নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু

০৮ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৩৬

আওয়ামী লীগের জন্ম ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন। জন্মের সঙ্গে ইতিহাস সম্পৃক্ততা লক্ষণীয়। এই দিনে ১৭৫৭ সালে তথাকথিত বাংলার স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল। জন্মলগ্নে প্রতিষ্ঠানটির নাম ছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ অর্থাৎ আম-জনতার মুসলিম লীগ। যতই বিতর্ক হোক না কেন মুসলিম লীগের একটি জনমুখী কর্মসূচি ছিল, কিন্তু নেতৃত্বে নবাব-জমিদার আর খাজা-গজাদেব আবস্থানের কারণে তার আদর্শ আম-জনতার আদর্শের সঙ্গে মেলবন্ধনে ছিল না। আওয়ামী লীগের জন্মলগ্নের ঘোষিত আদর্শ ছিল তৎকালে অর্জিত পাকিস্তানের স্বাধীনতা সুসংহতকরণ এবং মুসলিম গণমানুষের মঙ্গল নিশ্চিতকরণ।
কোনো দল তখনই রাজনৈতিক দল হিসেবে দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, স্বীকৃতি পাবে, বর্ধিষ্ণু হবে এবং প্রতিক‚ল আবহাওয়ায় টিকে থাকবে কিংবা ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠবে যদি তার থাকে জনাশ্রিত মহৎ আদর্শ। তা না হলে ক্ষমতায় বসে কিংবা শুধুমাত্র ক্ষমতা অর্জনের প্রয়াসে কোনো জনগোষ্ঠী মন-মানসিকতা ও আদর্শের ভিন্নতা সত্ত্বেও সুসংগঠিত হতে পারে; তখন তাকে দল না বলে ফোরাম বলাই সমীচীন হবে। বিএনপির কট্টর সমালোচকদের অনেকেই বলতে শুনেছি বিএনপি মানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি নয়, বেসিক্যালি নো পার্টি। এ কথা এই সেদিনও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সম্প্রসারিত ভবনের শীর্ষে শোভা পেত।
জন্মের লগ্নে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতার নাম হিসেবে মওলানা ভাসানীসহ অনেকের নাম উঠে এলেও এবং বঙ্গবন্ধুর অবস্থান যুগ্ম সম্পাদকের হলেও তিনিই প্রকৃত প্রস্তাবে (উবভধপঃড়) আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা এবং তিনি ছাত্রলীগেরও প্রতিষ্ঠাতা। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে ও ভবন নির্মাণ অসমাপ্ত রেখে উদ্যোক্তা ব্যক্তিটি যেকোনো কারণে উধাও হলে তিনি উদ্যোক্তা, মালিক বা কীর্তিমান কিছুই থাকেন না। প্রাদেশিক পর্যায়ে শেখ মুজিবই আওয়ামী লীগকে একটা দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং আজীবন তাকে ধরে রেখেছিলেন। প্রসঙ্গত, ইত্তেফাক পত্রিকার কথা এসে যায়। ইত্তেফাক পত্রিকার সঙ্গে অনেক নাম যুক্ত হলেও ইতিহাস তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়াকে তার প্রতিষ্ঠার আসনে বসিয়েছে। পাকিস্তান আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যথাক্রমে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেখ মুজিবের নাম শুধু জড়িয়ে নেই; সংগঠনটির স্থায়িত্ব ও সমাপ্তির সঙ্গে উভয় নেতা জড়িয়ে আছেন। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী কিংবা কারাগারের রোজনামচা বিশ্লেষণ করলে এ কথা সুস্পষ্ট যে প্রথম থেকে আওয়ামী লীগের ভিত্তি সুদৃঢ়করণ ও বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুই মুখ্য ভূমিকা পালনকারী। এমনকি বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে আনুষ্ঠানিক অবস্থান না নিলেও আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার অনুসর্গ কিংবা ক্ষেত্র প্রস্তুতের প্রয়াসী ভূমিকা ছাত্রলীগের তথা বঙ্গবন্ধুর।
বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ ছিল আওয়ামী লীগের সম্পূরক ও পরিপূরক শক্তি। তাই বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে গেলে বলতে হয় বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, ছাত্রলীগের ইতিহাস মানে বাংলাদেশের ইতিহাস, একই দমে বলতে হয় আওয়ামী লীগের ইতিহাস মানে বাংলাদেশের ইতিহাস।
বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ প্রথম থেকেই ছিল একটি লড়াকু রাজনৈতিক সংগঠন যার লক্ষ্য ছিল গণমুক্তি, গণউন্নয়ন ও গণমানুষের ভাগ্য উন্নয়ন। ক্রমশ তার সঙ্গে উপায় কিংবা কৌশল হিসেবে যুক্ত হয়েছে স্বায়ত্তশাসন, পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন এবং স্বাধীনতা। জন্ম থেকে রূপকল্প ছিল বলেই আওয়ামী লীগ একটি কৌশলী সংগঠন, বিভিন্ন সময়ে তার কৌশলের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু তার লক্ষ্য সামান্যই পরিবর্তন হয়েছে। স্বায়ত্তশাসন বা স্বাধীনতা অর্জনের কৌশলের ভিন্নতা ছিল, এমনকি স্বাধীনতার পর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় তার সর্বশেষ কৌশল ছিল বাকশাল। যতই সমালোচনা হোক না কেন যে কৌশলটি সে সময়ে প্রাপ্ত আবহে লক্ষার্জনের সঠিক ও দ্রুততর উপায় ছিল, তা অস্বীকারের জো সামান্যই। সেই পদক্ষেপটি ছিল কায়েমী স্বার্থবাদী ও শোষক শ্রেণির বিপরীতে শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। এর জন্য বঙ্গবন্ধু সপরিবারে ও সবান্ধব মূল্য দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধু যদি ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত নির্বিঘ্নে বাংলাদেশের শাসন চালিয়ে যেতে পারতেন, তাহলে বাংলাদেশের চেহারা হতো বর্তমানে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ যার হাতিয়ার হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু নেতৃত্বে থাকলে সেই ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ হতো বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেল যার প্রবৃদ্ধির হার হতো ৭.৪ শতাংশ; দারিদ্র্যের হার হতো ২২ শতাংশ; মাথাপিছু আয় হতো ১৬০২ ডলার; রিজার্ভের পরিমাণ হতো ৩৩ বিলিয়ন; দেড় কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হতো; ৫ কোটি মানুষ নি¤œ আয় থেকে মধ্যম আয়ে হিজরত করত, দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতো; সাক্ষরতার হার হতো ৭১ শতাংশ; ৫৫ লাখ মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে আসত; ৮০ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেত; স্বাস্থ্যসেবা অধিকাংশ মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে যেত; মানুষের গড় আয়ু হতো প্রায় ৭২ বছর; যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন হতো; মাতৃ ও শিশু মৃত্যুর হার অকল্পনীয় হারে কমে যেতো; জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকত; সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত হতো; ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান কমে একটি জনকল্যাণমূলক মানবিক বাঙালি সমাজ প্রতিষ্ঠিত হতো। গণতন্ত্র অর্থাৎ শোষিতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেত, ধর্ম ব্যবসায়ীরা নির্মূল হতো, সাম্প্রদায়িকতা মূলোৎপাটিত হতো, শোষক ও পুঁজিবাদিরা নপুংসক রূপ নিত। বঙ্গবন্ধুর অকাল মৃত্যুতে সব স্তম্ভিত হয়ে পড়ল বা চাকাটা উল্টোমুখো হয়ে দাঁড়াল। সৌভাগ্য এই জাতির, বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতের পর তার কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা দলের হাল ধরলেন এবং গণমানুষের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা হিসেবে আবির্ভূত হলেন। তিনি আওয়ামী লীগকে কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে সুদৃঢ় অবস্থানে নিয়ে এলেন না, তাকে উন্নতি ও প্রগতির বাহন হিসেবে সংস্থাপিত করলেন। এক্ষেত্রে কিছু অভিন্নতা ও ভিন্নতা লক্ষণীয়।
