নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

শোকাবহ আগস্ট এবং জনকল্যাণের রাজনীতি

১৩ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:৩০

আগস্ট কান্নার মাস। বেদনার মাস। শোকাবহ আগস্টে বাঙালি জাতি হারিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যাঁর অঙ্গুলির নির্দেশে গোটা বাঙালি জাতি একাত্তরে ‘যার হাতে যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা’ করার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা। সেই তাঁকেই কি না জীবন দিতে হলো এ দেশেরই কিছু বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে, যা ছিল কল্পনারও অতীত।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাঁর নাম-নিশানা মুছে ফেলতে চেয়েছিল ঘাতকচক্র। শুধু তা-ই নয়, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশকে তারা ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল পাকিস্তানি ভাবধারায়। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার যাতে হতে না পারে সে জন্য খন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন খুনিদের রক্ষায়। জিয়া সেই অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেন। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় গিয়ে এই কালো আইনটি বাতিল করে। সেই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ প্রশস্ত হয়। এবং সময়ের ধারাবাহিকতায় আত্মস্বীকৃত খুনিদের বিচার হয়েছে। ফাঁসির দণ্ডও কার্যকর হয়েছে। সত্যি বলতে কী, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করার পর রাজনীতির বিপথগামিতার শুরু হয়। পঁচাত্তর পরবর্তী নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রকৃত রাজনীতিবিদদের কাছে টানতে না পেরে দলছুটদের নিয়ে দল গঠন করলেন ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য। হালুয়া-রুটির আশায় অনেকেই ভিড়লেন সে দলে। দলছুটদের পেয়ে তাঁর মনে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হলো। জিয়া নিজেই ঘোষণা করলেন, রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করার কথা। যে ছাত্ররা ভাষা আন্দোলন করলেন, ছয় দফাকে জনপ্রিয় করলেন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান সৃষ্টি করলেন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অগ্রসৈনিকের ভূমিকা পালন করলেন—সেই ছাত্ররাজনীতির উর্বর ভূমিতে রোপণ করা হলো স্বার্থপরতা এবং ক্ষমতালিপ্সার বিষবৃক্ষ। অস্ত্র, টাকা, আর ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে ছাত্রদের একটি অংশকে দলে টানতে সক্ষম হলেন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। আরেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ক্ষমতায় এসে সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেন। বিষবৃক্ষে জল ঢাললেন। অনেক ছাতনেতা ক্ষমতার ভাগবাটোয়ারা পেয়ে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ হলেন। এর মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিতে কলুষতার ষোলোকলা পূর্ণ হলো।
ক্ষমতায় থাকা এবং যাওয়ার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকলেন ছাত্রনেতারা। অনেকেই এমপি, মন্ত্রী পর্যন্ত হলেন। অস্ত্র, টাকা হাতে পেয়ে অরাজকতায় লিপ্ত হলো ওই সব ছাত্র। ছাত্ররাজনীতি থেকে আদর্শ নামক বস্তুটি হারিয়ে যেতে থাকল। সেই সঙ্গে জাতীয় রাজনীতি থেকেও। কেননা সামরিক শাসন আমলে একটি নব্য ধনিক শ্রেণির সৃষ্টি হওয়ায় তাঁরা ক্ষমতার অংশীদার হতে চাইলেন।
সামরিক শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় মৌলবাদী রাজনীতি ফুলে-ফেঁপে উঠল। এমনকি তারা ক্ষমতার অংশীদার পর্যন্ত হলো। শুধু রাজনীতি নয়, ধর্মকে পুঁজি করে তারা ব্যাংক-বীমাসহ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও স্থাপন করলেন। ব্যবসা-বাণিজ্যে, রাজনীতিতে ‘মৌলবাদের অর্থনীতি’ এক বিরাট সমস্যা হয়ে দেখা দিল। রাজনীতিতে জায়গা করে নিল সাম্প্রদায়িকতা। স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি রাজনীতিতে পুনর্বাসিত হওয়ায় একটি সুস্পষ্ট বিভাজন সৃষ্টি হলো। সামরিক শাসকদের সৃষ্টি করা দলগুলো এই বিভাজনকে আরো প্রকট করে তুলল। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে এভাবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে রাখা হলো। এভাবে গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে কার্যত সামরিক শাসকের উত্তরসূরিরাই ক্ষমতায় থেকে গেল। ফলে গণতন্ত্র কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিকশিত হতে পারল না। এরপর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার পর গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিকাশ শুরু হয়।
এবার আগস্ট এসেছে এমন এক সময়, যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায়। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে। সাকা-মুজাহিদ, নিজামী, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লাসহ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর অনেকেরই ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। আর্থ-সামাজিক নানা দিক থেকেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়কে এখন বাংলাদেশ। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, রাজনৈতিক নানা বিরোধ এখনো রয়েই গেছে। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে একমত হতে পারছে না দলগুলো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার বিলোপ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো বিকল্প হচ্ছে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে দায়িত্ব নিয়েছে। এখন দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে সরকার, বিরোধী দলসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতা নিয়ে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর নির্বাচন কমিশন যেন সরকারের প্রভাবমুক্ত থেকে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে সেটি নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এখন নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য দৃশ্যমান কিছু পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। এ জন্য সবার আগে নির্বাচন কমিশনের ওপর নির্বাহী বিভাগের নিয়ন্ত্রণ, নির্ভরশীলতা কমিয়ে কমিশনকে সত্যিকার অর্থে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে, যাতে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে পারে।
কী পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে কিংবা ক্ষমতায় থাকা না থাকার ইস্যুগুলোই রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলে জনস্বার্থ উপেক্ষিত হচ্ছে। সমঝোতার পরিবর্তে বৈরিতাই স্থান করে নিচ্ছে রাজনীতিতে। এ অবস্থা দেশকে এক সংকটজনক অবস্থায় নিপতিত করছে। কিন্তু এ অবস্থা তো কারো কাম্য হতে পারে না। তাই জনকলাণ্যের রাজনীতিই সবার প্রত্যাশা। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে জনকল্যাণই ছিল মুখ্য বিষয়। তাঁকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যে বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। জাতীয় শোকের মাস আগস্টে নতুন করে শপথ নিতে হবে, যাতে জনকল্যাণই মুখ্য বিষয় হয় রাজনীতির। অনিশ্চিত অন্ধকারের পথে আর এক মুহূর্ত নয়। হীনস্বার্থ নয়, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের একটি সুখী সমৃদ্ধ গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই শুধু বঙ্গবন্ধুসহ সব শহীদের রক্তঋণ শোধ করা সম্ভব। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতেই হবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.