নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মন্ত্রক

আমি আমার দেশের জন্যে

মন্ত্রক › বিস্তারিত পোস্টঃ

৭৫ এবং পরবর্তী বাংলাদেশ

২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ সকাল ১১:১৮

উনিশ শ পঁচাত্তর সালের মধ্য আগস্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পরে যারা সদর্পে ঘোষণা করেছিল, ‘শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’, তারা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশ এবং দেশের মানুষকে বিপর্যয়ের কোন অতলগহ্বরে ঠেলে দিয়েছিল তা পরিমাপ করা তাত্ক্ষণিকভাবে অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।
চার দশকের বেশি সময় পরে একটি নিরপেক্ষ অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমরা যদি এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের চেষ্টা করি, তাহলে সমগ্র জাতির পশ্চাদপসরণের এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে ওঠে। বাধাগ্রস্ত উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ধর্মীয় রাজনীতির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক শক্তির বিকাশ এবং সামরিক একনায়কতন্ত্রের উত্থান ছিল এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষ পরিণাম। অন্যদিকে হত্যাকারীদের অন্যতম অপকৌশল ছিল ইতিহাস বিকৃতি ও নেতিবাচক প্রচারণার মধ্য দিয়ে তরুণসমাজকে বিভ্রান্ত করে একটি প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্যঃস্বাধীন দেশের বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক কাঠামো পুনর্বিন্যাস করে একটি দৃঢ় ভিত্তিভূমির ওপর দাঁড় করানো, বন্ধ হয়ে যাওয়া কলকারখানা চালু ও স্থবির ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি সঞ্চার করা, ফলে ভেঙে পড়া সড়ক ও রেল যোগাযোগব্যবস্থা দ্রুত সচল করে দেশব্যাপী যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা, জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার মতো বিপুল কর্মযজ্ঞ স্বাধীনতা লাভের তিন বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের এই সামগ্রিক অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল ভীষণভাবে।
এই নৃশংস ঘটনা বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত করেছিল তার একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। পঁচাত্তরের নভেম্বরে জেলহত্যার পর দুজন মুক্তিযোদ্ধা বন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা স্থগিত করে হিলি সীমান্ত দিয়ে পশ্চিম বাংলায় আমাদের যুদ্ধকালীন মিত্রদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল যদি পুরনো বন্ধুদের কাছ থেকে কোনো সাহায্য-সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়া যায়! একাত্তর সালে পশ্চিম বাংলার বালুরঘাট ডাঙ্গা-বিজয়শ্রী বিশেষ গেরিলা বাহিনী ক্যাম্পে তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন সিপিআই নেতা কমরেড সুবোধ লাহিড়ি। তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি আমার বন্ধুদের তিরস্কার করে বলেছিলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তোমরা প্রতিরোধ গড়ে তোলা তো দূরে থাক, একটা প্রতিবাদও করতে পারোনি। জাতির পিতার হত্যাকারী হিসেবে ভারতে তোমরা এখন বিশ্বাসঘাতকের জাতি হিসেবে পরিচিত।’ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলেও মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারী এবং পাকিস্তানের বন্ধু রাষ্ট্রগুলো দ্রুত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজিত শক্তি ও তাদের সহযোগী পাকিস্তানপন্থীরাই যে এই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন ঘটিয়েছে, তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
পাকিস্তানপন্থীদের উত্থানের সঙ্গেই ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক শক্তির পুনরুত্থান ঘটে এবং মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে অসাম্প্রদায়িক সর্বজনীন বাংলাদেশের স্বপ্ন আমরা লালন করে আসছিলাম তার মৃত্যু ঘটে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র এবং সম্প্রদায়-নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের দীর্ঘ ঐতিহ্য যখন একটি রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে সুনির্দিষ্ট রূপ লাভ করছিল, ঠিক তখনই ধর্মীয় মৌলবাদী ও যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসিত করে মুক্তিযুদ্ধের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার সমাজ বিকাশের ধারাকেই ভিন্ন পথে পরিচালিত করে।
পঁচাত্তর পরবর্তী রাজনীতি গণতন্ত্র চর্চা ও জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্বাচনের মতো প্রথাসিদ্ধ মূলধারার রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে হত্যা, ষড়যন্ত্র ও অবৈধ পথে ক্ষমতা দখলের কৌশলে পরিণত হয়েছিল। ফলে সেনাবাহিনীর ছত্রচ্ছায়ায় রাজনৈতিক দল গঠন, রাজনীতিতে জনপ্রিয়তা ও দলের কর্মসূচির চেয়ে অর্থবিত্ত ও পেশিশক্তির ব্যবহার বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অনিবার্যভাবেই ত্যাগী ও পরীক্ষিত নির্মোহ রাজনৈতিক কর্মীর চেয়ে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী, অবসরপ্রাপ্ত আমলা ও সেনা কর্মকর্তাদের আবির্ভাব পুরো রাজনৈতিক অঙ্গনকেই কলুষিত করে ফেলে। বিনষ্ট রাজনীতির এই ধারা দীর্ঘকাল প্রবহমান থাকায় নব্বইয়ের গণ-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের সংগ্রাম সাফল্য লাভ করলেও রাজনীতি আর কখনোই প্রকৃত রাজনীতিবিদদের হাতে ফিরে আসেনি।
বঙ্গবন্ধু হত্যা ও তার প্রতিক্রিয়ায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর। হত্যাকারীদের প্রচারণা ও ইতিহাস বিকৃতির ফলে দুই দশক ধরে আমাদের একটি প্রজন্ম বড় হয়েছে বিভ্রান্তির মধ্য দিয়ে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ রাজনৈতিক লড়াই ও পরে সশস্ত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের সঠিক ঘটনাপঞ্জি ও তথ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার ফলে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশের কাছে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ কেবলই ১৯৭১-এর মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মতো জনবিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মনে হয়।
বিগত বছরগুলোর মতো এবারও পনেরোই আগস্ট যথাযথ মর্যাদায় দেশব্যাপী শোক দিবস পালিত হয়েছে। এই শোক দিবস যাতে শুধু আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত না হয়, শোক দিবসে উচ্চারিত শপথ যেন কাজে রূপান্তরিত হওয়ার আগেই বাতাসে মিলিয়ে না যায়, তা নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ও চার জাতীয় নেতার নৃশংস হত্যাকাণ্ড সমগ্র বাংলাদেশকে ইতিহাসের ধারাবাহিকতা থেকে ছিটকে ফেলে দিয়ে জাতির জন্য কী সর্বনাশ বয়ে এনেছিল তারও মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:০৬

