগত সংকটের কারণে বিনিয়োগ করা যাচ্ছে না। কিন্তু বিদেশে আমাদের অনেক সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আফ্রিকায় বিনিয়োগ করলে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পাওয়া যাবে, সেখান থেকে রপ্তানি খরচও কম। ভারত, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ আফ্রিকায় বিনিয়োগের সুযোগ গ্রহণ করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়ছে।’
এ কে আজাদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে তা দূর করা সম্ভব হবে। বিনিয়োগের পর প্রথম চার-পাঁচ বছরের মধ্যেই মূল অর্থ দেশে ফেরত আনা সম্ভব হবে। এর পর থেকে প্রতিবছরই লভ্যাংশও দেশে ফেরত আনা হবে। এতে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।
বিদেশে কারখানা স্থাপন করলে সেখানে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান হবে কি না, সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এ কে আজাদ বলেন, অবশ্যই কারিগরি জ্ঞানসম্পন্নদের বাংলাদেশ থেকে নিয়েই নিয়োগ দেওয়া হবে। উচ্চ ও মধ্যম সারির বিভিন্ন পদেও বাংলাদেশিরা নিয়োগ পাবে। তবে শ্রমিকদের সবাইকে তো আর বাংলাদেশ থেকে নেওয়া সম্ভব নয়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.