বঙ্গবন্ধু মাত্র ৩৩ বছর বয়সে আওয়ামী লীগের হাল ধরেছিলেন। স্বাধীনতার লক্ষার্জনে বলিষ্ঠ গণভিত্তি ও সংগঠন প্রয়োজন ছিল। তাই মন্ত্রিত্ব অপেক্ষা দলের সাধারণ সম্পাদকের পদটি তিনি বেছে নিলেন। সেটি যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, তা তো ইতিহাস প্রমাণ করেছে। ত্যাগ-তিতিক্ষা ও আন্দোলন সংগ্রামে তিনি নিজকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু হিসেবে, জাতির পিতা হিসেবে এবং সর্বশেষ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি হিসেবে। সরকার অপেক্ষা তার দলই প্রকৃত ক্রিয়াশীল ছিল। শেখ হাসিনা মাত্র ৩৪ বছর বয়সে দলের হাল ধরেন। ছিন্নভিন্ন ও ধ্বংসমুখী নৌকার হাল ধরাটা ছিল সাহসের প্রতীক ও জীবন বিপন্ন করার উন্মুক্ত সড়ক। বঙ্গবন্ধুর বিপক্ষে ছিল কায়েমী স্বার্থ ও আন্তর্জাতিক চক্র। শেখ হাসিনার বিপক্ষে রয়েছে উপরোক্ত দুটো ছাড়াও মৌলবাদী ও ধর্ম ব্যবসায়ী সংগঠন যারা সবাই মিলে মোটামুটি ১৭/১৮ বার তার জীবন সংহারের পদক্ষেপ নিয়েছিল। তবুও তিনি ভয়হীন, ভ্রæকুটিহীন, অনড়, অটল, দল ও রাষ্ট্র ক্ষমতাকে তিনি করেছেন উন্নয়ন ও প্রগতির হাতিয়ার হিসেবে। বেছে নিয়েছেন ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্থাৎ দক্ষতা ও দায়বদ্ধতা। তবে বাবার লক্ষ্যকেই সামনে রেখে সামনে এগিয়ে যাচ্ছেন এবং যাবেন বলে আমাদের বিশ্বাস। তিনি ইতোমধ্যে তাকে দেয়া খেতাব অর্থাৎ জননেত্রী ও দেশ মর্যাদা রক্ষা করেছেন।
৬৯ বর্ষে আওয়ামী লীগ পদার্পণ করেছে, তার মধ্যে ৪৭ বছরই দলটি ছিল ক্ষমতার বাইরে। ১৯৬৬ থেকে ১৯৭১; ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ আর ২০০২ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ছিল আওয়ামী লীগের দুর্যোগ ও দুঃসময় এবং সেই সময়কে স্বর্ণযুগও বলা যায়। এই সময়ে বাঙালি বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার সহকারী ও সহযোগী সহযোদ্ধা অগণিত। শেখ হাসিনা তাদের মূল্যায়িত করেছেন। যারা বাদ পড়ে আছে, তারা মূল্যায়িত হওয়ার আগে অন্যরা মূল্যায়িত না হওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। তাদের সামনে নিয়ে এলে আওয়ামী লীগ পুনর্জীবন লাভ করবে। আওয়ামী লীগের কাকের প্রয়োজন থাকলেও কোকিলের প্রয়োজন গৌণ। কাক হচ্ছে ত্যাগের প্রতীক আর কোকিল হচ্ছে ভোগের প্রতীক। এখন অনেকেই দুবছর ছাত্রলীগ আর তিন বছর যুবলীগ করে মূল্যায়নের প্রশ্নে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাদের মানসিকতা কোকিলের আর আচরণের নৈকট্য কোকিলের সঙ্গে। সামান্য অপ্রাপ্তিতে তারা ক্ষুব্ধ হোন এবং ক্ষুব্ধতার প্রকাশ হিসেবে ক্ষেত্রভেদে লুটতরাজে ও অপকর্মে লিপ্ত হন, তাদের কেউ কেউ দাম্ভিকতার শীর্ষে। তাদের জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে শেখ হাসিনার বাণীটি অতিপ্রাসঙ্গিক।
মনে রাখতে হবে মানুষের মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পূর্ণ হওয়ার পর তার অন্যান্য উচ্চ মার্গের অভাব বা চাহিদাগুলো পাখা মেলে। তাদের আত্মসম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ সুতীক্ষ্ণ রূপ নেয়। আগের প্রজন্মে তা অনুপস্থিত থাকলেও এ প্রজন্মে তা স্পষ্ট। তাই কৌশল পাল্টাতে হবে। দুস্থের সংখ্যা কমে গেছে। তাই দুস্থের সেবার পাশাপাশি বিত্তবানদের চাহিদাও পূরণ করতে হবে। আর্থিক সাহায্যের চেয়ে তাদের আত্মমর্যাদা ও ত্যাগের স্বীকৃতি আবশ্যক। দাম্ভিকতা পরিহার করতে হবে; আকাশে চোখ ঠেকিয়ে নয়, কর্মীদের চোখে চোখ রেখে, তাহলে সমাধান খুঁজে পাওয়া যাবে।
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী : শিক্ষাবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.