আজাবুল মরফুদ বলেছেন: ক্ষমতার মসনদ পাকাপোক্ত করিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের মাষ্টারমাইন্ডার গ্রুপ জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর ন্যায় ‘নেতা’ বানাতে সক্রিয় হয়। পাকিস্তান পন্থী সিনিয়র নেতা কূখ্যাত মশিউর রহমান যাদু মিয়াকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়; যা নিজস্ব ডায়েরীতে যাদু মিয়া উল্লেখ করেছেন। শিশু থেকে কিশোর হয়ে যৌবনের প্রথম অংশ পাকিস্তানে বসবাসের কারণে জিয়া অনর্গল উর্দু-তে কথা বলতে পারে কিন্তু ’বাংলা’ উচ্চারণ ‘ভাঙ্গা, ভাঙ্গা; অতএব জিয়াকে বঙ্গবন্ধুর ন্যায় ‘তুখোড়’ বক্তা বানানো অসম্ভব। কিন্তু মাইলকে মাইল হাটতে পারে জিয়া। এই ’হাটা’ বৈশিষ্টকে কাজে লাগিয়ে জিয়াকে দিয়ে যদি ’খাল কাটানো’ হয় তবে চলমান ফারাক্কা ইস্যুতে ভারতবিরোধি সেন্টিমেন্টের অনুকুলে জিয়াকে দিয়ে একটা মোক্ষম কাজ করানো হবে। ব্যাস, যাদু মিয়ার যাদুতে জিয়াকে দিয়ে খাল কাটানো কর্মসূচি শুরু হয়ে যায়। জনসভায় দু’এক কথা বলেই জিয়া বলতো, “খাল কাটতে হবে”।

