নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাম্প্রদায়িকতার অশুভ বিস্তার

১৬ ই জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৫৯

মাত্র ২-১ দিন আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, 'গো-ভক্তির নামে মানুষকে হত্যা করা মেনে নেয়া যায় না। মহাত্মা গান্ধী কখনোই একে সমর্থন করতেন না।
মহাত্মা গান্ধীর সবরমতী আশ্রম প্রতিষ্ঠার শতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য বিশেষ কর্মসূচির আয়োজন করা হয় গুজরাটে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বৃহস্পতিবার (২৯/০৬/২০১৭) সেখানে নিজের ভাষণে তিনি গান্ধীর অহিংসা নীতির পক্ষেই নিজের অবস্থান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'গো-রক্ষার অর্থ কী একজন মানুষকে খুন করা? কখনোই নয়। অহিংসাই আমাদের জীবনের পথ।'
গো-রক্ষার জন্য হিংসাত্মক পথ নেয়ার প্রয়োজন পড়ে না বলে তিনি এদিন বার্তা দিলেন। গান্ধীর জীবন দর্শন স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, 'গো-রক্ষার কথা মহাত্মা গান্ধী বিনোবা ভাবের চেয়ে বেশি আর কেউ বলেননি।'
সম্প্রতি হরিয়ানা এবং ঝাড়খন্ডে গো-রক্ষার নামে সদ্য দুটি ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গিয়েছে। তা নিয়ে গোটা দেশে গো-রক্ষা বিতর্ক ফের তুঙ্গে। 'নট ইন মাই নেম'_ এর ডাকে ভারতজুড়ে আন্দোলন শুরু হয়েছে। এবার প্রধানমন্ত্রী নিজেও মুখ খুললেন। গো-রক্ষার নামে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার চেষ্টা করলে বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি জানান।
ভারতের গরুর প্রতি ভক্তি দেখাতে গিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন যেভাবে গণপিটুনি থেকে হত্যার শিকার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি সরব হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গো-রক্ষার নামে গো-মাংস বিতর্ককে কেন্দ্র করে সারাদেশেই একের পর এক হিংসাত্মক ঘটনা সামনে আসছে। এ বিষয়ে নরেন্দ্র মোদির নীরব থাকায় ভারতজুড়ে সমালোচনা উঠেছিল। তাই তিনি মন থেকে না হলেও কথাগুলো বলেছেন।
কিন্তু এসব কথার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে ভারতের বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা বিনোদ বনশালের প্রতিক্রিয়ায়। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কাউন্টার করে বলেছেন, 'প্রশাসন গো-নিধন বন্ধে ব্যর্থ বলেই গো-রক্ষকদের রাস্তায় নামতে হয়েছে। গো-রক্ষাকারী কী করে হত্যাকারী হয়? তারা তো রক্ষাদাতা।' উগ্র হিন্দু নেতা বিনোদ বনশাল কথার মারপ্যাঁচ দিয়ে গো-রক্ষার নামে মানব হত্যার পক্ষে সাফাই গেয়েছেন। মৌলবাদী হিন্দুদের কাছে মানুষের চেয়ে গরুর মূল্য বেশি হয়ে উঠেছে। এ কারণে, 'প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গো-রক্ষার নামে মানুষ হত্যার নিন্দা করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঝাড়খ- রাজ্যের রামগড়ের বাজারাতার এলাকায় গত বৃহস্পতিবার এক ব্যক্তিকে গো-মাংস বহন করার অভিযোগে ৩০-৪০ জন ব্যক্তি পিটিয়ে হত্যা করেছে। নিহত ওই ব্যক্তির নাম আসগর আলী ওরফে আলিমুদ্দিন। তার বয়স ৫০ বছর। তিনি একজন মাংস ব্যবসায়ী।' (জনকণ্ঠ-৩১/০৬/২০১৭)এর আগেও এমন পাশবিক ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা ঘটছে কংগ্রেসকে পরাজিত করে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর। ধর্মান্ধ বর্বররা কতটা নৃশংস হতে পারে তার দৃষ্টান্ত প্রতিদিন দেখছি আমরা ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে। মধ্যপ্রাচ্যের কথা না হয় ছেড়েই দিলাম। বাংলাদেশে প্রতিমা ভাংচুরের ঘটনা থেমে নেই, হেফাজতের আস্ফালন থেমে নেই, পাকিস্তানে মাজার, মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলা থেমে নেই।
