নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিএনপিকে রোড ম্যাপ দেখাবে কে?

২৩ শে জুলাই, ২০১৭ সকাল ১০:৩১

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। গত ১৬ জুলাই প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা রোডম্যাপ ঘোষণা করে জানিয়েছেন, সাতটি পরিকল্পনা নিয়ে কমিশন অগ্রসর হচ্ছে। পরিকল্পনাগুলোর মধ্যে রয়েছে : আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার চলতি জুলাই থেকে আগামী বছের ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেষ করা হবে; নির্বাচন প্রক্রিয়া সহজীকরণ ও যুগোপযোগী করতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে পরামর্শ ৩১ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত; সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত; নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ জুলাই থেকে আগামী বছরের জুন পর্যন্ত; বিধি অনুসারে ভোটকেন্দ্র স্থাপনের কাজ ২০১৮ সালের জুন থেকে তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত; নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এ বছরের অক্টোবর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ভোট গ্রহণের এক সপ্তাহ আগে শেষ করা হবে।
রোডম্যাপ নিয়ে রাজনৈতিক মহল এবং নাগরিক সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিশেষ করে রোডম্যাপ ঘোষণার সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি যেসব কথা বলেছেন তার কিছু কিছু নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। রাজনৈতিক দলের ঝগড়াবিবাদ মেটানোর কাজে নির্বাচন কমিশনকে একটি মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যারা দেখতে চান তারা হতাশ হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিধিবিধানের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক দলের ওপর ছড়ি ঘোরালে সেটাও কি ভালো কাজ হবে? নির্বাচন কমিশনের প্রধান দায়িত্ব নির্বাচন করা। নির্বাচনের সময় কমিশনের হাতে যে ক্ষমতা দেওয়া আছে, অন্য সময় সেই ক্ষমতা ব্যবহার করলে রাজনৈতিক দলের জন্য কি তা সম্মানজনক হবে?
ইসির রোডম্যাপ ঘোষণাকে একটি চমত্কার ও ভালো কাজ বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তিনি বলেছেন, রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনা না থাকলে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি এও বলছেন যে, নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব ইসির ওপর। তারা যদি কঠোর হয়, যদি নির্বাচনী আইনকানুন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারে তা হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে কেন?
সরকারি দল এবং দেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ইসির রোডম্যাপকে স্বাগত জানিয়েছে। জাতীয় পার্টিসহ সরকারের শরিক দলগুলো এবং কয়েকজন নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ইসির কর্মপরিকল্পনাকে ভালো বলেছেন। একটি ভালো নির্বাচন নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইসির। কিছু সমস্যা থাকে তা আলাপআলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার চেয়ে ভালো বিকল্প আর কিছু নেই। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনীতি নাএর চক্র থেকে বের হতে পারছে না। আওয়ামী লীগ যেটা সমর্থন করবে বিএনপিকে তার বিরোধিতা করতে হবে—চিরাচরিত এই নিয়ম মেনে ইসির রোডম্যাপ সম্পর্কে বিএনপির প্রতিক্রিয়া হয়েছে ভিন্ন। দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে ইসি ঘোষিত রোডম্যাপ দিয়ে তার সমাধান সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির অবস্থান হলো, তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই!