বাঙালি জন্মপরিচয়ের প্রতি জিয়া বিশ্বাসঘাতক হলেও তার পেয়ারে পাকিস্তানের প্রতি কখনও বিশ্বাসঘাতক নয়; বরং সদা সর্বদা পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ত। জিয়াকে দিয়ে বিএনপি জন্ম দিয়ে পাকিস্তানি আইএসআই কূটচালের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধপন্থী জনগণকে দুইভাগ করতে সফল হয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দেয়া পাকিস্তানপন্থী ২৩% ভোট উত্তরাধিকার সূত্রে (in heir to) জিয়ার বিএনপিতে যোগ হয়। জিয়ার মুক্তিযুদ্ধে সংশ্লিষ্ঠতা ও ‘স্বাধীনতার ঘোষণার সাইনবোর্ড-এর পিছনের ভেলকি না বুঝতে পেরে মুক্তিযুদ্ধপন্থী জনগণের একটা অংশ ভন্ড জিয়ার দলে ভিড়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধপন্থীদের ৯% বিএনপিতে চলে যাওয়ায় ২০০৮-এর জাতীয় নির্বাচন অনুসারে বিএনপি আজকে ৩২%। ১৯৭০-এ নৌকায় ভোট না দেয়া পাকিস্তানপন্থী ২৩% + মুক্তিযুদ্ধপন্থী ৯% = ৩২% বর্তমান বিএনপি। ২০০১-০৬ সালে খালেদা-তারেকের দুঃশাসনের প্রতিবাদে ২০০৮-এ শোচনীয় পরাজয় হলেও বিএনপি এই ৩২% ভোট পায়। এই দেশকে আবার পাকিস্তান বানিয়ে দিলেও পাকিস্তান পন্থী এই ২৩% কখনও আওয়ামী লীগার হবে না; তবে সুযোগ সন্ধানী কাউয়া বাদ দিয়ে বিএনপি থেকে মুক্তিযুদ্ধ পন্থী এই ৯%-কে ফিরিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ মটিভেশনাল উদ্যোগ নিতে পারে। বঙ্গবন্ধু ও ৪ নেতা হত্যাকান্ডের পর বঙ্গবন্ধু, শেখ কামাল, বঙ্গবন্ধু পরিবার ও আওয়ামী লীগের নামে পরিকল্পিত মিথ্যাচারের বিপরীতে পঙ্গু আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মিথ্যাচারের প্রতিবাদ না হওয়ায় মুক্তিযুদ্ধ পন্থী এই ৯% সাধারণ জনগণ মিথ্যাচারকে সত্য ভেবে ভন্ড মুক্তিযোদ্ধা জিয়াকে দেবতা মনে করে জিয়ার দলে ভিড়ে যায়।

বিএনপি-জামায়তি যারা বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডকে ’বিপ্লব’ বলে সম্বোধন করে তাদের উদ্দেশ্যে দু’টি কথা; এই পৃথিবীতে রাতের আঁধারে কোন বিপ্লব সংঘটিত হয় নাই। রাতের আঁধারে হয় ’ষড়যন্ত্র’ এবং প্রকাশ্যে দিবালোকে হয় ‘বিপ্লব’। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড একটা নিষ্ঠুর ষড়যন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর খূণীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়ে দেখাতো, আসলে তারা কতো বড় বীরের বাচ্চা বীর! তারা কতো বড় বিপ্লবী!! বর্বরোচতি এই হত্যাকান্ডের জন্য আসলে তারা ইতিহাসের কাপুরুষ। এরাই আবার বলে, শেখ মুজিব হত্যাকান্ডে কোন প্রতিবাদ কেন হলো না? মানুষ কেন রাস্তায় নামে নাই? বঙ্গবন্ধুর খূণীদের দোসররা ঢাকা শহর সহ বড় বড় শহর গুলোতে কারফিউ জারি করেছিল। জনগণকে রাস্তায় দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দেয়া ছিল; জনগণ কিভাবে রাস্তায় নামবে? তারপরও কারফিউ এলাকার বাইরে অনেক জায়গায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানের প্রতি অন্যান্য পাকিস্তানিদের ন্যায় পাকিস্তানপন্থী জিয়ার এলার্জি থাকলেও সিরু বাঙালির দেখা, অবস্থার চাপে ভোল পাল্টিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সেজে ‘জয় বাংলা’ বলে চিল্লায়ে গলা ফাটানো ছিল জিয়ার একটা অভিনয়; যা জিয়া ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। জিয়ার আমলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান এবং বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.