ভারতের কথাই বলি আপাতত, গরু রক্ষার নামে উগ্র ধর্মীয় বর্বরতা এখন ভারতের অন্যতম কলঙ্ক-কাহিনী। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর এই গো-রক্ষার হিংস্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ড. অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, বিজেপি তার সাম্প্রদায়িক উগ্রতা কিছুতেই লুকিয়ে রাখতে পারবে না। রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক সুস্নাত দাস ২০১৬ সালে দৈনিক সংবাদে দীর্ঘ কলাম লিখে বিজেপির সাম্প্রদায়িক বাহু বিস্তারের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। তার কলামের নাম 'ভারতে সাম্প্রদায়িক ইতিহাসচর্চার পশ্চাতে মৌলবাদী প্রবণতার স্বরূপ'। সেখানে বলা হয়েছে, 'বর্তমানে ভাজপা শাসনে ভারতের শিক্ষাঙ্গনে ও গবেষণা কেন্দ্রগুলোতে ইতিহাসচর্চা তথা সমাজবিজ্ঞান ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ এবং সংকট পুনরায় ক্রমশ ঘনীভূত হচ্ছে।' (সংবাদ-১৯/০১/২০১৬)।
১৮/০৩/২০১৬ তারিখের একটি বাংলাদেশি দৈনিক জানিয়েছে, 'ভারতে গো-মাংসের গুজবে এর আগেও হানাহানি হয়েছে। এবার কাশ্মীরের চারজন ছাত্রকে হোস্টেলে বসে গো-মাংস রান্না করার গুজবে মারধর করা হয়েছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে, মারধরের একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেছে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতের বেশির ভাগ রাজ্যেই গো-হত্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ভারতের উত্তরপ্রদেশে গো-মাংসের গুজবে ৫০ বছর বয়স্ক এক মুসলিমকে হিন্দু দাঙ্গাকারীরা হত্যা করেছে। উলি্লখিত বছরের জানুয়ারি মাসে মধ্যপ্রদেশে পুলিশ একটি হিন্দু দলকে গ্রেপ্তার করেছিল। ওই উগ্রপন্থী দলটির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা ট্রেন ভ্রমণের সময় গরুর মাংস খাওয়ার সন্দেহে এক মুসলিম দম্পতিকে হামলা করেছিল।'
ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার প্রতিবাদ করেছিলেন চিত্র নায়ক আমীর খান। বিজেপির শিল্পীরা তাকে নাস্তানাবুদ করেছেন। এতে সাম্প্রদায়িক উগ্রতা প্রকাশ পেয়েছে। আমীর খানের আশঙ্কা ও ভীতির কোনো মূল্য দেয়া হয়নি। ফ্রিজে গরুর মাংস রাখার অপরাধে বিজেপির ধর্মান্ধরা এক মুসলমান স্বতন্ত্র বিধায়ককে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করেছে।
গত ২৫/১১/২০১৫ তারিখে বাংলাদেশি একটি দৈনিক জানিয়েছে, 'কয়েকমাস ধরে অসষ্ণিুতা নিয়ে তোলপাড় গোটা ভারত। তা সে দাদরিতে গো-মাংস খাওয়ার গুজবে প্রৌঢ় মহম্মদ আখলাখকে পিটিয়ে খুন হোক বা সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার প্রাপ্ত লেখক এমএম কালবুর্গিকে হত্যা। দিলি্লর কেরল ভবনের ক্যান্টিনে গরুর মাংস বিক্রি হওয়ার গুজবে পুলিশের তল্লাশি হোক বা বেঙ্গালুরু আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের নাম টিপু সুলতানের নামে করার প্রস্তাব দেয়ার জন্য বিশিষ্ট নাট্যকার_ অভিনেতা গিরিশ কারনাডকে টুইটারে 'কালবুর্গি' বানিয়ে দেয়ার হুমকি। আর এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু না বলার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিসহ ক্ষমতাসীন দল বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের দিকেও আঙুল উঠেছে। আন্তর্জাতিক মহলেও সমালোচনা হয়েছে এসব ঘটনায়। কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও।'
নরেন্দ্র মোদি আন্তর্জাতিক চাপে পড়ে কিছু ভালো ভালো কথা বললেও তিনি উগ্র হিন্দুদের থামানোর কোনো ব্যবস্থা করেননি। গো-মাংস বিক্রি বা খাওয়ার অপরাধে, ফ্রিজে রাখার অপরাধে, নিজ বাসভবনে গরু জবাই করার অপরাধে মুসলমান হত্যার বিরুদ্ধে বিজেপি সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই।
বিজেপির মুসলমান নেতারা বাংলাদেশের গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও নিতাই রায় চৌধুরীদের মতো মুখে কলুপ এঁটেছেন।
এ কথা সুতীক্ষ্ন কণ্ঠে বিশ্ব-উগ্র হিন্দু নেতাদের জানিয়ে দেয়া দরকার, তারা গরু রক্ষার নামে মুসলমানদের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের হিন্দু সংখ্যালঘুদের বিপদ বাড়িয়ে তুলেছেন। অতএব, সাধু সাবধান।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১:৪৩

নিগূঢ় বলেছেন: ধর্মান্ধ না বলে ধর্মাজ্ঞ বলা উচিৎ ৷

২| ১৬ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৫

কানিজ রিনা বলেছেন: ভারতের নরেন্দ্র মদী এসব কর্মকান্ডে দৃষ্টান্ত
মুলক পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে আরও
পস্তাতে হবে। সব দেশেই উগ্রপন্থিরা সোচ্চার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.