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে (তিনি রোডম্যাপ ঘোষণার আগের সন্ধ্যায় নিজের চিকিত্সা ও রাজনৈতিক পরামর্শের জন্য লন্ডন গিয়েছেন। কোরবানীর ঈদের পর তার দেশে ফেরার কথা) মির্জা আলমগীর রোডম্যাপ নিয়ে দলের প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, কোনো আলোচনা ছাড়া ঘোষিত রোডম্যাপে একাদশ সংসদ নির্বাচনের উদ্যোগ চলমান সংকটের সমাধান দেবে না। বিএনপি এখন পর্যন্ত রোড দেখতে পাচ্ছে না। ম্যাপতো পরের প্রশ্ন।
মির্জা আলমগীরের এই প্রতিক্রিয়ার পর প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, দেশের চলমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় বিএনপিকে পথ দেখানোর ক্ষমতা কারো আছে কি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকপর্যবেক্ষকদের কেউ কেউ মনে করছেন, বিএনপিকে খুশি করার ক্ষমতা একমাত্র শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারো নেই। শেখ হাসিনা যদি এখন স্বেচ্ছায় ঘোষণা দেন, তিনি আর প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, তাহলে বিএনপির মুখে হাসি ফুটবে। তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণের পথ খুঁজে পাবে। কিন্তু শেখ হাসিনা রাজনীতি করেন। তিনি এমন একটি দলের প্রধান যে দলটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাওয়ায় ভেসে আসেনি। কোনো সামরিক শাসকের স্বার্থ পাহারা দেওয়ার জন্য এই দলের জন্ম হয়নি। দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে এই দলের রয়েছে নাড়ির সম্পর্ক। কেউ দাবি করবেন আর শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেবেন, এমন দিবাস্বপ্ন যারা দেখেন তারা অতীতেও স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় যেমন কাতর হয়েছেন, এবারও হবেন।
বিএনপি নেতাদের, বিশেষ করে বেগম খালেদা জিয়াকে এটা বুঝতে হবে যে রাজনীতি কোনো ফ্যান্টাসি নয়। রাজনীতিকে ফ্যান্টাসি ভেবে যারা বিভিন্ন সময় হঠকারিতার পথে হেঁটেছেন, তারা কেউই টিকতে পারেননি। রাজনীতির হিসাবনিকাশ করতে হয় বাস্তবের কঠিন মাটিতে দাঁড়িয়ে। ক্ষমতায় থাকা এবং নাথাকাটা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ইচ্ছানির্ভর নয়। এটা অনেক বিষয় এবং বিষয়ীনির্ভর। খালেদা জিয়া চাইলেই যেমন শেখ হাসিনা পদ ছাড়বেন না, আবার খালেদা জিয়া চাইলেও শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না বা থাকতে চাইবেন না। সেজন্যই বিএনপিকে এখন বাস্তববাদী হতে হবে। শেখ হাসিনাকেই সুষ্ঠু নির্বাচনের একমাত্র অন্তরায় ভেবে বিএনপি যে প্রচারণা চালাচ্ছে তা তাদের জন্য বুমেরাং হতে পারে।
বিএনপির পছন্দ মতো সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হওয়ার মতো অবস্থা দেশে বিরাজ করছে না। তেমন অবস্থা তৈরি করার মতো সক্ষমতা বিএনপির নেই। বিএনপি দলগতভাবে এখন আন্দোলন করার অবস্থায় নেই। দল পুনর্গঠনের অনেক চেষ্টা বেগম জিয়া করছেন। সফল হতে পারছেন না। কর্মসূচি ঘোষণা করলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও তাতে উপস্থিত হন না। ছয় শতাধিক সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি। এরা সবাই উপস্থিত থাকলেও মোটামুটি একটি সমাবেশ হওয়ার কথা। সেটা হচ্ছে না কেন? শুধু সরকারের জেলজুলুমের ভয়ে, নাকি আরো কোনো কারণ আছে?
এটা ঠিক, সরকার বিএনপির ওপর নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই ধরনের প্রতিকূল অবস্থায় কীভাবে সংগঠনকে গতিশীল বা সচল রাখতে হয় সেটা কি বিএনপি নেতৃত্বের জানা আছে? পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার কোনো চেষ্টা কি বিএনপি কখনো করেছে? বড় সভাসমাবেশের অনুমতি সরকার দিচ্ছে না। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা তৃণমূলে ছড়িয়ে পড়ে না কেন? বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিএনপি যদি দলের কথা প্রচার করে তাহলে পুলিশের পক্ষে বাধা দেওয়া সহজ হবে না। বিএনপি কেন ধরে নিচ্ছে যে সোহরাওয়ার্দী ময়দানে জনসভা না করতে পারলে তাদের আর কিছু করার নেই? ঢাকা শহরে বড় জনসভা করে যানজট তৈরি করলে সাধারণ মানুষ কি বিএনপির ওপর খুব খুশি হবে? জনসভা করার সুফল খেয়ে নেবে যানজটের বিরক্তি। বিএনপি সময়ের সঙ্গে পাল্লা না দিয়ে সময়কে তাদের পছন্দমতো পেছনের দিকে টানতে চাইছে। কেবল মিছিলমিটিং করাটাকেই তারা রাজনৈতিক কর্মসূচি বলে মনে করছে। মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য কত উপায় এখন রয়েছে। তাত্ক্ষণিক যোগাযোগের নানা মাধ্যম এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। চাইলেও এখন কেউ আর কিছু গোপন রাখতে পারে না। প্রযুক্তির এমন অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে যে পৃথিবীর যেকোনো জায়গার ঘটনা মানুষ মুহূর্তকালের মধ্যেই জেনে যাচ্ছে। সরকারের বিরুদ্ধে কোনো কথাটা বিএনপির বলার আছে যেটা মানুষের কাছে অজানা আছে? আজকের যুগে একটা জনসভা করে যত মানুষের কাছে পৌঁ্ছানো যায়, তারচেয়ে অনেক বেশি মানুষের কাছে চলে যাওয়া যায়, বেগম খালেদা জিয়া একটি সংবাদ সম্মেলন করলে। টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিলে। সরাসরি সম্প্রচার। সঙ্গে সঙ্গে মানুষ জেনে যাচ্ছে। এগুলোতো বিএনপি করছে। তারপরও সভাসমাবেশ করার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বিএনপিকে বঞ্চিত রেখে সরকার ঠিক কাজ করছে না। এর মাশুলও সরকার তথা আওয়ামী লীগকেই দিতে হবে।
বিএনপির উচিত হবে আর কোনো রোড খুঁজে কালক্ষেপণ না করে নির্বাচন কমিশন ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী কমিশনকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। সরকারকে চাপে রাখার জন্য গরম কথা বলা বা কিছু কর্মসূচি ঘোষণা করতে চাইলে সেটা বিএনপি করতেই পারে। কিন্তু সহায়ক সরকারের জন্য রোজ কেয়ামত পর্যন্ত অপেক্ষা করার বালখিল্যপনা করা ঠিক হবে না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন নয়—এমন জেদ রাজনীতিসুলভ নয়। শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলেও সে নির্বাচন কীভাবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে, সে ব্যাপারে কাজ করা দরকার। নির্বাচনকালে নির্বাচন কমিশন যাতে প্রভাবমুক্ত থাকে, কমিশনের কর্তৃত্ব যাতে কমিশন প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে, প্রশাসন যাতে পক্ষপাতমূলক আচরণ না করে, এই বিষয়গুলোর দিকে বিএনপিকে মনোযোগী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, মানুষের মন যদি বিএনপিকে চায় তাহলে নির্বাচনে কারচুপি করার সাহস কেউ দেখাবে না। মানুষের প্রতি আস্থা থাকলে বিএনপিকে জেদের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। বিএনপি একদিক ভিশন২০৩০ প্রকাশ করে ভবিষ্যত্মুখী রাজনীতির কথা বলছে, অন্যদিকে আধুনিক ভোটার যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট গ্রহণের বিরোধিতা করছে। আগেরবার কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বয়কট করেছিল বিএনপি ওই ইভিএমে ভোট গ্রহণ ইস্যুতেই। দলের সিদ্ধান্ত না মেনে মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচন করে জিতেছিলেন। মেশিন কাউকে হারানো বা জেতানোর ক্ষমতা রাখে না। এটা বিএনপির মনের ভুল। এই ভুল না ভাঙলে বিএনপি যুগের সঙ্গে পাল্লা দেবে কীভাবে?

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৭ দুপুর ১২:১৫

প্রোলার্ড বলেছেন: যে আওয়ামী লীগ ১৯৯৪-৯৬ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আকাশ পাতাল এক করে ফেলেছিল , বিশ্ব বাসীকে বুঝিয়েছিল যে এই ব্যবস্থা বিশ্বে এক নজিরবিহীন সুব্যবস্থা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য, সেই আওয়ামী লীগই কেন ২০১০/১১ সালে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বাতিল করে দিলো?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.